ইসলামে হজ্জের গুরুত্ব


হজ্জ

- হজ্জ ইসলামের পঞ্চম রোকন। নবম হিজরীতে হজ্জ ফরয হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন;
وَلِلَّهِعَلَىالنَّاسِحِجُّالْبَيْتِمَنِاسْتَطَاعَإِلَيْهِسَبِيلًا [آلعمران ৯৭]
অর্থ: “মক্কা পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তির উপর আল্লাহর জন্য হজ্জ আদায় করা ফরয।”
মক্কা পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম এমন প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ ও মহিলার জন্য জীবনে একবার হজ্জ আদায় করা ফরয। বারবার হজ্জ আদায় করা মুস্তাহাব।কেউ হজ্জের আবশ্যকীয়তা বা ফরয হওয়া অস্বীকার করলে তাকে অমুসলিম বলে গণ্য করা হবে। আর যদি কোনো সক্ষম ব্যক্তি হজ্জ ফরয মানা সত্ত্বেও তা আদায় না করেন তাহলে তিনি কঠিন পাপের মধ্যে নিপতিত হবেন এবং তার ঈমান নষ্ট হওয়ার ভয় রয়েছে।
হজ্জের ফযীলত

হজ্জ থেকে বিরত রাখার শয়তানের মহাষড়যন্ত্র



হজ্জে আল্লাহ্র একত্ববাদের মহত্তম নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। কারণ একমাত্র আল্লাহ্র উপাসনার জন্য তৈরী প্রথম উপাসনা-গৃহ হলো পবিত্র কা‘বা ঘর। তাওহীদ বা একত্ববাদের চূড়ান্ত বিজয়ের সূচনা হয় হযরত ইব্রাহীম (আ:) কর্তৃক এ ঘরের নির্মাণের মধ্য দিয়ে, আর তার সমাপ্তি ঘটে মহানবী (সা:) কর্তৃক এ ঘরের পবিত্রতা ও তাওহীদী ধর্মের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। হজ্জে আমরা তাঁদের অগণিত নিদর্শন দেখতে পাই।
হজ্জের মাধ্যমে ঈমানের পরীক্ষা হয়। এর মধ্য দিয়ে আল্লাহ্ প্রমাণ করেন তাঁর কোন বান্দা সম্পদ ও শরীরের ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করে তা আদায় করে। হজ্জের মাধ্যমে ব্যক্তির মানসিকতা প্রশস্ততা লাভ করে, কারণ তখন বৃহৎ মানবগোষ্ঠীর সকল জাতি ও বর্ণের সমাবেশ ঘটে। পরস্পরের বর্ণ, ভাষা, দেশ কিংবা জাতিগত সকল হিংসা, বিদ্বেষ ও রেষারেষি হজ্জপালনকারীর হৃদয় থেকে মুছে যায়। সে হৃদয় দিয়ে অনুভব করে বিশ্ব কত বড় আর সকল মুসলিম কত আপন। মুসলিম জাতির মধ্যে সাম্য, ঐক্য ও সহযোগিতার প্রবণতা সৃষ্টি হয়।
হজ্জের ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নি¤েœ কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলোঃ
عَنْأَبِيهُرَيْرَةَأَنَّرَسُولَاللَّهِسُئِلَ: أَيُّالعَمَلِأَفْضَلُ؟فَقَالَ: إِيمَانٌبِاللَّهِوَرَسُولِهِقِيلَ: ثُمَّمَاذَا؟قَالَ: الجِهَادُفِيسَبِيلِاللَّهِقِيلَ: ثُمَّمَاذَا؟قَالَ: حَجٌّمَبْرُورٌ.
অর্থ: “হযরত আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) কে জিজ্ঞাসা করা হয়ঃ সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম কি? তিনি বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা।” প্রশ্নকারী বলেন, এরপর কোন কর্ম? তিনি বললেন,“আল্লাহর পথে জিহাদ করা।” প্রশ্নকারী বলেন, এরপর কোন কর্ম? তিনি বললেন,“পুণ্যময় (পাপ-অন্যায়মুক্ত) হজ্জ।”( )
রাসূলুল্লাহ (সা:) আরও বলেছেন;
مَنْحَجَّلِلَّهِفَلَمْيَرْفُثْوَلَمْيَفْسُقْرَجَعَكَيَوْمِوَلَدَتْهُأُمُّهُ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিবেদিতভাবে, সর্বপ্রকার পাপ, অন্যায় ও অশ্লীলতা মুক্ত হয়ে হজ্জ আদায় করলো, সে নবজাতক শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে ঘরে ফিরলো।”( )
তিনি আরও বলেছেন;
الْعُمْرَةُإِلَىالْعُمْرَةِكَفَّارَةٌلِمَابَيْنَهُمَاوَالْحَجُّالْمَبْرُورُلَيْسَلَهُجَزَاءٌإِلاالْجَنَّةُ.
অর্থ: “একবার উমরা আদায়ের পরে দ্বিতীয়বার যখন উমরা আদায় করা হয়, তখন দুই উমরার মধ্যবর্তী গোনাহ আল্লাহ্ মাফ করে দেন। আর পুণ্যময় হজ্জের একমাত্র পুরস্কার হলো জান্নাত।”( )
তিনিআরও বলেছেন;
تَابِعُوابَيْنَالْحَجِّوَالْعُمْرَةِفَإِنَّهُمَايَنْفِيَانِالْفَقْرَوَالذُّنُوبَكَمَايَنْفِيالْكِيرُخَبَثَالْحَدِيدِوَالذَّهَبِوَالْفِضَّةِوَلَيْسَلِلْحَجَّةِالْمَبْرُورَةِثَوَابٌإِلاَّالْجَنَّةُ.
অর্থ: “তোমরা বারবার হজ্জ ও উমরা আদায় কর, কারণ কর্মকারের ও স্বর্ণকারের আগুন যেমন লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা মুছে ফেলে তেমনিভাবে এ দুটি ইবাদত দারিদ্র্য ও পাপ মুছে ফেলে। আর পুণ্যময় হজ্জের একমাত্র পুরস্কার হলো জান্নাত।”( )
হজ্জের মাধ্যমে গোনাহ মাফ ছাড়াও রয়েছে অগণিত পুরস্কার ও সাওয়াব। হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, হাজী যখন বাড়ি থেকে বের হন তখন থেকে তার প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহ তাকে অগণিত নেকী প্রদান করেন। তার ব্যয়িত প্রতিটি টাকার বহুগুণ এমনকি ৭০০ গুণ সাওয়াব প্রদান করেন বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন যে, আল্লাহ হাজীর দু‘আ ও ইস্তিগফার কবুল করেন এবং হাজী সাহেব যাদের জন্য দু‘আ করেন তাদেরকেও আল্লাহ ক্ষমা করেন।
হজ্জের সবচেয়ে বরকতময় দিন হলো আরাফার দিন। বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, আরাফার দিন আল্লাহ যতো মানুষকে ক্ষমা করেন অন্য কোনো দিন ততো মানুষকে ক্ষমা করেন না। আরাফার দিন সমবেত হাজীদের জীবনের পাপগুলি তিনি ক্ষমা করেন। আরাফার দিন দুপুর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার মাঠে অবস্থান করে আল্লাহর যিক্র ও দু‘আয় কাটানোই মূলত হজ্জ।

হাজ্জ- ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর


হজ্জের শিক্ষণীয় কিছু বিষয়
প্রথম বিষয় হলো, সর্বপ্রকারের অশ্লীলতাবোধক চিন্তা, কর্ম, দৃষ্টি ও আচরণ থেকে সর্বোতভাবে বিমুক্ত থাকতে হবে। কারো সাথে কোনো অশোভন আচরণ করা যাবে না এবং ঝসড়া-বিবাদ করা যাবে না। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ের মধ্যে হাজারো কষ্ট পেয়েও কাউকে রাগ করা যাবে না বা কারো সাথে ঝগড়া করা যাবে না। এরই নাম হজ্জ।
হজ্জ আপনাকে কি শেখালো? শেখালোঅশ্লীল, খারাপ চিন্তা, অশোভন আচরণ, ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকাও ধৈর্যধারণ করা। শেখালো আমিত্ব বর্জন করতে। আপনি লাখপতি-কোটিপতি, ধনী, ক্ষমতাবান ইত্যাদি সকল পরিচয় মুছে ফেলতে হবে। আপনি আপনার দেহ থেকে আমিত্ব খুলেছেন। ধনী, গরীব, ফকীর, ক্ষমতাবান, দুর্বল, সাদা, কালো সকলেই একই প্রকারের অতি সাধারণ কাফনের কাপড়ের মত কাপড় পরে হজ্জে সমবেত হয়েছেন। কিন্তু আপনি কি আপনার মনের মধ্য থেকে আমিত্বকে খুলে ফেলতে পেরেছেন? এটিই হলো মূল কঠিন কাজ। গায়ে কি পোশাক আছে খেয়াল থাকে না। কিন্তু আমি যে অমুক ধনী বা ক্ষমতাবান মানুষ তা আমরা ভুলতে পারি না। কেউ অন্যায় করলে বা আমাদের আমিত্বকে আহত করলে রেগে উঠতে মন চায়। সাবধান! নিজের আমিত্ব একেবারে ভুলে যান। মনে করুন, এ ময়দানে আমিই সবচেয়ে বেশী গোনাহগার, অন্য সকলেই আল্লাহর প্রিয় বান্দা। এ অনুভূতি দিয়ে সকলের খেদমতের চেষ্টা করুন এবং সকলের দেয়া কষ্ট সহ্য করুন।
হজ্জের দিনগুলিকুরআন তেলাওয়াত, দু‘আ, ইস্তিগফার, তাসবীহ, তাহলীল, মাসনুন অযিফার মধ্যে কাটিয়ে নিজেকে সার্বক্ষণিক আল্লাহর ধ্যান খেয়ালে থাকতেচেষ্টা করুন। যাতে করে আপনার মধ্যে এই অভ্যাসটি গড়ে ওঠে। তাই এই বইটির শেষে বিভিন্ন মাসনুন দু‘আ ও অযিফা দেয়া হলো তা নিজে পড়–ন, মুখস্থ করুন ও অন্যান্য হাজী ভাইদের এ বিষয়ে উৎসাহিত করুন।
কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা
কুরআন ও সুন্নাহ এর আলোকে জানা যায় যে, হজ্জ ও অন্য যে কোন ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য ২টি শর্ত অবশ্যই পূর্ণ করতে হবে। তা নাহলে ইবাদত কবুল হবে না।
১- ইখলাস বা নিয়তের বিশুদ্ধতা, অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর কাছ থেকে সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে ইবাদত করা।
২- হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রাসূলুল্লাহ (সা:) এর শেখানো পদ্ধতিতে ইবাদত করা। আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে (সা:) বলেছেন,
قُلْإِنْكُنْتُمْتُحِبُّونَاللَّهَفَاتَّبِعُونِييُحْبِبْكُمُاللَّهُ [آلعمران]
অর্থ: “বলুন,যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাক তাহলে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন।”(সূরা আলে ইমরান: ৩১)
হাদীস শরীফে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন,
خُذُوْاعَنِّيمَنَاسِكَكُمْ
অর্থ: “তোমরা আমার কাছ থেকে হজ্জের নিয়মাবলী শিখে নাও।”( )
তাই হজ্জের আহকামগুলি সুন্দরভাবে জেনে নেবেন। বিশেষ করে সুন্নাত জানার ও মানার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করবেন। অমুক কাজ জায়েয, ভাল ইত্যাদি বিষয় দেখবেন না। বরং দেখবেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) ও সাহাবীগণ কিভাবে কোন কাজটি করেছেন। তাঁরা যে কর্ম যেভাবে করেছেন হুবহু সেভাবে তা পালন করুন। তারা যা করেননি তা বর্জন করুন। এভাবে হুবহু রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর তরীকা অনুসারে ইবাদত পালন করতে পারা সৌভাগ্যের লক্ষণ। এতেই রয়েছে কবুলিয়্যাতের নিশ্চয়তা।
বিশেষত মদীনা শরীফে ইবাদত-বন্দেগী, যিয়ারত, দু‘আ ইত্যাদি সকল বিষয়ে অবশ্যই হুবহু সুন্নাতের মধ্যে থাকবেন। ইমাম বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য ইমাম সংকলিত হাদীসে হযরত  রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন;

الْمَدِينَةُحَرَمٌمَابَيْنَعَائِرٍإِلَىكَذَامَنْأَحْدَثَفِيهَاحَدَثًاأَوْآوَىمُحْدِثًافَعَلَيْهِلَعْنَةُاللَّهِوَالْمَلائِكَةِوَالنَّاسِأَجْمَعِينَلايُقْبَلُمِنْهُصَرْفٌوَلاعَدْلٌ
অর্থ: “আয়ির থেকে অমুকস্থান পর্যন্ত মদীনার সমস্ত এলাকা মহাসম্মানিত হারাম বা পবিত্রস্থান। এ স্থানের মধ্যে যদি কেউ নব-উদ্ভাবিত কোনো কর্ম করে, অথবা কোনো নব-উদ্ভাবককে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তাহলে তার উপর আল্লাহর লা‘নত, ফেরেস্তাগণের লা‘নত এবং সকল মানুষের লা‘নত। তার থেকে তাওবা, কাফ্ফারা বা ফরয-নফল কোনো ইবাদতই কবুল করা হবে না।”( )বড় ভয়ঙ্কর কথা! এতো কষ্ট করে সাওয়াব অর্জনের জন্য সেই পবিত্রভূমিতে গিয়ে অভিশাপ অর্জন করে আসা! আরও ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, হাজীরা মদীনায় গেলেই নব-উদ্ভাবিত কর্ম বেশী করেন। মসজিদে নববীতে, রাওযা শরীফে, বাকী গোরস্থানে, উহুদের শহীদদের গোরস্থানে, খন্দকের মসজিদগুলিতে, কুবা ও অন্যান্য মসজিদে ও অন্যান্য স্থানে যিয়ারত, সালাত, দু‘আ ইত্যাদি ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে হাজিগণ আবেগ ও অজ্ঞতার সংমিশ্রণে অনেকভাবে সুন্নাতের বিপরীতে নব-উদ্ভাবিত পদ্ধতি অনুসরণ করেন। সাবধান হোন!যিয়ারতের সময় রাসূলুল্লাহ (সা:)কি বলতেন, কিভাবে দাঁড়াতেন, কি করতেন তা সহীহ হাদীসের আলোকে জেনে নিন। কুবা, খন্দক, কিবলাতাইন ও অন্যান্য স্থানে গমন ও সালাত আদায়ে রাসূলুল্লাহ (সা:) ও সাহাবীগণের হুবহু পদ্ধতি সহীহ হাদীসের আলোকে জেনে নিন। তাঁরা যা করেননি তা বিষবৎ পরিত্যাগ করুন। সাওয়াব কামাতে গিয়ে অভিশাপ ও ধ্বংস কামাই করবেন না।
নব-উদ্ভাবিত কর্ম বা বিদ‘আতের বিষয়ে পরবর্তী যুগের আলিমগণ কিছু মতভেদ করেছেন। কোনো কোনো বিদ‘আতকে কোনো কোনো আলিম ভাল বা ‘হাসানা’ বলেছেন। এ সকল তর্ক অন্য স্থানে করবেন। অন্তত মদীনার মাটিতে ‘হাসানা’ এবং ‘সাইয়েআহ’ সকল নব-উদ্ভাবিত কর্ম বিষবৎ পরিত্যাগ করুন। অন্তত রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর সম্মানে মদীনার মাটিতে প্রতিটি ইবাদতে সুন্নাতের হুবহু অনুসরণ করুন। বিদ‘আতে হাসানা পালন না করলে গোনাহ হবে কেউই বলবেন না। তবে মদীনার মাটিতে নব-উদ্ভাবিত কাজ করলে অভিশাপ ও ধ্বংস আসবে তা সুনিশ্চিত জানা গেল। এরপরও কি ঝুঁকি নিবেন? তর্ক করবেন?কেন? আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়াত নসীব করুন।
হজ্জে মাবরুর
‘মাবরূর’ অর্থ ‘র্বির’-ময়। আরবীতে র্বির অর্থ নেক আমল এবং মানুষের খেদমত ও উপকার করা। তাহলে মাবরূর মানে হলো পুণ্যময় এবং পরোপকারময়। হজ্জ কবুল হওয়ার শর্ত হলো মাবরূর হওয়া, অর্থাৎ হজ্জের মধ্যে বেশীবেশী নেক আমল করতে হবে, বিশেষত মানুষের খেদমত করতে হবে এবং কারো অপকার করা যাবে না। যত কষ্টই হোক, সকলের সাথে সুন্দর আাচরণ ও কথা বলতে হবে।হযরত রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:
بِرُّالْحَجِّإِطْعَامُالطَّعَامِوَطِيْبُالْكَلاَمِ
অর্থাৎ: “হজ্জের র্বির বা কল্যাণকর্ম হলো খাদ্য খাওয়ানো এবং সুন্দর কথা বলা।”( )
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা:) র্বির ও কল্যাণকর্মের বিষয়ে বলেছেন যে, মানুষের কল্যাণে কোনো কর্মকেই ছোট মনে করতে নেই। একজন মানুষকে নিজের রশির অতিরিক্ত অংশ ব্যবহার করতে দেয়া, জুতার ফিতার মত সামান্য জিনিস প্রদান করা, নিজের বালতি বা জগ থেকে কিছু পানি ঢেলে দেয়া, হাসিমুখে কথা বলা, চিন্তাক্লিষ্টকে সান্ত¡না দেয়া সবই আল্লাহর নিকট গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল।
আল্লাহ তা’আলা হাজীদের জন্য নির্দেশনা দিয়ে বলেন;
الْحَجُّأَشْهُرٌمَعْلُومَاتٌفَمَنْفَرَضَفِيهِنَّالْحَجَّفَلارَفَثَوَلافُسُوقَوَلاجِدَالَفِيالْحَجِّوَمَاتَفْعَلُوامِنْخَيْرٍيَعْلَمْهُاللَّهُوَتَزَوَّدُوافَإِنَّخَيْرَالزَّادِالتَّقْوَىوَاتَّقُونِيَاأُولِيالأَلْبَابِ. [البقرة ১৯৭]
অর্থাৎ: “হজ্জের সময় নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস। অতএব এ মাসগুলিতে যে হজ্জ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল তাকে হজ্জে অশ্লীলতা, পাপ-অন্যায় ও কলহ-বিবাদ থেকে সম্পূর্ণ বিমুক্ত থাকতে হবে। আর তোমরা যা ভাল কাজ কর আল্লাহ তা জানেন। এবং তোমরা পাথেয় গ্রহণ করো; আর তাকওয়া বা আল্লাহ-ভীতি ও আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। এবং হে বিবেকবানগণ, তোমরা আমাকে ভয় কর।”(সূরা বাকারা: ১৯৭)
হজ্জের সফরে তাকওয়া হলো সবচেয়ে বড় পাথেয়। জীবনে যত গোনাহ করেছেন তা থেকে অন্তর দিয়ে তাওবা করতে থাকুন। সগীরা-কবীরা সকল প্রকার গোনাহকে বিষের মত মনে করুন। হজ্জের পুরো সফরে এবং বিশেষ করে আরাফার মাঠে, মুযদালিফায়, মিনায়, তাওয়াফ ও সায়ীর সময় নিজের গুনাহর কথা স্মরণ করে অনবরত অনুশোচনা করতে থাকুন। আর কখনো কোনো গোনাহ করব না বলে সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।

হজ্জ্বে গিয়ে মৃত্য ব্যক্তির নামে ওমরা করা যাবে কি?


https://www.youtube.com/watch?v=ka31oLIthTM

হজ্জের পরিচয়
হজ্জ অর্থ ইচ্ছা করা। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পবিত্র কা‘বা ঘর ও মক্কার কিছু এলাকা যিয়ারত করা ও কিছু ইবাদত পালনের নাম হজ্জ।
হজ্জের হুকুম
মক্কা মুকাররামাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম এমন প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ ও মহিলার জন্য জীবনে একবার হজ্জ আদায় করা ফরয।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
“বাইতুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তির উপর আল্লাহর জন্য হজ্জ আদায় করা ফরয।” (সূরা আলে ইমরান: ৯৭)
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন; “হে মানবসম্প্রদায়! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন। অতএব তোমরা হজ্জ আদায় কর।” তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল!প্রতি বছর কি হজ্জ করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞাসা করল।অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন; আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছরের জন্যেই) ফরয হয়ে যেত। কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হত না। তিনি আরও বললেন: “যে ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে কিছু বলিনি সে বিষয় সেরূপ থাকতে দাও। কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা বেশী প্রশ্ন করার ও তাদের নবীদের সাথে মতবিরোধ করার কারণেই ধ্বংস হয়েছে। কাজেই আমি যখন তোমাদের কোন বিষয়ে নির্দেশ দেই, তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করবে, আর যখন কোন বিষয়ে নিষেধ করি তখন তা পরিত্যাগ করবে।”( )
আমাদের দেশে অনেক কৃষক, ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবির উপর হ্জ্জ ফরয। কারণ অনেকেরই প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি, বাড়ি ও সঞ্চিত অর্থ রয়েছে। হজ্জ আর যাকাতের বিষয় এক নয়। যাকাতের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তির যাকাত দিতে হয় না। কিন্তু হজ্জের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্থাবর সম্পত্তি ধর্তব্য।
কারও যদি নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি থাকে, যে জমির ফসল না হলেও তার বছর চলে যায়, অথবা অতিরিক্ত বাড়ি থাকে যে বাড়ি তার ব্যবহার করতে হয় না, বরং ভাড়া দেয়া, অথচ যে বাড়ির ভাড়া না হলেও তার বছর চলে যায় তবে সেই জমি বা বাড়ি বিক্রয় করে হজ্জে যাওয়া ফরয হবে বলে অনেক ফকীহ সুস্পষ্টত উল্লেখ করেছেন।
বারবার হজ্জ আদায় করা মুস্তাহাব। কেউ হজ্জের আবশ্যকীয়তা বা ফরয হওয়া অস্বীকার করলে তাকে অমুসলিম বলে গণ্য করা হবে। আর যদি কোন সক্ষম ব্যক্তি হজ্জ ফরয মানা সত্ত্বেও তা আদায় না করেন তাহলে তিনি কঠিন পাপের মধ্যে নিপতিত হবেন এবং তার ঈমান নষ্ট হওয়ার ভয় রয়েছে।
তাহলে চিন্তা করুন, আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা প্রতি বছর প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নতুন জমি কিনছেন, বাড়ি বানাচ্ছেন বা বিনিয়োগ করছেন, অথচ হজ্জ করছেন না। আর হজ্জ ফরয হওয়ার পরেও হজ্জ না করে মৃত্যুবরণ করাকে কোনো কোনো হাদীসে ইহূদী-খৃস্টান হয়ে মরা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন;
إِنَّعَبْداًصَحَّحْتُلَهُجِسْمَهُوَوَسَّعْتُعَلَيْهِفِيْالْمَعِيْشَةِتَمْضِيْعَلَيْهِخَمْسَةُأَعْوَامٍلاَيَفِدُإِلَيَّلَمَحْرُوْمٌ.
অর্থাৎ:“যে বান্দার শরীর আমি সুস্থ রেখেছি এবং তার জীবনযাত্রায় সচ্ছলতা দান করেছি, এভাবে পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও সে আমার ঘরে আগমন করল না, সে সুনিশ্চিত বঞ্চিত ও হতভাগা।”) (
কিছু ভুল ধারণা ও এর নিরসন
অনেকে মনে করেন পিতামাতার অনুমতি ছাড়া হজ্জ করা যায় না। চিন্তাটি ভুল। পিতামাতার আনুগত্য প্রত্যেক সন্তানের উপর ফরয। কিন্তু তাঁদের নির্দেশে আল্লাহর ফরয-ওয়াজিব নির্দেশ পিছানো বা নষ্ট করা যাবে না। ফরয দায়িত্ব পালনে তাঁদের অনুমতির প্রয়োজন নেই। ফরয নামায আদায় এবং ফরয হজ্জ আদায়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে পিতামাতার নিকট থেকে দু‘আ-এজাযত নেয়া খুবই ভাল ও বরকতের কাজ।
অনেকে পিতামাতাকে হজ্জ না করিয়ে নিজে হজ্জ করাকে অনুচিত মনে করেন। এটিও ভুল। পিতামাতার ভরণপোষণ সন্তানের উপর ফরয দায়িত্ব। তবে হজ্জ ফরয হবে যার অর্থ আছে তার উপর। যদি পিতার নিজস্ব অর্থ থাকে তবে তাকে নিজের দায়িত্বে হজ্জ করতে হবে। সন্তান তাকে সাহায্য করবেন। আর যদি সন্তান অর্থ উপার্জনের কারণে বা নিকটবর্তী কোন দেশে গমনের কারণে তার উপর হজ্জ ফরয হয় তাহলে তাকে আগে নিজের হজ্জ পালন করতে হবে। পরে সম্ভব হলে পিতামাতাকে হজ্জ করানো খুবই ভাল কাজ।
অনেকে মনে করেন মেয়ে বিয়ে না দিয়ে বা এই জাতীয় পারিবারিক দায়িত্ব পালন না করে হজ্জে যাওয়া ঠিক না। চিন্তাটি ঠিক নয়। মেয়ে বিয়ের জন্য কি যাকাত দেয়া বন্ধ রাখবেন? ফরয নামায বন্ধ রাখবেন? হজ্জও নামাযের মতই ফরয ইবাদত। হজ্জের টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেলে হজ্জ করা ফরয। যদি মেয়ের বিবাহ ঠিক হয়ে থাকে তাহলে বিবাহ দিন। এরপর হজ্জের টাকা হলে হজ্জ করুন। বিয়ে ঠিক না হলে হজ্জের টাকা হলে হজ্জ করুন। এরপর যখন বিবাহের সময় হবে তখন বিবাহ দিবেন। মূল কথা হলো, আগের যুগে রাস্তার নিরাপত্তার অভাবে এদেশের মুসলমান সকল সামাজিক দায়িত্ব পালনের পরে চির বিদায় নিয়ে হজ্জে গমন করতেন। এ থেকে আমাদের দেশে এরূপ কুসংস্কার জন্ম নিয়েছে।
অনেকে মনে করেন হজ্জ বৃদ্ধ বয়সের বা শেষ জীবনের ইবাদত। হজ্জের পরে আর কোন সাংসারিক কাজ করা যায় না। অনেকে বলেন, অল্প বয়সে হজ্জ করলে রাখবে কিভাবে! এ সবই শয়তানী ওয়াসওয়াসা ও ইসলামী চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত।
কেউ যদি মনে করে যে, সারাজীবন কাফির থাকব, শেষ জীবনে ইমান এনে সকল গোনাহর ক্ষমা লাভ করে মৃত্যু বরণ করব, অথবা চিন্তা করে যে, সারাজীবন বেনামাযী থাকব আর শেষ জীবনে নামায পড়ে গোনাহর ক্ষমা নিয়ে মরব, তাহলে তার চিন্তা যেমন ইসলাম বিরোধী, তেমনি ইসলাম বিরোধী চিন্তা যে, হজ্জ ফরযহওয়ার পরেও তা পালন না করে ভালমন্দ সকল কাজ করতে থাকব এরপর শেষ বয়সে হজ্জ করে ক্ষমা লাভ করে মৃত্যু বরণ করব। এ সবই শয়তানী চিন্তা। যারা এভাবে পাপ জমা করে রাখে শেষে তাওবা করব বলে তাদের তাওবা নসীব হয় না এবং তাদের তাওবা আল্লাহ কবুল করেন না বলে কুরআনে বলেছেন;
وَلَيْسَتِالتَّوْبَةُلِلَّذِينَيَعْمَلُونَالسَّيِّئَاتِحَتَّىإِذَاحَضَرَأَحَدَهُمُالْمَوْتُقَالَإِنِّيتُبْتُالآَنَوَلاالَّذِينَيَمُوتُونَوَهُمْكُفَّارٌ.
অর্থাৎ: “তাওবা তাদের জন্য নয় যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, শেষ পর্যন্ত যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, আমি এখন তাওবা করছিএবং তাদের জন্যও তাওবা নয় যারা কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।” (সূরা নিসা: ১৭-১৮ আয়াত)
নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদির মত হজ্জও একটি ফরযে আইন ইবাদত। যখন যে বয়সেই তা ফরয হোক তা যতোশীঘ্র সম্ভব আদায় করতে হবে। আর সর্বাবস্থায় আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে ও আল্লাহর পথে থাকার চেষ্টা করতে হবে। প্রকৃত সত্য কথা হলো, হজ্জ যৌবনকাল ও শক্তির সময়ের ইবাদত। কোনো বৃদ্ধ মানুষ সঠিকভাবে হজ্জ আদায় করতে পারেন না। সম্পূর্ণ বৈরি আবহাওয়ায়, লক্ষলক্ষ মানুষের ভিড়ের মধ্যে মাইলের পর মাইল হাঁটা, দৌঁড়ানো, কংকর নিক্ষেপ করা ইত্যাদি ইবাদতের সুন্নাত পর্যায় রক্ষা করা তো দূরের কথা ওয়াজিব পর্যায় ঠিক রাখাও বৃদ্ধ ব্যক্তির জন্য কষ্টকর। এজন্য যুবক বয়সের হজ্জই প্রকৃত ও পরিপূর্ণ হজ্জ হতে পারে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করুন। আমীন।
হজ্জের মাসসমূহ
হজ্জের মাস তিনটি:  আল্লাহ তা’আলা বলেন;
الْحَجُّأَشْهُرٌمَعْلُومَاتٌفَمَنْفَرَضَفِيهِنَّالْحَجَّفَلارَفَثَوَلافُسُوقَوَلاجِدَالَفِيالْحَجِّوَمَاتَفْعَلُوامِنْخَيْرٍيَعْلَمْهُاللَّهُوَتَزَوَّدُوافَإِنَّخَيْرَالزَّادِالتَّقْوَىوَاتَّقُونِيَاأُولِيالأَلْبَابِ.
“হজ্জের সময় নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস। অতএব এ মাসগুলিতে যে হজ্জ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল তাকে হজ্জে অশ্লীলতা, পাপ-অন্যায় ও কলহ-বিবাদ থেকে সম্পূর্ণ বিমুক্ত থাকতে হবে। আর তোমরা যা ভাল কাজ কর আল্লাহ তা জানেন। এবং তোমরা পাথেয় গ্রহণ করো; আর তাকওয়া বা আল্লাহ -ভীতি ও আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। এবং হে বিবেকবানগণ, তোমরা আমাকে ভয় কর।” (সূরা বাকারা: ১৯৭)
নির্দিষ্ট মাসসমূহের বর্ণনা করতে গিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন; হজ্জের মাসগুলি হলো শাওয়াল, যিলকদ,যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন।( )
ইবন আব্বাস (রা:) বলেন, হজ্জের মাসগুলিাত ইহরাম বাঁধা সুন্নাত।( )

হজ্জফরয হওয়ার শর্তসমূহ
১। মুসলমান হওয়া।
২। স্বাধীন হওয়া।
৩। শারীরিকভাবে হজ্জের মৌলিক কাজসমূহ সম্পাদন করার সামর্থ থাকা।
৫। আর্থিক সামর্থ থাকা। অর্থাৎ হজ্জে গমনের জন্য মক্কা শরীফ যাওয়া আসা, সেখানে অবস্থানকালীন ব্যয় নির্বাহ করা ও হজ্জ সম্পাদন করে বাড়িতে ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবার-পরিজনের ভরণ পোষণের সামর্থ থাকা।
৬। হজ্জে যাতায়াতের পথ নিরাপদ থাকা।
৪। প্রাপ্ত বয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হওয়া।
৭। মহিলাদের জন্য স্বামী অথবা মাহরাম (যাদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ) ব্যক্তি সাথে থাকা।
৮। মহিলাগণ ইদ্দত পালন অবস্থায় না থাকা।
হজ্জের ফরযসমূহ
হজ্জের ফরয তিনটি
১। ইহরাম বাঁধা। হজ্জের নিয়তে ইহরামের কাপড় পরিধান করে তালবিয়াহ পাঠ করা।
২। উকূফে আরাফা তথা আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। অর্থাৎ ৯ ই যিলহজ্জ দুপুরে সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে ১০ই যিলহজ্জ সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামান্য সময়ের জন্য হলেওআরাফার ময়দানে অবস্থান করাফরয। আর ৯ই যিলহজ্জ দুপুরে সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব। যদি কেউসূর্যাস্তের পূর্বে আরাফার সীমানা হতে বের হয়ে যায় তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। (কিন্তুসূর্যাস্তের পূর্বেই আরাফাতে ফিরে আসলে দম ওয়াজিব হবে না)।
৩। তাওয়াফে ইফাদ্বা (তাওয়াফে যিয়ারত) করা, তথা ১০ই যিলহজ্জ সুবহে সাদিক হতে ১২ই যিলহজ্জ মাগরিবের পূর্বেপবিত্র কা’বা ঘর তাওয়াফ করা। এ সময়ের পরে তাওয়াফে ইফাদা করলে বিলম্বের জন্য দম দিতে হবে।
হজ্জের এই তিন ফরযের কোনো একটি বাদ পড়লে হজ্জ আদায় হবে না। দম বা কোরবানী দ¦ারাও এর ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। পুনরায় হজ্জ আদায় করতে হবে।
হজ্জের ওয়াজিবসমূহ
হজ্জের ওয়াজিব ৭টি, যথা
১। মীকাত অতিক্রমের পূর্বে বা মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা।
২। আরাফা থেকে ফেরার পথে রাতে মুযদালিফায় অবস্থান করা এবং মাগরিব-এশা একসঙ্গে আদায় করা।
৩। সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে সাত বার সা’য়ী করা (দৌড়ানো)। আর তা সাফা থেকে শুরু করে মারওয়াতে শেষ করা।
৪। মীনায় নির্দিষ্ট স্থানে কংকর নিক্ষেপ করা (১০ থেকে ১২ই যিলহজ্জ পর্যন্ত)।
৫। মাথার চুল মুন্ডানো অথবা খাটো করা (মেয়েদের চুলের অগ্রভাগ কাটা)।
৬।মক্কার বাইরের লোকদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা।
৭। তামাত্তু ও ক্বিরান হজ্জ আদায়কারীণের জন্য কোরবানী করা।
অন্যান্য ওয়াজিব এমনিতে আদায় হয়ে যায়। হজ্জের ওয়াজিব তরক করলে দম বা কোরবানী দ¦ারা এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
হজ্জের সুন্নতসমূহ
হজ্জের অনেক সুন্নাত রয়েছে। নি¤েœ এর কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
১। মক্কার বাইরের লোকদের যারা হজ্জে ইফরাদ ও ক্বিরান আদায় করেন, তাদের জন্য তাওয়াফে কুদুম করা।
২। রমল করা (বিস্তারিত পরিচয় সামনে বর্ণনা করা হবে)
৩। ৮ই যিলহজ্জ সকালে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া এবং সেখানে ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করা ও রাত যাপন করা।
৪। ৯ই যিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনা হতে আরাফাতের ময়দানে গমন করা।
৫। আরাফার ময়দান থেকে ৯ই  যিলহজ্জ সূর্যাস্তের পর হজ্জের ইমামের রওনা হওয়া।
৬। আরাফায় গোসল করা।
৭। মিনায় কার্যক্রম সম্পাদনকালে (১০, ১১ ও ১২ই যিলহজ্জ) মিনায় রাত্রি যাপন করা।
৮। মিনা থেকে প্রত্যাবর্তনকালে ‘মুহাস্সাব’ নামক স্থানে অতি অল্প সময়ের জন্য হলেও যাত্রা বিরতি করা।
হজ্জের সুন্নাতসমূহ আদায় করলে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়, তবে ছেড়ে দিলে দম (কোরবানী) ওয়াজিব হয় না।
ইহরামের পরিচয়
হজ্জ বেশ কিছুদিন ধরে আদায় করতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত স্থান থেকে ইহরাম করতে হয়। ইহরাম অর্থ হজ্জের নিয়ত করে হজ্জ শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া। সালাতের তাকবীরে তাহরীমা বললে যেমন নামায শুরু হয় এবং নামাযের বাইরের সকল কাজ নিষিদ্ধ হয়ে যায়, তেমনি হজ্জের ইহরাম করলে হজ্জ শুরু হয় এবং হজ্জ বহির্ভূত সকল কাজ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ইহরাম করে মক্কায় পৌঁছার পর হজ্জের বিধানগুলি পালন করতে হয়।
মাওয়াকীত বা ইহরামের সময় ও স্থান
হজ্জেরইহরাম করার সময়হলো শাওয়াল,যিলকদ ও যিলহজ্জ মাসের প্রথম ৯ দিন।
হজ্জের বা উমরার ইহরাম করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা:) পাঁচটি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন;
১) যুল হুলাইফা বা আবিআরে আলী। মক্কা শরীফ থেকে ৪২০ কি.মি. উত্তরে। মদীনার পথে আগত হাজীরা এখান থেকে ইহরাম করবেন।
২) জুহফা। মক্কা শরীফ থেকে ১৮৬ কি.মি. উত্তর-পশ্চিমে। সিরিয়া, প্যালেস্টাইনের পথে আগত হাজীরা এখান থেকে ইহরাম করবেন।
৩) কারনুল মানাযেল বাসাইল কবীর। মক্কা শরীফ থেকে ৭৮ কি.মি. পূর্বে। নজদের পথে আগত হাজীরা এখান থেকে ইহরাম করবেন।
৪) ইয়ালামলাম। মক্কা শরীফ থেকে ১২০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে লোহিত সাগরের ধারে। ইয়েমেনের দিক থেকে আগত হাজীরা এখান থেকে ইহরাম করবেন।
৫) যাতু ইরাক। মক্কা শরীফ থেকে ১০০ কি.মি. উত্তর-পূর্বে। ইরাকের দিক থেকে আগত হাজীরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধবেন।
তাছাড়া জেদ্দা শহর এবং বিমানবন্দরজলপথে আগমনকারীদের জন্য মীকাত হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। জেদ্দা, জুহফা মীকাতের সমান্তরালে অবস্থিত। মীকাত এর সমান্তরাল স্থান হতে ইহরাম বাঁধা যায়।
ইহরাম করার নিয়ম
উপরোক্ত কোন মীকাতে পৌঁছলে হজ্জ বা উমরা পালনকারীকে নি¤েœর নিয়মে ইহরাম বাঁধতে হবে।
১- পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। শরীরের ময়লা সাফ করে, নাভির নীচের পশম পরিস্কার করে, গোঁফ কেটে ও শরীরের দুর্গন্ধ দুর করে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করা সুন্নাত।
২- গোসল করা। রাসূলুল্লাহ (সা:) নিজে গোসল করেছেন এবং কোন কোন সাহাবীকে গোসল করতে বলেছেন। এমনকি কোন মহিলা যদি ঋতুবতী হন তার জন্যও গোসল করা সুন্নাত। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা:) আসমা বিনতে উমাইস (রা:) নামক সাহাবীয়াকে ঋতুবতী হওয়া সত্ত্বেও গোসল করে ইহরাম বাঁধতে নির্দেশ দেন।
৩- পুরুষেরা দু‘টি সেলাইবিহীন সাদা থান কাপড় পরবেন। মহিলারা যে কোন কাপড় পরতে পারেন। সেলাই বিহীন বলতে বুঝানো হয় শরীরের মাপে সেলাই করা কোন পোশাক হবে না। যেমন থান কাপড়, চাদর, গামছা ইত্যাদিতে কোন সেলাই বা জোড়া থাকলে কোন অসুবিধা নেই।
৪- শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা, বিশেষত গায়ের চাদরের নীচে। হযরত আয়েশা (রা:)হযরত রাসূলুল্লাহকে (সা:) এসময়ে আতর মাখিয়ে দিয়েছিলেন।
৫- যানবাহনে আরোহণের পর যাত্রা শুরু হলে ইহরামের নিয়ত করে উচ্চস্বরে তালবিয়া (লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা ......) বলা।
৬- তালবিয়া নি¤œরূপ:
لَبَّيْكَاللَّهُمَّلَبَّيْكَ, لَبَّيْكَلَاشَرِيكَلَكَلَبَّيْكَ, إِنَّالْحَمْدَوَالنِّعْمَةَلَكَوَالْمُلْكَلَاشَرِيكَلَكَ
উচ্চারণ:লাব্বাইকাআল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লাশারী-কা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান্নি‘য়মাতা লাকা ওয়াল মুলক, ল-শারী-কা লাকা।
অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! আমি আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হয়েছি, আমি উপস্থিত হয়েছি। আপনার কোন শরীক নেই, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হয়েছি। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা আপনারই জন্য। সকল নেয়ামতের মালিক আপনি। সকল ক্ষমতা ও আধিপত্য আপনারই। আপনার কোন শরীক নেই।”
৭- ইহরামের পর থেকে সর্বদা উচ্চস্বরে তালবিয়া বলা উচিত, বিশেষত উঁচুতে উঠতে ও নীচুতে নামতে।
৮- হজ্জ বা উমরায় যারা আকাশপথে আসেন তারা বিমানে আরোহণের আগেই পরিচ্ছন্নতা, গোসল, সুগন্ধি ব্যবহার ও ইহরামের কাপড় পরে নিতে পারেন। বিমান মীকাতের কাছাকাছি পৌঁছালে হজ্জ বা উমরার নিয়ত করে তালবিয়া বলবেন।

ইহরাম অবস্থায় নি¤œলিখিত কাজগুলি নিষিদ্ধ ও বর্জনীয়
প্রথম, পুরুষ-মহিলা সবার জন্য বর্জনীয় হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর মিলন। শরীরে কোন চুল বা পশম কাটা, ছাঁটা বা উঠানো। হাত বা পায়ের নখ কাটা। শরীরে বা কাপড়ে সুগন্ধি ব্যবহার করা। কোন জীবজন্তু শিকার করা।
দ্বিতীয়, শুধু পুরুষদের জন্য বর্জনীয় হচ্ছে শরীরের মাপে বানানো বা সেলাই করা পোশাক পরা। মাথার সাথে লেগে থাকে এমন কিছু দিয়ে মুখ ঢাকা।
তৃতীয়, মহিলারা বর্জন করবেন, নেকাব বা বোরকার মুখাবরণ দিয়ে মুখ ঢাকা। হাত মোজা ব্যবহার করা।
ফিদইয়ার বর্ণনা
উপরে বর্ণিত বর্জনীয় কাজের কোনোটা করলে ক্ষতিপুরণ দিতে হয়, যাকে ফিদইয়া বলে।
১) যদি কেউ স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে কোন বর্জনীয় কাজ করেন, যেমন চুল/নখ কাটেন, সুগন্ধি ব্যবহার করেন, কোন মহিলা যদি মুখে নেকাব বা হাতে হাতমোজা ব্যবহার করেন, তাহলে তাকে প্রত্যেক অপরাধের জন্য একটি ছাগল/ভেড়া/দুম্বা জবেহ করতে হবে, অথবা ৬জন দরিদ্রকে খাওয়াতে হবে, অথবা ৩দিন রোযা রাখতে হবে।
২) যদি কেউ অজ্ঞানে, অনিচ্ছায়, বাধ্য হয়ে বা ভুলে উপরের বর্জনীয় কোন কাজ করেন তাহলে তাঁর কোন পাপ হবে না এবং তাঁকে কোন ফিদইয়া দিতে হবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন;
لَيْسَعَلَيْكُمْجُنَاحٌفِيمَاأَخْطَأْتُمْبِهِوَلَكِنْمَاتَعَمَّدَتْقُلُوبُكُمْ
অর্থ: “তোমরা যা ভুল করে করেছ তাতে কোন অপরাধ হবে না, কিন্তু তোমরা ইচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে যা করেছ তা ধর্তব্য।”(সুরা আহযাব: আয়াত ৫)
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন;
إِنَّاللَّهَتَجَاوَزَعَنْأُمَّتِيالْخَطَأَ،وَالنِّسْيَانَ،وَمَااسْتُكْرِهُواعَلَيْهِ
অর্থাৎ“নিশ্চয়ই আল্লাহতা‘আলা আমার উম্মতের অজ্ঞানতাবশত কৃত, ভুলবশত কৃত ও জবরদস্তিমূলকভাবে করানো অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন।”( )
হানাফী মাযহাব মতে, কেউ উকুফে আরাফার পূর্বে স্ত্রী সহবাস করলে তার হজ্জ ফাসেদ হয়ে যাবে, তবে তাকে হজ্জের বাকী কাজ চালিয়ে যেতে হবে এবং তার উপর একটি ছাগল/ভেড়া/দুম্বা কোরবানী করা ওয়াজিব হবে এবং পরবর্তীতে হজ্জ কাজা করতে হবে। আর উকুফে আরাফার পরে স্ত্রী সহবাস করলে তার হজ্জ ফাসেদ হবে না, তবে তার উপর উট কোরবানী করা ওয়াজিব হবে।
অন্যান্য মাযহাব মতে, হজ্জ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে হজ্জ ফাসেদ হয়ে যাবে, তবে তাকে হজ্জের বাকী কাজ চালিয়ে যেতে হবে এবং তার উপর উট কোরবানী করা ওয়াজিব হবে। তারা উকুফে আরাফার আগে বা পরে স্ত্রী সহবাসের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেননি।
তাওয়াফ
তাওয়াফের পরিচয়
কা‘বাঘরের চারপাশের্^ শরীয়ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে ৭বার প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলা হয়।
তাওয়াফেরফযীলত
হযরতরাসূলুল্ল্াহ (সা:) বলেন;
مَنْطَافَبِالْبَيْتِوَصَلَّىرَكْعَتَيْنِ،كَانَكَعِتْقِرَقَبَةٍ
অর্থাৎ, “যে ব্যক্তি কা’বা শরীফ তাওয়াফ করবে অতঃপর দুই রাকাত নামায আদায় করবে তাকে একটি দাসী আযাদ করার সমান সাওয়াব দেয়া হবে।”( )
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন;
لاَيَضَعُقَدَمًاوَلاَيَرْفَعُأُخْرَىإِلاَّحَطَّاللَّهُعَنْهُخَطِيئَةًوَكَتَبَلَهُبِهَاحَسَنَةً.
তাওয়াফকারীর প্রতি কদম উঠানো ও নামানোর সময় আল্লাহ তার একটি গোনাহ মাফ করেন এবং একটি  নেকী লিখে দেয়া হয়।( )
তাওয়াফের রোকনসমূহ
১। তাওয়াফের নিয়ত করা।
২। হাতিমের বাইর দিয়ে তাওয়াফ করা।
৩। তাওয়াফের অধিকাংশ চক্কর পূর্ণ করা।
তাওয়াফের ওয়াজিবসমূহ
১। পবিত্র অবস্থায় অযুর সাথে তাওয়াফ করা।
২। সতর ঢাকা।
৩। অক্ষম না হলে কোনো কিছুতে সওয়ার না হয়ে হেঁটে তাওয়াফ করা।
৪। হাজরে আসওয়াদের কোণ বরাবর থেকে তাওয়াফ শুরু করা।
৫। কা‘বাকে বামপাশে রেখে তাওয়াফ করা।
৬। ৭ চক্কর পূর্ণ করা।
৭। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহীমে দুই রাকাত সালাত আদায় করা।
তাওয়াফের সুন্নাতসমূহ
১। হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা।
২। এপাথর চুম্বন করা বা হাত দিয়ে ইশারা করা।
৩। রোকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা।
৪। ইজতিবা করা।অর্থাৎ ইহরাম পরিহিত অবস্থায় ডানকাঁধ খোলা রাখা।
৫। পুরুষের জন্য যে তাওয়াফের পর সায়ী করা হবে সে তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা, অর্থাৎ কিছুটা দৌড়ের ভঙ্গিতে চলা।
৬। তাওয়াফের সময় দু‘আ ও যিক্র করা।
৭। কা‘বাঘরের কাছাকাছি হয়ে তাওয়াফ করা
৮। তাওয়াফ শেষে দুইরাকাত নামায আদায় করে বেশী করে যমযমের পানি পান করা।
এর কোন একটি বাদ পড়লেও তাওয়াফ শুদ্ধ হয়ে যাবে।
তাওয়াফের সময় নিষিদ্ধ কাজসমূহ
১। নেফাজবা হায়েজ অবস্থায় তাওয়াফ করা।
২। বিনা অযুতে তাওয়াফ করা। তাওয়াফ অবস্থায় অযু নষ্ট হয়ে গেলে তাওয়াফ স্থগিত করে অযু করে নিতে হবে। অযু করে পুনরায় ওই স্থান থেকে তাওয়াফ শুরু করা যেখানে অযু নষ্ট হয়েছিল।
৩। হাতিমের ভিতর দিয়ে তাওয়াফ করা।
৪। তাওয়াফে ৭ চক্করের কম করা।
৫। ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে কষ্ট দেয়া।
তাওয়াফের সময় মাকরুহ কাজসমূহ
১। নাপাক কাপড় পরিধান করে তাওয়াফ করা।
২। তাওয়াফের সময় অনর্থক কথা-বার্তা বলা।
৩। উচ্চস্বরে দু‘আ বাকুরআন তেলাওয়াত করা।
৪। এক চক্কর দিয়ে অন্য চক্কর দিতে অকারণে বিলম্ব করা।
৫। খুতবা বা নামাযের জামাতের সময় তাওয়াফ করা।
৬ । তাওয়াফ অবস্থায় পানাহার করা।
৭। তাওয়াফের সময় নামাযের মত হাত বাঁধা বা ঘাড়ে হাত রাখা।
তাওয়াফের প্রকারসমূহ
তাওয়াফ তিনপ্রকার
১। তাওয়াফুল কুদুম। মক্কায় প্রবেশের পর সর্বপ্রথম যে তাওয়াফটি করা হয় তাকে তাওয়াফুল কুদুম বলা হয়। এইটি সুন্নাত তাওয়াফ।
২। তাওয়াফুল ইফাদ্বা। কোরবানীর দিনসমূহে যে তাওয়াফ করা হয় তাকে তাওয়াফুল ইফাদ্বা বলা হয়। এটি ফরয তাওয়াফ।
৩। বিদায়ী তাওয়াফ। যাদের বাসস্থান মীকাতের বাইরে তাদের জন্য হজ্জের সমস্ত কাজ শেষ করে মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা ওয়াজিব। এটাই তাওয়াফুল বিদা।
তাওয়াফের নিয়ম
১. কা‘বা ঘরের কাছে পৌঁছে উমরা পালনকারী তালবিয়া (লাব্বাইকা...) পাঠ বন্ধ করবেন। এরপর হাজরে আসওয়াদের (কাল পাথরের) কাছে পৌঁছে সম্ভব হলে
২. بِسْمِاللهِوَاللهُأَكْبَرُ. “বিসমিল্লাহি ওয়া আল্লাহু আকবার” বলে তাতে হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন এবং চুমু দিবেন। ভীড় থাকলে ঠেলাঠেলি করে মানুষকে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে না। বরং সম্ভব হলে শুধুমাত্র হাত বা লাঠি দিয়ে স্পর্শ করবেন এবং হাতে বা লাঠিতে চুমু দিবেন। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে দূর থেকে হাত দিয়ে اللهُأَكْبَر “আল্লাহ আকবার” বলবেন।
৩. এরপরকা‘বাকে বামে রেখে তাওয়াফ শুরু করবেন।
৪. রোকনে ইয়ামানী বা কা‘বাঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পৌঁছার পর সম্ভব হলে بِسْمِاللهِوَاللهِأَكْبَرُ“বিসমিল্লাহি ওয়া আল্লাহ আকবার” বাاللهُأَكْبَرُ ‘আল্লাহ আকবার’ বলেরোকনে ইয়ামানীকে স্পর্শ করবেন। তাকবীর একবারই বলতে হবে। ভীড়ের কারণে রোকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা সম্ভব না হলে স্বাভাবিকভাবে তাওয়াফ করে এগিয়ে যাবেন। হাত দিয়ে রোকনে ইয়ামানীর দিকে ইশারা করার দরকার নেই, হাদীসে তা বলা হয়নি।
৫. তাওয়াফ করার সময়ে কোন নির্দিষ্ট দু‘আ নেই। কাজেই তাওয়াফ করাকালীন কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল বা  যিক্র করতে পারেন, বা যেকোনো ভাষায় যে কোন দু‘আপাঠ করতে পারেন।
৬. শুধুমাত্র প্রতি চক্করের শেষে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর শেখানোনীচের দু‘আ বলবেন;
رَبَّنَاآتِنَافِيالدُّنْيَاحَسَنَةًوَفِيالْآخِرَةِحَسَنَةًوَقِنَاعَذَابَالنَّار
উচ্চারণ,রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতান, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া ক্বিনা আযাবান নার।
অর্থ :“হে আমাদের প্রভু, আমাদেরকে দুনিয়ার (পার্থিব) জীবনে কল্যাণ ও মঙ্গল দান কারন, পরকালের জীবনকে কল্যাণ ও মঙ্গলময় করুন এবং আমাদেরকে দোযখের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।”(সূরা বাকারা: আয়াত ২০১)
এই তাওয়াফের সময় কেবল পুরুষদের জন্য নীচের দুটি বিষয় সুন্নাত
১) ‘ইজতিবা’ অর্থাৎ গায়ে জড়ানো চাদরের মধ্যভাগ ডান বগলের নীচে রেখে দুই প্রান্ত বাম কাঁধের উপরে রাখা। এতে ডান কাঁধ খোলা থাকবে। সাত চক্কর তাওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এভাবে করা সুন্নাত। তবে তাওয়াফ ছাড়া অন্য সময়ে ‘ইজতিবা’ করবেন না, স্বাভাবিকভাবে দুই কাঁধঢেকে চাদর পরবেন। বিশেষত নামাযের সময়ে অবশ্যই দুই কাঁধ ঢেকে রাখবেন।
২) ‘রমল’ অর্থাৎ দৌড়ানোর ভঙ্গিতে ছোট পদক্ষেপেবাহাদুরী প্রদর্শন করে তাওয়াফ করা। সাত চক্করের মধ্যে শুধু প্রথম ৩ চক্করে ‘রমল’ করতে হবে। বাকী ৪ চক্করে স্বাভাবিকভাবে হাঁটবেন।
উল্লেখ্য যে, তাওয়াফে কুদুম বা তাওয়াফে ইফাদার পরে সায়ী করা যায়, সুতরাংযে তাওয়াফের পর সায়ী করা হবে সে তাওয়াফে পুরুষের জন্য প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করাসুন্নাত।
ক্স ৭ চক্কর তাওয়াফের পর সম্ভব হলে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে অথবা হারামের যে কোন স্থানে ২রাকাত নামায আদায় করবেন। প্রথম রাকাতে সূরা কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকাতে “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ” সূরা পড়া সুন্নাত।
ক্স নামাযের পর সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদে ডান হাত দিয়ে তা স্পর্শ করা সুন্নাত। এরপর সায়ী করার জন্য সাফার দিকে যাবেন।  
সায়ী
সায়ীর পরিচয়
সায়ী শব্দের অর্থ চেষ্টা করা, দৌড়ানো, দ্রুত চলা। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সাতটি চক্কর দেয়াকে সায়ী বলে। সাফা পাহাড় থেকে মারওয়ায় গেলে এক চক্কর, মারওয়া থেকে সাফায় গেলে এক চক্কর হয়। এভাবে ৭চক্কর দেয়া ওয়াজিব। সাফা থেকে শুরু করে মারওয়া পাহাড়ে শেষ করবে।

সায়ী শুদ্ধ হওয়ার শর্ত
১। প্রথমে তাওয়াফ এবং পরে সায়ী করা।
২। সাফা থেকে শুরু করে মারওয়া পাহাড়ে শেষ করা।
৩। সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী পূর্ণ দূরত্ব অতিক্রম করা। একটু কম হলেও চলবে না।
৪। ৭ চক্কর পূর্ণ করা।
৫। সায়ী করার স্থানেই সায়ী করতে হবে। এর পাশ দিয়ে করলে চলবে না।
৬। হজ্জ বা উমরার জন্য ছাড়া কোনো নফল সায়ী নেই। আর তাওয়াফের পরেই সায়ী করতে হয়।
সায়ীর সুন্নাতসমূহ
১। পবিত্র অবস্থায় অযুর সাথে সতর ঢেকে সায়ী করা।
২। তাওয়াফ শেষে লম¦া সময় ব্যয় না করে সঙ্গে সঙ্গে সায়ী করা।
৩। ধারাবাহিকভাবে একের পর এক সায়ী করা। দুই সায়ীর মাঝে বিলম্ব না করা।
৪। দু’টি সবুজ বাতির মধ্যবর্তীস্থানে পুরুষদের একটু দৌড়ানো।
৫। প্রতি চক্করেই সাফা মারওয়া পাহাড় দু’টিতে আরোহণ করা।
৬। সাফা ও মারওয়া পাহাড় ও এর মধ্যবর্তী স্থানে যিক্র ও দু‘আ করা।
৭। শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী মাঝহাবের এক বর্ণনা মতে সক্ষম ব্যক্তির পায়ে হেঁটে সায়ী করা সুন্নাত। আর হানাফী মাযহাবে ওয়াজিব।
সায়ী করার নিয়ম
সম্ভব হলে সাফা পাহাড়ের উপরে ওঠা উত্তম, অসুবিধা হলে এর পাদদেশে দাঁড়াবেন এবং নীচের আয়াতটি পড়বেন:
إِنَّالصَّفَاوَالْمَرْوَةَمِنْشَعَائِرِاللَّهِفَمَنْحَجَّالْبَيْتَأَوِاعْتَمَرَفَلَاجُنَاحَعَلَيْهِأَنْيَطَّوَّفَبِهِمَاوَمَنْتَطَوَّعَخَيْرًافَإِنَّاللَّهَشَاكِرٌعَلِيمٌ.
উচ্চারণ:ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহ, ফামান হাজ্জাল বাইতা আওই’তামারা ফালা জুনাহা আলাইহি আঁইয়াত্তাওয়াফা বিহিমা ওয়ামান তাতওয়াআ খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শাকিরুন আলীম।
অর্থ:“নিশ্চয় সাফা এবং মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত, কাজেই যে ব্যক্তি হজ্জ বা উমরা করবে তাঁর জন্য এদুয়ের মাঝে সায়ী করা অনুচিত হবে না। আর যদি কেউ বেশী করে ভাল কাজ করে তাহলে আল্লাহ কৃতজ্ঞ ও জ্ঞানী।”(সূরা বাকারা: আয়াত ১৫৮)
এরপর মুস্তাহাব হলো কিবলামুখী হয়ে বলবেন;
الحَمْدُلِلّهِاللهُأَكْبَرُ ‘আলহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার’।

এরপর  তিনবারবলবেন;
لَاإلَهَإلَّااللهُ،وَاللهُأَكْبَرُ. لَاإِلَهَإلَّااللهُوَحْدَهُلَاشَرِيْكَلَهُ،لَهُالًمُلْكُوَلَهُالْحَمْدُيُحْيِيْوَيُمِيْتُوَهُوَعَلَىكُلِّشَيْئٍقَدِيْرٌ. لَاإلَهَإِلَّااللهُ،وَحْدَهُ،أَنْجَزَوَعْدَهُ،وَنَصَرَعَبْدَهُ،وَهَزَمَالأَحْزَابَوَحْدَهُ.
উচ্চারণ:লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ইয়ুহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়া’দাহু, ওয়া নাসারা ‘আবদাহু, ওয়া হাযামাল  আহযাবা ওয়াহদাহু।
অর্থাৎ, “আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক বা অংশীদার নেই। রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই, তিনিই জীবন দেন, মৃত্যু দেন এবং তিনি সর্বশক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই, তিনি একক, তিনি তাঁর ওয়াদা বাস্তবায়ন করেছেন,তাঁর বান্দাকে বিজয়ী করেছেন এবং তিনি একাই সকল বিরোধী শক্তিকে পরাজিত করেছেন।”( )
এরপর হাত তুলে ইচ্ছামত আল্লাহর কাছে দু‘আ করবেন।
সাফাও মারওয়ার মাঝে সায়ীর সময়ে করণীয়
উল্লেখ্য যে,তাওয়াফে কুদুম বা তাওয়াফে ইফাদার পরে সায়ী করা যায়। তাই হাজীর সুবিধার্থে ইফরাদ ও ক্বিরান হজ্জ পালনকারী  তাওয়াফে কুদুমের পর আর তামাত্তু হজ্জ পালনকারী ইহরামের পর একটি নফল তাওয়াফ করে হজ্জের সায়ী করে নিতে পারেন।
- সাফা থেকে নেমে হেঁটে মারওয়ার  দিকে যেতে হবে। সবুজ চিহ্নের কাছে এলে পুরুষেরা দৌড়াবেন দ্বিতীয় সবুজ চিহ্ন পর্যন্ত। এরপর স্বাভাবিকভাবে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে উপরে বর্ণিত তাকবীর, তাহলীল ও দু‘আর পর সেখান থেকে সাফার দিকে এগোতে হবে। মহিলারা সর্বদা স্বাভাবিকভাবে হাঁটবেন, তাদের জন্য দৌড়ানো সুন্নাত নয়।
- সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত গেলে একবার সায়ী হয়, আবার মারওয়া থেকে সাফা গেলে আরেক সায়ী হয়। এভাবে ৭বার সায়ী করতে হবে। এতে সাফা থেকে শুরু হবে এবং মারওয়াতে গিয়ে শেষ হবে।
- সায়ী করার সময় যত বেশী সম্ভব দু‘আ ও যিক্র করা উচিত। এছাড়া অযু অবস্থায় সায়ী করা উচিত। তবে অযু ছাড়াও সায়ী জায়েয, কিন্তু তাওয়াফ অযু ছাড়া হবেই না।
হজ্জের প্রকারসমূহ ও তার বর্ণনা
হজ্জের মাসসমূহ অর্থাৎ শাওয়াল, যিলকদ বা যিলহজ্জ মাসের শুরুতে যে ব্যক্তি উপরে বর্ণিত কোন এক মীকাতে পৌঁছান, তিনি নীচের তিন প্রকার হজ্জের যে কোনো এক প্রকারের নিয়তে ইহরাম করবেন।
১) তামাত্তু হজ্জ : মীকাত থেকে শুধুমাত্র উমরার নিয়তে ইহরাম করে বলবেন;لَبَّيْكَعُمْرَةً ‘লাব্বাইকা উমরাতান’। মক্কায় পৌঁছে উমরার তাওয়াফ ও সায়ী করে মাথার চুল চেঁছে বা ছেঁটে ফেলবেন। এরপর যিলহজ্জ মাসের ৮তারিখে শুধুমাত্র হজ্জের নিয়তে ইহরাম করে বলবেন;لَبَّيْكَحَجًّا‘লাব্বাইকা হাজ্জান’ ও হজ্জের বিধানাবলী পালন করবেন। তামাত্তু হজ্জ পালনকারীকে ‘হাদয়ী’ অর্থাৎ হজ্জের কোরবানী দিতে হবে।
২) ইফরাদ হজ্জ :মীকাত থেকে শুধুমাত্র হজ্জের নিয়তে ইহরাম করে বলবেন;لَبَّيْكَحَجًّا ‘লাব্বাইকা হাজ্জান’। মক্কা পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম আদায় করবেন এবং হজ্জের সায়ী করবেন। চুল ছাঁটবেন না বা কাটবেন না বা ইহরাম ভাংবেন না। বরং ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করবেন। যিলহজ্জ মাসের ৮, ৯,১০ তারিখে হজ্জের বিধানাবলী পালনের পর তিনি চুল কাটবেন বা ছাঁটবেন এবং হালাল হবেন। (ইফরাদ হজ্জকারী ইচ্ছা করলে সায়ী তাওয়াফে কুদুমের পরে না করে হজ্জের শেষে ফরয তাওয়াফের পরেও করতে পারেন।)
৩) ক্বিরান হজ্জ :মীকাত থেকে একত্রে হজ্জ ও উমরার নিয়তে ইহরাম করে বলবেন;لَبَّيْكَعُمْرَةًوَحَجًّا ‘লাব্বাইকা উমরাতান ও হাজ্জান’। যদি শুধুমাত্র উমরার নিয়তে মক্কায় পৌঁছান এবং উমরা আদায়ের আগেই উমরার সাথে হজ্জের নিয়ত করে নেন তাহলেও তা ক্বিরান হজ্জ বলে গণ্য হবে। ক্বিরান হজ্জ পালনকারী ঠিক ইফরাদ হজ্জ পালন করার মত হজ্জ করবেন। একমাত্র নিয়ত ছাড়া কোন পার্থক্য নেই। তবে ক্বিরান হজ্জ পালনকারীকে তামাত্তু হজ্জ পালনকারীর ন্যায় ‘হাদয়ী’ বা দমের কোরবানী দিতে হবে, আর ইফরাদ হজ্জ পালনকারীকে কোন ‘হাদয়ী’ বা হজ্জের কোরবানী দিতে হবে না।
- তামাত্তু হজ্জ আদায় করাই উত্তম, কারণ রাসূলুল্লাহ (সা:) তাঁর সাহাবীদেরকে তামাত্তু করতে নির্দেশ ও উৎসাহ দেন।
উমরা আদায়ের নিয়ম
ক) মক্কায় প্রবেশের পর
-মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কা পৌঁছার পর গোছল করা মুস্তাহাব, কারণ রাসূলুল্লাহ (সা:) তা করেছিলেন। এরপর মসজিদে প্রবেশকালে বলবেন;
بِسْمِاللهِوالصَّلَاةُوالسَّلَامُعَلَىرَسُوْلِاللهِ،أَعُوْذُبِاللهِالعَظِيْمِوَبِوَجْهِهِالْكَرِيْمِ،وَسُلْطَانِهِالْقَدِيْمِ،مِنَالشَّيْطَانِالرَجِيْمِ،اللَّهُمَّافْتَحْلِيْأَبْوَابَرَحْمَتِكَ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি, ওয়াছ্ছালা-তু ওয়াস্সালা-মু আলা রাসূলিল্লাহি, আউ-যু বিল্লা-হিল আযিমি ওয়া বিওয়াজহিহিল কারিমি, ওয়া সুলতানিহিল ক্বাদীমি, মিনাশ শাইত্বানির রাজিমি, আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা।
অর্থ:“আল্লাহর নামে এবংরাসূলুল্লাহর উপর দরুদ ও সালাম।আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে মহান আল্লাহর, তাঁর সম্মানিত সত্তার, তাঁর অনাদি ক্ষমতার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ, আপনি আমার জন্য আপনার রহমতেরকল্যাণের দরজাগুলি খুলে দিন।”( )
খ)পূর্ববর্ণিত নিয়মে তাওয়াফ করা।
গ) পূর্ববর্ণিত নিয়মে সায়ী করা।
- ঘ)সায়ীর পরে করণীয়
৭বার সায়ী করার পর পুরুষেরা মাথা মু-ন করাবেন অথবা চুল ছাঁটাবেন। পুরুষদের জন্য মাথা মু-ন করানো উত্তম। তামাত্তুকারীর জন্য ছাঁটানো উত্তম, তিনি হজ্জের পরেমাথা মু-ন করবেন। মাথা মু-ন করা বা ছাঁটা উভয় ক্ষেত্রেই পুরো মাথার চুল কাটতে বা ছাঁটতে হবে। আংশিক ছাঁটানো বা কাটানো জায়েয নয়।মেয়েরা সর্বাবস্থায় নখ পরিমাণ চুল ছাঁটবেন।
হজ্জের কর্মসমূহের বিবরণ
৮ যিলহজ্জের (তালবিয়ার দিনের) করণীয়
- এদিন দুপুরের আগে তামাত্তু হজ্জ পালনকারী, যিনি ইতোপূর্বে উমরা করে ইহরাম ছেড়ে মক্কায় অবস্থান করছেন, তিনি ইতোপূর্বে ইহরামের সময়ে বর্ণিত নিয়মে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে পরিচ্ছন্ন করে গোছল করবেন। এরপর পুরুষেরা সেলাইবিহীন ইহরামের কাপড় পরবেন। মহিলারা ইচ্ছেমত যে কোন পোষাক পরবেন, তবে মুখের নেকাব ও হাতমোজা পরবেন না।
- এরপর মক্কায় নিজের বাসা থেকে হজ্জের জন্য ইহরাম করে বলবেন;لَبَّيْكَحَجًّا ‘লাব্বাইকা হাজ্জান’। ইচ্ছা করলে শর্ত করতে পারেন;إِنْحَبَسَنِيْحَابِسٌفَمَحَلَّتِيْحَيْثُحَبَسْتَنِي ‘ইন হাবাসানী হাবিস ফামাহাল্লাতী হাইসু হাবাসতানী’, অর্থাৎ;“যদি আমি কোথাও বাধাগ্রস্ত হই তাহলে সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাব।”
- হজ্জের নিয়ত করার পর পূর্বে বর্ণিত ইহরাম অবস্থায় বর্জনীয় বিষয়গুলি বর্জন করতে হবে।
- এরপর (লাব্বাইকা..) পড়তে পড়তে মিনার পথে রওনা দিবেন।
- ইফরাদ ও ক্বিরান হজ্জ পালনকারী যেহেতু ইহরাম অবস্থায় থাকেন, সেহেতু তাঁর জন্য উপরের কিছুই করণীয় নয়, তিনি শুধু অন্যদের মত “তালবিয়া” (লাব্বাইকা..) পড়তে পড়তে মিনায় রওনা দিবেন।
- এখন থেকে ১০ তারিখে আকা‘বার কাঁকর মারা পর্যন্ত বেশী বেশী তালবিয়া (লাব্বাইকা..) বলতে হবে।
- ৮ তারিখ মিনায় পৌঁছানোর পর হাজীরা সেখানে যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার নামায আদায় করবেন এবং রাতে মিনায় অবস্থান করবেন। প্রত্যেক নামায ওয়াক্ত মতো আদায় করবেন। যোহর, আসর ও ইশার নামায কসর করে ২ রাকাত করে পড়বেন।
- হাদীসে বর্ণিত যিক্র-আযকার ও দু‘আ বেশী বেশী পড়বেন।
৯ যিলহজ্জের করণীয় (আরাফার দিন)
- সকালের ফজরের নামায মিনায় আদায় করবেন। সূর্যোদয়ের পর তালবিয়া বলতে বলতে আরাফার দিকে যাত্রা করবেন। হজ্জ পালনকারীর জন্য এদিন রোযা রাখা মাকরূহ।
- সম্ভব হলে আরাফার প্রান্তে পৌঁছে নামিরা প্রান্তরে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।
- যোহরের ওয়াক্ত হলে এক আযানে ও পৃথক পৃথক ইকামতে যোহর ও আসরের নামায একত্রে আদায় করবেন।
- এরপর আরাফার মাঠে প্রবেশ করবেন। আরাফার সীমানার মধ্যে আছেন কিনা তা অবশ্যই ভাল করে জেনে নিবেন, কারণ আরাফার বাইরে অবস্থান করলে হজ্জ হবে না।
- সূর্যাস্ত পর্যন্ত মনোযোগ ও আন্তরিকতার সাথে, কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী দু‘আ করতে হবে, যিক্র-আযকার করতে হবে, রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর উপর দরুদ ও সালাম পড়তে হবে। এছাড়া নীচের যিক্র বারবার করবেন;
لَاإلَهَإلَّااللهُ،وَحْدَهُ،لَاشَرِيْكَلَهُ،لَهُالْمُلْكُوَلَهُالحَمْدُيُحْيِيْوَيُمِيْتُوَهُوَعَلَىكُلِّشَيْءٍقَدِيْرٌ.
উচ্চারণ:লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ইয়ুহ্য়ী ওয়া ইয়ুমীতু, ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থাৎ, “আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বুদ বা উপাস্য কেউ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক বা অংশীদার নেই। রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই, তিনিই জীবন দেন, মৃত্যু দেন এবং তিনি সর্বশক্তিমান।”
- সূর্যাস্তের আগে আরাফা থেকে বের হবেন না।
- সূর্যাস্তের পর ধীরস্থির ও গাম্ভীর্যের সাথে মুযদালিফার দিকে যাত্রা করবেন। সম্ভব হলে একটু জোরে চলতে পারেন। মুযদালিফায় পৌঁছে একত্রে মাগরিব ও ইশার নামায (বিত্র সহ) আদায় করবেন।
- এরপর ফজর পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করবেন। তবে মহিলা ও দুর্বল পুরুষদের জন্য মাঝরাতের পর মুযদালিফা ত্যাগ করে মিনায় চলে যাওয়া জায়েয।
৩) ১০ যিলহজ্জের করণীয় (ঈদ ও কোরবানীর দিন)
- দুর্বল ও মহিলারা ছাড়া সবাই অবশ্যই ১০ তারিখ ফজর পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করে ফজরের নামায মুযদালিফায় পড়বেন।
- ফজরের নামাযের পরে চারদিকে ভালভাবে সকালের আলো ফুটে ওঠা পর্যন্ত কিবলামুখী হয়ে তাসবীহ, তাহলীল, যিক্র ও দু‘আ করে কাটাবেন।
- সূর্যোদয়ের পূর্বেই তালবিয়া (লাব্বাইকা...) বলতে বলতে শান্তভাবে মিনার দিকে যাত্রা করবেন। মুযদালিফার পরে মিনার আগে “ওয়াদি মুহস্সর” নামক স্থানে পৌঁছালে সম্ভব হলে একটু দ্রুত পা চালিয়ে এই জায়গা অতিক্রম করবেন।
- মুযদালিফা বা মিনা থেকে কংকর সংগ্রহ করবেন।(তবে জামারার কাছ থেকে কংকর নেয়া নিষেধ)
- জামারা বা পাথর (কংকর) মারার স্থানে গিয়ে সর্বশেষ জামারা বা ‘জামারাতুল আকা‘বাতে’ একটি একটি করে ৭টি কাঁকর নিক্ষেপ করবেন। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহ আকবার’ বলবেন। কংকর নিক্ষেপের পর তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবেন।
- কংকর নিক্ষেপের সময়ে মক্কাকে বামে ও মিনাকে ডানে রাখা সুন্নাত।
- এরপর ‘হাদয়ী’ বা হজ্জের কোরবানীর পশুজবেহ করবেন। নিজে এর গোশত খাবেন, সঙ্গীসাথী এবং দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করবেন। উল্লেখ্য যে, ‘হাদয়ী’ বা হজ্জের কোরবানী শুধু তামাত্তু বা ক্বিরান হজ্জ পালনকারীর জন্য ওয়াজিব।
- এরপর সম্পূর্ণ মাথার চুল মু-ন করবেন, বা ছাঁটবেন। চুল কাটাতে হজ্জের ইহরামের আংশিক সমাপ্তি হবে। ফলে হাজী সাহেবরা স্বাভাবিক পোষাকাদি পরবেন এবং ইহরামের কারণে বর্জনীয় সকল কর্ম করতে পারবেন, শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রীর মিলন বর্জন করতে হবে।
- এরপর মক্কায় গিয়ে হজ্জের ফরয তাওয়াফ (ইফাদ্বা) করবেন, তাওয়াফের ২ রাকাত নামায পড়বেন এবং সায়ী করবেন। [তাওয়াফ ও সায়ী করার পর ইহরাম পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে এবং হজ্জ পালনকারী সম্পূর্ণ স্বাভাবিকতা অর্জন করবেন]
- এরপর মিনায় ফিরতে হবে। ১০ তারিখ দিনগত রাত ও পরের রাতগুলি মিনায় কাটাতে হবে।

৪) ১১ যিলহজ্জের করণীয়
মিনায় রাত কাটাবেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায় করবেন। যথাসম্ভব বেশী বেশী তাকবীর বলবেন, আল্লাহর যিক্র করলেও কোন অসুবিধা নেই।
- কংকর নিক্ষেপের সময়ে মক্কাকে বামে ও মিনাকে ডানে রাখা সুন্নাত।
- এভাবে প্রথমে ছোট জামারাতে একটি একটি করে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। পরে রাসূলের সুন্নাত মতো পাশে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ দু‘আ করবেন। তারপর দ্বিতীয় বা মধ্যম জামারাতে গিয়ে আগের নিয়মে ৭টি কংকর ছুঁড়বেন এবং দু‘আ করবেন। তারপর শেষ জামারা বা আকা‘বার জামারাতে গিয়ে আগের নিয়মে ৭টি কংকর ছুঁড়বেন। এবারে আর দু‘আ করবেন না, বরং কংকর নিক্ষেপের পরেই জামারা থেকে চলে যাবেন। রাতে মিনায় থাকবেন।

৫)১২ যিলহজ্জের করণীয়
মিনায় রাত কাটান।
- ১১ তারিখের মত এদিনেও যোহরের পরে যে কানো সময় তিন জামারায় ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করবেন। প্রথম ও দ্বিতীয় জামারায় দাড়িয়ে দু‘আ করবেন, যেমন আগে বলা হয়েছে।
- এরপর ইচ্ছা করলে মিনা ত্যাগ করতে পারেন। বেলা ডোবার আগেই যাত্রা শুরু করতে হবে। তবে ১২ তারিখ দিনগত রাতও মিনায় কাটিয়ে ১৩ তারিখ জামারাতে কংকর নিক্ষেপ করে তারপর মিনা ত্যাগ করা উত্তম। রাসূলে আকরাম (সা:) ১৩ তারিখ যোহরের পর কংকর নিক্ষেপ করে মিনা ত্যাগ করেন।


১৩ যিলহজ্জের করণীয়
- যোহরের পর তিন জামারায় কংকর নিক্ষেপের পর মিনা ত্যাগ করে মক্কায় যাবেন।
- মক্কা ত্যাগ করার পূর্বে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে।

রামিয়ে জামার প্রসঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞাতব্য বিষয়
শয়তানের প্রতীক হিসাবে জামারায় তিনটি দেয়ালে কংকর নিক্ষেপ করাকে রামিয়ে জিমার বা ‘কংকর নিক্ষেপ’ করা বলা হয়। পূর্বে দেয়ালের স্থলে স্তম্ভ ছিল। সংকীর্ণতার কারণে তখন হাজীদের ভীষণ অসুবিধা হতো ও দুর্ঘটনা ঘটতো। জামারা তখন দু’তলা বিশিষ্ট ছিলো এবং কাঠের ব্রিজ দ্বারা চলাচল করতে হতো। ২০০৪ সাল থেকে দেয়াল স্তম্ভের কাজ করছে। ২০০৮-১০ সালে স্থানটির আরও উন্নতিকল্পে এর আমূল পরিবর্তন করা হয়। স্থানটি পাঁচতলা বিশিষ্ট ও প্রশস্ত করে ৪০ ফুট লম্বা দেয়াল স্থাপন করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক সিড়ির মাধ্যমে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে হাজীদের অসুবিধার নিরসন হয়েছে।
কংকর নিক্ষেপের সময়:দশই যিলহজ্জ ভোরে মিনাতে এসে প্রথম কাজ হলো জামারায়ে আকাবাতে (বড় জামারা) ৭টি কংকর নিক্ষেপ করা। এই জামারাটি মিনার সর্বপশ্চিমে মক্কার দিকে অবস্থিত। এই দিনে কংকর মারার সময় হলো সুবহে সাদিক হতে ১১ তারিখের সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে কংকর নিক্ষেপ করতে না পারলে দম ওয়াজিব হবে। ১০ তারিখে সুবহে সাদিকের আগে কংকর মারা জায়েয নেই। সুন্নাত ওয়াক্ত হলো ১০ তারিখে সূর্যোদয়ের পর হতে সূর্য হেলে পড়া পর্যন্ত। অত:পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত মোবাহ ওয়াক্ত এবং সূর্যাস্তের পর মাকরূহ ওয়াক্ত। এ সময় মহিলা বা দুর্বল-অসুস্থ ব্যক্তি কংকর মারলে মাকরূহ হবে না। ১০ তারিখে কংকর মারার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বর্জন করতে হবে। এ বছর আর হজ্জের তালবিয়া বলতে হবে না। ক্বারেন, মোতামাত্তে বা মুফরিদ যে ধরনের হাজীই হোন কিংবা সে হজ্জ বিশুদ্ধ হোক বা ফাসেদ হোক, সর্বাবস্থায় এই হুকুম।
জামারায়ে আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ করে সত্ত্বর সেখান থেকে সরে যেতে হবে। এখানে দাঁড়িয়ে মুনাজাত করা সুন্নাতের খেলাপ। ১০ তারিখের পরের দিনগুলিতে প্রথম ও দ্বিতীয় জামারাতে কংকর মেরে সেখানে কেবলামুখী হয়ে দু’আ করা জায়েয, অন্য স্থানে নয়। অন্যান্য দিনে সূর্য হেলে পড়ার পর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কংকর নিক্ষেপ করা সুন্নাত ওয়াক্ত আর সুবহে সাদিক পর্যন্ত মাক্রূহ ওয়াক্ত। যদি কেউ ১১ তারিখে রামি না করেন এবং ১২ তারিখের সুবহে সাদিক হয়ে যায় তবে ১১ তারিখের রামি বাদ পড়ে যাবে এবং এর সময় শেষ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় ১২ তারিখে রামির সাথে এর কাজা করতে হবে। ১২ তারিখের রামিরও একই অবস্থা হবে। আর ১৩ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত রামির সময় থাকে এবং এই সময়ের মধ্যে রামির কাজা আদায়ের সময়ও থাকে। পরে কাজা হবে না। দম দেয়া ওয়াজিব হবে।
যদি কোন দিনের রামি সেদিনের নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করা না হয় তবে সেটির কাজা ও দম উভয় ওয়াজিব হবে। আর যদি কেউ কোন রামি না করেন এবং সময়ও চলে যায় তবে একটি দম ওয়াজিব হবে।
হজ্জের দিনগুলিতে পরবর্তী রাতকে পূর্ববর্তী দিনের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হয়। ১৩ তারিখের পরবর্তী রাত ১৩ তারিখের দিনের অধীন হবে না। যদি কেউ সেদিনের পূর্ববর্তী রাতে, দিনের রামি আদায় করেন তবে রামি শুদ্ধ হয়ে যাবে, দম দিতে হবে না। ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে তিনটি জামারাতে রামি পর্যায়ক্রমে করতে হবে। অর্থাৎ প্রথমে উলা (ছোট), এর পর মধ্যম (উস্তা), তারপর আকাবা (বড়)কে কংকর মারতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে পুনরায় ঠিকভাবে মারতে হবে। কংকর নিক্ষেপ একটানা ও বিরতিহীনভাবে করতে হবে, নতুবা মাকরূহ হবে (সাওয়াব কমে যাবে)।
কংকর মারার শর্ত: কংকর মারা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ১০টি শর্ত আছে। যেমন,(১) কংকর নিক্ষেপ করতে হবে, রেখে দিলে চলবে না। (২) হাত দ্বারা রামি করতে হবে।(৩) জামারার তিন হাতের মধ্যে কংকর পড়তে হবে।(৪) নিক্ষেপকারীর নিজের হাতে কংকর মারতে হবে।(৫) সাতটি কংকর পৃথক পৃথকভাবে মারতে হবে। সব একসঙ্গে নিক্ষেপ করলে একটি কংকর ধরা হবে।(৬) সক্ষমতা সত্ত্বেও বিনা ওজরে অন্যের দ্বারা কংকর নিক্ষেপ করানো জায়েয নেই। অসুস্থ ব্যক্তি অন্যকে কংকর মারতে আদেশ করলে তবেই এ কাজ করা যাবে। কারণ এখানে অনুমতি থাকা শর্ত। এ বিষয়ে অসুস্থ ও অপারগ হলো তারা, যারা দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারে না। অন্যের কংকর মারার আগে নিজের কংকর মারতে হবে। শিশু বা অজ্ঞান ব্যক্তির রামি তরক হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না।(৭) কংকর মাটি জাতীয় হতে হবে। যেমন পাথর কিংবা অন্য পদার্থ দিয়ে রামি শুদ্ধ হয় না।(৮) সময়মতো কংকর নিক্ষেপ করতে হবে।(৯) রামির অধিকাংশ পূর্ণ করতে হবে।(১০) ক্রমানুযায়ী কংকর নিক্ষেপ করা।
অন্যান্য বিষয়
পুরুষ ও মহিলা সবার জন্য রামির আহকাম একই, এতে কোন পার্থক্য নেই। তবে মহিলারা রাতে রামি করতে পারেন। ভীড়ের জন্য মহিলার রামি অন্যে করে দেয়া জায়েয নেই, এরূপ করলে ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হবে। বড় দেয়ালে নিক্ষিপ্ত কংকর ঘেরা দেয়ালের মধ্যে পড়তে হবে। এর বাইরে পড়লে রামি শুদ্ধ হবে না। প্রত্যেক জামারাতে সাতের বেশী কংকর মারা মাকরূহ, তবে সন্দেহ হলে মারা যাবে।
রামির দু’আ
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكْبَرُ رَغْمًا لِلْشَيْطَانِ وِرِضَاءً لِلرَّحْمَانِ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, রাগমান লিশ্শায়তানি ওয়া রিদ্বাআন লির রাহমান।
অর্থ: “আল্লাহর নামে, যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহান। শয়তানকে বিপর্যস্ত করার উদ্দেশ্যে এবং পরম করুণাময় মাওলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমি এ কংকর নিক্ষেপ করছি।”
হাজী সাহেবদের জন্য এ কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। একটি কংকর নিক্ষিপ্ত না হলেই দম ওয়াজিব হবে।
নি¤œবর্ণিত বিষয়গুলির প্রতি  সবিশেষ খেয়াল রাখা উচিত
১- তাওয়াফের জন্য পাক থাকা অর্থাৎ অযু-গোছল অবস্থায় থাকা জরুরী, তা নাহলে তাওয়াফ হবে না। সায়ীর জন্য পাক থাকা উত্তম।
২- তাওয়াফের দুই রাকাত নামাযে তাহিইয়াতুল মাসজিদও আদায় হয়ে যাবে।
৩- তাওয়াফ বা সায়ী করাকালীন যদি জামাতের নামায শুরু হয়ে যায় তাহলে জামাতে নামায আদায় করে এরপর বাকী তাওয়াফ বা সায়ী পূর্ণ করতে হবে।
৪- তাওয়াফ বা সায়ীর গণনায় ভুল বা সন্দেহ হলে কম সংখ্যার উপর নির্ভর করবেন। যেমন, যদি সন্দেহ হয় ৪ চক্কর তাওয়াফ করেছি বা ৫ চক্কর সেক্ষেত্রে ৪ চক্কর ধরে বাকী তাওয়াফ পূরণ করবেন।
৫- হাদয়ী বা হজ্জের কোরবানীর জানোয়ার সঙ্গে নিয়ে গেলে অবশ্যই ক্বিরান করতে হবে, উমরার পর হালাল হওয়া যাবে না। হজ্জ আদায় হবার পরই হালাল বা স্বাভাবিক হবেন।
৬- যদি কেউ ইফরাদ বা ক্বিরান হজ্জের ইহরাম করেন, তিনি ইচ্ছা করলে নিয়ত পরিবর্তন করে তামাত্তুর নিয়ত করতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি মক্কায় পৌঁছে শুধু উমরা করে হালাল হয়ে যাবেন।
৭- রাসূলুল্লাহ (সা:) সফরে থাকা অবস্থায় বিতরের নামায ও ফজরের ২ রাকাত সুন্নাত ছাড়া অন্য কোন সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামায সাধারণত পড়তেন না।
৮- মদীনা শরীফে মসজিদে নববী যিয়ারত করার সাথে হজ্জের কোন সম্পর্ক নেই। হজ্জের সব কর্ম মক্কা শরীফেই শেষ হয়ে যায়। মদীনা যিয়ারত একটি পৃথক নেক আমল। হজ্জের আগে পরে বা যেকোনো সময় তা করা যেতে পারে।
৯- হাজী সাহেবের উপর দায়িত্ব হলো হজ্জের মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে আলেমদেরকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেয়া। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন;
فَاسْأَلُواأَهْلَالذِّكْرِإِنْكُنْتُمْلَاتَعْلَمُونَ
“যদি তোমরা না জান তাহলে আলেমদেরকে জিজ্ঞসা করে জেনে নাও।”[নাহাল: আয়াত ৪৩]
এছাড়া প্রয়োজনীয় বই-পুস্তক পড়ে বা ক্যাসেট শুনে সঠিক জ্ঞান অর্জনের চেষ্ট করবেন। অবহেলা করে না জেনে সুন্নাতের খিলাফ আমল করলে তা গ্রহণযোগ্য হয়না। বরং অনেক সময় গোনাহর মধ্যে পড়তে হয়।
সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষা করুন
সরাসরি রোদের তাপে না থাকার চেষ্টা করুন। নীচের নিয়মাবলী মেনে চলুন:
- ছাতা ব্যবহার করুন।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, বিশেষত যমযমের পানি।
- সাদা বা হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুতি কাপড় পরিধান করুন।
- অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন, শরীরকে মাত্রাতিরিক্ত ক্লান্ত করবেন না।
- খালি পায়ে হাঁটবেন না, সর্বদা জুতা বা স্যান্ডেল পরে চলাফেরা করুন।

মাহরাম ছাড়া মহিলা কি হজ্জে যেতে পারবে?
https://www.youtube.com/watch?v=ka31oLIthTM

হজ্জের পরে করণীয়
হজ্জ মুসলিমের জীবনে খুবই গুরুত্বপুর্ণ ইবাদত। এই ইবাদতকে আল্লাহর দরবারে গ্রহণীয় করতে এবং এর সাওয়াব ও কল্যাণ ধরে রাখতে আমাদের নি¤েœ বর্ণিত কাজগুলি বিশেষভাবে করা প্রয়োজন।
১- বেশী বেশী আল্লাহর যিক্র করা। আল্লাহ তা‘আলা এজন্য নির্দেশ দিয়ে বলেছেন;
فَإِذَاقَضَيْتُمْمَنَاسِكَكُمْفَاذْكُرُوااللَّهَكَذِكْرِكُمْآبَاءَكُمْأَوْأَشَدَّذِكْرًا
“হজ্জের দায়িত্ব ও বিধানাবলী সম্পূর্ণভাবে পালন করা হয়ে গেলে তোমরা আল্লাহর যিক্র করবে, যেমন করে তোমরা তোমাদের পিতা, পিতামহদের স্মরণ কর, বরং তার চেয়েও বেশী বেশী আল্লাহর যিক্র করবে।”[সূরাবাকারা: আয়াত ২০০]
২- হজ্জ আদায়ের তাওফিক আল্লাহর বড় নেয়ামত, এজন্য সর্বপ্রকারে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন;لَئِنْشَكَرْتُمْلَأَزِيدَنَّكُمْ“যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, শুকরিয়া আদায় কর, তাহলে আমি অবশ্যই আরও বেশী নেয়ামত দান করব।”[সূরা ইবরাহীম: আয়াত ৭]
৩- পুনরায় হজ্জে আসার জন্য দৃঢ়ভাবে নেক নিয়ত করা। কোন কারণে পুনরায় হজ্জ করা সম্ভব না হলেও দৃঢ় সংকল্পের জন্য আল্লাহর কাছে পুরস্কার পাবেন।
৪- সকল প্রকার পাপ বর্জনের দৃঢ় সংকল্প করা। হজ্জ কবুল হওয়ার লক্ষণ হলো হাজী সাহেবের মনমানসিকতা ও কর্মের পরিবর্তন। তিনি হজ্জের পরে বেশী করে নেক আমল করতে এবং পাপ থেকে বিরত থাকতে তাওফিক পাবেন।
কতিপয় ভুল ধারণা ও কর্ম
- হজ্জ শেষ হওয়ার আগে ইহরামের কাপড় পাল্টানো যায় না মনে করা। হাজী সাহেব ইচ্ছেমতো একাধিক ইহরামের কাপড় ব্যবহার করতে পারেন এবং যতোবার ইচ্ছা পাল্টাতে পারেন।
- হজ্জের বা উমরার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘ইজতিবা’ করে থাকা, অর্থাৎ ডান কাঁধ খোলা রেখে ইহরাম পরা।
- ইহরামের সময় ২ রাকাত নামায পড়া জরুরী মনে করা।
- জোরে জোরে তালবিয়া না পড়া, বা ইহরামের পরে আর তালবিয়া না পড়া, বা আরাফায় ও মুযদালিফায় তালবিয়া পাঠ না করা।
- সমষ্টিগতভাবে সবাই একসাথে একতালে তালবিয়া পাঠ করা, বা একজনের পিছে সবাই আউড়ানো। সুন্নাত হলো প্রত্যেকে নিজে নিজে শব্দ করে তালবিয়া পাঠ করবে।
- মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় বা কা‘বা শরীফ দর্শনের সময় বিশেষ দু‘আ বলা, যা হাদীসে উল্লেখ করা হয়নি।
- হাজরে আসওয়াদ চুমু খাওয়া জরুরী মনে করা, বা হজ্জ বা উমরার শর্ত মনে করা।
- তাওয়াফের সময় প্রত্যেক চক্করে বিশেষ বিশেষ দু‘আ পড়া। এগুলি সবই বিদ‘আত বা হাদীস-বহির্ভূত। হাদীসে তাওয়াফের জন্য কোনো বিশেষ দু‘আবা কোনো বিশেষ চক্করের জন্য বিশেষ দু‘আশেখানো হয়নি। বরং তাওয়াফের সময় হয় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করবেন, অথবা যেকোনো ভাষায় যেকোনোদু‘আ করবেন।
- তাওয়াফের সময় সশব্দে দু‘আ পড়াও সুন্নাতের খিলাফ ও অন্যায়।
- তাওয়াফের ২ রাকাত নামায মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে ছাড়া জায়েয হবে না বলে মনে করা। মসজিদের যে কোন স্থানে এ নামায পড়া যায়।
- সাফায় আরোহণ করে কা‘বা শরীফের দিকে ইশারা করা।
- মহিলাদের জন্য সায়ীর সময়ে সবুজ চিহ্নদ্বয়ের মাঝে দৌড়ানো। শুধু পুরুষদের জন্য দৌড়ানো বা দ্রুত চলা সুন্নাত।
- সায়ীর সময় প্রত্যেকবার সাফা ও মারওয়ায় পৌঁছে
إِنَّالصَّفَاوَالْمَرْوَةَمِنْشَعَائِرِاللَّهِفَمَنْحَجَّالْبَيْتَأَوِاعْتَمَرَفَلَاجُنَاحَعَلَيْهِأَنْيَطَّوَّفَبِهِمَاوَمَنْتَطَوَّعَخَيْرًافَإِنَّاللَّهَشَاكِرٌعَلِيمٌ.
উচ্চারণ: “ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহ, ফামান হাজ্জাল বাইতা আও‘ইতামারা....”[সূরা বাকারা:১৫৮] আয়াতটি পড়া। শুধুমাত্র সায়ীর শুরুতে এই আয়াত পড়তে হবে।
- হজ্জ বা উমরার শেষে মাথার কিছু অংশের চুল কাটা বা ছাঁটা, বা অল্প কয়েকটা চুল কেটে নেয়া।
- আরাফা, মিনা বা মুযদালিফায় যিক্র-আযকার, দু‘আ বা তিলাওয়াত ছাড়া বাজে কথায় বা আলসেমীতে সময় নষ্ট করা।
- মুযদালিফায় অবস্থান না করে রাতেই মিনার দিকে চলে আসা।
- জামারাতে নিক্ষেপের কংকর মুযদালিফা থেকে সংগ্রহ করা জরুরী মনে করা, অথবা কংকরগুলি ধুয়ে নেয়া উত্তম বলে মনে করা।
- প্রথম ও দ্বিতীয় জামারাতে কংকর ছোঁড়ার পর দাঁড়িয়ে দু‘আ না করা।
- কম বয়সের বা ত্রুটিযুক্ত জানোয়ার কোরবানী দেয়া, অথবা জবেহ করার পরে জানোয়ার ফেলে দেয়া।
- ইশারা করে কা‘বা শরীফকে বিদায় জানানো, বা বিদায়ী তাওয়াফের পর মক্কায় অবস্থান করা।
- মদীনা শরীফে শুধু রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর রওযা যিয়ারতের জন্য সফর করা জায়েয মনে করা। হাদীসে মসজিদে নববীর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনায় সফরের জন্য বলা হয়েছে।
মসজিদে নববীর ফযীলত
আমরা আগেই বলেছি, মদীনায় যাওয়া হজ্জের কোন অংশ নয়। কেউ হজ্জ করে মদীনায় না গেলে তার হজ্জে কোন ক্ষতি হবে না। অনেকেরই জীবনে একবারের বেশী হজ্জ করা সম্ভন হয়না। তাই হজ্জের সফরে মদীনার মসজিদে সালাত আদায় করারফযীলত অর্জন ও ইসলামের অনেক স্মৃতি বিজড়িত স্থান যিয়ারত খুব সহজেই করা যায়। যা দেখতে সকল ঈমানদারের মনই সর্বদা ব্যাকুল থাকে। এতে মুমিনের ঈমানও বাড়ে।আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেকে অনেক কিছুই করে ফেলেন। আবার অনেকে বলেন আবেগ ও ভালবাসা কোন নিয়ম মানতে চায় না। মনে রাখতে হবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম আমাদের আদর্শ মানতে হবে। এর বাইরে কোন কিছু করতে গেলেই সাওয়াবের পরিবর্তে গোনাহ হতে পারে। তাই রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর নির্দেশিত পথের বাইরে কোন কিছু করবেন না। আর সাহাবায়ে কেরাম হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা:) আপনার-আমার চেয়ে অনেক বেশী ভালবাসতেন।
মসজিদে প্রবেশের আদব রক্ষা করে মসজিদে নববীতে ঢুকে সালাত আদায় করবেন, মসজিদে নববীতে সালাত আদায়ের অনেক ফযীলত রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, মসজিদে হারাম ব্যতীত আমার এ মসজিদে সালাত আদায় করা অপরাপর মসজিদে এক হাজার সালাতের চাইতে উত্তম।( )
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা (বায়তুল মুকাদ্দাস) তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে (অতিরিক্ত সাওয়াবের আশায় সালাত আদায়ের) উদ্দেশ্যে সফর করবে না।( )
মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার আদব
মসজিদে প্রবেশের সময় ডানপা, বের হওয়ার সময় বামপা দিবেন, আর নি¤েœর দু‘আগুলি পড়বেন।
মসজিদে প্রবেশের যিক্র-১
بِسْمِاللهِ، (وَالْحَمْدُللهِ) اللّهُمَّصَلِّعَلَىمُحَمَّدٍوسَلِّم، (اَللّهُمَّاغْفِرْلِيْذُنُوْبِيْ) وَافْتَحْلِيْأَبْوَابَرَحْمَتِكَ
উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি, (ওয়াল ‘হামদুলিল্লাহি,) আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা- ম‘ুহাম্মাদিন ওয়া সাল্লিম, (আল্লাহুম্মাগফির লী যুনূবী) ওয়াফ্তা‘হ্ লী আবওয়া-বা রা‘হ্মাতিকা।
অর্থ :“আল্লাহর নামে এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর। হে আল্লাহ, মুহাম্মাদের উপর সালাত ও সালাম প্রদান করুন। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি উন্মুক্ত করুন।”( )
মসজিদে প্রবেশের যিক্র-২
أَعُوْذُبِاللهِالْعَظِيْمِوَبِوَجْهِهِالْكَرِيْمِوَسُلْطَانِهِالْقَدِيْمِمِنَالشَّيْطَانِالرَّجِيْمِ
উচ্চারণ:  আ‘ঊযু বিল্লা-হিল ‘আযীম, ওয়া বি-ওয়াজ্হিহিল কারীম, ওয়া সুলতা-নিহিল ক¦াদীম মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।
অর্থ: “আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মহান আল্লাহর এবং তাঁর সম্মানিত চেহারার এবং তাঁর অনাদি ক্ষমতার, বিতাড়িত শয়তান থেকে।”আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা:) মসজিদে প্রবেশের সময় এ কথা বলতেন এবং তিনি বলেছেন, “যদি কেউ তা বলে তবে শয়তান বলে, সারাদিনের জন্য এ ব্যক্তি আমার খপ্পর থেকে রক্ষা পেল।” হাদীসটি সহীহ।( )
মসজিদ থেকে বের হওয়ার যিক্র-১
بِسْمِاللهِ،اللّهُمَّصَلِّعَلَىمُحَمَّدٍوسَلِّم، (اَللّهُمَّاغْفِرْلِيْذُنُوْبِيْ) اللَّهُمَّإِنِّيْأَسْأَلُكَمِنْفَضْلِكَ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি, আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা- ম‘ুহাম্মাদিন ওয়া সাল্লিম, (আল্লাহুম্মাগফির লী যুনূবী) আল্লা-হুম্মা ইন্নি আস‘আলুকা মিন ফাদ্ব্লিকা।
অর্থ: আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ, মুহাম্মাদের উপর সালাত ও সালাম প্রদান করুন। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন এবং হে আল্লাহ আপনার নিকট রিয্ক চাই ।”( )
মসজিদ থেকে বের হওয়ার যিক্র-২
اَللّهُمَّأَجِرْنِيْمِنَالشَّيْطَانِالرَّجِيْم.
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা, আর্জিনী মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম।
অর্থ : “হে আল্লাহ আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্ষা করুন।”
আবু হুরাইরা (রা:) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় এ যিক্র পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসটি সহীহ।( )
মসজিদে কুবার ফযীলত
রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন তখন সর্বপ্রথম যে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন তা হল মসজিদে ক্বুবা। তিনি প্রতি শনিবার সেখানে গিয়ে সালাত আদায় করতেন।
১- আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) প্রতি শনিবার হেঁটে অথবা আরোহণ করে মসজিদে ক্বুবাতে এসে ২রাকাত নামায পড়তেন।আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার বলেন, ইবনে উমরও (রা:) এরূপ করতেন।( )
এই অর্থে উসাইদ ইবনে যুহাইর থেকে ইমাম তিরমিযী (সুনানে তিরমিযী ৩২৪)আরেকটি হাদীস বর্ণনা করে হাদীসটি হাসান সহীহ বলেছেন।
২- সাহল ইবনে হুনাইফ(রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন; যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে ক্বুবাতে এসে সালাত আদায় করে, সে একটি উমরা পরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে। হাদীসটি সহীহ। ইমাম হাকেম, যাহাবী, ইরাকী, শায়খ আলবানী ও আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।( )
কোনো কোনো রেওয়ায়েতে ২ রাকাত আবার কোন রেওয়ায়েতে চার রাকাতের কথা বলা আছে।( )
৩-আয়েশা বিনতে সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, মসজিদে ক্বুবায় ২রাকাত সালাত আদায় করা আমার কাছে বাইতুল মাক¦দিসে ২রাকাত সালাত আদায় করা থেকে উত্তম। মানুষ যদি জানত কুবায় কি তাহলে উটে চড়ে হলেও আসত।সনদটি সহীহ।( )
মসজিদে যুলক্বিবলাতাইন
রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন মদীনায় হিজরত করেন তখন মদীনার অধিকাংশ অধিবাসী ছিল ইহুদী ও নাসারা।হিজরতের পর ১৬/১৭ মাস যাবততিনি বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেন।
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সা:)কে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করার আদেশ দিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা:) তাঁর পূর্ব পিতা ইব্রাহীম (আ:)-এর ক্বিবলা বাইতুল্লাহর দিকে ফিরে সালাত আদায় করা পছন্দ করতেন।মদীনায় হিজরতের পর ১৬/১৭ মাসবাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করার পর একদিন আসরের সালাত আদায়ের সময় আল্লাহতা‘আলা ক্বিবলা পরিবর্তনের আয়াত নাযিল করে ইরশাদ করেন;
قَدْنَرَىتَقَلُّبَوَجْهِكَفِيالسَّمَاءِفَلَنُوَلِّيَنَّكَقِبْلَةًتَرْضَاهَافَوَلِّوَجْهَكَشَطْرَالْمَسْجِدِالْحَرَامِوَحَيْثُمَاكُنْتُمْفَوَلُّواوُجُوهَكُمْشَطْرَهُوَإِنَّالَّذِينَأُوتُواالْكِتَابَلَيَعْلَمُونَأَنَّهُالْحَقُّمِنْرَبِّهِمْوَمَااللَّهُبِغَافِلٍعَمَّايَعْمَلُونَ
অর্থ: “(ক্বিবলা পরিবর্তনের জন্য) তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে (যেভাবে আমার আদেশের অপেক্ষায়) থাকতে, তা আমি অবশ্যই দেখতে পেয়েছি, তাই তোমার পছন্দমতো (দিককেই) ক্বিবলা বানিয়ে দিচ্ছি, (এখন থেকে) তোমরা এই মর্যাদাসম্পন্ন মসজিদের দিকে ফিরে (সালাত আদায় করতে( থাকবে; তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তোমাদের মুখমন্ডল সে দিকেই ফিরিয়ে দেবে; এসব লোক যাদের কাছে আগেই কিতাব নাযিল করা হয়েছিলো, তারা ভাল করেই জানে; এ ব্যাপারটা তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে আসা সম্পূর্ণ একটি সত্য (ঘটনা, এ সত্ত্বেও) তারা (এর সাথে) যে আচরণ করে যাচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা তা থেকে মোটেও অনবহিত নন।”(সূরা বাকারা: আয়াত ১৪৪)
আর যেই মসজিদটিতে ক্বিবলা পরিবর্তন হয় তাকে বলা হয় “যুলক্বিলাতাইন” অর্থাৎ দুই ক্বিবলাসম্পন্ন মসজিদ। তাই এই মসজিদটি একটি দর্শনীয় স্থান, তবে এই মসজিদের বিশেষত্ব কোনো হাদীসে আছে বলে জানা নেই।
উহুদ পাহাড়
এই পাহাড়টি মসজিদে নববী থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারউত্তরে অবস্থিত, যার পাদদেশে মুসলমান ও মক্কার কাফেরদের মাঝে দি¦তীয় বৃহত্তম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কিছুসংখ্যক সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর আদেশ অমান্য করার কারণে এযুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয় বরণ করতে হয়। এবং এতে অনেক মুসলমানের শাহাদাত বরণ করতে হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা:) এই পাহাড় সম্পর্কে বলেন;
هَذَاجَبَلٌيُحِبُّنَاوَنُحِبُّهُ“এই পাহাড়টি আমাদের ভালবাসে, আর আমরা তাকে ভালবাসি। অর্থাৎ এই পাহাড়ের অধিবাসীরা আমাদের ভালবাসে, আর আমরা তার অধিবাসীদের ভালবাসি।”( )
তবে এই পাহাড়ে গিয়ে সালাত আদায় করা বা এই পাহাড়ের বরকত নেয়া, তার মাটিতে বিশেষ কোনোফযীলত আছে বলে ধারণা করা ঠিক নয়। এই সমস্ত স্থানের মত আরও যে সমস্ত স্মৃৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে সবগুলিই ঐতিহাসিক স্থান যা আমাদেরকে রাসূলের জীবদ্দশার বিভিন্ন ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই আবেগের বশবর্তী হয়ে শরীয়ত গর্হিত কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।



















দ্বিতীয় অধ্যায়

মাসনুন দু‘আ ও যিক্র














দৈনন্দিন মাসনুন দু‘আসমূহ
হজ্জ দীর্ঘ সময়ের ইবাদত। অধিকাংশ সময় হাজী সাহেব কিছু ইবাদত-বন্দেগি, তাওয়াফ, সায়ী, দু‘আ-মুনাজাত করেন। এরপর মানবীয় প্রকৃতি অনুসারে সাথীদের সাথে গল্প-গুজব ও কথাবার্তায় রত হয়ে পড়েন। কার হজ্জ কেমন হলো, দেশের রাজনীতি কেমন চলছে, কে কোন্ ক্যাম্পে আছে ইত্যাদি খোঁজখবর নিতে ও গল্প-গুজবে সময় কাটান। আর গল্প ও কথাবার্তার অর্থই হলো অকারণ বাজে কথায় সময় নষ্ট করা অথবা অনুপস্থিত কোনো মানুষের আলোচনা-সমালোচনা করে গীবত ও অপবাদের মত ভয়ঙ্কর পাপে লিপ্ত হওয়া। গল্প-গুজবের মধ্যে এ দু‘টি ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই। কেউবা বাজারে ঘোরাঘুরি করে সময় নষ্ট করেন অথবা পাপময় দৃশ্য দেখে পাপ কামাই করেন। দেশ, রাজনীতি, বাজার ইত্যাদির সুযোগ অনেক পাবেন। কিন্তু মক্কা, মদীনা, মীনা, আরাফা জীবনে বারবার আসবে না। আল্লাহ দয়া করে তাঁর পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গিয়েছেন। প্রতিটি মুহূর্তকে মহামূল্যবান মনে করে আল্লাহর যিক্র ও তাওবা-ইস্তিগফারে কাটান। ক্লান্ত হলে বিশ্রাম করুন। তাহলে বিশ্রামও ইবাদতে পরিণত হবে। কিন্তু হজ্জকে টুরিজম মনে করে দেখে শুনে, বেড়িয়ে, গল্প করে পবিত্রভূমির মহামূল্যবান সময়গুলি নষ্ট করবেন না। বিশেষ করে গীবত ও পরচর্চা করা বা শোনা, টেলিভিশনে বা বাস্তবে অসুন্দর, তাকওয়াবিহীন বা আপত্তিকর দৃশ্য দেখা বা গল্প করা বা আল্লাহর ভয় ও যিক্র মন থেকে সরিয়ে দেয় এমন গল্পগুজব থেকে যথাসাধ্য বিরত থাকুন। সুন্নাত জানার ও মানার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করুন। ২৪ ঘন্টা সময় ইবাদত, যিক্র ও মাসনুন অযিফায় কাটান।
যিক্র
যিক্র মানে স্মরণ অর্থাৎ আল্লাহকে স্মরণ করা। রাসূলুল্লাহ (সা:) সব সময় আল্লাহর যিক্র করতেন। প্রত্যেকটি ইবাদতই আল্লাহর যিক্র। কিছু যিক্র আছে এমন যা কোনো সময় বা বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আর কিছু যিক্র আছে কোন নির্দিষ্ট সময় বা বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, যেকোনো সময় করা যায়। নিম্নে উভয় প্রকারের কিছু যিক্র দেয়া হলো। [বিস্তারিত জানতে পড়–ন ‘রাহে বেলায়েত’ লেখক: ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ১৯৫৮-২০১৬]
সাধারণ যিক্র যা সবসময় করা যায়
আল্লাহর ইবাদতের একত্ব প্রকাশের যিক্র
১- لَاإِلَهَإِلَّااللَّهُ.
উচ্চারণ: লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ (“আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই”)
২- "لَاإِلَهَإِلَّااللَّهُوَحْدَهُلَاشَرِيكَلَهُ،لَهُالْمُلْكُوَلَهُالْحَمْدُوَهُوَعَلَىكُلِّشَيْءٍقَدِيرٌ.
উচ্চারণ: লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থ: “নেই কোনো মা’বুদ আল্লাহ ছাড়া, তিনি একক তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
৩-لَاإِلَهَإِلَّااللَّهُوَحْدَهُلَاشَرِيكَلَهُلَهُالْمُلْكُوَلَهُالْحَمْدُيُحْيِيوَيُمِيتُوَهُوَحَيٌّلَايَمُوتُ،بِيَدِهِالْخَيْرُوَهُوَعَلَىكُلِّشَيْءٍقَدِيرٌ.
উচ্চারণ: লা- ইলা-হা ইল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ইয়ু’হয়ী ওয়া ইয়ুমীতু,ওয়াহুয়া হাইয়ুন লা ইয়ামুতু বিয়াদিহিল খাইরু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থ: “নেই কোনো মা’বুদ আল্লাহ ছাড়া, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি চিরঞ্জীব। তার হাতেই সকল কল্যাণ এবং তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা জ্ঞাপক যিক্র
৪- الحَمْدُللهِ
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহ। অর্থ: “প্রশংসা আল্লাহর জন্য।”
আল্লাহ তা‘আলার পবিত্রতা জ্ঞাপক যিক্র
৫- سُبْحَانَاللهِ
উচ্চারণ: সুব্’হা-নাল্লা-হ। অর্থ: “আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি।”
৬- سُبْحَانَاللهِالعَظِيْمِ.
উচ্চারণ: সুব্’হা-নাল্লা-হিল আযীম। অর্থ: “মহিমান্বিত আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি।”
৭- سُبُّوْحٌقُدُّوْسٌرَبُّالْمَلَائِكَةِوَالرُّوْحِ.
উচ্চারণ: সুব্বু’হুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালা-ইকাতি ওয়াররূহ।
অর্থ: “মহাপবিত্র, মহামহিম, ফেরেস্তাগণের এবং পবিত্রাত্মার প্রভু।”
৮- سُبْحَانَاللهِوَبِحَمْدِهِ.
উচ্চারণ: সুব্’হা- নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী।
অর্থ: “ঘোষণা করছি আল্লাহর পবিত্রতার এবং তাঁর প্রশংসাসহ।”
আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন; “যদি কেউ দিনের মধ্যে ১০০ বার ‘সুব্‘হা-নাল্লা-হি ওয়া বি‘হামদিহী’ বলে তাঁর সকল গোনাহ ক্ষমা করা হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমতুল্য হয়।”( )
৯- سُبْحَانَاللهِالعَظِيْمِوَبِحَمْدِهِ.
উচ্চারণ: সুব্’হা- নাল্লা-হিল আযীমি ওয়া বিহামদিহী।
অর্থ: “মহিমান্বিত আল্লাহর পবিত্রতা এবং প্রশংসা ঘোষণা করছি।”

আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠত্ব জ্ঞাপক যিক্র
১০- اللهُأَكْبَرُ
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার। অর্থ: “আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।”
উপরের চার প্রকার যিক্রের মূল চারটি বাক্য: ১, ৪, ৯ ও ১০ নং যিক্রের একত্রে উল্লেখ করে এগুলির বেশী বেশী জপ করার উৎসাহ প্রদান ও এর অপরিমেয় সাওয়াব বর্ণনা করে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
সামুরা ইবনে জুনদুব (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন;
أَحَبُّالْكَلامِإِلَىاللَّهِأَرْبَعٌسُبْحَانَاللَّهِوَالْحَمْدُلِلَّهِوَلاإِلَهَإِلاَّاللَّهُوَاللَّهُأَكْبَرُ،لايَضُرُّكَبِأَيِّهِنَّبَدَأْتَ.
উচ্চারণ: আহাব্বুল কালামি ইলাল্লহি আরবা’ সুবহানাল্লাহি, ওয়াল-হামদুল্লিাহি, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, লা ইয়ার্দুরুকা বি আইয়িহিন্না বাদা’তা।
অর্থ:“আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় বাক্য চারটি- ‘সুব‘হা-নাল্লাহ’, ‘আল-হামদুলিল্লাহ’, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং ‘আল্লাহু আকবার’। তুমি ইচ্ছামতো এই বাক্য চারটির     যেকোনো বাক্য আগে পিছে বলতে পার। (বাক্যগুলির সাজানোর ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম বা ফযীলত নেই)”( )
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রা:) বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন; “এ চারটি বাক্য যিক্রকারী প্রতিটি বাক্যের প্রতিটি অক্ষরের জন্য ১০টি করে সাওয়াব লাভ করবে।”( )
১১-الْحَمْدُلِلّهِعَدَدَمَاأَحْصَىكِتَابُهُ،وَالْحَمْدُلِلّهِمِلْءَمَاأَحْصَىكِتَابُهُ،والْحَمْدُلِلّهِعَدَدَمَاأَحْصَىخَلْقُهُ،وَالْحَمْدُلِلّهِمِلْءَمَافِيْخَلْقِهِ،وَالْحَمْدُلِلّهِمِلْءَسَمَوَاتِهِوَأرْضِهِ،وَالْحَمْدُلِلّهِعَدَدَكُلِّشَيْءٍ،وَالْحَمْدُللهِعَلَىكُلِّشَيْءٍ.
উচ্চারণ : (১) আল-‘হামদু লিল্লা-হি ‘আদাদা মা- আ‘হসা কিতাবুহু, (২) ওয়াল-‘হামদু লিল্লা-হি মিলআ মা- আ‘হসা কিতাবুহু, (৩) ওয়াল-‘হামদু লিল্লা-হি ‘আদাদা মা- আ‘হসা খালকুহু, (৪) ওয়াল-‘হামদু লিল্লাহি মিলআ মা- ফী খালকিহী, (৫) ওয়াল-হামদু লিল্লা-হি মিলআ সামাওয়া-তিহী ওয়া র্আদিহী, (৬) ওয়াল-‘হামদু লিল্লা-হি ‘আদাদা কুল্লি শাইয়িন, (৭) ওয়াল-‘হাম্দু লিল্লা-হি ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন।
অর্থ : “(১) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, তাঁর কিতাব যা গণনা করেছে সে পরিমাণ, (২) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, তাঁর কিতাব যা গণনা করেছে তা সব পূর্ণ করে, (৩) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, তাঁর সৃষ্টি যা গণনা করে সে পরিমাণ, (৪) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, তাঁর সৃষ্টির মধ্যে যা কিছু আছে তা পূর্ণ করে, (৫) সমস্ত  প্রশংসা আল্লাহর, যা তাঁর আসমান ও জমিন পূর্ণ করে, (৬) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, সকল কিছুর সংখ্যার সমপরিমাণ, (৭) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, সব কিছুর উপর।”
আবু উমামা (রা:) বলেন: “রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাকে দেখেন যে আমি আমার ঠোঁট নাড়াচ্ছি। তিনি আমাকে বলেন : হে আবু উমামা, তুমি কী বলে তোমার ঠোঁট নাড়াচ্ছ? আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আল্লাহর যিক্র করছি। তিনি বললেন : আমি কি তোমার রাতদিন যিক্রের চেয়েও উত্তম (যিক্র) তোমাকে শিখিয়ে দেব? আমি বললাম: হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন: তুমি বলবে ...... (উপরের যিক্রগুলি তিনি শিখিয়ে দিলেন)। এরপর বললেন: “উপরে যেভাবে (আল-হামদু লিল্লাহ) বলেছ ঠিক অনুরূপভাবে অনুরূপভাষায় তাসবীহ ‘সুব‘হা-নাল্লাহ’ বলবে এবং অনুরূপভাবে তাকবীর ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে।” অর্থাৎ, উপরের ৭টি বাক্যে ‘আল-হামদু লিল্লাহ’-এর স্থলে ‘সুব‘হা-নাল্লাহ’ দ্বারা ও ‘আল্লাহু আকবার’ দ্বারা ৭ বার করে বলতে হবে। হাদীসটি হাসান।”( )
১২- اَلحَمْدُللهِحَمْداًكَثِيْراًطَيّباًمُبَارَكاًفِيْهِ.
উচ্চারণ :আল-‘হামদু লিল্লা-হি ‘হামদান কাছীরান তাইয়িবান মুবা-রাকান ফীহি।
অর্থ :“সকল প্রশংসা আল্লাহর, অনেক অনেক প্রশংসা, পবিত্র ও বরকতময় প্রশংসা”।
কয়েকটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) এ কথাগুলির অত্যন্ত প্রশংসা করেন।( )
১৩- لاَحَوْلَوَلاَقُوَّةَإِلاَّبِاللهِ (الْعَلِيِّالْعَظِيْم)
উচ্চারণ : লা- ‘হাওলা ওয়া লা- ক্বূওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ (বিল্লা-হিল ‘আলিয়্যিল ‘আযীম)
অর্থ : “কোনো অবলম্বন নেই, কোনো ক্ষমতা নেই আল্লাহ ছাড়া বা আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (যিনি সর্বোচ্চ সুমর্যাদাময়)।”
আবু মুসা, আবু হুরাইরা, আবু যার, মু’আয, সা’দ ইবনে উবাদাহ (রা:) প্রমুখ সাহাবী থেকে বর্ণিত অনেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, তোমরা ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবে, কারণ এ বাক্যটি জান্নাতের ভান্ডারগুলির মধ্যে একটি ভান্ডার ও জান্নাতের একটি দরজা।( )



সময়ের সাথে নির্দিষ্ট যিক্র
দৈনন্দিন যিক্র ওঅযিফা
ঘুম ভাঙ্গার যিক্র
রাতে ঘুম থেকে উঠা দুই প্রকারের হতে পারে, রাতের বেলায় কোন কারণে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার এবং স্বাভাবিকভাবে ভোরে ঘুম থেকে উঠা।
রাতে ঘুম ভাঙ্গার যিক্র
لاَإِلَهَإِلاَّاللهُوَحْدَهُلاَشَرِيْكَلَهُلَهُالْمُلْكُوَلَهُالْحَمْدُوَهُوَعَلَىكُلِّشَىْءٍقَدِيْرٌ،الْحَمْدُللهِوَسُبْحَانَاللهِوَلاإِلَهَإِلاَّاللهُوَاللهُأَكْبَرُوَلاحَوْلَوَلاقُوَّةَإِلاَّبِاللهِ.
উচ্চারণ: লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া‘হদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল ‘হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর, ‘আল-‘হামদু লিল্লাহ’, ওয়া ‘সুব‘হা-নাল্লা-হি’, ওয়া লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া ‘আল্লা-হু আকবার’, ওয়া লা- ‘হাওলা ওয়া লা- ক্বুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হি।
অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। এবং তিনি সর্বোপরি ক্ষমতাবান। সকল প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। কোনো অবলম্বন নেই, কোনো ক্ষমতা নেই আল্লাহর (সাহায্য) ছাড়া।”
উবাদা ইবনে সামিত (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যদি কারো রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় এরপর সে উপরের যিক্রের বাক্যগুলি পাঠ করে এবং এরপর সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় অথবা কোনো প্রকার দু‘আ করে বা কিছু চায় তাহলে তার দু‘আ কবুল করা হবে। আর যদি সে এরপর উঠে ওযু করে (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করে তাহলে তার সালাত কবুল করা হবে।”( )
ঘুম থেকে ওঠার যিক্র
اَلحَمْدُلِلَّهِالَّذِيْأَحْيَانَابعْدَمَاأَمَاتَنَاوإِلَيْهِالنُّشُوْرُ.
উচ্চারণ: আল-‘হামদু লিল্লা-হিল লাযী আ‘হইয়া-না- বা‘দা মা- আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।
অর্থ: “সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে জীবিত করেছেন মৃত্যুর (ঘুমের) পরে, আর তাঁর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।”( )
ফজর নামাযের পরের যিক্র
اللَّهُمَّإنِّيْأَسْأَلُكَعِلْمًانَافِعًاوَعَمَلاًمُتَقَبَّلاًوَرِزْقًاطَيِّبًا.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আস্আলুকা ‘ইল্মান না-ফি‘আন, ওয়া ‘আমালান মুতাক্বাব্বালান ওয়া রিয্ক্বান ত্বাইয়িবান।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে চাচ্ছি কল্যাণকর জ্ঞান, কবুলকৃত আমল ও পবিত্র রিয্ক।”( )
ফজর ও মাগরিবের পরের যিক্র-১
لاَإِلَهَإِلاَّاللَّهُوَحْدَهُلاَشَرِيكَلَهُ،لَهُالْمُلْكُوَلَهُالْحَمْدُيُحْيِيوَيُمِيتُبِيَدِهِالْخَيْرُوَهُوَعَلَىكُلِّشَيْءٍقَدِيرٌ.
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া‘হদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল ‘হামদু, ইউ‘হয়ী ওয়া ইউমীতু বিইয়াদিহিল খাইরু ওয়া হুয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক¦াদীর।
অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দান করেন। তাঁর হাতেই সকল কল্যাণ এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
১০ বার অথবা ১০০ বার পড়ার কথা সহীহ হাদীস রয়েছে। (১)
ফজর ও মাগরিবের পরের দু‘আ-২ (৭ বার)
اَللّهُمَّأَجِرْنِيْمِنَالنَّارِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, আজিরনী মিনান না-র।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।”
হারিসইবনে মুসলিম (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাকে বলেছেন, তুমি ফজরের সালাতের পরেই (দুনিয়াবী) কথা বলার আগে এ দু‘আ ৭বার বলবে। যদি তুমি ওই দিনে মৃত্যুবরণ কর তাহলে আল্লাহ তোমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। অনুরূপভাবে, মাগরিবের সালাতের পরে কথা বলার আগেই এ দু‘আ ৭বার বলবে। তুমি যদি ওই রাতে মৃত্যুবরণ কর তাহলে আল্লাহ তোমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন।” অধিকাংশ মুহাদ্দিস হাদীসটিকে গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করেছেন।( )
ফরয সালাতের পরে মাসনুন যিক্র-মুনাজাত
(দু‘আ-১) ৩ বারأَسْتَغْفِرُالله(আস্-তাগফিরুল্লা-হ) আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।

(দু‘আ-২) ১বার নিম্নোক্ত দু‘আটি পড়া
اللَّهُمَّأَنْتَالسَّلاَمُوَمِنْكَالسَّلاَمُتَبَارَكْتَيَاذَاالْجَلاَلِوَالإِكْرَامِ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রাকতা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনিই সালাম (শান্তি), আপনার থেকেই শান্তি, হে মহাসম্মানের অধিকারী ও মর্যাদা প্রদানের অধিকারী, আপনি বরকতময়।”( )

(দু‘আ-৩) ১বার নিম্নোক্ত দু‘আটি পড়া
لاَإِلَهَإِلاَّاللَّهُوَحْدَهُلاَشَرِيْكَلَهُ،لَهُالْمَلْكُ،وَلَهُالْحَمْدُ،وَهْوَعَلَىكُلِّشَىْءٍقَدِيرٌ،اللَّهُمَّلاَمَانِعَلِمَاأَعْطَيْتَ،وَلاَمُعْطِىَلِمَامَنَعْتَ،وَلاَيَنْفَعُذَاالْجَدِّمِنْكَالْجَدُّ.
উচ্চারণ:লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া‘হদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল ‘হামদু, ওয়া হুআ ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক¦াদীর। আল্লা-হুম্মা, লা- মা-নি‘আ লিমা- আ‘অ্ত্বাইতা, ওয়ালা- মু‘অ্ত্বিয়া লিমা- মানা‘অ্তা, ওয়ালা- ইয়ান্ফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ:“আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ, আপনি যা দান করেন তা ঠেকানোর ক্ষমতা কারো নেই। আর আপনি যা না দেন তা দেয়ার ক্ষমতাও কারো নেই। কোনো ভাগ্যবানের ভাগ্য বা পরিশ্রমীর পরিশ্রম আপনার ইচ্ছার বাইরে কোনো উপকারে লাগে না।”( )
(দু‘আ-৪) আয়াতুল কুরসী ১ বার
আবু উমামা(রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তাঁর জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।”( )
(দু‘আ-৫) সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস ১ বার করে ( )
(দু‘আ-৬)৩৩বার “সুব‘হানাল্লাহ”, ৩৩ বার “আল‘্হামদুলিল্লাহ” এবং ৩৪ বার “আল্লাহু আকবার”। এ যিক্রগুলির বিষয়ে বিভিন্ন সহীহ হাদীসে বিভিন্ন সংখ্যা বলা হয়েছে। উপরের সংখ্যাটিই বেশী প্রসিদ্ধ।
اَللَّهُمَّأَعِنِّيعَلَىذِكْرِكَوَشُكْرِكَوَحُسْنِعِبَادَتِكَ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, আ‘ইন্নী ‘আলা- যিক্রিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবা-দাতিকা।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার যিক্র করতে, শোকর করতে এবং আপনার ইবাদত সুন্দরভাবে করতে তাওফীক ও ক্ষমতা প্রদান করুন।”( (
(দু‘আ-৭)
اللَّهُمَّإنِّيْأَعُوذُبِكَمِنَالْكُفْرِوَالْفَقْرِوَأَعُوذُبِكَمِنْعَذَابِالْقَبْرِ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল কুফ্রি ওয়াল ফাকরি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাব্রি।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রর্থনা করছি কুফরি থেকে ও দারিদ্র্য থেকে এবং আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব থেকে।”( )
(দু‘আ-৮)
اَللَّهُمَّأَصْلِحْلِيْدِيْنِيْ (اغْفِرْلِيْذَنْبِيْ) وَوَسِّعْلِيْفِيْدَارِيْوَبَارِكْلِيْفِيْرِزْقِيْ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, আস্ব্লি‘হ লী দ্বীনী, (ইগ্ফির লী যান্বী) ওয়া ওয়াস্সি‘য়্ লী ফী দা-রী ওয়া বা-রিক্ লী ফী রিযকী।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি আমার ধর্মজীবনকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করে দিন, (আমার পাপ ক্ষমা করুন) আমার বাড়িকে প্রশস্ত করে দিন এবং আমার রিযিকে বরকত দান করুন।”( )
(দু‘আ-৯)
اَللّهُمَّإنِّيْأَسْأَلُكَمِنَالْخَيْرِكُلِّهِمَاعَلِمْتُمِنْهُوَمَالَمْأَعْلَمْ،وَأَعُوْذُبِكَمِنَالشَّرِّكُلِّهِمَاعَلِمْتُمِنْهُوَمَالَمْأَعْلَمْ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আস্আলুকা মিনাল খাইরি কুল্লিহী, মা-‘আলিমতু মিনহু ওয়া মা- লাম আ‘অ্লাম। ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাশ শাররি কুল্লিহী, মা- ‘আলিমতু মিনহু ওয়া মা- লাম আ‘অ্লাম।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমার জানা ও অজানা সকল প্রকার কল্যাণ আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। এবং আমার জানা ও অজানা সকল অকল্যাণ ও অমঙ্গল থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
(দু‘আ-১০)
سُبْحَانَرَبِّكَرَبِّالْعِزَّةِعَمَّايَصِفُونَوَسَلاَمٌعَلَىالْمُرْسَلِيْنَوَالْحَمْدُللهِرَبِّالْعَالَمِيْنَ(الصفات ১৮০)
অর্থ: “পবিত্রতা আপনার প্রভুর মহাসম্মান ও পরাক্রমের, তারা যা বলে তা থেকে (তিনি পবিত্র) এবং সালাম (শান্তি) প্রেরিত পুরুষগণের (রাসূলগণের) উপর এবং প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য।”) (
[এ বিষয়ে আরও অনেক দু‘আ সহীহ সনদে রাসূল (সা:) থেকে প্রমাণিত রয়েছে, বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন ‘রাহে বেলায়াত’]
সকাল-বিকাল ও সকাল-সন্ধ্যার যিক্র
এ প্রকার যিক্র সুবহে সাদিকের পরে যে কোনো সময় পালন করা যায়। তবে সাধারণত মুমিন সালাতুল ফাজর আদায়ের পরেই যিক্রের জন্য বসেন বলে এগুলি এখানে উল্লেখ করছি।
(যিক্র -১)
১০০ বার سُبْحَانَاللهِ‘সুবহানাল্লাহ’। ১০০ বারالحَمْدُللهِ ‘আল-হামদুলিল্লাহ’। ১০০ বার اللهأكبر‘আল্লাহু আকবার’ ও ১০০ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুআ আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর’ (অথবা ১০০ বার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’)। ফজরের পরে ও আসরের পরে।

সায়্যিদুল ইস্তিগফার
(যিক্র-২) সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার (১ বার)
اللَّهُمَّأَنْتَرَبِّيلاإِلَهَإِلاَّأَنْتَخَلَقْتَنِيْوَأَنَاعَبْدُكَوَأَنَاعَلَىعَهْدِكَوَوَعْدِكَمَااسْتَطَعْتُأَعُوْذُبِكَمِنْشَرِّمَاصَنَعْتُأَبُوءُلَكَبِنِعْمَتِكَعَلَيَّوَأَبُوءُلَكَبِذَنْبِيْفَاغْفِرْلِيْفَإِنَّهُلاَيَغْفِرُالذُّنُوْبَإِلاَّأَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, আনতা রাব্বী, লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা, খালাক্বতানী, ওয়াআনা ‘আবদুকা, ওয়াআনা ‘আলা- ‘আহদিকা ওয়াওয়া‘অ্দিকা মাস তাতা‘অ্তু। আ‘ঊযু বিকা মিন শাররি মা- সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়াআবূউ লাকা বিযামবি। ফাগ্ফিরলী, ফাইন্নাহু লা- ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা- আনতা।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আমি আপনার কাছে প্রদত্ত অঙ্গিকার ও প্রতিজ্ঞার উপরে রয়েছি যতটুকু পেরেছি। আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমি যে কর্ম করেছি তার অকল্যাণ থেকে। আমি আপনার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি আপনি আমাকে যত নিয়ামত দান  করেছেন  তা-সহ  এবং  আমি  আপনার  কাছে  প্রত্যাবর্তন  করছি  আমার পাপ-সহ। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।”
যে ব্যক্তি এ দু‘আর অর্থের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রেখে দিনের বেলায় তা পাঠ করবে সে যদি সে দিন সন্ধ্যার আগে মৃত্যুবরণ করে, তবে সে জান্নাতী। আর যে ব্যক্তি এ দু‘আর অর্থে সুদৃঢ় একীন ও বিশ্বাস রেখে রাত্রে (সন্ধ্যায়) তা পাঠ করবে, সে যদি সে রাতেই সকালের আগে মৃত্যুবরণ করে, তবে সে জান্নাতী।”( )
(যিক্র -৩) আয়াতুল কুরসী- ১ বার: উবাই ইবনে কা’ব (রা.) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত জ্বিন থেকে হেফাযতে থাকবে এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তা পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত জ্বিন থেকে হেফাযতে থাকবে।হাদীসটি সহীহ।( )
(যিক্র -৪) সূরাইখলাস, ফালাক ও নাস প্রতিটি ৩ বার করে
মু’আয ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)  বলেছেন: “তুমি যদি সকালে ও সন্ধ্যায় তিন বার করে সূরা তিনটি (ইখলাস, ফালাক ও নাস) পাঠ কর তবে তোমার আর কিছুরই দরকার হবে না।” হাদীসটি সহীহ।( )
(যিক্র -৫) ১০০ বারسُبْحَانَاللهِوَبِحَمْدِهِ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’/سُبْحَانَاللهِالعَظِيْمِوَبِحَمْدِهِ‘সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহী’।
আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যদি কেউ সকালে ও সন্ধ্যায় ১০০ বার করে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ বলে, তবে তার চেয়ে বেশী না বলে কেউ তার চেয়ে বেশী আমল নিয়ে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হতে পারবে না।” অন্য বর্ণনায়: “সে ব্যক্তির গোনাহ যদি সমুদ্রের ফেনার চেয়েও বেশীহয়, তাহলেও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।” এক বর্ণনায় যিক্রের শব্দটি ‘সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।( )
(যিক্র -৬) তিন বার নি¤েœাক্ত দু‘আটি পড়া
سُبْحَانَاللهِوَبِحَمْدِهِعَدَدَخَلْقِهِوَرِضَىنَفْسِهِوَزِنَةَعَرْشِهِوَمِدَادَكَلِمَاتِهِ.
উচ্চারণ:সুব‘হা-নাল্লা-হি ওয়াবি‘হামদিহী, ‘আদাদা খাল্ক্বিহী, ওয়ারিদ্বা- নাফ্সিহী, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালিমাতিহী।
অর্থ: “পবিত্রতা আল্লাহর এবং প্রশংসা তাঁরই, তাঁর সৃষ্টির সম সংখ্যক, তার নিজের সন্তুষ্টি পরিমাণে, তাঁর আরশের ওজন পরিমাণে এবং তাঁর বাক্যের কালির সমপরিমাণ।”
উম্মুল মুমিনীন জুআইরিয়্যাহ(রা:) বলেন,হযরত রাসূলুল্লাহ (সা:) ফজরের সালাতের পরে তাঁকে তাঁর সালাতের স্থানে যিক্র রত অবস্থায় দেখে বেরিয়ে যান। এরপর তিনি অনেক বেলা হলে দুপুরের আগে ফিরে এসে দেখেন তিনি তখনও সে অবস্থায় তাসবীহ-তাহলীলে রত রয়েছেন। তিনি বলেন: “তুমি কি আমার যাওয়ার সময় থেকে এ পর্যন্ত এভাবেই যিক্রে রত রয়েছ?”  তিনি  বললেন: ‘হ্যাঁ।’ তখন রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন : “আমি তোমার কাছ থেকে বেরিয়ে চারটি বাক্য তিন বার করে বলেছি (উপরের বাক্যগুলি)। তুমি সকাল থেকে এ পর্যন্ত যত কিছু বলেছ সবকিছু একত্রে যে সাওয়াব হবে, এ বাক্যগুলির সাওয়াব একই পরিমাণ হবে।”( )
(যিক্র -৭) দরুদ শরীফ ১০ বার
হাদীসে বর্ণিত অনেকদরুদের মধ্যে থেকে যেকোনো দরুদ আপনি পড়তে পারেন। নামাযের মধ্যে যে দরুদটি পড়া হয় যাকে দরুদে ইব্রাহীম বলা হয় তাও পড়তে পারেন। অথবা সংক্ষেপে صَلَّاللهُعَلَىرَسُوْلِهِوَسَلَّمَ(সাল্লাল্লাহু আলা রাসূলিহি ওয়া সাল্লাম) দরুদটি পড়তে পারেন। নি¤েœর দরূদটিও পড়া যেতে পারে।
اللَّهُمَّصَلِّعَلَىمُحَمَّدٍعَبْدِكَوَرَسُوْلِكَ،وَصَلِّعَلَىالمُؤْمِنِيْنَوَالمُؤْمِنَاتِوَالمُسْلِمِيْنَوَالمُسْلِمَاتِ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিন, ‘আবদিকা ওয়া রাসূলিকা, ওয়া সাল্লি ‘আলাল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনা-ত, ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমা-ত।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি সালাত প্রেরণ করুন আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের উপর, এবং সালাত প্রেরণ করুন সকল মুমিন পুরুষ, মুমিন নারী, মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীর উপর।”
হযরতরাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, “যে ব্যক্তি সকালে আমার উপর ১০ বার সালাত (দরুদ) পাঠ করবে এবং সন্ধ্যায় ১০ বার আমার উপর সালাত পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভের সৌভাগ্য তাঁর হবে।” হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য।( )
(যিক্র -৮) ৩ বার নি¤েœাক্ত দু‘আটি পড়া
بِسْمِاللهِالَّذِيْلاَيَضُرُّمَعَاسْمِهِشَيْءٌفِيْالأرْضِوَلاَفِيْالسَّمَاءِوَهُوَالسَّمِيْعُالعَلِيْمُ.
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হিল লাযী লা- ইয়ার্দুরু মা‘আ ইসমিহী শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা- ফিস সামা-ই, ওয়া হুআস সামীউল ‘আলীম।
অর্থ : “আল্লাহর নামে (আরম্ভ করছি), যাঁর নামের সাথে জমিনে বা আসমানে কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী”
উসমান (রা.) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যদি কোনো বান্দা সকালে ও সন্ধ্যায় তিন বার করে এই দু‘আটি পাঠ করেতবে সেদিনে ও রাতে কোনো কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না।” হাদীসটি সহীহ।( )
)যিক্র -৯) ৩ বার নি¤েœাক্ত দু‘আটি পড়া
رَضِيْتُبِاللهِرَبًّاوَبِالْإِسْلاَمِدِينًاوَبِمُحَمَّدٍنَبِيًّا (وَبِالْقُرْآنِإِمَامًا)
উচ্চারণ:রাদীতু বিল্লা-হি রাব্বান, ওয়া বিল ইসলা-মি দীনান, ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যান। (ওয়া বিল কুরআনি ইমা-মান)।
অর্থ: “আমি সন্তুষ্ট-পরিতৃপ্ত আল্লাহকে প্রভু হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মাদ (সা:)-কে নবী হিসেবে গ্রহণ করে।” (কোনো কোনো হাদীসে সংযোজিত: “এবং কুরআনকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করে।”)
মুনাইযির(রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকালে এ বাক্যগুলি বলবে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করছি যে, তাঁর হাত ধরে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাব।” হাফিয হাইসামী হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন।( )
(যিক্র -১০) ৭ বার নি¤েœাক্ত দু‘আটি পড়া
حَسْبِيَاللهُلاإِلَهَإِلاَّهُوَعَلَيْهِتَوَكَّلْتُوَهُوَرَبُّالْعَرْشِالْعَظِيمِ.
উচ্চারণ: হাসবিয়াল্লা-হু, লা-ইলাহা ইল্লা-হুয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়া হুয়া রাব্বুল ‘আরশিল আ‘যীম। (সূরা তাওবা: ১২৯ আয়াত)
অর্থ: “আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, আমি তাঁরই উপর নির্ভর করেছি, তিনি মহান আরশের প্রভু।”
উম্মু দারদা (রা:) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় ৭ বার এ আয়াতটি পাঠ করবে আল্লাহ তাঁর দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা ও সমস্যা মিটিয়ে দিবেন।” হাদীসটির সনদ মোটামুটি গ্রহণযোগ্য।( )
(যিক্র -১১) ১ বার নি¤েœাক্ত দু‘আটি পড়া
يَاحَيُّيَاقَيُّوْمُبِرَحْمَتِكَأَسْتَغِيْثُأَصْلِحْلِيْشَأْنِيْكُلَّهُوَلاَتَكِلْنِيْإِلَىنَفْسِيْطَرْفَةَعَيْنٍ.
উচ্চারণ: ইয়া- হাইউ ইয়া কাইঊমু, বিরাহমাতিকা আসতাগী-সু, আসলিহ লী শা‘নী কুল্লাহু, ওয়া লা- তাকিলনী ইলা- নাফসী তারফাতা ‘আইনিন।
অর্থ: “হে চিরঞ্জীব, হে মহারক্ষক ও অমুখাপেক্ষী তত্ত্বাবধায়ক, আপনার রহমতের ওসীলা দিয়ে ত্রাণ প্রার্থনা করছি। আপনি আমার সকল বিষয়কে সুন্দর ও সাফল্যমন্ডিত করুন। আর আমাকে একটি মুহূর্তের জন্যও, চোখেরপলকের জন্যও আমার নিজের দায়িত্বে ছেড়ে দিবেন না।”
আনাস (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) ফাতেমা (রা:)-কে বলেছেন, “আমি ওসিয়ত করছি যে, তুমি সকালে ও সন্ধ্যায় এ  কথা বলবে।” হাদীসটি সহীহ।( )
(যিক্র -১২) ৩ বার নি¤েœাক্ত দু‘আটি পড়া
اَللَّهُمَّعَافِنِيفِيْبَدَنِيْاللَّهُمَّعَافِنِيْفِيْسَمْعِيْاللَّهُمَّعَافِنِيْفِيْبَصَرِيْلاَإِلَهَإِلاَّأَنْتَ،اَللَّهُمَّإنِّيْأَعُوْذُبِكَمِنْالْكُفْرِوَالْفَقْرِاللَّهُمَّإنِّيْأَعُوْذُبِكَمِنْعَذَابِالْقَبْرِلاَإِلَهَإِلاَّأَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লাহুম্মা ‘আ- ফিনী ফী সাম‘য়ী, আল্লাহুম্মা ‘আফিনী ফী বাসারী, লা- ইলাহা ইল্লা- আনতা। আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন আযা-বিল ক¦াবরি। লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমার দেহে আমাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা-নিরাপত্তা দান করুন। হে আল্লাহ, আমার শ্রবণযন্ত্রে আমাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা-নিরাপত্তা দান করুন। হে আল্লাহ, আমার দৃষ্টি শক্তিতে আমাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা-নিরাপত্তা দান করুন। আপনি ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে অবিশ্বাস ও দারিদ্র্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।”
আবু বকর(রা:) প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় এ দু‘আগুলি ৩ বার করে বলতেন। তাঁর পুত্র আব্দুর রহমান তাঁকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,“আমি রাসূলুল্লাহ (সা:)কে এই দু‘আগুলি বলতে শুনেছি। আমি তাঁরই সুন্নাত অনুসরণ করে চলতে পছন্দ করি।” হাদীসটি হাসান বা গ্রহণযোগ্য।( )
(যিক্র -১৩) ১ বার নি¤েœাক্ত দু‘আটি পড়া
أَصْبَحْنَاوَأَصْبَحَالْمُلْكُلِلَّهِوَالْحَمْدُلِلَّهِلاإِلَهَإِلاَّاللهُوَحْدَهُلاشَرِيْكَلَهُلَهُالْمُلْكُوَلَهُالْحَمْدُوَهُوَعَلَىكُلِّشَيْءٍقَدِيْرٌرَبِّأَسْأَلُكَخَيْرَمَافِيْهَذَاالْيَوْمِوَخَيْرَمَابَعْدَهُوَأَعُوذُبِكَمِنْشَرِّمَافِيْهَذَاالْيَوْمِوَشَرِّمَابَعْدَهُرَبِّأَعُوْذُبِكَمِنْالْكَسَلِوَسُوءِالْكِبَرِرَبِّأَعُوْذُبِكَمِنْعَذَابٍفِيْالنَّارِوَعَذَابٍفِيْالْقَبْرِ.
উচ্চারণ: আসবা‘হনা-ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লা-হি। আল‘হামদু লিল্লা-হি। লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া‘হদাহু, লা-শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল ‘হামদু, ওয়া হুআ ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। রাব্বি, আসআলুকা খাইরা মা- ফী হা-যাল ইয়াওমি, ওয়া খাইরা মা-বা‘দাহু। ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন র্শারি মা- ফী হা-যাল ইয়াওমি,ওয়া র্শারি মা-বা‘দাহু। রাব্বি, আ‘ঊযু বিকা মিনাল কাসালি, ওয়া সূ-ইল কিবার। রাব্বি, আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযা-বিন ফিন্না-রি, ওয়া ‘আযা-বিন ফিল ক্বাব্র।
অর্থ: “সকাল হলো, আমাদের জীবনে, আমরা ও সকল বিশ্বরাজ্যে সবকিছু আল্লাহর জন্যই দিনের মধ্যে প্রবেশ করলাম। সকল প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। হে আমার প্রভু, আমি আপনার কাছে চাইছি এ দিবসের মধ্যে যত কল্যাণ ও মঙ্গল রয়েছে এবং এ দিবসের পরে যত কল্যাণ রয়েছে তা সবই। এবং আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি সকল অমঙ্গল ও অকল্যাণ থেকে যা এ দিবসের মধ্যে রয়েছে এবং এ দিবসের পরে রয়েছে। হে আমার প্রভু, আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি অলসতা থেকে ও বার্ধক্যের খারাপি থেকে। হে আমার প্রভু, আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি জাহান্নামের শাস্তি থেকে এবং কবরের শাস্তি থেকে।”
আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’ঊদ (রা:) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) সকালে ও সন্ধ্যায় উপরের দু‘আটি বলতেন। সকালে এরূপ বলতেন। আর সন্ধ্যায় (আসবাহনা) বা (সকাল হলো)-র স্থলে (আমসাইনা) বা (সন্ধ্যা হলো)..... বলতেন।( )
(যিক্র -১৪) ১ বার নি¤েœাক্ত দু‘আটি পড়া
اَللَّهُمَّعَالِمَالْغَيْبِوَالشَّهَادَةِفَاطِرَالسَّمَوَاتِوَالأَرْضِرَبَّكُلِّشَيْءٍوَمَلِيْكَهُأَشْهَدُأَنْلاَإِلَهَإِلاَّأَنْتَأَعُوْذُبِكَمِنْشَرِّنَفْسِيْوَمِنْشَرِّالشَّيْطَانِوَشِرْكِهِوَأَنْأَقْتَرِفَعَلَىنَفْسِيْسُوءًاأَوْأَجُرَّهُعَلَىمُسْلِمٍ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, ‘আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ শাহা-দাতি, ফা-তিরাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি, রাব্বা কুল্লি শাইয়িন ওয়া মালীকাহু, আশহাদু আল্-লা ইলা-হা ইল্লা- আনতা, আ‘ঊযু বিকা মিন র্শারি নাফসী, ওয়া মিন র্শারিশ্ শাইতা-নি ওয়া শিরকিহী, ওয়া আন্ আক্ব্তারিফা ‘আলা- নাফসী সূআন আও আর্জুরাহু আলা- মুসলিম।
অর্থ: “হে আল্লাহ, গোপন (গায়েব) ও  প্রকাশ্য সকল জ্ঞানের অধিকারী, আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা, সকল কিছুর প্রভু ও মালিক। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আপনি ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি আমার নিজের অকল্যাণ থেকে এবং শয়তানের অকল্যাণ ও তার র্শিক থেকে। আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি, আমি এমন কোনো কর্ম না করি যাতে আমার নিজের কোনো ক্ষতি বা অমঙ্গল হয়, অথবা কোনো মুসলমানের জীবনে ক্ষতি বা অমঙ্গল বয়ে আনে।”
আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, আবু বকর (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা:) -কে বলেন, আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমি সকালে ও সন্ধ্যায় বলব। তখন তিনি তাঁকে উপরের দু‘আটি সকালে, সন্ধ্যায় ও বিছানায় শোয়ার পরে বলতে নির্দেশ দেন। হাদীসটি সহীহ।( )

(যিক্র -১৫) ১ বার নি¤েœাক্ত দু‘আটি পড়া
اللَّهُمَّإنِّيْأَسْأَلُكَالْعَفْوَوَالْعَافِيَةَفِيْالدُّنْيَاوَالْآخِرَةِاللَّهُمَّإنِّيْأَسْأَلُكَالْعَفْوَوَالْعَافِيَةَفِيْدِيْنِيْوَدُنْيَايَوَأَهْلِيْوَمَالِيْاللَّهُمَّاسْتُرْعَوْرَاتِيْوَآمِنْرَوْعَاتِيْاللَّهُمَّاحْفَظْنِيمِنْبَيْنِيَدَيَّوَمِنْخَلْفِيْوَعَنْيَمِينِيْوَعَنْشِمَالِيوَمِنْفَوْقِيْوَأَعُوْذُبِعَظَمَتِكَأَنْأُغْتَالَمِنْتَحْتِيْ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আস্আলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল ‘আ-ফিয়্যাতা ফিদ্ দুন্ইয়া- ওয়াল আ-খিরাহ। আল্লাহুম্মা, ইন্নী আস্আলুকাল ‘আফ্ওয়া ওয়াল ‘আ-ফিয়্যাতা ফী দীনী ওয়া দুন্ইয়াই-য়া, ওয়া আহলী ওয়া মালী। আল্লা-হুম্মাস্-তুর ‘আউরা-তী ওয়া আ-মিন রাউ‘আ-তী। আল্লা-হুম্মাহ্ ফায্নী মিম বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী, ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া ‘আন শিমালী, ওয়া মিন ফাউক্বী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহতী।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে চাই ক্ষমা ও সার্বিক সুস্থতা- নিরাপত্তা দুনিয়াতে এবং আখেরাতে। হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে চাই ক্ষমা ও সার্বিক সুস্থতা-নিরাপত্তা আমার দ্বীনের মধ্যে, আমার দুনিয়াবী বিষয়ের মধ্যে, আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে ও আমার সম্পদের মধ্যে। হে আল্লাহ, আমার দোষত্রুটিগুলি গোপন করুন এবং আমার ভয়ভীতিকে নিরাপত্তা দান করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে হেফাযত করুন আমার সামনে থেকে, আমার পিছন থেকে, আমার ডান থেকে, আমার বাম থেকে, আমার উপর থেকে এবং আমি আপনার মহত্তের আশ্রয় গ্রহণ করছি যে, আমি আমার নীচের দিক থেকে আক্রান্ত হব।”
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) সকাল হলে ও সন্ধ্যা হলে উপরের এ কথাগুলি বলতেকখনোই ছাড়তেন না (সর্বদা তিনি সকালে ও সন্ধ্যায় এগুলি বলতেন)। হাদীসটি সহীহ।( )
সকালে ও সন্ধ্যায় রাসূলুল্লাহ (সা:) আরও অনেক দু‘আ করতেন এবং অনেক দু‘আ শিখিয়েছেন। ফজরের পরে অনির্ধারিতভাবে যত বেশী সম্ভব  سُبْحَانَاللهِ،الحَمْدُلِلَّهلَاإلَهَإلَّااللهُ, اللهُأَكْبَرُ
‘সুবহানাল্লাহি, আল-হামদুলিল্লাহি, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার’ আদায় করতে উৎসাহ দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (সা:)।

শুধু সন্ধ্যায় পাঠের যিক্র
সাপ বিচ্ছু থেকে আত্মরক্ষার যিক্র
أَعُوْذُبِكَلِمَاتِاللهِالتَّامَّاتِمِنْشَرِّمَاخَلَقَ
উচ্চারণ: আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি, মিন র্শারি মা- খালাক্বা।
অর্থ: “আল্লাহর পরিপূর্ণ বাক্যসমূহের আশ্রয় গ্রহণ করছি, তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার অকল্যাণ থেকে।”
আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর কাছে এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল, গত রাতে আমাকে একটি বিষাক্ত বিচ্ছু কামড় দিয়েছিল তাতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। তিনি বলেন, “যদি তুমি সন্ধ্যার সময় এ কথা (উপরের দু‘আটি) বলতে তাহলে তা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারত না।” অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, “যদি কেউ সন্ধ্যায় তিন বার এ বাক্যটি বলে সে রাতে কোনো বিষ বা দংশন তাকে ক্ষতি করতে পারবে না।”( )
শয়নের যিক্র
যিক্রের একটি বিশেষ সময় ঘুমানোর পূর্বে বিছানায় শুয়ে। কেউ যদি কখনো শয়ন করে সে শয়নের মধ্যে আল্লাহর যিক্র না করে তাহলে সে শয়ন তার জন্য ক্ষতির কারণ হবে। জাবির (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “যখন কেউ বিছানায় শয়ন করে তখন একজন ফেরেস্তা ও একজন শয়তান তার কাছে আসে। ফেরেস্তা বলে, কল্যাণ ও মঙ্গল দিয়ে (দিনের) সমাপ্তি কর। আর শয়তান বলে: অকল্যাণ দিয়ে সমাপ্তি কর। যদি ওই ব্যক্তি আল্লাহর যিক্র করে নিদ্রা যায় তাহলে সারারাত ওইফেরেস্তা তাঁকে দেখাশুনা ও হেফাযত করেন।”হাদীসটির সনদের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য।( )
(যিক্র-১) ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, ৩৩ বার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’, ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’
ফাতেমা (রা:) নিজের হাতে যাতা ঘুরিয়ে ও সংসারের সকল কর্ম একা করতে কষ্ট পেতেন।  আলী (রা:) তাঁকে পরামর্শ দেন যে, তোমার আব্বার কাছে যুদ্ধলব্ধ একটি দাসী চাও, যে তোমাকে সংসার কর্মে সাহায্য করবে। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা:) -এর সাথে দেখা করতে এসে তাঁকে না পেয়ে ফিরে যান। রাত্রে তাঁরা বিছানায় শুয়ে পড়লেহযরত রাসূলুল্লাহ (সা:) তাঁদের কাছে আসেন। তিনি বলেন, “আমার আসহাবে সুফফার দরিদ্র সাহাবীগণকে বাদ দিয়ে তোমাকে কোনো দাসী দিতে পারব না। তবে দাসীর চেয়েও উত্তম বিষয় তোমাদেরকে শিখিয়ে দিচ্ছি। তোমরা যখন বিছানায়  শুয়ে পড়বে তখন ৩৩  বার ‘সুবহানাল্লাহ’ , ৩৩  বার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’  এবং  ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে।”( )
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা:) বলেছেন, “কোনো মুসলিম যদি দু’টি কাজ নিয়মিত করতে পারে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কাজ দু’টি খুবই সহজ কিন্তু করার মানুষ খুব কম। প্রথম, প্রত্যেক সালাতের পরে ১০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, ১০ বার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ ও ১০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। এতে ১৫০ বার জিহ্বার যিক্র হবে এবং আমলনামায় বা মীযানে ১৫০০ সাওয়াব হবে। দ্বিতীয়, বিছানায় শয়ন করার পরে ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’, ৩৩ বার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ ও ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে। এতে মুখে ১০০ বার ও মীযানে ১০০০ বার হবে।” রাসূলুল্লাহ(সা:) আঙ্গুলে গুণে গুণে তা দেখান। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন: “এ দু’টি কর্ম সহজ হওয়া সত্ত্বেও পালনকারী কম কেন ?” তিনি উত্তরে বলেন : “কেউ শুয়ে পড়লে শয়তান এসে এগুলি বলার আগেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। সালাতের পরে এগুলি বলার আগেই তাকে তার বিভিন্ন কথা মনে করিয়ে দেয়।” হাদীসটি সহীহ।( )
(যিক্র-২) আয়াতুল কুরসী
আবু হুরাইরা (রা:) বর্ণিত হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, কেউ রাতে বিছানায় শয়ন করার পরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে সারারাত আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে হেফাযত করা হয় এবং কোনো শয়তান তাঁর কাছে আসতে পারে না।( )


(যিক্র-৩) সূরা বাকারার শেষ দু আয়াত
আবু মাস’ঊদ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যদি কেউ রাতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করে তাহলে তা তাঁর জন্য যথেষ্ট হবে।( )
(যিক্র-৪) সূরা কাফিরূন
নাওফাল আল-আশজায়ী (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাকে বলেছেন, তুমি সূরা ‘কাফিরূন’ পড়ে ঘুমাবে, এ র্শিক থেকে তোমার বিমুক্তি। হাদীসটি হাসান। এ অর্থে ইবনে আব্বাস (রা) থেকে আরেকটি হাদীস হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে।( )
(যিক্র-৫) সূরা ইখলাস
আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বলেন, হযরত নবীজী (সা:) তাঁর সাহাবীগণকে বললেন: তোমরা কি পারবে না রাতে কুরআনের একতৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে? বিষয়টি তাঁদের কাছে কষ্টকর মনে হলো। তাঁরা বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের মধ্যে কে-ই বা তা পারবে? তখন তিনি বলেন: ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ্’ সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশ।’( )
(যিক্র-৬) সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস একত্রে ৩ বার
দুই হাত একত্র করে এ সূরাগুলি পাঠ করে হাতে ফুঁ দিয়ে হাত দু’টি যথাসম্ভব শরীরের সর্বত্র বুলানো। এভাবে ৩ বার।  আয়েশা (রা:) বলেন, “রাসূলুল্লাহ(সা:) প্রতি রাতে বিছানায় গমনের পরে তাঁর মুবারক দু’টি হাত একত্রিত করে তাতে ফুঁ দিতেন এবং তাতে উপরের তিনটি সূরা পাঠ করতেন। এরপর শরীরের যতটুকু সম্ভব স্থান দুই হাত দিয়ে মাছেহ করতেন। মাথা, মুখ ও শরীরের সামনের দিক থেকে শুরু করতেন। Ñ এভাবে ৩ বার করতেন।”( )
যিক্র ৭: সূরা বানী ইসরাঈল (১৭ নং সূরা)
যিক্র ৮: সূরা সাজদা, (৩২ নং সূরা)
যিক্র ৯: সূরা যুমার (৩৯ নং সূরা)
যিক্র ১০: সূরা মুলক (৬৭ নং সূরা)
জাবির (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) সূরা সাজদাহ ও সূরা মুলক তিলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না। আয়েশা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) সূরা বানী ইসরাঈল ও সূরা যুমার তিলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না। অন্য হাদীসে আয়েশা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) প্রত্যেক রাতে সূরা সাজদাহ ও সূরা যুমার পাঠ করতেন। হাদীসগুলি সহীহ।( )
(যিক্র-১১) হেফাযত ও ঋণমুক্তির দু‘আ
اَللَّهُمَّرَبَّالسَّمَاوَاتِوَرَبَّالأَرْضِوَرَبَّالْعَرْشِالْعَظِيمِرَبَّنَاوَرَبَّكُلِّشَيْءٍفَالِقَالْحَبِّوَالنَّوَىوَمُنْزِلَالتَّوْرَاةِوَالإِنْجِيْلِوَالْفُرْقَانِأَعُوْذُبِكَمِنْشَرِّكُلِّشَيْءٍأَنْتَآخِذٌبِنَاصِيَتِهِاللَّهُمَّأَنْتَالأَوَّلُفَلَيْسَقَبْلَكَشَيْءٌوَأَنْتَالآخِرُفَلَيْسَبَعْدَكَشَيْءٌوَأَنْتَالظَّاهِرُفَلَيْسَفَوْقَكَشَيْءٌوَأَنْتَالْبَاطِنُفَلَيْسَدُوْنَكَشَيْءٌاقْضِعَنَّاالدَّيْنَوَأَغْنِنَامِنْالْفَقْرِ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, রাব্বাস সামা-ওয়া-তি, ওয়ারাব্বাল আরদ্বি ওয়ারাব্বাল ‘আরশিল ‘আযীম। রাব্বানা- ওয়ারাব্বা কুল্লি শাইয়িন, ফা-লিকিল হাব্বি ওয়ান নাওয়া-। ওয়া মুনযিলাত তাওরা-তি ওয়াল ইনজীলি ওয়াল ফুরকা-ন। আ‘ঊযু বিকা মিন র্শারি কুল্লি শাইয়িন আনতা আ-খিযুম বিনা-ছিয়্যাতিহী। আল্লা-হুম্মা, আনতাল আউওয়ালু, ফালাইসা ক্বাবলাকা শাইউন। ওয়া আনতাল আ-খিরু ফালাইসা বা’দাকা শাইউন। ওয়া আনতায যা-হিরু ফালাইসা ফাউক্বাকা শাইউন। ওয়া আনতাল বা-তিনু ফালাইসা দূনাকা শাইউন। ইকদ্বি আন্নাদ দাইনা ওয়া আগনিনা- মিনাল ফাক্বর।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আসমানসমূহ ও জমিনের প্রভু এবং মহান আরশের প্রভু, আমাদের প্রভু এবং সবকিছুর প্রভু,  যিনি অঙ্কুরিত করেন শস্য বীজ ও আঁটি, যিনি নাযিল করেছেন তাওরাত, ইঞ্জিল ও ফুরকান; আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আপনার কাছে আপনার নিয়ন্ত্রণে যা কিছু রয়েছে সবকিছুর অকল্যাণ ও অমঙ্গল থেকে। হে আল্লাহ, আপনিই প্রথম, আপনার পূর্বে আর কিছুই নেই। এবং আপনিই শেষ, আপনার পরে আর কিছুই নেই। এবং আপনিই প্রকাশ্য, আপনার উপরে আর কিছুই নেই। এবং আপনিই গোপন, আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। আপনি আমাদের ঋণমুক্ত করুন এবং আমাদেরকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে সচ্ছলতা প্রদান করুন।”
আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাদেরকে বিছানায় শয়ন করার পরে (ডান কাতে শুয়ে) এ মুনাজাতটি পাঠ করতে শিক্ষা দিতেন। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, ফাতিমা (রা:) তাঁর কাছে খাদেমা চাইলে তিনি তাঁকে দু‘আটি শিখিয়ে দেন।( )
(যিক্র-১২)
بِاسْمِكَاللَّهُمَّأَمُوْتُوَأَحْيَا.
উচ্চারণ : বিসমিকা, আল্লা-হুম্মা, আমূতু ওয়া আ‘হইয়া- ।
অর্থ: “আপনারই নামে, হে আল্লাহ, আমি মৃত্যুবরণ করি এবং জীবিত হই।”
হুযাইফা(রা:)বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) ঘুমানোর এরাদা করলে এ যিক্রটি বলতেন।( ) 
(যিক্র-১৩)সংরক্ষণের দু‘আ
بِسْمِاللهِوَضَعْتُجَنْبِىاللَّهُمَّاغْفِرْلِىْذَنْبِىْوَأَخْسِئْشَيْطَانِىْوَفُكَّرِهَانِىوَاجْعَلْنِىْفِىْالنَّدِىِّالأَعْلَى.
উচ্চারণ: বিস্মিল্লাহি ওয়াদ্বা‘অ্তু জানবী। আল্লা-হুম্মা‘র্গ্ফি লী যানবী, ওয়া আ‘খ্সিঅ্ শাইত্বা-নী, ওয়া ফুক্কা রিহা-নী, ওয়াজ্‘আল্নী ফিন্ নাদিইয়িল আ‘অ্লা।
অর্থ: আল্লাহর নামে আমি আমার দেহ (বিছানায়) রাখলাম। হে আল্লাহ আপনি ক্ষমা করুন আমার পাপ, লাঞ্ছিত-অক্ষম করুন আমার শয়তানকে, মুক্ত করুন আমাকে আমার বাঁধন থেকে এবং আমাকে সর্বোচ্চ পরিষদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন।
আবুল আযহার আনমারী (রা:) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা:) রাতে যখন বিছানায় শয়ন করতেন তখন এ কথাগুলি বলতেন।” হাদীসটি সহীহ।( )
(যিক্র-১৪)ঘুমের আগে সর্বশেষ মুনাজাত
اللَّهُمَّأَسْلَمْتُنَفْسِيْإِلَيْكَوَوَجَّهْتُوَجْهِيْإِلَيْكَوَفَوَّضْتُأَمْرِيْإِلَيْكَوَأَلْجَأْتُظَهْرِيْإِلَيْكَرَغْبَةًوَرَهْبَةًإِلَيْكَلاَمَلْجَأَوَلاَمَنْجَىمِنْكَإِلاَّإِلَيْكَآمَنْتُبِكِتَابِكَالَّذِيْأَنْزَلْتَوَبِنَبِيِّكَالَّذِيْأَرْسَلْتَ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, আসলামতু নাফসী ইলাইকা, ওয়া ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহী ইলাইকা, ওয়াফাওআদ্বতু আমরী ইলাইকা, ওয়া আলজা’তু যাহরী ইলাইকা, রাগবাতান ওয়ারাহবাতান ইলাইকা, লা- মালজাআ ওয়ালা- মানজা- মিনকা ইল্লা- ইলাইকা। আ-মানতু বিকিতা-বিকাল্লাযী আনযালতা, ওয়াবি নাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালতা।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি সমর্পণ করলাম আমাকে আপনার নিকট, আমি ফেরালাম আমার মুখমন্ডল আপনার দিকে, দায়িত্বার্পণ করলাম আপনাকে আমার যাবতীয় কর্মের, সমর্পিত করলাম আমার পৃষ্ঠকে আপনার আশ্রয়ে, আপনার প্রতি আশা ও ভয়ের সাথে। আপনার নিকট থেকে আপনি ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল নেই ও কোনো মুক্তির স্থান নেই। আমি ঈমান এনেছি আপনি যে কিতাব নাযিল করেছেন তার উপর এবং আপনি যে নবী (সা:) প্রেরণ করেছেন তার উপর।”
বারাইবনুল আযিব (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাকে বলেছেন, “বিছানায় যাওয়ার সময় তুমি সালাতের ওযূর মতো ওযূ করবে। এরপর ডান কাতে শুয়ে বলবে: (উপরের দু‘আটি)। এ তোমার শেষ কথা হবে (এরপরে আর কথাবার্তা বলবে না)। এ রাতে মৃত্যু হলে তুমি ফিতরাতের উপরে (নিষ্পাপভাবে) মৃত্যুবরণ করবে। আর বেঁচে থাকলে তুমি কল্যাণ লাভ করবে।”( )
ঘুমের আগে আরও অনেক দু‘আ রয়েছে, বিস্তারিত দেখুন রাহে বেলায়েত গ্রন্থে।
তাহাজ্জুদের নিয়তসহ ঘুমাতে যাওয়া
রাতে উঠে তাহাজ্জুদ আদায়ের দৃঢ় ইচ্ছা নিয়ে ঘুমাতে হবে; তাহলে রাতে ঘুম না ভাংলেও তাহাজ্জুদের সাওয়াব অর্জিত হবে বলে বিভিন্ন হাদীসে বলা হয়েছে।
এক হাদীসে আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:“যদি কেউ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ আদায়ের নিয়্যাত করে ঘুমায়, কিন্তু তার ঘুমের আধিক্যের কারণে ফজরের আগে উঠতে না পারে, তাহলে তাঁর নিয়্যাত অনুসারে সাওয়াব তাঁর জন্য লিখা হবে, আর তাঁর ঘুম আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর জন্য দান হিসেবে গণ্য হবে।” হাদীসটি সহীহ।( )

ঘুমের মধ্যে পার্শ্বপরিবর্তনের দু‘আ
لاَإِلَهَإِلاَّاللهُالْوَاحِدُالْقَهَّارُرَبُّالسَّمَاوَاتِوَالأرْضِوَمَابَيْنَهُمَاالْعَزِيْزُالْغَفَّارُ.
উচ্চারণ: “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহুল ওয়া-হিদুল ক্বাহ্হার, রাব্বুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়া মা- বাইনাহুমাল ‘আযীযুল ‘গাফ্ফা-র।”
অর্থ: “নেই কোনো উপাস্য আল্লাহ ছাড়া, তিনি একক, পরাক্রান্ত, পালনকর্তা আসমানসমূহের এবং পৃথিবীর ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর, তিনি মহা-সম্মানিত মহা-ক্ষমাশীল।”
আয়েশা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) রাতে যখন বিছানায় পার্শ¦ পরিবর্তন করতেন তখন এ কথাগুলি বলতেন।” হাদীসটি সহীহ।( )
কিয়ামুল্লাইল এবং তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফযীলত
‘কিয়ামুল্লাইল’ অর্থ রাতের কিয়াম বা রাত্রিকালীন দাঁড়ানো। সালাতুল ইশার পর থেকে ফজরের ওয়াক্তের উন্মেষ পর্যন্ত সময়ে যে কোনো নফল সালাত আদায় করলে তা ‘কিয়ামুল্লাইল’ বা ‘সালাতুল্লাইল’ অর্থাৎ রাতের দাঁড়ানো বা রাতের সালাত বলে গণ্য। ‘তাহাজ্জুদ’ অর্থ ঘুম থেকে উঠা। রাতে ঘুম থেকে উঠে আদায় করা সালাতকে তাহাজ্জুদ বলা হয়। হাদীস শরীফে ও সাহাবী-তাবেয়ীগণের জীবনে আমরা দেখতে পাই যে, নফল ইবাদত ও অযিফা পালনের অন্যতম সময় রাত। বিশেষত কুরআন তিলাওয়াত, নফল সালাত, দরুদ পাঠ ও দু‘আর অন্যতম সময় রাত। সাহাবী ও তাবেয়ীগণ এসকল ইবাদত রাতেই পালন করতেন, বিশেষত শেষ রাতে।
কুরআন কারীমে কোনো নফল সালাতের উল্লেখ করা হয়নি, এমনকি পাঁচ ওয়াক্ত সালাতেরও বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু তাহাজ্জুদের সালাতের কথা বারবার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ও মুমিন জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনার দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারি যে, রাতের একাকী মুহূর্তে কিছু সময় আল্লাহর যিক্রে, তার সাথে মুনাজাতে এবং তাঁরই (আল্লাহর) ইবাদতে ব্যয় করা মুমিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এক হাদীসে আবূ হুরাইরা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা:) বলেছেন, “ফরয সালাতের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ সালাত রাতের সালাত বা রাতের গভীরে আদায়কৃত সালাত।”( )
অন্য হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “হে মানুষেরা তোমরা সালামের প্রচলন কর, খাদ্য প্রদান কর, আত্মীয়তা রক্ষা কর এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত আদায় কর, তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” হাদীসটি সহীহ।( )
আবূ উমামা বাহিলী (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “তোমরা অবশ্যই কিয়ামুল্লাইল পালন করবে। কারণ তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার মানুষদের অভ্যাস, তোমাদের জন্য তোমাদের পালনকর্তার নৈকট্য, পাপের ক্ষমা, পাপ থেকে আত্মরক্ষার পথ (এবং দেহ থেকে রোগব্যাধির বিতাড়ন।)” হাদীসটি সহীহ।( )
সাহাবীগণ কিয়ামুল্লাইল পরিত্যাগ অপছন্দ করতেন। আয়েশা (রা:) বলেন: “কিয়ামুল্লাইল ত্যাগ করবে না; কারণ রাসূলুল্লাহ (সা:) তা ত্যাগ করতেন না। যদি কখনো অসুস্থ থাকতেন অথবা ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করতেন তবে তিনি বসে কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন।” হাদীসটি সহীহ।( )

বিষয় সংশ্লিষ্ট যিক্র ও দু‘আ
খাবারের দু‘আ
খাবারের পূর্বের যিক্র:بِسْمِاللهِ (বিসমিল্লা-হ) অর্থাৎ “আল্লাহরনামে।”
শুরুতে আল্লাহর নাম বলতে ভুলে গেলে বলবে:بِسْمِاللهِفِيْأَوَّلِهِوَآخِرِهِ(বিসমিল্লা-হি ফী আউআলিহী ওয়া আ-খিরিহী), অর্থাৎ “আল্লাহর নামে এর প্রথমে এবং এর শেষে”। হাদীসটি সহীহ।( )
খাবারের পরের যিক্র
الْحَمْدُلِلَّهِالَّذِيْأَطْعَمَنِيْهَذَاوَرَزَقَنِيهِمِنْغَيْرِحَوْلٍمِنِّيوَلاَقُوَّةٍ
উচ্চারণ: আল‘হামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত‘আমানী হা-যাওয়া রাযাক্বানীহি মিন গাইরি ‘হাওলিম মিন্নী ওয়ালা- ক্বুওওয়াহ।
অর্থ:“সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এ খাদ্য খাইয়েছেন এবং আমাকে তা প্রদান করেছেন আমার কোনো অবলম্বন ও ক্ষমতা ছাড়াই।”
হযরতরাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, “যদি কেউ খাদ্য গ্রহণ করে এ কথাগুলি বলে তাহলে তার পূর্বাপর গোনাহ ক্ষমা করা হবে।” হাদীসটি হাসান।( )
অন্যের দাওয়াতে শরীক হলে খাবারের পর গৃহকর্তার জন্য অতিথির দু‘আ
اللَّهُمَّأَطْعِمْمَنْأَطْعَمَنِيْوَاسْقِمَنْسَقَانِي (وَأَسْقِمَنْأَسْقَانِي)
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, আত্ব‘ইম মান আত্ব‘আমানী, ওয়াসক্বি মান সাক্বা-নী।
অর্থ: “হে আল্লাহ, যে আমাকে খাইয়েছে তাকে আপনি খাদ্য প্রদান করুন এবং যে আমাকে পান করিয়েছে তাকে আপনি পানীয় প্রদান করুন।”( )
[এ বিষয়ে আরও অনেক দু‘আ রয়েছে, দেখুন রাহে বেলায়াত ৫১৬-৫২৮]
ব্যর্থতার যিক্র:قَدَرُاللهِوَمَاشَاءَفَعَلَউচ্চারণ : ক্বাদারুল্লা-হি ওয়ামা- শা-আ ফা‘আলা।অর্থ:“আল্লাহর নির্ধারণ এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন তা করেছেন।”( )
ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের যিক্র :أَعُوْذُبِاللهِمِنَالشَّيْطَانِالرَّجِيْمِ
উচ্চারণ :আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।
অর্থ :“আমি আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে।”
সুলাইমানইবনে সুরাদ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “এ কথাগুলি বললে ক্রোধান্বিত ব্যক্তির ক্রোধ দূরীভূত হবে।”( )
হাঁচির যিক্রসমূহ
(ক) কারো হাঁচি হলে তিনি বলবেন:اَلْحَمْدُللهِ (عَلَىكُلِّحَالٍ)
উচ্চারণ : আল-‘হামদু লিল্লা-হি (‘আলা- কুল্লি ‘হাল)।
অর্থ :“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য”(সকল অবস্থায়)।
(খ). হাঁচি-দানকারীকে (আলহামদুলিল্লাহ) বলতে শুনলে শ্রোতা বলবেন:
يَرْحَمُكَاللهُ
উচ্চারণ: ইয়ার‘হামুকাল্লা-হু। অর্থ:“আল্লাহ আপনাকে রহমত করুন।”
(গ). হাঁচিদাতা শ্রোতার ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’র উত্তরে বলবেন:
يَهْدِيْكُمُاللهُوَيُصْلِحُبَالَكُمْ.
উচ্চারণ :ইয়াহদিকুমুল্লা-হু ওয়া ইয়ুছলিহু বা-লাকুম।
অর্থ: “আল্লাহ আপনাদেরকে সুপথে পরিচালিত করুন এবং আপনাদের অবস্থাকে ভাল ও পরিশুদ্ধ করুন।”
পোশাক পরিধানের দু‘আ বা যিক্র
الْحَمْدُلِلَّهِالَّذِيْكَسَانِيْهَذَاالثَّوْبَوَرَزَقَنِيْهِمِنْغَيْرِحَوْلٍمِنِّيْوَلاَقُوَّةٍ.
উচ্চারণ: আল‘হামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসা-নী হা-যাছ ছাওবা ওয়া রাযাক্বানীহি মিন গাইরি ‘হাওলিম মিন্নী ওয়ালা- ক্বুওওয়াহ।
অর্থ: প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এ পোশাক পরিধান করিয়েছেন এবং আমাকে তা প্রদান করেছেন, আমার কোনো অবলম্বন ও শক্তি ছাড়া-ই।
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যদি কেউ পোশাক পরিধানের সময় এ কথা বলে তাহলে তার পূর্বাপর গোনাহ ক্ষমা করা হবে।”( )
নতুন পোশাক পরিধানের যিক্র
اللَّهُمَّلَكَالْحَمْدُأَنْتَكَسَوْتَنِيْهِأَسْأَلُكَخَيْرَهُوَخَيْرَمَاصُنِعَلَهُوَأَعُوْذُبِكَمِنْشَرِّهِوَشَرِّمَاصُنِعَلَهُ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, লাকাল ‘হামদু, আনতা কাসাওতানীহি। আসআলুকা খাইরাহু ওয়া খাইরা মা ছুনি‘আ লাহূ, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররিহী ওয়া শাররি মা ছুনি‘আ লাহূ।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনারই সকল প্রশংসা। আপনি আমাকে এটি পরিধান করিয়েছেন। আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি এর কল্যাণ এবং যে কল্যাণের জন্য তা উৎপাদিত। আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অকল্যাণ এবং যে অকল্যাণের জন্য তা উৎপাদিত।”( )
পরিধানের কাপড় খোলার যিকির:بِسْمِالله
আনাস ইবনে মালিক (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “যখন তোমাদের কেউ কাপড় খুলবে বা অনাবৃত হবে তখন মানুষের গুপ্তাঙ্গ ও জিনদের দৃষ্টির মাঝে পর্দা দিতে بِسْمِالله ‘বিসমিল্লাহ’ বলা।” হাদীসটি সহীহ।( )
উপকারীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশক যিক্র:جَزَاكَاللهُخَيْرًا
উচ্চারণ: জাযা-কাল্লা-হু খাইরান।
অর্থ:“আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।”( )
স্বপ্ন বিষয়ক দু‘আ
আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “স্বপ্ন তিন প্রকারের: (১) নেক স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ, (২) খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে মানুষকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও উৎকণ্ঠিত করার জন্য এবং (৩) মানুষের নিজের মনের কল্পনা। কাজেই কেউ যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা তার পছন্দ নয় তবে সে যেন উঠে সালাত আদায় করে এবং কাউকে এ স্বপ্নের কথা না বলে।... আর কোনো আলিম বা কল্যাণকামী ব্যক্তি ছাড়া কারো কাছে স্বপ্নের কথা বলবে না।”( )
তাবিয়ী আবূ সালামা বলেন, দুঃস্বপ্ন দেখে আমি আতঙ্কিত ও অসুস্থ হয়ে পড়তাম। আমি আবূ কাতাদা (রা:)-কে বিষয়টি জানালাম। তিনি বললেন, আমিও স্বপ্ন দেখে অসুস্থ হয়ে পড়তাম। রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর কথা শুনে আমার এ অবস্থার অবসান ঘটে। আমি আর কোনো দুঃস্বপ্নকে পরোয়া করি না। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। কাজেই কেউ যদি অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখে তবে সে যেন ঘুম ভাঙলে তার বাম দিকে তিনবার ফুঁক বা থুক দেয় এবং উক্ত স্বপ্নের ও শয়তানের অমঙ্গল-অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে (অন্য হাদীসে আছে, সে যেন তিনবার আশ্রয় গ্রহণ করে এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে। (এবং সে যেনো উঠে সালাত পড়ে)। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না। আর সে যেন এ স্বপ্নের কথা কাউকে না বলে। আর যদি কেউ কোনো ভাল স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন স্বপ্নটিকে সুসংবাদ হিসেবে গ্রহণ করে আনন্দিত হয় (অন্য হাদীসে আছে: সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে) এবং স্বপ্নটির কথা তার প্রিয়ভাজন কোনো ব্যক্তি ছাড়া কাউকে বলবে না।”( )
অশুভ বা অযাত্রা ধারণার কাফ্ফারা
اللَّهُمَّلاَطَيْرَإِلاَّطَيْرُكَ،وَلاَخَيْرَإِلاَّخَيْرُكَ،وَلاإلَهَغَيْرُكَ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, লা- ত্বাইরা ইল্লা- ত্বাইরুকা, ওয়ালা- খাইরা ইল্লা- খাইরুকা, ওয়া লা- ইলা-হা গাইরুকা।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনার শুভ-অশুভ ছাড়া কোনো অশুভত্ব নেই, আপনার কল্যাণ ছাড়া কোনো কল্যাণ নেই এবং আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।”
ইবন উমার (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “অশুভ বা অযাত্রা চিন্তা করে যে ব্যক্তি তার কর্ম থেকে বিরত থাকল সে ব্যক্তি শিরকে নিপতিত হলো। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, এরূপ চিন্তা মনে আসলে তার কাফ্ফারা কী? তিনি বললেন, সে যেন (উপরের কথাগুলি) বলে।” হাদীসটি সহীহ।(
বাজার বা কর্মস্থলে প্রবেশের যিক্র
اَللّهُمَإِنِّيْأَسْأَلُكَمِنْخَيْرِهَاوَخَيْرِأَهْلِهَاوَأَعُوْذُبِكَمِنْشَرِّهَاوَشَرِّأَهْلِهَا
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন্ ‘খাইরিহা- ওয়া ‘খাইরি আহ্লিহা ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন র্শারিহা ওয়া র্শারি আহ্লিহা।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এস্থানের কল্যাণ ও এখানে অবস্থানরতদের কল্যাণ এবং আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি এর অকল্যাণ এবং এখানে অবস্থানরতদের অকল্যাণ থেকে।”
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ(রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বাজারের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে বাজারের দিকে মুখ করে এ দুআটি পড়ে বাজারে প্রবেশ করেন।( )
পছন্দ ও অপছন্দনীয় বিষয়ের যিক্র
(১) الْحَمْدُلِلَّهِالَّذِيْبِنِعْمَتِهِتَتِمُّالصَّالِحَاتُ
 (২) الْحَمْدُلِلَّهِعَلَىكُلِّحَالٍ
উচ্চারণ: (১) আল্‘হাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী বিনি‘অ্মাতিহী তাতিম্মুস্ সা-লিহা-ত। (২) আল্‘হাম্দু লিল্লা-হিল্লা-হি ‘আলা- কুল্লি ‘হা-ল।
অর্থ: (১) প্রশংসা আল্লাহর নিমিত্ত যার নিয়ামতে ভালকর্মগুলি সাধিত হয়। (২) প্রশংসা আল্লাহর সর্বাবস্থায়।
আয়েশা সিদ্দীকা(রা:) বলেন, “রাসূলুল্লাহ(সা:) কোনো আনন্দদায়ক বিষয় দেখলে বা জানলে প্রথম বাক্যটি বলতেন এবং কোনো অপছন্দনীয় বিষয় দেখলে বা দুঃসংবাদ পেলে দ্বিতীয় বাক্যটি বলতেন।” হাদীসটি সহীহ।( )

কটুবাক্য বললে
اللَّهُمَّفَأَيُّمَامُؤْمِنٍسَبَبْتُهُفَاجْعَلْذَلِكَلَهُقُرْبَةًإِلَيْكَيَوْمَالْقِيَامَةِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, ফাআইউমা- মুঅ্মিনীন সাবাব্তুহূ ফাজ্‘আল্ যা-লিকা লাহু ক্বুরবাতান ইলাইকা ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ।
অর্থ: “হে আল্লাহ, যে কোনো মুমিন বান্দাকে আমি কটুবাক্য বলে থাকলে বা গালি দিয়ে থাকলে আপনি সেটিকে তার জন্য কিয়ামতের দিন আপনার নৈকট্যে (সাওয়াবে) পরিণত করুন।” আবূ হুরাইরা (রা:) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন।( )
বিপদ-কষ্টে নিপতিত ব্যক্তির দু‘আ
إِنَّالِلَّهِوَإِنَّاإِلَيْهِرَاجِعُونَ،اللَّهُمَّأْجُرْنِيْفِيْمُصِيْبَتِيْوَأَخْلِفْلِيْخَيْرًامِنْهَا
উচ্চারণ: ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রা-জিঊন। আল্লা-হুম্মাঅ্ জুরনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফ লী খাইরাম মিনহা-।
অর্থ:“নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় তাঁর কাছেই আমরা ফিরে যাব। হে আল্লাহ আপনি আমাকে এ বিপদ মুসিবতের পুরস্কার প্রদান করুন এবং আমাকে এর পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম কিছু প্রদান করুন।”
উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামাহ (রা:) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা:) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যদি কোনো মুসলিম বিপদগ্রস্ত হয়ে এ কথাগুলি বলে তাহলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই উক্ত ক্ষতির পরিবর্তে উত্তম বিষয় দান করে ক্ষতিপূরণ করে দিবেন। উম্মে সালামাহ বলেন, আমার স্বামী আবু সালামাহর মৃত্যুর পরে আমি চিন্তা করলাম, আবু সালামাহর চেয়ে আর কে ভাল হতে পারে! ... তারপরও আমি এ কথাগুলি বললাম। তখন আল্লাহ আমাকে আবু সালামার পরে রাসূলুল্লাহকে (সা:)  স্বামী হিসেবে প্রদান করেন।( )
বিপদগ্রস্তকে দেখলে বলার দু‘আ
الْحَمْدُلِلَّهِالَّذِىْعَافَانِىْمِمَّاابْتَلاَكَبِهِوَفَضَّلَنِىْعَلَىكَثِيْرٍمِمَّنْخَلَقَتَفْضِيلاً
উচ্চারণ: আল-‘হামদু লিল্লা-হিল্লাযী ‘আ-ফা-নী মিম্মাব্ তালা-কা বিহী ওয়া ফাদ্ব্দ্বালানী ‘আলা- কাছীরিম মিম্মান ‘খালাক্বা তাফ্দ্বীলান।
অর্থ:“প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি তোমাকে যে বিপদটি দিয়ে পরীক্ষা করেছেন সে বিপদ থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং আমাকে তাঁর অনেক সৃষ্টির থেকে অধিক মর্যাদা দিয়েছেন।”( )
ইস্তিগফার বাক্ষমা প্রার্থনা
তাওবা-ইস্তিগফারের ফযীলত
কুরআন কারীমে মুমিনগণকে বারবার তাওবা ও ইস্তিগফার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষভাবে হজ্জেও ইস্তিগফারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন;
ثُمَّأَفِيضُوامِنْحَيْثُأَفَاضَالنَّاسُوَاسْتَغْفِرُوااللَّهَإِنَّاللَّهَغَفُورٌرَحِيمٌ (البقرة ১৯৯)
অর্থ: “অত:পর অন্যান্য লোক যেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে তোমরাও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করবে (অর্থাৎ আরাফাতের ময়দান থেকে) আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
রাসুলুল্লাহ (সা:) নিজে ইস্তিগফার করতেন অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কেরামকে ইস্তিগফারের আদেশ ও উৎসাহ দিতেন।
আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)বলেছেন: “আল্লাহর কসম! আমি দিনের মধ্যে ৭০ বারেরও বেশী আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি।”( )আগার আল-মুযানী (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “হে মানুষেরা তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর। নিশ্চয় আমি একদিনের মধ্যে ১০০ বার আল্লাহর নিকট তাওবা করি বা ইস্তিগফার করি।”( )
আবদ ইবনে বুসর (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন,“সেই সৌভাগ্যবান যে তার আমলনামায় অনেক ইস্তিগফার পেয়েছে।”( )
ইস্তিগফারের মূলনীতি: আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার দুটি দিক রয়েছে: (১) তাওবা এবং (২) ইস্তিগফার। তাওবা অর্থ ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা এবং ইস্তিগফার অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা। উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা তাওবা বা ফিরে আসার একটি অংশ। কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনার আলোকে যে কোনো পাপ থেকে তাওবার অর্থ ও শর্ত নিম্নরূপ:
(১) পাপ পরিত্যাগ করা এবং আর কখনো পাপ না করার আন্তরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
(২) পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
(৩) পাপের সাথে কোনো মানুষের বা সৃষ্টির অধিকার জড়িত থাকলে তা ফেরত দেয়া অথবা ক্ষমা চেয়ে নেয়া
(৪) মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
শর্তগুলি পূরণ করে তাওবা করলে মুমিন সকল পাপের ক্ষমার নিশ্চিত আশা করতে পারেন।

কয়েকটি মাসনুন ইস্তিগফার
أَستَغْفِرُاللهَ.
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লা-হ। অর্থ:“আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
أَسْتَغْفِرُاللهَوَأَتُوْبُإِلَيْهِ.
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি। অর্থ :“আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি।”
رَبِّاغْفِرْلِيْوَتُبْعَلَيَّإِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُالرَّحِيْمُ (الغَفُوْرُ).
উচ্চারণ : রাব্বিগ্ ফিরলী, ওয়া তুব ‘আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম। দ্বিতীয় বর্ণনায় “রাহীম”-এর বদলে: ‘গাফূর’।
অর্থ: “হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী, করুণাময়। দ্বিতীয় বর্ণনায়: তাওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী।”
أَسْتَغْفِرُاللهَ (الْعَظِيْمَ) الَّذِيْلاَإلهَإِلاَّهُوَالحَيُّالْقَيُّوْمُوَأَتُوْبُإِلَيْهِ.
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লা-হাল্ (‘আযীমাল্) লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুআল ‘হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অর্থ: “আমি মহান আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সর্ব সংরক্ষক, এবং তাঁর কাছে তাওবা করছি।”
পিতামাতা ও সকল মুসলিমের জন্য ইস্তিগফার
رَبَّنَااغْفِرْلَنَاوَلإِخْوَانِنَاالَّذِينَسَبَقُونَابِالإِيمَانِوَلاتَجْعَلْفِيقُلُوبِنَاغِلاًّلِلَّذِينَآَمَنُوارَبَّنَاإِنَّكَرَءُوفٌرَحِيمٌ.
অর্থ: “হে আমাদের প্রভু, আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং ঈমানের ক্ষেত্রে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা করুন। আর আপনি আমাদের অন্তরে মুমিনগণের বিরুদ্ধে কোনো হিংসা, বিদ্বেষ বা অমঙ্গল ইচ্ছা রাখবেন না। হে আমাদের প্রভু, নিশ্চয় আপনি মহা করুণাময় ও পরম দয়ালু।” (সূরা হাশর: আয়াত ১০)
একটি সহীহ হাদীসে আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “জান্নাতে কোনো কোনো ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। তখন সে বলবে: কিভাবে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি পেল? তখন তাকে বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে, এজন্য তোমার মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।”( )
দু‘আ ও মুনাজাত
دعاءদু‘আ বলতে সাধারণভাবে বাংলায় প্রার্থনা করা বুঝায়। مناجاة ‘মুনাজাত’ অর্থ চুপিচুপি কথা বলা। আল্লাহর সাথে বান্দার সকল কথা, যিক্র ও প্রার্থনাকেই ‘মুনাজাত’ বলা হয়।
নবীজী(সা:) বলেছেন:
اَلدُّعَاءُهُوَاَلْعِبَادَةُ... وَقَالَرَبُّكُمُادْعُونِيأَسْتَجِبْلَكُمْإِنَّالَّذِينَيَسْتَكْبِرُونَعَنْعِبَادَتِيسَيَدْخُلُونَجَهَنَّمَدَاخِرِينَ.
অর্থ: “দু‘আ বা প্রার্থনাই ইবাদত।” একথা বলে তিনিকুরআনের আয়াত পাঠ করলেন: “তোমাদের প্রভু বলেন, তোমরা আমাকে ডাক (দু‘আ কর), আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা আমার ইবাদত (দু‘আ) থেকে অহংকার করে তারা শীঘ্রই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা গাফির: আয়াত ৬০)হাদীসটি সহীহ।(১)
সাওবান(রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা:)বলেছেন:
لايَرُدُّالْقَضَاءَإلاَّالدُّعَاءُ،وَلايَزِيدُفِيالْعُمْرِإلاَّالْبِرُّ"،وَإنَّالرَّجُلَلَيُحْرَمُالرِّزْقَبِالذَّنْبِيُصِيبُهُ.
“দু‘আ ছাড়া আর কিছুই তাকদীর উল্টাতে পারে না। মানুষের উপকার ও কল্যাণের কাজেই শুধু আয়ু বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় মানুষ গোনাহ করার ফলে তার রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়।” হাদীসটি সহীহ।( )
সালমান ফারিসী (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন :
إِنَّاللَّهَحَيِىٌّكَرِيمٌيَسْتَحْيِىإِذَارَفَعَالرَّجُلُإِلَيْهِيَدَيْهِأَنْيَرُدَّهُمَاصِفْرًاخَائِبَتَيْنِ.
“আল্লাহ লাজুক দয়াবান। যখন কোনো মানুষ তাঁর দিকে দু’খানা  হাত উঠায় তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান।”( )
আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন :
مَامِنْمُسْلِمٍيَنْصُبُوَجْهَهُلِلَّهفِيمَسْأَلَةٍإِلاَّأَعْطَاهَاإِيَّاه،إِمَّاأَنْيُعَجِّلَهَالَهُ،وَإِمَّاأَنْيَدَّخِرَهَالَهُ.
“যে কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে মুখ তুলে কোনো কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাঁকে তা দিবেনই। তাঁকে তা সাথে সাথে দিবেন অথবা (আখেরাতের জন্য) তা জমা করে রাখবেন।”( )

দু’আ কবুলের পূর্বশর্ত
দু‘আ, যিক্র ও ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হালাল উপার্জন নির্ভরতা। আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)বলেছেন;
أيُّهَاالنَّاسُإنَّاللهَطَيِّبٌلاَيَقْبَلُإلاَّطَيِّباًوإنَّاللهَأَمَرَالمُؤمِنِينَبِمَاأَمَرَبِهِالمُرْسَلِينَفقالَتعالى: "يَاأَيُّهَاالرُّسُلُكُلُوامِنَالطَّيِّبَاتِوَاعْمَلُواصَالِحاً،وقال: يَاأيُّهَاالَّذِينَآمَنُواكُلُوامِنْطَيِّبَاتِمَارَزَقْنَاكُمْ". ثُمَّذَكَرَالرَّجُلَيُطِيلُالسَّفَرَأشْعثَأغْبَرَيَمُدُّيَدَيْهِإلَىالسَّمَاءِ: يَارَبِّيَارَبِّ،وَمَطْعَمُهُحَرَامٌوَمَشْرَبُهُحَرَامٌومَلبسُهُحرامٌوَغُذِّيَبالْحَرَامِفَأَنَّىيُسْتَجَابُلِذَلِكَ.
“হে মানুষেরা, আল্লাহ পবিত্র। তিনিপবিত্র, পবিত্র (বৈধ) ছাড়া কোনো কিছুই কবুল করেন না। আল্লাহ মুমিনগণকে সেই নির্দেশ দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি নবী ও রাসূলগণকে দিয়েছেন (বৈধ ও পবিত্র উপার্জন ভক্ষণ করা)। তিনি (রাসূলগণকে নির্দেশ দিয়ে) বলেছেন : হে রাসূলগণ, তোমরা পবিত্র উপার্জন থেকে ভক্ষণ কর এবং সৎকর্ম কর]( ) (আর তিনি মুমিনগণকে একই নির্দেশ দিয়ে বলেছেন) :হে মুমিনগণ, আমি তোমাদের যে রিয্ক প্রদান করেছি তা থেকে পবিত্র রিয্ক ভক্ষণ কর( )।” এরপর তিনি একজন মানুষের কথা উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি (হজ্ব, উমরা ইত্যাদি পালনের জন্য, আল্লাহর পথে) দীর্ঘ সফরে রত থাকে, ধূলিধূসরিত দেহ ও এলোমেলো চুল, তার হাত দু’টি আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে দু‘আ করতে থাকে, হে প্রভু! হে প্রভু!! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার পানীয় হারাম এবং হারাম উপার্জনের জীবিকাতেই তার রক্তমাংস গড়ে উঠেছে। তার দু‘আ কিভাবে কবুল হবে!”( )
সুতরাং আপনি যদি চান আপনার দু’আ আল্লাহর কাছে কবুল হোক তাহলে আপনাকে যাবতীয় হারাম উপার্জন -সুদ, ঘুষ, জুয়া, যুলুম, জোর করা বা কেড়ে নেয়া, ফাঁকি, ধোঁকা, ওজনে কম-বেশী, ভেজাল, খেয়ানত বা দায়িত্বে অবহেলা ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ থেকে বিরত থাকতে হবে।


দু‘আর কতিপয় মাসনুন নিয়ম ও আদব
১- শুধু আল্লাহর কাছেই চাওয়া অন্য কারো কাছে কিছু চাওয়া যাবে না।
২- মনোযোগ ও কবুলের দৃঢ় আশা রেখে দু‘আ করা।
৩- ফলাফলের জন্য ব্যস্ত না হওয়া।
৪- শুধুই মঙ্গল কামনা।
৫- সুখে দু:খে সর্বাবস্থায়  দু‘আ করা।
৬- সুন্নাতের অনুসরণ করা।
৭-বেশী করে চাওয়া।
৮- বারবার চাওয়া বা তিনবার চাওয়া।
৯- নিজের জন্য দু’আ করা।
১০- অন্যের জন্য দু‘আর শুরুতে নিজের জন্য দু‘আ করা।
১১- দু‘আর সময় হাত উঠানো।
১২- দু‘আর সময় কিবলামুখী হওয়া।
১৩- দু‘আর শেষে মুখম›ডল মোছা।
১৪- কেউ দু‘আ করলে তার দু‘আর সাথে ‘আমীন’ বলা।
১৫- দু‘আর সময় দৃষ্টি নত রাখা।
১৬- দু‘আর শুরুতে ও শেষে দরুদ পাঠ করা।
১৭- আল্লাহর নামের ওসীলায় দু‘আ করা।
মহান আল্লাহ বলেন;
وَللهِالأَسْمَاءُالْحُسْنَىفَادْعُوهُبِهَاوَذَرُواالَّذِينَيُلْحِدُونَفِيأَسْمَائِهِسَيُجْزَوْنَمَاكَانُوايَعْمَلُونَ.
“এবং আল্লাহর আছে সুন্দরতম নামসমূহ; কাজেই তোমরা তাঁকে সে সকল নামে ডাকবে। যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করবে। তাদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই তাদেরকে প্রদান করা হবে।” (সূরা আরাফ: আয়াত ১৮০)


আল্লাহর নামের ওসীলার দু‘আ
আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’ঊদ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা:) বলেছেন, “যে কোনো ব্যক্তি যদি কখনো দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠাগ্রস্ত অবস্থায় বা দুঃখ বেদনার মধ্যে নিপতিত হয়ে নি¤েœর বাক্যগুলি বলে দু‘আ করে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা দূর করবেনই এবং তার বেদনাকে আনন্দে রূপান্তরিত করবেনই।” উপস্থিত সাহাবীগণ বললেন: তাহলে আমাদের উচিত এ বাক্যগুলি শিক্ষা করা। তিনি বললেন : “হ্যাঁ, অবশ্যই, যে এগুলি শুনবে তার উচিত এগুলি শিক্ষা করা।” হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য।( ) বাক্যগুলি হলো;
اللَّهُمَّإِنِّيْعَبْدُكَوَابْنُعَبْدِكَوَابْنُأَمَتِكَ،نَاصِيَتِيبِيَدِكَ،مَاضٍفِيَّحُكْمُكَ،عَدْلٌفِيَّقَضَاؤُكَ،أَسْأَلُكَبِكُلِّاسْمٍهُوَلَكَ،سَمَّيْتَبِهِنَفْسَكَ،أَوْأَنْزَلْتَهُفِيْكِتَابِكَ،أَوْعَلَّمْتَهُأَحَدًامِنْخَلْقِكَ،أَوِاسْتَأْثَرْتَبِهِفِيْعِلْمِالْغَيْبِعِنْدَكَ،أَنْتَجْعَلَالْقُرْآنَرَبِيْعَقَلْبِي،وَنُوْرَبَصَرِيْ (وَنُورَصَدْرِي)،وَجَلاَءَحُزْنِيْ،وَذَهَابَهَمِّيْ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আবদুকা, ওয়াবনু আবদিকা ওয়াবনু আমাতিকা, না-ছিয়াতি বিইয়াদিকা, মা-দিন ফিইয়্যা হুকমুকা, ‘আদলুন ফিইয়্যা ‘কাদাউকা, আসআলুকা বিকুল্লি ইসমিন হুআ লাকা, সাম্মাইতা বিহী নাফসাকা, আও আনযালতাহু ফী কিতা-বিকা, আও ‘আল্লামতাহু আহাদাম মিন খালকিকা, আউ ইসতা-ছারতা বিহী ফী ‘ইলমিল ‘গাইবি ‘ইনদাকা আন তাজ‘আলাল কুরআ-না রাবী‘আ কালবী, ওয়া নূরা বাসারী [অন্যান্য বর্ণনায়, নূরা বাসারীর পরিবর্তে: নূরা ছাদরী], ওয়া জালা-আ হুযনী, ওয়া যাহা-বা হাম্মী।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার বান্দা, আপনার (একজন) বান্দার পুত্র, (একজন) বান্দীর পুত্র। আমার কপাল আপনার হাতে। আমার বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্ত কার্যকর। আমার বিষয়ে আপনার বিধান ন্যায়ানুগ। আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি আপনার সকল নাম ধরে বা নামের ওসীলা দিয়ে, যে নামে আপনি নিজেকে ভূষিত করেছেন, অথবা যে নাম আপনি আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন, অথবা যে নাম আপনি আপনার কোনো সৃষ্টিকে শিখিয়েছেন, অথবা যে নাম আপনি গাইবী জ্ঞানে আপনার একান্ত নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন (সকল নামের ওসীলায় আমি আপনার কাছে চাচ্ছি যে,) আপনি কুরআন কারীমকে আমার অন্তরের বসন্ত, চোখের আলো (অন্য বর্ণনায়: হৃদয়ের আলো), বেদনার অপসারণ ও দুশ্চিন্তার অপসারণ বানিয়ে দিন। (কুরআনের ওসীলায় আমাকে এগুলি দান করুন)।”
বি. দ্র. মহিলারা এ দু‘আ পাঠ করলে দু‘আর শুরুতে বলবেন;
اللَّهُمَّإِنِّيأَمَتُكَوبِنْتُعَبْدِكَوبِنْتُأَمَتِك
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আমাতুকা, ওয়া বিনতু আবদিকা ওয়া বিনতু আমাতিকা ...”, অর্থাৎ, “হে আল্লাহ আমি আপনার বান্দী, আপনার (একজন) বান্দার কন্যা, আপনার এক বান্দীর কন্যা ....।”

১৮- ইসমে আ’যমের ওসীলায় দু‘আ করা
ইসমে আ’যমের বিষয়ে কয়েকটি বর্ণনা রয়েছে তন্মধ্যে একটি হলো:
لاَإِلَهَإِلاَّأَنْتَسُبْحَانَكَإِنِّيكُنْتُمِنَالظَّالِمِينَ.
উচ্চারণ: লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা সুব‘হা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যা-লিমীন
অর্থ: আপনি ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, নিশ্চয় আমি অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত।
সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস(রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন,“যুন্নুন (ইউনূস আ:) মাছের পেটে যে দু‘আ করেছিলেন: (লা ইলাহা ইল্লা আনতা ... যালিমীন)- এ দু‘আ দ্বারা যে কোনো মুসলিম যে কোনো বিষয়ে দু‘আ করবে, আল্লাহ অবশ্যই তার দু‘আ কবুল করবেন।” হাদীসটি সহীহ।( )
(এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য পড়–ন রাহে বেলায়েত)
দু‘আ কবুলের সময় ও স্থান
১- রাত, বিশেষত শেষ রাত।
২- পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পর।
৩- আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়।
৪- সালাতের মধ্যে, সাজদার মধ্যে ও সালামের পূর্বে।
৫- শুক্রবারের বিশেষ মুহূর্ত। সাহাবী ও তাবেয়ীগণ এ বিষয়ে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে অধিকাংশ আলিমই বলেছেন যে, শুক্রবারের দিন সূর্যাস্তের পূর্বের মুহূর্ত  দু‘আ কবুলের সময়। এ সময়ে যদি কোনো মুসলিম মাগরিবের সালাতের প্রস্তুতি নিয়ে সালাতের অপেক্ষায় বসে দু‘আয় মশগুল থাকে তবে আল্লাহ তাঁর দু‘আ কবুল করবেন। কোনো কোনো বর্ণনায় ইমামের খুতবা প্রদান শুরু করা থেকে তাঁর সালাতের সালাম ফেরানো পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এ মুহূর্তটি রয়েছে।( )
৬- বাইতুল্লাহর দরজার কাছে মুলতাযামে।
৭- সাফা ও মারওয়ার উপরে।
৮- তাওয়াফের সময়।
৯- আরাফার মাঠে।
আপনি আপনার মনের কথা নিজের ভাষায় মন খুলে আপনার রবের কাছে বলুন, আপনার রব আপনার কথা শুনছেন আপনার ডাকে সাড়া দিচ্ছেন, আপনার রব আপনার একেবারেই কাছে, এর চেয়ে কাছে আর কেউ নেই। আল্লাহ বলেন;
وَإِذَاسَأَلَكَعِبَادِيعَنِّيفَإِنِّيقَرِيبٌأُجِيبُدَعْوَةَالدَّاعِإِذَادَعَانِ.
“যদি আমার বান্দাগণ আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তবে আমি তাদের নিকটবর্তী। প্রার্থনাকারী যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে (আমাকে ডাকে) তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিই (প্রার্থনা কবুল করি)।” (সূরা বাকারা: আয়াত ১৮৬)
[নি¤েœ কুরআন-হাদীসে বর্ণিত কিছু দু‘আ দেয়া হলো। আরও বিসÍারিত পাবেন রাহে বেলায়েত গ্রন্থে]
পবিত্র কুরআন থেকে কিছু দু‘আ
নিজের পাপে ক্ষমা প্রার্থনার দু‘আ
১- رَبَّنَاآتِنَافِيالدُّنْيَاحَسَنَةًوَفِيالْآخِرَةِحَسَنَةًوَقِنَاعَذَابَالنَّارِ.
অর্থ: “হে আমাদের প্রভু, এ দুনিয়ায়ও আমাদের কল্যাণ দান কর, পরকালেও তুমি আমাদের কল্যাণ দান কর, (সর্বোপরি) তুমি আমাদের আগুনের আযাব থেকে নিষ্কৃতি দাও।”(সূরা বাকারা: আয়াত ২০১)
২- رَبَّنَاظَلَمْنَاأَنْفُسَنَاوَإِنْلَمْتَغْفِرْلَنَاوَتَرْحَمْنَالَنَكُونَنَّمِنَالْخَاسِرِينَ.
অর্থ: “হে আমাদের প্রভু, আমরা আমাদের নিজেদের উপর যুলুম করেছি, তুমি যদি আমাদের মাফ না কর তাহলে অবশ্যই আমরা চরম ক্ষতিগ্রস্তদের দলে শামিল হয়ে যাব।”(সূরা আ‘রাফ: আয়াত ২৩)
৩- رَبِّاغْفِرْوَارْحَمْوَأَنْتَخَيْرُالرَّاحِمِينَ.
অর্থ: “হে আমার প্রভু, তুমি (আমায়) ক্ষমা কর, দয়া কর, কেননা তুমি হচ্ছো দয়ালুদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট।” (সূরা মু‘মিনুন: আয়াত ১১৮)
৪- سَمِعْنَاوَأَطَعْنَاغُفْرَانَكَرَبَّنَاوَإِلَيْكَالْمَصِيرُ.
অর্থ :“আমরা (আল্লাহর নির্দেশ) শুনেছি, এবং (তা) মেনে নিয়েছি হে আমাদের রব, (আমরা) তোমার ক্ষমা চাই, এবং (আমরা জানি) আমাদের (একদিন) তোমার কাছে ফিরে যেতে হবে।”(সূরা বাকারা: ২৮৫)
৫- رَبَّنَالَاتُؤَاخِذْنَاإِنْنَسِينَاأَوْأَخْطَأْنَارَبَّنَاوَلَاتَحْمِلْعَلَيْنَاإِصْرًاكَمَاحَمَلْتَهُعَلَىالَّذِينَمِنْقَبْلِنَارَبَّنَاوَلَاتُحَمِّلْنَامَالَاطَاقَةَلَنَابِهِوَاعْفُعَنَّاوَاغْفِرْلَنَاوَارْحَمْنَاأَنْتَمَوْلَانَافَانْصُرْنَاعَلَىالْقَوْمِالْكَافِرِينَ.
অর্থ: “হে আমাদের প্রভু, যদি আমরা কিছু ভুলে যাই, যদি আমরা কোন ভুল করে বসি তার জন্যে তুমি আমাদের পাকড়াও করো না। হে আমাদের রব, আমাদের পূর্ববর্তী জাতিদের উপর যে ধরনের বোঝা তুমি চাপিয়েছিলে তা আমাদের উপর চাপিয়ো না। হে আমাদের  মালিক, যে বোঝা বইবার সামর্থ আমাদের নেই তা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। তুমি আমাদের মাফ করে দাও, ক্ষমা করে দাও, আমাদের উপর দয়া কর। তুমি আমাদের (একমাত্র আশ্রয়দাতা) অভিভাবক, অতএব কাফেরদের মোকাবেলায় তুমি আমাদের সাহায্য কর।”(সূরা বাকারা: আয়াত ২৮৬)
৬- رَبَّنَااغْفِرْلَنَاذُنُوبَنَاوَإِسْرَافَنَافِيأَمْرِنَاوَثَبِّتْأَقْدَامَنَاوَانْصُرْنَاعَلَىالْقَوْمِالْكَافِرِينَ.
অর্থ: “হে আমাদের প্রভু, তুমি আমাদের যাবতীয় গুনাহখাতা মাফ করে দাও, আমাদের কাজকর্মের সব বাড়াবাড়ি তুমি ক্ষমা করে দাও এবং (বাতিলের মোকাবেলায়) তুমি আমাদের কদমগুলিকে মযবুত রাখো, হক ও বাতিলের (সম্মুখসমরে) কাফেরদের উপর তুমি আমাদের বিজয় দাও।”(সূরা আলে ইমরান: আয়াত ১৪৭)
৭- رَبَّنَاوَآتِنَامَاوَعَدْتَنَاعَلَىرُسُلِكَوَلَاتُخْزِنَايَوْمَالْقِيَامَةِإِنَّكَلَاتُخْلِفُالْمِيعَادَ.
অর্থ: “হে আমাদের প্রভু, তুমি তোমার রাসূলদের মাধ্যমে যেসব (পুরষ্কারের) প্রতিশ্রুতি দিয়েছো তা আমাদের দান কর, এবং কেয়ামতের দিন তুমি আমাদের অপমানিত করো না, নিশ্চয়ই তুমি কখনো ওয়াদার বরখেলাফ করো না।”(সূরা আলে ইমরান: আয়াত ১৯৪)
৮- رَبَّنَااصْرِفْعَنَّاعَذَابَجَهَنَّمَإِنَّعَذَابَهَاكَانَغَرَامًا. إِنَّهَاسَاءَتْمُسْتَقَرًّاوَمُقَامًا.
অর্থ: “হে আমাদের প্রভু, তুমি আমাদের থেকে জাহান্নামের আযাব দূরে রাখ, কেননা তার আযাব হচ্ছে নিশ্চিত বিনাশ। (তদুপরি) আশ্রয় ও থাকার তা হবে একটি নিকৃষ্ট জায়গা।”সূরা ফুরকান: আয়াত ৬৫, ৬৬
৯- رَبَّنَاإِنَّنَاآمَنَّافَاغْفِرْلَنَاذُنُوبَنَاوَقِنَاعَذَابَالنَّارِ.
অর্থ:“হেআমাদের প্রভু, আমরা অবশ্যই তোমার ওপর ঈমান এনেছি সুতরাং আমাদের গুনাহখাতা তুমি মাফ করে দাও এবং (শেষ বিচারের দিন) তুমি আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে দিয়ো।”(সূরা আলে ইমরান: আয়াত ১৬)
১০- رَبَّنَالَاتَجْعَلْنَافِتْنَةًلِلَّذِينَكَفَرُواوَاغْفِرْلَنَارَبَّنَاإِنَّكَأَنْتَالْعَزِيزُالْحَكِيمُ.
অর্থ: “হে আমাদের প্রভু, তুমি আমাদের (জীবনকে) কাফেরদের নিপীড়নের নিশানা বানিয়ো না। হে আমাদের প্রভু, তুমি আমাদের গুনাহখাতা ক্ষমা করে দাও, অবশ্যই তুমি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।”(সূরা মুমতাহিনা: আয়াত ৫)
ইলম চেয়ে দু‘আ
:رَبِّزِدْنِيعِلْمًاঅর্থ: “হে আমার প্রভু, আমার জ্ঞান (ভান্ডার) তুমি বৃদ্ধি করে দাও।”(সূরা ত্বহা: আয়াত ১১৪)
رَبِّاشْرَحْلِيصَدْرِي. وَيَسِّرْلِيأَمْرِي. وَاحْلُلْعُقْدَةًمِنْلِسَانِي. يَفْقَهُواقَوْلِي.
অর্থ: “হে আমার প্রভু, তুমি আমার জন্যে আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দাও। আমার কাজ আমার জন্যে সহজ করে দাও। আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দাও। যাতে করে ওরা আমার কথা (ভাল করে) বুঝতে পারে।” (সূরা ত্বহা: আয়াত ২৫, ২৬, ২৭) 
মাতাপিতার জন্য দু‘আ
رَبِّارْحَمْهُمَاكَمَارَبَّيَانِيصَغِيرًا.
অর্থ: “হে আমার প্রভু, আমার পিতা-মাতার প্রতি ঠিক সেভাবেই দয়া কর, যেমনি করে শৈশবে তাঁরা আমাকে লালন করেছিল।(সূরা ইসরা: আয়াত ২৪)
মাতাপিতা ও অন্যান্য মুমিনের জন্য দু‘আ
رَبَّنَااغْفِرْلِيوَلِوَالِدَيَّوَلِلْمُؤْمِنِينَيَوْمَيَقُومُالْحِسَابُ.
অর্থ: “হে আমাদের প্রভু, যেদিন চূড়ান্ত হিসাব নিকাশ হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার পিতা মাতাকে এবং ঈমানদার মানুষদের তোমার অনুগ্রহ দ্বারা ক্ষমা করে দিয়ো।”সূরা ইবরাহীম: আয়াত ৪১
নিজেদের ও পূর্ববর্তী মুমিনদের মাগফিরাত চেয়ে দু‘আ
رَبَّنَااغْفِرْلَنَاوَلِإِخْوَانِنَاالَّذِينَسَبَقُونَابِالْإِيمَانِوَلَاتَجْعَلْفِيقُلُوبِنَاغِلًّالِلَّذِينَآمَنُوارَبَّنَاإِنَّكَرَءُوفٌرَحِيمٌ.
অর্থ: “হে আমাদের রব, তুমি আমাদের মাফ করে দাও, আমাদের আগে আমাদের যে ভাইয়েরা ঈমান এনেছে তুমি তাদেরকেও মাফ করে দাও, এবং আমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে, তাদের ব্যাপারে আমাদের মনে কোন রকম হিংসা-বিদে¦ষ রেখো না। হে আমাদের রব, তুমি অনেক মেহেরবান ও পরম দয়ালু।”সূরা হাশর: আয়াত ১০
সন্তান চেয়ে দু‘আ
رَبِّهَبْلِيمِنَالصَّالِحِينَ.
উচ্চারণ: রাব্বি হাব লি- মিনাছ ছালিহীন।
অর্থ: “হে আমার রব তুমি আমাকে একটি নেক সন্তান দান কর।”(সূরা আসসাফফাত: আয়াত ১০০)
رَبِّهَبْلِيمِنْلَدُنْكَذُرِّيَّةًطَيِّبَةًإِنَّكَسَمِيعُالدُّعَاءِ.
উচ্চারণ: রাব্বি হাব লি মিন লাদুনকা যুররিয়্যাতান তইয়্যিবাতান ইন্নাকা সামি- উদ্দু‘আ।
অর্থ: “হে আমার রব তুমি তোমার কাছ থেকে আমাকে একটি নেক সন্তান দান কর, নিশ্চয়ই তুমি মানুষের ডাক শোন।”(সূরা আলে ইমরান: ৩৮)
رَبِّلَاتَذَرْنِيفَرْدًاوَأَنْتَخَيْرُالْوَارِثِينَ.
উচ্চারণ: রাব্বি লা তাযারনি ফারদান ওয়া আনতা খাইরুল ওয়ারিসি-ন।
অর্থ:“হে আমার রব, তুমি আমাকে একা (নিঃসন্তান করে) রেখে দিয়োনা, তুমিই হচ্ছো উৎকৃষ্ট মালিকানার অধিকারী।”(সূরা আম্বিয়া: ৮৯)

নিজ ও পরিবার সকলের জন্য দু‘আ
رَبِّاجْعَلْنِيمُقِيمَالصَّلَاةِوَمِنْذُرِّيَّتِيرَبَّنَاوَتَقَبَّلْدُعَاءِ.
উচ্চারণ:রাব্বিজ আলনি মুকিমাস সালাতি, ওয়ামিন র্যুরিয়্যাতি, রাব্বানা ওয়াতাকাব¦াল দু’আ।
অর্থ: “হে আমার রব, তুমি আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানাও, আমার সন্তানদের মাঝ থেকেও (নামাযী বান্দা বানাও) হে আমাদের রব, আমার দু‘আ তুমি কবুল কর।”(সূরা ইবরাহীম: ৪০)
رَبَّنَاهَبْلَنَامِنْأَزْوَاجِنَاوَذُرِّيَّاتِنَاقُرَّةَأَعْيُنٍوَاجْعَلْنَالِلْمُتَّقِينَإِمَامًا.
উচ্চারণ: রাব¦ানা হাব লানা মিন আযওয়াজিনা ওয়াযুররিয়্যাতিনা র্ক্বুরাতা আ’য়ুনিন, ওয়াজ আলনা লিল মুত্তাক্বিনা ইমা-মা-।
অর্থ: “হে আমাদের রব, তুমি আমাদের স্বামী স্ত্রী ও সন্তান সন্ততিদের থেকে আমাদের জন্যে চোখের  শীতলতা দান করো, আর তুমি আমাদের পরহেজগার লোকদের ইমাম বানিয়ে দাও।”(সূরা ফুরকান: আয়াত ৭৪)



রাসুল (সা:)-এর শেখানো কিছু দু‘আ
(দু‘আ-১)
اَللّهُمَّأَعُوْذُبِكَمِنْجَهْدِالْبَلاَءِوَدَرَكِالشَّقَاءِوَسُوْءِالْقَضَاءِوَشَمَاتَةِالأَعْدَاءِ
উচ্চারণ:আল্লা-হুম্মা, আ‘ঊযু বিকা মিন জাহ্দিল বালা-ই ওয়া দারাকিশ শাক্বা-ই, ওয়া সূয়িল ক্বাদা-ই ওয়া শামাতাতিল আ’অ্দা-ই।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি কষ্টদায়ক বিপদ, চরম দুর্ভাগ্য, খারাপ তাকদীর এবং শত্রুদের উপহাস থেকে।”( )
(দু‘আ-২)
اللَّهُمَّإِنِّيْأَعُوذُبِكَمِنْالْعَجْزِوَالْكَسَلِوَالْجُبْنِوَالْبُخْلِوَالْهَرَمِوَعَذَابِالْقَبْرِاللَّهُمَّآتِنَفْسِيتَقْوَاهَاوَزَكِّهَاأَنْتَخَيْرُمَنْزَكَّاهَاأَنْتَوَلِيُّهَاوَمَوْلاهَااللَّهُمَّإِنِّيْأَعُوذُبِكَمِنْعِلْمٍلايَنْفَعُوَمِنْقَلْبٍلايَخْشَعُوَمِنْنَفْسٍلاتَشْبَعُوَمِنْدَعْوَةٍلايُسْتَجَابُلَهَا.
উচ্চারণ:আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল ‘আজ্যি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুব্নি ওয়াল বুখ্লি, ওয়াল হারামি ওয়া ‘আযা-বিল ক্কাব্রি। আল্লা-হুম্মা, আ-তি  নাফ্সি তাক্ক্ওয়া-হা-, ওয়া যাক্কিহা- আনতা খাইররু মান যাক্কা-হা-, আনতা ওয়ালিইয়ুহা- ওয়া মাওলা-হা-। আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন্ ‘ইলমিন লা- ইয়ানফা‘উ, ওয়ামিন  ক্কালবিন্লা- ইয়াখ্শা‘উ ওয়ামিন নাফ্সিন লা- তাশ্বা‘উ ওয়ামিন দা‘অ্ওয়াতিন লা- ইয়ুস্তাজা-বু লাহা-।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি, অক্ষমতা থেকে, আলসেমি থেকে, কাপুরুষতা থেকে, কৃপণতা থেকে, অতি-বার্ধক্য থেকে এবং কবরের আযাব থেকে। হে আল্লাহ, আমার নফসকে আপনি তার তাকওয়া প্রদান করুন এবং আপনি তাকে তাযকিয়া-পবিত্রতা দান করুন। নফসকে পবিত্রতা-তাযকিয়া প্রদানে আপনিই সর্বোত্তম, আপনিই আমার নফসের অভিভাবক ও বন্ধু। হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি এমন জ্ঞান থেকে যে জ্ঞান উপকারে লাগে না, এমন হৃদয় (কলব) থেকে যে হৃদয় ভীত হয় না, এমন নফস থেকে যে নফস পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন দু‘আ থেকে যে দু‘আ কবুল হয় না।”( )
(দু‘আ-৩)
اَللّهُمَّإِنِّيْأَعُوْذُبِكَمِنْزَوَالِنِعْمَتِكَوَتَحوُّلِعَافِيَتِكَوَفُجَاءَةِنَقْمَتِكَوَجَمِيْعِسَخَطِكَ.
উচ্চারণ:আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন যাওয়ালি নি‘অ্মাতিকা, ওয়া তা‘হাওউলি ‘আ-ফিয়াতিকা, ওয়া ফুজা-আতি নাক্ব্মাতিকা ওয়া জামীয়ি সাখাতিক।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি, আপনার দেয়া নেয়ামতের বিলুপ্তি থেকে, আপনার দেয়া শান্তি-সুস্থতার পরিবর্তন থেকে, আপনার অকস্মাৎ শাস্তি থেকে এবং আপনার সর্ব প্রকারের অসন্তুষ্টি থেকে।”( )
(দু‘আ-৪)
اللَّهُمَّزِدْنَاوَلاتَنْقُصْنَاوَأَكْرِمْنَاوَلاتُهِنَّاوَأَعْطِنَاوَلاتَحْرِمْنَاوَآثِرْنَاوَلاتُؤْثِرْعَلَيْنَاوَأرْضِنَاوَارْضَعَنَّا.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, যিদ্না- ওয়ালা- তান্কুছনা- ওয়া আক্রিম্না- ওয়ালা- তুহিন্না- ওয়া আ‘ত্বিনা- ওয়ালা- তা‘হ্রিম্না- ওয়া আ-র্ছিনা- ওয়ালা- তু‘ছির ‘আলাইনা- ওয়া র্আদ্বিনা ওর্য়াদ্বা ‘আন্না।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি আমদেরকে বাড়িয়ে দিন, কমাবেন না, আপনি আমাদেরকে সম্মানিত করুন, অপমানিত করবেন না, আমাদেরকে প্রদান করুন, বঞ্চিত করবেন না, আমাদেরকে অগ্রাধিকার প্রদান করুন, আমাদের উপর কাউকে অগ্রাধিকার দিবেন না, আপনি আমাদেরকে সন্তুষ্ট করুন এবং আমাদের উপর আপনি সন্তুষ্ট হোন।”( )
(দু‘আ-৫)
اللَّهُمَّإِنِّيْأَسْأَلُكَالْهُدَىوَالتُّقَىوَالْعَفَافَوَالْغِنَى.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আস্আলুকাল হুদা- ওয়াত্ তুক্বা, ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়াল ‘িগনা।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি চাচ্ছি আপনার কাছে হেদায়াত, তাকওয়া, সচ্ছলতা ও সংযম-শুদ্ধতা-শালীনতা।”( )

(দু‘আ-৬)
يَامُقَلِّبَالْقُلُوْبِثَبِّتْقَلْبِىعَلَىدِينِكَ.
উচ্চারণ: ইয়া- মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূবি সাব্বিত ক্কাল্বী ‘আলা- দীনিকা
অর্থ: “হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী, সুপ্রতিষ্ঠিত-স্থির রাখুন আমার অন্তরকে আপনার দীনের উপর।”হাদীসটি সহীহ।( )
(দু‘আ-৭)
اللَّهُمَّأَحْسِنْعَاقِبَتَنَافِيالأُمُورِكُلِّهَا،وَأَجِرْنَامِنْخِزْيِالدُّنْيَاوَعَذَابِالآخِرَةِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, আ‘হ্সিন্ ‘আ-ক্কিবাতানা ফিল উমূরি কুল্লিহা- ওয়া আর্জিনা- মিন্ খিয্য়িদ্ দুনইয়া- ওয়া ‘আযা-বিল আ-খিরাহ।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি সুন্দর করুন আমাদের পরিণতি সকল কাজে এবং আমাদের রক্ষা করুন দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও আখিরাতের আযাব থেকে।”( )

(দু‘আ-৮)
اللَّهُمَّإِنِّيْأَعُوذُبِكَمِنْالْبَرَصِوَالْجُنُونِوَالْجُذَامِوَمِنْسَيِّئْالأَسْقَامِ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল বারাছি, ওয়াল জুনূনি, ওয়াল জুযা-মি ওয়া মিন সাইয়িয়িল আস্ক্বা-ম।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি শ্বেতী রোগ, পাগলামি-মানসিক রোগ, কুষ্ঠ রোগ এবং সকল খারাপ রোগ-ব্যাধি থেকে।”( )
(দু‘আ-৯)
اللَّهُمَّاحْفَظنِيبالإِسْلاَمِقائِماًواحْفَظْنِيبالإِسْلاَمِقاعِداًواحْفَظنِيبالإِسْلاَمِراقِداًولاتُشْمِتْبِيعَدُوّاًولاحاسِداًاللَّهُمَّإِنِّيْأسْألُكَمِنْكُلِّخَيْرخزائِنُهُبِيَدِكَوأعُوذُبِكَمِنْكُلِّشَرَخَزَائِنُهُبِيَدِكَ
উচ্চারণ:আল্লা-হুম্মা‘হ্ফায্নী বিল্ ইস্লা-মি ক্বা-য়িমান্ ওয়া‘হ্ফাযনী বিল্ ইস্লা-মি ক্বা-‘িয়দান, ওয়া‘হ্ফাযনী বিল্ ইসলা-মি রা-ক্বিদান, ওয়ালা- তুশ্মিত্ বী ‘আদুওয়ান্ ওয়ালা- ‘হা-সিদান। আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আস্আলুকা মিন্ কুল্লি ‘খাইরিন্ খাযা-ইনুহূ বিইয়াদিকা, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন কুল্লি র্শারিন খাযা-ইনুহূ বিইয়াদিকা।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমাকে হেফাযত করুন ইসলামের ওসীলায় দাঁড়ানো অবস্থায়, আমাকে হেফাযত করুন ইসলামের ওসীলায় বসা অবস্থায়, আমাকে হেফাযত করুন ইসলামের ওসীলায় শোয়া অবস্থায়। আমাকে আপনি এমন অবস্থায় ফেলবেন না যে, শত্রুরা আমার দুরবস্থায় খুশী হয়। আমি আপনার নিকট চাচ্ছি সকল কল্যাণ যা আপনার ভান্ডারে বিদ্যমান এবং আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি সকল অকল্যাণ থেকে যা আপনার ভান্ডারে বিদ্যমান।”( )
(দু‘আ-১০)
اللهمَّاجْعَلْأوْسَعَرِزْقِكَعَلَيَّعندَكِبَرِسِنِّيوانْقِطاعِعُمْرِي
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাজ্‘ আল আউসা‘আ রিয্ক্বিকা ‘আলাইয়া ‘ইনদা কিবারি সিন্নী ওয়ান্ক্বিত্বা‘িয় উমুরী।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমার জন্য আপনার সবচেয়ে প্রশস্ত রিযক আপনি আমাকে প্রদান করবেন আমার বার্ধক্যের সময় এবং জীবনের শেষ সময়ে।”( )
দুশ্চিন্তা বা বিপদগ্রস্তের দু‘আ-১
لاَإِلهَإِلاَّاللهُالْعَظِيْمُالْحَلِيْمُ،لاَإِلهَإِلاَّاللهُرَبُّالْعَرْشِالْعَظِيْمِ،لاَإِلهَإِلاَّاللهُرَبُّالسَّمَاوَاتِ،وَرَبُّالأَرْضِ،وَرَبُّالْعَرْشِالْكَرِيْمِ.
উচ্চারণ: “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল আযীমুল হালীম, লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাব্বুল আরশিল আযীম, লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাব্বুস সামাওয়া-তি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারীম।”
অর্থ: “নেই কোনো মা’বুদ আল্লাহ ছাড়া, যিনি মহান, মহাধৈর্যশীল মহা বিচক্ষণ, নেই কোনো মা’বুদ আল্লাহ ছাড়া, যিনি মহান আরশের প্রভু, নেই কোনো মা’বুদ আল্লাহ ছাড়া, যিনি আসমানসমূহের, জমিনের ও সম্মানিত আরশের প্রভু।”
ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বিপদ বা কষ্টের সময় এ কথাগুলি বলতেন।( ) আলী (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাকে কোনো কষ্ট বা বিপদে পড়লে উপরের এ দু‘আ পড়তে শিখিয়েছেন।( ) এখানে আমরা দেখছি যে, এ দু‘আ মূলত শুধুমাত্র যিক্র। এখানে কোনো দু‘আ নেই। কিন্তু আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে তার কাছে আত্মসমর্পণ করেই দু‘আ করা হচ্ছে।
দুশ্চিন্তা বা বিপদগ্রস্তেরদু‘আ-২
اَللهُاللهُرَبِّيْلاَأُشْرِكُبِهِشَيْئًا.
উচ্চারণ:আল্লা-হু, আল্লা-হু রাব্বী, লা- উশরিকু বিহী শাইআন।
অর্থ:“আল্লাহ, আল্লাহ, আমার রব, আমি তার সাথে কাউকে শরীক করি না।”
আয়েশা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) তাঁর পরিবারের সবাইকে একত্র করে বলতেন: “তোমাদের কেউ কখনো দুশ্চিন্তা বা বিপদের মধ্যে নিপতিত হলে এ কথা বলবে।” হাদীসটির সনদ কিছুটা দুর্বল হলেও অন্যান্য কয়েকটি সনদে একই দু‘আ বর্ণিত হয়েছে। এজন্য হাদীসটি হাসান।( )
ঋণমুক্তির দু‘আ-১
اَللَّهُمَّاكْفِنِيْبِحَلاَلِكَعَنْحَرَامِكَوَأغْنِنِيْبِفَضْلِكَعَمَّنْسِواكَ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিকা ওয়া আ‘গনিনী বিফাদলিকা ‘আম্মান সিওয়াকা।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি আপনার হালাল প্রদান করে আমাকে হারাম থেকে রক্ষা করুন এবং আপনার দয়া ও বরকত প্রদান করে আমাকে আপনি ছাড়া অন্য সকলের অনুগ্রহ থেকে বিমুক্ত করে দিন।”
আলী (রা:)-এর কাছে এক ব্যক্তি ঋণমুক্তির জন্য সাহায্য চাইলে তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দিয়েছেন, আমি তোমাকে তা শিখিয়ে দিচ্ছি। তোমার পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তোমার পক্ষ থেকে তা আদায় করে দিবেন এবং তোমাকে ঋণমুক্ত করবেন। তুমি বলবে... (উপরের দু‘আ)।”হাদীসটি সহীহ।( )
ঋণমুক্তির দু‘আ-২
اللَّهُمَّإِنِّيْأَعُوْذُبِكَمِنَالْهَمِّوَالْحَزَنِوَالْعَجْزِوَالْكَسَلِوَالْبُخْلِوَالْجُبْنِوَضَلَعِالدَّيْنِوَغَلَبَةِالرِّجَالِ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল ‘হাযানি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি দুশ্চিন্তা, দুঃখ-বেদনা, মনোকষ্ট, অক্ষমতা, অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, ঋণের বোঝা এবং মানুষের প্রাধান্য বা প্রভাবের অধীনতা থেকে।”
আনাস (রা:) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা:) বেশী বেশী এ দু‘আটি বলতেন।”( )
কঠিন কর্মকে সহজ করার দু‘আ
اَللَّهُمَّلاَسَهْلَإِلاَّمَاجَعَلْتَهُسَهْلاًوَأَنْتَتَجْعَلُالْحَزْنَإِذَاشِئْتَسَهْلاً
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, লা- সাহলা ইল্লা- মা- জা‘আলতাহূ সাহলান। ওয়া আনতা তাজ‘আলুল হাযনা ইযা- শিয়্তা সাহলান।
অর্থ: “হে আল্লাহ আপনি যা সহজ করেন তা ছাড়া কিছুই সহজ নয়। আর আপনি ইচ্ছা করলে সুকঠিনকে সহজ করেন।” হাদীসটি সহীহ।( )
কারো থেকে ক্ষতির আশঙ্কা করলে আত্মরক্ষার দু‘আ-১
اللَّهُمَّإِنَّانَجْعَلُكَفِينُحُورِهِمْوَنَعُوذُبِكَمِنْشُرُورِهِمْ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, ইন্না- নাজ‘আলুকা ফী নু‘হূরিহিম ওয়া না‘ঊযুবিকা মিন শুরূরিহিম।
অর্থ : “হে আল্লাহ, আমরা আপনাকে তাদের কণ্ঠদেশে রাখছি এবং আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি তাদের অকল্যাণ থেকে।” হাদীসটি সহীহ।( )
কারো থেকে ক্ষতির আশঙ্কা করলে আত্মরক্ষার দু‘আ-২
اللَّهُمَّاكْفِنِيهِمْبِمَاشِئْتَ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাক্ ফিনীহিম বিমা- শিঅ্তা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি যেভাবে ইচ্ছা আমাকে তাদের থেকে সংরক্ষণ করুন।( )
কারো থেকে ক্ষতির আশঙ্কা করলে আত্মরক্ষার দু‘আ-৩
اللَّهُمَّرَبَّالسَّمَاوَاتِالسبعوَرَبَّالْعَرْشِالْعَظِيمِ،كُنْلِيجَارًامِنْفُلانٍبْنِفُلاَنٍوَأَحْزَابِهِمِنْخَلاَئِقِكَ (وَمِنْشَرِّخَلْقِكَكُلِّهِمْجَمِيعًا) أَنيَفْرُطَعَلَىَّأَحَدٌمِنْهُمْأَوْيَطْغَىعَزَّجَارُكَوَجَلَّثَنَاؤُكَولاَإِلَهَإِلاَّأَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রাব্বাস সামা-ওয়া-তিস সাব‘ই ওয়া রাব্বাল ‘আরশিল ‘আযীম, কুন লী জা-রান মিন ফুলা-ন ইবনে ফুলা-ন (সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম) ওয়া আ‘হযা-বিহী মিন খালা-ইক্বিকা (ওয়া মিন র্শারি খালকিকা কুল্লিহিম জামি‘আন) আইঁ ইয়াফরুত্বা ‘আলাইয়্যা আ‘হাদুম মিনহুম আও ইয়াত্বগা-, ‘আযযা জা-রুকা ওয়া জাল্লা সানা-উকা, ওয়া লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, সাত আসমানের প্রভু ও মহান আরশের প্রভু, আপনি আমাকে আশ্রয় প্রদান করেন অমুকের পুত্র অমুক (সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম) থেকে এবং আপনার সৃষ্টির মধ্য থেকে যারা তার দলবলে রয়েছে তাদের থেকে (এবং সকল খারাপ সৃষ্টির অমঙ্গল থেকে), তাদের কেউ যেন আমার বিষয়ে সীমালঙ্ঘন করতে না পারে বা আমার উপর অত্যাচার বা বিদ্রোহ করতে না পারে। আপনি যাকে আশ্রয় দেন সে-ই সম্মানিত। আপনার প্রশংসা মহিমান্বিত। আপনি ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই।”
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা:) ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন: “কেউ কোনো শাসক, প্রশাসক বা ক্ষমতাধর থেকে ক্ষতির আশঙ্কা করলে এ দু‘আটি পাঠ করবে।”হাদীসটি সহীহ।( )
গবেষক, মুফতী ও সত্যানুসন্ধানীর দু‘আ
اَللّهُمَّرَبَّجِبْرَائِيْلَوَمِيْكَائِيْلَوَإِسْرَافِيْلَفَاطِرَالسَّمَاوَاتِوَالْأَرْضِعَالِمَالْغَيْبِوَالشَّهَادَةِأَنْتَتَحْكُمُبَيْنَعِبَادِكَفِيمَاكَانُوافِيهِيَخْتَلِفُونَاهْدِنِيْلِمَااخْتُلِفَفِيْهِمِنْالْحَقِّبِإِذْنِكَإِنَّكَتَهْدِيْمَنْتَشَاءُإِلَىصِرَاطٍمُسْتَقِيْمٍ.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, রাব্বা জিবরা-ঈল ওয়া মীকা-ঈল ওয়া ইসরা-ফীল, ফা-তিরাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ‘আ-লিমাল ‘গাইবি ওয়াশহা-দাতি, আন্তা তা‘হ্কুমু বাইনা ‘ইবা-দিকা ফীমা- কা-নূ ফীহি ইয়া‘খ্তালিফূন, ইহ্দিনী লিমা‘খ্তুলিফা ফীহি মিনাল ‘হাক্কি বিইয্নিকা ইন্নাকা তাহ্দী মান্ তাশা-উ ইলা ছিরাত্বিম্ মুস্তাক্বীম।
অর্থ : “হে আল্লাহ, জিবরাঈল, মিকাঈল ও ইসরাফীলের প্রভু, আসমানসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, আপনার বান্দারা যে সকল বিষয় নিয়ে মতভেদ করতো তাদের সে বিষয়ে আপনিই ফয়সালা প্রদান করবেন। যে সকল বিষয়ে সত্য বা হক্ব নির্ধারণে মতভেদ হয়েছে সে সকল বিষয়ে আপনি আপনার অনুমতিতে আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আপনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সিরাতুল মুস্তাকিমে পরিচালিত করেন।”( )


No comments:

Post a Comment