Friday 24 March 2017

মাদক সেবনের ভয়াবহ কুফল


পটভূমি :
বর্তমানে মাদকাসক্তি আমাদের সমাজে এক সর্বনাশা ব্যধিরূপে বিস্তার লাভ করেছে । কচুরীপানার মতই সারা দেশ আজ মাদকদ্রব্যের উপর ভাসছে । মাদকদ্রব্যের বিস্তারে বিশ্ববাসী আজ শংকীত । দূরারোগ্য ব্যধির মতই তা তরুন সমাজকে গ্রাস করছে । মাদকের ভয়াবহ ছোবলে অংকুরই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে বহু তরুনের তাজা প্রাণ । আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অসংখ্য তরুনের অমিত সম্ভাবনাময় জীবন । এর কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ঊন্নয়ন । এর তীব্র দংশনে ছটফট করছে কত তরুন ও যুব সমাজ । মাদকের ভয়াবহ পরিনতি দেখে আজ প্রশাসন বিচলিত , অভিবাবকরা আতংকিত, চিকিৎসরা দিশেহারা । তরুণ যুব শক্তিই দেশের প্রাণ ও মেরুদন্ড । নেশার ছোবলে সেই মেরুদন্ড আজ ভেঙে পড়ছে । নেশার ছোবলে ধুকে ধুকে মরছে লক্ষ লক্ষ প্রাণ । কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের রক্ত মাংস । ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে । দাবানলের মতই ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন শহরে, শহর তলিতে , গ্রামে-গ্রামান্তরে । নিম্নে মাদকাসক্তির বিভিন্ন দিক ও বিভাগের উপর একটি বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা উপস্থাপন করার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ ।
মাদকাসক্তি বা মাদকদ্রব্য বলতে কি বুঝায় ?

আভিধানিক অর্থে মাদকদ্রব্যের সংজ্ঞা:
মাদকদ্রব্যকে অন্য কথায় নেশা বলা হয় । ইংরেজিতে একে “Drug’’ বলা হয় । ক্বুরআন ও হাদীসে মদ বা মাদক জাতীয় দ্রব্যকে خمرشراب বলা হয়েছে ।
ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় মাদকের সংজ্ঞা :
ما خمر العقل ــ
অর্থাৎ- যে বস্তু সেবনের ফলে মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি লোপ করে, তাই হলো, মাদকদ্রব্য ।
হাদীসে নববীতে মাদকের পরিচয় দেওয়া হয়েছে এ ভাবে :

عن عبد الله بن مسعود ( رض ) قال : قال رسول الله ( ص ) : كل مسكر حرام ، ما أسكر كثيره فقليله حرام ـ ) رواه البيهقى )
অর্থাৎ- আব্দুল্লঅহ ইবনু মাসউদ ( রা: ) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) এরশাদ ফরমায়েছেন : প্রত্যেক নেশা জাতীয় বস্তুই মদ, আর তা হারাম । অধিক সেবন করলে যা নেশার সৃস্টি করে, তা কম সেবন করাও হারাম । ) বায়হাক্বী )
ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী দন্ডবিধি গ্রন্থে মাদকের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে :
যে সকল বস্তু মাদকাসক্তি সৃষ্টি করে, এবং যা সেবনে বোধশক্তি হ্রাস পায় , এদের সকল শ্রেণীই মাদকদ্রব্য ।
অন্য কথায়- মাদকদ্রব্য হলো ভেষজদ্রব্য , যা সেবনে মস্তিষ্ক ও শরীরের সংবেদন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় । সুস্থ্য বিবেক লয় হয় । অতি মাত্রায় গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ স্তিমিত হয়ে যায় ।
কারও মতে : মাদক দ্রব্য হচ্ছে সে সব বস্তু, যা গ্রহণের ফলে স্নায়ুবিক বৈকল্যসহ নেশার সুষ্টি হয় । সুনির্দিষ্ট সময় পর তা সেবনের দূর্বিনিত আসক্তি অনুভূত হয় এবং কেবল সেবন দ্বারাই সে তীব্র আসক্তি ( সাময়িক ) দূরীভূত হয় ।
ক্বুরআন- সুন্নাহর দৃষ্টিতে মাদক ও মাদকাসক্তি :
ইসলামে সর্বপ্রকার মাদকদ্রব্য হারাম ঘোষিত হয়েছে । এ পর্যায়ে আলক্বুরআনের সূরাহ মায়েদার ৯০-৯১ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ـ انَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ ـــ ( سورة المائده ـــ 91- 90 ) ـــ
অনুবাদ : হে মুমিনগণ ! মদ,জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শর, এসব শয়তানের কাজ । সুতরাং তোমরা উহা বর্জন করো , যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো ।শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে, আর আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে । অতএব তোমরা কি এগুলো থেকে বিরত হবে না ?
এ পর্যায়ে হাদীসে নববীতে ইরশাদ হয়েছে :
রাসূল (সা: ) বলেছেন :
عن عائشة ( رض) عن النبى ( ص ) قال : كل مسكر خمر ، وكل مسكر حرام ( رواه البخارى 
) 
অনুবাদ : উম্মুল মুমিনীন আয়েশাহ ( রা: ) হতে বর্ণিত : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : সকল নেশার জিনিসই মাদক এবং সকল নেশার জিনিসই হারাম । ( বুখারী )
দ্বিতীয় হাদীস :
عن ابن عمر( رض ) قال : قال رسول الله ( ص ) : لعن الله الخمر و شاربها و ساقيها و مبتاعها و باعها و عاصرها و معتصرها و حاملها و المحمولة اليها ـ ( رواه أبو داؤد ) ـ
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ ইবনু উমার ( রা: ) হতে বর্ণিত- রাসূল ( সা: ) ইরশাদ ফরমায়েছেন : আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ বর্ষণ করেছেন : মদের উপর, মদ্যপায়ীর উপর, মদ্য পরিবেশনকারী ও ডিলারের উপর , উহার ক্রেতার উপর , এর বিক্রেতার উপর, যে কোম্পানীতে উৎপাদন করে,সেই উৎপাদন কাজের উপর । তার উৎপাদন যারা করে, তাদের উপর । তার বহনকারীর উপর, যার জন্য বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় তার উপর । ( আবুদাউদ )
আলোচ্চ হাদীসে আল্লাহ তায়ালা মাদকদ্রব্যের সাথে সংশ্লিষ্ট দশ ব্যক্তির উপর লানত করেছেন ।
তৃতীয় হাদীস :
عن عبد الله بن عمر ( رض ) قال : قال رسول الله ( ص ) : لا يدخل الجنة منان، ولا عاق ، ولا مدمن خمر ــ ( رواه مسلم ، و نسائ ، و أحمد ) ــ
অনুবাদ : আব্দুলালাহ ইবনু উমার ( রা: ) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না ।
০১. দান করার পর যে খোটা বা তুলনা দেয় । 
০২. ন্যায় সঙ্গত ক্ষেত্রে পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান । 
০৩. মাদক দ্রব্য সেবনকারী ।
- ( মুসলিম , নাসায়ী ও আহমাদ । )

চতুর্থ হাদীস :
عن عثمان ( رض ) عن النبى ( ص ) : قال رسول الله ( ص ) : اجتنبوا الخمر ، فانها أم الخبائث ــ ( رواه النسا ئى ) ــ
 
অনুবাদ : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : তোমরা সকল প্রকার মাদক দ্রব্য পরিহার করো , কেননা তা হচ্ছে সর্ব প্রকার পাপ কাজের উৎস । ( নাসাঈ )
আলোচ্চ হাদীসে মাদক সেবনকে সমস্ত পাপের উৎস বলা হয়েছে । কেননা মাদক সেবনের মাধ্যমে মানুষের মন মগজে আপরাধ প্রবনতা সৃষ্টি হয় । নেক আমল তথা ভাল কাজ করার প্রবনতা, আগ্রহ ও আকর্ষণ ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে । পাপ কর্মের প্রতি ম্যাগনেট কানেক্সন ( চুন্বকের মতো আকর্ষণ ) সৃষ্টি হয় । এই জন্য মাদকসেবীরা নানা ধরণের পাপ কর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে । চুরি-ডাকাতি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারামারি ,ছিনতাই, রাহজানী, চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নারী ধর্ষণ, অপহরণ, ইফটিজিং, এসিড নিক্ষেপ, জালাও-পোড়াও , অগ্নি সংযোগ ও লুটতারাজসহ যাবতীয় সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ।
মাদক দ্রব্য সেবন, শুকরের গোশ্ত ভক্ষণ, জুয়া বা লটারী খেলা, সুদ খাওয়া একই পর্যায়ের হারাম :
০১. মাদকদ্রব্য হারাম ঘোষণা করা হয়েছে সূরাহ মায়েদার ৯০ ও ৯১ নং আয়াতে কারীমায় ।
০২. মহান আল্লাহ তাবারাক ওয়া তায়ালা সূরাহ মায়েদার ০৩ নং আয়াতে শুকরের গোশ্ত ও জুয়া বা লটারী খেলা হারাম ঘোষণা করেছেন :
০৩. আল্লাহ তায়ালা সুদ হারাম করেছেন পাঁচটি আয়াতে কারীমার মাধ্যমে ।
সূরাহ বাক্বারার ২৭৫, ২৭৬, ২৭৮ ও ২৭৯ নং এবং ‍সূরাহ আলইমরানের ১৩০ নং আয়াতে কারীমার মাধ্যমে ।
মোট কথা এই চারিটি বস্তুই মহা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে হারাম ঘোষিত হয়েছে । মাদকদ্রব্য সেবন করা, শুকরের গোশ্ত খাওয়া, জুয়া বা লটারী খেলা এবং সুদের লেন-দেন করা একুওয়াল বা সমান অপরাধ । কারণ এ চারিটি 
বস্তুই আমার আপনার মহা মনিব আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে হারাম ঘোষিত হয়েছে ।
যে সব মুসলিম মাদক সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, একথা সুনিশ্চিত যে, তারা শুকরের গোশ্ত খায় না । যদি তাদের জিজ্ঞস করা হয়, আপনি মদ সেবন করেন কিন্তু শুকরের গোশ্ত খান না কেন ? এর উত্তরে ঐ ব্যক্তি নিশ্চয়ই এ কথায় বলবে যে, শুকরের গোশ্ত মুসলমানের জন্য হারাম, তাই খাই না ।
তাদেরকে আমি বলতে চাই, শুকরের গোশ্ত যে আল্লাহ হারাম করেছেন , মাদক দ্রব্যও সেই আল্লাহই হারাম করেছেন । তাহলে আপনি শুকরের গোশ্তকে হারাম মনে করেন কিন্তু মদকে হারাম মনে করেন না কেন ? হারামকে হালাল মনে করা কুফরীর পর্যায়ে গুনাহ ।
মাদকদ্রব্যের শ্রেণী বিভাজন :
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মাদক দ্রব্যকে প্রধানত: দুই ভাগে ভাগ করেছেন :
( ক ) প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য ।
( খ ) রাসায়নিক মাদক দ্রব্য ।
ক. প্রাকৃতিক মাদক দ্রব্য :
প্রকৃতি তথা ভেষজ থেকে যে মাদক দ্রব্য উৎপন্ন হয় , তাই প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য । প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য অধিকাংশই গাছ- গাছড়া ও ফলমূল হতে উৎপন্ন হয় । যেমন- তাল বা খেজুর গাছ থেকে তাড়ি, আঙ্গুর বা খেজুর গাছ থেকে নাবিজ । এ ছাড়াও আফিম, গাঁজা, ভাঙ, হাশিস, মারিজুয়ানা ইত্যাদি প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য ।
খ. রাসায়নিক মাদকদ্রব্য :
পরীক্ষাগারে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় যে মাদকদ্রব্য উৎপন্ন করা হয়, তাই রাসায়নিক মাদকদ্রব্য । রাসায়নিক মাদকদ্রব্যের আজ ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে । অসাধু ঔষধ কোম্পানীগুলো ঔষধ তৈরীর নামে মাদকদ্রব্য উৎপাদন করে চলেছে । রাসায়নিক মাদকদ্রব্য বেশি নেশা সৃষ্টি করে থাকে । যা প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য থেকে মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক ।
যেমন- হিরোইন, মরফিন, কোকেন, প্যাথেড্রিন, সঞ্জিবনী সুরা , ফেনসিডিলসহ
বিভিন্ন প্রকার এলকোহল ।
কয়েকটি মাদকদ্রব্যের উৎসভূমি :
০১. হেরাইন :
ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, আফগানিস্তান, ইত্যাদি হলো এর উৎসভূমি ।
০২. কোকেন :
কোকেন উপাদনকারী দেশ হলো দক্ষিণ আমেরিকা , মেক্সিকো , যুগোশ্লাভিয়া, হাঙেরী, সাইপ্রাস, পেরু, কলন্বিয়া, ব্রাজিল, ভারত, মায়ানমার, থাইলান্ড ইত্যাদি ।
০৩. ফেন্সিডিল :
এর উৎসভূমি ভারত, মায়ানমার, ও দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ।
০৪. আফিম :
অষ্টেলিয়ার দক্ষিণে তাসমেনিয়ায় আফিমের চাষ হয় । এ ছাড়াও ভারত , মায়ামার, থাইল্যান্ড, লাউস, ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে আফিমের চাষ হয় ।
০৫. হাশিস :

জ্যামাইকা, মরক্বো , জর্ডান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল প্রভৃতি দেশ হাশিস উৎপাদনের জন্য সমধিক পরিচিত ।
এ ছাড়াও গাঁজা ভাঙ, চরস, মরফিন, মারিজুয়ানা ইত্যাদি জাতের মাদকদ্রব্য 
ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হয় । এতদ্ব্যতিত বিভিন্ন দেশের ঔষধ কোম্পানীগুলো ঔষধের নামে বিভিন্ন তরল মাদকদ্রব্য উৎপাদন করে থাকে । কিছু কিছু কোম্পানী মাদকজাতীয় ভ্যাকচিন উৎপাদন করছে, যা শরীরে পুশ করা হয় ।
বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য :
বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য বলতে- মদ, তাড়ি, গাঁজা, আফিম, চরস, হেরোইন, প্যাথেড্রিন, ভাঙ, ফেনসিডিল, এ্যালকাহল প্রভৃতি মাদকদ্রব্যকে বুঝায় ।

মাদকাসক্তির কুফল :
০১. মাদক সেবনের দ্বারা আল্লাহ তাঁর রাসূলের বিধান লংঘিত হয় ।
০২. মাদক সেবীর উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অসন্তুষ্ট হন এবং তার উপর লানত বর্ষণ করেন ।
০৩. হাদীসে নববীতে মাদক সেবনকে উম্মুল খাবায়েছ তথা সমস্ত পাপের উৎস বলা হয়েছে ।
০৪. মাদক সেবন হলো একটি ঈমান বিধ্বংসী পাপ । রাসূল ( সা: ) বলেছেন : মাদক সেবন ও ঈমান উভয়টি একত্রিত হতে পারে না ।
০৫. হাদীসে মাদক সেবীকে মূর্তি পূজারীর সাথে তুলনা করা হয়েছে ।
০৬. মাদক সেবীর ৪০ দিন পর্যন্ত সালাত কবুল হয় না । আবার সেবন করলে আবারো ৪০ দিন পর্যন্ত সালাত কবুল হয় না । পুনরায় সেবন করলে আবারো ৪০ দিন পর্যন্ত সালাত কবুল হয় না ।
০৭. মাদকসেবী মানসিক সুস্থ্যতা ও ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, ফলে সে মানুষের সাথে ফাসাদে জড়িয়ে পড়ে । স্ত্রী, সন্তানাদি ও পাড়া প্রতিবেশিকে অশ্লীল ভাষায় 
গালমন্দ করে ।
০৮. মাদকাসক্তি মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি বিলোপ করে এবং আল্লাহর ইবাদত তথা সওম, সালাত ও আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে রাখে ।
০৯. মাদক সেবন একটি মারাত্মক কাবীরাহ গুনাহ । কারণ এর কারণে সে মাতাল ও অসুস্থ্য হয় । সে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় মা, বোন ও খালার সাথে কুকর্ম করতে পারে

১০. মাদক সেবন করে তাওবাহ ছাড়া মৃত্যু বরণ করলে সে জাহান্নামী হবে ।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে মাদক সেবনের কুফল :
০১. দৈহিক ক্ষতি :
মাদকাসক্তি মানবদেহে অত্যন্ত মারাত্মক প্রভাব ফেলে । 
মাদকাসক্তির ফলে হজম শক্তি লোপ পায়, ক্ষুধামান্দ্য, পাকস্থলিতে ঘা, স্নায়ুবিক দূর্বলতা, হৃদপেশির দূর্বলতা, শিরা ও ধমনির শক্তি ক্ষয়ে যাওয়া এবং অকাল বার্ধক্য আনয়ন ইত্যাদি ।
০২. মাদক সেবনের ফলে দৃষ্টি শক্তির হ্রাস , গলদেশ ও শাসনালীর প্রচুর ক্ষতি হয় । যক্ষা রোগের ঝুকি থাকে খুব বেশি ।
০৩. রক্তহীনতা ও অপুষ্টি, ফুসফুসে পানি জমা, নিউমুনিয়া , হৃদরোগ, গেষ্ট্রিক, আলসার, পরিপাক যন্ত্র থেকে রক্তক্ষরণ, লিভারে প্রদাহ, জন্ডিস, লিভার ও কিডনী ইনফেক্সন, ক্যান্সার, টিটেনাস, মৃগীরোগ, মাংসপেশিতে অসুখ, মস্তিস্ক বিকল, দৃষ্টিহীনতা, যৌনরোগ, এইডস, স্ত্রীদের মিনসের অনিয়ম, বন্ধাত্ব, বিকলাঙ্গ সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা, চর্মরোগ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি, অকালমৃত্যু ইত্যাদি ।
০৪. মানসিক ক্ষতি :
উশৃঙখল ও অসংলগ্ন আচরণ, উত্তেজনা, খিটখিটে মেজাজ, অনিদ্রা, স্মৃতি বিভ্রাট , চরিত্রে লাম্পট্য, স্বার্থপরতা, কর্মদক্ষতার অবনতি, কাজে নিরুৎসাহ, উদাসীনতা, নিষ্ঠুরতা, হতাশা , অবশাদ , বিষন্নতা, আত্ম হত্যার প্রবনতা , গুরুতর মানসিক ব্যধি, ধর্মীয় কাজে বিমূখতা , মিথ্যাচারিতা, অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি মানসিক রোগে আক্রান্ত হয় ।
০৫. পারিবারিক ক্ষতি :
পারিবারিক কর্মকান্ড ও দায়দায়িত্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় । পরিবারে নানাবিধ অশান্তি সৃষ্টি , সম্পর্কের অবনতি, দূর্বিসহ দাম্পত্য জীবন, বিবাহ বিচ্ছেদ,পরিবারের মর্যাদা হানিকর কাজ, অধিক দেওলিয়াপনা এবং নিত্য ব্যবহার্য গৃহস্থালী দ্রব্যাদি বিক্রয় করা ।
০৬. সামাজিক ক্ষতি :
মাদকসেবী অপরাধমূলক আচরণ করে জনগণকে অতিষ্ঠ করে । চুরি, ডাকাতি, রাহজানী, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড,মাস্তানী, হত্যা ইত্যাদি কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে । পক্ষান্তরে সামাজিক ও ধর্মীয় কাজ থেকে বিরত থাকে , ধর্মীয়, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের সূচনা হয় । বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজন থেকে বার বার টাকা ধার নেয় । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে প্রায়ই অনুপস্থিতি, দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা প্রদর্শন । চাকুরী হারানো, উৎপাদন কাজে বিমূখতা , বেকার হয়ে যাওয়া, সমাজ ও আপনজনদের কাছে অপাংক্তেয় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ।

মাদকের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রতিক্রিয়া :
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে-দুই অথবা তিন আউন্স পরিমাণ মদ্য পান করলে পানকারীর চিন্তা ও বিচার শক্তি ভোঁতা হয়ে যায় । উদ্বেগ- অস্থিরতা সাময়িকভাবে হ্রাস পেয়ে স্বাচ্ছন্দ অনুভূত হলেও তা তাৎক্ষণিক ও স্বল্প মেয়াদী । 
রক্তে এলকাহোলের মাত্রা যদি ৩০% ভাগ হয় , তাহলে সুরা পানকারীর মানসিক বিভ্রাট ঘটে এবং ক্রমশ চৈতন্য হারিয়ে ফেলে , যদি এ্যালকোহলের মাত্রা 
৪৫% ভাগ হয়, তাহলে প্রগাঢ়ভাবে নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যদি ৭০% ভাগ হয়, তাহলে মস্তিষ্ক ও হৃদ যন্ত্রের নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে যায়, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে । অত্যধিক মদ্যপানের ফলে কিডনীর সন্নিহিত অঞ্চল উত্তেজিত হয়ে বেশি প্রস্রাব উৎপন্ন করে । বেশি মাদক সেবনের ফলে স্নায়ুতন্ত্র এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে, বুদ্ধি বিবেচনা শক্তি একেবারে লোপ পেতে থাকে । এর কারণে মুখগহবর, গলা ও স্বরযন্ত্র ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে ।
বিশ্বব্যাপী মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও প্রতিক্রিয়া :

মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ বিস্তার গোটা বিশ্বের জন্য উদ্বেগজনক । ফ্রান্স পৃথিবীর শীর্শস্থানীয় মদ উৎপাদনকারী দেশ । পৃথিবীর বার্ষিক মদের চাহিদার এক চতুর্থাংশ উৎপাদন করে একাই ফ্রান্স । ফ্রান্সের পর জার্মানীর অবস্থান । মদ রপ্তানীকারক দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকার অবস্থান অষ্টমে । যুক্তরাষেট্রর সমাজ জীবনে এটা এখন এক নম্বর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে । সেখানে প্রায় চার কুটিরও অধিক আমেরিকান নর-নারী কোকেন সেবন করে । কমপক্ষে দুই কোটি 
মানুষ মারিজুয়ানা সেবন করে । বার লক্ষাধিক মানুষ হেরোইন সেবন করে ।
৭০% ভাগ মদ উৎপাদন হয় ক্যালিফোর্নিয়ায় । ইতালী , স্পেন, আলজিরিয়া , পর্তুগাল, আর্জিন্টিনা,গ্রীস, যুগোশ্লাভিয়া, চিলি, এবং দক্ষিণ আফ্রিকা হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম মদ উৎপাদন, বিপনন, ও রপ্তানীকারক দেশ । এই সমস্যা শুধু এখন ইউরোপ , আমেরিকা ও আফ্রিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । এই অশুভ ছায়া ইতোমধ্যেই এশিয়ার দেশে দেশে আশংকাজনোভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ।
বাংলাদেশর প্রেক্ষাপটে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার :
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর ন্যায় আমাদের দেশেও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । আমাদের তরুনরা এখন ভয়াবহ মাদকাশক্তির শিকার । বাংলাদেশে কী পরিমাণ মাদকদ্রব্য ব্যবহার করা হয় এবং কতলোক মাদকাশক্তির শিকার, উহার সঠিক কোন পরিসংখ্যান আপাতত: নেই । আমাদের মতো দরিদ্র দেশে এসব ড্রাগের সহজ প্রাপ্তি দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না । মাদকদ্রব্যের চোরাচালানের যাত্রা পথে বাংলাদেশের মানচিত্র অন্তর্ভূক্ত হওয়াতে এ সমস্যা আমাদের সমাজ জীবনে দৈনন্দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ।
মাদকাসক্তির কারণসমূহ :
সমাজে বিভিন্ন কারণে মাদকাসক্তির লক্ষ্য করা যায় । মাদকাসক্তির কারণগুলো নিম্নরূপ :
০১. নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব । 
০২. সঙ্গদোষ ও পারিপার্শ্বিকতা । 
০৩. উদ্দেশ্যহীন জীবন । 
০৪. মাদকদ্রব্যের প্রতি কৌতুহল ও আনন্দ লাভের ইচ্ছা ।
০৫. পরিবার ও সমাজে মাদকের প্রভাব থাকা । 
০৬.মাদকের সহজ লভ্যতা । 
০৭. বেকারত্ব ও হতাশা । 
০৮. মাদকের কুফল সন্বন্ধে অজ্ঞতা । 
০৯. পারিবারিক বন্ধন শিথিল হওয়া । 
১০. অভিবাবকদের অসচেতনতা ।
এসব কারণে মাদকাসক্তির সংখ্যা দৈনন্দিন বেড়েই চলেছে ।
ইসলামে মদ্যপানের দন্ডবিধি :
মদ্যপান ইসলামী শরীয়াতের দুষ্টিতে কাবীরাহ গুনাহ এবং ফৌজদারী অপরাধরূপে গন্য । এজন্য শরীয়াহ অনুযায়ী শাস্তি দান একান্তই কর্তব্য । কিন্তু ক্বুরআন মাজীদে এর কোন শাস্তির উল্লেখ নেই । তবে ফিকাহবীদগণ এ ব্যাপারে 
একমত যে, মদ্যপায়ীর শাস্তি হচ্ছে দোররা । । এই দোররা কতটি মারতে হবে , তার সংখ্যা ও পরিমাণ নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে ।
* ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালিকের মত :
ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালিক ( রহ: ) এর মতে মদ্যপায়ীর শাস্তি হচ্ছে আশি দোররা । তাঁরা তাঁদের মতের স্বপক্ষে ওমার ফারূক ( রা: ) সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন :
أخف الحدود ثمانون ( أحمد ، مسلم )
অর্থাৎ- মদ্যপানের হালকাতম শাস্তি হচ্ছে আশি দোররা ।
* ইমাম শাফেয়ী প্রমূখ ফিকাহবীদদের মত :
ইমাম শাফেয়ীর মতে মদ্য পানের শাস্তি চল্লিশ দোররা । তারা তাদের মতের স্বপক্ষে আনাস ( রা: ) হতে বর্ণিত হাদীসকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন ।
عن أنس ( رض ) أن النبى ( ص ) كان يضرب فى الخمر بالنعال والجريد أربعين ــ ( مسلم شرح نبوى ) ـ
অনুবাদ : আনাস ( রা: ) হতে বর্ণিত : নবী কারীম ( সা: ) মদ্যপানের শাস্তি হিসেবে জুতা বা বেত দিয়ে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করতেন ।

*
মুয়াবিয়া ( রা: ) থেকে বর্ণিত : নবী কারীম ( সা: ) বলেছেন :
اذا شربوا الخمر فاجلدوهم ، ثم اذا شربوا الرابعة فاقتلوهم ــ
অনুবাদ : মদ্যপানকারীকে প্রথম থেকে তৃতীয়বার পর্যন্ত শুধু দোররা মারো । চতুর্থবার পান করলে তাকে হত্যা করো ।
মাদকাসক্তির প্রতিকারের উপায় :
আজ আমরা মাদকাসক্তির সর্ববিধ্বংসী পরিনাম থেকে মুক্তি পেতে চাই । পাশ্চাত্য সভ্যতার এই বিষ ক্রিয়া আজ সমগ্র বিশ্বকে করে তুলেছে আতংকিত ।
সর্বগ্রাসী মাদকাসক্তির এই স্রোত বন্ধ করা একা কারো পক্ষে সম্ভব নয় । এ জন্য সুশীল সমাজের সচেতন বিবেকবান মানুষের উচিৎ, এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ কল্পে ব্যাপক পরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার । সকলের সমন্বিত প্রয়াস ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সম্ভব এর বিহিত প্রতিরোধ করা । মাদকাসক্তির করাল গ্রাস থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে নিম্নলিখিত পরিকল্পনা ও কর্মসূচী গ্রহণ করা যেতে পারে ।
০১. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা করা :
সুশীল সামজের সচেতন মহল মাদক প্রতিরোধ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করত: সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মাদকাসক্তির প্রতিরোধ, মাদকদ্রব্য উৎপাদন , সরবরাহ , ব্যবহার ও চোরাচালান রোধ করা যেতে পারে ।
০২. শিক্ষার মাধ্যমে উদ্যোগ :
মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে যুবক ও কিশোরদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তকে মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে পাঠদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে ।
০৩. প্রচার মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার :
মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রেডিও, টিভি ও সংবাদপত্র মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচার করা দরকার । এ পর্যায়ে রেডিও, টিভি, ইউটিউব ও ফেসবুকে অনুষ্ঠান প্রচার , পত্র-পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ, সভা-সমিতি,সেমিনার এবং জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যস্থা করা ।
০৪. কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ :
মাদকদ্রব্য চোরাচালান রোধ, এর উৎপাদন বন্ধ ও এ ব্যবসায়ের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও রাজনীতিবীদদের কঠোর ভূমিকা গ্রহণ ও এদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । এ লক্ষ্যে ১৯৮৮ ইং সনের প্রনীত মাদক বিরোধী আইনের যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক । মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে কঠিন দন্ডসন্বলিত আইনের যথাযথ প্রনয়ন ও প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ ব্যতীত এ প্রবনতা হ্রাস করা সম্ভব নয় ।
০৫. মাদকের ঔষধ কারখানা বন্ধ ঘোষণার মাধ্যমে :
নেশা উৎপাদনকারী ঔষধ কারখানার মাদকদ্রব্য সরকারকে কঠোর হস্তে বন্ধ করতে হবে ।
০৬. পরিবার প্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্য :
প্রত্যেক পরিবার প্রধানের উচিৎ , নিজেদের সন্তান সন্ততিদের মাদক দ্রব্যের ক্ষতি সম্পর্কে উত্তম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা । সন্তানদের মন মানসে এই কুঅভ্যাস কোন মতেই যেন গড়ে না উঠতে পারে , সে ব্যাপারে সন্তানদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা । আপনার সন্তান কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে, কার সঙ্গে ঘুরাফেরা করছে সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা । অসৎসঙ্গ ও দুশ্চরিত্র সাহচর্য থেকে সন্তানদের দূরে রাখা । সর্বোপরি সন্তানদের যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে মাদকাশক্তির ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব সম্পর্কে সন্তানদের মাঝে আলোচনা ও পর্যালোচনা করা ।
০৭. শিক্ষক সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য :
শিক্ষকরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর । তাঁরা জাতি গঠনের মেরুদন্ড । সমাজের সচেতন ব্যক্তি হিসেবে মাদকাসক্তি রোধে তাঁদের দায়িত্ব রয়েছে । শিক্ষকদের আদর্শ, চিন্তা চেতনা, আচার-আচরণ, আক্বিদাহ-বিশ্বাস, নির্দেশনা ও উপদেশ এবং অভ্যাসের একটি কার্যকরী প্রভাব ছাত্রদের উপরে পড়ে থাকে । শিক্ষকগণ যদি ছাত্রদের এ বদ অভ্যাস বর্জনের ব্যাপারে সতর্ক থাকেন এবং এধরণের মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও উপদেশ দিতে থাকেন , তাহলে আশা করা যায়, যে, ছাত্ররা এ পথে পা বাড়াবেন না ।
০৮. আইন প্রনয়ন ও প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব :
আইন প্রনয়নকারী ও প্রয়োগকারী সংস্থার এ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । কেননা দেশের আইন শৃঙখলা রক্ষা করা , অপরাধ প্রবনতা দমন , ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন কার্যকর করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব । কঠোর হস্তে মাদকাসক্তি দমন কল্পে সরকারকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে এবং কঠোর হস্তে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
০৯. আন্তর্জাতিক সংস্থার দায়িত্ব ও কর্তব্য :
জাতি সংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে মাদকদ্রব্য উৎপাদন , সরবরাহ ও পাচার রোধ কল্পে কার্যকর ভুমিকা পালন করতে হবে । মাদকাসক্তিকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক সংস্থাগুলোকে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে ।
১০. সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কর্তব্য :
মাদক দ্রব্যের প্রসার রোধ কল্পে সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের যথেষ্ট ভুমিকা পালন করতে হবে । গ্রামের সমাজপতি , ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেন্বর, চেয়ারম্যান, সকল স্তরের জনপ্রতিনিধিসহ সকল দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি মাদকাসক্তির প্রসার রোধে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে প্রচেষ্টা চালান, সে গ্রাম ও এলাকায় কখনই মাদকাসক্তির প্রসার ও বিস্তার ঘটতে পারে না ।
১১. মসজিদের ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য :
মসজিদের ইমামগণ যদি সালাত শেষে বিশেষ করে জুমআর খুৎবার ভাষণে মুসল্লিদের সামনে মাদক দ্রব্যের অপকারিতার দিকগুলো উপস্থাপন করেন , তাহলে মুসল্লিদের মাঝে মাদকদ্রব্য পরিহারের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি হবে ।
১২. ওলামায়ে কিরামের দায়িত্ব :
ওলামায়ে কিরাম যেহেতু ওয়ারাছাতুল আন্বিয়া তথা নবীদের ওয়ারিছ , তাই আদর্শ সমাজ বিনির্মানে তাঁদের ঈমানী দায়িত্ব রয়েছে । তাঁরা ওয়াজ মাহফিলে, জুম্মার ভাষনে, বিভিন্ন অনূষ্ঠানে ,আলোচনা সভায় উপদেশ দানের মাধ্যমে জনসাধারনের কাছে মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে বর্ণনা করলে জনগণ মাদকদ্রব্য সম্পর্কে সচেতন হবে ইনশাআল্লাহ ।
১৩. স্বেছ্ছা সেবীদের ভূমিকা :
মাদকদ্রব্য নিরোধ কল্পে কিছু সেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে । তারা সমাজ থেকে মাদকদ্রব্য নিরোধ কল্পে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে ।

উপসংহার :

তাই আসুন আমরা মাদককে না বলি । আত্মঘাতি মাদক নিজে পরিহার করি, সমাজ থেকে মাদক নিরোধ কল্পে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করি । জেনে রাখুন, মাদকাসক্তি সমাজ জীবনে এক ভয়াবহ অভিশাপ । এটি সমাজদেহের এমন একটি দুষ্টক্ষত , যা সমাজের সর্বদেহে নানামূখী সমস্যার জন্ম দেয় । ধর্মীয় মূল্যবোধ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাদকাশক্তির ভয়াবহ অভিশাপ থেকে দেশ, জাতি ও সমাজকে রক্ষা করতে হবে । এ পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করার নেক তাওফিক দান করুন । 
-
আমীন । 

-
নিবেদনে 
মো: ইসহাক মিয়া 
সহকারী অধ্যাপক ( কামিল হাদীস বিভাগ ) 
বিজুল দারুল হুদা কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা 
বিরামপুর , দিনাজপুর ।

No comments:

Post a Comment