সিরাতে বিশ্ব নবী


শিক্ষাতিদের সুবিদার জন্য বিশ্বনবীর জীবনি দুই ভাগে প্রকাশ করা হল।
১। প্রশ্ন উত্তরে বিশ্বনবী।
২।(সাধারণ) সিরাতের আলোকে অর্থাৎ বই লেখার মাধ্যমে।

প্রথম অংশ: প্রশ্ন উত্তর

কুইজ বান্ডিল
রাসূলে কারীম ( সা:) এর সমগ্র জীবনের কয়েকটি অধ্যায় :
বিশ্বনবী ( সা: ) এর গোটা জীবনকাল তিনটি অধ্যায়ে বিভক্ত ।
প্রথম অংশ : পবিত্র মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হবার পর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত মোট চল্লিশ বছর ।
দ্বিতীয়াংশ : নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে তের বছরের মাক্কী যিন্দিগী ।
শেষাংশ : ম ক্কা থেকে মদীনায় হিজরাত করার পর থেকে ওফাতকাল পর্যন্ত দশ বছরের মাদানী যিন্দিগী ।

বিশ্বনবী ( সা: ) এর মাক্কী জীবনের চারিটি স্তর :



বিশ্বনবীর নবুওয়্যাত প্রাপ্তির পর হিজরাতের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর পবিত্র নবুওয়াতী জীবনের যে অংশ মক্কায় অতিবাহিত করেন এবং যা ইসলামী দাওয়াতের বিভিন্ন স্তর ও দ্বন্দ্ব সংঘাতের ভেতর দিয়ে অতিক্রান্ত হয়, তাকে আপন বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে চারিটি স্বতন্ত্র স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে ।
প্রথম স্তর :
নবুওয়্যাত প্রাপ্তির পর প্রায় তিন বছর কাল । এ সময় দাওয়াত 

ও প্রচারের কাজ গোপনে আন্জাম দেওয়া হয় ।

দ্বিতীয় স্তর :
দাওয়াত ও প্রচারের কাজ প্রকাশ্যে ঘোষণার পর প্রায় দুবছর কাল : 

এ স্তরের প্রথম দিকে ইসলামী দাওয়াতের কিছু বিরোধিতা করা হয় । এরপর ঠাট্টা বিদ্রুপ করে, নানারকম অপবাদ দিয়ে , মিথ্যা প্রচারনা চালিয়ে এবং বিরুদ্ধ কথাবার্তা বলে তাকে দমিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয় ।

তৃতীয় স্তর :
এতৎসত্ত্বেও যখন ইসলামী দাওয়াত দৃঢ়ভাবে সামনে এগোতে থাকে, তখন জুলুম নির্যাতনের ধারা শুরু হয় । মুসলমানদের উপর নিত্যনতুন জুলুম নির্যাতন চলতে থাকে । এ সময় মুসলমানদেরকে নানারূপ বিপদ মুসিবাতের সন্মুখীন হতে হয় ।
চতুর্থ স্তর :
আবু তালিব ও বিবি খাদিজার ইন্তেকালের পর থেকে হিজরাতের প্রাককাল পর্যন্ত প্রায় তিন বছর কাল । এ স্তরটি রাসূল কারীম ( সা: ) এবং সাহাবীদের জন্য অত্যন্ত কঠিন সংকটকাল ছিল ।
০১. আইয়ামে জাহিলিয়াহ :
০১নং প্রশ্ন :
আইয়ামে জাহিলিয়াহ বা জাহেলী যুগ বলতে কোন যুগকে বুঝায় ?
উত্তর :
আইয়ামে জাহেলিয়া অর্থ-মূর্খতার যুগ । ইসলাম আগমনের পূর্ব যুগকে আইয়ামে জাহেলিয়া যুগ বলা হয় । এ যুগকে ফাতরাতের যুগও বলা হয় ।
০২নং প্রশ্ন :
এ যুগকে আইয়ামে জাহেলিয়া যুগ কেন বলা হয় ?
উত্তর :
যেহেতু এ যুগে কোন নাবী রাসূল আগমন করেননি ; তাই এ যুগকে আইয়ামে জাহেলিয়া বা অন্ধকার যুগ বলা হয় ।
০৩ নং প্রশ্ন :

প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলতে কোন যুগকে বুঝায় ?

উত্তর :
খ্রিষ্টপূর্ব দশ হাজার হতে পাঁচ লক্ষ্ অব্দ সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক 

যুগ বলে । যে যুগকে প্রাচীন প্রস্তরের যুগও বলা হয় ।

০৪নং প্রশ্ন :
প্রাচীন সেমেটিক জাতি বলতে কোন জাতিকে বুঝায় ? 

উত্তর : আদ ও সামুদ জাতিকে বুঝায় ।

০৫ নং প্রশ্ন :
আরব জাতি কত শ্রেণীতে বিভক্ত কি কি ?
উত্তর :
আরব জাতি প্রধানত: তিন শ্রেণীতে বিভক্ত । যথা:
(ক ) আরবে বায়িদা । 

(খ ) আরবে আরিবা । 

( গ ) আরবে মুস্তারিবা ।

০৬নং প্রশ্ন :
আরব দেশকে জাযিরাতুল আরব বলা হয় কেন ?
উত্তর :
জাজিরাহ অর্থ উপদ্বীপ । আরব ভূখন্ডটি ত্রিভূজের মতো । অর্থাৎ- এর তিন দিকে জল এবং একদিকে স্থল দ্বারা পরিবেষ্টিত । তাই আরবদেশকে জাজিরাতুল আরব বলা হয়
০৭. প্রশ্ন :
প্রাক ইসলামী যুগে আরবরা ধর্মীয় দিক থেকে কত শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল ?
উত্তর :
চার শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল ।
( ক ) পৌত্তলিক বা মুশরিক । 

( খ ) ইহুদী সম্প্রদায় । 

( গ ) খ্রিষ্টান সম্প্রদায় । 

( ঘ ) হানিফ সম্প্রদায় ।

০৮নং প্রশ্ন :
হানিফ সম্প্রদায় বলতে কাদেরকে বুঝায় ?
উত্তর :
ইসলাম পূর্বযুগে আরব সমাজে মুষ্টিমেয় কতিপায় লোক আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল । তারা দেবদেবীর পূজা করা থেকে বিরত থাকতো । তাদের সংখ্যা ছিল নগন্য । জাহেলী যুগে এরা হানিফ সম্প্রদায় নামে পরিচিত ছিল । এরা দ্বীনে ইব্রাহীমের তাওহীদের অনুসারী ছিল ।
০৯নং প্রশ্ন :
জাহেলী যুগে কয়েকজন হানিফ সম্প্রদায়ের অনুসারীর নাম লিখ :
উত্তর :
( ক ) ওরাকা বিন নওফেল । 

( খ ) আমর বিন আন্বাসা । 

( গ ) আবুবকর সিদ্দিক ( রা : ) । 

( ঘ ) আবু মুসা আশআরী ( রা: ) । 

( ঙ ) উমাইয়া ইবনু আবি সানত । 
( চ ) আউস ইবনু সাওদাহ । 
( ছ ) কবি যুহাইর ।

১০নং প্রশ্ন :
জাহেলী যুগে আরবদের কয়েকটি প্রসিদ্ধ দেব-দেবীর নাম উল্লেখ কর ।
উত্তর :
( ক ) লাত ( খ ) ওজ্জাহ 

( গ ) মানাত ( ঘ ) হোবল ।

১১ নং প্রশ্ন :
আরব সমাজে সর্বপ্রথম কোন ব্যক্তি এসব প্রতিমার প্রচলন করেন ?
উত্তর :
আমর ইবনু লুহাই ।
১২নং প্রশ্ন :
জাহেলী যুগের আরবদের সংস্কৃতি চর্চার ধরণ বর্ণনা কর ।
উত্তর :
( ক ) সহিত্য বা প্রবন্ধ চর্চা । 

( খ ) কাব্য চর্চা । 

( গ ) গীতিকাব্য চর্চা । 

( ঘ ) প্রবাদ বাক্য চর্চা । 

( ঙ ) স্থাপত্য শিল্প চর্চা । 
( চ ) পৌরনিক কাহিনী চর্চা ।

১৩. প্রশ্ন :
উকায মেলার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বর্ণনা কর ।
উত্তর :
উকায মেলা হলো জাহেলী যুগে আরব সমাজে ভাষা চর্চা, সাহিত্য চর্চা ও কাব্যচর্চার এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক মেলা ।
১৪. প্রশ্ন : সাবআ মুআল্লাকা বলতে কি বুঝায় ?
উত্তর :
সাবআ মুআল্লাকাতের আভিধানিক অর্থ সাতটি ঝুলন্ত কবিতা । জাহেলী যুগে সাবআ মুআল্লাকা কবিতাগুলো আরবদের কাব্যচর্চার এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর বহন করে । আরবের ওকায মেলায় প্রতি বছর প্রতিথযশা কবিদের নিয়ে কাব্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো । এ প্রতিযোগিতায় যিনি বিজয়ী হতেন, তাকে জাতীয় পুরষ্কার প্রদান করা হতো । তার কৃতিত্বের মূল্যায়ন স্বরূপ তার রচিত কবিতাগুচ্ছ পবিত্র কাবা ঘরের দেওয়ালে লটকিয়ে দেওয়া হতো । এভাবে সাত বছরে সাতজন প্রতিথযশা কবির কবিতা কাবাঘরে লটকিয়ে দেওয়া হয়েছিল । ইতিহাসে এই সাত কবিকেই সাবআ মুআল্লাকা নামে অভিহিত করা হয়েছে ।
১৫.প্রশ্ন : সাবআ মুআল্লাকাতের সাত কবির নাম কি ?
উত্তর :
( ক ) ইমরুল ক্বায়েস । 

( খ ) যুহাইর ইবনু আবি সালমা । 

( গ ) তুরফা ইবনু আবদ্ । 

( ঘ ) ওলীদ ইবনু রাবিয়া । 

( ঙ ) আনতারা ইবনু শাদ্দাদ । 
( চ ) আমর ইবনু কুলছুম । 
( ছ ) হারিছ ইবনু হিলযাহ ।

১৬. প্রশ্ন :
সাহাবীদের মধ্যে কয়েকজন প্রসিদ্ধ কবির নাম লিখ :
উত্তর :
( ক ) কাআব ইবনু যুহাইর । ( রা: )

( খ ) হাসসান ইবনু সাবিত । ( রা: ) 

( গ ) আমর ইবনু মাদিকারাব । ( রা: ) 

( ঘ ) নাবেগাতুল জাদী । ( রা: ) 

( ঙ ) হুতাইয়া । ( রা: ) 
( চ ) আবু যুয়াইব আল হোযালী ( রা: )

১৭. প্রশ্ন :
প্রাক ইসলামী যুগে আরবদের রাজনৈতিক অবস্থার ধরণ কেমন ছিল ?
উত্তর :
প্রাক ইসলামী যুগে আরবদের রাজনৈতিক অবস্থা দু ধরণের ছিল ।
( ক ) শেখতন্ত্র 

( খ ) আলমালা বা মন্ত্রণা পরিষদ ।

১৮. প্রশ্ন :
শেখতন্ত্র বলতে কি বুঝায় ?
উত্তর :
সমগ্র আরব ভূখন্ড কোন রাজার শাসনাধীন ছিল না । আরবগণ বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত ছিল এবং প্রত্যেক গোত্রের গোত্রপতি গোত্র শাসন করতো । 

 গোত্রপ্রধানকে বলা হতো শেখ । শেখ দ্বারা গোত্র পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হতো । এই সমাজ ব্যবস্থাকে বলা হতো শেখতন্ত্র ।

১৯. প্রশ্ন :
আলমালা বা মন্ত্রণা পরিষদ বলতে কি বুঝায় ?
উত্তর :
আলমালা ছিল আরবের সব গোত্রপ্রধানদের সমন্বয়ে গঠিত মন্ত্রণা বা উপদেষ্টা পরিষদ । এটি এক ধরণের গনতান্ত্রিক নগর রাষ্ট্র । আরবের বিভিন্ন গোত্রপ্রধানদের নিয়ে আলমালা পরিষদ পরিচালিত হতো । এ সংস্থাটিকে আলমালা বা সিনেট বলা হতো ।
২০. প্রশ্ন :
আলমালার প্রজেক্ট বা কার্যক্রম কয়টি ছিল ?
উত্তর :
আলমালার নিম্নলিখিত ৫টি প্রজেক্ট বা কার্যক্রম ছিল ।
( ক ) সিকায়াহ : হজ্জ্বযাত্রীদের পানি সরবরাহ ও তত্ত্বাবধান করা । 

( খ ) বিফাদাহ : হজ্জ্ব যাত্রীদের অভ্যর্থনা ও তত্ত্ববধান করা । 

( গ ) যুদ্ধের সময় পতাকা বহন করা ।

( ঘ ) নায়াসী : সৌর ও চন্দ্রের বছরের মধ্যে পঞ্জিকার সামঞ্জস্যতা বিধান করা । 

( ঙ ) হিজাবা : কাবা গৃহকে রেশমী কাপড় দ্বারা আবৃত করা ।
২১. প্রশ্ন : দারুন নাদওয়া কাকে বলে ?
উত্তর :
দারুন নাদওয়া হচ্ছে তদানিন্তন সময়ের বর্তমান জাতীয় সংসদ ভবন । সেখানে আলমালার সদস্যমন্ডলী বসে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা পর্যালোচনা ও সিদ্ধন্ত গ্রহণ করতো ।
২২. প্রশ্ন : 

প্রাক ইসলামী যুগে আরবদের বিশেষ কয়েকটি গুণের কথা উল্লেখ করো ।

উত্তর :

( ক ) বাণিজ্য প্রিয়তা । 

( খ ) অতিথি পরায়নতা । 

( গ ) কাব্য প্রীতি । 

( ঘ ) গোত্র প্রীতি । 

( ঙ ) গোত্রীয় প্রধানের আনুগত্য ।


বিশ্বনবীর (সা:) এর বংশধারা :

০১ নং-প্রশ্ন : বিশ্বনবী কোন বংশে জন্ম গ্রহণ করেন ?

উত্তর :

হযরত ইবরাহীম (আ:) এর বংশে । ইবরাহীম (আ:) এর দুই পুত্র : 
হযরত ইসমাঈল ও ইসহাক (আ:) । বিশ্বনবী হযরত ইসমাঈল (আ:)এর বংশে আরবের বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন ।
০২নং প্রশ্ন : বিশ্বনবীর বংশ তালিকা বর্ণনা কর :
উত্তর :
পিতার দিক থেকে :
মুহম্মাদ > আব্দুল্লাহ > আব্দুল মুত্তালিব > হাশিম > আবদে মান্নাফ > কুসাই ইবনু কিলাব > মুররাহ > কা > লুয়াই > গালিব > ফিহির > মালিক > নাযর > কিনানা > খুযায়মা > মুদরিকা > ইলিয়াস > মুযার > নিযার > মাআয > আদনান > উদ > মুকাওয়াস > নাহুর > তাইরাহ > ইয়ারুব > ইয়াশজুর> নাবিত > ইসমাঈল > ইবরাহীম ।

মাতার দিক থেকে :

মুহাম্মাদ > আমিনা > ওহাব > আবদে মান্নাফ > যুহরা > কিলাব > মুররাহ >
০৩.নং প্রশ্ন : আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানাদির বর্ণনা দাও ।
উত্তর :
আব্দুল মুত্তালিবের ঔরষে দশ পুত্র ও ছয় কন্যা জন্ম গ্রহণ করেন । 
পুত্ররা হলেন :
০১. আব্বাস, ০২. আবু লাহাব, ০৩. হামযাহ, ০৪. আবু তালিব, ০৫. যুবায়ের, ০৬. হারিছ, ০৭.মুকাওয়িম, ০৮. যিরার, ০৯. মুগীরাহ হাজাল, ১০. আব্দুল্লাহ ।
কন্যারা হলেন :
০১. সাফিয়া, ০২. উম্মে হাকিম আলবায়দাহ, ০৩. আতিকাহ ,০৪.উমায়মাহ,০৫. আরওয়া , ০৬. বাররাহ ।

০৪নং প্রশ্ন : রাসূলে কারীম (সা:) এর সন্তানাদির বিবরণ দাও ।
উত্তর :
বিবি খাদিজার গর্ভে দুই ছেলে ও চার মেয়ে জন্ম গ্রহণ করেন । 
ছেলেরা হলেন যথাক্রমে ০১. কাসিম, ০২. আব্দুল্লাহ
মেয়েরা হলেন- ০১. জয়নাব, ০২. রুকাইয়া ।০৩. উম্মে কুলছুম, ০৪. রুকাইয়া ।

বিশ্বনবীর জন্ম ও শৈশবকাল
০৫নং প্রশ্ন : আমাদের নবীর নাম কি ?
উত্তর : মুহাম্মাদ (সা:) ।
০৬ নং প্রশ্ন : মুহাম্মাদ অর্থ কি ?
উত্তর : প্রশংশিত ।
০৭ নং প্রশ্ন : মুহাম্মাদের দ্বিতীয় নাম কি ?
উত্তর : আহমাদ ।
০৮ নং প্রশ্ন : আহমাদ অর্থ কি ?
উত্তর : অধিক প্রশংসাকারী ।
০৯ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) এর মুহাম্মাদ নামকরণ কে করেন ?
উত্তর : তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিব ।
১০ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:)এর আহমাদ নামকরণ কে করেন ?
উত্তর : তাঁর মাতা বিবি আমিনা ।
১১ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:)এর গোত্রের নাম কি ?
উত্তর : হাশিম গোত্র ।
১২ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) কোন বংশে জন্ম গ্রহণ করেন ?
উত্তর : কুরাইশ বংশে ।
১৩নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:)এর পিতা-মাতার নাম কি ?
উত্তর : পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা ।
১৪ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) এর দাদার নাম কি ?
উত্তর : আব্দুল মুত্তালিব ।
১৫ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:)এর নানার নাম কি ?
উত্তর : আব্দুল ওহাব ।
১৬ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) এর পূর্বপুরুষ কে ছিলেন ?
উত্তর : হযরত ইবরাহীম (আ:) ।
১৭ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) কত খ্রীষ্টব্দে ও কত তারিখে জন্ম গ্রহণ করেন ?
উত্তর : বিশুদ্ধ প্রাচীন সীরাত গ্রন্থের বর্ণনা মতে ৫৭১ খ্রীষ্টাব্দে ৯ই রবিঊল ।
১৮ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) এর কত বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যান ?
উত্তর : তাঁর জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা মারা যান ।
১৯ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:)কত বছর বয়সে তাঁর মাতাকে হারান ? 
উত্তর : ছয় বছর বয়সে ।
২০ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:)এর প্রথমা দুধমাতার নাম কি ?
উত্তর : আবুলাহাবের দাসী সুওয়াইবা ।
২১ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) এর দ্বিতীয়া দুধমাতার নাম কি ছিল ?
উত্তর : বিবি হালিমা ।
উত্তর : বনু সাদ গোত্রের ।
২৩ নং প্রশ্ন : শিশুনবীর কত বছর বয়সে তাঁর দাদা মারা যান ?
উত্তর : আট বছর বয়সে ।
২৪ নং প্রশ্ন : দাদার মৃত্যুর পর শিশুনবীরে অভিভাবক কে হন ?
উত্তর : তাঁর চাচা আবুতালিব ।
২৫ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) এর জন্মের সময় কি কি অলৌকিক নিদর্শন প্রকাশ পায় ?
উত্তর :
(
ক) কাবাঘরের মূর্তিগুলো ভূলণ্ঠিত হয়েছিল । 
(
খ) পারস্য সম্রাটের রাজপ্রাসাদের চৌদ্দটি গন্বুজ ধ্বসে পড়েছিল । 
(
গ)পারস্য রাজ্যের প্রজ্বলিত অগ্নিকুন্ডটি নিভে গিয়েছিল । 
(
ঘ)সিরিয়ার মরুভূমিতে নহর প্রবাহিত হয়েছিল ।
২৬ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) এর জন্মের বছরকে আমুল ফিল বা হস্তিবাহিনীর বছর বলা হয় কেন ?
উত্তর : যেহেতু ঐ বছর ইয়ামেনের বাদশাহ আবরাহা পবিত্র কাবাঘর ধবংস করার লক্ষ্যে মক্কা গমন করে, তাই ঐ বছরকে আমুল ফিল বলা হয় ।
২৭ নং প্রশ্ন : আবরাহা ও হস্তিবাহিনী কিভাবে ধ্বংস হয় ?
উত্তর : তাদের ধ্বংস করার জন্য আল্লাহ তায়ালা ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি পাঠালেন । পাখিদের ঠোঁটে ও পায়ে একটি করে পাথর ছিল । হস্তিবাহিনীর উপর পাথর বর্ষণ তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করা হয় ।
২৮ নং প্রশ্ন : মহনবী (সা:) এর আক্বিকা কতদিনে হয় এবং তাঁর আক্বিকা কে করেন ?
উত্তর : মহানবী (সা:) এর জন্মের সপ্তম দিনে তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর আক্বিকা করেন ।
২৯ নং প্রশ্ন : শিশুনবী (সা:) বিবি হালিমার গৃহে কত বছর অবস্থান করেছিলেন ?
উত্তর : পাঁচ বছর ।
৩০ নং প্রশ্ন : শিশুনবী বিবি হালিমার কয়টি স্তন পান করতেন ? 
উত্তর : একটি ।
৩১ নং প্রশ্ন : বিবি হালিমার অপর স্তন কে পান করতেন ?
উত্তর : শিশুনবীর দুধ ভাই হালিমার পুত্র আব্দুল্লাহ ।
৩২ নং প্রশ্ন : শিশুনবীর পালক পিতা অর্থাৎ- বিবি হালিমার স্বামীর নাম কি ছিল ?
উত্তর : হারিছ আবনু আব্দুল উযযা ।
৩৩ নং প্রশ্ন :শিশুনবীর দুধ ভাই-বোন কতজন ও তাদের নাম কি ছিল ? 
উত্তর : তিনবোন ও এক ভাই ছিল । তাদের নাম যথাক্রমে আনিছা, হুযায়ফা, ছায়েমা ও আব্দুল্লাহ ।
৩৪ নং প্রশ্ন : শিশুনবী কোন মাতার কতদিন দুগ্ধ পান করেন ?
উত্তর : জন্মের পর প্রথম সাত দিন নিজ মাতার দুগ্ধ পান করেন । এরপর আবু লাহাবের দাসী সুয়াইবার দুগ্ধ পান করেন আট দিন । এরপর ধাত্রীমা হালিমা বিনতে আবি জোয়াইব আসসাদিয়ার দুগ্ধ পান করেন দুই বছর । দুধ ছাড়ার পরই রাসূল (সা:) এর মূখে কথা ফোটে ।
৩৫ নং প্রশ্ন : শিশুনবী মুহাম্মাদ (সা:) হালিমার গৃহে অবস্থানকালিন সময়ে কি কি অলৌকিক ঘটনা প্রকাশিত হয়েছিল ?

উত্তর :
০১. বিবি হালিমার স্তন থেকে অধিক পরিমাণ দুধ নেমে আসে । 
০২. গৃহপালিত মেষগুলো অধিক মোটাতাজা হলো । 
০৩. খেজুর বৃক্ষে প্রচুর পরিমান খেজুর ফলন হতে লাগলো । 
০৪. শিশুনবী বিবি হালিমার একটি স্তন পান করতেন । অপর স্তন তাঁর দুধ ভাই আব্দুল্লাহর জন্য রেখে দিতেন । 
০৫. চার বছর বয়সে তাঁর সিনা চাক করা হয় ।
৩৬ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) এর উপনাম কি ছিল ?
উত্তর : আবুল কাসেম ।
৩৭ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) এর মাতা বিবি আমিনা কখন ও কোথায় ইন্তেকাল করেন ?
উত্তর : ৫৭৬ খ্রীষ্টাব্দে মহানবী (সা:)এর ছয় বছর বয়সে মধীনা থেকে ফেরার পথে আবওয়ানামক স্থানে ইন্তেকাল করেন । তাঁর দাসী উম্মে আইমান তাঁকে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিবের নিকট পৌছিয়ে দেন ।
৩৮ নং প্রশ্ন :মহানবী (সা:) তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিবের নিকট কত বছর ধরে লালিত পালিত হন ?
উত্তর : মহানবী (সা:) এর জীবনে ৬-৭ বছর বয়স পর্যন্ত দাদা আব্দুল মুত্তালিবের নিকট প্রতিপালিত হন ।
৩৯ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) কত বছর বয়সে কাবাঘর নির্মাণ উপলক্ষ্যে পাথর বহন করেন ?
উত্তর : মহানবী (সা:) এর সাত বছর বয়সে কাবাঘর মেরামতের জন্য পাথর বহন করেন ।
৪০ নং প্রশ্ন : বিশ্বনবীর সিনা চাক কতবার হয়েছিল ?
উত্তর : মোট চারবার হয়েছিল । যথাক্রমে তা উল্লেখ করা হলো :
০১. বিশ্বনবীর চার বছর বয়সে । বিবি হালিমার গৃহে থাকাকালিন সময়ে । 
০২. দশ মতান্তরে বার বছর বয়সে । 
০৩. নবুওয়্যাত লাভের প্রাককালে । 
০৪. মিরাজ গমনের প্রাককালে ।
৪১নং প্রশ্ন : বালক মুহাম্মাদ (সা্:)প্রথম শামদেশে কত বছর বয়সে এবং কার সাথে সফর করেন ?
উত্তর : বালক মুহাম্মাদ (সা:) বার বছর বয়সে প্রথম তাঁর চাচা আবু তালিবের সাথে শাম তথা সিরিয়া সফর করেন ।
৪২ নং প্রশ্ন : এ সফর বা ভ্রমণের উদ্দেশ্য কি ছিল ?
উত্তর : বাণিজ্য ।
৪৩. শাম বা সিরিয়া গমনের পথে যে খ্রীষ্টান পাদরীর সাথে সাক্ষাৎ হয় তাঁর নাম কি ?
উত্তর : বুহায়রা
৪৪ নং প্রশ্ন : বুহায়রা পাদ্রী বালক মুহাম্মাদকে চিনতে পেরে কি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন ?
উত্তর : বুহায়রা পাদ্রী আবু তালিবকে বলেছিলেন : তোমার এই ভাতিজা ভবিষ্যতে নবী হবেন ।
যুবক মুহাম্মাদ ( সা: )
৪৫ নং প্রশ্ন : হরব উল ফুজ্জারের যুদ্ধ কোন মেলাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয় ?
উত্তর :
ওকায মেলা ।
৪৬নং প্রশ্ন : এই যুদ্ধ কত বছর স্থায়ী ছিল ?
উত্তর :
পাঁচ বছর ।
৪৭ নং প্রশ্ন : কোন কোন গোত্রের মাঝে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় ?
উত্তর : আরবের কায়েস ও কুরাইশ গোত্র ।

৪৮ নং প্রশ্ন : ফুজ্জারের যুদ্ধ সময় শুরু হয়, সে সময় বালক মুহাম্মাদের বয়স কত ছিল ?
উত্তর : পনের বছর ।
৪৯ নং প্রশ্ন : যুবক মুহাম্মাদ কত বছর বয়সে হিলফুল ফুযুল সংগঠনটি কায়েম করেন ?
উত্তর : ১৭ বছর বয়সে ।
৫০ নং প্রশ্ন : কেন তিনি এই সংগঠনটি কায়েম করেন ?
উত্তর : ফুযযারের যুদ্ধের বীভৎসতা ও নিষ্ঠুরতা দেখে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত ও মর্মাহত হন । তাই তিনি ৫৯০ খ্রীষ্টাব্দে এই আত্মঘাতী যুদ্ধ বন্ধ করার লক্ষ্যে মক্কার কিছু তরুনদের নিয়ে একটি শান্তি কমিটি গঠন করেন । যার নাম হিলফুল ফুযুল ।
৫১ নং প্রশ্ন : হিলফুল ফুযুলের কত দফা কর্মসুচী ছিল ?
উত্তর : পাঁচ দফা ।
৫২ নং প্রশ্ন : হিলফুল ফুযুলের পাঁচদফা কর্মসূচীগুলো কি কি ?
উত্তর :
০১ . আমরা বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের মাধ্যমে সমাজ থেকে অশান্তি দূর করবো । 
০২. পথিকের জান মালের হেফাজত করবো । 
০৩. গরীবদের সাহায্য করবো । 
০৪. মাজলুমদের সাহায্য করবো ।
০৫. কোন জালিমকে মক্কায় আশ্রয় দেব না ।
৫৩ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) এর কত বছর বয়সে কাবাঘর নির্মাণ করা হয় ?
উত্তর : চৌত্রিশ বছর বয়সে ।
৫৪ নং প্রশ্ন : কাবাঘর নির্মাণ শেষে হাজরে আসওয়াদ পাথরটি যথাস্থানে স্থাপন নিয়ে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়, তা কার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় ?
উত্তর : যুবক মুহাম্মাদ ( সা: ) এর মাধ্যমে ।
৫৫ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) কত বছর বয়সে দ্বিতীয়বার বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে শাম দেশে যান এবং এই সফরে সফরসঙ্গী কে ছিলেন ?
উত্তর : ২৪ বছর বয়সে মহানবী ( সা: ) হযরত আবুবকর সিদ্দিক ( রা: ) এর সঙ্গে দ্বিতীয়বার বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে শাম দেশে যান ।
৫৬ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) এর কত বছর বয়সে তৃতীয়বার বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে শামদেশে যান ?
উত্তর : মহানবী ( সা: ) এর ২৫ বছর বয়সে বিবি খাদিজার মালামাল নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে শাম দেশে যান ।
৫৭ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) কত বছর বয়সে এবং কত খ্রীষ্টাব্দে বিবি খাদিজাকে বিবাহ করেন ?
উত্তর : ২৫ বছর বয়সে ৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ।
৫৮ নং প্রশ্ন : বিবাহের সময় বিবি খাদিজার বয়স কত ছিল ?
উত্তর : ৪০ বছর
৫৯নং প্রশ্ন: আল আমিন কার উপাধি ? এ উপাধি কারা প্রদান করেন ?
উত্তর : আলআমীন রাসূল ( সা: ) এর উপাধি । মক্কার মুশরিক কুরাইশরা তাঁকে এ উপাধিতে ভূষিত করেন ।
৬০ নং প্রশ্ন : আলআমীন শব্দের অর্থ কি ?
উত্তর : পরম বিশ্বাসী ।
৬১ নং প্রশ্ন : বিবি খাদিজার সহিত মহানবীর বিবাহের মোহরানা কত ছিল ?
উত্তর : ৪০০ দিরহাম ও ২০টি উষ্ট্রী ।
৬২ নং প্রশ্ন : বিবি খাদিজার উপাধি কি ছিল ?
উত্তর : তাহেরা ( পবিত্রা ) ।
৬৩ নং প্রশ্ন : কত বছর বয়সে বিবি খাদিজা ইন্তেকাল করেন ?
উত্তর : ৬৫ বছর বয়সে ।
৬৪ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) মোট কতটি বিবাহ করেন ?
উত্তর : ১১ টি , মতান্তরে ১৩ টি ।
৬৫ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) এর পালক পুত্রের নাম কি ছিল ?
উত্তর : হযরত যায়েদ ইবনু হারিছা ( রা: ) ।
৬৬ নং প্রশ্ন : বিশ্বনবী ( সা: ) কত বছর বয়সে হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন ছিলেন ?
উত্তর : বিশ্ব নবীর জীবনের ৩৫ বছর সময়কাল থেকে ৪০ বছর সময়কাল পর্যন্ত মোট পাঁচ বছর ।
৬৭ নং প্রশ্ন : কোন সাহাবীর নাম আলক্বুরআনে উল্লেখিত হয়েছে ?
উত্তর: হযরত যায়েদ ইবনু হারেছা ( রা: ) ।
৬৮ নং প্রশ্ন : রাসূলে কারীম ( সা: ) এর বিবিগণের নাম লিখ ।
উত্তর :
০১. হযরত খাদিজা ( রা: ) । 
০২. সওদা ( রা: ) । 
০৩. আয়েশা ( রা: ) । 
০৪. যয়নাব বিনতে খুযায়মা ( রা: ) । 
০৫. উম্মে সালমা ( রা: ) । 
০৬. যয়নাব বিনতে জাহাশ ( রা: ) । 
০৭ . হাফসা বিনতে উমার ( রা: ) । 
০৮. যোয়াইরিয়া ( রা: ) । 
০৯. রায়হানা ( রা: ) । 
১০. মারিয়া কিবতিয়া ( রা: ) । 
১১. সাফিয়া ( রা: ) 
১২. উম্মে হাবিবা ( রা: ) । 
১৩. মাইমুনা ( রা: ) ।
৬৯ নং প্রশ্ন : রাসূলে কারীম ( সা: ) এর কোন সন্তানের মাধ্যমে তাঁর বংশধারার বিস্তৃতি ঘটে ?
উত্তর : একমাত্র ফাতিমা ( রা: ) এর মাধ্যমে ।

বিশ্বনবী (সা:) এর মাক্কী জীবন :

০১ নং প্রশ্ন : বিশ্ব নবীর ২৩ বছর নবুওয়্যাতী জীবন কত ভাগে বিভক্ত ? 
উত্তর : দুভাগে বিভক্ত ।
( ক ) মাক্কী জীবন । সময়কাল প্রায় ১৩ বছর । 
(
খ ) মাদানী জীবন । সময়কাল প্রায় ১০ বছর ।
০২ নং প্রশ্ন : বিশ্ব নবীর মাক্কী জীবনের কয়টি স্তর ও কি কি ?
উত্তর : চারিটি স্তর । যথাক্রমে
প্রথম স্তর : নবুওয়্যাত প্রাপ্তির পর থেকে প্রথম তিন বছর কাল । এ সময় দাওয়াত ও প্রচারের কাজ গোপনে আঞ্জাম দেওয়া হয় ।
দ্বিতীয় স্তর : দাওয়াত ও প্রচারের কাজ প্রকাশ্য ঘোষণা । এর সময় প্রায় দু বছরকাল ।
তৃতীয় স্তর : রাসূল ( সা: ) ও মুসলমানদের উপর পাসবিক নির্যাতনের ধারা শুরু হয় । এভাবে চলে পাঁচটি বছরকাল ।
চতুর্থ স্তর : আবু তালিব ও বিবি খাদিজার ওফাতের পর থেকে হিজরাতের প্রাক্কাল পর্যন্ত প্রায় তিন বছরকাল ।
০৩ নং প্রশ্ন : কত খ্রীষ্টাব্দে বিশ্বনবী ( সা: ) নবুওয়্যাত লাভ করেন ?
উত্তর : ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ২৭শে রামাযান ।
০৪ নং প্রশ্ন : নবুওয়্যাত লাভের সময় বিশ্বনবীর বয়স কত ছিল ?
উত্তর : ৪০ বছর ।
০৫ নং প্রশ্ন : নবী কাকে বলে ?
উত্তর : মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতির হেদায়েতের লক্ষ্যে যে সব মহামানব দুনিয়াতে প্রেরীত হয়েছেন , যারা নবুওয়্যাত লাভের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানবজাতিকে সত্য পথের দিকে নি:স্বার্থভাবে আহবান জানিয়েছেন , তাদেরকে নবী বলা হয় ।
অন্যকথায়- যে সমস্ত মহাপুরুষ আসমানী কিতাব প্রাপ্ত হননি , বরং 
পূর্ববর্তী রাসূলের প্রাপ্ত কিতাব অনুযায়ী তাঁর শরীয়াতের দিকে মানুষদেরকে আহবান করেন, তাদেরকে নবী বলা হয় ।
০৬ নং প্রশ্ন : নবীরা যে দায়িত্ব পালন করেন সেই কাজকে কি বলা হয় ?
উত্তর : নবীদের কাজকে নবুওয়্যাত বলা হয় ।
০৭ নং প্রশ্ন : রাসূল কাকে বলে ?
উত্তর : রাসূল শব্দের আভিধানিক অর্থ- প্রেরীত ব্যক্তি , দূত বা পত্র বাহক ।
পরিভাষায় যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যুগোপযোগী শরীয়াত সন্বলিত কিতাব নিয়ে আসেন , অত:পর তিনি নিজে তার উপর আমল করেন এবং মানুষের কাছে তা পৌছিয়ে দেন , তাকে রাসূল বলে ।
০৮ নং প্রশ্ন : রিসালাত কাকে বলে ?
উত্তর : রাসূল দ্বারা পালনকৃত দায়িত্বকে রিসালাত বলে ।
০৯. প্রশ্ন : বিশ্বনবী কাকে বলে ?
উত্তর : বিশ্ব মানবতার হেদায়েতের লক্ষ্যে যিনি বিশ্বজনীন আদর্শ নিয়ে দুনিয়াতে প্রেরীত হয়েছেন, তাঁকে বিশ্বনবী বলে ।
১০. প্রশ্ন : মুহাম্মাদ ( সা: ) বিশ্বনবী হওয়ার ব্যাপারে কুরআনিক দলিল বর্ণনা করো ।
উত্তর : প্রথম দলীল :
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا- ( سورة الاعراف ـ 158)
অনুবাদ: হে নবী আপনি বলে দিন ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরীত হয়েছি । ( সূরাহ আল আরাফ=আয়াত- ১৫৮)
দ্বিতীয় দলীল :
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا ـ ( سورة سبا ـ 28 )
অনুবাদ : আর হে নবী ! আমি আপনাকে গোটা বিশ্ববাসীর জন্য সুসংবাদ বাহক ও ভীতি প্রদর্শক হিসেবে প্রেরণ করেছি । ( সূরাহ সাবা= আয়াত: ২৮ )
১১ নং প্রশ্ন : খাতামুন নাবীয়ীন শব্দের অর্থ কি ?
উত্তর : খাতামুন্নাবীয়ীন শব্দের অর্থ নবীদের মধ্য থেকে শেষ নবী ।
১২ নং প্রশ্ন : খাতামুন্নাবীয়ীন কার উপাধি ? কেন এ উপাধিতে ভূষিত করা হলো ?
উত্তর : বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) এর উপাধি । যেহেতু তিনি সর্বশেষ নবী , তাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না । তাই তাঁকে খাতামুন্নাবীয়ীন উপাধিতেভূষিত করা হয়েছে ।
১৩ নং প্রশ্ন : বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) খাতামুন্নাবীয়ীন হওয়ার ব্যাপারে কুরআনিক দলীল বর্ণনা করো ।
উত্তর :
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا – ( سورة الاحزاب ـ 40 )
অনুবাদ : মুহাম্মাদ ( সা: ) তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নন , বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও খাতামুন্নাবীয়ীন হিসেবে প্রেরীত হয়েছেন । আর আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি বিষয়ে সম্যক অবহিত । ( সূরাহ আহযাব =আয়াত:৪০ )
১৪ নং প্রশ্ন : রাহমাতুল লিল আলামীন ( সমগ্র সুষ্টি জগতের জন্য্য রহমত ) কার উপাধি ?
উত্তর : রাহমাতুল লিল আলামীন বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূললুল্লাহ ( সা: ) এর উপাধি । এটি সূরাহ আন্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে কারিমায় উল্লেখিত হয়েছে ।
আয়াত : 
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ ـ ( سورة الانبياء = 107 ) 
অনুবাদ : আর হে নবী ! আমি আপনাকে বিশ্ব জগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি । ( সূরাহ আন্বিয়া : আয়াত- ১০৭ )
১৫নং প্রশ্ন : কোন স্থানে এবং কে সর্বপ্রথম ওহী নিয়ে আসেন ?
উত্তর : হেরা গুহায় সর্ব প্রথম জিবরাঈল ( আ: ) ওহী নিয়ে আসেন ।
১৬ নং প্রশ্ন : সর্বপ্রথম কোন সূরাহ নাযিল হয় ?
উত্তর : সূরাহ আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত ।
১৭ নং প্রশ্ন : হযরত জিব্রাঈল ( আ: ) কতবার বিশ্ব নবীর নিকট আগমন করেন ?
উত্তর : চব্বিশ হাজার বার ।
১৮ নং প্রশ্ন : পুরুষদের মধ্যে কারা সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ?
উত্তর : পুরুষদের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তারা হলেন যথাক্রমে ০১. হযরত আলী ( রা: ) , ০২. রাসূল ( সা: ) এর পালকপুত্র যায়েদ ইবনু হারেসা (রা  :) , ০৩. আবুবকর সিদ্দিক (রা:) , ০৪. হযরত ওসমান গণি ( রা : ) , ০৫. হযরত বেলাল ( রা :) , ০৬. হযরত খাব্বাব ( রা: ) প্রমূখ ।
১৯ নং প্রশ্ন : নারীদের মধ্যে কারা সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন ?
উত্তর : নারীদের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন , তারা হলেন যথাক্রমে -০১. বিবি খাদিজা ( রা :) , ০২. ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ ( সা: ) , ০৩.ফাতিমা বিনতে খাত্তাব ( রা: ) , ০৪. আছমা বিনতে আবুবকর ( রা: ) । ০৫. 
আয়েশা বিনতে আবুবকর ( রা: ) প্রমূখ ।
২০ নং প্রশ্ন : নারীদের মধ্যে ইসলামের প্রথম শহীদ কে ?
উত্তর : হযরত সুমাইয়া ( রা:) ।
২১ নং প্রশ্ন : পুরুষদের মধ্যে ইসলামের প্রথম শহীদ কে ?
উত্তর : হযরত হারিস ইবনু হালা ( রা: ) ।
২২ নংপ্রশ্ন : ইসলামের প্রথম দুজন মুয়াজ্জিনের নাম লিখ ।
উত্তর : ০১. হযরত বেলাল ( রা: ) 
০২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মে মাকতুম ।
২৩ নং প্রশ্ন : বিশ্ব নবীর দুজন খাদেমের নাম লিখ ।
উত্তর :
০১. হযরত আনাস ( রা: ) । ব্যক্তিগত খাদেম । 
০২. হযরত বেলাল ( রা: ) । পারিবারিক খরচপত্রের দায়িত্বে নিয়োজিত খাদেম ।
২৪ নংপ্রশ্ন : রাসূল ( সা: ) এর দু জন বিশিষ্ট দেহরক্ষী সাহাবীর নাম লিখ ।
উত্তর : ০১. সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাছ ( রা: ) 
০২. সাদ ইবনু মুয়ায ( রা: )
২৫ নং প্রশ্ন : হযরত উমার (রা:) কখন ইসলাম গ্রহণ করেন ?
উত্তর : নবুওয়য়্যাতের ষষ্ঠ বছরে । হযরত হামযাহ ( রা:) এর ইসলাম গ্রহণের তিনদিন পর ।
২৬ নং প্রশ্ন : হযরত হামযাহ কখন ইসলাম গ্রহণ করেন ?
উত্তর : নবুওয়্যাতের ষষ্ঠ বছর জিলহাজ্জ্ব মাসে ।
২৭ নং প্রশ্ন : রাসূলে কারীম ( সা: ) কার ইসলাম গ্রহণের জন্য দোওয়া করেছিলেন ?
উত্তর : হযরত উমারের জন্য ।
২৮নং প্রশ্ন : কার ইসলাম গ্রহণের পর কাবা ঘরে প্রকাশ্যে নামায আদায় করা হয় ?
উত্তর : হযরত উমারের ইসলাম গ্রহণের পর ।
২৯ নং প্রশ্ন : ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম কাবাঘরের উদ্দেশ্যে যে মিছিলটি বের করা হয় , সেটি কার নেতৃত্বে ?
উত্তর : মিছিলটি দুই কাতার করে একটি কাতারের নেতৃত্ব দেন হযরত উমার ( রা: ) এবং অপর কাতারেরে নেতৃত্ব দেন হযরত আমীর হামযাহ । 
- (
তথ্যসূত্র : তারিখে বেদায়াহ ) 
- 
৩০নং প্রশ্ন : নবুওয়্য্যাতের কত বছরে এবং কত খ্রিষ্টাব্দে মুসলমানেরা সর্বপ্রথম আবিসিনিয়ায় হিজরাত করেন ?
উত্তর : নবুওয়্যাতের ৫ম বর্ষে ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে ।
৩১নং প্রশ্ন : আবিসিনিয়ায় প্রথম হিজরাতকারী মুসলমানদের সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : সর্বমোট ১৫ জন । তন্মধ্যে ১১ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা ।
৩২ নং প্রশ্ন : আবিসিনিয়ায় প্রথম হিজরাতকারী কাফেলার নেতুত্ব প্রদান করেন কে ?
উত্তর : হযরত ওসমান ( রা: )
৩৩ নং প্রশ্ন : আবিসিনিয়ার বাদশাহর নাম কি ?
উত্তর : নাজ্জাশী ।
৩৪ নং প্রশ্ন : বাদশাহ নাজ্জাশী কি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ?
উত্তর : হ্যাঁ ।
৩৫ নং প্রশ্ন : রাসূলে কারীম ( সা: ) কার মৃত্যু সংবাদ শুনে গায়েবানা জানাযার নামায পড়ান ?
উত্তর : বাদশাহ নাজ্জাশীর মৃত্যু সংবাদ শুনে ।
৩৬ নং প্রশ্ন : রাসূলে কারীম ( সা: ) এর চাচা আবু তালিবের মৃত্যু হয় কত সনে ?
উত্তর : নবুওয়্যাতের ১০ম বছরে ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে ।
৩৭ নং প্রশ্ন : নবুওয়্যাতের কত বর্ষে রাসূলে কারীম ( সা: ) মক্কার কুরাইশ নেতাদের চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করে দেখান ?
উত্তর : নবুওয়্যাতের ৭ম বর্ষে ।
৩৮ নং প্রশ্ন : নবুওয়্যাতের কত সনে মক্কার কুরাইশ নেতৃবৃন্দ বনুহাশিমসহ বিশ্বনবী ও মুসলমানদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করে ?
উত্তর : নবুওয়্যাতের ৭ম থেকে ১০ম পর্যন্ত তিন বছরকাল মক্কার কুরাইশ নেতৃবৃন্দ বনু হাশিমসহ বিশ্বনবী ও মুসলমানদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করে । তাঁরা শিবে আবি তালিব নামক গিরি গুহায় তিন বছর বন্দি জীবন যাপন করেন ।
৩৯ নং প্রশ্ন : নবুওয়্যাওতর কত সনে মহানবী ( সা: ) দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে তায়েফ গমন করেন ?
উত্তর : নবুওয়্যাতের একাদশ সনে ৬২০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাররাম মাসে ।
৪০নং প্রশ্ন : বিশ্বনবীর তায়েফ সফরের সফরসঙ্গী কে ছিলেন ?
উত্তর : রাসূলে কারীম ( সা: ) এর পালকপুত্র হযরত যায়েদ ইবনু হারেছা (রা:
৪১ নং প্রশ্ন : মিরাজ শব্দের অর্থ কি ?
উত্তর : সিড়ি বা উর্ধ্বে গমন ।
৪২ নং প্রশ্ন : মিরাজ কোন সনের কত তারিখে সংঘটিত হয়েছিল ?
উত্তর : মিরাজ সংঘটিত হওয়ার সঠিক তারিখ ও সন সম্পর্কে মুহাদ্দেসীন , ও ঐতিহাসিকদের মাঝে মত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় । সুপ্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ সীরাত গ্রন্থ রাহিকুল মাখতুমের গ্রন্থকার আল্লামা সাফিউর রহমান মুবারকপুরী বলেন : মিরাজের তারিখ ও দিনক্ষণ সম্পর্কে সীরাতকরাদের মাঝে ছয়টি মতামত পরিলক্ষিত হয়েছে । তনমধ্যে তিনটি মত প্রাধান্য্য পেয়েছে ।
০১. নবুওয়্যাতের দ্বাদশ দশম বর্ষে ২৭শে রজব রাতে । 
০২. হিজরতের ১৪ মাস পুর্বে , নবুওয়্যাতের ১৩ বছরে মুহাররাম মাসে । 
০৩. হিজরতের এক বছর পূর্বে নবুওয়্যাতের ১৩ বছরে রবিউল আউয়াল মাসে ।
৪৩ নং প্রশ্ন : মিরাজকে ক্বুরআনে কি বলা হয়েছে ?
উত্তর : ইসরা ।
৪৪ নং প্রশ্ন : ইসরা অর্থ কি ?
উত্তর : রাত্রিকালীন ভ্রমন ।
৪৫ নং প্রশ্ন : ইসরা সংক্রান্ত ক্বুরআনের আয়াত লিখ ।
উত্তর :
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آَيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ( سورة الاسراء ـ 1) 
অনুবাদ : পবিত্র তিনি সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর বান্দা মুহাম্মাদকে রাত্রিবেলা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আক্বছা পর্যন্ত পরিভ্রমণ করিয়েছেন , যে মসজিদে আক্বছার চতুষ্পার্শে আমি বরকতময় করেছি । যাতে করে আমি আমার নিদর্শনাবলী তাঁকে দেখাতে পারি । নিশ্চয়ই তিনি মহাশ্রোতা ও মহাদ্রষ্টা । ( সূরাতুল ইসরা- আয়াত: ০১ )
৪৬নং প্রশ্ন : মিরাজের রজনীতে রাসুলে কারীম ( সা: ) এর সফরসঙ্গী কে ছিলেন ?
উত্তর : ০১. হযরত জিব্রাঈল ( আ: ) 
০২. হযরত মিকাঈল ( আ: ) ।
৪৭ নং প্রশ্ন : বিশ্বনবীর মিরাজ সশরীরে সম্পাদিত হয়েছিল না স্বপ্নযোগে ?
উত্তর: সশরীরে ।
৪৮ নং প্রশ্ন : বিশ্বনবীর মিরাজ সশরীরে হওয়ার পক্ষে দলীল কি ?
উত্তর : দলীল পুর্বে বর্ণিত সূরাহ ইসরার ০১নং আয়াত ।
৪৯ নং প্রশ্ন : ইসরা ও মিরাজের মধ্যে পার্থক্য কি ?
উত্তর : মক্কা মুয়াজ্জামা তথা মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাত্রিকালিন ভ্রমনকে ইসরা বলা হয় । আর মসজিদুল আকসা থেকে অলৌকিক সিড়ির মাধ্যমে সপ্ত আকাশের উপরে সিদরাতুল মুনতাহা অত:পর সেখান থেকে আরশে আযিম পর্যন্ত পরিভ্রমনকে মিরাজ বলা হয় ।
মোটকথা জমিন থেকে জমিনে পরিভ্রমনকে ইসরা বলে । আর জমিন থেকে উর্ধ্বাকাশে পরিভ্রমনকে মিরাজ বলে ।
৫০নং প্রশ্ন : বিশ্বনবীর মিরাজের রজনীতে যে বাহনে আরোহন করেছিলেন সেই বাহনটির নাম কি ছিল ?
উত্তর : সহীহ মুসলিমের বর্ণনানুযায়ী সে বাহনটির নাম বোরাক ।
৫১নং প্রশ্ন : বোরাকের আকৃতি ও রং কেমন ছিল ?
উত্তর : সহীহ মুসলিমের বর্ণনানুযায়ী বোরাক জন্তুটি খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং গাধার চেয়ে বড় । যার গায়ের রং ছিল সাদা ।
৫২ নং প্রশ্ন : সালাত কখন ফরজ হয় ?
উত্তর : মিরাজের রজনীতে ।
৫৩নং প্রশ্ন : রাসূলে কারীম ( সা: ) কি মিরাজের রজনীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে দর্শন করেছেন ?
উত্তর : সহীহ বুখারী ( হাদীস নং -৪৮৫৫ ) এবং সহীহ মুসলিম ( হাদীস নং-১৭৭-১৭৮ ) এর বর্ণনানুযায়ী রাসূলে কারীম ( সা: ) মিরাজের রজনীতে মহান আল্লাহকে দর্শন করেননি ।
৫৪ নং প্রশ্ন : মিরাজের রজনীতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মাতে মুহাম্মাদীকে কয়টি জিনিস দান করা হয়েছে ?
উত্তর : সহীহ মুসলিম ( হাদীস নং ২৭৯ ) এর বর্ণনানুযায়ী মিরাজের রজনীতে আল্লাহ তায়ালা উম্মাতে মুহাম্মাদকে তিনটি বস্তু দান করেছেন ।
০১. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত । 
০২. সুরাহ বাকারার শেষ দুই আয়াত । 
০৩. কোন ব্যক্তি শির্কমুক্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার অন্যান্য সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিবেন ।
৫৫ নং প্রশ্ন : রাসূলে কারীম ( সা: ) মিরাজের রজনীতে উর্ধ্ব জগতের কি কি নিদর্শন স্বচোক্ষে অবলোকন করেছেন ?
উত্তর : ০১. সাত আসমান । ০২. নবী- রাসূলগণের সঙ্গে সাক্ষাত ও পরিচিতি । ০৩. সিদরাতুল মুনতাহা । ০৪. বায়তুল মামুর ।০৫. জান্নাত ও জাহান্নাম ।০৬. হাউজে কাউছার । ০৭. মাকামে মাহমুদ । ০৮. লাওহে মাহফুজ । পরজগতের সমস্ত বস্তু নিচয় । সাত আসমানের যাবতীয় গোপন তথ্য ও রহস্য বিষয় ।
৫৬ নং প্রশ্ন : রাসূলে কারীম ( সা: ) মিরাজের রজনীতে কোন আসমানে কোন নবীর সহিত সাক্ষাৎ ও পরিচিতি লাভ ঘটে ?
উত্তর : 
সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনানুযায়ী : 
০১. প্রথম আকাশে হযরত আদম ( আ: ) এর সহিত । 
০২. দ্বিতীয় আকাশে ইয়াহয়াহ ও ঈসা ( আ:) এর সহিত । 
০৩. তৃতীয় আকাশে ইউসুফ ( আ: ) এর সহিত । 
০৪. চতুর্থ আকাশে ইদরিস ( আ:) এর সহিত । 
০৫. পঞ্চম আকাশে হারুন ( আ: ) এর সহিত । 
০৬. ৬ষ্ঠ আকাশে মুসা ( আ: ) এর সহিত । 
০৭. ৭ম আকাশে ইবরাহীম ( আ: ) এর সহিত
৫৭ নং প্রশ্ন : আকাবার প্রথম শপথ কখন হয় এবং এর সদস্য সংখ্যা কতজন ছিল ?
উত্তর: নবুওয়্যাতের দশম বছর । ৬২১ খ্রিষ্টাব্দে হজ্জ্বের মৌসুমে ১২জন ইয়াসরীববাসী ( মদীনাবাসী ) রাসূলে কারীম ( সা: ) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করত: ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন । তাঁরা রাসূল ( সা: ) এর হাতে হাত রেখে কতকগুলো কথার উপর শপথ গ্রহণ করেন । এই ১২ জনের মধ্যে ১০জন ছিল মদীনার খাজরায গোত্রের এবং বাকি দুইজন ছিল আউস গোত্রের লোক ।
৫৮ নং প্রশ্ন : আক্বাবার দ্বিতীয় শপথ কখন হয় এবং এর সদস্য সংখ্যা কতজন ছিল ?
উত্তর : নবুওয়্যাতের ত্রয়োদশ বছর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে হজ্জ্বের মৌসুমে ইয়াসরীববাসী তথা মদীনার আউস ও খাজরায গোত্রদ্বয়ের ৭৩জন পুরুষ ও ০২জন মহিলা রাসূলে কারীম ( সা: ) এর সাথে মিলিত হন এবং তাঁরা কয়েকটি শর্তের উপর শপথ বাক্য পাঠ করেন ।
৫৯নং প্রশ্ন: আক্বাবার শপথের বাক্যগুলো কি কি ছিল ?
উত্তর :
আমরা একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত করবো । 
ব্যভিচারে লিপ্ত হবো না । 
চুরি, ডাকাতি বা অন্য কোন অসদোপায়ে পরের সম্পত্তি আত্মসাৎ করবো না । 
সন্তান হত্যা ও বলি দান করবো না ।
কারোর প্রতি মিথ্যা অপবাদ বা দোষারোপ করবো না । 
প্রতিটি কাজে ও কর্মে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মেনে চলবো ।

বিশ্বনবী ( সা: ) এর মাদানী জীবন :

০১নং প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ (সা: ) এর মাদানী জীবন কয়টি স্তরে বিভক্ত ? 
উত্তর : রাসূল ( সা: ) এর মাদানী জীবন মোটামোটি তিনটি স্তরে বিভক্ত । 
প্রথম স্তর : পহেলা হিজরী সনের ১২ই রবিউল আউয়াল মোতাবেক ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে সেপ্টেন্বর সোমবার হতে ৬ষ্ঠ হিজরীর যুলক্বাদাহ মাসে অনুষ্ঠিত হোদায়বিয়ার সন্ধি পর্যন্ত প্রায় ছয় বছর । এ সময় কাফির, মুনাফিকের মাধ্যমে ভেতরে ও বাইরে ইসলামের বিরূদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয় এবং বেশ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় । এ সময়ে ছোট-বড় ৫০টি যুদ্ধ ও অভিযান পরিচালিত হয় ।
দ্বিতীয় : মক্কারকুরাইশদের সাথে সন্ধি চলাকালিন সময় । যার মেয়াদকাল ৬ষ্ঠ হিজরীর যুলক্বাদাহ মাস হতে মক্কা বিজয় পর্যন্ত প্রায় দুবছর । এ সময় প্রধানত: ইহুদী ও তাদের মিত্রদের সাথে বড়-ছোট ২২টি যুদ্ধ সংঘটিত হয় ।
তৃতীয় : অষ্টম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পর হতে ১১হিজরীর রাসূল ( সা: ) এর মৃর্ত্যু পর্যন্ত প্রায় তিন বছর । এ সময়টি হলো ইসলামে বিজয়ের সময়কাল । এ সময়ে লোকেরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে থাকে । চারিদিক থেকে গোত্রনেতারা প্রতিনিধিদল নিয়ে মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করেন । রাসূল ( সা ) বিদেশী রাজন্যবর্গের নিকটে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে দূত মারফত পত্র প্রেরণ করেন । ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসলামের বিস্তৃতি ঘটে ।
০২ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) কত সনে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন ?
উত্তর : নবুওয়্যাতের ত্রয়োদশ বৎসর । ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে ৮ই রবিউল আউয়াল ।
০৩ নং প্রশ্ন : হিজরতের আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা বলো :
উত্তর : হিজরতের আভিধানিক অর্থ দেশত্যাগ , দেশান্তর বা প্রস্থান করা ।
আর পারিভাষিক সংজ্ঞা হলো- সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মাতৃভূমি ত্যাগ করে অন্য কোন ভূখন্ডে প্রস্থান করাকে হিজরত বলে ।

০৪ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) এর মদীনায় হিজরতের সময়টি কখন ছিল ? 
উত্তর : রাত্রিবেলা ।
০৫ নং প্রশ্ন : মহানবী (সা:) এর মদীনায় হিজরতের সফরসঙ্গী কে ছিলেন ?
উত্তর : হযরত আবুবকর সিদ্দিক ( রা: ) ।
০৬ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) হিজরতের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে তাঁর বিছানায় কাকে রেখে যান ?
উত্তর : হযরত আলী ( রা: ) কে ।
০৭ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) হিজরতের উদ্দেশ্যে যাত্রাপথে পথিমধ্যে কোথায় অবস্থান গ্রহণ করেন ?
উত্তর : গারে সাওর বা সওর পর্বতের গুহায় ।
০৮ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) ও তাঁর সফরসঙ্গী সাওর গুহায় কত সময় অবস্থান করেন ?
উত্তর : তিন রাত ।
০৯ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) হিজরতের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে পবিত্র কাবা ঘরকে সন্বোধন করে কি বলেছিলেন ?
উত্তর : তিনি পবিত্র কাবা ঘরের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন : হে কাবা ! পৃথিবীর যে কোন স্থান হতে তুমি আমার নিকট বেশি প্রিয় । কিন্তু তোমার লোকেরা তোমার বুকে আমাকে বাস করতে দিল না ।
১০ নং প্রশ্ন : গারে সাওরে বা সাওর গুহায় মহানবী ( সা: ) এর নিকট কাফেরদের গোপন সংবাদ কে পৌছাতো ?
উত্তর : হযরত আবুবকর সিদ্দিক ( রা: ) এর পুত্র আব্দুল্লাহ ।
১১ নং প্রশ্ন : গারে সাওরে মহানবী ( সা: ) এর নিকটে গোপনে খাবার কে পৌছাতো ?
উত্তর : আবুবকর সিদ্দিক ( রা: ) এর দাস আমর ইবনু ফুহায়রা । ছাগল চরাবার সময় গোপনে গারে সাওরে দুধ সরবরাহ করতেন ।
১২ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে কুরাইশ নেতৃবর্গ কতটি উট পুরষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিল ?
উত্তর : ১০০ টি ।
১৩ নং প্রশ্ন : কত তারিখে কোন দিন তিনি গুহা থেকে বের হয়েছিলেন ?
উত্তর : ৪ঠা রবিউল আউয়াল সোমবার ।
১৪ নং প্রশ্ন : রাসূল ( সা: ) মক্কা থেকে মদীনায় পৌছতে কতদিন সময় লাগে ?
উত্তর : আটদিন আট রাত । অন্যমতে চার দিন ।
১৫ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) কত তারিখে মদীনায় পদার্পন করেন ?
উত্তর : ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে ৩০শে সেপ্টেন্বর মোতাবেক ১২ই রবিউল আউয়াল শুক্রবার ।

১৬ নং প্রশ্ন : হিজরী সন কখন থেকে গণনা শুরু হয় ?
উত্তর : মহানবী ( সা: ) এর মদীনায় পদার্পনের তারিখ হতে ।
১৭ নং প্রশ্ন : হিজরী সন কে প্রবর্তন করেন ?
উত্তর : হযরত উমার ( রা: ) ।
১৮ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) মদীনায় প্রবেশ করে প্রথমে তিনি কোথায় অবস্থান করেন ?
উত্তর : কুবা নামক পল্লীতে ।
প্রশ্ন : কোবা কোথায় অবস্থিত ? সেখানে নবীজী কার গৃহে অবস্থান করেন ?
উত্তর : কুবা মদীনার পাশ্ববর্তী একটি উঁচু বস্তি এলাকা । প্রসিদ্ধ মতে বনু আওফ এর গোত্রে নবীজী অবস্থান করেন ।
১৯ নং প্রশ্ন : ইয়াসরিবের নাম পরিবর্তন করে মদীনাতুন্নবী নাম করণ করা হয় কখন থেকে ?
উত্তর : রাসূল ( সা: ) মদীনায় হিজরত করার পর থেকে ।
২০ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) মদীনার শহরে হিজরত করার পর কার বাড়িতে সর্বপ্রথম আতিথ্য গ্রহণ করেন ?
উত্তর : হযরত আবু আইয়ুব আনসারী ( রা: ) এর বাড়িতে । এখানে তিনি সাত মাস অবস্থান করেন ।
২১ নং প্রশ্ন : মহনবী ( সা: ) মদীনায় পৌছার পর তাঁর উষ্ট্রী কার বাড়ির সামনে গিয়ে বসে যায় ?
উত্তর : হযরত আবু আইয়ুব আনসারী ( রা: ) এর বাড়িতে ।
২২ নং প্রশ্ন : মদীনায় হিজরত করার পর মহানবী ( সা: ) সর্বপ্রথম কোন মসজিদ নির্মাণ করেন ?
উত্তর : মসজিদে কুবা । অর্থাৎ- কুবা নামক পল্লীতে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয় ।
২৩ নং প্রশ্ন : রাসূল ( সা : ) মদীনায় হিজরত কালীন সময়ে মদীনায় কোন কোন জাতি ও সম্প্রদায় বাস করতো ?
উত্তর : মোটামোটি চারিটি সম্প্রদায় বাস করতো । 
০১. মুসলিম । 
০২. পৌত্তলিক । 
০৩. ইহুদী । 
০৪. পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসরত খ্রিষ্টান সম্প্রাদায় ।
২৪ নং প্রশ্ন : মদীনায় তদানিন্তন সময়ে ইহুদীদের কয়টি গোত্র বাস করতো ?
উত্তর : তিনটি গোত্র : যথাক্রমে
০১ . বনু নাজির । 
০২ . বনু কুরায়জা । 
০৩ . বনু কায়নুকা ।
২৫ নং প্রশ্ন : সে সময় আউস গোত্রের নেতা কে ছিলেন ?
উত্তর : সাদ ইবনু মুয়ায
২৬ নং প্রশ্ন : খাজরাজ গোত্রের নেতা কে ছিলেন ?
উত্তর : সাদ ইবনু উবাদাহ । মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনে সুলুল ছিল খাযরায গোত্রের লোক ।
২৭ নং প্রশ্ন: ইয়াসরিববাসীরা কি রাসূল ( সা: ) এর আগমনের জন্য অপেক্ষা করছিল ?
উত্তর : 
তারা এই সংবাদ জানতে পেরেছিলেন যে, রাসূল ( সা: ) মক্কা থেকে মদীনাভিমূখে রওয়ানা হয়েছেন । রাসূল ( সা: ) এর শুভাগমন আসন্ন হয়ে গেছে । মদীনার আবালবৃদ্ধবনিতা অধীর আগ্রহে তাঁর আগমনের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছিল ।
২৮ নং প্রশ্ন : ইয়াসরিবাসীদের মধ্য থেকে কে সর্বপ্রথম রাসূল ( সা: ) কে দেথেছিল ?
উত্তর : রাসূল ( সা) কে সর্বপ্রথম জনৈক ইয়াহুদী দেখেছিল । সে লোকদেরকে ‍উচ্চস্বরে আহবান করে বলতে লাগলো :
يا معشر العرب ، يا بنى قيلة ! هذا جدكم قد جا ء
অনুবাদ : হে আরবরা ! ওহে দুপুরে বিশ্রামকারীরা ! ঐ যে তোমাদের অভিষ্ঠ আগন্তুক । তোমাদের সৌভাগ্য শশী এসে পড়েছে । আওয়াজটি শুনামাত্রই লোকজন যার যার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো । এতদিন ধরে যে মহামানবের আগমনের অপেক্ষায় চাতক পাখির মতো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো, সেই বহু প্রতিক্ষিত মেহমান আজ তাদের সান্নিধ্যে উপস্থিত । এ আনন্দের তুলনা কোথায় ? গোটা কোবা পল্লীতে মহাধুমধাম পড়ে গেল ।
২৯নং প্রশ্ন : রাসূল ( সা: ) মদীনায় পৌছলে মদীনাবাসীরা কিভাবে তাঁকে অভ্যর্থনা জানালো ?
উত্তর : মহানবী ( সা: ) কোবা পল্লীতে প্রবেশ করা মাত্রই মদীনার আনসার বালিকারা আনন্দে আপ্লুত হয়ে আবেগ জড়িত কণ্ঠে কবিতা আবৃতি করতে লাগলো । 
طلع البدر علينا * من ثنيات الوداع ـ
 
وجب الشكر علينا * ما دعا لله داع ـ
ايها المبعوث فينا * جئت بالأمر المطاع ـ
অনুবাদ : 
পূর্ণ শশীর উদয় আজি মোদের আঙ্গিনায় 
বিদা পর্বতের ঘাঁটি থেকে, তোরা দেখবি যদি আয়
খোদার শোকর আদায় করা মোদের কর্তব্য । 
যতক্ষণ প্রার্থনাকারী প্রার্থনা করে ।
হে মহান সত্ত্বা তুমি প্রেরীত হেথায় 
শিরধার্য তব আদেশ , যদিও প্রাণ যায় । 
বেদুঈন বালারা আনন্দের আতিশয্যে আরও ক্বাছিদাহ আবৃত্তি করতে লাগলো :
শান্তির রাজা এসো , 
আল্লাহর রাসূল এসো । 
জান্নাতের নেয়ামত এসো, 
আমরা তোমায় বরণ করি । 
দেখ চেয়ে ঐ চাঁদ উঠেছে 
গগণ কিনারায়, 
তাঁর হাসির আভা ছড়িয়ে গেল 
নিখিল দুনিয়ায় ।
৩০ নং প্রশ্ন : আনছার কাকে বলে ?
উত্তর : মদীনায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সাহাবী । যারা লাসূল ( সা: ) ও সাহাবীদেরকে আশ্রয় দান ও যাবতীয় সহোযোগীতা করেন ।
৩১ নং প্রশ্ন : মুহাজির কাকে বলে ?
উত্তর : অত্যাচারী কাফেরদের হাত থেকে রক্ষা পাবার উদ্দেশ্যে যে সমস্ত সাহাবা মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেছিলেন, তাদেরকে মুহাজির বলে ।
৩২ নং প্রশ্ন : মানুষকে দ্বীনী ইলম শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত মদীনার
প্রথম শিক্ষক কে ?
উত্তর : মাসআব বিন উমায়ের ।
হিজরী প্রথম শতকের ঘটনা :
৩৩ নং প্রশ্ন : মসজিদে নববী কখন ও কোন সনে নির্মিত হয় ?
উত্তর : রাসূল ( সা: ) মদীনায় পৌছার পর সর্বপ্রথম একটি মসজিদ নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন । যে স্থানে রাসূল ( সা: ) এর উষ্ট্রিটি বসেছিল, সে জায়গাটি ছিল সাহল ও সহায়েল নামক দুজন অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক বালকের । তাঁদের কাছ থেকে জায়গাটি ক্রয় করা হলো । সেখানেই একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় । যার নামকরণ করা হয় মসজিদে নববী । এর দেওয়াল ছিল কাঁচা ইটের, খুঁটি খেজুর গাছের এবং ছাঊনী খেজুর পাতার । কিবলা ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস । যা ছিল তখন পর্যন্ত মুসলমানদের ক্বিবলা । রাসূল ( সা: ) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পর ১৬-১৭ মাস বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মূখ করে সালাত আদায় করার হুকুম হয় ।এর পর ক্বিবলা পরিবর্তনের হুকুম হয় ।মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে আরও দুটো কামরা নির্মাণ করা হয় । একটি উম্মুল মুমিনীন মা আয়েশা সিদ্দিকা ( রা: ) এর জন্য , অপরটি হযরত সাওদা ( রা: ) এর জন্য । এরপর রাসূল ( সা: ) নিজের পরিবার পরিজনকে আনার জন্য মক্কায় লোক পাঠান । মসজিদে নববী নির্মাণের পর সামাজিকভাবে বাজামায়াত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয় ।
৩৪ নং প্রশ্ন : বিশ্বনবী ( সা: ) মুহাজির সাহাবীদের আশ্রয় ও বসবাসের জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন ?
উত্তর : রাসূল ( সা: ) একজন মুহাজির ও একজন আনসারীর মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দিলেন । তাঁরা আনসারী ভাইদেরকে নিজ বাড়িতে সহোদর ভাইয়ের মতো আশ্রয়দান ও জীবন-জীবিকার যাবতীয় বন্দোবস্ত করে দেন । অবশিষ্ট সাহাবীদের জন্য মসজিদে নববী সংলগ্ন একটি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হলো । এখানে যারা অবস্থান করতেন, তাদেরকে আসহাবুস সুফ্ফাবলা হতো ।
৩৫ নং প্রশ্ন : সর্বপ্রথম রাসূল ( সা: ) কোথায় জুম্মার সালাত আদায় করেন ?
উত্তর : রবিউল আউয়াল মাসের জুম্মার দিনে রাসূল ( সা: ) কুবা পল্লী থেকে বিদায় নিয়ে মদীনার দিকে যাত্রা করেন । মদীনাবাসী আনসারগণ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে বিশ্বনবীর বাহনের চারিদিকে ঘিরে ধরে মহাসমারোহে চলতে লাগলেন কেউ পদব্রজে, আবার কেউ আরোহী হয়ে । রাসূল ( সা; ) এর উষ্ট্রীর রশি ধরার জন্য সবাই উৎসুক । যেহেতু দিনটি ছিল জুমআর দিন । বনু সালিম বিন আউফ গোত্রের আবাসিক এলাকার নিকট জুমআর নামাযের সময় হলো । সেখানেই ১০০ জন সাহাবী নিয়ে রাসূল ( সা: ) তার নবুওয়াতী জীবনের প্রথম জুমআর ছালাত বাজামায়াত আদায় করেন । এখানেই তিনি জুমআর সালাতের প্রথম খুৎবাহ পাঠ করেন ।
৩৬ নং প্রশ্ন : মদীনার সনদচুক্তি কবে ও কাদের সাথে এ চুক্তি সম্পাদিত হয় ?
উত্তর : বিশ্বনবী ( সা: ) মদীনায় হিজরত করার পর মদীনায় অবস্থিত ইহুদী সম্প্রদায় , পৌত্তলিক ও মুসলিমদের নিয়ে একটি শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন । যে চুক্তিকে ইসলামের ইতিহাসে মদীনার সনদ বলা হয় । ঐতিহাসিকগণ এ চুক্তিকে মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান বলে আখ্যায়িত করেছেন । মদীনার সনদচুক্তি মুসলিম অমুসলিম সকলেই মিলে একটি রাষ্ট্রে সহাবস্থানের এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । মদীনার সনদ চুক্তিতে মদীনায় অবস্থিত ইহুদী, পৌত্তলিক, মুসলিম মোটকথা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল গোত্রের লোক স্বত:স্ফূর্তভাবে স্বাক্ষর করেন ।

৩৭ নং প্রশ্ন : মদীনার সনদচুক্তির বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

উত্তর :
০১. মদীনায় আবহমান কাল থেকে প্রচলিত গোত্রভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার বিলুপ্ত করত: রাষ্ট্রভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হলো । সেই লক্ষ্যে মদীনাকে 
একটি নগর রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হলো ।
০২. সকলে সর্বসম্মতিক্রমে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে মদীনার শাসক হিসেবে মনোনীত করা হলো ।
০৩. মদীনায় অবস্থিত জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই মদীনার নাগরীক হিসেবে স্বাধীনভাবে বসবাস ও নাগরীক অধীকার ভোগ করতে পারবে ।
০৪. ব্যক্তিগতভাবে সবাই নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে । কেউ কারও ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করবে না । তবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দন্ডবিধি, অর্থনীতি , যুদ্ধনীতি, সন্ধিনীতি, স্বরাষ্ট্রনীতি , পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সংবিধান আল্লাহ আইন অনুযায়ী চলবে ।
০৫. মদীনায় অবস্থিত মদীনার সকল ধর্মের অনুসারী নাগরীকবৃন্দ তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতাসহ জান-মাল, ইজ্জত- আবরুর পূর্ণ নিরাপত্তা ভোগ করবে । কেউ কারও প্রতি জুলুম বা অবিচার করতে পারবে না ।
০৬. মদীনার স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ত রক্ষার দায়িত্ব সকলের । কোন বহিরা শত্রু মদীনা আক্রমন করলে সকলে মিলেই সে আক্রমন প্রতিহত করবে ।
০৭ . মদীনার কোন নাগরিক কুরাইশ বা বহিরা শত্রুকে আশ্রয় প্রদান বা কোনপ্রকার সহযোগিতা করতে পারবে না ।
৩৮ নং প্রশ্ন : জিহাদের হুকুম কখন নাযিল হয় ?
উত্তর : হিজরী প্রথম সনে জিহাদের হুকুম প্রবর্তিত হয় । এই সনে সারিয়ায়ে হামযা সারিয়ায়ে ওবাদাহ নামক দুটো সারিয়া অভিযান পরিচালিত হয় । তবে সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি ।
৩৯ নং প্রশ্ন : মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম আদম শুমারীর প্রচলন করেন কে ?
উত্তর : বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ( সা: ) ।
৪০ নং প্রশ্ন : হিজরী দ্বিতীয় বর্ষের প্রসিদ্ধ ঘটনা বর্ণনা কর । 
উত্তর :
০১, ক্বিবলা পবির্তন । 
০২, সিয়াম ফরজ হয় । 
০৩. আযানের হুকুম প্রবর্তিত হয় । 
০৪ . যাকাত ফরজ হয় । 
০৫. দুই ঈদের নামাযের প্রবর্তন । 
০৬. সাদাক্বাতুল ফিতরের প্রবর্তন ।
০৭. বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয় ।
৪১ নং প্রশ্ন : গাযওয়া ও সারিয়ার মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা করো ।
উত্তর :
গাযওয়ার সংজ্ঞা :
রাসূল ( সা; ) এর জীবনে যে সব যুদ্ধে স্বয়ং নিজে অংশ গ্রহণ করত: সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন , সেসব যুদ্ধকে গাযওয়া বলে ।
সারিয়ার সংজ্ঞা :
যে সকল যুদ্ধে রাসূল ( সা: ) নিজে অংশ গ্রহণ করতেন না , বরং কোন সাহাবীকে আমীর নিযুক্ত করে সেনাদল পাঠাতেন , তাকে সারিয়া বলে ।

৪২ নং প্রশ্ন : বিশ্বনবীর নবুওয়তী জীবনে সর্বমোট কতটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় ?
উত্তর : গাযওয়া ও সারিয়াসহ সর্বসাকুল্যে ৭০টি মতান্তরে ৬৬টি যুদ্ধ সংঘটিত হয় । তন্মধ্যে গাযওয়া ২৩টি , মতান্তরে ২৭ টি । অবশিষ্ট ৪৩টি সারিয়া ।

বদরের যুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্যাবলী :
৪৩ নং প্রশ্ন : বদরের যুদ্ধের সন ও তারিখ বর্ণনা কর ।
উত্তর : ২৬শে জুলাই ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ১৭ই রামাযান দ্বিতীয় হিজরী ।
৪৪ নং প্রশ্ন : বদরকে বদর নামকরণের কারণ কি ?
উত্তর : বদর অর্থ-কুপ । বদরের প্রান্তরে অনেকগুলো কুপ ছিল, সেই কুপের নামানুসারে উক্ত প্রান্তরের নামকরণ করা হয়েছে ।
৪৫ নং প্রশ্ন : বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : ৩১৩ জন ।
৪৬ নং প্রশ্ন : বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের যুদ্ধ সরঞ্জামাদী কি পরিমাণ ছিল ?
উত্তর : ৭০টি উট, ০২ টি ঘোড়া ।
৪৭ নং প্রশ্ন : বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের সৈন্যসংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : এক হাজার ।
৪৮ নংপ্রশ্ন : বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের যুদ্ধ সরঞ্জাম কি পরিমাণ ছিল ?
উত্তর : ৭০০ জন উষ্ট্রারোহী , ১০০ জন অশ্বারোহী এবং দুইশত জন পদাতিক ।
৪৯ নং প্রশ্ন : এই যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনীর সেনাপতি কে ছিল ?
উত্তর : ওতবা বিন রাবিয়া ।
৫০ নং প্রশ্ন : বদরের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি কে ছিলেন ?
উত্তর : বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ( সা; )
৫১ নং প্রশ্ন : বদরের যুদ্ধের মুসলিম বাহিনীর পতাকাবাহী সাহাবীর নাম কি ?
উত্তর : মুসআব বিন উমায়ের ।
৫২ নং প্রশ্ন : বদরের যুদ্ধের ফলাফল বর্ণনা কর ।
উত্তর : এই যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় অর্জিত হয়, পক্ষান্তরে কুরাইশগণ শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় ।
৫৩ নং প্রশ্ন : বদরের যুদ্ধে উভয়পক্ষের নিহতের সংখ্যা বর্ণনা কর ।
উত্তর : মুসলিমদের মধ্যে ১৪ জন শাহাদত লাভ করেন । তন্মধ্যে ছয়জন মোহাজের এবং আটজন আনসার । অপরপক্ষে কুরইশরা সাতজন শীর্ষনেতাসহ সর্বমোট সত্তরজন নিহত ও সত্তরজন বন্দি হয় ।
৫৪ নং প্রশ্ন : বদরের যুদ্ধে ছয়জন মুহাজির শহীদের নাম কি কি ?
উত্তর :
০১. মিহজা । যিনি উমার ( রা : ) এর মুক্তদাস ছিলেন এবং তিনি ছিলেন মুসলিম বাহিনীর প্রথম শহীদ । 
০২. উবা্য়দাহ ইবনুল হারিছ ( রা : ) । 
০৩ . উমায়ের বিন আবু ওয়াক্কাছ ( রা : ) । 
০৪ . যুশ শিমালাইন বিন আব্দে আমর আলখুযায়ী ( রা: ) । 
০৫ . ছাফওয়ান বিন বায়যা ( রা: ) । 
০৬. বনু আদীর মিত্র আক্বেল বিন বুকায়ের বিন লাইছি ।
৫৫ নং প্রশ্ন : বদরের যুদ্ধে আটজন আনসারী শহীদ সাহাবীদের নাম লিখ ।
উত্তর :
০১. হারিছাহ বিন সুরাকাহ ( রা : ) । 
০২-৩ . আফরার দুই পুত্র মুআউভিয ও আউফ ( রা: ) । 
০৪. ইয়াযিদ ইবনুল হারিছ । ( রা:)  
০৫. উমায়ের ইবনুল হুমাম ( রা: ) । 
০৬. রাফবিন মুআল্লা বিন লাউযান ( রা: ) 
০৭. সাদ বিন খায়ছামা ( রা : ) । 
০৮. মুবাশশির বিন আব্দুল মুনযির ( রা : ) ।
৫৬ নং প্রশ্ন : বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের সাতজন শীর্ষ নেতা , যারা বদরের যুদ্ধে নিহত হয়েছে , তাদের নাম লিখ ।
উত্তর :
০১. আবু জাহল । 
০১. উক্ববাহ বিন আবু মুআইত্ব 
০৩. ওয়লিদ বিন ওতবাহ।
০৪. উৎবাহ বিন রাবিয়াহ 
০৫. শায়বাহ বিন রাবীয়াহ 
০৬. উমাইয়া বিন খালফ 
০৭. আম্মার বিন ওয়ালিদ
৫৭ নং প্রশ্ন : বদরের প্রন্তরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে কুরাইশদের শীর্ষ সাত নেতা যারা বদরের প্রান্তরে নিহত হয়েছিলেন, তাদের ব্যাপারে রাসূল ( সা: ) কি ভবিষ্যৎ বাণী দিয়েছিলেন ?

উত্তর : যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে রাসূল ( সা: ) আলোচিত সাতজন শীর্ষনেতার ব্যাপরে অগ্রিম ভবিষ্যৎবাণী প্রদান করেছিলেন । রাসূল ( সা: ) জায়গা নির্দেশ করে হাতের আঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করে তাদের মৃত্যুর স্থান চিহ্নিত করে বলেছিলেন । আবুজাহল এই স্থানে নিহত হবে, উক্ববাহ বিন আবু মুআইত্ব এই স্থানে নিহত হবে, ওয়ালিদ বি ওতবাহ এই স্থানে নিহত হবে , উৎবাহ বিন রাবিয়াহ এই স্থানে নিহত হবে । এইভাবে পূর্বে আলোচিত সাতজন শীর্ষ নেতার নাম ও তাদের নিহত হওয়ার স্থান নির্দেশ করে দিয়েছিলেন ।
সহীহ বুখারীতে ওজু পর্বে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা: ) হতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে : তিনি বলেছেন : সেই সত্ত্বার কছম, যার হাতে আমার জীবন ; রাসূলে কারীম ( সা: ) যাদের নাম উল্লেখ করে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, বদর যুদ্ধের দিনে আমি সেই স্থানেই তাদের লাশগুলো পতিত অবস্থায় দেখেছি । মূলত: এটি ছিল রাসূল ( সা: ) এর একটি মুজিযা ।
৫৮ নং প্রশ্ন : বদরী সাহাবী কাদেরকে বলা হয় ?
উত্তর : ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ অর্থাৎ বদরের যুদ্ধে যারা অংশ গ্রহণ করেছিলেন , তাদেরকে বদরী সাহাবী বলা হয় ।
৫৯ নং প্রশ্ন : বদরী সাহাবীদের ফজিলাত বর্ণনা কর ।
উত্তর : মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বদরী সাহাবীদের পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন ।
৬০ নং প্রশ্ন: বদরের যুদ্ধের পূর্বরাত্রিতে রাসূল ( সা: ) কি দোওয়াকরেছিলন ?
উত্তর : বদরের যুদ্ধের পূর্ব রাত্রিতে রাসূল (সা: ) সেজদায় পতিত হয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে দোওয়া করে্ছিলন : হে আল্লাহ ! আজ যদি মুষ্টিমেয় কয়েকজন মুসলিম কাফিরদের নিকট পরাজিত হয়, পৃথিবীতে তোমার নাম স্মরণকারী কেউ থাকবে না । পেছন থেকে আবুবকর সিদ্দিক (রা: ) বল্লেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ ! অনুগ্রহপূর্বক আপনি মস্তক উত্তোলন করুন । নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আজ আপনার দোওয়া কবুল করেছেন । ইনশাআল্লাহ তায়ালা ইসলামের দুশমনদের পরাজিত করে ইসলামের বিজয় দান করবেন ।
৬১ নং প্রশ্ন: দ্বিতীয় হিজরীর অন্যান্য ঘটনা বর্ণনা কর ।
উত্তর : পূর্ব বর্ণিত ঘটনাপ্রবাহ ছাড়াও দ্বিতীয় হিজরীতে ৫টি গাযওয়া সংঘটিত হয় । ‍
০১. গায্ওয়ায়ে আবওয়া : যেটাকে গাযওয়ায়ে বেদানও বলা হয় । 
০২. গাযওয়ায়ে বয়াত । 
০৩. গাযওয়ায়ে বদরে কুবরা । 
০৪. গাযওয়ায়ে বনী কায়নুকা । ২য় হিজরীর শাওয়াল মাস । 
০৫. গাযওয়ায়ে সাবিক । ২য় হিজলীর যিলহাজ্জ্ব মাস ।
এ ছাড়াও দ্বিতীয় হিজরীতে তিনটি সারিয়া প্রেরণ করেন ।
০১. সারিয়ায়ে আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ । 
০২. সারিয়ায়ে উমায়র বিন আদী আলখিতমী । ২য় হিজরীর রামাযান মাস । 
০৩. সারিয়ায়ে সালেম বিন ওমায়ের আনছারী । ২য় হিজরীর শাওয়াল মাস ।
তৃতীয় হিজরীর প্রসিদ্ধ ঘটনা :
৬২ নং প্রশ্ন : উহুদের যুদ্ধ কোন সালে সংঘটিত হয় ?
উত্তর : ২৬শে জানুয়ারী ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে তৃয় হিজরী ।
৬৩ নং প্রশ্ন : উহুদের যুদ্ধে মুসলিম সৈন্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : ৭০০ জন ।
৬৪ নং প্রশ্ন : উহুদের যুদ্ধে কুরাইশদের সৈন্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : ৩০০০ ( তিন হাজার )
৬৫ নং প্রশ্ন : এ যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যের শাহাদতের সংখ্যা কতজন ?
উত্তর : ৭০ জন ।
৬৬ নং প্রশ্ন : এ যুদ্ধে অমুসলিম সৈন্যের নিহত সংখ্যা কত ?
উত্তর : ১৭ জন ।
৬৭ নং প্রশ্ন : কোন যুদ্ধে রাসূল ( সা; ) এর দানদান মোবারক শহীদ হয় ?
উত্তর : উহুদ যুদ্ধে ।
৬৮ নং প্রশ্ন : কার আঘাতে রাসূল ( সা: ) এর দানদান মুবারক শহীদ হয় ?
উত্তর : ইবনু কুমাইয়া লাইছি ।
৬৯ নং প্রশ্ন : উহুদ যুদ্ধে গিরি গুহায় তিরন্দাজ বাহিনীর আমির কে ছিলেন ?
উত্তর : আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর ( রা: ) ।
৭০ নং প্রশ্ন : উহুদ যুদ্ধে প্রথম পর্যায়ে পরাজয়ের কারণ কি ?
উত্তর : নেতার আদেশ লংঘন ।
৭১ নং প্রশ্ন : রাসূল ( সা: ) এর চাচা আমীর হামযাহ কোন যুদ্ধে শহীদ হন ?
উত্তর : উহুদ যুদ্ধে ।
৭২ নং প্রশ্ন : আমীর হামযার হত্যাকারীর নাম কি ?
উত্তর : ওয়াহশী ।
৭৩ নং প্রশ্ন : হিজরী তৃতীয় সনের প্রসিদ্ধ কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা কর ।
উত্তর : তিনটি গাযওয়া ও দুটি সারিয়া সংঘটিত হয় । গাযওয়া তিনটি হলো :
০১ . গাযওয়ায়ে গাতফান । 
০২. গাযওয়ায়ে উহুদ । 
০৩. গাযওয়ায়ে হামরাউল আসাদ । ৩য় হিজরী ৮ই শাওয়াল ।
দুটি সারিয়া হলো যথাক্রমে :
০১ . সারিয়ায়ে মুহাম্মাদ বিন মুসলিমা । 
০২. সারিয়ায়ে যায়েদ বিন হারিছা ।
৭৪ নং প্রশ্ন : খন্দকের যুদ্ধের অপর নাম কি ?
উত্তর : গাযওয়াতুল আহযাব ।
৭৫ নং প্রশ্ন : এ যুদ্ধের নাম আহযাব কেন হলো ?
উত্তর : আহযাব অর্থ মিত্র বাহিনী । যেহেতু এই যুদ্ধে মক্কার কুরাইশ গোষ্ঠী , মদীনার মুনাফিক সম্প্রদায় ও ইহুদী সম্প্রদায় মিলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মিত্রবাহিনী গঠন করে , তাই এই যুদ্ধকে গাযওয়াতুল আহযাব বা মিত্রবাহিনীর যুদ্ধ বলে ।
৭৬ নং প্রশ্ন : খন্দকের যুদ্ধ কোন সালে সংঘটিত হয় ?
উত্তর : ৫ম হিজরী ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে ।
৭৭নং প্রশ্ন : খন্দকের যুদ্ধের অপর নাম পরিখার যুদ্ধ নামকরণ কেন করা হলো ? পরিখা খননের ঘটনাটি সংক্ষেপে আলোচনা কর ।
উত্তর : যেহেতু এই যুদ্ধে শত্রুবাহিনীর আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে প্রতিরোধমূলক পরিখা খনন করা হয়েছিল, তাই এই যুদ্ধের অপর নামকরণ করা হয়েছে পরিখার যুদ্ধ । শত্রুবাহিনীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে রাসূল ( সা; ) নতুন রণকৌশল অবলন্বন করলেন । মদীনার চতুষ্পার্শ্বে পরিখা খননের সিদ্ধান্ত গহীত হলো । মদীনার পশ্চাৎদিকে আলওয়া পর্বত ছিল, কাজেই সেদিকটা বাদ দিয়ে অন্য তিন দিকে যে সমস্ত স্থান উন্মুক্ত ছিল সে সব স্থানেই পরিখা খননকার্য আরম্ভ হলো । প্রায় তিন হাজার মুসলমান এক সপ্তাহ কঠোর পরিশ্রম করে এই পরিখা খননের কাজ সম্পূর্ণ করেন । প্রতি দশজনে ৪০ হাত করে দশ হাত গভীর ,দশ হাত প্রস্থ এবং ছয় হাজার হাত দীর্ঘ পরিখা প্রস্তুত হয়ে গেল । রাসূল ( সা: ) নিজেও এই পরিখা খনন কার্যে অংশ গ্রহণ করেছিলেন । তিনি পরিখা খনন করার সময় দুই চরন বিশিষ্ট একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন , যা নিম্নে বর্ণিত হলো : 
اللهم لا عيش الا عيش الاخرة * فاغفر للانصار والمهاجرة ـ
 
(
আল্লাহুম্মা লা আয়শা ইল্লা আয়শাল আখিরাহ 
ফাগফির লিল আনসারি ওয়াল মুহাজিরা । ) 
অনুবাদ : হে আল্লাহ ! আখিরাতের শুভ কামনা ছাড়া আর কোন কামনা নেই । অতএব তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করো ।
৭৮ নং প্রশ্ন : খন্দকের যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যসংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : তিন হাজার ।
৭৯ নং প্রশ্ন : খন্দকের যুদ্ধে শত্রুবাহিনীর সৈন্যসংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : দশ হাজার ।
৮০ নং প্রশ্ন : খন্দকের যুদ্ধের কারণ বর্ণনা কর ।
উত্তর : মদীনার ইহুদী, বেদুঈন ও মুনাফিকদের বিশ্বসঘাতকতা ।
৮১ নং প্রশ্ন : খন্দকের যুদ্ধের ফলাফল বর্ণনা কর ।
উত্তর : এই যুদ্ধে মিত্রবাহিনী পরাভুত হয় ও মুসলমানেদের বিজয় আসে ।
৮২ নং প্রশ্ন : পঞ্চম হিজরীর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বর্ণনা কর ।
উত্তর : এ বছর গাযওয়ায়ে খন্দক ছাড়াও আরও তিনটি গাযওয়া সংঘটিত হয় ।
০১. গাযওয়ায়ে যাতুর রিকা । 
০২. গাযওয়ায়ে দাউমাতুল জান্দাল । 
০৩. গাযওয়ায়ে মুরাইসি ( বনু মুস্তালিকের যুদ্ধ ) ।
এ বছর কোন সারিয়া যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি ।
এ বছর হিযাব বা পর্দার হুকুম নাযিল হয় ।
৮৩ নং প্রশ্ন : ষষ্ঠ হিজরীর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বর্ণনা কর ।
উত্তর : গাযওয়া : এ বছর মোট তিনটি গাযওয়া সংঘটিত হয় ।
০১. গাযওয়ায়ে বনী লাহইয়ান । 
০২. গাযওয়ায়ে গাবা । 
০৩. গাযওয়ায়ে হুদাইবিয়া ।
সারিয়া : এ বছর ১১টি সারিয়া পাঠানো হয় । যথা :-
০১. সারিয়ায়ে মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিমা । ( কারতা অভিমূখে ) 
০২. সারিয়ায়ে আকাসা । 
০৩. সারিয়ায়ে মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিমা ( জিল কিসসা অভিমূখে ) 
০৪ . সারিয়ায়ে যায়েদ বিন হারিসা ( বনী সোলাইমা অভিমূখে ) 
০৫. সারিয়ায়ে আব্দুর রহমান বিন আউফ । 
০৬. সারিয়ায়ে আলী । 
০৭. সারিয়ায়ে যায়েদ বিন হারিসা ( উম্মে কারফা অভিমূখে ) ।
০৮. সারিয়ায়ে আব্দুল্লাহ বিন আতিক । 
০৯. সারিয়ায়ে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা । 
১০. সারিয়ায়ে কুরজ বিন জাবর । 
১১. সারিয়ায়ে আমরুদ দামরী ।
উল্লেখ্য যে, এ বছর গাযওয়াতের মধ্যে হুদায়বিয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।
৮৪ নং প্রশ্ন : হুদায়বিয়ার সন্ধির সন বর্ণনা কর :
উত্তর : ৬ষ্ঠ হিজরীর ৬২৮ খ্রিষ্টাবব্দে ।
৮৫ নং প্রশ্ন : এ সফরের উদ্দেশ্য কি ছিল ?
উত্তর : উমরা পালন ।
৮৬ নং প্রশ্ন : হুদায়বিয়ার সফরের সফরসঙ্গী কতজন ছিল ?
উত্তর : প্রায় ১৪০০ জন সাহাবী ।
৮৭ নং প্রশ্ন : এই সফরে কুরবানীর পশুর সংখ্যা কতটি ছিল ?
উত্তর : ৭০ টি ।
৮৮ নং প্রশ্ন : রাসূল ( সা: ) যাত্রা বিরতি দিয়ে কোথায় শিবির স্থাপন করেন ?
উত্তর : মক্কা থেকে আট মাইল দূরে হুদায়বিয়ার প্রান্তরে ।
৮৯ নং প্রশ্ন : যে গাছের নিচে সাহাবায়ে কিরাম রাসূল (সা: ) এর হাতে হাত রেখে বাইয়াত গ্রহণ করেন , সেই গাছটির নাম কি ?
উত্তর : বাবলা গাছ ।
৯০ নং প্রশ্ন : আলোচ্চ বাইয়াতের নাম কি ?
উত্তর : ইসলামের ইতিহাসে এই বাইয়াতকে তিনটি নামে অভিহিত করা হয়েছে :
০১. বাইয়াতুল হুদায়বিয়া 
০২. বাইয়াতশ শাজারাহ 
০৩. বাইয়াতুর রিজওয়ান ।
৯১ নং প্রশ্ন : এ সন্ধিনামা লিখার জন্য উভয়পক্ষের সালিশী ব্যক্তিবর্গ কে ছিল ?
উত্তর :
০১. রাসূল ( সা: ) এর পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হযরত আলী ( রা: ) ।
০২. কুরাইশদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি সোহাইল ইবনে আমর ।
৯২ নং প্রশ্ন : হুদায়বিয়ার সন্ধিকে ফাতহুম মুবীন বা সুস্পষ্ট বিজয় বলার কারণ কি ?
উত্তর :
০১. মুসলিম উম্মার স্বার্থ রক্ষা । 
০২ . মদীনাকে একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে কুরাইশদের স্বীকৃতি প্রদান । 
০৩. যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা । 
০৪ নির্বিবাদে ইসলামের প্রচার ও প্রসার শুরু ।
০৫. ইসলামের দাওয়াত নিয়ে বিদেশে রাজা বাদশাদের কাছে দূত প্রেরণ । 
০৬ . পরিশেষে ইসলামের চূড়ান্ত বিজয় লাভ ।

৯৩ নং প্রশ্ন : হুদায়বিয়ার প্রান্তর থেকে রাসূল ( সা: ) কাকে কুরাইশদের নিকট দূত হিসেবে প্রেরণ করেন ?
উত্তর : হযরত ওসমান ( রা: ) কে ।
৯৪ নং প্রশ্ন : কুরাইশরা হযরত ওসমান ( রা: ) এর সহিত কেমন আচরণ করে ?
উত্তর : তারা ওসমান ( রা: ) কে বন্দি করে রাখে ।
৯৫ নং প্রশ্ন : হুদায়বিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলী উল্লেখ কর ।
উত্তর :
০১. এ বৎসর মুসলমানগণ হজ্জ্ব পালন না করেই মদীনায় প্রত্যাবর্তন করবে ।
০২. কুরাইশ ও মুসলমানদের মধ্যে আগামী দশ বৎসর পর্যন্ত যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ থাকবে ।
০৩. মুসলমানগণ ইচ্ছা করলে পরের বৎসর হজ্জ্ব উপলক্ষ্যে মক্কায় আগমন করতে পারবে , তবে তিন দিনের বেশি মক্কায় অবস্থান করতে পারবে না ।
০৪. পরের বৎসর হজ্জ্ব উপলক্ষ্যে মক্কায় আগমন কালে মুসলমানগণ কেবলমাত্র আত্মরক্ষার জন্য কোষবদ্ধ তরবারি ছাড়া অন্য কোন অস্ত্র-শস্ত্র সঙ্গে আনতে পারবে না ।
০৫. যদি কোন মুসলমান মদিনা ত্যাগ করে কুরাইশ দলে যোগ দেয়, তবে তাকে ফেরত দেওয়া হবে না । পক্ষান্তরে কোন মক্কাবাসী অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে মুসলমানদের দলে যোগ দিলে মুসলমানরা তাকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে ।
০৬. হজ্জ্বের সময় মুসলমানদের জান-মালের পূর্ণ নিরাপত্তা থাকবে ।
০৭. চুক্তির মেয়াদকালে জনসাধারণের পূর্ণ নিরাপত্তা রক্ষিত হবে এবং একে অপরের কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করতে পারবে না ।
০৯. এই শর্তাবলী বলবৎ থাকবে আগামী দশ বছর পর্যন্ত ।
৯৬ নং প্রশ্ন : ৭ম হিজরীর প্রসিদ্ধ ঘটনা আলোচনা কর ।
উত্তর : এ বৎসর শুধু একটি গাযওয়া সংঘটিত হয় । সেটি হলো গাযওয়ায়ে খায়বার । এ ছাড়া পাঁচটি সারিয়া প্রেরণ করা হয় । যথাক্রমে তা বর্ণিত হচ্ছে ।
০১. সারিয়ায়ে আবু বদর । 
০২. সারিয়ায়ে বাশার বিন সাআদ । 
০৩. সারিয়ায়ে গালিব বিন আব্দুল্লাহ । 
০৪. সারিয়ায়ে বশীর । 
০৫. সারিয়ায়ে আহজাম ।
৯৭ নং প্রশ্ন : খায়বারের যুদ্ধ কোন সনে সংঘটিত হয় ?
উত্তর : ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে মে মাস মোতাবেক ৭ম হিজরীর মুহাররাম মাস ।
৯৮ নং প্রশ্ন : কাদের সঙ্গে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ?
উত্তর : খায়বারের ইহুদীদের সাথে ।
৯৯ নং প্রশ্ন : খায়বারের যুদ্ধে মুসলিম সৈন্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : ১৬০০ শত ।
১০০ নং প্রশ্ন : খায়বারের যুদ্ধে ইহুদীদের সৈন্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : ৪০০০ ( চার হাজার ) ।
১০১ নং প্রশ্ন : খায়বার যুদ্ধের ফলাফল বর্ণনা কর ।
উত্তর : যুদ্ধে ইহুদীরা পরাজিত হয় । তিন সপ্তাহ দূর্গ অবরোধের পর পরিশেষে দূর্গ মুসলমানদের হস্তগত হয় ।
১০২ নং প্রশ্ন : কার মাধ্যমে এবং কার হাতে পতাকা দেওয়ার পর খায়বার দূর্গ বিজয় হয় ?
উত্তর : হযরত আলী ( রা: ) এর মাধ্যমে ।
১০৩ নং প্রশ্ন : এই যুদ্ধে আলী ( রা: ) কে কি উপাধিতে ভূষিত করা হয় ?
উত্তর : আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর সিংহ ।
১০৪ নং প্রশ্ন : ৮ম হিজরীর প্রসিদ্ধ ঘটনাসমূহ বর্ণনা কর ।
উত্তর : এ বছর মোট চারিটি গাযওয়া সংঘটিত হয় এবং ১০টি সারিয়া পাঠানো হয় ।
গাযওয়া চারিটি হলো যথাক্রমে
০১. গাযওয়ায়ে মুতা । 
০২. গাযওয়ায়ে ফাতহে মক্কা ( মক্কা বিজয় ) 
০৩. গাযওয়ায়ে হুনাইন 
০৪. গাযওয়ায়ে তায়েফ ।
সারিয়া ১০টি হলো যথাক্রমে :
০১. সারিয়ায়ে গালিব ( বনু মলুহ অভিমূখে ) 
০২. সারিয়ায়ে গাহিব ( ফিদাক অভিমূখে ) 
০৩. সারিয়ায়ে শুজা 
০৪. সারিয়ায়ে কা 
০৫. সারিয়ায়ে আমর ইবনুল আস 
০৬. সারিয়ায়ে আবু ওবায়দাহ বিন জাররাহ 
০৭. সারিয়ায়ে আবু ক্বাতাদহ 
০৮. সারিয়ায়ে খালিদ 
০৯. সারিয়ায়ে তোফায়েল বিন আমর দাউসী 
১০. সারিয়ায়ে কাতবা ।
১০৫ নং প্রশ্ন : মুতার যুদ্ধ কোন সনে সংঘটিত হয় ?
উত্তর : ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৮ম হিজরী জামাদিউল উলা ।
১০৬ নং প্রশ্ন : কাদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় ?
উত্তর : খ্রিষ্টান শাসক সোরাহবিলের বিরুদ্ধে ।
১০৭ নং প্রশ্ন : মুতার যুদ্ধের কারণ বর্ণনা কর ।
উত্তর : মহানবী ( সা: ) কর্তৃক প্রেরীত মুসলিম দূত হারিস ইবনূ উমায়েকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ।
১০৮ নং প্রশ্ন : মুতা কোথায় অবস্থিত ?
উত্তর : সিরিয়া সীমান্তে ।
১০৯ নং প্রশ্ন : মুতার যুদ্ধে রাসূল ( সা; ) কর্তৃক নিয়োজিত তিনজন সেনাপতির নাম কি ?
উত্তর :
০১. বিশ্বনবীর পালকপুত্র হযরত যায়েদ বিন হারিছা ( রা: ) । 
০২. হযরত জাফর বিন আবুতালিব ( রা: ) । 
০৩. আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা ( রা : ) ।
১১০ নং প্রশ্ন : পূর্বোক্ত তিনজন সেনাপতি পরপর শাহাদত বরণ করলে পরবর্তিতে কে সেনাপতি নির্বাচিত হন ?
উত্তর : খালিদ বিন ওয়ালিদ ।
১১১ নং প্রশ্ন : কার মাধ্যমে মুতার যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয় ?
উত্তর : খালিদ বিন ওয়ালিদের মাধ্যমে ।
১১২ নং প্রশ্ন : এই যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হওয়ার পর রাসূল ( সা: ) তাঁকে কি উপাধিতে ভূষিত করেন ?
উত্তর : সাইফুল্লাহ বা আল্লাহর তরবারি ।
১১৩ নং প্রশ্ন : মুতার যুদ্ধে মুসলিম সৈন্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : ৩০০০ ( তিন হাজার ) ।
১১৪ নং প্রশ্ন : মুতার যুদ্ধে সোরাহবিলের সৈন্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : ১৫০০০০ ( দেড় লক্ষ ) ।
১১৫ নং প্রশ্ন : মুতার যুদ্ধের ফলাফল বর্ণনা কর ।
উত্তর : এই যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় আসে ।
১১৬ নং প্রশ্ন : এই যুদ্ধে কি পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ মুসলমানদের হস্তগত হয় ?
উত্তর :
০১. যুদ্ধ বন্দি ছয় হাজার ।
০২. উট = বিশ হাজার ।
০৩. ছাগল = বা বকরী চল্লিশ হাজার ।
০৪. রৌপ্য = চার হাজার উকিয়া । ( অর্থাৎ- এক লক্ষ ষাট হাজার দিরহাম । যার পরিমাণ ছয় কুইন্টালের মাত্র কয়েক কেজি কম । )
১১৭ নং প্রশ্ন : মক্কা বিজয় হয় কোন সনে ?
উত্তর : ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৮ম হিজরী ১০ই রামাযান ।
১১৮ নং প্রশ্ন : এই অভিযানে মুসলিম সৈন্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : দশ হাজার ।
১১৯ নং প্রশ্ন : মক্কা বিজয় হয় কিভাবে ?
উত্তর : বিনা যুদ্ধে , বিনা রক্তপাতে ।
১২০ নং প্রশ্ন : মক্কা বিজয়ের পর বিশ্বনবী সর্বপ্রথম কোন কাজটি করেন ?
উত্তর : কাবাঘরে অবস্থিত ৩৬০ টি মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেন ।
১২১ নং প্রশ্ন : মক্কা বিজয়ের পর বিশ্বনবী মক্কায় কতদিন অবস্থান করেন ?
উত্তর : ১৫ দিন ।
১২২ নং প্রশ্ন : হুনাইনের যুদ্ধ কোন সনে সংঘটিত হয় ?
উত্তর : ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে ৩১ শে জানুয়ারী মোতাবেক ৮ম হিজরী ।

১২৩ নং প্রশ্ন : এ যুদ্ধ কাদের সঙ্গে সংঘটিত হয় ?
উত্তর : মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী অঞ্চল হাওয়াজিন ও সাকিব গোত্রের সঙ্গে ।
১২৪ নং প্রশ্ন : হুনাইন কোথায় অবস্থিত ?
উত্তর : মক্কা থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থিত ।
১২৫ নং প্রশ্ন : এ যুদ্ধে মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : ১২০০০ ( বার হাজার ) ।
১২৬ নং প্রশ্ন : এ যুদ্ধের শত্রুবাহিনীর সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : ২০০০০ ( বিশ হাজার ) ।
১২৭ নং প্রশ্ন : এ যুদ্ধে মুসলিম সেনাবাহিনীর সেনাপতি কে ছিলেন ?
উত্তর : বীরশ্রেষ্ঠ খালিদ বিন ওয়ালিদ ।
১২৮ নং প্রশ্ন : হুনাইনের যুদ্ধের ফলাফল কি হয়েছিল ?
উত্তর : মুসলিমগণ বিজয় লাভ করেন ।
১২৯ নং প্রশ্ন : হুনাইনের যুদ্ধে কি পরিমাণ গনিমাতের মাল মুসলমানদের হস্তগত হয় ?
উত্তর : এই যুদ্ধে গনিমাতের মাল হিসেবে মুসলমানদের হস্তগত হয় :
০১. যুদ্ধবন্দি = ৬০০০ ( ছয় হাজার ) ।
০২. দুন্বা = ২৪০০০ ( চব্বিশ হাজার )
০৩. উট = ২৮০০০ ( আটাশ হাজার )
০৪ . রৌপ্য = ৪১০০০ ( একচল্লিশ হাজার তোলা )
এ ছাড়াও অজস্র সমরাস্ত্র মুসলমানদের হস্তগত হয় ।

১৩০ নং প্রশ্ন : তাবুক যুদ্ধ কোন সনে সংঘটিত হয় ?
উত্তর : ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের নভেন্বর মাস মোতাবেক হিজরী ৯ম সনে ।
১৩১ নং প্রশ্ন : কাদের বিরুদ্ধে এ অভিযান পরিচালিত হয় ?
উত্তর : রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের বিরুদ্ধে ।
১৩২ নং প্রশ্ন : তাবুকের যুদ্ধে মুসলিম সৈন্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : মুসলিম বাহিনীতে দশ হাজার অশ্বারোহীসহ সর্বমোট চল্লিশ হাজার 
সৈন্য ছিল ।
১৩৩ নং প্রশ্ন : এ যুদ্ধে রোমানদের সৈন্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : এক লক্ষাধিক ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : এ যুদ্ধেই ছিল রাসূল ( সা; ) এর জীবনের সর্বশেষ অভিযান ।
১৩৪ নং প্রশ্ন : তাবুক যুদ্ধে কোন সাহাবী কি পরিমাণ অর্থ দান করেন ?
উত্তর :
০১ . আবুবকর সিদ্দিক ( রা: ) : তার সমস্ত সম্পত্তি দান করেন ।
০২. ওমর ( রা; ) তা৭র সমুদয় সম্পত্তির অর্ধেক দান করেন ।
০৩. ওসমান ( রা; ) : ১০০০ ( এক হাজার ) স্বর্ণমুদ্রা , ১০০০ ( এক হাজার ) উট এবং ৭০টি অশ্বসহ বেশ কিছু যুদ্ধ সরঞ্জাম ।
১৩৫ নং প্রশ্ন : এ যুদ্ধের ফলাফল কি হয়েছিল ?
উত্তর : বিনা যুদ্ধেই বিজয় লাভ । অর্থাৎ- ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে হিরাক্লিয়াস বাহিনী পলায়ন করে ।
১৩৬ নং প্রশ্ন : তাবুকযুদ্ধে তিনজন নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবী বিনা ওজরে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি । তাদেরকে সমাজচ্যূত করা হয়েছিল । ৫০দিন পর তাদের তাওবা কবুল করা হয়েছিল । সেই তিনজনের নাম কি ?
উত্তর : তাদের নাম য়থাক্রমে
০১. কাব ইবনে মালেক 
০২ . মোরারা ইবনে রবি 
০৩. হেলাল ইবনে উমাইয়া ।
বিদায় হজ্জ্ব
১৩৭ নংপ্রশ্ন : হজ্জ্ব কখন ফরজ হয় ?
উত্তর : ৯ম হিজরীতে ।
১৩৮ নং প্রশ্ন : বিদায় হজ্জ্ব কোন সনে অনুষ্ঠিত হয় ?
উত্তর : ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৯ম হিজরীর জুলক্বাদ মাসের ২৫ তারিখ ।
১৩৯ নং প্রশ্ন : বিদায় হজ্জ্ব নামকরণের কারণ কি ?
উত্তর : বিশ্ব নবী ( সা: ) এর জীবনের এটি শেষ হজ্জ্ব বলে একে হুজ্জাতুল বিদা বা বিদায় হজ্জ্ব বলা হয় ।
১৪০ নং প্রশ্ন : বিদায় হজ্জ্বের ভাষণের স্থান ও তারিখ বর্ণনা কর ।
উত্তর : ১০ ই জিলহাজ্জ্ব আরাফাতের ময়দানে ।
১৪১ নং প্রশ্ন : বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে উপস্থিত জনতার সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : এক লক্ষ চব্বিশ মতান্তরে এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার । -( রাহিকুল মাখতুম )
১৪২ নং প্রশ্ন : বিদায় হজ্জ্বের ভাষণের বাণীকে এক কথায় কি বলা হয় ?
উত্তর : মানবাধিকার সনদ ।
১৪৩ নং প্রশ্ন : রাসূল ( সা; ) এর উটের নাম কি ছিল ?
উত্তর : কাসওয়া ।

বিশ্বনবীর ওফাত :
১৪৪ নং প্রশ্ন : বিশ্ব নবীর ওফাতের সন ও তারিখ বর্ণনা কর
উত্তর : ১১ হিজরী সনের ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার । ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে ৮ই জুন ।

১৪৫ নং প্রশ্ন : মহানবী ( সা: ) কার ঘরে ইন্তেকাল করেন ?
উত্তর : উম্মুল মুমিনীন মা আয়েশা ( রা: ) এর ঘরে
১৪৬ নং প্রশ্ন : বিশ্বনবীর মদীনায় অবস্থান কত দিন ?
উত্তর : ১০ বছরের কিছু কম
১৪৭ নং প্রশ্ন : বিশ্বনবীর গোছল ও কবর খনন কে করেন ?
উত্তর : হযরত আলী ( রা : ) , আব্বাস ( রা: ) , আব্বাসের দুই ছেলে ফজল ও কুছাম , উসামা বিন যায়েদ ( রা: ) রাসূল ( সা: ) কে গোছল করান । রাসূল ( সা: ) এর আযাদকৃত গোলাম শুকরান পানি ঢালেন । হযরত আবু তালহা ( রা: ) কবর খনন করেন । রাসূল ( সা: ) কে কাপড় পরিহিত অবস্থায় গোছল করানো হয় । তিনি চাদর ও লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন ।
১৪৮ নং প্রশ্ন : রাসূল ( সা: ) এর জানাযার ছালাত ও দাফন কিভাবে সম্পন্ন হয় ?
উত্তর : ১৩ ই রবিউল আউয়াল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানাযার সালাত সম্পন্ন করে বুধবার মাঝরাতে তাঁর প্রিয় শহর মদীনার বুকে মা আয়েশা সিদ্দিকা ( রা: ) এর ঘরে দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয় । রাসূল ( সা: ) এর জানাযার ছালাতে কেউ ইমামতি করেননি । লাইন ধরে লোকজন লাশের নিকট প্রবেশ করে দোওয়া করতে করতে বেরিয়ে যায় ।
( সীরাতে ইবনে ইসহাক =বাংলা অনুবাদ: ৬৮৮ পৃষ্ঠা )
হযরত আলী ( রা: ) ফযল, কুছাম এবং শুকরান ( রা: ) কবরে নেমে লাশ রাখেন । হযরত বেলাল ( রা: ) কবরে পানি ছিটান ।
প্রথম অংশ শেষ।

দ্বীতিয় অংশ শুরু

ইরহাসাতুন নবুওয়্যাহ ( নবুওয়্যাতের পূর্বাভাস )

শিশুনবীর জন্ম ও শৈশবকালীন সময়ে কিছু অলৌকিক ঘটনা :
ইরহাসাতে নবুওয়্যাহ বা নবুওয়্যাতের পূর্বাভাস বলতে যা বুঝায় :
সুবহে সাদিকের উষা লগ্নে যেমন বিশ্বব্যাপী রক্তিম আভা ছড়িয়ে পৃথিবীকে সূর্যোদয়ের সুসংবাদ দান করে, তেমনিভাবে বিশ্বনবীর নবুওয়্যাতের রবি উদয়ের প্রাক্কালে পৃথিবীতে এমন সব ঘটনা প্রকাশ পেতে লাগলো, যা স্পষ্টরূপে নবী কারীম ( সা: ) এর শুভাগমনের সুসংবাদ বহন করছিল । এগুলোকে ارهاصات النبوة (ইরহাসাতুন নবুওয়্যাহ ) বা নবুওয়্যাতের পূর্বাভাস বলা হয় ।

শিশুনবীর জন্মের সময় কিছু অলৌকিক ঘটনা :

ঐতিহাসিক স্যার সৈয়দ আমীর আলী বলেন : বিশ্বনবীর এই ধরাধামে আগমনের প্রাক্কালে বিশ্বজুড়ে মানব সমাজে এমন নৈতিক অবক্ষয় ও বর্বরতা দেখা দিয়েছিল যে, মানব জগতের ইতিহাসে একজন ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের এর পূর্বে এত প্রয়োজন আর কখনও অনুভূত হয়নি ।
ঐতিহাসিক ইবনু সাদ স্বীয় তাবাকাতে এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হান্বল ( রহ: ) স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে প্রখ্যাত সাহাবী ইরবায ইবনু সারিয়া থেকে রাসূল্লাহ ( সা: ) এর মাতা বিবি আমিনার বক্তব্য উল্লেখ করেছেন : তিনি বলেছেন : যখন মুহাম্মাদ ভূমিষ্ঠ হয় , তখন তাঁর দেহ থেকে একটি উজ্জ্বল নূর বা আলোক রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়, যে নূরের আলোতে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদগুলো উজ্জ্বল ও উদ্ভাসিত হয়ে যায় এবং তা মক্কা থেকে স্পষ্ট চোখে পরিদৃষ্ট হয় । ( মুসনাদে আহমাদ : ৪র্থ খন্ড ১২৮ পৃষ্ঠা । )

পারস্যের শিখা অনির্বাণ নিভে গেল :
রাহিকুল মাখতুম গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে : সুবহে সাদিকের শুভাগমনের সাথে সাথে যেমন রাতের আধার দূরিভূত হতে থাকে, ঠিক তেমনি নবুওয়্যাতের পটভূমি হিসেবে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী মুহাম্মাদ ( সা: ) এর জন্মের সাথে সাথে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের শির্ক ও কুফরের বেদীমূল রোমান সাম্রাজ্যের গীর্জাগুলো খসে পড়তে থাকে । পারস্য অধিপতির রাজপ্রাসাদের ১৪টি স্তম্ভ সেদিন ধ্বসে পড়েছিল । অগ্নি উপাসক পারসিকদের শিখা অনির্বাণ নিভে গিয়েছিল । ধর্ম জাযক বহিরার গীর্জাগৃহ ধ্বসে পড়েছিল । কাবাঘরের মূর্তিগুলো ভূলণ্ঠিত হয়ে পড়েছিল । বস্তুত: এটি ছিল সত্যের আগমনে মিথ্যা অপসৃত হওয়ার একটি পূর্বাভাস ।
এ পর্যায়ে কবি গোলাম মোস্তফা রচিত ব্শ্বিনবীএর কিয়দাংশ বিধৃত হলো :
রবিউল আউওয়াল মাসের বার তারিখ । ( বিশুদ্ধ মতে রবিউল আউওয়াল মাসের নয় তারিখ ) ।
সোমবার ।
শুল্কা- দ্বাদশীর অপূর্ণ চাঁদ সবে মাত্র অস্ত গিয়াছে । সুবহে সাদিকের সূর্খনূরে পূর্ব আসমান রাঙা হইয়া উঠিতেছে । আলো- আঁধারের দোল খাইয়া ঘুমন্ত প্রকৃতি আঁখি মেলিতেছে ।
বিশ্ব প্রকৃতি আজ নিরব । নিখিল সৃষ্টির অন্তর তলে কি যেন এক অতৃপ্তি ও অপূর্ণতার বেদনা রহিয়া রহিয়া হিল্লোলিত হইয়া উঠিতেছে । কোন স্বপ্ন স্বাধ আজও যেন তার মিটে নাই । যুগ-যুগান্তরের পুঞ্জিভূত সেই নিরাশার বেদনা আজও যেন জমাট বাধিয়া দাঁড়াইয়া আছে ।
আরবের মরু দিগন্তে মক্কা নগরীরর এক নিভৃত কুটিরে একজন নারী ঠিক এই সময় এক সুখ স্বপ্ন দেখিতেছিলেন । নাম তাঁর আমিনা ।
আমিনা দেখিতেছিলেন : এক অপূর্ব নূরে আসমান যমিন উজালা হইয়া গিয়াছে । সেই আলোকে চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা ঝলমল করিতেছে । কার যেন আজ শুভাগমন, কার যেন আজ অভিনন্দন । যুগ যুগান্তের সেই না আসা অতিথির আগমন মূহুর্ত আজ যেন আসন্ন হইয়া উঠিয়াছে । তারই অভ্যর্থনার যেন আজ এই আয়োজন । কুল মাখলুকাত আজ যেন সে আনন্দে আত্মহারা । গগনে গগনে ফেরেস্তারা ছুটাছুটি করিতেছে, তোরনে তোরনে বাঁশি বাজিতেছে । সবাই আজ বিস্মিত- পুলকিত, কম্পিত শিহরিত । জড়প্রকৃতির অন্তরেও আজ দোলা লাগিয়াছে ; খসরুর রাজ প্রাসাদের স্বর্ণচূড়া ভাঙিয়া পড়িয়াছে ; কাবা মন্দিরের দেবমূর্তিগুলি ভূলণ্ঠিত হইয়াছে ; সিরিয়ার মরুভূমিতে নহর বহিতেছে ।
আমিনার কুটিরই বা আজ কী অপরূপ দৃশ্য ! কারা এই শ্বেত বসনা পূণ্যময়ী নারীরা ? বিবি হাওয়া, বিবি হাজেরা , বিবি রহিমা, বিবি মরিয়াম, সবাই আজ তাঁর শিয়রে দন্ডায়মান । বেহেশ্তী নূরে সারা ঘর আজ আলোকিত । বেহেশ্তী খুশবুতে বাতাস আজ সূরভিত ।
এক স্নিগ্ধ পবিত্র চেতনার মধ্যে আমিনার স্বপ্ন ভাঙ্গিল । আঁখি মেলিয়া চাহিয়া দেখিলেন কোলে তাঁহার পূর্ণিমার চাঁদ হাসিতেছে ।
সঙ্গে সঙ্গে সারা সৃষ্টির অন্তর ভেদিয়া ঝংকৃত হইল মহা আনন্দ ধ্বনি, “ খোশ আমদেদ ইয়া রাসূলাল্লাহ ! মারহাবা ইয়া হাবিবাল্লাহ ! বেহেশ্তের ঝরোকা হইতে হুর-পরীরা পুষ্প বৃষ্টি করিতে লাগিল ; অনন্ত আকাশে অনন্ত গ্রহ নক্ষত্র তসলিম জানাইল । বিশ্ব বিনা তারে আগমনি গান বাজিয়া উঠিল । নীহারিকা-লোকে তারায় তারায় , অণু পরমাণুতে আজ কাঁপন লাগিল । সবার মধ্যে আজ যেন কিসের একটা আবেগ, কিসের একটা চাঞ্চল্য । সবারই মুখে আজ বিশ্ময় ! সবারই মুখে আজ কি যেন এক চরম পাওয়ার পরম আনন্দ সুপ্রকট । প্রভাত সূর্য রশ্মি করাঙ্গুলি বাড়াইয়া নব অতিথির চরণ চুন্বন করিল ; বনে বনে পাখিরা সমবেত কণ্ঠে গান গাহিয়া উঠিল ; সমীরণ দিকে দিকে তাহার আবির্ভাবের খুশ খবর লইয়া 
ছুটিয়া চলিল । ফুলেরা স্নিগ্ধ হাসি হাসিয়া তাহাদের অন্তরের গোপন সুষমাকে নযরানা পাঠাইল । নদ-নদী ও গিরি নির্ঝর উচ্ছসিত হইয়া আনন্দ গান গাহিতে গাহিতে সাগর পানে ছুটিয়া চলিল । জলে- স্থলে , লতায়- পাতায়, তৃণে- তৃণে, ফুলে-ফলে আজ এমনি অবিশ্রান্ত কানাকানি আর জানাজানি । যার আগমনের আশায় যুগ যুগান্ত ধরিয়া সারা সৃষ্টি অধির আগ্রহে প্রহর গণিতেছিল, সে যেন আজ আসিয়াছে এই অনুভূতি আজ সর্বত্র প্রকট ।
আরবের মরু দিগন্তে আজ একী আনেন্দাচ্ছাস মরি ! মরি । আজ তার কী গৌরবের দিন ! সবচেয়ে যে নি:স্ব, সবচেয়ে যে রিক্ত , তারই অন্তর আজ এমন করিয়া ঐশ্বর্যে ভরিয়া গেল । চরম রিক্ততার অধিকারেই কি সে আজ এমন পরম পূর্ণতার গৌরব লাভ করিল ! বেদুঈন বালারা অকস্মাৎ ঘুম হইতে জাগিয়া উঠিয়া অবাক বিশ্ময়ে চাহিয়া রহিল । দিগন্ত বিস্তৃত উষর মরুর দিকে দিকে আজ এ কি অপূর্ব দৃশ্য ! এত আলো , এত রূপ কোথা হইতে আসিল আজ ? আজিকার প্রভাত এত স্নিগ্ধ পেলব হইয়া দেখা দিল কেন ? খর্জুর শাখায় আজ এত শ্যামলিমা কে ছড়ায়ে দিল ? মেষ শিশুরা আজ এত উল্লসিত কেন ? নহরে নহরে আজ এত স্নিগ্ধ বারিধারা কোথা হইতে আসিল ? কিসের উল্লাস আজ দিকে দিকে ?
আকাশ পৃথিবীর সর্বত্র এমনই আলোড়ন । ছন্দ দোলাই সারা সৃষ্টি যেন আজ দোল খাইতে লাগিল । জড়- চেতন সকলের মধ্যেই আজ চরম পাওয়ার পরম তৃপ্তি সুপ্রকট । কোথাও ব্যথা নাই, বেদনা নাই , দু:খ নাই, অভাব নাই ; সব রিক্ততার আজ যেন অবসান ঘটিয়াছে , সব অপূর্ণতা আজ যেন দূরীভূত হইয়াছে । বিশ্বভূবনে আল্লাহ অনন্ত আশির্বাদ ও অফুরন্ত কল্যাণ নামিয়া আসিয়াছে । আকাশে- বাতাসে, জলে- স্থলে, লতায়- পাতায়, জড়- চেতনে আজ যেন সার্থকতা ও পরিপূর্ণতার এক মহা তৃপ্তি ভাসিয়া বেড়াইতেছে । মহাকাল ঋতুচক্রে তবে কি আজ প্রথম বসন্ত দেখা দিল ? প্রকৃতির কুঞ্জবনে আজ কি প্রথম কোকিল গান করিল ?
কে এই নব অতিথি কে এই বেহেশ্তী নূর যাঁহার আবির্ভাবে আজ দ্যূলোকে-ভূলোকে এমন পুলক শিহরণ লাগিল ?
এই মহা মানব শিশুই আল্লাহর প্রেরীত সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ পয়গন্বর নিখিল বিশ্বের অনন্ত কল্যাণ ও মূর্ত আশির্বাদ মানব জাতির চরম এবং পরম আদর্শ, স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বিশ্ব নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ( সা: ) ।

বিবি হালিমার কোলে শিশুনবীর অলৌকিক ঘটনা :

সীরাতে ইবনে হিশাম, ত্বাবাক্বাত ও রাহিকুল মাখতুমে বর্ণিত হয়েছে : 
আরব দেশের শহর এলাকার লোকজনের জাতীয় রীতি ছিল : তারা নবজাতক শিশুকে দুধ পান করানোর জন্য গ্রামে পাঠিয়ে দিত , যাতে শিশুরা গ্রামের বিশুদ্ধ আবহাওয়ায় লালিত পালিত হয়ে সুস্বাস্থ্যবান হয়ে বেড়ে উঠতে পারে । সাথে সাথে গ্রামের অবিমিশ্রিত বিশুদ্ধ আরবী ভাষা রপ্ত করতে পারে । আরবদের এ জাতীয় রীতি অনুসরণ করেই শিশু মুহাম্মাদকে জন্মের পর পরেই হালিমা সাদিয়ার নিকট দুধ পানের জন্য অর্পন করা হয় । হালিমার কোলে যাওয়ার পর শিশু নবী দ্বারা যে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশিত হয় , স্বয়ং হালিমা সাদিয়া তা বর্ণনা করেছেন । 
হালিমা সাদিয়া বলেন : বছরটি ছিল দূর্ভিক্ষের , চারদিকে অভাব অনটনের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন । এমন সময় অভাব ও ক্ষুধাক্লিষ্ট স্বামীকে নিয়ে বনি সাদ গোত্রের কয়েকজন মহিলার সাথে মক্কায় গমন করলাম । উদ্দেশ্য ছিল কোন একটি শিশু সংগ্রহ করে কিছু পরিশ্রমিক পাওয়া । আমাদের কাছে একটি উটনী ছিল , কিন্তু খরা ও দূর্ভিক্ষের কারণে সে উটনী থেকে এক ফোটা দুধও পাওয়া যেত না । আমার কোলের সন্তানটি বুকের দুধ না পেয়ে ছটফট করে কান্নাকাটি করতো । সেজন্য সে রাতে ঘুমাতে পারতো না এবং আমাদেরও ঘুমাতে দিত না ।
মক্কায় পৌছে আমাদের যত মহিলা ছিল , সকলেই একটা না একটা শিশু পেয়ে গেল কিন্তু আমার ভাগ্যে কোন শিশু জুটলো না ।
এদিকে বিধবা আমিনার পুত্র শিশু মুহাম্মাদকে অনেকের কাছেই পেশ করা হলো , কিন্তু সে এতিম হওয়ার কারণে কেউ তাঁকে গ্রহণ করলো না । কারণ এ এতিম শিশু নিলে ভাল বিনিময় পাওয়ার আশা নেই ।
কাফেলার সবাই যখন শিশু পেয়ে গেল , এবার ফিরে যাওয়ার পালা । স্বামীকে গিয়ে বললাম : খালি হাতে ফিরে যাওয়া ভাল লাগছে না , আপতত আমরা এ এতিম শিশুটিকেই নিয়ে যাই । স্বামী রাযি হয়ে বললেন : হ্যাঁ , তাই করো । অগত্যা এতিম শিশু মুহাম্মাদকেই আমরা নিয়ে নিলাম । 
হালিমা সাদিয়া বলেন : শিশুটিকে নিয়ে তাঁবুতে ফিরতে না ফিরতেই শুরু হলো মহা বরকতের বিশ্ময়কর ঘটনা । আমার উভয় স্তন দুধে ভরে গেল, ফলে অনেক দিন পর আমার কোলের শিশু পেট ভরে দুধ খেল । শিশু মুহাম্মাদও দুধ খেয়ে উভয়ে ঘুমিয়ে গেল । এদিকে আমার স্বামী দেখেন , আমাদের দুগ্ধশুণ্য হড্ডিসার উটনীটির স্তন দুধে ভরে গেছে । তিনি সে উটনী থেকে দুধ দহন করলেন । আমরাও দীর্ঘ দিন পর অত্যন্ত তৃপ্তির সাথে পেট ভরে দুধ পান করে আরামে রাত কাটালাম । আমার স্বামী আমাকে বললেন : হালিমা ! তুমি বড় বরকতময় শিশু নিয়ে এসেছো ! আমি বললাম : হ্যাঁ তাই মনে হচ্ছে । মনে মনে স্বস্থির নি:শ্বাস ফেললাম এবং অত্যন্ত প্রশান্ত মনে বাড়ি রওয়ানা দিলাম । আমাদের বাহনটি ছিল অতি দূর্বল । আসার সময় আমরা কাফেলার পেছনে পড়ে ছিলাম । কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে ঐ বাহনে যখন সওয়ার হলাম কি আশ্চর্য ! বাহনটি এত দ্রুত চলতে লাগলো যে, এবার কাফেলার সবাই আমাদের পেছনে পড়ে গেল । সঙ্গীরা বলতে লাগলো : হালিমা ! এতো আশ্চর্য ব্যাপার দেখছি ! যে বাহনে সওয়ার হয়ে এসেছিলে , এটা কি সেই বাহন নয় ? আমি বললাম : হ্যাঁ সেই বাহন । তখন তারা বলতে লাগলো : তবে নিশ্চয় এর মধ্যে কোন কল্যাণ আছে ।

এ পর্যায়ে কবি গোলাম মোস্তফা রচিত বিশ্বনবী হতে সারসংক্ষেপ আলোচিত হচ্ছে ।
মুহাম্মাদকে নিজ গৃহে লইয়া আসিবার সঙ্গে সঙ্গে হালিমা এক আশ্চার্য পরিবর্তন লক্ষ্য করিলেন । তিনি লক্ষ্য করিলেন : তাঁহার গৃহপালিত মেষগুলি অধিকতর পরিপুষ্ট হইয়া উঠিল এবং অধিক পরিমাণে দুগ্ধ দান করিতে লাগিল । খর্জুর বৃক্ষে প্রচুর পরিমাণ খর্জুর ফলিতে লাগিল ; কোন দিক দিয়াই তিনি আর কোন অভাব অনুভব করিতে লাগিলেন না । 
আরও একটি আশ্চর্য ব্যাপার তিনি লক্ষ্য করিলেন যে, শিশুনবী যখন হালিমার স্তন্য পান করিতেন, তথন মাত্র একটি স্তন্যই পান করিতেন, অন্যটি করিতেন না । মনে হইত মুহাম্মাদ জানিয়া শুনিয়াই অপর স্তনটি তাঁহার দুধ ভাই হালিমার আপন পুত্রের জন্য রাখিয়া দিতেন । এই সমস্ত ব্যবহার লক্ষ্য করিয়া হালিমা প্রথম হইতেই এই অনুপম শিশুর প্রতি কেমন যেন আকৃষ্ট হইয়া পড়িলেন ।
হালিমা সাদিয়া আরও বলেন : বাড়িতে এসে দেখি যে, আমার বকরীগুলো ভরাপেটে , ভরা স্তনে মাঠ থেকে ফিরে আসছে । অথচ ক্ষরা ও দূর্ভিক্ষের কারণে অন্যদের বকরীগুলো খেতেই পেত না । আমাদের বকরীগুলোর অব্যাহত এ অবস্থা দেখে প্রতিবেশী মালিকরা তাদের রাখালদের ভৎসনা করে বলতে লাগলো : এই হতভাগ্যের দল ! হালিমার বকরীগুলো যে মাঠে নিয়ে যায় , তোমরা সেই মাঠে নিয়ে যেতে পার না ?
এটা কি মাঠ আর রাখালের কোন কৃতিত্ব ? না , তা নয় বরং এটা ছিল কুলমাখলুকাতের নয়নমনি সাইয়েদুল মুরসালিন রাহমাতুল লিল আলামীন নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ( সা : ) এর পবিত্র সত্ত্বার বরকত । তা অন্যরা পাবে কোথা থেকে ? মূলত; এ সব কিছুই ছিল বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ( সা; ) এর নবুওয়্যাতের পূর্বাভাস । 

বিশ্বনবী উম্মী হওয়ার নেপথ্যে যৌক্তিক কারণ : 

মুসলিম সমাজ এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত যে, বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ( সা: ) উম্মী ছিলেন । তিনি পড়তে ও লিখতে সক্ষম ছিলেন না । ক্বুরআনুল কারিমে তাঁকে নাবিউন উম্মী বলে উল্লেখ করা হয়েছে । 
নবী কারীম ( সা: ) এর জীবন ইতিহাস থেকেও এ কথার সত্যতা অকাট্যভাবে প্রমানিত হয়েছে যে, তিনি কখনই কোন পাঠশালায় ভর্তি হননি , কোন শিক্ষকের নিকট শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে কখনই যাননি ।
উম্মী শব্দের অর্থ :
আরবী ام ” ( উম্মুন ) ধাতু থেকে امى ” ( উম্মী ) শব্দটির উৎপত্তি হয়েছেام শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয় । যেমন- মূল, প্রত্যাবর্তন কেন্দ্র , কেন্দ্রস্থল, জনসমাবেশের কেন্দ্রস্থল ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয় । 
আরবদের ভাষায় বলা হয় উম্মুন ” – যেখানে সব জিনিস একত্রিত হয় । এ থেকেই গঠিত হয়েছে ام الرأس ( উম্মুর রাস ) শব্দটি । যার অর্থ মগজ বা মস্তিষ্ক । মক্কা শহরকে এজন্যই উম্মুল ক্বুরাহ বা জনবসতি সমূহের কেন্দ্রস্থল বলা হয় । সূরাহ আলফাতিহা যেহেতু ক্বুরআনুল কারিমের সার সংক্ষেপ, তাই একে ام القرآن" " ( উম্মুল ক্বুরআন ) বলা হয় । আর লাওহে মাহফুজকে বলা হয় ام الكتاب ( উম্মুল কিতাব ) অর্থাৎ- সমস্ত আসমানী কিতাবের উৎসমূল । মাকে আরবীতে উম্ম বলা হয় । কেননা মাতৃক্রোড়েই হচ্ছে সন্তানদের শান্তি ও নিরাপত্তার আশ্রয়কেন্দ্র । 
এই প্রেক্ষিতে উম্মী বলা হয় এমন ব্যক্তিকে যার লিখবার বা পড়বার শক্তি রহিত । জন্মকাল থেকেই যে লোক লিখতে ও পড়তে পারে না, তাকে উম্মী বলা হয় ।
মুফাসসিরদের মতে উম্মীর সংজ্ঞা :
আল্লামা বায়যাবী ( রহ: ) তাফসীরে বায়যাবীতে উল্লেখ করেছেন : 
"الأمى الذى لا يكتب ولا يقرأ “– 
অর্থাৎ- উম্মী হলো সেই ব্যক্তিকে বুঝায়, যে লিখতে ও পড়তে পারে না ।
আল্লামা আলুসী ( রহ: ) তাফসীরে রুহুল মাআনীতে উল্লেখ করেছেন : 
" يقال لرسول الله ( ص ) أمى ، لأنه لا يقرأ ولا يكتب – " 
অর্থাৎ- রাসূল ( সা: ) কে এ জন্যই উম্মী বলা হয়েছে ; যেহেতু তিনি পড়তে ও লিখতে জানতেন না ।
ক্বুরআনুল কারীমে রাসূল ( সা: ) উম্মী হওয়ার প্রমাণ :
প্রথম প্রমাণ :
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الْأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوبًا عِنْدَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالْأَغْلَالَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ فَالَّذِينَ آَمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنْزِلَ مَعَهُ أُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ـ )سورة الاعراف 158)ـ157)
অনুবাদ : ( অতএব আজ এই রহমত তাদেরই প্রাপ্য ) যারা এই উম্মী নবীর অনুসরণ করবে , যার উল্লেখ তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে তারা দেখতে পায় । সে নবীতো তাদেরকে নেক কাজের আদেশ করে, খারাপ ও পাপের কাজ থেকে বিরত রাখে, তাদের জন্য পবিত্র দ্রব্য- সামগ্রী হালাল ঘোষণা করে ও খারাপ নিকৃষ্ট জিনিস সমূহকে হারাম ঘোষণা করে । আর তাদের উপর থেকে সেই বোঝা ও বন্ধনাদি দূর করে দেয় , যা তাঁদের উপর চেপে বসেছিল । অতএব যে সব লোক তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাঁর সাহায্য ও সহযোগিতা করবে এবং এবং তাঁর নিকট নাযিল করা আলোর অনুসরণ করবে , তারাই হবে সাফল্যমন্ডিত । অতএব ঈমান আনো তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি যে একজন উম্মী নবী, যে নিজে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর কালামের প্রতি ঈমান রাখে এবং তোমরা তাঁকে অনুসরণ করো । তাহলেই আশা করা যায় যে, তোমরা হেদায়েতপ্রাপ্ত হতে পারবে । ( সূরাহ আরাফ: আয়াত= ১৫৭-১৫৮ )
উপরোদ্ধৃত দুটো আয়াতে কারীমায় আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে মোট দশটি গুণে ভূষিত করেছেন । সে দশটি গুণ বা পরিচিতি এই :
০১. তিনি রাসূল, তিনি নবী । 
০২. তিনি উম্মী । 
০৩. তাঁর নাম তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে লিখিত রয়েছে । 
০৪. সে কিতাব দুখানিতে নবী সম্পর্কে বলা হয়েছে । 
০৫. তিনি মারুফ তথা ভাল কাজের আদেশ করেন । 
০৬. তিনি খারাপ- তথা পাপ ও শরীয়াত বিরোধী কাজ করতে নিষেধ করেন । 
০৭. তিনি যাবতীয় উত্তম উৎকৃষ্ট-পবিত্র দ্রব্যাদিকে হালাল ঘোষণা করেন । 
০৮. তিনি সব খবীস-খারাপ-নিকৃষ্ট-পঁচা দূর্গন্ধময় জিনিসকে হারাম ঘোষণা করেন । 
০৯. তিনি লোকদের উপর চাপানো অস্বাভাবিক ও দূর্বহ বোঝাসমূহ দূর করে দেন । 
১০. একসাথে বলা নবীর এসব গুণ পরিচিতি যত স্পষ্ট ততটাই স্পষ্ট কথা এইযে, তিনি একজন উম্মী নবী ।

দ্বিতীয় প্রমাণ :
وَمَا كُنْتَ تَتْلُو مِنْ قَبْلِهِ مِنْ كِتَابٍ وَلَا تَخُطُّهُ بِيَمِينِكَ إِذًا لَارْتَابَ الْمُبْطِلُونَ- ( سورة العنكبوت ـ 48)
অনুবাদ : হে নবী ! তুমি ক্বুরআন নাযিলের পূর্বে কোন কিতাব পড়তে পারতে না, নিজের ডান হাত দিয়ে কোন কিছু লিখতেও না । তা যদি তুমি করতে , তাহলে বাতিল পন্থীরা সন্দেহে পড়ে যেতো । ( তারা এই মর্মে সংশয় প্রকাশ করতো , হয়তোবা মুহাম্মাদ এ বাণী নিজের তরফ থেকে রচনা করে আমাদের সামনে পেশ করছে । ) – ( সূরাহ আনকাবুত- আয়াত নং ৪৮ )
আলক্বুআনের ভাষায়- উম্মীসেই যে, পাঠ করতে সক্ষম নয়, নিজ হাতে লিখতে অক্ষম । যেমন- অপর আয়াতে এই উম্মী শব্দের ব্যখ্যা দেওয়া হয়েছে এ বলে :
وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ - ( سورة البقرة ـ 78)
অনুবাদ : তাদের মধ্যে এমন উম্মীলোক রয়েছে, যারা লিখতে জানে না । 
(
সূরাহ আল বাক্বারাহ- আয়াত নং- ৭৮ )

রাসূল ( সা: ) উম্মী হওয়ার ব্যাপারে হাদীসভিত্তিক দলীল :

عن ابن عمر ( رض ) عن النبى صلى الله عليه وسلم قال : أ نا أمة أمية لا نكتب ولا نحسب ـ ( رواه البخارى ـ رقم الحديث = 1913 ) –
অনুবাদ : হযরত ইবনু উমার ( রা ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) আমরা এক উম্মী জনগোষ্ঠী । আমরা লিখতে ও হিসাব করতে পারি না । ( তথ্যসূত্র : সহীহ বুখারী : হাদীস নং- ১৯১৩ )

আলক্বুরআনের চিরন্তন মুজিযা :
মুসলিম মিল্লাত এ ব্যাপারে একমত যে, আলক্বুরআন মানব জাতির জন্য চিরন্তন মুজিযা । এর মুজিযার ধরণ প্রধানত: তিনটি :
০১ـ ان النبى كان اميا ( বিশ্বনবী উম্মী ছিলেন : )
০২. الا خبار عن الغيوب ( অতীত ও ভবিষ্যত সম্পর্কে অদৃশ্যের সংবাদ প্রদান )
০৩ . القرآن عجيب النظم و بديع المعانى ( আলক্বুরআনের অভিনব গ্রন্থনা, আশ্চর্য রচনাশৈলী ও ভাষার অলংকারিক শ্রেষ্ঠত্ব তথা শৈল্পিক সৌন্দর্য , যা গোটা সৃষ্টিকে অক্ষম করে দিয়েছে এর সমকক্ষ রচনা আনয়ন করতে

বিশ্বনবী উম্মী হওয়ার নেপথ্যে প্রথম কারণ :
বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) উম্মী হওয়া তাঁর নবুয়্যাতের সত্যতার উপর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমানতিনি একজন উম্মী নবী হয়ে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের বিবরণ, মানব ইতিহাসের শুরু তথা আদম ( আ: ) থেকে শুরু করে প্রাচীন বিভিন্ন জাতির উথ্থান-পতনের ঘটনাবলী বর্ণনা, ভবিষ্যতে কি ঘটবে, তার আগাম সংবাদ প্রদান, মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জগত তথা আখিরাত বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য বর্ণনা করেছেন । এসব তথ্য সন্বলিত আয়াত নাযিলের পূর্বে সে বিষয়ে তিনি নিজেও জানতেন না , তাঁর জাতিও জানতো না । কিন্তু উম্মী নবী এসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করেছেন ; যা আরবের প্রথিতযশা কবি সাহিত্যিকদের হতবাক করে দেয় । আল্লাহ তায়ালা ক্বুরআনুল কারিমে অতীত জাতির ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করার পর ইরশাদ ফরমান :
تلك من أنباء الغيب نوحيها اليك ما كنت تعلمها انت و لا قومك من قبل هذا ـ
অনুবাদ : আমি ওহী নাযিলের মাধ্যমে অতীত জাতির এসব ঘটনা প্রবাহ আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি । ইত:পূর্বে তা আপনি নিজেও জানতেন না এবং আপনার জাতিও জানতো না- ( সূরাহ হুদ : আয়াত- ৪৯ )
একজন নিরক্ষর ব্যক্তির যবান থেকে এসব পান্ডিত্যপূর্ণ, জ্ঞানগর্ভ ও তথ্যসমৃদ্ধ বাণী বের হয়ে আসছে, যিনি কোন শিক্ষা গুরুর কাছে দীক্ষা লাভ করেননি । তাহলে এর দ্বারাই স্বতই প্রমানিত হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ ( সা: ) এর যবান নি:সৃত এ কালাম তাঁর রচিত বাণী নয় । নিশ্চয়ই ইহা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে অবতারিত শ্বাশ্বত বাণী ।
বিশ্বনবী উম্মী না হলে মানবমনে সংশয় সৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল যে, হয়তো বা মুহাম্মাদ ( সা: ) এ সব বাণী নিজের তরফ থেকে রচনা করে মানুষের কাছে পেশ করছেন । নবী উম্মী হওয়ার কারণে এ সংশযের দ্বার রুদ্ধ হয়ে গেছে ।
বিশ্বনবী উম্মী হওয়ার পেছনে দ্বিতীয় কারণ :
বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ( সা: ) যাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাইয়েদুল মুরসালীন করত: উভয় জগতের সমগ্র সৃষ্টির মহান নেতা নির্বাচন করে , রাহমাতুল লিলআলামীন ও জগৎগুরু করে এই ধুলির ধরায় পাঠালেন ; তিনি যদি অন্য কারও শিষ্যত্ব গ্রহণ করতেন, তাহলে তিনি ছেোট হয়ে যেতেন, গুরুই বড় হয়ে যেতো । তাঁকে জগৎগুরু উপাধিতে ভূষিত করা সমীচীন হতো না । কারণ, যে ছাত্র মেধা ও প্রজ্ঞায় শীর্ষ স্থান দখল করে, ঐ ছাত্রের কৃতিত্বের পুরাপুরি দাবিদার হন তাঁর শিক্ষকমন্ডলী । তাঁর শিক্ষকমন্ডলী ঐ প্রথিতযশা প্রতিভাবান ছাত্রের ব্যাপারে গর্ব প্রকাশ করত: বুক ফুলিয়ে বলতে থাকেন যে, দেখতে হবে ছাত্রটি কার হাতে গড়া । ওকে আমরা এভাবেই তিলে তিলে গড়ে তুলেছি । সুতরাং ছাত্রের সেই কৃতিত্ব , মেধা , সুনাম-সুখ্যাতির দাবিদার হন তাঁর শিক্ষকমন্ডলী ।
তেমনিভাবে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) যদি কোন গুরুর হাতে শিক্ষা গ্রহণ করতেন, তবে তাঁর কৃতিত্বের দাবীদার হতেন তাঁর শিক্ষক ; তিনি নন । এটি হলে তিনি জগৎগুরু হতে পারতেন না । এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিশ্বনবীকে উম্মী করে প্রেরণ করা হয়েছে । জাগতিক পন্থায় তাঁর শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি । স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর শিক্ষার দায়িত্ব নিজ হাতে গ্রহণ করেছেন । আল্লাহ তায়ালা আহকামুল হাকেমীন । তাঁর অফুরন্ত জ্ঞান ভান্ডার থেকে নিজ দায়িত্বে বিশ্বনবীর ক্বালবে ইলম, জ্ঞান, প্রজ্ঞা সঞ্চারিত করে দিয়েছেন ।

এ পর্যায়ে কবি গোলাম মোস্তফা রচিত বিশ্ব নবী থেকে বিশেষ অংশ 
আপনাদের সামনে উপস্থাপিত হচ্ছে ।
দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমির মধ্যে হালিমার কুঠির । বেদুঈন জীবনের সমস্ত বৈশিষ্ট্য সেখানে বিদ্যমান । চতুর্দিকে মুক্ত স্বধীন প্রকৃতি- মুক্ত আকাশ, মুক্ত বাতাস, মুক্ত প্রান্তর , তারই মাঝে মুক্ত মানুষের মুক্ত মন । । কোথাও বাধা নাই , বন্ধন নাই, জীবন যাত্রার মধ্যে কোথাও কৃত্রিমতা নাই ; প্রকৃতির সাথে চমৎকার সুসঙ্গতি তার । শুধু জড়জীবনের হাসি-কান্নাই এ জীবনের সবটুকু নয় । এর খানিকটা বাস্তব , খানিকটা স্বপ্ন, খানিকটা কোমল, খানিকটা গদ্য, খানিকটা কবিতা । প্রভাত আলোর ঝর্ণাধারায় প্রাত: স্নান করা, ঘোড়া ছুটাইয়া দূর দিগন্তে বিলীন হইয়া যাওয়া , মরু উদ্যানের খর্জুর বীথিতে ডেরা ফেলিয়া বাস করা , চাঁদনী রাতে নহর কেনারে ভ্রমণ করা, কখনও বা মরু সাইমুম ও মরু ঝটিকার সন্মুখীন হওয়া এ সমস্তই বেদুঈন জীবনের রোমান্সের দিক । জীবনের চারি পাশে এই রোমাঞ্চকর পরিবেশ ; বিশ্ব প্রকৃতির সহিত এই মিশামিশি , আলো ছায়ার এই লুকোচুরির খেলা , এই আধজাগরণ আধ- স্বপ্নের সংমিশ্রণ , ইহাই মানুষের স্বাভাবিক জীবন । প্রকৃতি হইতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন যে জীবন , তাহার কোন মাধুর্য নাই । প্রকৃতির সহিত মানুষ যেখানে মিলিয়া যায় , সেইখানেই জীবনের চমৎকারিত্ব । সাধে কি কবি গাহিয়াছেন :

ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুঈন
চরণতলে বিশাল মরু দিগন্তে বিলীন ।
এমনি পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে শিশুনবীর জীবনযাত্রা আরম্ভ হইল । শৈশবকাল শিক্ষার সময় । এই সময় শিশুর মনে যে শিক্ষা ও যে আদর্শের রেখাপাত করা যায়, তাহাই স্থায়ী হইয়া থাকে । আশ্চর্যের বিষয় , হযরত মুহাম্মাদের সেরূপ কোন শিক্ষার ব্যবস্থায় হইল না ।
কিন্তু সত্যিই কি তাই ? মুহাম্মাদের শিক্ষার কি কোন ব্যবস্থাই হয় নাই ?
নিশ্চয়ই হইয়াছে । পিতা নয়- মাতা নয় , শিক্ষক নয়, সমাজ নয় স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই তাঁহার শিক্ষার ভার গ্রহণ করিয়াছিলেন । নবী-রাসূলদের শিক্ষা তো এভাবেই হইয়া থাকেমানুষের শিক্ষা ও কৃত্রিম জ্ঞান তো তাঁহাদের জন্য নয় । তাঁহাদের শিক্ষার পদ্ধতি ও উপাদান সম্পূর্ণ স্বতন্দ্র । কী অদ্ভূত ভাবেই না শিশুনবীর শিক্ষা জীবন আরম্ভ হইল । সাধারণ মানব জীবনের সহিত এ জীবনের কত পার্থক্য ! খোদা যেন কোন গুঢ় উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মুহাম্মাদকে ঘর হইতে টানিয়া বাহিরে আনিলেন । সমাজের বিকৃত চিন্তাধারা ও কলুষিত আদর্শের ছাপ পড়িবার পূর্বেই তিনি তাঁহাকে সরাইয়া আনিয়া বিশাল মরুভুমির উন্মুক্ত পটভূমিতে স্থাপন করিলেন । তারপর প্রকৃতির বিরাট গ্রন্থ তাঁহার সন্মুখে খুলিয়া ধরিলেন; একে একে তাঁহাকে প্রাথমিক পাঠদান করিতে আরম্ভ করিলেন । প্রভাতের অরুন রাঙা আকাশ, মধ্যাহ্নের অগ্নি ক্ষরা লুভরা বাতাস , নিস্তব্ধ নির্জন রাতের ধ্যান গভীর মৌনতা , দূরে দূরে গিরি উপত্যকার ধূসর শ্রী , মরু দিগন্তের মায়া মরীচিকা , এ সমস্তই তাঁহার মনে এক অপূর্ব বিশ্ময় ও জিজ্ঞাসা সৃষ্টি করিতে লাগিল । এই পরিদৃশ্যমান জগতের অন্তরালে যে একজন নিয়ন্তা আছেন, তিনি যে, আড়ালে থাকিয়া নানা বর্ণে, নানা গন্ধে , নানা গানে , নানা ছন্দে আপনাকে প্রকাশ করিতেছেন ; এ সত্য তিনি তাঁহার অন্তর দিয়া উপলব্ধি করিতে লাগিলেন । পক্ষান্তরে বেদুঈন জীবনের সহজ সরল প্রকাশভঙ্গি , তাহাদের তেজস্বিতা , নির্ভিকতা , স্বদেশপ্রেম এ সমস্তও তাঁহার শিশু মনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে লাগলো ।
এইরূপ অদ্ভূত পদ্ধতিতেই শিশু নবীর শৈশব শিক্ষা আরম্ভ হইল । সকল জ্ঞানের, সকল সত্যের, সকল তথ্যের উৎসমূখ যেখানে- সেখানে বসিয়াই তিনি জ্ঞানামৃত পান করিতে লাগি্লেন । মানুষের রচিত বিকৃত শিক্ষা কেন তিনি গ্রহণ করিবেন ? বিশ্বগুরু হইবার জন্য যিনি ধরায় আসিলেন , তিনি কেন অপরকে গুরু বলিয়া গ্রহণ করিবেন ? তাই তিনি যে উম্মী তথা নিরক্ষর ছিলেন- ইহা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ছিল । অসম্পূর্ণ মানুষের অসম্পূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করিলেই তিনি ছোট হইয়া যাইতেন । মানুষের দেওয়া অসম্পূর্ণ জ্ঞান তাঁহার মনের উপর একটা পর্দার আড়াল টানিয়া দিত ; চিরজ্যোতির্ময়ের জ্যেতিপুঞ্জ তখন আর তাহার চিত্তে আসিয়া প্রতিফলিত হইতে পারিত না । এই কারণেই বোধ হয় আল্লাহ তায়ালা সতর্ক অভিভাবকের মত শিশু মুহাম্মাদকে সমাজের বিকৃত আবহাওয়া হইতে সরাইয়া লইয়া নির্জন মরুবক্ষে রাখিয়া দিয়াছিলেন । সৃষ্টি লীলার সমস্ত গোপন রহস্য ও মূল সত্যগুলি জানা হইলেই তো সব জানা হইয়া যায় । সেই জ্ঞানই তো পরম জ্ঞান । মুহাম্মাদ ( সা: ) সেই স্বর্গীয় জ্ঞানেরই অধিকারী হইয়াছিলেন । বস্তুত: হযরত মুহাম্মাদ ( সা: ) যে জগৎগুরু ছিলেন ,তাহার এক বড় প্রমাণ যে তিনি নিরক্ষর ছিলেন তাঁহার কোন গুরু ছিল না ।

বিশ্বনবীর সার্বজনীন আদর্শ :

বিশ্বনবীর পরিচয় :
বিশ্বজনীন আদর্শ যার মাঝে পাওয়া যাবে, তিনিই হতে পারেন বিশ্বনবী । মানব জীবনের চলার পথে যত দিক ও বিভাগ আছে ; সমগ্র দিক ও বিভাগে যিনি পরিপূর্ণ আদর্শ উপস্থাপন করতে পেরেছেন, তাঁকেই বলা হয় বিশ্বনবী ।
রাসূলে কারীম ( সা: ) ছিলেন আমাদের জন্য পরিপূর্ণ আদর্শ । বিশ্বনবী ( সা: ) এর জীবনের সমগ্র সাইডে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে তাঁর ঐ সার্বজনীন ও পরিপূর্ণ আদর্শের উজ্জ্বল চিত্র আমরা দেখতে পাই । শিশু-কিশোর, এতিম, বালক, যুবক-বৃদ্ধ, রাখাল- সওদাগর, নারী-পুরুষ, স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্র , ভাই-সহচর, শত্রু-মিত্র , ধনী-গরীব , রাজা-প্রজা, নেতা- অনুসারী , শাসক- শাসিত, সৈনিক- সেনাপতি, শিক্ষক-ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক, কুলি-মজদুর, গৃহী-প্রতিবেশী, কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি, আইনজীবি , সমাজসেবী, ব্যবসায়ী, ফকির-দরবেশ- এক কথায় সর্বশ্রেণীর মানুষ নিজ নিজ জীবন যাত্রায় তাঁর নিকট থেকে অনুপম আদর্শ খুঁজে পাবেন । সকলের জন্যই তিনি ছিলেন জীবন্ত আদর্শ বা নিখুত আয়না । দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ আপন আপন চেহারা বিশ্ব নবীর জীবন্ত আদর্শরূপ এই দর্পনে দেখে নিতে পারেন । জীবন পথের পদে পদে তিনি সঠিক পথের দিশা পাবেন ।
রাসূল (সা:) বিশ্বনবী হওয়ার ব্যাপারে ক্বুরআনিক দলীল :

قال الله تعالى :
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا ـ ( سورة الاعراف= 158 )
অনুবাদ: হে রাসূল ! আপনি ঘোষণা করুন যে, আমি দুনিয়ার সকল মানুষের নিকট আল্লাহ প্রেরীত রাসূল । ( সূরাহ আরাফ : আয়াত নং- ১৫৮ )
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ ـ ( سورة الانبياء = 107 )
অনুবাদ : হে রাসূল ! আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি । ( সূরাতুল আন্বিয়া : আয়াত নং- ১০৭ )
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا ـ ( سورة سبا : 28 )
অনুবাদ : আর আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে পাঠিয়েছি । ( সূরাহ সাবা : আয়াত নং- ২৮ )
تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا ـ ( سورة الفرقان: 1 )-
অনুবাদ : বরকতময় সেই আল্লাহ ! যিনি তাঁর বান্দাহ মুহাম্মাদ ( সা: ) এর উপর 
পবিত্র ক্বুরআন নাযিল করেছেন, যাতে তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য ভীতিপ্রদর্শক হন । ( সূরাহ আলফুরক্বান : আয়াত নং- ০১ )
وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَذَا الْقُرْآَنُ لِأُنْذِرَكُمْ بِهِ وَمَنْ بَلَغَ ـ ( سورة الأنعام : 19 )
অনুবাদ : আমার প্রতি ওহীর মাধ্যমে এই ক্বুরআন নাযিল করা হয়েছে , যেন আমি তদ্বারা তোমাদেরকে এবং সেই সমস্ত লোকদেরকেও যাদের নিকট তা পৌছবে , সতর্ক করতে পারি । ( সূরাহ আল আনআম : আয়াত নং- ১৯ )
وَأَرْسَلْنَاكَ لِلنَّاسِ رَسُولًا وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا ـ ( سورة النساء 79)
অনুবাদ : আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি । ( সূরাহ আননিসা : আয়াত নং- ৭৯ )
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُولُ بِالْحَقِّ مِنْ رَبِّكُمْ فَآَمِنُوا خَيْرًا لَكُمْ -
( ‍سورة النساء : 170 )
অনুবাদ : হে মানব মন্ডলী ! তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে রাসূল সত্য দ্বীন নিয়ে আগমন করেছে । অতএব তোমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনো , তাহলে তোমাদের কল্যাণ হবে । ( সূরাহ আননিসা : আয়াত নং- ১৭০ )

মুহাম্মাদ ( সা: ) বিশ্বনবী হওয়ার ব্যাপারে হাদীস থেকে দলীল :

قال النبى صلى الله عليه وسلم : كان النبى يبعث الى قومه خاصة و بعثت الى الناس كافة ـ
অনুবাদ : রাসূলে কারীম ( সা: ) ইরশাদ ফরমায়েছেন : আমার পূর্বে অন্যান্য নবীগণ শুধুমাত্র তাঁদের সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরীত হতেন , কিন্তু আমি সকল মানুষের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরীত হয়েছি । বিশ্বনবী সকল যুগ ও কালের উর্ধ্বে , তাঁর রিসালাত কোন যুগ, কাল বা কোন জনগোষ্ঠী ও ভাষাভাষির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । তিনি সকলের এবং সকল দেশের সমগ্র মানব গোষ্ঠীর জন্য রাসূল হিসেবে প্রেরীত হয়েছেন ।
বিশ্বনবীর রিসালাতের সার্বজনীনতা :
বিশ্বমানবতার মুক্তি ও কল্যাণের লক্ষ্যে যুগে যুগে যত নবী-রাসূল 
ও মহাপুরুষদের আগমন ঘটেছে, তন্মধ্যে একমাত্র মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ( সা: ) বিশ্বনবী হবার গৌরব অর্জন করেছেন । অন্যান্য নবী-রাসূলদের আগমন ঘটেছিল বিশেষ একটি গোষ্ঠী, বিশেষ একটি ভূখন্ডের অধিবাসীদের পথ প্রদর্শনের লক্ষ্যে । কিন্তু বিশ্ব নবী মুহাম্মাদ ( সা: ) এর রিসালাত ছিল সার্বজনীন । সমগ্র বিশ্বের সকল শ্রেণীর জ্বিন ও ইনসানের পথ প্রদর্শক ও মুক্তির দিশারী হিসেবে তিনি দুনিয়াতে প্রেরীত হয়েছেন । রাসূল (সা : ) ছাড়া অন্য কোন নবী বা মহাপুরুষের জীবন বিশ্বজনীন ছিল না ।

রাসূল ( সা: ) এর রিসালাত যেমন বিশেষ ভূখন্ড, কিংবা ভাষা, বর্ণ বা বংশের লোকদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না ; তেমনি তাঁর রিসালাত কোন এক যুগের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । বরং তা ছিল সারা পৃথিবীর সকল কালের সকর শ্রেণীর মানুষের জন্য সমানভাবে গ্রহণীয় ও অনুসরণীয় । সমগ্র বিশ্ববাসীর হেদায়েত ও বিশ্বমানবতার সার্বিক কল্যাণ বিধানের জন্যই এই ধুলির ধরায় তাঁর আগমন ঘটোছিল । রাসূল ( সা: ) এর মধ্যে আমরা তাই দেখি বিশ্বজনীন আদর্শ ।
তিনি শুধু আরবের নন, এশিয়া কিংবা ইউরোপের নন, নন শুধু শ্বেতাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গের, তিনি গোটা বিশ্বের । তিনি শুধু মুসলমানদের জন্য নন, বা শুধু মানব গোষ্ঠর জন্য নন । তিনি হচ্ছেন জ্বিন মানব তথা সমগ্র সৃষ্টির জন্য রাহমাতুল লিলআলামীন ।

বিশ্বনবী হওয়ার জন্য ঐতিহাসিক ভিত্তি :
একজন আদর্শ মানবের জীবন বৃত্তান্ত সম্পর্কে যা কিছু পেশ করা হবে , তা ঐতিহাসিক ভিত্তিতে হতে হবে । নিছক কাল্পনিক কিসসা কাহিনী আদর্শ মানুষের জন্য অনুসরণযোগ্য হতে পারে না । সে আদর্শ অনুযায়ী স্বীয় জীবনকে গড়ে তোলা এবং উহার অনুসরণ করার ব্যাপারে মানবাত্মা উৎসাহিত হবে না । বরং বাস্তব জীবনে ঐ আদর্শের কোন প্রভাবই পড়বে না । এই কাল্পনিক কাহিনীর উপর বাস্তব জীবনের ভিত্তি স্থাপন সম্ভব নয় বলে মানুষ উহাকে উড়ে দিতে পারে । তাই প্রভাব বিস্তারকারী, বাস্তবে কার্যকর ও অনুসরণযোগ্য হবার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে -ঐ পূর্ণাঙ্গ আদর্শ মানুষটির জীবন ঐতিহাসিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে । তাই আসুন , আমরা জ্বনাবে মুহাম্মাদ ( সা: ) এর জীবনকে ঐতিহাসিক কষ্টি পাথরে যাচাই করে দেখি ।
বিশ্বমানবতার মুক্তির লক্ষ্যে যুগে যুগে যত নবী-রাসূল ও মহাপুরুষের আগমন ঘটেছিল ; তাঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন : হযরত আদম ( আ: ) , হযরত নূহ ( আ: ) , হযরত ইবরাহীম ( আ: ) , হযরত মূসা ( আ: ) , সোলায়মান ( আ: ) , দাউদ ( আ: ) , ঈসা ( আ: ) প্রমূখ ।
অন্যান্য ধর্ম প্রবর্তকতদের মধ্যে প্রধান ছিলেন : মহাত্মা বুদ্ধ , রামচন্দ্র , শ্রীকৃষ্ণ, জোরোটার, কনফুসিয়াস, সক্রেটিস ইত্যাদি ।
উল্লেখিত মহাপুরুষদের মধ্য থেকে একজনও বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) এর মতো পরিপূর্ণ মানব ছিলেন না । জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁদের পূর্ণ পরিচয় ইতিহাসে লিপিবদ্ধ নেই । অথচ বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) ছিলেন খাঁটি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব । তাঁর জীবনের কোন অংশই কল্পনার কুহেলিকায় ঢাকা নয় । তাঁর জন্ম থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত জীবনের যাবতীয় খুটিনাটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ মজুদ রয়েছে ।
জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে আমরা যে সব সমস্যার সম্মুখীন হই , সেটা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, দন্ডবিধি, যুদ্ধনীতি, সন্ধিনীতি, স্বরাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, শ্রমনীতি, মানবাধিকারনীতি -এক কথায় জীবনের ক্ষুদ্র পরিসর থেকে বৃহত্তর পরিসর পর্যন্ত আমরা যত সমস্যার সম্মুখীন হই , তাঁর সবগুলো সমাধানই আমরা খুঁজে পাই এই আদর্শ মহাপুরুষের জীবনে । যে কোন অবস্থায় আমরা তাঁর মাঝে খুঁজে পাই যুগ জিজ্ঞাসার জবাব । কিন্তু বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) এর পূর্ববর্তী মহাপুরুষদের মধ্যে যুগ জিজ্ঞাসার সব উত্তর খুঁজে পাই না । মানব জীবনের কোন সমস্যার সমাধান তাঁরা করে গেছেন বটে , কিন্তু মানব সমাজের সমগ্র বিভাগে পথপ্রদর্শক ও আদর্শরূপে নবী মুহাম্মাদ ছাড়া আমরা আর কাউকে দেখতে পাই না । তাঁদের মধ্যে কে কেমন করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন , কেমন ভাবে শিক্ষা লাভ করেছিলেন , কেমনভাবে বিবাহ করেছিলেন , কেমনভাবে ঘর সংসার পেতেছিলেন, কেমনভাবে প্রতিবেশীদের সহিত কর্তব্য পালন করেছিলেন, কেমনভাবে রাজ্য শাসন করেছিলেন, কেমনভাবে যুদ্ধ করে দেশ জয় করেছিলেন, স্ত্রী-পুত্র-পরিবার পরিজনের প্রতি তাঁদের আচরণ কেমন ছিল , শত্রু বা বিধর্মীদের সহিত কিরূপ আচরণ করেছিলেন, জীবন ও জগৎকে তারা কতখানি মর্যাদা দিয়েছিলেন, দাস-দাসীদের সহিত কিরূপ ব্যবহার করেছিলেন, গুরুজন ও শীর্ষদের প্রতি তাঁদের আচরন কেমন ছিল , জীবন ও জগৎকে তাঁরা কোন চেfখে দেখতেন , কেমনভাবে তাঁরা জাতি গঠন করেছিলেন, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবন তাঁদের কেমন ছিল , যুগ সমস্যার কোন সমাধান তাঁরা করতে পেরেছিলেন কি না ? বিশ্ব মানবের প্রতি তাঁরা কোন বাণী দান করেছেন কি না ইত্যাদি দিক বিচার বিশ্লেষণ করতে গেলে তাঁদের প্রত্যেকের মধ্যেই কোন না কোন অভাব বা ত্রুটি দেখতে পাওয়া যাবেই । বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) এর ন্যায় অত সুস্পষ্ট জীবন তাঁদের কারও নয় । দয়া, ক্ষমা , মহত্ব , জ্ঞানানুরাগ , ত্যাগ , সেবা, মানব প্রেম, উদারতা ইত্যাদি যাবতীয় গুণেরই বিকাশ দেখতে পাই আমরা বিম্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) এর জীবনে । ধর্ম ও কর্মের মধ্যে এমন সুষ্ঠু সমন্বয় আমরা আর কারও জীবনে দেখতে পাই না ।
ভেবে দেখার বিষয় যে, প্রত্যেক দেশে, প্রত্যেক জাতির মধ্যে , প্রত্যেক যুগে , প্রত্যেক ভাষায় কত লক্ষ লক্ষ মহামানব আল্লাহর পয়গাম নিয়ে এসেছেন । একটি প্রচলিত বর্ণনা মতে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী- রাসূল দুনিয়াতে আগমন করেছেন , আজ তাঁদের কয়জনের নাম আমরা জানি ?
হিন্দু সম্প্রদায় দাবি করে যে, তাঁরা দুনিয়ার সবচাইতে প্রাচীন জাতি । যদিও প্রকৃত ব্যাপার তা নয় , তবুও গভীরভাবে লক্ষ্য করুন , তাদের ধর্মে শত শত মনীষীর নাম পাবেন । কিন্তু এসব মনীষীর এক জনের জীবনও ঐতিহাসিক তথ্য
প্রমানের ভিত্তিতে প্রমানিত নয় । তাঁদের অনেকের শুধু নামটি ছাড়া আর কিছুই 
উল্লেখ পাওয়া যায় না । আবার যাদের বিবরণ উল্লেখ আছে , তা কাল্পনিক পৌরনিকতার সীমা ডিঙিয়ে ইতিহাসের বিস্তৃত ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারিনি ।
ইরানের প্রাচীন পার্শিক ধর্মের প্রবর্তক যরথুষ্টআজও লক্ষ লক্ষ মানেুষের শ্রদ্ধার পাত্র । কিন্তু তাঁর ঐতিহসিক ব্যক্তিত্বও প্রাচীনতার অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে আছে । এমনকি তাঁর অস্থিত্ব সম্পর্কেও অনেক ইউরোপীয় ও আম্রিকান পন্ডিত সন্দেহ পোষণ করেছেন ।
প্রাচীন এশিয়ার সচাইতে ব্যাপকপচারিত ধর্ম হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্ম । এ ধর্মটি এক সময় ভারতবর্ষ , চীন-তি্ব্বতসহ সমগ্র মধ্য এশিয়া , আফগানিস্তান, তুর্কিস্তান , পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । আজও বার্মা, থাইল্যান্ড , চীন, জাপান ও তিব্বতে এ ধর্ম বর্তমান আছে । কিন্তু এসব সত্তেও কি তারা বুদ্ধের জীবন ও চরিত্রকে ইতিহাসের আলোকে জানতে পেরেছে ? এবং কোন ঐতিহাসিক কি এই ধর্মপ্রর্বতকের জীবন চরিতের সকল প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব প্রদানের ক্ষমতা অর্জন করেছে ?

জৈন ধর্ম প্রবর্তকের জীবন বৃত্তান্ত আরও অধিক অনিশ্চিত । অনুরূপ চীনের কনফুসিয়াস সম্পর্কে আমরা বুদ্ধের চাইতে অনেক কম তথ্য জানি ।
অথচ তাঁর অনুসারীদের সংখ্যা এক কোটিরও বেশি ।

সেমিটিক জাতির মধ্যে শত শত নবী এসেছেন । কিন্তু কেবল নাম ছাড়া ইতিহাসে তাঁদের কোন চিহ্ন নেই । হযরত নূহ, ইবরাহীম , হুদ, সালিহ, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব , দাউদ , সোলাইমান, জাকারিয়া, ইয়াহয়াহ , ঈসা, প্রমূখের জীবন ও চরিত্রের এক একটি বিশেষ অংশ ছাড়া আর কিছু কি আমাদের জানাতে পারে ? তাঁদের জীবনের অনেকাংশ ইতহাসের পাতা থেকে মুছে গেছে । এমতাবস্থায় তাঁদের পবিত্র জীবনের অবলুপ্ত অংশ কি করে পূর্ণাঙ্গ মানব জীবনের জন্য অনুসরণযোগ্য হতে পারে ?
হযরত মূসা (আ: ) এর অবস্থা আমরা তাওরাত থেকে জানতে পারি কিন্তু সে তাওরাতও সম্পূর্ণ বিকৃত হওয়ায় মূসা ( আ: ) এর জীবনের অনেকাংশ আমাদের সামনে অজানা তিমিরে রয়ে গেছে । অনুরূপ অবস্থা হযরত ঈসা ( আ: ) এর ইঞ্জিল কিতাব বিকৃত হওয়ায় ঈসা ( আ: ) এর জীবন চরিত জানার পথ রূদ্ধ হয়ে গেছে ।
এতক্ষণ ধরে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) এর জীবনাদর্শ এবং অন্যান্য নবী ও ধর্মপ্রর্বতকদের জীবনাদর্শের সহিত তুলনামূলক পর্যালোচনা দ্বারা একথা প্রতীয়মান হলো যে, সমস্ত মহাপুরুষদের মধ্যে একমাত্র বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা:) ই ছিলেন পরিপূর্ণ ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব । জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে যার আদর্শ অনুসরণযোগ্য । বস্তুত: অন্যান্য সকল নবীর জীবন যেন এমন কতকগুলো দোকান, যেখানে একটি বা দুইটি মাত্র পন্য পাওয়া যায় , আর বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা: ) এর জীবন চরিত দুনিয়ার বৃহত্তম বিপনীর মতো , যেখানে প্রত্যেক বস্তুর ক্রেতা ও প্রত্যেকটি জিনিস অনুসন্ধানকারীর জন্য সর্বোত্তম উপকরণ মজুদ রয়েছে ।
একথা অনস্বিকার্য যে, বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) এর অস্তিত্ব ছিল সিরাজুম মুনিরা ” ( উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা ) অর্থাৎ- বিশ্ব উজ্জ্বলকারী সূর্য-চন্দ্রের ন্যায় । যা থেকে সুউচ্চ পাহাড়, বালুকাময় মরুভূমি , প্রবাহমান স্রোতসিনী, শস্যশ্যামল ক্ষেত সবাই নিজেদের ক্ষমতা ও যোগ্যতা মাফিক তা থেকে তাপ ও আলো সংগ্রহ করতে পারে ।

তাঁর ঐতিহাসিক ব্যক্ত্বির সত্যতা স্বীকার করে প্রখ্যাত ইউরোপীয় ঐতিহাসিক 
জর্জ বার্নাডশ বলেছেন :
আজকের এই ঝড়ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে মুহাম্মাদ ( সা: ) এর মতো একজন আদর্শ ব্যক্তি যদি পৃথিবীর নেতৃত্ব গ্রহণ করতেন, তাহলে পৃথিবীতে পুনরায় শান্তি ফিরে আসতো ।




রাসূলুল্লাহ ( সা: ) এর বিদায় হজ্জ্বের ঐতিহাসিক ভাষণ 

প্রেক্ষিত : গুরুত্ব , তাৎপর্য ও মূল্যায়ন :


প্রাক ইসলামী যুগে মানুষ যখন ছিল, অজ্ঞতা ও মূর্খতার সাগরে আকণ্ঠ নিমজ্জিত । মানবতার বাণী যখন ছিল ভূলণ্ঠিত, অন্যায়- জুলুম- নিপিড়ণে মানুষ ছিল জর্জরিত, কালোর উপর সাদার , দূর্বলের উপর সবলের, দরিদ্রের উপর ধনীর, গোলামের উপর মনিবের , জনগণের উপর শাসকের যখন চলতো অমানবিক নির্যাতন , নারী জাতিকে দাসত্বে শৃঙখলে আবদ্ধ করার পাশাপাশি তাদেরকে ভোগের পন্য হিসেবে ব্যবহার করা হতো । মানুষের উপর মানুষের মর্যাদা ও অধিকারের এতটুকু স্বীকৃত ছিল না । ঠিক তখনই পৃথিবীর কেন্দ্রভূমিতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্বমানবতার মুক্তির কান্ডারী হিসেবে প্রেরীত হলেন বিম্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) । তিনি তাঁর অভূতপূর্ব নেতৃত্বের গুণাবলী দিয়ে আরবের বর্বর জাতিকে সর্বোত্তম জাতিতে পরিণত করেন । প্রতিষ্ঠা করেন পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম একটি কল্যাণরাষ্ট্র । যেখানে মানুষে মানুষে ছিল না কোন ভেদাভেদ । শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হয়েছিল গোটা আরব দেশে । মাত্র ২৩ বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন একটি আদর্শ সমাজ । মানবতা খুঁজে পেল মুক্তির পথ ।

বিদায় হজ্জ্বের প্রেক্ষাপট :
রাহিকুল মাখতুম গ্রন্থের গ্রন্থকার আল্লামা ছাফিউর রহমান মুবারকপুরী ( রহ : ) বলেন :
বিশ্বমানবতার মুক্তির লক্ষ্যে জনাবে রাসূলে কারীম ( সা: ) যে রেসালাতী দায়িত্ব নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন । তিনি তাঁর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে ইসলামের চূড়ান্ত বিজয় আসে । মদীনাকে কেন্দ্র করে একটি ইসলামী রাষ্ট্র গড়ে ওঠে
বিভিন্ন জিহাদে একটির পর একটি বিজয়ের মাধ্যমে মুসলমানদের ভিত মজবুত হতে থাকে । অবশেষে ৮ম জিরীতে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে এই বিজয় চূড়ান্তরূপ লাভ করে । দলে দলে জনগণ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করতে থাকে । দুনিয়া থেকে তাঁর বিদায়ের সময়ও ঘনিয়ে এলো । আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা হলো- হজ্জ্বের মৌসুমে এক মহাসমাবেশের মাধ্যমে আমজনতার মহাসমুদ্রকে তাঁর হাবীবকে স্বচক্ষে দেখানো এবং তাঁর জীবনের শেষবাণীটুকু স্মৃতিচারণের লক্ষ্যে বিশ্বজনতাকে জানানো । মূলত: এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বিদায় হজ্জ্ব নামক এই মহাসমাবেশের আয়োজন । 
পৃথিবী থেকে রাসূলে কারীম ( সা: ) এর বিদায়ের সময় প্রায় ঘনিয়ে এসেছে । বিদায় হজ্জ্বের প্রাক্কালে নবী কারীম ( সা: ) মায়াজ ( রা: ) কে ইয়েমেনের গভর্ণর পদে নিযুক্ত করেন । তাঁকে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় অনেক শেষ উপদেশ প্রদান করার পর বলেন- 
হে মায়াজ ! সম্ভবত: এ বছর পর আমার সাথে তোমার আর সাক্ষাৎ হবে না । হয়তবা এরপর তুমি মদীনায় এলে আমার মসজিদ ও কবরের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করবে । রাসূলে কারীম ( সা: ) এর চির বিদায়ের কথা শুণে মায়ায ( রা: ) রাসূলের
বিয়োগ বেদনায় অঝোর নয়নে অশ্রু প্রবাহিত করতে লাগলেন । তাঁর দুচোখ থেকে অবিরাম গতিতে অশ্রু বয়ে পড়তে লাগলো বিদায় ক্ষণে তিনি বারবার পেছনের দিকে অর্থাৎ- রাসূলে কারীম চেহারা মুবারকের দিকে তাকাচ্ছিলেন আর অশ্রু প্রবাহিত করছিলেন ।

বিদায় হজ্জ্বের তারিখ ও স্থান :
দশম হিজরীতে ৬৩২ খিষ্টাব্দে রাসূলে কারীম ( সা: ) প্রায় দুই লক্ষ সাহাবীদের সাথে নিয়ে তাঁর জীবনের শেষ হজ্জ আদায়ের লক্ষ্যে মক্কাভিমূখে রওয়ানা হন । ৯ই জিলহাজ্জ্ব তারিখে তিনি সাহাবীদেরকে নিয়ে আরাফার দিকে চললেন । তারপর মীনা উপত্যকায় উপস্থিত হয়ে বিশাল জনতার উদ্দেশ্যে যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন , ইসলামের ইতিহাসে একে বিদায় হজ্জ্বের ভাষণ বলা হয় । এটি তাঁর জীবনের শেষ ভাষণ বিধায় এর নামকরণ করা হয়েছে খুৎবাতু হুজ্জতিল বিদা’ ” অর্থাৎ- বিদায় হজ্জ্বের শেষ ভাষণ । 
ঐতিহাসিকগণ বিদায় হজ্জ্বের ভাষণকে বিশ্বমানবতার ইতিহাসে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সর্বশ্রেষ্ঠ সনদপত্র বলে অভিহিত করেছেন । বিদায় হজ্জ্বের ভাষণকে নবুয়্যাতের সার সংক্ষেপও বলা হয়
বিদায় হজ্জ্বের বিষয়ভিত্তিক ভাষণ :
( সীরাতে ইবনে হিশাম, তাবাকাত , বেদায়া ওয়ান নিহায়াহ ও রাহিখুল মাখতুম অবলন্বনে : )
০১. হে লোকসকল ! সম্ভবত: আগামী বছর তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ নাও হতে পারে :

أيها الناس ! اسمعوا قولى ، فانى لا ادرى لعلى لا القاكم بعد غامى هذا بهذاالموقف ابدا ـ 
অর্থাৎ- হে লোক সকল ! তোমরা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনো । সম্ভবত: এ বছরের পর তোমাদের সাথে এই স্থানে আমার সাক্ষাৎ নাও হতে পারে ।
০২. পরস্পর মর্যাদা ও মান সম্ভ্রম রক্ষার নির্দেশ : ( মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আহবান : )
ايها الناس ! ان دماءكم و اموالكم عليكم حرام الى ان تلقوا ربكم كحرمة يومكم هذا و كحرمة شهركم هذا ـ 
 
অর্থাৎ- হে লোক সকল ! নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত, তোমাদের ইজ্জত , তোমাদের সম্পদ পরস্পরের জন্য স্থায়ীভাবে হারাম , যেমন আজকের এই দিন, আজকের এই মাস, তোমাদের এই শহর সকলের জন্য হারাম
০৩. ইবাদত একমাত্র আল্লাহ জন্যই করবে । তোমাদের কৃতকর্মের জন্য মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে :
يا ايها الناس ! اعبدوا ربكم ، وانكم ستلقون ربكم فيسألكم عن أعمالكم 
 
অর্থাৎ-হে মানবমন্ডলী ! তোমরা একমাত্র তোমাদের রবের ইবাদত করবে । আর নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ পাবে , অতপর তিনি তোমাদের ভাল-মন্দ কৃত আমাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন ।
০৪. আমানাত রক্ষা প্রসঙ্গে ভাষণ :
أيها الناس ! فمن كانت عنده أمانة فليؤدها الى من ائتمنه عليها ـ
অর্থাৎ- হে লোকসকল ! তোমাদের নিকট কারও যদি আমানত থাকে, তাহলে সে যেন যিনি আমানাত রেখেছেন, তার নিকট তা যথাযথভাবে পৌছিয়ে দেয় ।
০৫. আভিজাত্যের অহংকার করো না, মর্যাদার মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া : সকল মানুষ একই আদমের সন্তান ।
হে লোক সকল ! তোমরা আভিজাত্যের অহংকার করো না । আবার নিজ বংশকে হেয় বা তুচ্ছ মনে করো না । যে ব্যক্তি নিজ বংশকে হেয় মনে করে অপর কোন বংশের নামে আত্ম পরিচয় দেয় , আল্লাহ লানত তার উপর নেমে আসবে । জেনে রেখো আজমের উপর আরবের এবং কালোর উপর সাদার কোন প্রাধান্য নেই । প্রাধান্য পাওয়ার মাপকাঠি হলো তাকওয়া ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন :
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ( سزرة الحجرات= 13)
অনুবাদ : হে লোকসকল ! আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমান : হে মানবজাতি ! তোমাদেরকে আমি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে সমাজ ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যেন, তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পারো । তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিকতর সন্মান ও মর্যাদার অধিকারী, যে তোমাদের মধ্যে অধিক আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তায়ালা সকল বিষয়ে অধিক জ্ঞানবান ও খবরদার । ( সূরাহ আলহুজরাহ : আয়াত নং- ১৩ )
أخرج البيهقى عن جابر بن عبد الله قال: خطبنا رسول الله ( ص) فى وسط أيام التشربق خطبة الوداع فقال : ايها الناس ! ألا ان ربكم واحد ، ألا لا فضل لعربى على أعجمى، ولا 
 ولا لعجمى على عربى ولا لأسود على أحمر ولا لأحمرعلى أسود الا بالتقوى ـ
অনুবাদ : ইমাম বায়হাক্বী জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন : তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) আইয়ামে তাশরিকের দিনে বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে এ কথা বলেছেন যে, হে লোকসকল ! নিশ্চয়ই তোমরা জেনে রেখো ! তোমাদের সকলের পিতা একজন । অর্থাৎ- আদম ( আ: ) আজমের উপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তেমনিভাবে আরবের উপর আজমের কোন প্রাধান্য নেই । কালোর উপর সাদার এবং সাদার উপর কালোর কোন প্রাধান্য নেই । প্রাধান্য বা মর্যাদা নির্ণিত হবে তাকওয়ার ভিত্তিতে ।
০৬. সকল প্রকার সুদী কারবার বর্জন প্রসঙ্গে :
أيها الناس ! ان كل ربا فى الجاهلية موضوع ، ولكن لكم رؤس اموالكم لا تظلمون ولا تظلمون ـ قضى الله لا ربا ، وان ربا عباس بن عبد المطلب موضوع كله ـ
অর্থাৎ- হে লোকসকল ! জাহেলী যুগের সকল প্রকার সুদ হারাম করা হলো । তবে তোমরা কাউকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ প্রদান করলে ঋণ গ্রহিতার নিকট থেকে মূলধন গ্রহণ করবে । এ পর্যায়ে মূলধনের চেয়ে বেশি গ্রহণ করে তুমি জুলুম করতে পারবে না এবং তুমি নিজেও জুলুমের শিকার হবে না । তোমার রব এ মর্মে তোমাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন যে, কোন প্রকার সুদী লেনদেন করা যাবে না । সর্বপ্রথম আমি আমার গোত্রের সুদের দাবী অর্থাৎ- চাচা আব্বাসের সুদ মওকুফ করে দিলাম । সুতরাং সকলপ্রকার সুদই আজ হারাম করা হলো ।
০৭. জাহেলী যুগের মুক্তিপন, রক্তপন ও যাবতীয় জাহেলী প্রথা আজ পদদলিত :
وان كل دم فى الجالية موضوع تحت قدمى وان اول دمائكم اضع دم ابن ربيعة بن الحارث ابن عبد المطلب ـ وكان مسترضعا فى بنى ليث ، فقتله هذيل ، فهو اول دم ما أبدأ به من دماء الجالية ـ 
 
অর্থাৎ- শুনে রেখো ! সকল জাহিলী বিষয় ও প্রথা আজ আমার পায়ের নিচে পদদলিত । জাহিলী যুগের রক্তের দাবিও রহিত করা হলো । সর্বপ্রথম আমি আমার কবীলার রক্তের দাবি অর্থাৎ- রবীআ ইবনুল হারিসের রক্তের দাবি রহিত ঘোষণা করছি । বনু সাদ গোত্রে থাকাকালে হুযাইলী তাকে হত্যা করেছিল ।
০৮. শিরকী কর্মকান্ড পরিহার করো, মক্কার ভূখন্ডে আর কোনদিন পৌত্তলিকতা প্রবেশ করতে পারবে না :

أيها الناس ! فان الشيطان قد يئس من ان يعبد بأرضكم هذه أبدا ، ولكنه أن يطع فيما سوى ذلك ، فقد رضى به مما تحقرون من أعمالكم فاذروه على دينكم ـ 
অর্থাৎ- হে লোক সকল ! নিশ্চয়ই শয়তান এ পর্যায়ে নিরাশ হয়েছে যে, তোমাদের এ ভূখন্ডে তার ইবাদত করা হবে । কিন্তু শির্ক ছাড়া অন্যান্য কর্মকান্ডে তার অনুসরণ করা হবে , সে ব্যাপারে সে আশাবাদী । আর তোমরা শরীয়াত নিষিদ্ধ কার্যকলাপে জড়িত হও সে ব্যাপারেও সে আত্মতৃপ্ত । অতএব তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে সতর্ক থাকো ।
০৯. হুরমাতের তথা চারিটি সন্মানিত মাসের মর্যাদা রক্ষা করো :
أيها الناس ! ان النسى زيا دة فى الكفر يضل به اللذين كفروا يحلونه عاما و يحرمونه عاما ، ليواطئوا عدة ما حرم الله ويحرموا ما أحل الله ، وان الزمان قد استدار كهيئته يوم خلق السماوات والارض ، وان عدة الشهور عند الله اثنا عشر شهرا ، منها أربعة حرم ، ثلاثة متوالية و رجب مضر ألذى بين جمادى و شعبان ـ
অর্থাৎ- হে লোকসকল ! নিশ্চয়ই সন্মানিত মাসের সময়কে অগ্রবর্তী বা পশ্চাৎবর্তী করা চূড়ান্ত পর্যায়ের কুফরী । এর দ্বারা কাফির সম্প্রদায় কিছুলোককে পথভ্রান্ত করতে চায় , তারা নিজেদের খেয়াল-খুশি ও হঠকারিতাবশত: হারাম মাসসমূহকে নিজেদের জন্য হালাল করে নেয় এবং হালাল মাসসমূহকে নিজেদের জন্য হারাম করে নেয় । যাতে করে হারাম মাসের সংখ্যা সমন্বয় করা য়ায় । আর যে দিন আল্লাহ তায়ালা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকেই সময়ের চাকা অবিরামগতিতে ঘুরতে আছে । আর আল্লাহ নিকট এক বছরে মাসের সংখ্যা হলো বার । তন্মধ্যে চারিটি মাস হলো সন্মানিত এই সন্মানিত চারিটি মাসের মধ্যে তিনটি হলো ধারাবাহিক তথা জুলক্বাদাহ, জুলহাজ্জ্ব ও মুহারারাম । আর একটি মাস যা জামাদিউল ও শাবান মাসের মাঝামাঝি অবস্থিত । যার নাম রজব ।
১০. আমার পরে আর কোন নবী আসবে না ; আমার উম্মাতের পরে আর কোন উম্মাতও আসবে না । সুতরাং তোমরা ছয়টি আমল করো , বিনিময়ে সোজা জান্নাতে যাও :
اخرج ابن جرير و عساكر : ايها الناس ! إنه لا نبى بعدى ، ولا أمة بعدكم ، ألا فاعبدوا ربكم ، وصلوا خمسكم ، وصوموا شهركم ، وأدوا زكواة أموالكم ، طيبة بها أنفسكم ، وتحجون بيت ربكم ، وأطيعوا أولات أمركم ، تدخلوا جنة ربكم ـ
 
অর্থাৎ- হে লোক সকল ! জেনে রেখো , আমার পরে আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না এবং তোমাদের পরে কোন উম্মাতেরও আবির্ভাব হবে না । সাবধান ! 
০১. তোমরা একমাত্র তোমাদের রবের ইবাদত করো ।
০২. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করো । 
০৩. মাহে রামাযানের ছিয়াম পালন করো । 
০৪. তোমাদের ধনসম্পদের স্বেচ্ছায় ও খুশিমনে যাকাত দাও । 
০৫ . বায়তুল্লাহর হজ্জ্ব আদায় করো । 
এর বিনিময়ে তোমরা তোমাদের রবের প্রতিশ্রুত জান্নাতে প্রবেশ করো ।
১১. নারী অধিকার সম্পর্কে ভাষণ :
أيها الناس ! فان لكم على نساءكم حقا ، ولهن عليكم حقا، لكم عليهن أن لا يؤطئن فرشكم أحدا تكرهونه ـ وعليهن أن لا يأ تين بفاحشة مبينة ، فإن فعلن فان الله قد أذن لكم أن تهجروهن فى المضاجع ، وتضربوهن ضربا غير مبرح ، فان انتهين فلهن رزقهن وكسوتهن بالمعروف ، واستوصوا با لنساء خيرا ، فانهن عندكم عوان لا يملكن لأنفسهن شئيا ، وانكم انما أخذتموهن بأمانة الله واستحللتم فروجهن بكلمات الله ـ
অনুবাদ : হে লোকসকল ! নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি । তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার আছে , তেমনি তাদের অধিকার আছে তোমাদের উপর । তোমাদের অধিকার তাদের উপর হলো , তোমাদের শয্যায় তারা এমন পুরুষকে জায়গা করে দিবে না , যাকে তোমরা অপছন্দ করো , তাদের আরও আবশ্যকীয় করণীয় হলো তারা প্রকাশ্য ব্যভিচারমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হবে না । যদি তারা এধরণের কর্মে লিপ্ত হয় , তবে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে অনুমতি প্রদান করেছেন এ মর্মে যে, প্রথম পর্যায়ে তার বিছানা আলাদা করে দাও এবং তাকে মৃদু প্রহার করো । যদি এতে তারা ব্যভিচারমূরক কর্মকান্ড থেকে ফিরে আসে , তাহলে উত্তমভাবে তার ভরণপোষণ দাও । আর তোমাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে কল্যাণ কামনা করো । কেননা তারা তোমাদের অধীনে বন্দি জীবনের মতো বসবাস করে । নিজের ইচ্ছামত কিছু তারা করতে পারে না । আর তোমরা আল্লাহর দেওয়া আমানত হিসেবে তাঁদেরকে গ্রহণ করেছো । আরও তোমরা আল্লাহর ওয়াদার কালিমা পাঠ করে তাদের লজ্জাস্থানকে নিজেদের জন্য হালাল করে নিয়েছো ।
১২. দাস-দাসী ও কর্মচারীদের হক্ব আদায় প্রসঙ্গে :
তোমরা তোমাদের অধিনস্থদের ব্যাপারে সচেতন হও তোমরা তোমাদের দাস-দাসীদের প্রতি সদা সর্বদা সদ্ব্যবহার করবে , তাদের উপর কোন প্রকার অত্যাচার করবে না । তোমরা যা খাবে, তাদেরকেও তাই খাওয়াবে , তোমরা যা পরবে, তাদেরকে তাই পরাবে । ভুলে যেও না- তারাও তোমাদের মতো মানুষ ।
১৩. নেতার আদেশ লংঘন করো না . যদি কাফ্রি দাসও তোমাদের নেতা বানিয়ে দেওয়া হয় :
হে মুসলমানগণ সাবধান ! নেতার আদেশ লংঘন করো না । যদি কোন নাক কাটা কাফ্রি ক্রীতদাসকেও তোমাদের নেতা করে দেওয়া হয় এবং সে যদি আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহ অনুসারে তোমাদেরকে পরিচালনা করে , তবে অবনত মস্তকে তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে ।
১৪. ধর্ম সন্বন্ধে বাড়াবাড়ি করবে না :
সাবধান ! ধর্ম সন্বন্ধে বাড়াবাড়ি করো না । এই বাড়াবাবাড়ির ফলেই অতীতে বহুজাতি ধবংস প্রাপ্ত হয়েছে ।
১৫. মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই , পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে :
أيها الناس ! إسمعوا قولى واعقلوه، تعلمن أن كل مسلم أخ لمسلم ، وان المسلمين إخوة، فلا يحل لامرء من أخيه الا ما أعطاه عن طيب نفس منه ، فلا تظلمن أنفسكم ـ
অনুবাদ : হে লোকসকল ! তোমরা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো ও অনুধাবন করো , তোমরা জেনে রেখো , মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই । সুতরাং একজন মুসলিম স্বেচ্ছায় ও খুশি মনে কিছু দান না করা পর্যন্ত তার সম্পদ আর একজন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় । অতএব তোমরা পরস্পরের প্রতি জুলুম বা অবিচার করো না ।
১৬ . জীবনের চলার পথে ক্বুরআন- সুন্নাহকে আকড়িয়ে ধরবে, তাহলে পথভ্রষ্ট হবে না :
أيها الناس ! تركت فيكم أمرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله و سنة رسوله ـ
অর্থাৎ- হে মানবসকল ! তোমাদের নিকট আমি দুটো জিনিস রেখে গেলাম , সে দুটো জিনিসকে তোমরা যদি আকঁড়িয়ে ধরতে পারো, তবে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না । সেই দুটো জিনিস হলো : 
০১. আল্লাহর কিতাব তথা ক্বুরআনুল কারীম । 
০২. তারঁ রাসূলের সুন্নাহ তথা হাদীস ।

১৭ . তোমরা যারা আজ এই ময়দানে উপস্থিত আছো ; অনুপস্থিতদের মাঝে আমার কথাগুলো পৌছিয়ে দিবে :
فقال رسول الله ( ًص ) : فليبلغ الشاهد الغائب ـ 
অর্থাৎ- তোমরা যারা উপস্থিত আছো, তারা অনুপস্থিতদের মাঝে আমার কথাগুলো পৌছিয়ে দিবে ।
১৮. আমি কি আমার নবুয়্যাতী দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছি ?
قال رسول الله ( ص ) : وأنتم تسئلون عنى ، فما أنتم قائلون ؟ 
قالوا : نشهد أنك قد بلغت و أديت و نصحت ـ
অর্থাৎ- সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : তেমাদেরকে আমার সম্পর্কে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে । তেমরা তখন কি বলবে ? সাহাবীরা বললেন: আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি : আপনি সঠিকভাবে আপনার নবুয়্যাতী পয়গাম মানুষের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন । আপনি এর হক্ব যথাযথভাবে আদায় করেছেন ।
فقال : باصبعه السبابة يرفعها الى السماء وينكتها الى الناس : آللهم اشهد ثلاث مرات ـ
অর্থাৎ-একথা শুনে রাসূল ( সা: ) শাহাদাত আঙ্গুলী আকাশের দিকে তুলে লোকদের দিকে ঝুঁকে তিনবার বললেন : ইয়া আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ! তুমি স্বাক্ষ্য থাকো । 
এরপর খুৎবাহ থেকে অবতরণ করার সাথে সাথে সুরাহ মায়েদার তিন নম্বর আয়াতে কারীমা নাযিল হয় । আলোচ্য আয়াতে কারীমা নাযিল করে সমগ্র মানব জাতিকে জানিয়ে দেওয়া হয যে, ইসলাম মানব জাতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জবিন বিধান । আজকের দিন ইসলাম একটি জীবন বিধান হিসেবে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম ।


রাসূলুল্লাহ ( সা: এর বহুবিবাহের তাৎপর্য ও অন্তর্নিহিত কারণ:
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ক্বুরআনুল কারীমে ইরশাদ ফরমান :

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا ـ ( سورةالاحزاب : 21 ) –
অনুবাদ : ( হে মুসলমানরা ) ! নিশ্চয়ই তোমাদের সকলের জন্য রাসূলে কারীম (সা: ) এর জীবনে উত্তম আদর্শ রয়েছে । এটা এমন প্রতিটি ব্যক্তির জন্যে যারা আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ কামনা এবং পরকালে মুক্তির আশা করে । সর্বোপরি সে বেশি পরিমাণে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে । ( সূরাহ আল আহযাব : আয়াত নং- ২১ )

وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ ( سورة القلم : 4) ـ
 
অনুবাদ : আর নিসন্দেহে হে নবী ! আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী । ( সূরাহ আলকালাম : আয়াত নং- ৪ )

এ পর্যায়ে রাসূল ( সা: ) এর বাণী :
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : بعثت لأتم مكارم الأخلاق ـ
অনুবাদ : রাসূলে কারীম ( সা: ) বলেছেন : উত্তম উত্তম চরিত্র ও গুণাবলীসমূহকে পূর্ণতা দানের লক্ষ্যে আমি দুনিয়াতে প্রেরীত হয়েছি ।
উপক্রমনিকা :

বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) তাঁর জীবনে সর্বমোট তেরটি বিবাহ করেছিলেন , এর কারণ কি ? তিনি কি আপন যৌন লালসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে এতগুলো বিবাহ করেছিলেন , না বিশেষ কোন গুঢ় উদ্দেশ্যে সাধনে কিংবা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশক্রমে তাঁকে একাজ করতে হয়েছিল । আসুন, আমরা তা একবার ঐতিহাসিক কষ্টিপাথরে পর্যালোচনা করে দেখি ।
বিশ্বনবী ( সা:) কে যারা রাসূল হিসেবে চিনতে ও জানতে পেরেছেন, রাসূলের প্রতি যাদের অন্তরে ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ আছে, আমি জানি তারা এ ধরণের প্রশ্ন উথ্থাপন করবেন না । রাসূল ( সা: ) এর বহুবিবাহের তাৎপর্য ও অন্তর্নিহিত কারণ বুঝতে না পেরে ইউরোপীয় কতিপয় জ্ঞানপাপী ও দুষ্টমতি ঐতিহাসিক , যাদের মধ্যে মার্গোলিয়থ ও মুইরের নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য ; তারা রাসূল ( সা: ) এর বহুবিবাহের ব্যাপারে নানা রকম কটুক্তি করেছেন । তারা বিশ্বনবীকে কামুক, রিপুর দাস ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করত: তাঁর চরিত্রকে কলংকিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন : ( নাউজুবিল্লাহ মিন যালিক )
রাসূলের প্রতি এত নিষ্ঠুর আঘাত আর হয় না । সততা, নিষ্ঠা ও পবিত্রতা যার জীবনের ভূষণ ; ছলনা, প্রবঞ্চনা , মিথ্যা ও কপটতাকে যিনি সর্বাপেক্ষা ঘৃণা করে গেছেন, , আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। সত্যপ্রচারের জন্য যিনি শত দু:খ-বেদনা ও আপদ-বিপদকে অকাতরে বরণ করেছেন । সাধনা সংযম ও সদাচার দ্বারা যার সমগ্র জীবন নিয়ন্ত্রিত হয়েছে , তিনি হবেন কামুক, এ কথা কোন সুস্থ্য বিবেকবান ব্যক্তি বিশ্বাস করতে পারে না ।
লম্পট ও কামুক ব্যক্তির স্বভাব :
লম্পট ও কামুক ব্যক্তির স্বভাব আমাদের জানা আছে । যে কামুক বা লম্পট প্রকৃতির হয়, তার মনের গতিও হয় সেইরূপ । লাম্পট্য এমন একটি মন্দ স্বভাব , যে একা একা আসে না , আরও অনেক কুস্বভাবকে সঙ্গে নিয়ে আসে । তাই আমরা দেখতে পাই , যে লম্পট ও কামুক হবে , সে বিলাসী হবে , প্রতারক হবে, অত্যাচারী হবে, নিষ্ঠুর হবে , অপরাধ প্রবন হবে, চরিত্রহীন হবে । সর্বোপরি বলা যেতে পারে, সে আল্লাহ বিমূখ ও ধর্মবিমূখ হবে । কিন্তু রাসূল ( সা: ) এর জীবনে এই দোষগুলো ছিল বলে অদ্যাবধি কেউ প্রমাণ দিতে পারেননি ।
রাসূল ( সা: ) এর যৌবনকাল কাটলো কেমন করে ?
লাম্পট্য ও কামুকতা হলো যৌবনের সহচর । কাজেই রাসূল ( সা: ) এর যৌবনকাল কেমন করে কাটলো, তা আমাদের বিশেষভাবে খতিয়ে দেখতে হবে । সাধারনত: ৪০ বৎসর বয়স পর্যন্তই মানুষের কাম প্রবৃত্তি প্রবল থাকে । এই সময়টাই মানুষের পদস্খলনের সময় । কিন্তু রাসূল ( সা: ) কে এই বয়সে আমরা কি বেশে দেখতে পাই ? ২৫ বৎসর বয়সে তিনি বিবাহ করলেন ৪০ বৎসরের পৌঢ়া নারীকে । একাদিক্রমে দীর্ঘ ২৫ বৎসর ধরে একনিষ্ঠভাবে তিনি এই বর্ষীয়সী স্ত্রীর সঙ্গে কাল কাটালেন । ৬৫ বৎসর বয়সে বিবি খাদিজার ইন্তেকাল হয় ; রাসূল ( সা: ) এর বয়স তখন ৫০ বৎসর । অতএব দেখা যাচ্ছে , জীবনের প্রথম ৫০ বৎসর তিনি কাটালেন বিগত যৌবনা এক পৌঢ়া নারীর সহিত । এটাই কি লাম্পট্য ও কামুকতার প্রমান বহন করে ? তারপর ৩৫ বৎসর বয়স হতেই তিনি হেরা গুহায় কঠোর ধ্যান সাধনায় মগ্ন । ৪০ বৎসর বয়সে যখন তিনি নবুয়্যাত লাভ করলেন, তখনও তিনি বাইরের সকল চিন্তা ভুলে সত্যদ্বীন প্রচারে মহাব্যস্ত । আত্মসুখ ও গৃহসুখ বিসর্জন দিয়ে , শত অত্যাচার ও নিপীড়ন সহ্য করে মহাপুরুষ চলেছেন সত্যের পতাকা বহন করে । এই মহৎ জীবনের সহিত ভোগবিলাসের সম্পর্ক কোথায় ?
বিবি খাদিজা ছাড়া অন্যান্য বিবাহের সময়সীমা :
বিবি খাদিজা ছাড়া রাসূল ( সা: ) আরও ১২টি বিবাহ করেছিলেন । সবগুলোই বিবি খাদিজার মৃত্যুর পর অর্থাৎ- ৫১ বৎসর হতে ৬৩ বৎসরের মধ্যে । মানুষের কামপ্রবৃত্তি ও ভোগলালসা প্রশমিত হয়ে মানুষ যে বয়সে আরও পরহেজগার ও ইন্দ্রিয়বিমূখ হয় , চরিত্র যখন হয় অধিকতর নির্মল , ঠিক সেই সময়ে রাসূল ( সা: )রাসূল (সা: ) হচ্ছেন লম্পট ও কামুক ; এ কথা কেউ বিশ্বাস করবেন কি ?
বস্তুত: রাসূল ( সা: ) এর বহুবিবাহের মধ্যে লাম্পট্য বা কপটতা নেই । রাসূল ( সা: ) ছিলেন আমাদের জন্য পরিপূর্ণ আদর্শ । আদর্শের পরিপূর্ণতা সাধনের লক্ষেই তাঁকে এতগুলো বিবাহ করতে হয়েছিল । রাসূল ( সা: ) এর যে কোন বিবাহকে খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে , সবকয়টি বিয়ের পেছনেই ছিল মহৎ কারণ ও ওহীর ইঙ্গিত । কোথাও দুই গোত্রের মাঝে মৈত্রী স্থাপন , কোথাও বিধবাকে তার নারীত্বের মর্যাদা দান , কোথাও কুসংস্কারের উচ্ছেদ সাধন , কোথাও মানবপ্রেমের বিস্তার, কোথাও ভিন্ন ধর্মাবলন্বীদের কন্যা গ্রহণে আদর্শ স্থাপন , কোথাও অনুরোধ রক্ষা ,আবার কোথাও বা অন্য কোন আদর্শ স্থাপন ইত্যাদি নানা কারণ ।
পূর্বেই বলেছি , রাসূল ( সা: ) ছিলেন আমাদের জন্য পরিপূর্ণ আদর্শ । আদর্শের পরিপূর্ণতার খাতিরেই তাঁকে এতগুলো বিবাহ করতে হয়েছিল । এক স্ত্রী দ্বারা বিভিন্ন আদর্শ দেখানো সম্ভব নয় । তিনি যদি শুধু খাদিজাকে বিবাহ করেই ক্ষান্ত থাকতেন , তবে কুমারী স্ত্রীর সহিত স্বামীর ব্যবহার কিরূপ হবে , আমরা তা জানতে পারতাম না । যদি শুধু কুমারী আয়েশাকেই বিবাহ করতেন , তবে বিধবা ও বৃদ্ধা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ব্যবহার কিরূপ হবে , জানতে পারতাম না । শুধু যদি স্বগোত্র বা স্বধর্মাবলন্বীদের কন্যাকেই বিবাহ করতেন , তবে ভিন্ন ধর্মালন্বীদের বিবাহ করা যায় কি না এবং তাদের প্রতি কিরূপ ব্যবহার করতে হয় , জানতে পাতাম না । শুধু যদি সম্ভান্ত বংশ হতেই বিবাহ করতেন , তবে ক্রীতদাসীকেও যে বিবাহ করা যায় অথবা সেও যে সম্ভ্রান্ত ঘরের ঘরণী হতে পারে , এই আদর্শ আমরা পেতাম না , শুধু যদি সন্তানদায়িনী নারীকে বিবাহ করতেন, তবে বন্ধ্যা নারীর মনের খবর পেতাম না । স্বামী- স্ত্রীর বিভিন্ন চিত্র দেখাবার জন্যই এবং এক জীবনে সমস্ত আদর্শকে রূপ দিতে গিয়েই রাসূল ( সা: ) কে বিচিত্র ধরনের একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে হয়েছিল ।
উম্মুল মুমিনীনের নাম ও বিবাহের সময়সীমা :
০১. খাদিজাহ ( রা : ) ( বিধবা : রাসূল ( সা: ) এর বয়স তখন ২৫ বৎসর 
০২. সওদা ( রা : ) : ,, ,, ,, ,, ,, ৫১ ,, 
০৩. আয়েশা ( রা: ) ( কুমারী ) : ,, ,, ,, ,, ,, ৫২ ,, 
০৪. হাফসা ( রা:) ( বিধবা ) : ,, ,, ,, ,, ,, ৫৪ ,, 
০৫. জয়নাব বিনতে খুযাইমা : ,, ,, ,, ,, ,, ৫৫ ,,
(
বিধবা ) 
০৬ . উম্মে সালমা ( বিধবা ) : ,, ,, ,, ,, ,, ৫৫ ,,
০৭ . জয়নাব বিনতে জাহাশ : ,, ,, ,, ,, ,, ৫৬ ,,
(
যায়েদের পরিত্যক্তা স্ত্রী ) 
০৮. জওয়ারিয়া ( বিধবা ) : ,, ,, ,, ,, ,, ৫৬ ,, 
(
বনু মুস্তালিক গোত্রের কন্যা ) 
০৯. রায়হানা ( বিধবা ) : ,, ,, ,, ,, ,, ৫৭ ,, 
(
ইহুদী ধর্ম হতে আগত ) 
১০ . মেরি বা মারিয়া ( বিধবা ) : ,, ,, ,, ,, ,, ৫৭ ,, 
(
খ্রীষ্টান ধর্ম হতে আগত ) 
১১. সুফিয়া ( বিধবা ) : ,, ,, ,, ,, ,, ৫৮ ,, 
(
ইহুদী ধর্ম হতে আগত ) 
১২. উম্মে হাবীবা ( বিধবা ) : ,, ,, ,, ,, ,, ৫৮ ,, 
(
আবু সুফিয়ানের কন্যা )
১৩. মায়মুনা ( বিধবা ) : ,, ,, ,, ,, ,, ৫৯ ,, 
(
বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা )
উপরোল্লিখিত তালিকা দৃষ্টে দেখা যাচ্ছে যে, রাসূল ( সা: ) এর বিবিদের মধ্যে মাত্র একজন ( আয়েশা ) ছাড়া অবশিষ্ট সকলেই ছিলেন বিধবা । কাজেই এ কথা 
দিবালোকের ন্যায় নিশ্চিত যে, এই বিবাহগুলার কারণ আর যাই হোক , কামুকতা নয়, বিলাসও নয় ।
পূর্বেই বলে এসেছি , রাসূল ( সা: ) ছিলেন আমাদের জন্য পরিপূর্ণ আদর্শ । তিনি আমাদের জন্য সকল দিক ও বিভাগে পরিপূর্ণ আদর্শ রেখে গেছেন । বিভিন্ন আদর্শ স্থাপনের জন্য তাঁকে বিভিন্নরূপে আত্মপ্রকাশ করতে হয়েছে । বিবাহের ব্যাপারেও তাই । বিভিন্ন আদর্শ স্থাপনের জন্য রাসূল ( সা: ) এতগুলো বিবাহ করেছিলেন । সে আদর্শগুলো নিম্নে আলোচিত হলো ।
০১. নারীত্বের মর্যাদা দান :
রাসূল ( সা: ) এর রিসালাতের প্রাক্কালে নারীত্বের কোনই মর্যাদা ছিল না । যখন খুশি বিবাহ করা যেত, যখন খুশি যাকে খুশি তালাক দেওয়া যেত । বিধবা নারীদের দূর্গতি ছিল সবচেয়ে বেশি । তাদেরকে কেউ বিবাহ করতে চাইতো না । ভদ্র ও সম্ভ্রমের সাথে বেঁচে থাকার নূন্যতম অধিকারটুকু তাদের ছিল না । মহানুভব নবী তাই এই শ্রেণীর বিধবা নারীদের বিবাহ করে এবং চিরদিন তাদেরকে সমানভাবে স্ত্রীর অধিকার ও মর্যাদা দিয়ে আরববাসীদের সন্মুখে মনুষ্যত্বের এক উজ্জ্বল ও উন্নত আদর্শ তুলে ধরেন । সওদা, জয়নব বিনতে খুযাইমা ও উম্মে সালমাকে এই কারণেই তিনি বিবাহ করেছিলেন ।
০২. মানব প্রেমের বিস্তার :
মানুষের প্রতি প্রেম ও ভালবাসা ছিল রাসূল ( সা: ) এর অপরিসীম । এত যে আঘাত, এত যে লাঞ্চনা , এত যে বেদনা তিনি পেয়েছেন মানুষের কাছ থেকে , তবুও কোন দিন কাউকে তিনি অভিশাপ দেননি বা কারও ধ্বংস কামনা করেননি । তিনি একথা জানতেন যে, মানুষ না বুঝে তাঁকে আঘাত হানছে । আল্লাহ তায়ালার নিকট শত্রুদের নিকট অভিযোগ করা তো দূরের কথা , পাছে অত্যাচারী যালিমদের উপর আল্লাহর অভিশাপ নেমে না আসে , এই ভয়ে মহাপুরুষ ছিলেন সর্বদা শংকিত । সব সময় তিনি এই দোওয়া করতেন : হে আল্লাহ ! এই মূঢ় পথভ্রান্তদের ক্ষমা করো । এরা না বুঝে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে । প্রয়োজনের তাগিদে তিনি বিধর্মীদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছেন বটে , কিন্তু তা ছিল আত্মরক্ষামূলক , সংহারমূলক নয় ; সংশোধনমূলক, প্রতিহিংসামূলক নয় । কোরেশ, ইহুদী, বেদুঈন, খ্রিষ্টান , পারসিক- কারও প্রতি তাঁর জাতক্রোধ ছিল না । যে মূহুর্তে তারা বশ্যতা স্বীকার করেছে বা শান্তির প্রস্তাব করেছে , সেই মূহুর্তেই তিনি অস্ত্র ত্যাগ করেছেন । সেই মূহুর্তেই তিনি তাঁদেরকে আপন করে বুকে টেনে নিয়েছেন । বিধর্মীদের সহিত শান্তিতে বসবাস করাই ছিল তাঁর প্রধান লক্ষ্য । অতিবড় শত্রুদের জন্যও যে তাঁর অন্তরে প্রেম ও করুণা সঞ্চিত হয়ে আছে , এই কথা কার্যত: প্রমাণ করার জন্য রাসূল ( সা: ) কে কয়েকটি বিবাহ করতে হয়েছিল । এর ফলে শত্রুদের অন্তরলোক তিনি অলক্ষ্যে জয় করে নিয়েছিলেন । ব্যাপক মানবতাবোধ ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতাই ছিল এই সব বিবাহের মূল প্রেরণা । দীর্ঘদিনের বংশগত শত্রুতা অনেক সময় বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে তিরোহিত হয়ে যায় । উম্মে হাবিবা ( আবু সুফিয়ানের কন্যা ) , মায়মুনা ( বীরবর খালিদের খালা ) , জওয়ারিয়া ( বনি মুস্তালিক গোত্রের কন্যা ) , এদেরকে রাসূল ( সা: ) এই উদ্দেশ্যেই বিবাহ করে্ছিলেন । এই তিনটি বিবাহের ফলেই কোরেশ ও অন্যান্য গোত্রের লোকেরা রাসূল ( সা: ) কে আত্মীয় ও বন্ধু মনে করতে পেরেছিল এবং রাসূলের প্রতি তাদের নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল । উম্মে হাবিবাকে বিবাহ করে তিনি আবুসুফিয়ানকে জয় করেছিলেন , বৃদ্ধা মায়মুনাকে বিবাহ করে তিনি খালিদ বিন ওয়ালিদকে পেয়েছিলেন । জওয়ারিয়াকে বিবাহ করে তিনি বনু মুস্তালিক গোত্র ও অন্যান্যদেরকে পেয়েছিলেন । এইরূপে মক্কা বিজয়ের পথ তাঁর জন্য সহজ ও সুগম হয়েগিয়েছিল । সন্মান, দয়া , প্রেম দিয়ে কোন জানী দুশমনকে এমনভাবে জয় করবার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও দেখিনি । মনুষ্যত্বের কত বড় আদর্শ এইখানে ! 
রাসূল ( সা: ) বলেছেন : বিবাহ সন্বন্ধই অন্যান্য সব কিছূ অপেক্ষা মানুষের মধ্যে বেশি মুহাব্বাত সৃষ্টি করে । এই নীতি তিনি কার্যত:ও দেখিয়ে গিয়েছেন । শুধু মৌখিক ভালবাসা দেখিয়ে , শুধু ক্ষমা ও করুণা করে তিনি শত্রুদের মন জয় করেননি, রক্তের সন্বন্ধ স্থাপন করে তিনি সকলকে আপন করে নিয়েছেন । এই বিরাট মনুষ্যত্ব ও মহানুভবতার তুলনায় তথাকথিত ইউরোপীয় ঐতিহাসিকদের বহুবিবাহের কল্পিত দোষত্রুটি দাঁড়াতে পারে কি ?
০৩. ভিন্ন ধর্মাবলন্বীদের কন্যা গ্রহণের আদর্শ স্থাপন :
বিশ্বনবী তাঁর সুদূরপ্রসারী অন্তরদৃষ্টি দিয়ে এ কথা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, মুসলমানদেরকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে হবে এবং নানা জাতীয় লোকের সংস্পর্শে আসতে হবে ; কাজেই ভিন্ন ধর্মাবলন্বী নারীদেরকে বিবাহ করা যায় কিনা এ প্রশ্ন একদিন উথ্থাপিত হবেই । এর বাস্তব আদর্শ দেখানো রাসূলের পক্ষে তাই ছিল অপরিহার্য । অবশ্য ইসলাম বিধান দিয়েছে যে, যারা আহলে কিতাব তথা যাদের হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছে , তাদের সহিত মুসলমানদের বিয়ে শাদী চলতে পারে । কিন্তু শুধু বিধান দিয়ে রাখলেই হয় না , বাস্তব আদর্শও দেখানো চাই । ঠিক এ কারণেই রাসূল ( সা: ) কে ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের নারীদের বিবাহ করতে হয়েছে । মেরী বা মারিয়া ( খ্রিষ্টান ) এবং সফিয়া ও রায়হানা ( ইহুদী ) এই পর্যায়ভূক্ত । এদেরকে বিবাহ করে রাসূল ( সা: ) খ্রিষ্টান ও ইহুদী জাতির প্রতি আপন হৃদয় উন্মুক্ত করে দিয়েছেন; এর দ্বারা প্রতীয়মান হলো যে, রাসূল ( সা: ) ইহুদী- খ্রিষ্টান বা আহলে কিতাবদের ঘৃণা করেন না , তাদেরকেও যে তিনি ভালবাসেন এই তিনটি বিবাহ দ্বারা তিনি তাই প্রমাণ করে গিয়েছেন । আপনারা রাসূলের জীবন চরিত থেকে এ কথা নিশ্চিত হয়েছেন যে, মেরি বা মারিয়া , সফিয়া ও রায়হানা কেউ তাঁর অন্যান্য স্ত্রী অপেক্ষা মর্যাদায় কোন অংশে কম ছিলেন না । রাসূল ( সা: ) এর পুত্র ইব্রাহীম এই মেরীর গর্ভেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন । মুসলমানগণ এই আদর্শ আজও অনুসরণ করে চলছে, রাসূলের অনুসরণে কোন অমুসলিম তথা ইহুদী, খ্রিষ্টান বা অন্য কোন জাতি থেকে আগত নারীদেরকে শরীয়াতের বিধান অনুসারে বিবাহ করতে ইসলামী শরীয়াতে বাঁধা নেই ।
০৪. পরিজনবর্গের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা স্থাপন :
রাসূল ( সা: ) এর পরিবারবর্গকে আহলে বায়েত বলা হয় । আবুবকর, ওমার, ওসমান ও আলী ( রা: ) ইসলামের এই খলিফা চতুষ্ঠয় ‘‘আহলে বায়াতের ’’ অন্তর্ভূক্ত । রাসূল ( সা: ) এই চারিজন খলিফাকে রক্তের সন্বন্ধ দ্বারা বেঁধে রেখেছিলেন । হয় কন্যা দিয়ে, না হয় কন্যা গ্রহণ করে রাসূল ( সা: ) এই ঘনিষ্ঠতা স্থাপন করেছিলেন । আলী ও ওসমান ( রা: ) কে কন্যা দিয়ে এবং আবুবকর ও ওমারের কন্যাদ্বয়কে তিনি স্ত্রীরূপে নিজে গ্রহণ করেছিলেন । আয়েশা ও হাফসাকে বিবাহ করার গুঢ় কারণ ইহাই
০৫. অনুরোধ রক্ষা :
অনেক নারী নিজেরা ইচ্ছা করে রাসূল ( সা: ) এর সহধর্মিনী হবার জন্য লালায়িত ছিলেন । তাঁরা ইহকাল ও পরকালে রাসূলের সাহচর্যে কাল কাটাতে ইচ্ছুক হয়েছিলেন । কোন কোন সাহাবারাও নিজেদের কন্যা বা ভগ্নিকে দিয়ে রাসূলের সহিত আত্মীয়তা স্থাপন করতে আগ্রহী হয়েছিলেন । এ কারণেও তাঁকে দু-একটি বিবাহ করতে হয়েছিল । বিবি সওদা ও মায়মুনা এ পর্যায়ভূক্ত । স্ত্রীদের কেউ কেউ নিজেদের বারী ( পালা ) ত্যাগ করেও শুধু পত্নীত্বের সন্বন্ধটুকুর জন্যই রাসূলের স্ত্রী হয়েছিলেন । বৃদ্ধা বিবি সওদা বিবি আয়েশার অনুকুলে তার বারী পরিত্যাগ করেছিলেন ।
০৬. আদর্শের পূর্ণতা সম্পাদন :
পুর্বেই বলেছি ,বিশ্বনবী ছিলেন আমাদের জন্য পরিপূর্ণ আদর্শ । আমাদের জীবনে যতকিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে , সবগুলোরই পূর্ণ সমাধান তিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন । শুধু আদেশ-নিষেধ দ্বারা নয় , বাস্তব আদর্শ দ্বারা । আদর্শের পরিপূর্ণতার খাতিরেই তাই তাঁকে এতগুলো বিভিন্ন প্রকৃতির নারীকে বিবাহ করতে হয়েছিল । এক স্ত্রী দ্বারা বিভিন্ন আদর্শ দেখানো সম্ভব নয় । তিনি যদি শুধু খাদিজাকে বিবাহ করেই ক্ষান্ত থাকতেন, তবে আমরা কুমারী স্ত্রীর সহিত স্বামীর ব্যবহার কিরূপ হবে জানতে পারতাম না ; আর যদি শুধু কুমারী আয়েশাকেই বিবাহ করতেন , তবে বিধবা ও বৃদ্ধা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ব্যবহার কিরূপ হবে , জানতে পারতাম না । শুধু যদি স্বগোত্র বা স্বধর্মাবলন্বীদের কন্যাকেই বিবাহ করতেন, তবে ভিন্ন ধর্মাবলন্বীদের কন্যাকে বিবাহ করা যায় কি না এবং তাদের প্রতি কিরূপ ব্যবহার করতে হয় , জানতে পারতাম না । শুধু যদি সম্ভ্রান্ত বংশ হতেই বিবাহ করতেন, তবে ক্রীতদাসীকেও যে বিবাহ করা যায়, বা সেও যে সম্ভ্রান্ত ঘরের ঘরণী হতে পারে, এই আদর্শ আমরা পেতাম না । শুধু যদি সন্তানদায়িনী নারীকে বিবাহ করতেন, তবে বন্ধ্যা নারীর মনের খবর আমরা পেতাম না । স্বামী-স্ত্রীর বিভিন্ন চিত্র দেখাবার জন্যই তিনি বিভিন্ন অবস্থার নারীদের বিবাহ করেছিলেন । এক জীবনে সমস্ত আদর্শ ও পরিকল্পনাকে রূপ দিতে গিয়েই তাঁকে বিচিত্র ধরণের একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে হয়েছে । শেষ বয়সে কুমারী আয়েশাকে বিবাহ করার একটা সুফল এই হয়েছিল যে, রাসূলুল্লাহর ইন্তেকালের পর বিবি আয়েশা দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহর জীবনস্মৃতি ও হাদীসের ব্যাখ্যা ও বর্ণনা তিনি সাহাবীদেরকে দিতে পেরেছিলেন ।
০৭. কুসংস্কারের উচ্ছেদ সাধন :
মৌখিক সন্বন্ধকে ইসলাম সমর্থন করে না । কিন্তু ইসলাম আগমনের প্রাক্কালে এই কুপ্রথা আরবে চালু ছিল । ধর্মের দোহাই দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করা হতো, যা ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে । যেমন- ধর্ম পিতা-মাতা, ধর্ম ভাইবোন, ইত্যাদি । এ ধরণের সম্পর্ক পাতিয়ে বিয়ে শাদীর ব্যাপরে অনেক কুসংস্কারের সৃষ্টি করে রেখেছিল । এই কুসংস্কারের উচ্ছেদ সাধনের জন্য রাসূল ( সা: ) তাঁর পালিত পুত্রের পরিত্যক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করেছিলেন । তদানিন্তন সময়ে একটি কুসংস্কার ছিল এই যে, নিজের পুত্র বধুকে যেমন বিবাহ করা হারাম, তেমনি পালিত পুত্রবধুকেও 
বিবাহ করা হারাম মনে করা হতো । এই মোখিক স্বীকৃতিকে অস্বীকার করে আল্লাহ তায়ালা সুরাহ আহযাবের ৪০ নং আয়াতে কারীমা নাযিল করে সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন :
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا ـ ( سورة الأحزاب : 40)
অনুবাদ : মুহাম্মাদ ( সা: ) তোমাদের কোন পুরুষের পিতা হয়ে আগমন করেননি , বরং তিনি আগমন করেছেন, আল্লাহ রাসূল ও খাতামুন নাবীয়ীন হয়ে তথা সর্বশেষ নবী হয়ে । আর আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি বিষয়ে সম্যক অবহিত । ( সূরাহ আল আহযাব : আয়াত নং ৪০ )
এ ছাড়াও আরও একটি অন্তর্নিনিহিত কারণ ছিল যে, তালাক প্রদত্ত স্ত্রীলোককে সেকালে কেও বিবাহ করতে চাইতো না । বিবাহ করলেও তা ইসলামী প্রথানুসারে কিরূপ করতে হবে, তা প্রদর্শন করার প্রয়োজন ছিল । বিবি জয়নাবের দ্বারা এই উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছিল । আলোচ্চ কুসংস্কারের মূলোৎপাটন কল্পে আল্লাহ তায়ালা সূরাহ আহযাবের ৩৭ নং আয়াতে কারীমা নাযিল করেন : এ পর্যায়ে ইরশাদ হচ্ছে : 
فَلَمَّا قَضَى زَيْدٌ مِنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا لِكَيْ لَا يَكُونَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ حَرَجٌ فِي أَزْوَاجِ أَدْعِيَائِهِمْ إِذَا قَضَوْا مِنْهُنَّ وَطَرًا وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا-
অনুবাদ : অত:পর যায়েদ যখন তাকে ( জয়নাবকে ) তালাক দিলো , তখন আমি তাঁকে তোমার স্ত্রীরূপে দান করলাম । যাতে পালিত পুত্রের স্ত্রী সন্বন্ধে মুমিনদের মনে কোনরূপ খটকা না থাকে । যখন সে তার প্রয়োজন পূরণ করে নেয় । অর্থাৎ- তালাক দিয়ে দেয় । ( সূরাহ আল আহযাব : আয়াত নং- ৩৭ )
০৮ . আত্মত্যাগের আদর্শ স্থাপন :
এক বিবাহ দাম্পত্য জীবনের আদর্শ বটে, কিন্তু বহু বিবাহ যে, সর্বদায় নিন্দনীয়, তাও নয় । বহু বিবাহের মধ্যে একটি বিরাট মহত্ব লুকায়িত আছে । এক বিবাহের মধ্যে আছে খানিকটা স্বার্থপরতা ও মানসিক সংকীর্ণতা । আমার স্ত্রী, আমি এবং আমাদের দুজনের পুত্র-কন্যা এই সংকীর্ণ গন্ডি সৃষ্টিই হচ্ছে এক বিবাহের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য । এক স্ত্রীকে নিয়ে পুরুষের অন্তরে বহু মহদ্বৃত্তি তাই খেলা করতে পারে না । প্রেম ও ভালবাসা কোন নির্দিষ্ট পাত্রে সীমাবদ্ধ থাকলে তা সংকীর্ণ হয়ে আসে, সে প্রেম মানুষকে অন্তর্মূখী তথা আত্মকেন্দ্রিক ও আত্মপূজারী করে তোলে ; বহুর্মূখী করে তোলে না, ভোগী করে তোলে, ত্যাগী করে তোলে না । নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই হচ্ছে প্রেমের চরম সার্থকতা । একাধিক স্ত্রী হলে মানুষের দায়িত্বও কর্তব্য বেড়ে যায় । কর্তব্য ও দায়িত্ব যেখানে বহুর্মূখী হয় , সেইখানেই হয় মানুষের সত্যিকার পরীক্ষা । একাধিক স্ত্রী থাকলে মানুষ এই পরীক্ষার সন্মুখীন হয় । সকল পত্নীর প্রতি বা সকল সন্তানের প্রতি সে সমতার ভিত্তিতে তার কর্তব্য পালন করছে কিনা , এই কথা তখন তাকে ভাবতে হয় । বহুর মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ঘাত- প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সে তখন আত্মোপলব্ধি করবার সুযোগ পায় । পক্ষান্তরে পত্নীদের অন্তরে বহু সুকুমারবৃত্তিরও জাগরণ হতে পারে । একক স্ত্রী আত্মসর্বস্ব ও আত্মকেন্দ্রিক হয় , কেমন করে পরের জন্য কিছূটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, সে তা জানে না । কিন্তু সপত্নীদের মাঝে বাস করলে তার দৃষ্টি প্রসারিত না হয়ে পারে না । যে ত্যাগ তাকে করতে হয়, যে বঞ্চনা তাকে সইতে হয়, তা একদিক দিয়ে পীড়াদায়ক হলেও উহাই তার অন্তরের মহত্বকে জাগিয়ে তোলে । সপত্নীদের মধ্যে সচারচর যে পরস্পরের প্রতি ঈর্ষা দেখতে পাওয়া যায়, তা কোন নারীর পক্ষে গৌরবের কথা নয় । স্বামীর যথাসর্বস্ব একা অধিকার করতে পারলাম না , সব সুখ সম্পদ একা ভোগ করতে পারলাম না , এই চিন্তা ও মনোবৃত্তি মানুষকে কখনও বড় করে না । সতীনের প্রতি ও সতীনের সন্তান সন্ততির প্রতি যে প্রেম ও স্নেহ মমতা দেখাতে পারে, তার অন্তকরণ মহৎ না হয়ে যায় না । এরূপ নারীকে যেখানে পাবেন সেখানেই দেখবেন তিনি মহীয়সী । বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ( সা: ) বিচিত্র ধরণের বহু স্ত্রীর মধ্য দিয়ে মানব চরিত্রের এই দিকটা উজ্জ্বলরূপে পরিস্ফুট করে তুলেছেন । মহানুভবতা , আত্মত্যাগ, পরার্থপরতা উদারতা, কর্তব্যপরায়নতা, মানবপ্রেম প্রভতি নানা গুণের দৃষ্টান্ত তাঁর এই বহুবিবাহের মধ্য্ আমরা দেখতে পেয়েছি ।
এ পর্যায়ে একটি প্রশ্নের জবাব :

প্রশ্নটি হলো : রাসূল ( সা: ) নিজে এতগুলো বিবাহ করলেন, অথচ তাঁর উম্মাতের জন্য চারিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ হলো কেন ?
উত্তর :
৮ম হিজরীতে যখন রাসূল ( সা: ) এর বয়স ৬০ বৎসর । তখন বিবাহ সম্পর্কে বিধি বিধান অবতীর্ণ হয় । প্রাক ইসলামী যুগে আরবে বিবাহের সংখ্যা সম্পর্কে কোন বাঁধা ধরা নিয়ম ছিল না । যথেচ্ছা আর যতখুশি নারীদের স্ত্রীরূপে ব্যবহার করতো । একই সঙ্গে অসংখ্য মহিলাদের স্ত্রী ও দাসী হিসেবে ব্যবহার করতো । যাকে ইচ্ছা তালাক দিত মোদ্দাকথা নারীদেরকে শুধু ভোগের পন্য হিসেবে ব্যবহার করা হতো । এক কথায় নারীদের মর্যাদা বলতে কিছুই ছিল না । ইসলাম নারীদের এহেন অবমাননা থেকে রক্ষা করলো । এ পর্যায়ে আলক্বুআনে পরিষ্কার ভাষায় ঘোষিত হলো :
فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ( سورة النساء= 3 ) ـ
অনুবাদ : তোমরা তোমাদের পছন্দ মতো দুই, তিন কিংবা চারজন পর্যন্ত বিবাহ করতে পারো । ( সূরাহ নিসা : আয়াত নং- ০৩ )
অর্থাৎ- যে কোন পুরুষ একই সঙ্গে একই সময়ে চার জনের বেশি স্বাধীনা নারীকে বিবাহ করতে পারবেনা । তার মানে বিবাহের সংখ্যা চারিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হলো । তখন সকলেই বাধ্য হলো- চারজন স্ত্রী রেখে অন্যান্যদের তালাক দিতে । কিন্তু রাসূল ( সা: ) এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ব্যতিক্রম দেখা দিল । বিভিন্ন কারণে তিনি কোন স্ত্রীকে তালাক দিতে পারছিলেন না । একে তো নবীগণের স্ত্রীগণ হচ্ছে মুমিনদের মা । নবীগণের স্ত্রীদের শাদী করা মুমিনদের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে । তাই তাঁর স্ত্রীদের তালাক দেওয়ার অর্থই হলো তাদের সমুদ্রের অথৈ জলে ভেসে দেওয়া । যা নারীত্বের চরম অবমাননার শামিল ।
দ্বিতীয়ত: তাদেরকে তালাক দিলে কলহ ও বিবাদের সম্ভাবনা ছিল । অথচ তাঁর প্রতিটি বিয়ের মূলে ছিল মিলনের সেতুবন্ধন সৃষ্টি । তাই ক্বুরআন তাঁকে এ নির্দেশ দিয়ে দিল যে, তিনি আর স্ত্রীদের মাঝে কোন পরিবর্তন ও পরিবর্দ্ধন করতে পারবে না । যেমন- সূরাহ আহযাবের ৫২ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে :
لَا يَحِلُّ لَكَ النِّسَاءُ مِنْ بَعْدُ وَلَا أَنْ تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنْ أَزْوَاجٍ وَلَوْ أَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ إِلَّا مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ وَكَانَ اللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ رَقِيبًا ـ ( سورة الاحزاب ــــ 52 ) ـــ
অনুবাদ : আর হে নবী ! এর পর ( অর্থাৎ- চারজন পর্যন্ত বিবাহের হুকুম নাযিলের পর ) আপনার জন্য আর কোন নারী বৈধ নয় এবং আপনার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয় । অর্থাৎ- কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন চলবে না । যদিও তাদের সৌন্দর্য আপনাকে মোহিত করে , তবে অধিকারভূক্ত দাসীর ব্যাপারে এ বিধান প্রযোজ্য নয় । আর আল্লাহ সমস্ত কিছুর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন ।
                        প্রচারে শাহাজাহান আলী 

লেখক

মো: ইসহাক মিয়া 
সহকারী অধ্যাপক ( কামিল হাদীস বিভাগ ) 

বিজুল দারুল হুদা কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা 

6 comments:

  1. মানব ইতিহাসেে সর্ব প্রথম আদমশুমারীর প্রচলন করেন কে

    ReplyDelete
  2. জাযাকাল্লাহ খাইরান

    ReplyDelete
  3. মুহাম্মদ সা মদিনা হিজরতের সময় যে বাহনটি ব্যবহার করেছেন তার নাম কি

    ReplyDelete
  4. অ‌নেক লেখা ব‌টে।

    ReplyDelete
  5. আলহামদুলিল্লাহ লেখক অনেক তাকলীফ, মেহনত, রিয়াত করে তথ্য সংগ্রহ করে সিরাতে মুস্তবা, মুস্তফা ﷺ
    হাদীয়া করেছেন মুহতারাম পাঠকবৃন্দকে এর জন্য জানাই আন্তরিক মুবারকবা। আশা করি পাঠকবৃন্দ সিরাতে মুস্তবা, মুস্তফা ﷺ সম্পর্কে অনেক অজানা-জানা তথ্য পাবেন।
    মহান আল্লাহ লেখক ভাইয়ের মেহনত কবুল করুন।
    "Wa ʾantum fa-jazākumu-llāhu khayran" وَأَنْتُمْ فَجَزَاكُمُ ٱللَّٰهُ خَيْرًا
    And you too, may Allah reward you with goodness" on the eve of Holy Eid Al Adh, 1444-hijrah 2023.
    https://www.linkedin.com/pulse/world-islamic-science-tech-review-june-july-2023-special-hossain/
    https://www.pinterest.com/ramzanctg60/holy-eid-congratulation-1444-hijrah2023/

    ReplyDelete
  6. একজন নারিকে অপমানের প্রতিশোধে কোন জুদ্দ সংঘটিত হয়

    ReplyDelete