Monday, 20 March 2017

তোমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছ : প্রধানমন্ত্রী


সাদা পোশাকে রঙিন জয়
শততম টেস্টে ৪ উইকেটে জয় 

নিজেদের শততম টেস্ট রাঙিয়ে দিলেন মুশফিক, সাকিবরা। দুঃস্বপ্নের ভেন্যুতে রচিত হলো নতুন ইতিহাস। কলম্বোর পি সারা ওভালে শ্রীলংকার বিপক্ষে পাওয়া ৪ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ে টেস্ট সিরিজও সমতা (১-১) দিয়ে শেষ করল বাংলাদেশ।
কলম্বো টেস্টের চতুর্থ দিন শেষেই পাওয়া যাচ্ছিল জয়ের সুবাস। অপেক্ষাটা ছিল জয়-উদযাপনের! শঙ্কা যে ছিল না, তা নয়। তবে সবকিছু তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে সমর্থকদের উৎসবের উপলক্ষ তৈরি করে দিয়েছে মুশফিকবাহিনী। স্বাধীনতার মাসে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে এনে দিয়েছেন অনন্য জয়। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন তামিম ইকবাল। সিরিজসেরার পুরস্কার জিতেছেন সাকিব আল হাসান।
হেরাথের করা ৫৮তম ওভারের পঞ্চম বল। সুইপ করলেন মিরাজ। স্কয়ার লেগে মিসফিল্ড। দুটি রান। বাংলাদেশ পৌঁছে গেল কাক্সিক্ষত জয়ের লক্ষ্যে। পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুশফিক-মিরাজ। স্মারক হিসেবে তুলে নিলেন স্টাম্প। ততক্ষণে ড্রেসিংরুম থেকে মাঠে দৌড় শুরু করেছেন সতীর্থরা। মাঠে হ্যান্ডশেক করে টাইগারদের অভিনন্দন জানালেন শ্রীলংকার খেলোয়াড়রাও। এ জয়ের রয়েছে অন্য এক তাৎপর্যও। শততম টেস্টে এসে নবম জয় পেল বাংলাদেশ। শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৮তম টেস্টে এসে প্রথম।
দলের এমন জয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জয়ের পরপরই প্রধানমন্ত্রী টেলিফোনে কথা বলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও সিরিজসেরা সাকিব আল হাসানের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, তোমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছ। তোমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন। এই অর্জন ধরে রাখতে আমি তোমাদের জন্য দোয়া করছি। এ ছাড়া শততম টেস্টে জয়ের পর বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
সংবাদ সম্মেলন শুরু হতে তখনো কিছুটা সময় বাকি। মাঠে জয়-উদযাপন শেষে বাংলাদেশ দলের সব খেলোয়াড় চলে গেলেন ড্রেসিংরুমে। সেখানে কিছুক্ষণ ধরে চলল জয়-উদযাপন। মুশফিক, সাকিবরা গাইছেন, আমরা করব জয়...। এই গানটি আবার টাইগারদের ট্রেডমার্ক। যে কোনো অর্জনের পর ড্রেসিংরুমে দলগতভাবে এই গানটিই গেয়ে থাকেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা।
মাইলফলকের ম্যাচটা রাঙিয়ে দিতে টাইগারদের দরকার ছিল ১৯১ রান। তখন থেকেই আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছিল একটাই শব্দ টাইগারদের শততম টেস্টে জয়। আগের চারদিন হাতেগোনা কয়েকজন দর্শককে দেখা গিয়েছিল পি সারা ওভালে। শেষ দিনে অবশ্য দর্শক সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বাংলাদেশের সমর্থকদেরই রাখতে হবে এগিয়ে! শেষ দিনের শুরু থেকেই তারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গর্জন তুলে সমর্থন জুগিয়ে গেছেন।
অবশ্য শুরুতেই সৌম্য, ইমরুলের জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন হেরাথ। আমাদের সময়কে গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলছিলেন, ওই সময় কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। যে কোনো দলের জন্য ওই সময় দুই উইকেট হারানোটা চাপের। তবে শেষ পর্যন্ত যে আমরা চাপকে জয় করতে পেরেছি এটাই বড় কথা। শুরুর ধাক্কাটা অবশ্য তৃতীয় উইকেটে সামলে ওঠে বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল-সাব্বির রহমান জুটির দায়িত্বশীল ব্যাটিং সফরকারীদের রেখেছিল কক্ষপথেই। তৃতীয় উইকেটে এ জুটি দলীয় স্কোরকার্ডে জমা করে ১০৯ রান। আর তাতেই জয়টা চলে আসে কাছাকাছি! তামিম যখন ফিরলেন তখন জয় থেকে ৬০ রান দূরে বাংলাদেশ। বাঁহাতি এই ওপেনার ১২৫ বলে খেলেন ৮২ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। আর মাত্র একটি রান করতে পারলেই তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১০ হাজার রানের অভিজাত ক্লাবে নাম লেখাতে পারতেন। অবশ্য এ নিয়ে ভাবছেন না তামিম। আমাদের সময়কে বলেন, ‘আশা করি ওয়ানডেতে হয়ে যাবে।
দলীয় স্কোরকার্ডে ৩১ রান জমা হতেই তামিম, সাব্বির (৪১) ও সাকিবের (১৫) উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ততক্ষণে অবশ্য জয়টাও চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। অবশ্য জয় থেকে ২ রান দূরে থাকার সময় মোসাদ্দেকের উইকেট না হারালে ৫ উইকেটের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ত টাইগাররা। মোসাদ্দেক বাজে শট খেলার খেসারত হিসেবে আউট হয়েছেন। এর আগে আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান মুশফিক। শেষ পর্যন্ত শততম টেস্টে দলকে জয়ী করে মাঠ ছাড়েন মুশফিক (২২) ও মিরাজ (২)।
শ্রীলংকা ১৯০ রানের লিড পায় নবম উইকেট জুটির কল্যাণে। পেরেরা-লাকমল জুটি দলীয় স্কোরকার্ডে জমা করে ৮০ রান। আর তাতেই লংকানদের দ্বিতীয় ইনিংসের দলীয় সংগ্রহটা দাঁড়ায় ৩১৯। শেষ দিনে ২৬ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা পেরেরা রানআউটে কাটা পড়েন। অবশ্য সাজঘরে ফেরার আগে তিনি তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি। ১৬ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা লাকমলকে (৪২) নিজের চতুর্থ শিকার বানান সাকিব।
ভারত, ইংল্যান্ডের মতো দল না পারলেও নিজেদের শততম টেস্টে ঠিকই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ। তাও আবার বিদেশের মাটিতে। এর আগে নিজেদের শততম টেস্টে জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মুশফিকের নেতৃত্বে টেস্টে বাংলাদেশ পেল ষষ্ঠ জয়। টানা ছয় ম্যাচ জয়ের পর দেশের মাটিতে হারের স্বাদ পেল শ্রীলংকা।


No comments:

Post a Comment