Wednesday 12 April 2017

আদর্শ ছাত্রের বৈশিস্ট্য :



প্রসঙ্গ কথা :
শুধু দিন-রাত লেখা-পড়া করলেই কিংবা বইয়ের শুরু থেকেশেষ পর্যন্ত মুখস্থ করলেই আদর্শ ্ছাত্র হওয়া যায় না । তার জন্য প্রয়োজন, কতিপয় নিয়ম-কানুন মেনে চলা । কারণ প্রতিটি কাজই সুনির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । ছাত্রদের ভবিষ্যত জীবনকে সুন্দর, সফল ও গৌরবোজ্বল করে গড়ে তুলতে হলে তাদের কতিপয় নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় । তাই আদর্শ ছাত্র হওয়ার জন্য নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে কতিপয় নীতিমালা আলোচিত হলো ।
০১. জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ( Aim of life ) স্থির করণ :
একজন ছাত্রকে শিক্ষাজীবনের শুরুতেই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য কি হবে তা ঠিক করে নিতে হবে । আমি কি হতে চাই ? একজন শিক্ষাবিদ, সুবিজ্ঞ আলেমে দ্বীন, ইতিহাসবেত্তা, অর্থনীতিবীদ, সমাজসেবী, বিজ্ঞানী না অন্য কিছু ? কারণ লক্ষ্যহীনভাবে কোন কাজে সাফল্য অর্জন সম্ভব নয় ।
০২. দৃঢ় ইচ্ছা ও বিশ্বাস : ( Confidence and strong tendency )
বিশ্বাস ও দৃঢ় ইচ্ছা হচ্ছে আত্মার খোরাক ।শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে এটি জ্বালানী শক্তি হিসেবে কাজ করে । বিশ্বাস হতে চিন্তা এবং চিন্তা হতে কার্যের উৎপত্তি । প্রত্যেক মানবের কার্যই তার বিশ্বাসের অনুরূপ হয়ে থাকে । যে মনে আত্মবিশ্বাস ও উচ্চাকাংখা নেই সে মনে কোন তেজ ও নেই । বিশ্বাস ও উচ্চাকাংথা দ্বারা কর্মস্পৃহা ও মনোবল জাগ্রত হয় । বিশ্বাস ও আশা মানুষের মনে কর্মশক্তি যোগায় । সামনে এগোতে করে অনুপ্রাণীত । হতাশা ও নিরাশা মানুষকে করে হতোদ্যম । কেড়ে নেয় তার কর্ম শক্তি ও প্রাণচাঞ্চল্য । তাই নৈরাশ্যের চেয়ে বড় রোগ মানব জীবনে আছে বলে আমার জানা নেই ।
কবি যথার্থই বলেছেন-
বিশ্বাস আর আশা যার নাই যেও না তার কাছে 
নড়াচড়া করিয়াও জ্যান্ত মরিয়া গিয়াছে সে 
শয়তান তার শেষ করিয়াছে , ঈমান লইয়াছে কেড়ে 
প্রাণ গিয়াছে মৃতপুরীতে ভয়ে তার দেহ ছেড়ে ।
ডা: লুৎফর রহমান বলেছেন –“ আমরা যা হতে চাই, তাই হতে পারি । এই
হতে চাওয়ার ইচ্ছা খুব দৃঢ় ও ইস্পাত কঠিন হওয়া চাই ।
নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার অনুশীলন করতে হবে ।
জনৈক মনীষী বলেছেন : Nothing is impossible to a willing mind. অর্থাৎ- ইচ্ছার কাছে কোন কিছুই অসম্ভব নয় ।
জর্জ বার্নার্ডস বলেছেন : সুদৃঢ় ইচ্ছা বা আকাংখা হচ্ছে সফলতার পূর্বশর্ত ।
ইউলিয়ম হ্যাজলিট বলেছেন :
if you think you can win, You can win. Faith is necessary to vectory . অর্থাৎ- যদি তুমি মনে কর তুমি জিতবে, তবে তুমি জিতবেই, বিজয়ের জন্য জরুরী হলো বিশ্বাস ।
নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার অনুশীলন করতে হবে ।
ছাত্রকে সর্বদা এ আশা পোষণ করতে হবে যে, যদি কেও পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম হয়, সেটা অবশ্যই আমাকে হতে হবে । শুধু পরীক্ষায় পাশের চিন্তা করলে লিখা-পড়ায় গতি সঞ্চার হবে না ।

০৩. অধ্যবসায়ী ( Persevering ) হওয়া :
ভাল ছাত্র হতে হলে তাকে অবশ্যই অধ্যবসায়ী হতে হবে ।
অধ্যবসায় বলতে বুঝায়-কোন কাজে সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে বা কাংখিত লক্ষ্যে পৌছার লক্ষ্যে নিবিষ্ট মনে অবিরাম গতিতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ।
অনেকে মনে করেন - মেধাবী ও জ্ঞানী হওয়াটা আল্লাহর দান । কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয় । কারণ, শুধু মেধা থাকলেই হবে না । সে যদি অধ্যবসায়িী না হয়, তবে তার মেধার বিকাশ ঘটবে না।
কবি যথার্থই বলেছেন :
হউক না কোন কাজ যতই কঠিন 
ধরিয়া থাকিলে সিদ্ধ হবে একদিন ।
ঈগল পাখির মতো তুমি সাহস রাখো বুকে 
শিকার এবং বিজয় দুটো আসবে উৎসুকে ।
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে - Do or die . 
অর্থাৎ- মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীরের পতন ।
কথায় বলে যে,
তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপক্ষী সহজেই পশুপক্ষী, কিন্তু মানুষ প্রাণপন চেষ্টায় তবেই মানুষ ।
আলক্বুআনে বর্ণিত হয়েছে : وان ليس للانسان الا ما سعى অর্থাৎ- চেষ্টা ছাড়া কোন কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয় ।
কথায় বলে - “ Industry is the mother of good luck. ” অর্থাৎ- পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ।
ডা: লুৎফর রহমান বলেছেন : যে সমস্ত মানুষ ব্যর্থতাকে ভয় করে না, জয়ী হবে এ বিশ্বাসে কাজ করে , তারাই জয়ী হয় ।
পন্ডিত বোপদেবের ঘটনা :
পন্ডিত বোপদেব বা্ল্যকালে মেধাবী ছিলেন না । লিখা-পড়ায় খারাপ হওয়ায় তার শিক্ষকগণ প্রায়শই তাঁকে মারধর ও ভৎর্সনা করতেন । বাড়িতেও পিতা-মাতা সুনজরে দেখতেন না । মনের দু:খে বাড়ি ছেড়ে অজানা পথে পাড়ি জমালেন । পথিমধ্যে আহার করার জন্য এক পুকুর ঘাটে বসে পড়লেন । হটাৎ দেখতে পেলেন, জনৈকা মহিলা পুকুর হতে কলসে পানি ভর্তি করে সেই কলসটি একটি পাথরের উপর রাখলো । কিছুক্ষণ পর সেই মেয়েটি সেখান থেকে প্রস্থান করলে বোপদেব দেখতে পেলেন , মটির কলসে ক্রমাগত ঘর্ষণে কঠিন পাথরেও গর্ত হয়ে গেছে । সেই দৃশ্য অবলোকন করে বোপদেবের চেতনা ফিরে এলো । তিনি আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য নবচেতনা ও বিশ্বাস ফিরে পেলেন । তিনি চিন্তা করতে লাগলেন : আমিও যদি কলসের ঘর্ষনের ন্যায় আমার তথাকথিত পচাঁ ব্রেনটাকে অধ্যবসায়ের ঘর্ষণ দিতে পারি , তাহলে আমার প্রতিভারও বিকাশ ঘটতে পারে । এরপর অবিরাম গতিতে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ফলে সত্যি তার আশা পূর্ণ হলো । এর ফলশ্রুতিতে তিনি বিশ্ব খ্যাত পন্ডিত বোপদেব বলে খ্যাতি অর্জনে সক্ষম হন ।
০৪. রুটিন মাফিক পড়াশুনা করা : ( Study by rutine )
ছাত্রকে প্রতিদিন রুটিন মাফিক পড়াশুনা করতে হবে । পাঠ্যপুস্তক সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পূর্ণভাবে প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষ্যে একটি রুটিন প্রনয়ন করত: তা পড়ার টেবিলের সামনে লটকিয়ে রাখতে হবে । দিন-রাতের সময়গুলোকে ভাগ করে নিয়ে রুটিন তৈরী করতে হবে । রুটিন মাফিক পড়াশুনা করলে সবগুলো বিষয় পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে।
০৫. নিয়মানুবর্তিতা ( Punctuality ) :
শিক্ষাজীবনে নিয়মানুবর্তিতার অনুসরণ করা অতিব জরুরী । এটি আদর্শ ছাত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । ২৪ চব্বিশ ঘন্টার সময়গুলোকে ভাগ করে সঠিকভাবে তা ভাগ করতে হবে । রুটিন মাফিক পড়াশুনা করা, সময়মত শিক্ষা প্রতিস্ঠানে গমন ও প্রত্যাগমন, শারীরিক ব্যায়াম বা খেলা-ধুলা,পানাহার, বিশ্রাম ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতার অনুসরণ করতে হবে

০৬. হাতের লেখা ভাল করা বা ( Writing skill ) আপগ্রেড করা :
পরীক্ষায় বেশী নম্বর পাওয়ার জন্য হাতের লেখা সুন্দর করা আবশ্যক । কারণ পরীক্ষক যখন উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন , ঐ সময় যদি তার চোখের সামনে উজজ্বল , সুন্দর ও ঝকঝকে লেখা ভেসে ওঠে , তখনসত্যিই তার মনের মাঝে আনন্দের দোলা দেবে । খুশিতে ভরে উঠবে তার মন । ঐসময় পরীক্ষক আনন্দের আতিশয্যে নম্বর ও দেবেন বেশি । তাই বলে উত্তর অপ্রাসঙ্গিক বা ভুল হলে শুধু ভাল লেখায় কাজ হবে না ।
উল্লেখ্য যে, যার হাতের লেখা ভাল ,তার লেখার অনুকরণ করলে লেখা সুন্দর করা যায় ।
০৭. নকল প্রবনতা ( Copying tendency ) পরিহার করা :
নকল প্রবনতা প্রকৃত শিক্ষার পথে বড় অন্তরায় । নকল প্রবনতা একটি জাতীয় ব্যধি ও প্রাণসংহারক বিষ । নকল প্রবনতাশিক্ষার্থীর জীবনে চরম অবক্ষয়ের সূচনা করে । এই অপরাধ প্রবনতা তাদেরকে দ্রুত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় । নকল করে নকলিস্ট হওয়া যায় কিন্তু জ্ঞান অর্জন করা যায় না । নকল করে কৃতিত্বের সাথে পাশ করার মধ্যে কোন গৌরব নেই ,আছে শুধু আত্মপ্রবঞ্চনা ও ব্যর্থতার আত্মগ্লানি । তাই ভাল ছাত্র হওয়ার জন্য নকল পরিহার করা একান্ত জরুরী
০৮. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ( Net and clean ) থাকা :
সদাসর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা প্রত্যেকছাত্রের কর্তব্য । বাহ্যিক মলিনতা মানসিক মলিনতা সৃষ্টি করে । বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার সহিত আত্মিক পরিচ্ছন্নতা তথা সচ্চরিত্রের অধিকারী হতে হবে । সচ্চরিত্রের অধিকারী হতে হলে ইসলামী আদর্শের অনুসারী হতেহবে ।
০৯. শারীরিক অনুশীলন ( Physical exercise ) নিয়মিত করণ :

কথায় বলে- Health is wealth-অর্থাৎ-স্বাস্থ্যই সম্পদ । শরীর ভাল না থাকলে মন ও ভাল থাকে না । তাই শারীরিক ও মানুষিক বিকাশের লক্ষ্যে বিকালের পড়ন্ত বেলায় শরীয়াহ সম্মত বিনোদন , খেলাধুলা , একটুপায়চারী, শারীরিক ব্যায়াম, সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ড , মননশীল ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক চর্চা কিংবা পারিবারিক কোন কাজে ব্যয় করা উচিত । ভরাপেটে ও বিকাল বেলা পড়ালেখা করা উচিত নয় । এতে দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতি শক্তি উভয়েই লোপ পেতে পারে ।
১০. গভীর মনোযোগী ( Attentive ) হওয়া :
ভাল ছাত্র-ছাত্রী হতে হলে পড়া-লিখায় মনোযোগী হতে হবে । জ্ঞান শিক্ষার প্রতি মনের মধ্যে অনুরাগ ও পিপাসার সৃষ্টি করতে হবে । একটি কথা মনে রাখতেহবে যে, জল এগোয় না পিপাসায় জলের কাছে এগিয়ে নিয়ে আসে । গভীর মনোযোগের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি অনুসন্ধানী দৃষ্টিও প্রখর হয় । এর মাধ্যমে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী প্রতিভা বিকশিত হতে থাকে ।
আলক্বুরআনে ইরশাদ হয়েছে :
ما جعل الله لرجل من قلبين فى جوفه
অর্থাৎ- একজন মানুষের মাঝে আল্লাহ তায়ালা দুটি অন্তর দান করেননি ।
মনের চিন্তা ভাবনা ও ঝোক প্রবনতা যখন একদিকে যায়, তখন আর এক দিক থেকে খালি হয়ে যায় । বিক্ষিপ্ত মন, তরল চিন্তা, কুচিন্তা ও খামখেয়ালীপনা নিয়ে পড়া-লিখা হয় না । একমন এক খেয়াল এক লক্ষ্য নিয়ে পড়াশুনা করতে হবে । তাহলে সাফল্যের পুষ্পমাল্য গলে পরা সম্ভব হবে ।
ডা: লুৎফর রহমান বলেছেন : তুমি যদি তোমার কর্মে সাফল্য অর্জন করতে চাও, তবে সমস্ত মন তোমার কর্মে ঢেলে দাও
মনীষীদের বাণী :
Don't to attend to two things at a time . অর্থাৎ- একই সময়ে দুই বিষয়ে মন দিও না ।
১১. সময়ানুবর্তিতা ( সময়ের সদ্ব্যবহার ) :
সময় অমূল্য সম্পদ । সময় হাতছাড়া হলে আর ফিরে পাওয়া যায় না । আরবীতে একটি প্রবাদ আছে-
الوقت لا ينتظر لاحد
অর্থাৎ- সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না ।
ফারসী ভাষায় একটি প্রবাদ আছে :
وقت از دست رفته و تير از كمان جسته باز نمى أيد -
অর্থাৎ- যে সময়টি হাতছাড়া হলো, আর যে তীরটি ধনুক থেকে নিক্ষিপ্ত হলো, এদুটো জিনিস কখোনো স্বস্থানে ফিরে আসে না ।
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে :
Time and tide wait for none. অর্থাৎ- সময় ও শ্রোত কার ও জন্য অপেক্ষা করে না ।
উল্লেখ্য যে সময়ের অপচয় করে মানুষ যেরূপ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, সেরূপ আর কিছুতে হয় না । সময়ের অপচয়ের কারণে একটি সম্ভাবনাময় জীবন অংকুরেই বিনষ্ট হয় ।
মনীষী স্মাইলস বলেছেন :
পরিশ্রম দ্বারা হারানো সম্পদের ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হতে পারে, পাঠের দ্বারা ভুলে যাওয়া জ্ঞান অর্জিত হতে পারে, ঔষধ বা চিকিৎসা দ্বরা হারানো স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে কিন্তু হারানো সময় চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়, আর ফিরে পাওয়া যায় না ।
এজন্য বলা হয়ে থাকে :
“ Make hay while the sun shines . ” অর্থাৎ- সময় থাকতে কাজ গুছিয়ে নাও ।
আরও বলা হয় :
Life is short but art is long. অর্থাৎ- জীবনটা সংকীর্ণ কিন্তু কর্ম ব্যাপক ।

শিক্ষাজীবন হচ্ছে আত্মগঠনের প্রকৃত সময় । শিক্ষা জীবনে যারা সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে, তাদের জীবনেই সাফল্যে ভরে ওঠে । তারাই কর্মক্ষেত্রে রাখে দৃপ্ত পদচারনা । তাদের পেয়েই দেশ ও জাতি ধন্য হয় । আর যে সব শিক্ষার্থী সময়ের সদ্ব্যবহার কেরতে জানে না , তারা জীবনে সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয় । তাই জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে সময়ের সদ্ব্যবহার করা অতীব জরুরী ।

১২. শৃংখলা ও আনুগত্য ( Discipline and Obedience ) :
শৃংখলা ও আনুগত্য শিক্ষা জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । শৃংখলা ও আনুগত্য হচ্ছে উন্নয়নের চাবিকাঠি । এই মহাবিশ্বে যা কিছু দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান সৃষ্টি রয়েছে, 
সবকিছু একটি বিশেষ শৃংখলে আবদ্ধ । প্রকৃতির কোথাও অনিয়ম ও বিশৃংখলা নেই । চন্দ্র-সূর্য , গ্রহ-নক্ষত্র, রাত-দিনের আগমন- প্রত্যাগমন , সময়ের আহ্নিকগতি ও বার্ষিকগতি মোটকথা সবকিছু একটি সুনিদিষ্ট নিয়মে আবর্তিত হচ্ছে ।

বিজ্ঞানী নেপলিয়ান বলেছেন :
“ Discipline is the keystone to success is compulsory to follow to balance the systems. "
অর্থাৎ- সাফল্য অর্জনের জন্য নিয়ম শৃংখলার অনুসরণ হলো সাফল্যের ভিত্তি ।
এম, কে গান্ধী বলেছেন :
“ Discipline maintains systems, Systems maintain development, Development vibrates human life, So discipline must be followed.”
অর্থাৎ- শৃংখলা নিয়ন্ত্রন করে নিয়মানুবর্তিতাকে, নিয়মানুবর্তিতা নিয়ন্ত্রন করে উন্নয়নকে, উন্নয়ন স্পন্দিত করে মানব জীবনকে , অতএব নিয়ম শৃংখলার অনুসরণ অত্যাবশ্যক ।
একজন স্টুডেনকে নিয়ম শৃংখলা অনুসরনের পাশাপাশি পিতা-মাতা , গুরুজনের আনুগত্য করা অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য ।
১৩. ‍Spoken skill আপগ্রেড করতে হবে :
একটি ভাষা আয়ত্ব করনের উপায় আমি আমার টাইম লাইনের শিক্ষার্থীর জন্য আবশ্যকীয় মেসেজ শীর্ষক প্রবন্ধে আলোচনা করেছি । অনুগ্রহপূর্বক সেখানে দেখে নেওয়ার জন্য বিণীত অনুরোধ করছি ।
১৪. শিক্ষক ক্লাসে পাঠদান কালে গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনা :

শিক্ষক মহোদয় ক্লাসে পাঠদান কালে তাদের লেকচার গভীর মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে । প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয় কিংবা অজানা শব্দের অর্থ একটি নোট বুকে নোট করে নিতে হব ।
শিক্ষকের পাঠদানের বিষয়বস্তু ভালভাবে অনুধাবন করতে হবে ।যদি কোন বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকে, তাহলে শিক্ষকের নিকট জিজ্ঞেস করে সে সম্পর্কে স্বচ্ছধারণা ও উপলব্ধি অর্জন করতে হবে ।
১৫. অনুকুল পরিবেশ ( Favourable environment ) :
কথায় বলে:
মানুষ গড়ার আঙ্গিনায় 
মানুষ গড়ার পরিবেশ চাই ।
সন্তানকে আদর্শবান ও সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হলে তার জন্য চাই অনুকুল পরিবেশ । এই অনুকুল পরিবেশ দরকার যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, তেমনি প্রয়োজন 
নিজ বাড়িতে । কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানটি অবস্থান করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র ৫-৬ ঘন্টা । বাকি সময়টুকু অতিবাহিত করে বাবা- মার কোলে । এ জন্য বলা হয়ে থাকে - পিতা-মাতার কোলেই হলো সন্তান গড়ার আসল পাঠশালা ।সন্তান বাসায় অবস্থিত ১৮-১৯ ঘন্টার সময়গুলো কিভাবে ব্যয় করবে, তার তদারকি করার দায়িত্ব পড়ে পিতা-মাতার উপর ।
সন্তানকে শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে পিতা-মাতার কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য :
* বাড়িতে অবস্থান কালিন সময়গুলো লিখাপড়ার কাজে ব্যবহার করার স্বার্থে একটি রুটিন তৈরী করে দিতে হবে । সন্তান রুটিন মাফিক পাঠ প্রস্তুতি সম্পন্ন করলো কিনা, সে ব্যাপারে নজরদারি রাখতে হবে ।
* একাডেমিক পাঠ প্রস্তুতির লক্ষ্যে প্রয়োজনে একজন টিউটর বা প্রায়ভেট টিউশনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে ।
*হোমওয়ার্ক বা বাড়ির কাজ থাকলে তা সঠিকভাবে আদায় করলো কি না, তা খোঁজ-খবর নিতে হবে ।
* পড়াশুনার কতটুকু অগ্রগতি হচ্ছে তা বিশেষভাবে তদারকি করতে হবে ।
* শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রেগুলার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে ।
* ছেলে-মেয়েদের নিয়মিত ছালাত আদায়ে অভ্যস্ত করাতে হবে ।
* ছেলে-মেয়েদের উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে হবে ।

১৬. শিক্ষা সফর ( Education tour ) :
শিক্ষার গ্রন্থ জগত দুই প্রকার ।
০১.পাঠ্য পুস্তক তথা পুথিগত বিদ্যা ।
০২. বাইরের গ্রন্থ জগত তথা প্রকৃতি ও সৃষ্টিজগত থেকে শিক্ষা ।
ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্য পুস্তক তথা পুথিগত জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি প্রকৃতি অর্থাৎ সৃষ্টি জগতের বিশাল গ্রন্থ জগত থেকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে । কারণ এ মহাবিশ্ব তথা সৃষ্টি জগতের প্রতিটি পরদে পরদে শিক্ষার উপকরণ রয়েছে । অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে সৃষ্টি জগতকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে ।
কবি যথার্থই বলেছেন :
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা 
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু ,
দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া 
ঘর হইতে শুধু দুই পা মেলিয়া 
একটি ধানের শীষের উপর 
একটি শিশির বিন্দু ।
শুধুমাত্র পুথিগত জ্ঞান অর্জনের মধ্যে শিক্ষা অর্জনকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না ।
এতে মেধার বিকাশ ঘটবে না ।
এ পর্যায়ে কবি বলেছেন :
পুথিগত বিদ্যা পর হস্তে ধন 
নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন ।
ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রকৃতির বিশাল গ্রন্থ জগত থেকে বাস্তবমূখী জ্ঞান অর্জন করার লক্ষ্যে তাদের মাঝে মাঝে শিক্ষা সফর করতে হবে ।
কবির ভাষায় :
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র 
সবার কাছে নিত্য নতুন শিখছি দিবারাত্র । 
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায় পাঠ্য যে সব পাতায় পাতায় 
শিখছি সেসব কৌতুহলে নেই দ্বিধা লেশ মাত্র ।
১৭. আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা ( ‍ Pray to Allah ) :

উপর্যুক্ত গুণাবলী অর্জন করার পর নিজেকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ছাত্রকে অবশ্যই আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে । কারণ আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া কোন কিছুই অর্জন সম্ভব নয় ।

2 comments: