Saturday 18 November 2017

বিয়ের আগে করনিয়

দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম


কিছু দিন আগে আমার এক প্রিয় তালিবে ইলম দেখা করতে এসে বললোহুযূরআগামী পরশু আমার বিবাহ। চমকে উঠে তাকালাম। বড় ‘বে-চারা’ মনে হলো।কারণ আমিও একদিন বড় অপ্রস্ত্তত অবস্থায় জেনেছিলামআগামীকাল আমারবিবাহভিতর থেকে হামদরদি উথলে উঠলো। ইচ্ছে হলো তাকে কিছু বলিযিন্দেগিরএই নতুন রাস্তায় চলার  জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পাথেয়আল্লাহর তাওফীকে তাকেদান করি। আল্লাহর তাওফীক ছাড়া আমরা কেই বা কী করতে পারি!
তো তাকে জিজ্ঞাসা করলামবিবাহের জন্য কী প্রস্ত্ততি নিয়েছোবড় ভোলাভালানও জোয়ানসরলভাবে বললোআমার কিছু করতে হয়নিসব প্রস্ত্ততি আববা -আম্মাই নিয়েছেন। কেনা-কাটা প্রায় হয়ে গেছেশুধু বিয়ের শাড়ীটা বাকি।
অবাক হলাম নাতবে দুঃখিত হলামআমার এই প্রিয় তালিবে ইলম এখন একজনযিম্মাদার আলিমে দ্বীন। দীর্ঘ কয়েক বছর আমাদের ছোহবতে ছিলোতার কাছেবিবাহের প্রস্ত্ততি মানে হলো জিনিসপত্র এবং বিয়ের শাড়ীতাহলে অন্যদেরঅবস্থা কী?!
বড় মায়া লাগলোবললামদেখোমানুষ যে কোন কাজ করতে চায়প্রথমে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করে। কাজটির হাকীকত  উদ্দেশ্য কীকাজটিআঞ্জাম দেয়ার সঠিক পন্থা কীশুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী সমস্যা হতে পারেসেগুলোর সমাধান কীএগুলো জেনে নেয়। এজন্য দস্ত্তর মত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার আয়োজন আছেএমনকি বাস্তব প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা আছে।
অথচ জীবনের সবচে’ কাঠিন  জটিল অধ্যায়ে মানুষ প্রবেশ করেবরং বলতেপারো ঝাঁপ দেয়কিছু না শিখেনা জেনে এবং না বুঝে একেবারে অপ্রস্ত্ততঅবস্থায়। ফল কী হতে পারে?! কী হয়?! অন্যদের কথা থাকচোখের সামনে আমারজন ছাত্রের ঘর ভেঙ্গে গেলোএকজনের তো এমনকি দুজন সন্তানসহ। কিংবাঘর হয়ত টিকে আছেকিন্তু শান্তি নেই। স্বাভাবিক শান্তি হয়ত বজায় আছেকিন্তুবিবাহ যে দুনিয়ার বুকে মানবের জন্য আল্লাহর দেয়া এক জান্নাতি নেয়ামতসুকূন সাকীনাহসে খবর তারা পায়নিশুধু অজ্ঞতার কারণেশুধু শিক্ষার অভাবে।
আশ্চর্যমা-বাবা সন্তানকে কত বিষয়ে কত উপদেশ দান করেনউস্তাদ কত কিছুশিক্ষা দেননছীহত করেনকিন্তু জীবনের সবচে’ কঠিন  জটিল বিষয়টি কেন যেনতারা সযত্নে এড়িয়ে যান!
তাকে বললামযদিও তুমি  উদ্দেশ্যে আসোনি তবু তোমাকে কিছু কথা বলতে চাইযা ইনশাআল্লাহ আগামী জীবনে তোমার কাজে আসবে।
খুব জযবা ছিলোঅবেগের তোড় ছিলো, ‘দিল কো নিচোড় ক্যর’, বাংলায় যদি বলিতাহলে বলবোহৃদয় নিংড়েকিন্তু দিল কো নিচোড়না-এর ভাব হৃদয় নিংড়ানোতেআসবে কোত্থেকেযাকবলছিলামহৃদয়টাকে নিংড়ে কিছু কথা তাকে বলেছিলাম।পরে আফসোস হলো যেকথাগুলো তো সব হাওয়ায় উড়ে গেলোযদি বাণীবদ্ধকরে রাখা যেতো কত ভালো হতোহয়ত আল্লাহর বহু বান্দার উপকারে আসতো।শেষে বললামএককাজ করো কথাগগুলোর খোলাছা কাগজে লিখে আমাকেদেখিও।
আগামী পরশুর বিয়ের খবর দিয়ে ছেলেটা সেই যে গেলোতিন বছরে আর দেখানেইদাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিভিন্ন সময় দরসেও আমি অনেক কথাবলেছি। ‘সবচে’ বেশী বলেছি আমার নূরিয়ার জীবনের প্রিয় ছাত্র (বর্তমানেরহাতিয়ার হুযূরমাওলানা আশরাফ হালীমীকেআশা করি তিনি সাক্ষ্য দেবেনঅনেকবার বলেছেনআমার কথাগুলো তার জীবনে বে-হদ উপকারে এসেছে।আরো অনেকে বলেছেকিন্তু কথাগুলো কেউ ‘কলমবন্দ’ করেনি।
তো এখন এই উপলক্ষকে কেন্দ্র করে তোমাদের মজলিসে  কথাগুলো আবারবলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আফসোসসেই আবেগ  জযবা তো এখন নেই যা প্রিয় তালিবে ইলমকে বলার সময় ছিলো। আবেগভরা দিলের কথা তো রসভরা ইক্ষুআর শুধু চিন্তা থেকে বলা কথা হলো রস নিংড়ে নেয়া ইক্ষুর ছোবাতবু কিছু না কিছুফায়দা তো ইনশাআল্লাহ হবে।
আমি আমার প্রিয় ছাত্রটিকে বলেছিলামএখন তোমার জীবনের এই যে নতুনঅধ্যায় শুরু হচ্ছে উর্দূতে এটাকে বলে ইযদিওয়াজী যিন্দেগীবাংলায় বলে দাম্পত্যজীবনঅর্থাৎ এটা জীবন  যিন্দেগির খুবই এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশশুধুগুরুত্বপূর্ণ নয়বরং অত্যন্ত জটিল  ঝুঁকিপূর্ণ। এটা তোমাকে ঘাবড়ে দেয়ার জন্যবলছি নাপ্রয়োজনীয় প্রস্ত্ততি গ্রহণ  পাথেয় সংগ্রহ করার জন্য বলছিযাতে পূর্ণআস্থা  সাহসের সঙ্গে তুমি তোমার এই নতুন জীবন শুরু করতে পারো। আল্লাহযদি সাহায্য করেন তাহলে সবই সহজ।
এটা যে শুধু তোমার ক্ষেত্রে হচ্ছে তা নয়আমার জীবনেও হয়েছেআমার মা-বাবারজীবনেও হয়েছেতোমার মা-বাবাও একদিন  জীবন শুরু করেছিলেন। যদি সহজ অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকে তাহলে তোমার মাকেবাবাকে জিজ্ঞাসা করতে পারোকীভাবে তারা  দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেনজীবনের শুরুতে তারা কীভেবেছিলেনকী চেয়েছিলেনকী পেয়েছেন?
কখন কী সমস্যা হয়েছেসেগুলো কীভাবে সমাধান করেছেন। এই জীবনের শুরুতেতোমার প্রতি তাদের কী উপদেশএধরনের সহজ আন্তরিক আলোচনায় সংসারজীবনের পথচলা অনেক সহজ হয়ে যায়। অবশ্য সব মা-বাবার সঙ্গে সব সন্তানেরএমন সহজ সম্পর্ক থাকে নাতবে থাকা উচিত। জীবনের যে কোন সমস্যারসমাধানের জন্য সন্তান মা-বাবার কাছেই আসবেমা-বাবাকেই নিরাপদ আশ্রয় মনেকরবেবন্ধুবান্ধবকে নয়। কঠিন সমস্যার মুখে একজন অপরিপক্ব বন্ধু কীভাবেসঠিক পথ দেখাতে পারেকিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটাই ঘটে। সন্তান মা-বাবাকে ভয়করেহয়ত কোন জটিলতায় পড়েছেতখন তাদের প্রথম চেষ্টা হয় যেমা-বাবা যেনজানতে না পারেকারণ তাদের কানে গেলে সর্বনাশ!  ছেলে তার বন্ধুর শরণাপন্ন হয়মেয়ে তার বান্ধবীর কাছে বলেতারা তাদের মত করে পরামর্শ দেয়। ফলে অবস্থাআরো গুরুতর হয়।
অতীতে যাই ছিলোএখন তো অপরিহার্য হয়ে পড়েছেমা-বাবার জন্য সন্তানের বন্ধুহওয়া। বিপদে সমস্যায় সন্তানকে তিরস্কার পরে করাআগে তার পাশে দাঁড়ানো।তাহলে সন্তান আরো বড় অন্যায় করা থেকে এবং আরো গুরুতর অবস্থায় পড়াথেকে বেঁচে যায়। কিন্তু এখন অবস্থা হলোসন্তান মা-বাবাকে ভয় করেবন্ধুকেনিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে। আমার ছেলেকে আমি এটা বোঝাতে চেয়েছি এবংআশা করিকিছুটা বোঝাতে পেরেছি। অনেক সমস্যা থেকে সে রক্ষা পেয়েছেকারণসবার আগে সে আমার কাছে এসেছেআর আমি বলেছিভয় নেইআমি তোমারপাশে আছি। আগে তাকে সাহায্য করেছিতারপর প্রয়োজনে দরদের সঙ্গে তিরস্কারকরেছিবা শিক্ষা দিয়েছি। বন্ধুর কাছে আগে পাওয়া যায় সাহায্যমা-বাবার কাছথেকে আগে আসে তিরস্কার। তাই সন্তান সমস্যায় পড়ে মা-বাবার কাছে আসে নাবন্ধুর কাছে আসে। এভাবে নিজের কারণেই সবচে’ কাছের হয়েও মা-বাবা হয়ে যায়দূরেরআর দূরের হয়েও বন্ধু হয়ে যায় কাছের। সন্তানের সমস্যা বন্ধু জানে সবারআগে। মা-বাবা জানে সবার পরেপানি যখন মাথার উপর দিয়ে চলে যায় তখন।
তো আমি আশা করছিজীবনের অন্যসকল ক্ষেত্রে যেমন তেমনিআল্লাহ না করুনদাম্পত্যজীবনে যদি কোন রকম সমস্যার সম্মুখীন হয় তাহলে সন্তান সবার আগেআমার কাছে আসবেতার মায়ের কাছে আসবেআমাদের উপদেশপরামর্শ নেবে।
আলহামদু লিল্লাহসেই রকমের সহজ অন্তরঙ্গ সম্পর্কই সন্তানের সঙ্গে আমারআমাদের।
আমার প্রিয় ছাত্রটিকে বললামকথা অন্য দিকে চলে গেছেতো এই প্রসঙ্গেতোমাকে একটি আগাম নছীহত করিআজ তোমরা স্বামী-স্ত্রীদুদিন পরেই হয়েযাবেমা এবং বাবা। সেটা তো জীবনের আরো কঠিনআরো জটিল অধ্যায়। আমিপ্রায় বলে থাকিপ্রাকৃতিক নিয়মে মা-বাবা হয়ে যাওয়া খুব সহজ। কিন্তু আদর্শ মা-বাবা হওয়ার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ শিক্ষা  দীক্ষা। তো তোমরা দুজন জীবনের শুরুথেকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করো যেএকটি মেয়ে কীভাবে একজন আদর্শ মাহতে পারে এবং একটি ছেলে কীভাবে একজন আদর্শ বাবা হতে পারেআগেবলেছিলাম একটি নছীহতএখন বলছি দুটি নছীহত।
সন্তানের সামনে কখনো তার মাকে অসম্মান করো না। তোমাকে মনে রাখতে হবেসে তোমার স্ত্রীকিন্তু তোমার সন্তানের মাতোমার চেয়েও অধিক শ্রদ্ধার পাত্রী।সন্তান যেন কখনোকখনোই মা-বাবাকে ঝগড়া-বিবাদ করতে না দেখে।  নছীহতআমি তোমাকে করছিআল্লাহর শোকর নিজে আমল করে। আমার বড় সন্তানেরবয়স ত্রিশ বছরএর মধ্যে কখনো সে আমাদের বিবাদ করতে এমনকি তর্ক করতেওদেখেনি। দ্বিতীয়ত  তোমরা উভয়ে সন্তানের বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করোএমন বন্ধু যাকেনিজের মনের কথাসব কথা নিঃসঙ্কোচে জানাতে পারে।
আগের কথায় ফিরে আসিআগামীপরশু তোমার বিবাহ। তার মানেআজ তুমিনিছক একটি যুবক ছেলেঅথচ আগামী পরশু হয়ে যাচ্ছোএকজন দায়িত্ববানস্বামী। কত বিরাট পার্থক্য তোমার আজকের এবং আগামী পরশুর জীবনের মধ্যে।বিষয়টি তোমাকে বুঝতে হবে। কেন তুমি বিবাহ করছোবিবাহের উদ্দেশ্য কীদেখোআমাদের দেশে পারিবারিক পর্যায়ে একটা নিন্দনীয় মানসিকতা হলোসংসারের প্রয়োজনেআরো খোলামেলা যদি বলিকাজের মানুষের প্রয়োজনেছেলেকে বিয়ে করানো। সবাই যে এমন করে তা নয়তবে এটা প্রবলভাবে ছিলোএখনো কিছু আছে। আমি নিজে সাক্ষীআমার একজন মুহতারাম তাঁর মেয়েকেবিয়ে দিলেনবিয়ে হওয়ামাত্র ছেলের বাবা স্বমূর্তি ধারণ করে বলতে লাগলেনআরদেরী করা যাবে নাতাড়াতাড়ি মেয়ে বিদায় করেন। মেয়ের মা  বাবা তো হতবাক!
মেয়ে বিদায় হলো। শশুরবাড়ীতে রাত পোহালোআর পুত্রবধুর সামনে কাপড়েরস্ত্তপ নিক্ষেপ করে শাশুড়ী আদেশ করলেনকাপড়ে সাবান লাগাওদেখিমায়েরবাড়ী থেকে কেমন কাজ শিখে এসেছো!
আমার এক ছাত্রের কথাবিয়ের প্রয়োজন। কেনকারণ মা-বাবার খেদমত করারকেউ নেই।
এটা কিন্তু বিবাহের উদ্দেশ্য বা মাকছাদ হতে পারে না। মা-বাবার খেদমত মূলততোমার দায়িত্ব। এখন সে যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তোমার সাথে এতে শরীক হয়তবেসেটা তোমাদের উভয়ের জন্য সৌভাগ্যের কারণ হতে পারে। দেখোআল্লাহ চাহেতো অচিরেই আমাদেরও ঘরে পুত্রবধু আসবে। আমরা আমাদের না দেখা সেই ছোট্টমেয়েটির প্রতীক্ষায় আছি। কিন্তু আমি আমার পুত্রকে অবশ্যই বলবোবিবাহেরউদ্দেশ্য মা-বাবার খেদমত করা হতে পারে  না।
আমি দু করিতোমার মা-বাবা তোমার যেমনতেমনি তোমার স্ত্রীরও যেনমেহেরবান মা-বাবা হতে পারেন। আমার দুই মেয়ের শশুরদুজনই এখনজান্নাতবাসী (ইনশাআল্লাহ) আল্লাহর কাছে আমার সাক্ষ্য এই যেসত্যি সত্যি তারাআমার মেয়েদুটির ‘বাবা’ ছিলেন। আমার ছোট মেয়ের শশুর বড় আলিম ছিলেনতাঁকে আমার একটি বই হাদিয়া দিয়েছিলাম এভাবে, ‘সাফফানার আববুর পক্ষ হতেসাফফানার আববাকে তিনি খুশী হয়ে অনেক দু করেছিলেনআর বলেছিলেন, ‘আপনি তো এই ছোট্ট একটি বাক্যে সম্পর্কের মহামূল্যবান এক দর্শন তুলেধরেছেন!
আমার বড় মেয়ের অবস্থা হলোমায়ের বাড়ী থেকে যাওয়ার সময় সে কাঁদে নাকাঁদে ‘আম্মার’ বাড়ী থেকে আসার সময়।
দুআ’ করিআমার দেশের প্রতিটি মেয়ে যেন মা-বাবার ঘর থেকে এমন মা-বাবারঘরে প্রবেশ করতে পারে। আর তুমি দু করোআমরা দুজন যেন আমাদেরঅনাগত মেয়েটির জন্য তেমন মা-বাবাই হতে পারি।
তো বলছিলাম বিবাহের উদ্দেশ্যের কথা। বৈধ উপায়ে স্ত্রীপরিচয়ে কাউকে ভোগকরাএটাও বিবাহের উদ্দেশ্য বা মাকছাদ হতে পারে না।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে বলা হয় শরীকে হায়াতজীবনসঙ্গী এবং জীবনসঙ্গিনী।বস্ত্তত এই শব্দটির মধ্যেই দাম্পত্য জীবনের সুমহান  উদ্দেশ্যটি নিহিত রয়েছে।আর যদি কোরআনের ভাষায় বলি তাহলে বিবাহের উদ্দেশ্য হল,
هن لباس لكم وانتم لباس لهن
তুমি তো কোরআন বোঝো। ভেবে দেখোদাম্পত্য-সম্পর্কের কী গভীর তাৎপর্যএখানে নিহিত
পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনবিবাহ হচ্ছে আমার সুন্নত।আর বলেছেনযে আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখ হবে সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।
বিবাহ নবীর সুন্নতসুতরাং সহজেই বোঝা যায়বিরাট  মহান কোন মাকছাদরয়েছে এর পিছনে।
বিবাহের আসল মাকছাদ বা উদ্দেশ্য  হলো স্বামী  স্ত্রীএই পরিচয়ে একটি নতুনপরিবার গঠন করা এবং মা  বাবাএই পরিচয়ে সন্তান লাভ করা। তারপর উত্তমলালন-পালন এবং আদর্শ শিক্ষা-দীক্ষা  তারবিয়াতের মাধ্যমে নেক সন্তানরূপেগড়ে তুলে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করাযাতে নস্লে ইনসানি বা মানববংশকেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর পছন্দমত আগে বাড়তে থাকে। 
এটাই হলো বিবাহের আসল উদ্দেশ্যঅন্য যা কিছু আছে তা সব পার্শ্ব-উদ্দেশ্য। তোএখনই তুমি নিয়ত ঠিক করে নাও যেকেন কী উদ্দেশ্যে বিবাহ করবে। উদ্দেশ্য যদিঠিক হয়ে যায় তাহলে দেখতে পাবেআল্লাহ চাহে তো এখনই তোমার ভিতরে কতসুন্দর পরিবর্তন আসছেকী আশ্চর্য এক পরিপূর্ণতা নিজের মধ্যে অনুভূত হচ্ছেআগামী জীবনের সকল দায়দায়িত্ব পালন করার জন্য গায়ব থেকে তুমি আত্মিকশক্তি লাভ করছো। আল্লাহ তাওফীক দান করেন।
এবার আসো জীবনের
বাস্তবতার কথা বলিএতদিন তোমার জীবনে ছিলেন শুধু তোমার মাযিনি তোমাকেগর্ভে ধারণ করেছেনপ্রসববেদনা ভোগ করেছেন। নিজেকে তিলে তিলে ক্ষয় করেতোমাকে প্রতিপালন করেছেন। এতদিন তোমার উপর ছিলো তাঁর অখন্ড অধিকার।হঠাৎ তিনি দেখছেনতাঁর আদরের ধনতাঁর অাঁচলের রত্ন পুত্রের জীবনে স্ত্রীপরিচয়েঅন্য এক নারীর প্রবেশ (অনুপ্রবেশ?) ঘটেছেএভাবে পুত্রের উপর তার অখন্ডঅধিকার খন্ডিত হতে চলেছে। যে পুত্র ছিলো এতদিন তাঁর একক অবলম্বনএখন সেহতে চলেছে অন্য এক নারীর অবলম্বন।  বাস্তবতা না তিনি অস্বীকার করতেপারছেননা মেনে নিতে পারছেন। সংসারে প্রত্যেক মায়ের জীবনে  কঠিন সময়টিআসে। এমন এক অর্ন্তজ্বালা শুরু হয় যা শুধু তিনি নিজেই ভোগ করেনকাউকেবোঝাতে পারেন নাএমনকি এতদিনের আদরের ধন পুত্রকেও না। ফলে সামান্যসামান্য কারণেএমনকি অকারণেও তিনি খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়েনতাঁরঅনুভূতি আহত হয়। এমন সময় ছেলে (এবং তার স্ত্রী অজ্ঞতাঅনভিজ্ঞতা অপিরপক্বতার কারণেযদি অসঙ্গত কিছু বলে বা করে বসে তাহলে তো মায়ের মনেকষ্টের শেষ থাকে না। প্রসববেদনা থেকে শুরু করে প্রতিপালনের সব কষ্ট একসঙ্গেমনে পড়ে যায়।
আম্মার কাছে শুনেছিগ্রামের এক মা তার পুত্রবধুকে বলেছিলেন, ‘ততা ফানি আমিখাইছিলামনা তুই খাইছিলি?’
তখনকার যুগে প্রসবপরবর্তী বেশ কিছু দিন মা  শিশুর স্বাস্থ্যগত কল্যাণ চিন্তা করেমাকে গরম পানি খেতে দেয়া হতোঠান্ডা পানি দেয়া হতো না।
তো কথাটা কিন্তু নির্মম। আমার জন্য ‘তাতানো পানি’ আমার মা খেয়েছেনআমারসব আবর্জনা আমার মা পরিস্কার করেছেন। নিজের জীবন তিলে তিলে ক্ষয় করেতিনি আমাকে বড় করেছেনউপযুক্ত করেছেন। সেই সব কষ্টের সুফল হঠাৎ করেঅন্য একটি মেয়ে এসে অধিকার করে বসেছে। তখন সব হারানোর একটা বেদনাতাকে কুরে কুরে খায়। তো তোমার মায়ের অন্তরেও এরকম অনুভূতি হওয়াস্বাভাবিক। মায়ের মনের এই কষ্টের উপশমএই বেদনার সান্ত্বনা তোমাকেই চিন্তাকরতে হবে।
মায়ের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে আসে বাবার কথাতারপর ভাই-বোনদের কথা।(এসম্পর্কেও ছাত্রটিকে বিশদভাবে বলেছিলাম।)
তৃতীয়ত তোমার স্ত্রী। যদিও তৃতীয় বলছিকিন্তু বাস্তবে এটাই হলো সবচে’ গুরুত্বপূর্ণএবং সবচে’ নাযুক। তবে এটা থাকবে তোমার দিলেতোমার অন্তরে। মা-বাবারসামনে মুখের কথায় বা আচরণে এটা প্রকাশ করা প্রজ্ঞার পরিচায়ক হবে না।
কেন বলছি স্ত্রীর বিষয়টি সবচে’ নাযুকতার আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দাওকোন বিবাহে কোন ছেলেকে কাঁদতে দেখেছো?! কোন ছেলের মা-বাবাকে বিষণ্ণদেখেছো?! দেখোনি; (হয়তো ব্যতিক্রম এক দুইটি ঘটনা থাকতে পারে। কিন্তু সাধারণঅবস্থা এটিইএদের কেউ কাঁদে না।কেনকারণ বিবাহের মাধ্যমে ছেলে কিছুহারায় নাছেলের মা-বাবা কিছু হারায় নাবরং অর্জন করে। তাই তাদের মুখে থাকেঅর্জনের হাসি এবং প্রাপ্তির তৃপ্তি।
বিবাহের আসরে কাঁদে শুধু মেয়েআর মেয়ের মা-বাবা। কেন কাঁদে একটি মেয়েকারণ তাকে সবকিছু হারাতে হয়সবকিছু ত্যাগ করতে হয়। মা-বাবাকে ছেড়েআসতে হয়শৈশবের সব স্মৃতি তাকে মুছে ফেলতে হয়। একটি ছোট্ট মেয়ের জীবনেএটি অনেক বড় আঘাত।  যেন একটি ছোট্ট গাছের চারাকে শিকড়শুদ্ধ উপড়েফেলে বহু দূরে ভিন্ন পরিবেশে নতুন মাটিতে এনে রোপণ করা। বাকি জীবন তাকেএই মাটি থেকেই রস আহরণ করে বেঁচে থাকতে হবে।
হিন্দিতে বলে, ‘আওর্যত কী ডোলী যাহা উত্যরতী হ্যয়উসকী আর্থী ওহীঁ সে উঠতিহ্যয়।’ অর্থাৎ মেয়েদের পালকি যেখানে গিয়ে নামেসেখান থেকেই তার জানাযাওঠে।
কত বড় নির্মম সত্যতো তোমার স্ত্রীরূপে তোমার ঘরে আসা এই ছোট্ট মেয়েটিরযখমি দিলে তাসাল্লির  মরহম তোমাকেই রাখতে হবে। একমাটি থেকে উপড়ে এনেআরেক মাটিতে রোপণ করা একটি চারাগাছ থেকে দুদিন পরেই ফল দাবী করাকতটা নিষ্ঠুরতাফল পেতে হলে তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে। চারা গাছটির পরিচর্যাকরতে হবেসকাল-সন্ধ্যা তার গোড়ায় পানি দিতে হবে। ধীরে ধীরে শিকড় যখনমাটিতে বসবে এবং মাটি থেকে রস সংগ্রহ করার উপযুক্ত হবেতখন তোমাকে ফলচাইতে হবে নাসজীব বৃক্ষ নিজে থেকেই ফল দিতে শুরু করবে।
কত আফসোসের বিষয়দাম্পত্য জীবনের শুরুতে যত আদেশ-উপদেশ সব ছোট্ট মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বর্ষিত হয়। প্রথম দিনেই তাকে শুনতে হয়এখনথেকে তাকে স্বামীর মন জয় করতে হবেশশুর-শাশুড়ি সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবেশশুর বাড়ীর সবার মন যুগিয়ে চলতে হবে। তার নিজের যেন কোন ‘মন’ নেই।সুতরাং সেটা জয় করারও কারো গরজ নেই।
তো মায়ের মন তোমাকেই রক্ষা করতে হবেআবার স্ত্রীর মনোরঞ্জনও তোমাকেইকরতে হবে। সবদিক তোমাকেই শামাল দিয়ে চলতে হবে। কত কঠিন দায়িত্বঅথচনা শিক্ষাঙ্গনেনা গৃহপ্রাঙ্গণেকোথাও  সম্পর্কে শিক্ষার নূন্যতম কোন ব্যবস্থানেই। সম্পূর্ণ অপ্রস্ত্তত অবস্থায় দুটি অপরিপক্ব তরুণ-তরুণীকে যেন সংসারসমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়ামেয়েটিও জানে নাআজ থেকে সে আর ছোট্ট মেয়েটি নেই।সে এখন স্ত্রী হয়ে একটি অপরিচিত মানুষের জীবনে প্রবেশ করছেযার মা আছেবাবা আছেভাইবোন আছে এবং তাদের প্রতি তার স্বামীর অনেক দায়-দায়িত্ব আছে।সহানুভূতির সঙ্গে কোমলাতার সঙ্গে এই দায়িত্ববোধ কেউ তার মধ্যে জাগ্রত করেদেয়নি।  দোষ কার!
তো আমার প্রিয় ছাত্রটিকে বলেছিলামকথা দ্বারা আচরণ দ্বারা তোমার মাকে তুমিবোঝাবেমাআমি আপনারই ছিলামআছি এবং থাকবো। স্ত্রী হলো আমার জীবনেরনতুন প্রয়োজনআপনি আমার প্রাণআপনার সঙ্গে আমার নাড়ির টান।
অন্যদিকে স্ত্রীকে বোঝাতে হবেএই সংসার সমুদ্রে তুমি একা নওআমি তোমারপাশে আছি। নতুন জীবনে চলার পথে আমারও অনেক কষ্ট হবেতোমারও অনেককষ্ট হবে। তবে সান্ত্বনা এই যেতুমিও একা নওআমিও একা নই। আমার পাশে তুমিআছোতোমার পাশে আমি আছি। আমার কষ্টের সান্ত্বনা তুমিতোমার কষ্টেরসান্ত্বনা আমি। আমরা পরস্পরের কষ্ট হয়ত দূর করতে পারবো নাতবে অনুভবকরতে পারবো এবং হয়ত কিছুটা লাঘব করতে পারবো।
আল্লাহর কসমএমন কোন নারিহৃদয় নেই যা এমন কোমল সান্ত্বনায় বিগলিত হবেনা।
তোমার স্ত্রীকে তুমি এভাবে বলবেআমাদের জীবন তো আলাদা ছিলো। আমরা তোএকে অপরকে চিনতামও না। আল্লাহ আমাদের কেন একত্র করেছেন জানো?! একাএকা জান্নাতে যাওয়া কঠিন। আল্লাহ আমাদের একত্র করেছেন একসঙ্গে জান্নাতেরপথে চলার জন্য। আমি যদি পিছিয়ে পড়িতুমি আমাকে টেনে নিয়ে যাবেতুমি যদিপিছিয়ে পড়োআমি তোমাকে টেনে নিয়ে যাবো। তুমি সতর্ক থাকবেআমার দ্বারাযেন কারো হক নষ্ট না হয়আমিও সতর্ক থাকবোতোমার দ্বারা যেন কারো প্রতিযুলুম না হয়।
প্রিয় ছাত্রটিকে আমি আরো বললামস্ত্রীকে বোঝানোর জন্য তার সন্তানকে সামনেআনতে হবে। অর্থাৎ তুমি তাকে বলবেদেখোজীবন কত গতিশীলসবকিছু কতদ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছেদুদিন আগে আমরা শুধু যুবক-যুবতী ছিলামআজ হয়ে গেছিস্বামী-স্ত্রী। দুদিন পরেই হয়ে যাবো মা-বাবা। আমি বাবাতুমি মাআল্লাহর কাছেএকজন মায়ের মর্যাদা কততোমার কদমের নীচে হবে তোমার সন্তানের জান্নাতযেমন আমার মায়ের কদমের নীচে আমার জান্নাত। তো তোমার সন্তান কেমন হলেতুমি খুশী হবেআমাকেও আমার মায়ের ঐরকম সন্তান হতে তুমি সাহায্য করো।আমি যদি ভুল করিমায়ের কোন হক নষ্ট করিমায়ের সামনে ‘উফ’ করিতুমিআমাকে সাবধান করোআমাকে সংশোধন করো। তাহলে ইনশাআল্লাহ তোমারসন্তানও তুমি যেমন চাও তেমন হবে।
প্রয়োজন হলে স্ত্রীকে মা-বাবার সামনে তিরস্কার করবেতবে ঘরে এসে একটু আদরএকটু সোহাগ করে বোঝাতে হবেকেন তুমি এটা করেছো?! বোঝানোর এইতরযগুলো শিখতে হবেআর এটা দুএকদিনের বিষয় নয়সারা জীবনের বিষয়।কিন্তু আমরা জন এভাবে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপন করি?! হয় মাতৃভক্তিতে স্ত্রীরপ্রতি অবিচার করিনা হয়স্ত্রীর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে মা-বাবার দিলে আঘাত দেইআর দুনিয়া-আখেরাত বরবাদ হয়। আমার একটা কথা মনে রেখোমায়ের পক্ষ নিয়েস্ত্রীর প্রতি অবিচার করা মূলত মায়ের প্রতি যুলুমতদ্রূপ স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে মায়ের হকনষ্ট করা আসলে স্ত্রীর প্রতি যুলুম। আমার একথার উৎস হলো,
أنصر أخاك ظالما أو مظلوما
অবশ্য সবকিছু হতে হবে হিকমত  প্রজ্ঞার সঙ্গে।
একটি ঘটনা তোমাকে বলিতোমার মত আলিমে দ্বীন নয়সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতএকজন মানুষ আমাকে বলেছেনএকবার তার মা তাকে বললেনতোর বউ আজতোর এত আপন হয়ে গেলো কীভাবে!
আমি বললামদেখো মাতোমাকে আমি মা বলিএই ‘মা’ ডাকটুকু পাওয়ার জন্যতোমাকে কত কষ্ট করতে হয়েছেঅথচ ‘পরের বাড়ীর মেয়েটি মুখ থেকে তুমিবিনা কষ্টে ‘মা’ ডাক শুনতে পাওতোমাকে যে মা বলে ডাকে সে আমার আপন হবেনা কেন মা?
আরেকটা ঘটনাএক মা তার মেয়ের শাশুড়ী সম্পর্কে বললেনমানুষ নামেয়েটাকেআনতে পাঠালামদুটো পিঠে বানিয়ে খাওয়াবোদিলো নাফেরত পাঠিয়ে দিলো!
দুদিন আগে তিনিও একই কাজ করেছিলেনছেলের বউকে নিতে এসেছিলো মায়েরবাড়ী থেকে। তিনি বললেনদুদিন পরে আমার মেয়েরা আসবে এখন তুমি গেলেকীভাবে চলবে!
ভদ্রমহিলাকে বললামআপনার কাজটা কি ঠিক হয়েছিলোআপনাকে কষ্ট দেয়াআমার উদ্দেশ্য নয়সতর্ক করা উদ্দেশ্য। আল্লাহর কাছে যদি আটকা পড়েন তখনতো আপনিই বলবেনতুমি তো হাদীছ-কোরআন পড়েছোআমাকে সতর্ক করোনিকেন?
মোটকথামেয়েদেরকে তারবিয়াত করতে হবে যাতে তারা আদর্শ স্ত্রীআদর্শ মা এবংআদর্শ শাশুড়ীরূপে আদর্শ জীবন যাপন করতে পারে। পুরুষ হচ্ছে কাওয়াম পরিচালক। সুতরাং তারবিয়াত  পরিচালনা করা পুরুষেরই দায়িত্ব। স্ত্রীমা শাশুড়ীজীবনের এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ  কঠিন ধাপের জন্য ঘরে ঘরে আমরা যদিআমাদের মেয়েদের গড়ে তুলতে পারিআদেশ দ্বারাউপদেশসর্বোপরি নিজেদেরআচরণ দ্বারা তাহলেই সংসার হতে পারে সুখেরশান্তির।
প্রিয় ছাত্রটিকে আরেকটি কথা বললামতোমার স্ত্রীর কোন আচরণ তোমার অপছন্দহতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথমে তোমাকে ভাবতে হবেতোমার সব আচরণ কি সুন্দরতোমার স্ত্রীর পছন্দেরতাছাড়া তোমার স্ত্রীর ভালো দিক কি কিছু নেই। সেই ভালোদিকগুলোর জন্য শোকর করোআর যা তোমার কাছে মন্দ লাগে তার উপর ছবরকরো। আর যদি সংশোধন করতে চাও তাহলে ভালো দিকগুলোর প্রশংসা করোতারপর কোমল ভাষায় বলোতোমার এই বিষয়টা যদি না থাকতো তাহলে তুমিআরো অনেক ভালো হতে। তবে আল্লাহর পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামের সেই প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ মনে রাখতে হবেএকটু বাঁকা থাকবেইএইবক্রতাসাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে নাযআন্দাযমানঅভিমানলাস্যতাএইবক্রতা নারীর সৌন্দর্যনারীর শক্তি। এটাকে সেভাবেই গ্রহণ করে তার সঙ্গে জীবনযাপন করতে হবেপূর্ণ সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে যাবেআর সৌন্দর্য নষ্ট হয়েযাবে।
সত্যি সত্যি যদি তোমার স্ত্রীর গুরুতর কোন ত্রুটি থাকে তবে সেটা সংশোধনেরদায়িত্ব  কর্তব্য অবশ্যই তোমার। তবে সেক্ষেত্রেও সংশোধনের জন্য অত্যন্তধৈর্যের সঙ্গে দিনের পর দিন চেষ্টা করে যেতে হবে। ধমক দিয়েজোর খাটিয়েসংশোধন করা যায় নাঘরে অশান্তি আনা যায়ঘর ভাঙ্গা যায়আর সন্তানদেরজীবনে বিপর্যয় আনা যায়।
ইসলামপুরে আমার আববার দোকানের অপর দিকে এক ভদ্রলোকের দোকানছিলো। অবস্থা ছিলো এই যেদোকানে বসেই মদ খেতো। আববা তাকে দাওয়াতদিলেনআর সে খুব দুর্ব্যবহার করলোকিন্তু আববা ধৈর্যের সঙ্গে দাওয়াত চালিয়েগেলেন। দুবছর পর তিনি মসজিদমুখী হলেন এবং এমন মুবাল্লিগ হলেন যেবউকেতালাক  দেবেন। কারণ সে দ্বীনের উপর আসছে না।
আববা তাকে এভাবে বুঝালেন, ‘আমার সঙ্গে আপনার আচরণ কি মনে আছেআমি যদি ধৈর্যহারা হয়ে আপনাকে ত্যাগ করতামএই পুরো কথাটা যেহেনে রেখেস্ত্রীকে তালিম করতে থাকেন। ছবর করেনছবর করলে আমার প্রতি আপনার যুলুমআল্লাহ মাফ করবেন। আল্লাহ যদি প্রশ্ন করেন আমার বান্দা তোমাকে আমার ঘরেরদিকে ডেকেছেতুমি তার প্রতি যুলুম করেছো কেনতখন আপনি বলতে পারবেনহে আল্লাহআমিও আপনার বান্দীর পিছনে ছবরের সঙ্গে মেহনত করেছি।
সেই লোকের স্ত্রী কিন্তু পরবর্তী সময়ে পরদানশীন হয়েছিলো। অথচ জোশের তোড়েলোকটা তো ঘরই ভেঙ্গে ফেলছিলো।
আসলে দোষ আমাদের। আমরা তারবিয়াত করার তরীকা শিখিনি। বোঝানোর তরযআয়ত্ত্ব করিনি।
প্রিয় ছাত্রটিকে আরো অনেক কথা বলেছিলামপ্রায় দুঘণ্টা সময় তার জন্য ব্যয়করেছিলাম। সবকথা এখন মনেও নেই।
তবে একটা কথা তাকে বলা হয়নিএখন তোমাদের মজলিসে বলিস্ত্রীর সঙ্গেআচরণ কেমন হবে সম্পর্কে একজনকে যা বলতে শুনেছিলামতা ছিল খুবইমর্মান্তিক। তিনি বলেছিলেন, ‘মেয়েলোক যেন তোমার মাথায় চড়ে না বসেতাইপ্রথম দিন থেকেই তাকে শাসনের মধ্যে রাখবা। পূর্ণ ইতাআত  আনুগত্য আদায়করে নিবাগোরবা কুশতান দর শবে আওয়াল।
 প্রবাদ এমনই বিশ্ববিশ্রুত যেআমাদের নিরীহ বাংলাভাষায়ও বলে, ‘বাসর রাতেইবেড়াল মারতে হবে কিন্তু জীবনের সর্বক্ষেত্রের মত এক্ষেত্রেও আমাদেরঅনুসরণীয় হলো সুন্নাতে রাসুলআর তিনি ইরশাদ করেছেন,
خيركم خيركم لأهله وأنا خيركم لأهلي
তো জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শরীয়তের সীমারেখায় থেকে স্ত্রীর সঙ্গে এমনআচরণই আমাকে করতে হবেযাতে সে মনে করেআমি সর্বোত্তম স্বামীআমারমতো উত্তম স্বামী হয় নাহতে পারে না।
স্ত্রীগণের সঙ্গে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ কী ছিলো তা জানতেহবে এবং অনুসরণ করতে হবে। স্বামীর খেদমত করার মাধ্যমে স্ত্রী অনেক আজর ছাওয়াবের অধিকারিণী হতে পারেএটা আলাদা কথা। তবে আমাকে মনে রাখতেহবে যেএটা স্ত্রীর মহত্ত্বস্বামীর অধিকার নয়। তারা যদি কখনো মায়ের বাড়ী যেতেচায়আমরা প্রশ্ন করি, ‘আমার খাওয়া-দাওয়ার কী হবে?’ অথচ এটা তার বিবেচনারবিষয় হতে পারেআমার প্রশ্ন করার বিষয় নয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সামান্য কথা বলেই মজলিস শেষ করছি। সহবাসদাম্পত্য জীবনের একটি অপরিহার্য সত্য।  বিষয়ে আলোচনাকে হায়া-শরমেরখেলাফ মনে করা হয়। ফলে বিষয়টি অজ্ঞতার মধ্যে থেকে যায়। একারণে এমনকিঅনেক সময় দাম্পত্য জীবন বিষাক্ত হয়ে পড়ে।
স্ত্রী তোমার সারা জীবনের সম্পদ এবং সেরা সম্পদ।
متاع   মানে সম্পত্তি নয়ভোগের বস্ত্ত নয়  متاع  মানে সম্পদঐশ্বর্য। বিষয়টিবুঝতে না পেরে আধুনিক বুদ্ধিজীবীরা হাদীছের সমালোচনা করেন। আমরাহাদীছটির তরজমা  ব্যাখ্যা এমন খন্ডিতভাবে করি যেতারাও সুযোগ পেয়ে যায়।
তো স্ত্রী তোমার সম্পত্তি নয়স্ত্রী হলো তোমার জীবনের সর্বোত্তম সম্পদযাযথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে  তোমাকে রাখতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে।
প্রথমেই বর্বর  পাশবিকরূপে নিজেকে স্ত্রীর সামনে তুলে ধরা বিরাট মুর্খতা ছাড়াআর কিছু নয়। স্ত্রী স্বামীর ভোগের পাত্রী নয়বরং স্বামী-স্ত্রী হলো পরস্পরকেউপভোগ করার জন্য। যত দিন লাগেদীর্ঘ সাধনা করে প্রথমে হৃদয় জয় করোমনের দুয়ার খোলোঅন্তরের গভীরে প্রবেশ করো।
যিন্দেগীর এই কঠিন মারহালা সম্পর্কে কত কিছু যে বলার আছেকত কিছু যেশেখার আছেদেখিযদি আবার কখনো সুযোগ হয়।
[দাম্পত্যজীবন সুখময় হওয়ার জন্য শুধু পুরুষের প্রচেষ্টা  সচেতনতাই যথেষ্ট নয়নারীরও সদিচ্ছা  সচেতনতা অতি প্রয়োজন।
 বিষয়ে তারও আছে অনেক দায়িত্ব। কিন্তু নারীর তালীম-তরবিয়তের ভারও তোপুরুষেরই উপর। বিয়ের আগে পিতামাতা তার তরবিয়ত করবেনবিয়ের পর স্বামী।দাম্পত্যজীবনে নারীর দায়িত্ব কী কীসেই সকল দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে সচেতনকরার পদ্ধতি কী এবং তার তালীম-তরবিয়ত কীভাবে করতে হবে-এটি আলাদাএকটি বিষয়।
আল্লাহ করুনকোনো মজলিসে আমরা যেন হুজুরের কাছ থেকে  বিষয়েওবিস্তারিত দিক-নির্দেশনা লাভ করি।-তত্ত্বাবধায়ক