Tuesday 28 March 2017

পিতা- মাতার অনুমতি ছাড়া কি বিবাহ হবে ?



এ বিষয়ে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার খুব চমৎকার কিছু কথা বলেছেন। আপনাদের ভাল লাগবে ইনশাআল্লাহ।
এ ধরণের আরো ভিডিও দেখতে চাইলে ভিজিট করুন: 

http://sahazahansky.blogspot.com/search/label/%E0%A6%A1.%20%E0%A6%96%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B9%20%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%80%E0%A6%B0%20%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B9

শিক্ষার সংজ্ঞা

শিক্ষা
শিক্ষা সবার জন্য
শিক্ষার সংজ্ঞা:- 
http://sahazahansky.blogspot.com/p/blog-page_35.html
শিক্ষা কাকে বলে ? এ পর্যায়ে বিভিন্ন মনীষী ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে বিষয়টিকে সঙ্গায়িত করার প্রয়াস চালিয়েছেন । নিম্ন তা আলোচিত হলো :
বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা:) এর মতে যে শিক্ষা মানুষের মনুষ্যত্বকে বিকশিত করে 
তোলে, তাই হলো শিক্ষা ।
আল্লামা ইকবালের মতে মানুষের খুদী তথা পরমাত্মার উন্নয়নই হলো আসল শিক্ষা ।
দার্শনিক সক্রেটিসের মতে-নিজেকে জানার নাম শিক্ষা
কবি মিল্টনের ভাষায় - শরীর, মন, ও আত্মার সমন্বিত ভারসাম্যপূর্ণ উন্নতির নাম হলো শিক্ষা ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় মানুষের ভেতরের আসল মানুষটির পরিচর্যা করে খাটি মানুষ বানাবার প্রচেষ্টার নাম শিক্ষা ।

শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
( Target and Motive of Education )
শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য :
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, সেই উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে তার বিধি-নিষেধ জেনে উহার প্রতিফলনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও সামগ্রীক জীবনে সংশোধন ওপূনর্গঠন করণ ।
মানুষের মাঝে আত্মসচেতনতা সৃষ্টি , তার ব্যক্তিসত্ত্বার উন্নয়ন, দায়িত্ব ও মর্যাদাবোধ জাগিয়ে তোলা ।
ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মানবিক গুণাবলী ও সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশের মাধ্যমে তার শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও সামাজিক উন্নতি সাধন করা ।

শিক্ষার প্রতিটি স্তরে শিক্ষার্থীদের মনে দেশ ও জাতির কল্যানের জন্য জাতীয়তাবোধ, দেশাত্মবোধ, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি করা । শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানার্জনের প্রতি অনুরাগ , সত্যানুসন্ধিৎসু মন, ন্যায়পরায়নতা, শিষ্টাচার এবং দেশসেবার লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা ।

নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থতিক উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার যথাযত শিক্ষার মাধ্যমে বৃহৎ জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিনত করা ।

বস্তুত যে শিক্ষার দ্বারা শিক্ষার্থীর ব্যক্তি চরিত্র্ ও কর্মের আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন হয় না কিংবা যে শিক্ষা মানব কল্যানে নিয়োজিত হয় না , সে শিক্ষাকে প্রকৃত অর্থে শিক্ষা নামে অভিহিত করা যায় না । রাসূলে কারীম ( সা: ) এ ধরনের শিক্ষা থেকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট পানাহ ( আশ্রয় ) চেয়েছেন ।
এ পর্যায়ে একটি হাদীস বর্ণিত হচ্ছে :
عن زيد بن ارقم ( رض ) قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : اللهم انى اعوذبك من علم لا ينفع- ( رواه مسلم - ) 
অনুবাদ : যায়েদ ইবনু আরকাম ( রা: ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন : রাসুলে কারীম ( সা: ) বলেছেন : হে আল্লাহ ! আমি আপনার নিকট অনর্থক বিদ্যা থেকে পানাহ চাই । ( সূত্র: সহীহ মুসলিম : হাদীস নং-২৭২২ )
মূলত: আত্মগঠন ও মানব কল্যানের লক্ষ্যই বিদ্যা অর্জনের মূল উদ্দেশ্য ।

কবির ভাষায় :
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে 
আসে নাই কেহ অবনী পরে ,
সকলের তরে সকলে মোরা 
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে ।


01. What is Education ?

Education is the change.

Education refine our brain. 
Education differentiate 
between right and wrong.
Education makes us strong.
Education teaches us to be civil.
Education tells us to give up path of evil.
Education teaches us to be polite. 
You can not great without it.
02. A poem
use of time
Time is first, Time is last 
Don’t loss your time 
In the dust.
If you make good use 
of your time 
You will success.
The students who knows 
The value of time 
In future he will hold 
The position of prime.

Sunday 26 March 2017

সমাজে প্রচলিত ৫টি জাল হাদীস নিয়ে পর্যালোচনা

শাহাজাহান

জাল হাদীস বলতে কি বুঝায় 
জাল হাদীসকে হাদীস শাশ্ত্রের পরিভাষায় االحديثالموضو ع) ( বলা হয় । موضوع শব্দটি আরবী وضع ধাতু থেকে নির্গত। যার অর্থ- কোন জিনিস নতুন করে বানানো । মিথ্যা উপাখ্যান তৈরী করা ইত্যাদি ।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : রাসূল (সা: ) যা বলেননি , এমন কথাকে রাসূল (সা:) 
এর বক্তব্য বলে চালিয়ে দেওয়াকে মাওযু বা জাল হাদীস বলে ।
মুহাদ্দিসগণের মতে জাল হাদীসের সংজ্ঞা :
আল্লামা ড. মাহমুদ ত্বাহা বলেন هو الكذب المختلق المنسوب الى رسول اللهঅর্থাৎ-মিথ্যা মনগড়া বক্তব্য বা কথা নিজে থেকে তৈরী করে তা রাসূল (সা:) এর বক্তব্য বলে চালিয়ে দেওয়াকে মাওযু হাদীস বলে ।
আল্লামা ড. আবুবকর বলেন
هو المختلق المصنوع المكذوب على رسول الله ( ص) –
অর্থাৎ-বানানো বক্তব্যকে রাসূল (সা: ) এর হাদীস বলে মিথ্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়াকে জাল হাদীস বলে । 
মোদ্দাকথা- জাল হাদীস রাসূল ( সা: ) যবান নি:সৃত বাণী নয় । মানুষ নিজের খেয়াল-খুশি মত মিথ্যা সনদ ও মতন তৈরী করত: তা হাদীসের নামে চালিয়ে দিয়েছে । 
শারঈ মানদন্ডে জাল হাদীসের হুকুম বা বিধান : জাল হাদীস রচনা করা, বর্ণনা করা ও লিখন হারাম । এটি মারাত্মক ধরনের একটি কাবীরাহ গুনাহ । জাল হাদীস বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে হাদীসে জাহান্নামের ফায়সালা দেওয়া হয়েছে । এ পর্যায়ে হাদীস বর্ণিত হচ্ছে ।

প্রথম হাদীস :
عن عبد الله بن عمرو ( رض) قا ل : قا ل رسول الله ضلى الله عليه و سلم : من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار – ( رواه البخارى، رقم الحديث: (3461 ) – و الترمذى ، ( 2951 ) كل مطبع مصر )
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ( রা: ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন : রাসূল ( সা: )
বলেছেন : যে ব্যক্তি আমার ব্যাপারে মনগড়া মিথ্যা কথা রচনা করলো , সে তার ঠিকানা জাহান্নামে করে নিক । ( তথ্যসূত্র- বুখারী=হাদীস নং-৩৪৬১ - তিরমিজী = 
২৯৫১)
প্রথম হাদীস :
لولا خلقتك لما خلقت الافلا ك- 
অনুবাদ: হে মুহাম্মাদ ! আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না ।
হাদীসটির সনদ :
ইমাম হাকিম নিশাপুরী ‘‘মুস্তাদরাকগ্রন্থে (২/ ৬১০ পৃষ্ঠা ) , তাঁর সূত্রে ইবনু আসাকির ( ২/ ৩২৩ পৃষ্ঠা ) এবং ইমাম বায়হাক্বী দালায়েলুন নাবুওয়াহ গ্রন্থে ( ৫/ ৪৮৮ পৃষ্ঠা ) মারফু হিসেবে আবুল হারিস আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম আলফিহরী সূত্রে 
আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম হতে বর্ণনা করেছেন ।
হাদীসটির মতন :
হযরত আদম আদম (আ: ) যখন গুনাহ করে ফেললেন, তিনি বললেন: হে আমার প্রভূ ! তোমার নিকট মুহাম্মাদকে সত্য জেনে তার ওছিলা ধরে প্রার্থনা করছি । তার ওছিলায় তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও । আল্লাহ বললেন : হে আদম ! তুমি কিভাবে মুহাম্মাদকে চিনলে ? অথচ এখন পর্যন্ত আমি তাকে সৃষ্টি করিনি । আদম ( আ: ) বললেন: হে আমার প্রভূ ! আপনি আমাকে যখন আপনার হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন এবং আমার মধ্যে আত্মার প্রবেশ ঘটান , তখন আমি মাথা উচু করে আরশে মুয়াল্লায় লিখা দেখলাম الا اله الا الله محمد رسول الله - তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, আপনার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় ব্যতীত অন্য কেউ আপনার পবিত্র নামের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে না । একথা শুনে আল্লাহ পাক বল্লেন : সত্যই বলেছো হে আদম । নিশ্চয়ই তিনি আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় । তুমি তাকে ওছিলা ধরে আমাকে ডাকো । আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব । মুহাম্মাদকে যদি সৃষ্টি না করা হতো , তবে আমি সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না ।
হাদীসটি নিয়ে পর্যালোচনা :
আল্লামা ইমাম আযযাহাবী (রহ: ) বলেছেন : আলোচ্য হাদীসটি জাল তথা
বানোয়াট। আব্দুর রহমান দূর্বল রাবী । আর আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম আলফিহরী অজ্ঞাত ব্যক্তি । অর্থাৎ- আসমাউর রিজাল তথা রিজাল শাস্ত্রে যার কোন পরিচিতি নেই । 
 *
আল্লামা নাছির উদ্দিন আলবানী (রহ: ) বলেছেন : ফিহরীর রেওয়ায়েতকৃত হাদীসটি বাতিল । 
*
আল্লামা ইবনু কাছির (রহ : ) তাঁ রচিত আততারিখ গ্রন্থে ( ২/ ৩২৩ পৃষ্ঠা ) অনুরূপ মন্তব্য করেছেন । 
*
আল্লামা ইবনু হিব্বান (রহ: ) অত্র হাদীসের রাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম ইবনে রাশীদ আলফাহরী সম্পর্কে বলেন তিনি হাদীস জাল করার দোষে দুষ্ট । তিনি লাইস, মালিক এবং ইবনু লাহিয়ার সূত্র ধরে হাদীস জাল করেছেন ।সুতরাং তার হাদীস বর্ণনা বৈধ নয় ।
*
আল্লামা ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ ( রহ: ) বলেন : হাদীসে বর্ণিত আব্দুর রহমান ইবনু আসলাম জাল হবার বিষয়ে সকল মুহাদ্দিসগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন । 
*
ইমাম ত্বাহাবী (রহ: ) বলেন : উপর্যুক্ত রাবীর হাদীস ওলামাদের নিকট চরম পর্যায়ের দূর্বল । 
*
আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ:) আর ও বলেছেন : সম্ভবত: হাদীসটি ইসরাঈলী রেওয়ায়েত হতে এসেছে । আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ মারফু করে চালিয়ে দিয়েছেন । মোদ্দা কথা হাদীসটি ভিত্তিহীন ।

দ্বিতীয় হাদীস :
عن المغيرة بن شعبة ( رض ) قا ل : قا ل رسول الله صلى الله عليه وسلم : من حدث عنى بحديث 
يرى أ نه كذ ب فهو احد الكا ذبين - ( رواه مسلم فى المقدمه ) – 
অনুবাদ : যে ব্যক্তি আমার উদ্বৃতি দিয়ে এমন কথা বর্ণনা করলো যা আমি বলেনিঅথচ স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে বর্ণনা করলো । সে মিথ্যুক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে একজন অন্যতম মিথ্যাবাদী । তথ্যসূত্র : সহীহ মুসলিম ( মুকাদ্দামা )
জাল হাদীস প্রনয়নের নেপথ্যে যারা জড়িত ছিল :
জাল হাদীস প্রনয়নে সাহাবায়ে কিরাম সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলন্বন করতেন । তাঁদের মধ্যে কেউ এই ঘৃণ কাজটি করেননি । খিলাফতে রাশেদার শেষের দিকে কিছুসংখ্যক তাবেয়ী দ্বারা একাজটির সূত্রপাত হয় ।
হযরত উছমান ( রা: ) এর খিলাফতের শেষের দিকে এবং আলী (রা: ) এর সময়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দর্শনের মতপার্থক্যকে কেন্দ্র করে হিজরী প্রথম শতাবাদীর শেষার্ধে জাল হাদীস প্রনয়নের সূচনা হয় ।ধর্মীয় লেবাসে খারেজীশীয়ামুতাযিলাক্বাদরিয়াজাবরিয়ামুরজিয়াজুহুমিয়াবারাহিমা প্রভৃতি পথভ্রষ্ট ফের্কাসমূহ তাদরে স্ব স্ব ধর্মীয় ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে উক্ত অপকর্মে নগ্ন ভূমিকা পালন করে ।বিশেষ করে শিয়ামুতাযিলা ও ইহুদী- খ্রিষ্টানদের দোসর যিন্দকরা ছিল এক্ষেত্রে অগ্রগামী । একশ্রেণীর বিদআতী আলেম ও তার অনুসারী দল ছুফি দরবেশ পীর অসৎ ব্যবসায়ী স্বৈর শাসকদের অনুগত তল্পীবাহী সেবাদাসযারা তদানিন্তন সময়ের স্বৈর শাসকদের দু:সাসনের বৈধ অনুমোদন দেওয়ার লক্ষ্যে জাল হাদীস রচনার মত জঘন্য কর্মে লিপ্ত হয় । এ ছাড়াও কবি সাহিত্যিক পেশাদার বক্তাগণ এই ঘৃর্ণ অপকর্মে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে । এসব কুচক্রি মহল তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে হাজার হাজার জাল হাদীস তৈরী করত: তা মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে দেয় ।
ওলামায়ে মুহাদ্দেসীন এ পর্যায়ে নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে হদীস শাস্ত্রের মূলনীতি প্রনয়ন করত: ছহীহজয়ীফমাতরুকমুনকারমুআল্লালশায ও মাওযু হাদীস সমূহ শনাক্ত করেন । তারা মুসলিম উম্মাহকে জাল হাদীস বর্ণনা ও আমল করা থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে জাল হাদীসের উপর বহুসংখ্যক স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেন ।
বহুসংখ্যক জাল হাদীস আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে । এসবের উপর নির্দ্বিধায় বক্তব্য ও আমল চলছে । অথচ জাল হাদীস বর্ণনা ও এর উপর আমল করতে রাসূল ( সা: ) নিষেধ করেছেন । এ পর্যায়ে জনগনের অবগতির লক্ষ্যে উদাহরণস্বরূপ বক্ষমান প্রবন্ধে পাঁচটি জাল হাদীস নিয়ে পর্যালোচিত হচ্ছে । আলোচিত পাঁচটি হাদীস জাল হওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববরেন্য ওলামায়ে মুহাদ্দেসীন ঐক্যমত পোষণ করেছেন । নিম্নে তা ধারাবাহিকভাবে আলোচিত হলো ।
দ্বিতীয় হাদীস :
اول ما خلق الله نورى 
অনুবাদ : সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন ।
হাদীসটির মতন :
হযরত জাবির (রা: ) রাসূল ( সা: ) কে প্রশ্ন করলেন : আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেন ? উত্তরে রাসূল ( সা: ) বলেন : اول ما خلق الله نورى অর্থাৎ-সর্ব প্রথম 
আল্লাহ তায়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন । এরপর এই সূদীর্ঘ হাদীসে উল্লেখিত
হয়েছে যে, অত:পর এই নূরকে বিভিন্নভাগে ভাগ করে তা থেকে আরশ-কুরছি, লাওহ-কলম, ফেরেশ্তা , জ্বিন , ইনসান , আসমান-যমীন এবং সমগ্র বিশ্বকে সৃষ্টি করা হয় ।
পর্যালোচনা :
বিশ্ববরেন্য মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাপারে ঐক্যৈমত পোষণ করেছেন যে, আলোচ্য হাদীসটি প্রাচীন যুগের কোন ছহীহ হাদীস গ্রন্থে পাওয়া যায় না । আলোচ্য হাদীসটি 
ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা । 
কেউ কেউ দাবী করেছেন : হাদীসটি ইমাম বায়হাক্বী ও আব্দুর রাজ্জাক সানআনী তাঁদের সংকলিত হাদীসগ্রন্থে সংকলন করেছেন । কিন্তু তাদের এই দাবী ভিত্তিহীন । 
কারণ ইমাম বাইহাক্বী ও আব্দুর রাজ্জাক সানআনীর কোন গ্রন্থেই এই হাদীসটি নেই ।
এমনকি মাওযু বা মিথ্যা সনদেও এই হাদীসটি কোন হাদীস গ্রন্থে সংকলিত হয়নি ।
রাসূল ( সা: ) এর যুগ থেকে পরবর্তী পাঁচশত বছর পর্যন্ত কেউ এ হাদীস জানতেন না ।
যতটুকু জানা যায় , হিজরীর ৭ম শতকের প্রসিদ্ধ আলিম মহিউদ্দিন ইবনু আরাবী ও আবুবকর মুহাম্মাদ ইবনু আলী তাঈ হাতেমী ( ৫৬০-৬৩৮ ) সর্বপ্রথম এই কথাগুলো হাদীস হিসেবে চালিয়ে দেন । ইবনু আরাবী তার রচিত গ্রন্থে অগণিত জাল হাদীস উল্লেখ করেছেন । পরবর্তীযুগের মুহাদ্দিস মুজাদ্দিদ আলফেসানীসহ বিশ্ববরেন্য ওলামায়ে কিরাম ইবনু আরাবীর এ সকল জাল ও ভিত্তিহীন বর্ণনার প্রতিবাদ করেছেন ।
উল্লেখ্য যে, সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত , আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন । নিম্নে সে সহীহ হাদীসটি আলোচিত হলো ।
عن عبادة بن الصا مت ( رض ) قا ل : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ان ا و ل ما خلق الله القلم ،
فقا ل له اكتب ، فقا ل : ما اكتب ؟ قا ل : اكتب القد ر ، فكتب ما كان هو كائن الى الابد - ( رواه الترمذى – رقم الحديث = 2081) 
অনুবাদ : উবাদাহ ইবনু ছামিত ( রা: ) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন । অত:পর তিনি কলমকে বললেন : লিখ । কলম বললো : কি লিখবো ? আল্লাহ বললেন : মানূষের তাক্বদীর লিখ । সুতরাং যা ছিল এবং শেষাবধি যা ঘটবে , তা সে লিখলো । 
(
তথ্যসূত্র : তিরমিজি= হাদীস নং- ২০৮১ ) 
আলোচ্য সহীহ হাদীসটি দ্বারা প্রমানিত হলো যে, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন । সুতরাং সর্বপ্রথম রাসূল ( সা: ) এর নূর সৃষ্টি করার বানোয়াট ও মিথ্যা হাদীসটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য হবে ।
তৃতীয় হাদীস :
اطلبوا العلم ولو كان بالصين 
অনুবাদ: চীন দেশে গিয়ে হলেও তোমরা জ্ঞান অন্বেষণ করো ।
হাদীসটির সনদসূত্র :
কয়েকটি সূত্রধরে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে ।
১ম সূত্র :
হাসান ইবনু আতিয়া আবু আতিকা তুরায়ীফ ইবনু সুলায়মান সূত্রে বর্ণনা করেছেন । 
দ্বিতীয় সূত্র : ইয়াকুব ইবনু ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আসকালানীর সূত্র ধরে আব্দুল বার বর্ণনা করেছেন । 
তৃতীয় সূত্র : আহমদ ইবনু আব্দুল্লাহ যুওয়াবারীর সূত্র ধরে বর্ণনা করেছেন ।
হাদীসটির তথ্যসূত্র :
ইবনু আদি রচিত আলকামিল ” ( ১/ ২৯২ পৃষ্ঠা ) । 
আল্লামা ইবনু জাওযী রচিত আলমাউযুআত ” ( ১ / ১৫৪ পৃষ্ঠা ) 
আলামা সাখাবী রচিত আলমাক্বাসিদ ” ( ৮৩ পৃষ্ঠা ) 
আল্লামা যারকানী রচিত ( মুখতাসারুল মাক্বাসিদ -৬১ পৃষ্ঠা ) 
আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী রচিত ( সিলসিলাতুজ জ্বায়ীফা -১ / ৩০০ পৃষ্ঠা
হাদীসটি নিয়ে পর্যালোচনা :
অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ আলোচ্য হাদীসকে জাল হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন । 
সনদ বিচারে দেখা যায় তিনজন অত্যন্ত দূর্বল রাবী , যারা মিথ্যা বর্ণনার সাথে অভিযুক্ত, শুধুমাত্র এরাই হাদীসটিকে রাসূল ( সা: ) এর কথা হিসেবে প্রচার করেছেন । 
এপর্যায়ে আল্লামা ইবনু আদ্দি বলেন : كا ن با لصين ولو- অর্থাৎ-চীন দেশে গিয়ে হলেও কথাটি হাসান ইবনু আতিয়া সংযোজন করেছেন । ইমাম হাকিম নিশাপুরী এবং আল্লামা আলখতীবও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন ।
আলোচ্য হাদীসে আবু আতিকা নামে রাবীটি সকলের ঐক্যমতে দূর্বল এবং জাল
হাদীস বর্ণনাকারী রাবী ।
দ্বিতীয় সনদে উল্লেখিত ইয়াকুব এবং আব্দুল বার সম্পর্কে ইমাম আযযাহাবীসহ 
খ্যাতনামা মুহাদ্দেসীনে কেরাম বলেছেন : তারা উভয়ে মিথ্যুক ও জাল হাদীস বর্ণনাকারী ।
তৃতীয় সনদে উল্লেখিত যুওয়াইবারী সম্পর্কে আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়ূতী ( রহ) বলেছেন : যুওয়াইবারী হাদীস জালকারী রাবী ।
চতুর্থ হাদীস :
اصحا بى كا لنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم
অনুবাদ : আমার সাহাবাগণ নক্ষত্রের ন্যায় ; তোমরা তাদের যে কোন একজনের 
অনুসরণ করলে সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে ।
আলোচ্য হাদীসটি সিহাহ্ সিত্তাহতো দূরের কথা, কোন প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ নেই । হাদীসটির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যেক সনদেরই একাধিক রাবী জাল, দূর্বল ও মিথ্যূক বলে অভিযুক্ত ।
তথ্যসূত্র :
ইবনু আব্দুল বার জামিউল ইলম ” ( ২ / ৯১ পৃষ্ঠা ) 
ইবনু হাযেম ( আল আহকাম- ৬ / ৮২ পৃষ্ঠা ) 
সালাম ইবনু সুলাইম সূত্রে হারেস ইবনু হুসাইন হতে , তিনি আবু সুফিয়ান হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন । 
পর্যালোচনা :
আল্লামা ইবনু আব্দুল বার হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন : এ সনদটি 
দ্বারা দলিল সাব্যস্ত হয় না ; কারণ এই সনদের বর্ণনাকারী হারিস ইবনু গোসাইন অজ্ঞাত ব্যক্তি । 
আল্লামা ইবনু হাযম (রহ: ) বলেন : এ বর্ণনাটি নিম্ন পর্যায়ের । তাতে আবুসুফিয়ান নামক জনৈক ব্যক্তি রয়েছে , তিনি দূর্বল । আর হারিস ইবনু হোসাইন অজ্ঞাত ব্যক্তি । আর সালাম ইবনু সুলাইম কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন । এটি নি:সিন্দেহে সেগুলোর একটি । 
 
আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী ( রহ: ) বলেন : সালাম ইবনু সুলাইমের দূর্বলতার ব্যাপারে সমস্ত মুহাদ্দিস একমত । এমনকি তার সম্পর্কে খাররাশ
(
রহ: ) বলেন- তিনি মিথ্যুক । 
আল্লামা ইবনু হিব্বান বলেন : তিনি কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন ।
পঞ্চম হাদীস :
نوم العا لم خير من عبا دة الجاهل
অনুবাদ: মূর্খের ইবাদতের চেয়ে আলেমের ঘুম উত্তম ।
পর্যালোচনা : 
হাদীসটি জাল । সহীহ্ , জয়ীফ বা মাউযু কোন সনদেই একথাটির কোন অস্থিত্ব নেই ।
আহবান :

আমল কবুল হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হচ্ছে আমলটি অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহর মাপকাঠিতে সঠিক হতে হবে । জাল হাদীসের উপর আমল বা বিশ্বাস করলে সেটি ছুওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ অবধারিত হবে । তাই আমাদেরকে
অবশ্যই জাল হাদীসের প্রচার ও আমল করা থেকে বিরত থকতে হবে । আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জাল হাদীসের প্রচার ও আমল করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন । -আমীন 
                                     (প্রচারে শাহাজাহান আলী)
বিনীত নিবেদক 
আল্লাহর গোলাম
মো: ইসহাক মিয়া
সহকারী অধ্যাপক ( কামিল হাদীস বিভাগ )
বিজুল দারুল হুদা কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা 
বিরামপুর , দিনাজপুর ।

হিজরা কি পিতার সম্পত্তির অংশীদার হবে এবং তাদের কাফনের বিধান কেমন হবে ?

সর্বনাশা নেশা হারাম

সর্বনাশা নেশা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য তথা জর্দা, গুল ও তামাকপাতা ইত্যাদি সেবন প্রসঙ্গে শরীয়ার বিধান :
ভূমিকা :
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা । তিনি মানুষের ভোগের জন্য অসংখ্য বস্তু সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্যে যা মানুষের জন্য কল্যাণকর , তা হালাল করেছেন । আর যা অকল্যাণকর, তা হারাম করে দিয়েছেন । হারাম বস্তুর মধ্যে রয়েছে যাবতীয় নেশা জাতীয় দ্রব্য । যেমন- মাদক দ্রব্য, ধূমপান, তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য তথা জর্দাখৈনী , গুল ইত্যাদি ।
নেশা কী ?
নেশা শব্দের আভিধানিক অর্থ- আসক্তি বা উন্মত্ততা ।
পারিভাষিক সংজ্ঞা :
যে সব বস্তু গ্রহণের ফলে নেশার সৃষ্টি হয়, সুনির্দিষ্ট সময় পর তা পুনরায় সেবনের দুর্বিনীত আসক্তি অনুভূত হয় এবং কেবল সেবন দ্বারাই সে তীব্র আসক্তি সাময়িকভাবে দূরীভূত হয়, তাকে নেশা বলে ।
নেশা জাতীয় বস্তুর বৈশিষ্ট্য :
০১. দ্রব্যটি শরীরে গ্রহণের ফলে আচরণগত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় ।
০২. কম-বেশি নিয়মিত গ্রহণ করার দূর্দমনীয় আকাঙখা সৃষ্টি হয় ।
০৩. এর সৃষ্ট ফল পাবার মানসিক প্রলোভন সৃষ্টি হয় ।
০৪. শরীরে তার অনুপস্থিতি জনিত অস্থিরতা সৃষ্টি হয় ।
০৫. শরীরে টলারেন্স তথা নেশা ও মাদকদ্রব্য সহ্য করার মতো ক্ষমতা গড়ে ওঠে ।
০৬. একাধিক নেশা বা মাদক দ্রব্যের প্রতি আসক্তি সৃষ্টির প্রবনতা সৃষ্টি হয় ।
উপরোক্ত বিষয়গুলো যেমন হেরোইন ,মদ, গাঁজা ও আফিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনিভাবে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের ফলেও একই বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় । সুতরাং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নেশা এবং ইসলামী শরীয়াতে তা হারাম ।
স্বাস্থ্যগত দৃষ্টিকোণ থেকে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব :
ধূমপান বিষ পান । একথাটি দিবালোকের মতো সত্য । কারণ, এতে থাকে নিকোটিন জাতীয় বিষ, যা ধীরে ধীরে মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে । আর জেনে শুনে ধূমপান করা আত্মহত্যারই শামিল । ধূমপানের কারণে মানব শরীরে শাসকষ্ট , নিউমোনিয়া , ব্রংকাইটিস , যক্ষ্ণা, ফুসফুসে ক্যান্সার, গ্যাসট্রিক, আলসার, ক্ষুদামন্দা, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ প্রভৃতি মারাত্মক রোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অকাল মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার কারণ হতে পারে এবং ধূমপায়ীর সংস্পর্শে নর-নারী , শিশু-কিশোর , যুবক-বৃদ্ধ মোটকথা- আবালবৃদ্ধবনিতা যেই আসে , সেও পরোক্ষভাবে এসব রোগে আক্রান্ত হয় । আমাদের দেশে ৩৫% শতাংশ নর-নারী ও শিশু পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হয় । 
মানব দেহের জন্য ধূমপান একটি মারাত্মক বিষ । ধূমপানের বিষ ক্রিয়া তিলে তিলে মানুষকে পঙ্গু করে দেয় । সমাজ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ধূমপানকে একটি ঘাতক নেশা বলে অভিহিত করেছেন । ধুমপান হচ্ছে সকল নেশার জননী । ধূমপানের মাধ্যমে মানুষ প্রথম নেশার অভিজ্ঞতা লাভ করত: নেশার জগতে প্রবেশ করে । কাজেই জাতিকে ভয়াবহ নেশার আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে হলে প্রথমে বন্ধ করতে হবে ধূমপান । 
তামাক পাতার মধ্যে কোন ওষধি গুণ নেই । এর পুরোটাই বিষ । এটি হলো সর্বনাশা মরণ নেশা ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে মানুষ নিজের অজান্তেই এই ঘাতক নেশার শিকলে বন্দি হয়ে থাকে । এর ফলে সারা বিশ্বে প্রতিদিন নানারোগে , বিশেষ করে ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস , হাঁপানী ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে । ধূমপানের নিকোটিন বিষে যখন ধূমপায়ীরা আক্রান্ত হচ্ছে, তখন অধূমপায়ীরাও ধূমপায়ীদের পরিবেশে বসবাস করার কারণে পরোক্ষভাবে ধূমপানজনিত নানা ব্যধির শিকার হচ্ছে । মানব শরীরে নিকোটিন বিষ একবার প্রবেশ করলে ধূমপান ত্যাগের পরও এর বিষক্রিয়া ২০ বছর পর্যন্ত রক্তে বিদ্যমান থাকে । এর বিষক্রিয়ার কারণে পৃথিবীতে প্রতিদিন 
অসংখ্য বিকলাঙ্গ ও পঙ্গু শিশুর জন্ম হচ্ছে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন । এভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পৃথিবীতে আসার আগেই তাদের পিতা-মাতার ধূমপানের কুঅভ্যাসটির শিকারে পরিনত হচ্ছে ।
তামাকুর পাতা থেকেই বিড়ি-সিগারেট , জর্দা, গুল ইত্যাদি তৈরী করা হয় । তামাকুর পাতায় নিকোটিন নামক ঘাতক বিষ আছে বলেই এর পাতা পশু- পাখী তথা- গরু, ছাগল , পাখি ইত্যাদি খায় না । এমনকি এর ধারে কাছেও যায় না । অথচ সৃষ্টির সেরা মানুষ সেই প্রাণ নাশক বিষ গ্রহণ করে নিজের অজান্তে নিজেকে আত্ম হত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে ।
ধূমপান সকল নেশার জননী :
ধূমপান বিষ পান । এ কথাটি এখন প্রবাদ বাক্যের মতই সত:সিদ্ধ । ধূমপানের মধ্যে এমন কোন গুণ নেই যা মানব শরীরের পক্ষে হিতকর । ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ধূমপায়ী- অধূমপায়ী সকলই এখন সম্যক অভহিত । তারা সবাই জানে এটি একটি বিষ মারাত্মক নেশা । পূর্বেই বলা হয়েছে- ধূমপান সকল নেশার জননী । কারণ, যে কোন ধরণের মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তির সূত্রপাত ঘটে ধূমপানের মাধ্যমে । ধূমপানের দ্বারাই যাত্রা শুরু হয় মাদক সাম্রাজ্যের বিস্তৃত পথে । গবেষণা থেকে জানা যায়, যারা মাদকাসক্ত , তারা প্রথমে ধূমপানের মাধ্যমেই নেশার পথে পা বাড়িয়ে থাকে । 
এক হাজার মাদকাসক্তের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে , নয়শত ছিয়ানব্বই জনই ধূমপানে অভ্যস্ত হওয়ার পর আরো অধিক নেশার অভিজ্ঞতা লাভের প্রত্যাশায় তারা হিরোইন বা ফিনসিডিল জাতীয় মাদক দ্রব্যের প্রতি আসক্ত হয়েছে । শূধু হিরোইন বা ফিনসিডিল আসক্তিই নয়, এমন একজন মদ্যপায়ীও পাওয়া যাবে না , যে ধূমপান করে না । ধূমপানের মাধ্যমে অন্যান্য নেশার জন্ম হয় বলেই ধূমপানকে বলা হয় সকল নেশার জননী । 
ধূমপানের ক্ষতি ও ভয়াবহতা সন্বন্ধে জেনেও যারা ধূমপান থেকে কিছুতেই নিবৃত্ত হয় না , এর কারণ নেশার প্রতি আসক্তি । নেশা এমন এক ভয়াবহ জিনিস , একবার কেউ এর খপ্পরে পড়লে তার আর উদ্ধার নেই । যারাই ধূমপান নামক নেশার এ অক্টোপাসের কবলে পড়েছে , তারা শত চেষ্টা করেও এর কবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না । তাদের জীবন এক হিংস্র দানবের অদৃশ্য শিকলে বাঁধা পড়েছে । 
ধূমপায়ীদের কাছ থেকে জানা যায় , জীবনে তারা বহুবার শপথ করেছে ধূমপান ত্যাগ করার জন্য , কিন্তু যতবারই শপথ করেছে ততবারই শপথ ভাঙতে হয়েছে । পুনরায় তাকে ধূমপান করতে হয়েছে । এটি যেমন ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে সত্য, তেমনি যারা তামাক চিবিয়ে খায় , কিংবা তামাক পাতাকে জর্দা খৈনী ও গুল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে, তারা সবাই নিকোটিন বিষ নামক নেশার শিকলে বন্দি । 
নেশাখোরের আর একটা বড় দোষ হচ্ছে মিথ্যে বলার প্রবনতা । যারা ধূমপান করে , জর্দা খৈনী বা অন্য কোন উপায়ে তামাক পাতা খায় , তারা কিছুতেই এই বদ অভ্যাসটাকে নেশা বলতে রাজি নয় । অথচ এটা যে ক্ষতিকর তা এক বাক্যে সবাই স্বীকার করে । যখনই ছেড়ে দিতে বলা হয় , তখনই বলে- চেষ্টা করেও ছাড়তে পারছিনে । চেষ্টা করেও ছাড়তে না পারাটাই হচ্ছে, নেশা বা আসক্তি । তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যে নেশা বা আসক্তির সবগুলো দোষই বিদ্যমান আছে ।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাব :
০১. যারা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত , তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পুনরায় তা গ্রহণের জন্য দূর্দমনীয় আকাঙখা অনুভব করে থাকে । এমনকি কোন ধূমপায়ী ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি হাতের কাছে বিড়ি-সিগারেট না পায় , তবে বহুদূর পথ হেটে গিয়ে হলেও কোন দোকান বা বাজার থেকে তাকে এটি সংগ্রহ করতে হয় । তার শারীরিক আচরণগত প্রতিক্রিয়ার মধ্যে আরো লক্ষ্য করা যায় যে, অন্তত: দুএকদিন তাকে ধূমপান বা তামাক গ্রহণ থেকে বিরত রাখা হলে তার কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় । এ অবস্থায় ধূমপায়ী ব্যক্তিরা পায়খানায় বসে ধূমপান করে থাকে, নইলে পায়খানায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় । আর এ জন্য পাবলিক টয়লেটগুলোতে প্রচুর পরিমাণ বিড়ি সিগারেটের অবশিষ্টাংশ পড়ে থাকতে দেখা যায় । 
০২. ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনে যারা অভ্যস্ত , তাদের শরীরে একটি বৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় । যেমন- এক ব্যক্তি দুঘন্টা পর পর সিগারেট খেতে অভ্যস্ত হলে ঠিক দঘন্টা পর তার রক্তে এমন একটি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে যে , যে কোন জরুরী কাজ ফেলে রেখে হলেও তাকে রক্তে প্রতিক্রিয়াজাত দূর্দমনীয় আকাঙখা নিবৃত্তির জন্য ধূমপান বা তামাক সেবন করতে হয় । পুনরায় ধূমপান বা তামাক সেবন না করা পর্যন্ত রক্তে সৃষ্ট এ আকাঙখা কিছুতেই নিবৃত্ত হয় না ।
০৩. ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনে শরীরে এক ধরণের মাদকতা বা পুলকানুভূতি সৃষ্টি হয় । যে কারণে ধূমপায়ী বা তামাক সেবীরা ধূমপান বা তামাক সেবনের পর পরই সাময়িক কর্মস্পৃহা লাভ করে । এ জন্যই দেখা যায় , অনেক ধূমপায়ী কোন জটিল কাজ সমাধা করার জন্য একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছে । মূলত: ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যে নেশা আছে বলেই রক্তে এ ধরণের প্রলোভন সৃষ্টি করে । আর এ নেশা থাকার কারণে ইসলামী শরীয়াতে উহা হারাম ঘোষিত হয়েছে । 
০৪. মাদক ও তামাকজাত দ্রব্যের আর একটি দিক হলো বর্জনজনিত মানসিক অস্থিরতা । কোন ধূমপায়ীকে যদি কোন কারণে ধূমপান থেকে বিরত রাখা হয় , তবে তার মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ধূমপান না করা পর্যন্ত মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয় । 
০৫. একজন হেরোইনখোর যেমন হেরোইন নামক নেশাটির কাছে জিম্মি, একজন ধূমপায়ী বা জর্দাখৈনীতে অভ্যস্ত ব্যক্তি তেমনি তামাক নামক নিকোটিন নেশাটির কাছে জিম্মি । একবার অভ্যস্ত হওয়ার কারণে বশংবদ কৃতদাসের মতো হেরোইনখোর বা ধূমপায়ীকেও তার প্রিয় নেশাটি পুনরায় গ্রহণ করতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে । এ ক্ষেত্রে নেশায় অভ্যস্ত ব্যক্তিটির স্বাধীন সত্ত্বা বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না, যেন নেশা দ্রব্যটিই তাকে ড্রাইভারের মতো পরিচালিত করে
০৬. ক্রমাগত ব্যবহারে মাত্রা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা যে কোন নেশা জাতীয় দ্রব্যের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য । গাঁজাখোর যেমন কল্কিতে প্রথমে একটান দিয়ে অভ্যস্ত হয় , ধূমপান বা জর্দা তামাকের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় না , ধূমপান বা তামাকের চূড়ান্ত তৃপ্তির জন্য এর মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয় ।
০৭. নেশাখোরের কোন নীতি নৈতিকতা থাকে না । নেশার দ্রব্যটি ছাড়া যেহেতু তার চলে না , তাই যে কোন অসদোপায়ে হলেও তাকে এটি সংগ্রহ করতে হয় । দরিদ্র ও অশিক্ষিত জনগোষ্ঠির মধ্যে যারা ধূমপানে অভ্যস্ত , তাদের মধ্যে বেশির ভাগেই ধূমপানের নেশা মেটানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই অসদোপায় অবলন্বন করে থাকে । একদিন এ বদঅভ্যাস তাকে চৌর্যবৃত্তিতে পর্যন্ত ধাবিত করে । এক জরিপে দেখা গেছে , দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে যারা চৌর্যবৃত্তির সাথে জড়িত , তাদের প্রায় শতকরা ৯২জন ধূমপায়ী ।
তাছাড়া যাদের নৈতিকতার মান কিছুটা কম , তারা শিক্ষিত হলেও দেখা যায়, তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে এক প্যাকেট সিগারেট ঘুষ পেয়ে কোন কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই তৃপ্তির সাথে রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পদ বিলিয়ে দিতেও কার্পন্য করেন না ।
০৮. যে কোন মাদক ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য হলো- এর প্রতিক্রিয়ার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্ভরতা বৃদ্ধি পায় । ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই । ধূমপান বা জর্দাখৈনীতে অভ্যস্ত ব্যক্তির এ নেশা দ্রব্যটির প্রতি এমন নির্ভরতা বৃদ্ধি পায় যে, একে পাওয়ার জন্য সে মরিয়া হয়ে ওঠে । নির্ধারিত সময়ে না পেলে অস্থিরতা ও অসস্থিবোধ করে । 
বিশেষ করে জর্দা ও সরাসরি তামাক পাতা চিবিয়ে খাওয়ায় অভ্যস্ত ব্যক্তির পাকস্থলিতে এক ধরণের তীব্র প্রতিক্রিয়া অনুভব করে । এ কারণে মুখে ঘন ঘন আঠালো লালা উঠে আসে, ফলে তাকে ঘনঘন থুতু ফেলতে হয় । এক পর্যায়ে অস্থিরতা এমন পর্যায়ে বৃদ্ধি পায় যে, সে এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না, ছটফট করতে শুরু করে ।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যে নিকোটিন বিষের মাত্রা :
তামাকে যে বিষ থাকে এর নাম হচ্ছে নিকোটিন । নিকোটিন এক ধরণের জৈব রাসায়নিক পদার্থ । আলোচ্চ নিকোটিনের রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে : C10 H14 N2 - অর্থাৎ- নিকোটিনে আছে কার্বনের দশটি পরমাণু , হাইড্রোজেনের চৌদ্দটি পরমাণু ও নাইট্রোজেনের দুটি পরমাণু থাকে । এটি একটি বর্ণহীন তৈলাক্ত ও এ্যালকালয়েড পদার্থ ।
ক্ষেত্র বিশেষে তামাকের বিষক্রিয়া আফিম ও কোকেনের চেয়েও মারাত্মক । তামাকে নিকোটিনের বিষের পরিমাণ ০.৫ থেকে ০৮ শতাংশ । দশ শলার এক প্যাকেট সিগারেটে থাকে ২৫ মিলিগ্রাম নিকোটিন । এ পরিমাণ নিকোটিন ইন্জেক্সন হিসেবে ব্যবহার করা হলে যে কোন সুস্থ্য ব্যক্তি কয়েক মিনিটের মধ্যে বিষ ক্রিয়ার অনিবার্য পরিনতিতে মৃত্যর কোলে ঢলে পড়বে । তবে এক প্যাকেট সিগারেট ধূমপানে কেউ সাথে সাথে মারা যায় না । এর কারণ, সিগারেটের ধোঁয়ায় মিশ্রিত নিকোটিনের ৬ শতাংশ রক্তে শোধিত হয় , অবশিষ্ট নিকোটিন বাতাসে ভেসে যায়

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে যে সব রোগ ব্যাধির উৎপত্তি হয় :
পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, মানবদেহের জন্য তামাক একটি মারাত্মক বিষ । এই বিষ তিলে তিলে মানব জীবনকে পঙ্গু করে দেয় । তাই সমাজতাত্ত্বিক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ধূমপানকে একটি ঘাতক নেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন । পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে যে, তামাকের নিকোটিন নামক বিষ একবার মানব দেহে প্রবেশ করলে এ বিষের ক্রিয়া ধূমপান ত্যাগ করার পরও ২০ বছর পর্যন্ত রক্তে এ বিষের অস্তিত্ব থেকে যায় ।
পূর্বেই আলোচিত হয়েছে নিকোটিনের ধোঁয়া মানব শরীরে দু ভাবে প্রবেশ করে । 
০১. যে নিজে ধূমপান করে, সে নিজেই তার শরীরে নিকোটিন বিষ গ্রহণ করে । 
০২ . যে নিজে ধূমপান করে না , কিন্তু ধূমপায়ীদের নাগালের মধ্যে থাকার কারণে পরোক্ষভাবে অন্যের ত্যাগ করা ধোঁয়া বাতাসের মাধ্যমে সে পান করে । এ ভাবে অধূমপায়ীদের শরীরে নিকোটিন বিষ প্রবেশ করে । ধূমপান বা নিকোটিন বিষের প্রতিক্রিয়ায় পৃথিবীতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ নানা রোগের শিকার হচ্ছে । নিজের অজান্তেই অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে । কেউ কেউ স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদী অসুখে ভুগছে । ধূমপানের কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যে সব রোগ ব্যাধি হয় , চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের হাতে তার সুদীর্ঘ তালিকা রয়েছে । ধূমপানের কারণে যে সব রোগ হয় এবং যে সব রোগকে প্রভাবিত করে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যথাক্রমে :
০১. ফুসফুসে ক্যান্সার 
০২. মলাশয়ের ক্যান্সার 
০৩. মূত্রথলির ক্যান্সার 
০৪. মুখের ক্যান্সার 
০৫ . ঠোঁট, ঝিল্লি ও জিহবার ক্যান্সার 
০৬. গলনালীর ক্যান্সার 
০৭. হৃদরোগ 
০৮. ব্রেইন স্ট্রোক 
০৯ . উচ্চ রক্তচাপ 
১০. ব্রংকাইটিস
১১. প্যারালাইসিস 
১২. শ্বাস কষ্ট 
১৩. টিটোনাস 
১৪. হাঁপানী বা একজিমা 
১৫. লিভার সিরোসিস 
১৬. সর্দি- কাশি 
১৭. শরীরে বিষ ক্রিয়া সৃষ্টি 
১৮. বার্জাজ ডিজিজ 
১৯. গ্যাংরিন 
২০ . ডায়াবেটিস 
২১. শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া 
২২. চক্ষু রোগ ও দৃষ্টিশক্তি হীনতা 
২৩. কানের পীড়া 
২৪. শুক্রানুর কুপ্রভাব 
২৫. যৌণ অক্ষমতা 
২৬. চর্মরোগ ও আলসার 
২৭. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস ও মস্তিষ্ক বিকৃতি 
২৮. স্মৃতি শক্তি হ্রাস 
২৯. জন্ডিস 
৩০. জীবনী শক্তি হ্রাস ও ধ্বংস 
৩১. বার্ধক্য তরান্বিত করণ 
৩২. মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার 
৩৩. জরায়ূ ক্যান্সার 
৩৪. গর্ভাবস্থায় ভ্রণের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি 
৩৫. বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম
এ ছাড়াও নানা ধরণের ব্যাধি ধূমপানের কারণে হয়ে থাকে ।
ধূমপানের কারণে সৃষ্ট এ সব রোগ ব্যাধির উপর বিশ্বব্যাপী ব্যাপক গবেষণা হয়েছে । চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন : মানব সমাজ থেকে ধূমপান উচ্ছেদই হচ্ছে এসব রোগ নিরাময়ের উপায় ।
বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে এসব রোগ ব্যাধি সম্পর্কে আলোচিত হলো । আলোচনায় আমরা উপলব্ধি করতে পারলাম ; ধূমপানের কারণে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা মানব জাতি কী মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখী হচ্ছে ।
পরোক্ষ ধূমপান বলতে কী বুঝায় ?
ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই হোক, কোন ধূমপায়ীর ব্যক্তির সিগারেট থেকে নি:সৃত ধোঁয়া সেবনই পরোক্ষ ধূমপান ।
পরোক্ষ ধূমপান আপনার স্বাস্থ্যের জন্য এক মারাত্মক হুমকি । যারা ধূমপান করে না , কিন্তু পথ চলতে , পাবলিক প্লেস, পাবলিক পরিবহন , হোটেল-রেস্তোরা, বিপনন কেন্দ্র , অফিস আদালত ইত্যাদি আপনার আশে পাশের , মানুষের সেবনকৃত সিগারেটের ধোঁয়ার দূষণের কারণে ধূমপায়ীদের চেয়েও বেশি ক্ষতির সন্মুখীন হন ।
বিগত কয়েক বছর গবেষণা থেকে এটা প্রমানিত হয়েছে যে, পরোক্ষ ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক অসুস্থতাসহ বহুবিধ সমস্যা সৃষ্টি করে ।
পরোক্ষ ধূমপানে পারিবারিক ক্ষতি :
বাড়িতে স্ত্রী এবং অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলে- মেয়েদের সামনে অনেকেই ধূম পান করে । বাড়ির পরিবেশে ছোট ছেলে- মেয়েরা পরোক্ষ ধুমপানের মাধ্যমে সবচাইতে বেশি ঝুঁকির সন্মুখীন হয় । এদের বাড়ন্ত ফুসফুস বিশেষভাবে রোগাক্রমনের শিকার হয় । অধূমপায়ী পিতা-মাতার সন্তানদের সাথে ধূমপায়ী পিতা-মাতার সন্তানদের তুলনা করে একটি সমীক্ষায় তা প্রমানিত হয়েছে । যে ঘরে ছোট শিশু ঘুমাচ্ছে বা খেলছে, জানালা বন্ধ, বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, অথবা শোবার আগে আপনি সিগারেট জ্বালিয়ে ধূমপান করছেন , ধুম্রজাল ছড়াচ্ছে সারা ঘরে । নিষ্পাপ কচি শিশুটি প্রতি নি:শ্বাসে বিষাক্ত ধোঁয়া নিচ্ছে ফুসফুসের ভেতরে । অসহ্য হলেও সে প্রতিবাদ করতে পারছে না । আপনি নিজের অজান্তে নিরব ঘাতকের ভূমিকা নিয়ে সেই কচি কোমলমতি শিশুটির জীবন বিপন্ন করে দিচ্ছেন । আপনি জালিম, আপনি মহা অপরাধী । অন্য বাচ্চাদের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয় এ বাচ্চারা । একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক ব্যক্তি ধূমপানের কারণে যতখানি ক্ষতি গ্রস্থ হয় , শুধু ঐ ঘরে সিগারেটের সন্নিবেশিত ধোঁয়াতে তার দ্বিগূণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
পরোক্ষ ধুমপানে সামাজিক ক্ষতি :
অফিস, কোম্পানী , ফ্যাক্টরী, পাবলিক প্লেস, পাবলিক পরিবহন , হোটেল, ক্লিনিক বা হাসপাতাল, বিপনী ইত্যাদি স্থানে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ পরিবেশ বহাল রাখার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের । এ সব স্থানে কেউ ধূমপান করলে স্বাস্থ্যের জন্য হবে ঝুঁকিপূর্ণ , তেমনি হবে আইন ভঙ্গের শামিল ।
বাংলাদেশসহ এ পর্যন্ত ৮৩টি দেশে পাবলিক প্লেস ও যাবাহনে ধূমপানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে ।
বাস বা ট্রেনে লক্ষ্য করা যায়, অনেক যাত্রী এমনকি বাসের ড্রাইভার ও সুপার ভাইজার পর্যন্ত অবাধে ধূমপান করে থাকে অথচ বহু বাসের ভেতরে লেখা থাকে ধূমপান নিষেধ কিন্তু কার্যত: এটা কেউ মানে না । বাসে ধূমপানের জন্য আলাদা আসন রাখাও নিরর্থক । কারণ, সিগারেটের ধোঁয়া বাসে সমাসীন সকলকেই গ্রাস করে । এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে যান বাহনের ভেতরে কাউকে ধূমপান করতে না দেওয়া ।
কিছু ধূমপায়ী ব্যক্তি কান্ডজ্ঞানহীনভাবে যাবাহন, হোটেল রেস্তোরা ও পাবলিক প্লেসে নির্বিবাদে ধূমপান করে থাকে । তারা তাদের বিবেক দিয়ে এ কথাটি একবার ও চিন্তা করে দেখে না যে, তার ধূমপানের দ্বারা অধূমপায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে । তাকে নিষেধ করলে সে ধূমপান বন্ধ না করে পাল্টা ধমকের সুরে রাফ ভাষায় ভৎর্সনা করে থাকে । তারা ভৎসনার ভাষায় বলে : আপনি এত ভদ্রলোক পালিক পরিবহনে উঠেছেন কেন ? প্রাইভেট বা রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করতে পারেন না ? তাদেরকে আইনের কথা বললে , পাল্টা চড়াও হয়ে বলে : রাখুন আপনার ওসব আইন গায়েন । আইন কয়জন মেনে চলে । ধূমপায়দের এসব শিষ্টাচার বর্জিত ও অমানবিক আচরণ দ্বারা এ কথা প্রমানিত হয় যে, নেশাখোরদের বিবেক, নৈতিকতা , মানবিক মূল্যবোধ , ধর্মীয় মূল্যবোধ, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ,বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রভৃতি মানবিক গুনাবলী শুন্য হয়ে যায় । আসলে কেন জানি আমাদের মাঝ থেকে নৈতিক, মানবিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ কমতে কমতে জিরো কোঠায় নেমে যাচ্ছে । জাতি হিসেবে আমরা নৈতিক ও আদর্শিক দিক থেকে চরম অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছি । আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন । - আমীন
ধূমপানে আর্থিক ক্ষতি :
বিশেষজ্ঞদের সমীক্ষায় জানা গেছে, বাংলাদেশের ধূমপায়ীরা গড়ে চারকোটি স্টিক সিগারেটের ধূমপান করে । এতে ধূমপায়ীরা সিগারেট কিনতে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয় করছে । পরিসংখ্যানটিতে জানা যায়, দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ ধূমপানে অভ্যস্ত । এই চল্লিশ শতাংশের মধ্যে মাত্র আট ভাগ লোক সিগারেটের এবং বাকি ৩২ ভাগ বিড়ি ও তামাকের ধূমপায়ী । তা ছাড়া আমাদের দেশের শিল্প-কারখানা , হাট-বাজার, বাড়ি ও গ্রামাঞ্চলের শতকরা ২৫-৩০% অগ্নিকান্ডের জন্য দায়ী ধূমপানের আগুণ । ধূমপানের কারণে প্রতি বছর আমাদের দেশে কতো লাখ লোক মৃত্যু বরণ করে , তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই । কিন্তু বিশেষজ্ঞদের তথ্য থেকে জানা যায় যে, এ দেশে ক্যান্সার, হৃদরোগ ও ব্রেইন স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুর সিংহভাগ দায়ী ধূমপান । সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গেছে , বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫০ লক্ষ মানুষ ধূমপানের কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় ।
মৃত্যু ছাড়াও ধূমপানে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক । এক জরিপ তথ্যে জানা গেছে , বৃটেনের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় শ্রম ঘন্টা নষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান জনিত বিভিন্ন রোগ ।
মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রে প্রতি বছর ধূমপান জনিত রোগে উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাসের ফলে ক্ষতির পরিমাণ ১৫ থেকে ১৮ মিলিয়ন ডলার ।
বাংলাদেশে ধূমপানের ক্ষয়-ক্ষতির কোন সঠিক হিসাব না থাকলেও এটা অতি সহজে অনুমেয় যে, ধূমপান এ দেশের অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে । ধূমপানের আর্থিক ক্ষতি প্রতিদিন চোখে না পড়লেও সব মিলিয়ে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তা ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে ।
একজন বড় চাকুরে যদি প্রতিদিন গড়ে ২৫ টাকা ধূমপানের পেছনে খরচ করেন , তবে তার মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৭৫০ টাকা । অর্থাৎ- বার্ষিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার টাকা । এই ব্যক্তি যদি ৩০ বছর ধূমপান করে থাকেন, তবে তিনি এ সময়ে যতো টাকা নষ্ট করলেন এর পরিমাণ হবে বিরাট অংকের টাকা । এতগুলো টাকা একজনের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অনেক কাজ হতে পারে নি:সন্দেহে ।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এদেশের একজন শ্রমিকের ধূমপানের পেছনে গড়ে দৈনিক খরচ হয় ১০ টাকা । এই টাকা অপচয় করে প্রতিদিন সে এক পোয়া দুধ অথবা দুটো ডিম খাওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । অথচ ধূমপান মানব জীবনের জন্য কোন সুফল বয়ে আনে না, বরং সিগারেটের আগুণে তিলে তিলে জ্বলে পুড়ে নি:শেষ হয়ে যায় মানুষের জীবনী শক্তি ।
ধূমপান জনিত রোগের কারণে আমাদের দেশের কত লোক অকালে মৃত্যু বরণ করে, কত লোক গৃহ হারা হয় , কত শিল্প কারখানা তার উৎপাদন ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হয় এ সবের প্রকৃত তথ্য পোওয়া গেলে নি:সন্দেহে প্রমাণিত হবে , তামাক শিল্প একটা মারাত্মক মরনাস্ত্র । জাতির জন্য এটা মোটেই কল্যাণকর হতে পারে না ; বরঞ্চ এটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে ।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য হারাম হওয়ার ব্যাপারে শরঈ দলীল :
ক্বুরআনিক দলিল :
( ০১ নং আয়াত )
يَسْأَلُونَكَ مَاذَا أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ ــ ( سورة الماعدة ــ 4 )
অনুবাদ : লোকেরা আপনাকে জিজ্ঞেস করে : কি বস্তু তাদের জন্য হালাল করা হয়েছে ? হে নবী আপনি বলে দিন : তোমাদের জন্য তাইয়্যেবাত তথা পবিত্র ও কল্যাণকর বস্তু হালাল করা হয়েছে । ( সূরাহ আল মায়িদাহ : আয়াত নং ০৪ )

আয়াতটির ব্যাখ্যা :
আলোচ্চ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনের প্রান্ত টীকায় তাইয়্যেবাতের অর্থ করা হয়েছে : তাইয়্যেবাত হলো পবিত্র , ভাল ,পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর , তাই তাইয়্যেবাত এবং উহাই শরীয়াতে হালাল করা হয়েছে ।
আলোচ্চ আয়াতে কারীমা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের জন্য যা খারাপ ও ক্ষতিকর তা পানাহার ও সেবন শরীয়াতে বৈধ নয় । সুতরাং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য যেহেতু স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর , তাই উহা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম ।
০২ নং আয়াত :
وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ ــ ( سورة الاعراف ــ 157 ) ـــ
 
অনুবাদ : তিনি তাদের জন্য তাইয়্যেবাত তথা পবিত্র বস্তু হালাল করেন এবং খাবায়েছ তথা অপবিত্র বস্তু হারাম করেন । ( সূরাহ আরাফ : আয়াত নং ১৫৭ )
قُلْ لَا يَسْتَوِي الْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ ــ ( سورة الماعدة ــ 100 ) ـــ 
 
অনুবাদ : খাবিছ তথা হারাম এবং তাইয়্যেবাহ তথা হালাল বস্তু কখনই এক হতে পারে না । 
(
সূরাহ মায়েদাহ : আয়াত নং ১০০ )
ব্যাখ্যা :
বক্ষমান আয়াতদ্বয়ে খাবায়েছ শব্দটি খাবিছ শব্দের বহুবচন । শব্দটি তাইয়্যেবাতের বিপরীত । খাবিছ অর্থ- অপবিত্র, নোঙরা , স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সব বস্তুই খাবিছ বা খাবায়েছের অন্তর্ভূক্ত । আরবী ভাষায় প্রত্যেক খারাপ ও অনিষ্টকর বস্তুকে একবচনে খাবিছ এবং বহুবচনে খাবায়েছ বলে অভিহিত করা হয় । তাইয়্যেবাতের বিপরীত বস্তু পানাহার করা আলোচ্চ আয়াতে কারীমায় হারাম ঘোষিত হয়েছে । সুতরাং এ পর্যায়ে ওলামায়ে কিরাম একমত যে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য খাবায়েছ এর অন্তর্ভূক্ত । সুতরাং তা হারাম ।
০৩ নং আয়াত :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّه ـــ ( سورة البقرة ـ 172 )
অনুবাদ : হে ঈমান্দারগণ ! তোমাদেরকে আমি যা হালাল পবিত্র বস্তু দান করেছি, তা থেকে ভক্ষণ করো ও তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো । ( সূরাহ বাক্বারাহ : আয়াত নং- ১৭২ )
ব্যাখ্যা :
আলোচ্চ আয়াতে কারীমায় আল্লাহ তায়ালা পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করতে বলেছেন । ধূমপান যেহেতু খাবিছ তথা অপবিত্র তাই উহা হারাম ।
০৪ নং আয়াত :
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন সম্পূর্ণ অপচয় । এ পর্যায়ে ক্বুরআনুল কারীমে এরশাদ 
হয়েছে : 
 وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا ــ إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ ــ
( سورة الاسراء ــ26 ـ 27 ) ـــ 
অনুবাদ : তোমরা অপব্যয় করো না । অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই । 
(
সূরাহ বনি ঈসরাঈল : আয়াত নং- ২৬-২৭ )
ব্যাখ্যা :
ওলামায়ে কেরাম ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীদের মতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যে শারীরিক ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার নেই । উপরন্তু এটি সবার ঐক্যমতে অপব্যয় । সুতরাং তা একবাক্যে হারাম ।

০৫ নং আয়াত :
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন একটি আত্মঘাতি ও আত্মবিনাশী কর্ম , যা আত্মহত্যার শামিল । এ ধরণের কাজ করতে আলক্বুরআনে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে । 
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ـــ ( سورة البقرة ــ 195 ) ـــ
অনুবাদ : তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না ।
( সূরাহ আলবাক্বারাহ : আয়াত নং- ১৯৫ )

ব্যাখ্যা :
ধূমপায়ী ব্যক্তি ধূমপানের কারণে বহুমূখী দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে নিজের জীবনকে বিপন্ন করে । এসব রোগ-ব্যাধি ধীরে ধীরে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় । যা সরাসরি আত্মহত্যার শামিল । আর আত্ম হত্যা করতে ক্বুরআনে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে । আল্লাহ তায়ালা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন :
وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ ـــ ( سورة البقرة ـــ 29 ) ـــ 
 
অনুবাদ : তোমরা আত্ম হত্যা করো না ( সূরাহ আল বাক্বারাহ : আয়াত নং ২৯ )

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য হারাম হওয়ার ব্যাপারে হাদীস ভিত্তিক দলীল :
০১ নং হাদীস :
عن عبد الله ابن عمر ( رض ) قال : قال رسول الله ( ص ) : كل مسكر حرام ، ما اسكر كثيره فقليله حرام ـ 
( رواه ابن ماجه ، ( 3392) ـ والبيهقى ، ( 17341) ــ )
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ ইবনু উমার ( রা: ) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্যই হারাম । যা বেশি পরিমাণ সেবন করলে নেশা সৃষ্টি করে, তা স্বল্প পরিমাণ সেবন করাও হারাম । 
(
তথ্য সূত্র : সুনানু ইবনু মাজাহ : হাদীস নং- ( ৩৩৯২) : সুনানু বায়হাক্বী : হাদীস নং- ১৭৩৪১ ) 
বক্ষমান প্রবন্ধে আলোচনা দ্বারা প্রমানিত হয়েছে যে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নেশা জাতীয় বস্তু । আর রাসূল (সা: ) আলোচ্চ হাদীসে যাবতীয় নেশাকে হারাম ঘোষণা করেছেন । সুতরাং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন সন্দেহাতীভাবে হারাম ।
০২ নং হাদীস :
কেউ কেউ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনকে এই বলে বৈধতার ফতোওয়া দিয়ে থাকেন যে, তামাক গাছের অস্তিত্ব রাসূল ( সা: ) এর যামানায় ছিল না । তাঁর মৃত্যুর অনেক পরে এই তামাক গাছের আবিষ্কার হয়েছে । তাই তামাক গাছের পাতা থেকে প্রস্তুতকৃত বিড়ি-সিগারেট, জর্দাখৈনী গুল ইত্যাদি হারাম হওয়ার ব্যাপারে ব্যাপারে হাদীসে কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি । তাই উহা বৈধ । 
এর উত্তরে বলতে চাই রাসূল ( সা: ) এর মৃত্যুর পর তামাকের পাতার মতো এক প্রকার উদ্ভিদের আবিষ্কার হয় । সহীহ বুখারী ও সুনানু বায়হাক্বীতে যার নাম উল্লেখিত হয়েছে বাযাক্ব এই বাযাক্ব নামক উদ্ভিদের পাতা তামাকের পাতার মতো মানুষ বিভিন্নভাবে সেবন করতো । যা নেশার সৃষ্টি করে এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর । এই বাযাক্ব সেবনের বৈধতা সম্পর্কে রাসূল ( সা: ) এর জলিলুল কদর সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস ( রা: ) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) বাযাক্বনামক উদ্ভিদ আবিষ্কারের পূর্বেই মৃত্যু বরণ করেছেন । অতএব যে বস্তুই নেশা সৃষ্টি করে তাই হারাম । অতএব বাযাক্ব যেহেতু নেশা সৃষ্টি করে তাই উহা হারাম ।
এ পর্যায়ে হাদীস বর্ণিত হচ্ছে :
عن ابى الجويرية ( رض ) قال : سألت ابن عباس ( رض ) عن الباذق فقال : سبق محمد ( ص ) 
الباذق فما أسكر فهو حرام ـ 
( رواه البخارى ( 5598 ) ـ والبيهقى ( 17378 ) ـ
অনুবাদ : আবুল জুওয়ায়রিয়া ( রা : ) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : আমি আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস ( রা: ) কে বাযাক্বউদ্ভিদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম । তিনি উত্তরে বললেন : মুহাম্মাদ ( সা: ) বাযাক্বউদ্ভিদ আবিষ্কারের পূর্বেই মৃত্যু বরণ করেছেন । অতএব তোমরা জেনে রেখো যে বস্তুই নেশা সৃষ্টি করে তাই হারাম । ( অতএব বাযাক্ব যেহেতু নেশা সৃষ্টি করে তাই উহা হারাম । ) 
তথ্যসূত্র : সহীহ বুখারী : হাদীস নং-( ৫৫৯৮) - সূনানু বায়হাক্বী : হাদীস নং ( ১৭৩৭৮ )
উপর্যুক্ত হাদীস দ্বারা ওলামায়ে কেরাম প্রমাণ করেছেন যে, “বাযাক্বযে কারণে হাদীসে হারাম ঘোষিত হয়েছে , ঠিক একই কারণে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য হারাম হয়েছে । এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই ।
০৩ নং হাদীস :

হাদীসে কাঁচা পিয়াজ ও রসুন খেয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে :
এ পর্যায়ে হাদীস বর্ণিত হচ্ছে:
عن جابر ( رض ) قال : قال رسول الله ( ص ) من أكل من هذه الشجرة المنتنة فلا يقربن مسجدنا ، فان الملائكة تتأذى مما يتأذى منه الانس ــ
( رواه البخارى ( 854 ) : ومسلم ( 564 ) واللفظ لمسلم ــ ) 
অনুবাদ : জাবির ( রা: ) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : যে ব্যক্তি এই দূর্গন্ধময় গাছের ( কাঁচা পিয়াজ বা রসূনের ) কিছু খাবে , সে যেন আমদের মসজিদের নিকটে না আসে । কেননা এতে ফেরেস্তারা কষ্ট পান, যদ্দ্বারা মানুষ কষ্ট পায়
তথ্যসূত্র : সহীহ বুখারী : হাদীস নং- ( ৮৫৪ ) : সহীহ মুসলিম : হাদীস নং ( ৫৬৪ ) ।

ব্যাখ্যা :
কাঁচা পিয়াজ ও রসুন খাদ্য হিসেবে হালাল হওয়া সত্ত্বেও তা খেয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে । এর কারণ এর মধ্যে দূর্গন্ধ রয়েছে । যদ্দ্বারা ফেরেস্তা ও মানুষ কষ্ট পায় । এ দিকটা লক্ষ্য করে কাঁচা পিয়াজ ও রসুন খেয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে । ঠিক তেমনি ধূমপান বিদঘুটে গন্ধ ছড়ায় । ধূমপায়ী ব্যক্তি কোন ঘরে প্রবেশ করলে কিংবা সকলের সাথে মিলে মিশে চলতে গেলে অথবা জামায়াতের সাথে ছালাত আদায় করলে , তার পাশের অধূমপায়ী ব্যক্তির অবশ্যই কষ্ট হয় । অথচ ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে : কোন মুসলিম ভাইকে কষ্ট না দেওয়া । 
একজন মুসলিম আর একজন মুসলিমকে কষ্ট না দিয়ে মসজিদ ও জামায়াতের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইলে ধূমপান বর্জন করা অপরিহার্য ।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য হারাম হওয়ার ব্যাপারে ফতোওয়ার কিতাব থেকে প্রামানিকতা :
০১. ধূমপান ও ধূমপান সামগ্রী ক্রয় ও বাজারজাত করা ইসলামে নিষিদ্ধ । 
- (
ফাতোওয়ায়ে শামী : ২য় খন্ড : ১০০ পৃষ্ঠা )
০২. ধূমপান করা হারাম । - ( ফাতাওয়ায়ে মাজাহেরে হক্ব )

এ পর্যায়ে বিশ্ব ওলামায়ে কিরামের অভিমত :
বিড়ি , সিগারেটের ধূমপান ,ক্বলকি ও হুক্কার ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য সেবন সম্পর্কে অধূনা বিশ্বের ওলামায়ে কিরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, তা হারাম । কেননা এ সবের মধ্যে আর্থিক অপচয় ও শারীরিক ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার নেই । তামাকজাত দ্রব্য বলতে তামাকের পাতা , জর্দা, গুল ইত্যাদিকে বুঝায় । এটি হারাম হওয়ার কারণ হলো- ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে বহুমূখী রোগের জন্ম নেয় । চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একে নানা রোগের প্রসূতি বলে উল্লেখ করেছেন । 
বক্ষমান প্রবন্ধে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কুফল সম্পর্কে আলোচনা দ্বারাও একথা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়েছে যে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক । আর যা ইসলামে ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক তা ইসলামে হারাম ঘোষিত হয়েছে ।
ধূমপান ত্যাগ ও প্রতিরোধের উপায় :
যে কোন ধরণের নেশা ত্যাগ করা প্রথম পর্যায়ে আপনার কাছে কঠিন মনে হতে পারে । আর সে যদি হয় ধূমপানের মতো নিকোটিন জাতীয় নেশা, তবে আর তো কথাই নেই । যখনই ছেড়ে দিবেন , আপনার শরীরের রক্ত আপনাকে প্রলুব্ধ করবে ছেড়ে দেওয়া নেশাটি পুনরায় ধরার জন্য । এক এক সময় রক্তে এমন প্রতিক্রিয়া হবে যে, তখন আর আপনি কোথাও সুস্থির হয়ে বসে থাকতে পারবেন না । প্রথম দিকে মাঝে মাঝেই বর্জন জনিত প্রতিক্রিয়া স্বরূপ মুখে খুব বেশি লালা আসবে ।বমি বমি ভাব আসবে ।কাজের প্রতি কোন মনোযোগ আসবে না । জীবন অর্থহীন মনে হবে ।
যারা সকালে মেঝেতে পা দেবার আগেই সিগারেট জালান, ধূমপান তার জন্য আরও কঠিনতর হয় ।
ধূমপান ত্যাগের কয়েকটি উপায় :
০১. মনের দৃঢ়তা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ :
আপনার মনের ইচ্ছা ও ব্যক্তিত্ব যদি দৃঢ় হয়, তবে এ নেশা ছেড়ে দেওয়া তেমন কঠিন কাজ নয় । শুধু চাই আপনার মনের দৃঢ়তা ও সদেচ্ছা ।
০২. ধূমপানের ক্ষতির দিকগুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবুন :
আপনি গভীরভাবে ভাবুন , ধূমপানের কারণে আপনার শরীরের কত ক্ষতি হচ্ছে , পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, আপনার বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন সমাজের লোক আপনাকে হেয় চোখে দেখছে ।
আপনার সন্তানদের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, আপনার স্ত্রী গর্ভবতী হলে সন্তান বিকলাঙ্গ ও পঙ্গু হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে । আপনার মুখের দুর্গন্ধের কারণে মাঝে মাঝেই আপনি অফিস আদালতে পরিচিত- অপরিচিতদের কাছে ঘৃণার পাত্র হচ্ছেন । রাস্তায় বা যানবাহনে ধূমপান করলে অধূমপায়ীরা প্রথমে বিণীতভাবে ,পরে ধমকের সুরে আপনাকে ধূমপান করতে নিষেধ করছে । আপনার ধূমপানের কারণে পরোক্ষভাবে অন্যদের ক্ষতি হচ্ছে । আপনি যদি সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকেন, তবে আপনার ধূমপানের কারণে অন্যরাও ধূমপানে প্রভাবিত হচ্ছে । কাজেই এ দিকগুলো মাথায় রেখে আপনি যদি ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধন্ত গ্রহণ করেন, তবে তা এখনই ছেড়ে দেওয়া যায় । চাই শুধু আপনার সদেচ্ছা , আন্তরিকতা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ।
০৩. ধূমপান ত্যাগের জন্য একটি বিশেষ দিন ও তারিখ নির্বাচন করুন :
ধূমপানের নেশা ছাড়ার জন্য একটি বিশেষ দিন ও তারিখ নির্বাচন করা যেতে পারে । এ দিনগলো হতে পারে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোন পবিত্র দিন কিংবা ঐতিহাসিক কোন জাতীয় দিবস । আপনি দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করুন যে, ঐ দিবস থেকে আর কোন ভাবেই নেশার নিকটে যাবেন না ।
০৪. ধূমপায়ী বন্ধুদের সাহচর্য ত্যাগ করুন :
যে সব ধূমপায়ী বন্ধুদের নিয়ে আপনি ইত:পূর্বে ধূমপান করতেন , প্রথমত: কয়েক সপ্তাহ ধূমপায়ীদের আড্ডা ও সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে । আবার পর পরই অন্য কোন কাজে মনোনিবেশ করুন । খুবই ভাল হয়, বাসায় সিগারেট না আনা এবং অন্য কেউ সিগারেট খেতে চাইলে তাকে বারণ করা ।
০৫. বাসায় সিগারেট নিজেও আনবেন না এবং অন্য কাউকে আনতে দিবেন না । আপনার কাজের ছেলেটাকে আগে ভাগেই নিষেধ করে দিন যে, আপনি সিগারেট আনতে বললে সে যেন না আনে ।
০৬. যখন আপনার ধূমপানের ইচ্ছা জাগবে , তখন অন্য মনষ্ক হবার চেষ্টা করুন । আপনার চিন্তা-ভাবনা ও মনোযোগ ফিরিয়ে অন্য বিষয় গভীরভাবে চিন্তা করুন । জীবনের অতীতের কোন স্মরণীয় মধুরতর স্মৃতির পাতা উল্টে স্মৃতিচারণ করতে পারেন । দেখবেন , ধূমপানের প্রতি আপনার আসক্তি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগুচ্ছে ।
০৭. ধূমপানের কারণে যে সব ক্ষতি হয় , সে সব নিয়ে মনের মধ্যে গভীরভাবে বারবার আওড়াতে থাকুন । ধূমপান করলে ফুসফুস নষ্ট হতে পারে । ক্যান্সার ও ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে শতভাগ । এর দ্বারা অনেক টাকার অপচয় হয় , সে টাকায় আপনি আরও ভাল খেতে পারেন , স্ত্রী সন্তানদের চাহিদা মেটাতে পারেন । আর ও ভাল খেতে পারেন, স্ত্রী-সন্তানদের চাহিদা মেটাতে পারেন । আরও ভাবুন , ধূমপান না করলে আপনার স্বাস্থ্য ভাল থাকবে , সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারবেন । সবাই আপনার প্রশংসা করবে ইত্যাদি ।

০৮. বিভিন্ন কর্মে ব্যস্ত থাকুন :
সদা সর্বদা কর্মের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন । ব্যবসা-বাণিজ্য , অফিসের কাজ, চাকুরীর ডিউটি বা কৃষিকাজ , নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ইত্যাদি । এ ছাড়াও পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় , যিকর-আযকার, ক্বুরআন তেলাওয়াত, জ্ঞান চর্চা ইত্যাদি কর্মের মধ্যে নিজেকে মশগুল রাখুন ।এতে করে ধূমপানের আকর্ষণ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে
০৯. ধূমপান বিরোধী ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা চালানো :
সমাজ থেকে মরণঘাতী সর্বনাশার নেশার বিরুদ্ধে প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে ।
১০ . ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন :
ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করণের মাধ্যমে নিজেকে এবং সন্তানদেরকে ধূমপানের মতো মরণ নেশার ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে ।
১১. ধূমপান বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা :
ধূমপানের মতো সর্বনাশা থেকে জাতিকে রক্ষার স্বার্থে ধূমপান নিরোধ সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে । বিশ্বজুড়ে বিশিষ্ট জন, সচেতন মহল ও সুশিল সমাজ ধূমপান বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন । পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এর থেকে পিছিয়ে নেই । বাংলাদেশে ধূমপান বিরোধী অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিও এ পর্যায়ে আন্তরীকভাবে কাজ করে চলেছে । সরকার ধূমপান, মাদকজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার ( নিয়ন্ত্রণ ) আইন প্রনয়ন ও এ বিষয়ে নানামূখী কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করে চলেছে ।
ধূমপান নিরোধ কল্পে সরকার কর্তৃক প্রণীত আইন :
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে ২০০৫ ইং সনের ১৫ই মার্চ ও ২০১৩ ইং সনের মে মাসে আইন প্রনয়ন করে । এ আইনে নিম্নরূপ বিধান প্রনীত হয় ।
০১. কোন ব্যক্তি পাবলিক প্লেস, পাবলিক পরিবহন বা যানবাহন , জনসমাগম স্থানে ধূমপান করতে পারবে না । এই বিধি লঙঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।
কোন ব্যক্তি ২০০৫ ইং সনের দন্ডবিধি উপধারা ( ০১ ) এর ১১নং আইনের ধারা- ৩ বিধি লঙঘন করলে ( অর্থাৎ - উল্লেখিত স্থানে ধূমপান করলে ) তিনি অনধিক ৫০/ ( পঞ্চাশ টাকা ) অর্থ দন্ডে দন্ডনীয় হবেন ।
পরবর্তীতে ২০১৩ ইং সনের মে মাসে ১৬ নং ধারায় আইনটির সংশোধনী এনে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের শাস্তি ৫০৳ এর পরিবর্তে তিনশত টাকা অর্থ দন্ডে দন্ডিত করা হয় এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পূণ: পূণ: একই ধরণের অপরাধ সংঘটন করলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দন্ডের দ্বিগুণহারে দন্ডনীয় হবেন ।
২০০৫ ও ২০১৩ ইং সনের প্রণীত আইনের সারসংক্ষেপ :
তামাকজাত দ্রব্য বলতে যা বুঝায় :
তামাক পাতা , বা উহার নির্যাস হতে প্রস্তুত যে কোন দ্রব্য যা চোষণ বা চিবানোর মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়, বা ধূমপানের মাধ্যমে শ্বাসের সহিত টেনে নেওয়া হয় এবং বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, গুল, জর্দা খৈনী, সাদা পাতা , ভাঙ, হুক্কা বা পাইপের সাহায্যে ব্যবহার্য মিশ্রণও এ আইনের অন্তর্ভূক্ত ।
পাবলিক প্লেস বলতে যা বুঝায় : 
(
২০০৫ ও ২০১৩ ইং সনের প্রণীত আইন অনুযায়ী )
পাবলিক প্লেস বলতে বুঝায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , যে কোন অফিস, সরকারী- আধা সরকারী- স্বায়ত্ব শাসিত ভবন বা অফিস , বাস টার্মিনাল ভবন, রেলওয়ে স্টেশন ভবন , বিামন বন্দর ভবন, সমুদ্র বন্দর ভবন, নৌ বন্দর ভবন, প্রেক্ষাগৃহ, দেওয়াল বা চতুর্দিকে প্রাচীর বা পাটিশন দ্বারা আচ্ছাদিত প্রদর্শনী কেন্দ্র, থিয়েটার হল , হোটেল বা রেস্তোরা , বিপনী ভবন , পাবলিক টয়লেট, সরকারী বা বেসরকারীভাবে পরিচালনাধীন শিশুপার্ক ও পর্যটন কেন্দ্র । সরকারী ও পাবলিক গ্রন্থাগার , যাত্রী ছাউনী এবং সরকার কর্তৃক সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত অন্য যে কোন স্থান ।

পাবলিক পরিবহন বলতে যা বুঝায় :
( ২০০৫ ও ২০১৩ ইং সনের প্রণীত আইন অনুযায়ী )
পাবলিক পরিবহন বলতে বুঝায়- মোটরগাড়ী বা বাস , ট্রেন, বিমান, যে কোন ধরনের জাহাজ , লঞ্চ, ষ্টিমার, ফেরী, যান্ত্রিক সকলপ্রকার যানবাহন , উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টার,সরকার কর্তৃক সরকারী গেজেট বা প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্দিষ্টকৃত বা ঘোষিত অন্য যে কোন স্থান ।
বিড়ি- সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞাপন জনিত আইন : 
বিড়ি- সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের গায়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী লিখা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে । 
তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে বা মোড়কে বড় অক্ষরে স্পষ্টত: দৃশ্যমানভাবে ( মোট জায়গার অন্যূন ১০% শতাংশ পরিমাণ ) নিম্ন বর্ণিত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী মুদ্রন করতে হবে । যথা:-
০১. ধূমপান মৃত্যু ঘটায় ।
০২. ধূমপানের কারণে স্ট্রোক হয় ।
০৩. ধূমপানের কারণে গলায় ও ফুসফুসে ক্যান্সার হয় ।
০৪. ধূমপানের কারণে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হয় ।
০৬. ধূমপান হৃদরোগের কারণ ।
০৬. ধূমপান হৃদরোগের কারণ ।
উপসংহার :
বক্ষমান প্রবন্ধে নাতিদীর্ঘ আলোচনা দ্বারা একথা দিবালোকের ন্যায় প্রতীয়মান হলো যে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন প্রাণসংহারক বিষ । যা সেবন করা আত্মহত্যার শামিল । তাই আসুন ! আমরা নিজেরা উহা পরিহার করি এবং আমাদের পরিবার ও সমাজকে এই ঘাতক নেশা থেকে রক্ষা করি । ধূমপানকে না বলি । ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি । আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন ।  আমীন

নিবেদক 
উপস্থাপক
মো: ইসহাক মিয়া 
সহকারী অধ্যাপক ( কামিল হাদীস বিভাগ ) 
বিজুল দারুল হুদা কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা 
বিরামপুর, দিনাজপুর ।