( اهل السنة والجماعة و مقابلها الفرق الباطلة وعقيدتها الفاسدة )
প্রেক্ষিত : উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ ও ভ্রান্ত আক্বিদাসমূহ :
প্রসঙ্গ কথা :
ঈমান হচ্ছে ইসলামের মূলভিত্তি । ঈমানের বহু
শাখা প্রশাখা রয়েছে । তন্মধ্যে তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত- এই তিনটি ঈমানের মৌলিক
শাখা । ঈমানের অন্যান্য শাখাগুলো এই তিনটি মৌল শাখা হতে উৎসারিত । উল্লেখ্য যে, তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত এই তিনটি হচ্ছে আকাইদ
শাস্ত্রের মূল বিষয়বস্তু ।
আক্বাঈদ শাস্ত্রের উদ্দেশ্য :
আকাঈদ শাস্ত্রের উদ্দেশ্য হলো- ঈমান দূরস্ত
করা । ঈমান সংক্রান্ত প্রত্যেকটি বিষয়কে কুরআন-সূন্নাহ, সালফে সালেহীনের ব্যাখ্যা , দার্শনিক বিচার বিশ্লেষণ ও যুক্তিতর্কের
ভিত্তিতে দৃঢ় এবং মজবুতরূপে প্রতিষ্ঠিত করা । ইহা হতে যাবতীয় ভ্রান্তি, সন্দেহ এবং জটিলতা দূর করত: মুমিনের হৃদয়ে
স্বচ্ছ-পরিষ্কার ধারণা ও বিশ্বাস সৃষ্টি করা ।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের পরিচিতি :
আহলুস সুন্নাহর আভিধানিক অর্থ – সুন্নাহপন্থী । অর্থাৎ- রাসুলে কারীম ( সা: )
এবং সাহাবীগণের পদাংক অনুসারীগণই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত নামে পরিচিত । যাদের
ধর্মীয় বিশ্বাস, কর্ম এবং
যাবতীয় আচার অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু নাবী কারীম ( সা: ) এর বিশুদ্ধ সুন্নাহ এবং
সাহাবায়ে কিরামের বিশুদ্ধ পবিত্র আচরণ । এ পর্যায়ে নিম্নোক্ত আয়াতে কারীমা ও
হাদীসকে ভিত্তি করে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা যায় ।
قال الله سبحانه وتعا لى :
• وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ –
অনুবাদ : ( আর হে নবী বলে দিন ! ) নিশ্চয়ই আমার প্রদর্শিত পথই হচ্ছে সরল সঠিক পথ ; অতএব তোমরা সেই পথেরই অনুসরণ করো , ( আমার প্রদর্শিত পথ ও মত পরিহার করে ) তোমরা অন্য পথের অনুসরণ করো না ; অন্যথায় তোমরা সরল সঠিক পথ থেকে
লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে যাবে । ( সূরাহ আনআম-আয়াত =১৫৩ )
قال الله سبحانه وتعا لى :
• وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ –
অনুবাদ : ( আর হে নবী বলে দিন ! ) নিশ্চয়ই আমার প্রদর্শিত পথই হচ্ছে সরল সঠিক পথ ; অতএব তোমরা সেই পথেরই অনুসরণ করো , ( আমার প্রদর্শিত পথ ও মত পরিহার করে ) তোমরা অন্য পথের অনুসরণ করো না ; অন্যথায় তোমরা সরল সঠিক পথ থেকে
লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে যাবে । ( সূরাহ আনআম-আয়াত =১৫৩ )
এ পযায়ে একটি হাদীস বর্ণিত হচ্ছে :
عن عبد الله بن عمر ( رض ) قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم
: " وان بنى اسرائيل تفرقت على ثنتين و سبعين ملة ، وتفترق امتى على ثلاث و
سبعين ملة، كلهم فى النار الا واحدة ، قالوا : من هى يا رسول الله ( ص ) قال ما
انا عليه واصحابى _ ( رواه الترمذى – رقم الحديث= )2641
(
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ( রা: ) হতে
বর্ণিত- তিনি বলেন: রাসূল ( সা : ) বলেছেন : নিশ্চয়ই বনি ইসরাঈল সম্প্রদায়
বায়াত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে কিন্তু আমার উম্মাত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে । একটি দল
ছাড়া সব দলই জাহান্নামে প্রবেশ করবে ।
সাহাবাগণ আরজ করলেন – হে আল্লাহর রাসূল ! “ ফেরক্বায়ে নাজিয়াহ্” তথা মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোনটি ? উত্তরে রাসূল ( সা: ) বল্লেন : আমি এবং আমার সাহাবায়ে কিরামের যারা অনুসরণ করবে, তারাই হলো মুক্তিপ্রাপ্ত দল । ( তিরমিজী = হাদীস নং- ২৬৪১ )
সাহাবাগণ আরজ করলেন – হে আল্লাহর রাসূল ! “ ফেরক্বায়ে নাজিয়াহ্” তথা মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোনটি ? উত্তরে রাসূল ( সা: ) বল্লেন : আমি এবং আমার সাহাবায়ে কিরামের যারা অনুসরণ করবে, তারাই হলো মুক্তিপ্রাপ্ত দল । ( তিরমিজী = হাদীস নং- ২৬৪১ )
আলোচ্চ আয়াতে কারিমা ও হাদীস দ্বারা
প্রতীয়মান হলো যে, একমাত্র রাসূল
( সা: ) ও তাঁর সাহাবায়ে কিরামের অনুসারীবৃন্দই হলো মুক্তিপ্রাপ্ত দল । এরাই মূলত:
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত নামে পরিচিত । এছড়া বাকি সব দল فرقة ضلالة " ” তথা ভ্রান্ত দল ।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের উদ্ভব ও
ক্রমবিকাশ :
পবিত্র ক্বুরআন মাজিদ ও হাদীসে ইসলামের
আক্বিদা-বিশ্বাস সংক্রান্ত বিষয়গুলো যুক্তিপ্রমান সহকারেই আলোচিত হয়েছে । সাহাবায়ে
কিরামের ঈমান ছিল ইস্পাত কঠিন দৃঢ় । তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত সম্পর্কে তাঁদের বিশ্বাস
ছিল নজির বিহীন মজবুত । এ বিষয়ে তাদের মনে কোন প্রকার সংসয় স্থান পায়নি । কোন
বিষয় বুঝে উঠতে সামান্যতম অসুবিধা দেখা দিলেই তাঁরা তা নবী কারীম ( সা: ) এর নিকট
পেশ করতেন এবং রাসূল ( সা: ) তার ফায়সালা দিতেন । সুতরাং ঈমান-আক্বিদার ব্যাপারে
কোন জটিলতার সৃষ্টি হতো না । এ বিষয় নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ, দার্শনিক ব্যাখ্যা ও যুক্তি তর্কের কোন
প্রয়োজন অনুভূত হতো না ।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ইসলাম যতদিন আরব জাহানে সীমাবদ্ধ ছিল এবং মুসলমানগণ যতদিন কোন অনারব জাতির সংস্পর্শে আসেনি, ততদিন পর্যন্ত ঈমান- আক্বিদার এই বিশুদ্ধতা অক্ষুন্ন ছিল । অত:পর যখন ইসলাম আরব জাহানের গন্ডির সীমানা পেরিয়ে অনারব ভুমিতে প্রবেশ করলো এবং মুসলমানগণ বিশ্বের অন্যান্য জাতির চিন্তাধারা, ধ্যান-ধারণা, ধর্মীয় বিশ্বাস, শিক্ষা সংস্কৃতির সংস্পর্শে এলো, তখন হতেই মুসলমানদের মাঝে ঈমান-আক্বিদার মধ্যে নানা প্রকার ভ্রান্ত ধারনার জন্ম হতে লাগলো ।
আব্বাসীয় খেলাফতকালে রাষ্টীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বের বিভিন্ন জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞান সংক্রান্ত বই-পুস্তক বিশেষ করে গ্রীক ও পারস্য দর্শনের গ্রন্থরাজি আরবী ভাষায় অনুদিত হয় । ফলে মুসলমানগণ এই সমস্ত বিজাতীয় দর্শন সন্বন্ধে জ্ঞান লাভের সুযোগ পায় । এ সকল দর্শন অধ্যয়ন করে তারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়ে । এমনকি তাদের একশ্রেণীর লোক জীবনের যাবতীয় কাজ কর্মকেই দার্শনিক যুক্তি প্রমানের মাপকাঠিতে বিচার বিশ্লেষণ করতে আরম্ভ করে । ফলে মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে নানা রকম জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয় । তদুপরি আব্বাসীয় খলিফাগণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল জনসাধারণকে দর্শন ও ধর্মতত্ত সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ের উপর মুক্ত আলোচনা করার সুযোগ দান করেন । এই সুযোগে তারা অত্যন্ত চতুরতার সাথে নানা ধরণের ভ্রান্ত আক্বিদার বীজ বপন করে । তারা যে কোন বিষয়ের সমাধান ক্বুরআন-সুন্নাহ থেকে গ্রহণ না করে মস্তিষ্ক প্রসূত জ্ঞান ও যুক্তি প্রমানের মাপকাঠিতে বিচার বিশ্লেষণ করতে লাগলো । ফলে তারা সরল সঠিক পথ ( সীরাতুল মুস্তাক্বীম ) থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গেল । তাদের নিজস্ব মনগড়া চিন্তাধারার ভিত্তিতে বিভিন্ন ফেরক্বাহ বা দলের উদ্ভব হতে লাগলো । ভ্রান্ত আক্বিদায় প্রভাবিত হয়ে মানুষ পথভ্রান্ত হতে লাগলো ।
মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদার হেফাজতের স্বার্থে হক্বানী ওললামায়ে কিরাম ক্বুরআন-সুন্নাহ ও অকাট্য যুক্তি প্রমানের আলোকে “ইলমে কালাম ” নামক স্বতন্ত্র একটি শাস্ত্র রচনা করতে ব্রতী হন । ওলামায়ে কিরাম “কালাম শাস্ত্র ” রচনা করত: বাতিল পন্থীদের দাতভাঙ্গা জবাব প্রদান করেন ।
ইলমুল কালামের উন্নতি ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে পরবর্তি যুগে ইমাম গাজ্জালী , ইমাম রাজি, দার্শনিক রূমী, ইমাম আশআরী, ইমাম মাতরুদী প্রমূখ বিশ্ববরেন্য জ্ঞানতাপসগণ ক্বুরআন-সুন্নাহ, দর্শন ও বিজ্ঞানভিত্তিক এবং বিবেক সম্মত যুক্তিপ্রমান দ্বারা ইসলামী আক্বাঈদ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর যথার্ততা প্রমান করেন । তারা ভ্রান্ত মতবাদসমূহ খন্ডন করত: আক্বঈদ শাস্ত্রকে দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন । তাঁদের অক্লান্ত চেষ্টা ও সাধনার ফলেই ইলমুল কালাম একটি সমপূর্ণ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং সর্বসাধারণের নিকট তা গ্রহণযোগ্য হয় ।তারা বহুসংখ্যক গ্রন্থ রচনা করত: ইলমুল কালামকে জনপ্রিয় করে তোলেন ।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ইসলাম যতদিন আরব জাহানে সীমাবদ্ধ ছিল এবং মুসলমানগণ যতদিন কোন অনারব জাতির সংস্পর্শে আসেনি, ততদিন পর্যন্ত ঈমান- আক্বিদার এই বিশুদ্ধতা অক্ষুন্ন ছিল । অত:পর যখন ইসলাম আরব জাহানের গন্ডির সীমানা পেরিয়ে অনারব ভুমিতে প্রবেশ করলো এবং মুসলমানগণ বিশ্বের অন্যান্য জাতির চিন্তাধারা, ধ্যান-ধারণা, ধর্মীয় বিশ্বাস, শিক্ষা সংস্কৃতির সংস্পর্শে এলো, তখন হতেই মুসলমানদের মাঝে ঈমান-আক্বিদার মধ্যে নানা প্রকার ভ্রান্ত ধারনার জন্ম হতে লাগলো ।
আব্বাসীয় খেলাফতকালে রাষ্টীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বের বিভিন্ন জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞান সংক্রান্ত বই-পুস্তক বিশেষ করে গ্রীক ও পারস্য দর্শনের গ্রন্থরাজি আরবী ভাষায় অনুদিত হয় । ফলে মুসলমানগণ এই সমস্ত বিজাতীয় দর্শন সন্বন্ধে জ্ঞান লাভের সুযোগ পায় । এ সকল দর্শন অধ্যয়ন করে তারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়ে । এমনকি তাদের একশ্রেণীর লোক জীবনের যাবতীয় কাজ কর্মকেই দার্শনিক যুক্তি প্রমানের মাপকাঠিতে বিচার বিশ্লেষণ করতে আরম্ভ করে । ফলে মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে নানা রকম জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয় । তদুপরি আব্বাসীয় খলিফাগণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল জনসাধারণকে দর্শন ও ধর্মতত্ত সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ের উপর মুক্ত আলোচনা করার সুযোগ দান করেন । এই সুযোগে তারা অত্যন্ত চতুরতার সাথে নানা ধরণের ভ্রান্ত আক্বিদার বীজ বপন করে । তারা যে কোন বিষয়ের সমাধান ক্বুরআন-সুন্নাহ থেকে গ্রহণ না করে মস্তিষ্ক প্রসূত জ্ঞান ও যুক্তি প্রমানের মাপকাঠিতে বিচার বিশ্লেষণ করতে লাগলো । ফলে তারা সরল সঠিক পথ ( সীরাতুল মুস্তাক্বীম ) থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গেল । তাদের নিজস্ব মনগড়া চিন্তাধারার ভিত্তিতে বিভিন্ন ফেরক্বাহ বা দলের উদ্ভব হতে লাগলো । ভ্রান্ত আক্বিদায় প্রভাবিত হয়ে মানুষ পথভ্রান্ত হতে লাগলো ।
মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদার হেফাজতের স্বার্থে হক্বানী ওললামায়ে কিরাম ক্বুরআন-সুন্নাহ ও অকাট্য যুক্তি প্রমানের আলোকে “ইলমে কালাম ” নামক স্বতন্ত্র একটি শাস্ত্র রচনা করতে ব্রতী হন । ওলামায়ে কিরাম “কালাম শাস্ত্র ” রচনা করত: বাতিল পন্থীদের দাতভাঙ্গা জবাব প্রদান করেন ।
ইলমুল কালামের উন্নতি ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে পরবর্তি যুগে ইমাম গাজ্জালী , ইমাম রাজি, দার্শনিক রূমী, ইমাম আশআরী, ইমাম মাতরুদী প্রমূখ বিশ্ববরেন্য জ্ঞানতাপসগণ ক্বুরআন-সুন্নাহ, দর্শন ও বিজ্ঞানভিত্তিক এবং বিবেক সম্মত যুক্তিপ্রমান দ্বারা ইসলামী আক্বাঈদ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর যথার্ততা প্রমান করেন । তারা ভ্রান্ত মতবাদসমূহ খন্ডন করত: আক্বঈদ শাস্ত্রকে দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন । তাঁদের অক্লান্ত চেষ্টা ও সাধনার ফলেই ইলমুল কালাম একটি সমপূর্ণ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং সর্বসাধারণের নিকট তা গ্রহণযোগ্য হয় ।তারা বহুসংখ্যক গ্রন্থ রচনা করত: ইলমুল কালামকে জনপ্রিয় করে তোলেন ।
বিভিন্ন ফিরক্বাহ্ বা সম্প্রদায়ের আবির্ভাব :
বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ( সা: ) এর
তিরোধানের কয়েক শতাব্দীর মধ্যে ইসলামে যে সব সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে , তন্মধ্যে খারিজী,শিয়া, মু’তাযিলা, মুরজিয়া, জাবরিয়া, ক্বাদরিয়া, আশায়েরা, জুহুমিয়া, বারাহিমা সম্প্রদায় অন্যতম । নিম্নে এসব
সম্প্রদায়ের উদ্ভব, বিকাশ ও মতবাদ
সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে ।
০১. খারেজী সম্প্রদায়
নামকরণ :
খারিজী শব্দটির অর্থ দলত্যাগকারী । নির্ভেজাল তাওহীদের অনুসারী উম্মাতে মুসলিমার দল ত্যাগ করায় খারিজীগণ উক্ত নামে অভিহিত হয় ।
খারিজী শব্দটির অর্থ দলত্যাগকারী । নির্ভেজাল তাওহীদের অনুসারী উম্মাতে মুসলিমার দল ত্যাগ করায় খারিজীগণ উক্ত নামে অভিহিত হয় ।
খারিজী সম্প্রদায়ের উৎপত্তি :
প্রথমদিকে এই দলটি ছিল আলী ( রা: ) এর সমর্থক
দল । ৬৫৭ খৃ: সিফফিন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে আলী ( রা: ) এর পক্ষে আবু
মুসা আশআরী ( রা: ) এবং মুয়াবিয়ার পক্ষে আমর উবনুল আস ( রা: ) শালিশদার নিযুক্ত হন
। আমর ইবনুল আস ( রা: ) এর চক্রান্তে মুয়াবিয়ার অনুকুলে এবং আলী ( রা: ) এর
প্রতিকুলে যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় । শান্তিকামী খলিফা আলী ( রা: ) এই
মিমাংসা মেনে নেন । এতে আলী ( রা: ) পক্ষে বার হাজার মুজাহিদ ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর দল
হতে বের হয়ে যায় । ইসলামের ইতিহাসে এরাই খারিজী বা দলত্যাগকারী সম্প্রদায় বলে
পরিচিত ।
খারিজী সম্প্রদায়ের মতবাদ :
এ দলটি একটি চরমপন্থী দল । এরা বিভিন্ন
ব্যাপারে চরমপন্থা মতবাদ প্রচার করেন ।
তারা বলেন- ঈমানের দুটো রুকন । একটি হলো অন্তরে বিশ্বাস আর অপরটি হলো আমল । অতএব অন্তরে বিশ্বাস থাকা সত্তেও কেউ যদি ফরজ আমল পরিত্যাগ করে , তবে সে আর মুমিন থাকে না, কাফির হয়ে যায় । আবার অন্তরে বিশ্বাস রেখেও কেউ যদি কাবীরাহ গুনাহ করে , সেও মুমিন থাকে না,কাফির হয়ে যায় । তারা আরও বলেন- জালিম ইমাম বা শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা প্রত্যেক মুমিনের উপর ওয়াজিব । সুতরাং কোন জালিম শাসককে সমর্থনকারীও মুমিন থাকতে পারে না, কাফির হয়ে যায় । অতএব মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধের ফতোয়া দেওয়ার জন্য তারা আবু মুসা আশআরী ( রা: ) এবং আমর ইবনু আস ( রা: ) কে কাফির বলে ঘোষণা করে । আর এই অবৈধ মিমাংসা মেনে নেওয়ার জন্য তারা আলী ( রা: ) এবং তাঁর সমর্থনকারী সকলকেই কাফির বলে ফতোয়া দিয়ে বসে ।
চরমপন্থী খারিজীরা কোন ফরজ আমল পরিত্যাগ অথবা কোন কাবীরাহ গুনাহকারীকে শুধু কাফির বলেই ক্ষান্ত হননি বরং তাদেরকে হত্যা করাও মুমিনদের জন্য ওয়াজিব কাজ বলে ঘোষণা করেন ।
তারা বলেন- ঈমানের দুটো রুকন । একটি হলো অন্তরে বিশ্বাস আর অপরটি হলো আমল । অতএব অন্তরে বিশ্বাস থাকা সত্তেও কেউ যদি ফরজ আমল পরিত্যাগ করে , তবে সে আর মুমিন থাকে না, কাফির হয়ে যায় । আবার অন্তরে বিশ্বাস রেখেও কেউ যদি কাবীরাহ গুনাহ করে , সেও মুমিন থাকে না,কাফির হয়ে যায় । তারা আরও বলেন- জালিম ইমাম বা শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা প্রত্যেক মুমিনের উপর ওয়াজিব । সুতরাং কোন জালিম শাসককে সমর্থনকারীও মুমিন থাকতে পারে না, কাফির হয়ে যায় । অতএব মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধের ফতোয়া দেওয়ার জন্য তারা আবু মুসা আশআরী ( রা: ) এবং আমর ইবনু আস ( রা: ) কে কাফির বলে ঘোষণা করে । আর এই অবৈধ মিমাংসা মেনে নেওয়ার জন্য তারা আলী ( রা: ) এবং তাঁর সমর্থনকারী সকলকেই কাফির বলে ফতোয়া দিয়ে বসে ।
চরমপন্থী খারিজীরা কোন ফরজ আমল পরিত্যাগ অথবা কোন কাবীরাহ গুনাহকারীকে শুধু কাফির বলেই ক্ষান্ত হননি বরং তাদেরকে হত্যা করাও মুমিনদের জন্য ওয়াজিব কাজ বলে ঘোষণা করেন ।
খারিজী সমপ্রদায়ের উথ্থান পতনের ইতিহাস :
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, খারিজী একটি উগ্রপন্থী সম্প্রদায়ের নাম ।
খারিজীরা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে আলী ( রা: ) এর বিরুদ্ধে প্রচারনা চালাতে
লাগলো এবং জনসাধারণকে তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ কতে লাগলো ।
তারা লুটতারাজসহ বিভিন্ন প্রকার নাশকতামূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে রাষ্ট্রে
বিশৃংখলা সৃষ্টির পায়তারা চালাতে লাগলো । তাদেরকে দমন করার মানসে আলী ( রা: )
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করলেন এবং নাহরাওয়ানের যুদ্ধে খারিজীদের নেতা
আব্দুল্লাহ ইবনু ওয়াহাবসহ বহুসংখ্যক খারিজী নিহত হলো । এতে খারিজীরা অতিশয়
ক্রধান্বিত হয়ে আলী ( রা: ) , মুয়াবিয়া ও তাঁর উপদেষ্টা সিরিয়ার শাসনকর্তা আমরকে ইসলামের শত্রু হিসেবে
চিহ্নিত করত: তিনজনকেই হত্যা করার জন্য বদ্ধপরিকর হলো । মুয়াবিয়া ও আমর কোন রকমে
বেঁচে গেলেও আলী ( রা: ) আততায়ী আব্দুর রহমান ইবনু মুলজিমের হস্তে নিহত হন । আলী (
রা: ) এর মৃত্যুর পর খারিজীরা উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলো ।
উমাইয়ারা তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করেন । এরপর তারা নিরস্ত্র না হয়ে আব্বাসীয়দের
সহিত যোগদান করে উমাইয়াদের পতন ঘটানোর জন্য তৎপর হয়ে ওঠে । আব্বাসীয়রা খেলাফত
প্রাপ্ত হলে খারিজীরা তাদের বিরুদ্ধে বিরোধিতা শুরু করে দিল এবং মেসোপটোমিয়া , পূর্ব আরব ও উত্তর আফ্রিকার উপকুল ভাগে
অশান্তি সৃষ্টি করতে লাগলো । অবশেষে মিশরের ফাতেমীয় শাসকগণ খারেজীদের শক্তি সমূলে
ধ্বংস করে । পরিশেষে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে খারিজীগণ
উগ্ররাজনৈতিক মতবাদ পরিত্যাগ করে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে অবস্থান নেয় ।
০২. শিয়া সম্প্রদায় :
নামকরণ ও পরিচিতি :
শিয়া অর্থ – অনুসারী বা দল । এটা “শিয়াতু আলী ” কথাটির সংক্ষিপ্ত রূপ । “শিয়াতু আলী ” অর্থ –আলীর দল । । হযরত আলী ( রা: ) এবং তার
বংশধরদের সমর্থনকারী দলটিই এই নামে অভিহিত ।
উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ :
খিলাফাত ও ইমামাতকে কেন্দ্র করে শিয়া
সম্প্রদায়ের আবির্ভাব । খিলাফত প্রশ্নে শিয়াগণ হযরত আলী ( রা: ) কে সকল খলিফার
উর্ধ্বে প্রাধান্য দিত । নবী কারীম ( সা: ) এর মৃত্যুর পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক (
রা: ) এর ইসলামের প্রথম খলিফা নির্বাচিত হলে শিয়াগণ এতে অসন্তুষ্ট হয় । তাদের
মতবাদ হলো হযরত আলী ( রা: ) নবীর জামাতা এবং রাসূল ( সা: ) এর ঘরেই তিনি লালিত
পালিত হন । সুতরাং তিনিই খেলাফতের প্রকৃত হকদার । তারা তাদের মতকে প্রতিষ্ঠিত করার
লক্ষ্যে আবুবকর ও উমার ( রা: ) এর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ পেশ করে । তাদের মতে রাসূল
( সা: ) নাকি মৃত্যু শয্যায় শয়নকালে আবুবকর ও উমার ( রা: ) কে আহবান করে একখানা
অসিয়াতনামা লিখতে বলেন । যে অসিয়াতনামায় নাকি আলী ( রা: ) কে খিলাফত প্রদানের
নির্দেশ ছিল । কিন্তু আবুবকর ও উমার ( রা; ) নাকি সেই অসিয়াতনামা গোপন করত: কৌশলে
খিলাফতের পদ গ্রহণ করেন । এজন্য শিয়াগণ আবুবকর ও উমার ( রা: ) কে বিশ্বাস ঘাতক এবং
কাফির হিসেবে ফতোয়া প্রদান করে । আবুবকর সিদ্দিক ( রা: ) এর মৃত্যুর পর উমার ( রা; ) খলিফা নির্বাচিত হলে শিয়ারা আর ও ক্ষুব্ধ হয়
। উমার ( রা: ) এর মৃত্যুর পর ওসমান ( রা: ) খলিফা নির্বাচিত হলে শিয়াদের অস্তুষ্টি
চরমে পৌছে । কাজেই বলতে গেলে খোলাফায়ে রাশেদীনের সময় হতে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব
হতে থাকে । ওসমানের শাসনামলে আব্দুল্লাহ ইবনু সাবা আলী (রা:)এর পক্ষে জনমত সৃষ্টি
করে । সে প্রকাশ্যে ওসমানের বিরূদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও অন্যায় অবিচারের অভিযোগ আনয়ন
করে । তাঁরই প্ররোরচনায় ওসমান ( রা: ) ঘাতকের হাতে নিহত হন । ইবনু সাবার গঠিত দলই
আলী (রা: ) কে খিলাফত পদে অধিষ্ঠিত করে ।
শিয়াদের ধর্মীয় মতবাদ :
শিয়াদের মতে- নবী কারীম ( সা: ) এর
ইন্তেকালের পর খিলাফত লাভের ব্যাপারে সবচেয়ে যোগ্যতম ব্যক্তি হলেন হযরত আলী ( রা:
) এবং তাঁর বংশধরগণ । কেননা রক্তের সম্পর্কের দিক দিয়ে হযরত আলী ( রা: ) হলেন নবী
কারীম ( সা; ) এর নিকটতম আত্মীয় । তিনি রাসূল ( সা: ) এর চাচাতো ভাই ও জামাতা । রাসূল ( সা:
) এর গৃহেই তিনি লালিত পালিত হন । কনিষ্ঠদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ
করেন । জ্ঞান-বুদ্ধি ও শৌর্যবীর্যে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ । সুতরাং- তাদের মতে একমাত্র
আলীই রাসূল ( সা: ) এর ন্যায়সঙ্গত উত্তরাধিকারী এবং খিলাফত তাঁরই প্রাপ্য ।
শুধুমাত্র তারই বংশধরদের মধ্য হতে হবে ইমাম, অন্য কোন বংশের লোক ইমাম হতে পারবে না । ইহাই
হলো শিয়া মতবাদের সর্বপ্রধান মূলনীতি এবং কেন্দ্রবিন্দু ।
শিয়াগণ বলেন : আবুবকর , ওমর ও ওসমান ( রা; ) হযরত আলী ( রা: ) কে তাঁর ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করত: খলিফা পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন । অত:পর উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলিফাগণও অবৈধভাবে আলী ( রা: ) এর বংশধরদের খিলাফত হতে বঞ্চিত করে বলপূর্বক সিংহাসন দখল করে রাখেন । আলী ( রা: ) এর প্রতি শিয়া সম্প্রদায়ের এত বেশি শ্রদ্ধা ছিল যে, কালিমা তাইয়েবা – لا اله الاالله محمد رسول الله এর সহিত “ আলিউন নাবিউল্লাহ ” কথাটি সংযোজিত করে থাকে ।
শিয়ারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী । তারা মুহাম্মাদ ( সা: ) কে আল্লাহর নবী হিসেবে বিশ্বাস করে । পবিত্র কুরআনের প্রতি তাদের বিশ্বাস রয়েছে ।কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, উগ্রপন্থী শিয়াদের একটি গ্রুপ একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলে যে, “ আল্লাহর বাণী প্রকৃতপক্ষে হযরত আলীর উপরই অবতীর্ণ হয়, কিন্তু জিব্রাঈল নাকি ভুল করে মুহাম্মাদ ( সা: ) এর উপর অবতীর্ণ করেন । এজন্য তারা জিব্রাঈলকে বিশ্বাস ঘাতক হিসেবে ফতোয়া দিয়ে থাকে ।
শিয়াদের মতানুসারে যিনি ইমাম হবেন তিনি আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নূরপ্রাপ্ত এবং আধ্যাত্মিক শক্তিতে শক্তিমান । তিনি রাসূল ( সা: ) হতে সরাসরি সেই নূর ও আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করেছেন । তাদের মতে- হযরত আলী ( রা: ) যেহেতু মুসলিম বিশ্বের ইমাম, তাই তিনি সরাসরি রাসূল ( সা: ) এর নিকট থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে এই নূর প্রাপ্ত হন । তারপর হযরত আলী ( রা: ) এর বংশধরগণ বংশ পরম্পরায় এই নূর লাভ করে এসেছেন । তাদের মতে এই ওহী আলোকপ্রাপ্ত ইমামগণ সকলেই নিষ্পাপ, অভ্রান্ত এবং যাবতীয় দোষত্রুটি হতে মুক্ত এবং পবিত্র । তারাই একমাত্র ইমাম হওয়ার যোগ্য , আর কেউ নয় ।
শিয়াগণ বিশ্বাস করে যে, হযরত আলী ( রা: ) এর বংশধরগণই পুরুষানুক্রমে পরপর ইমাম হবেন এবং এই বংশের সর্বশেষ ইমাম লোকচক্ষুর অন্তরালে আত্মগোপন করে রয়েছেন । তিনি জীবিতই আছেন । পৃথিবী যখন পাপাচারে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে, তখন সেই লুকায়িত ইমাম লোকসমাজে মাহদি রূপে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করবেন এবং পাপ নিমজ্জিত মানুষকে হেদায়েত দান করবেন । তবে এই আত্মগোপনকারী ইমাম কোন ব্যক্তি, এ বিষয়ে শিয়াদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে । এ পর্যায়ে তারা দু দলে বিভক্ত হয়েছে । এই দুই দলটি “ইছনা আশারিয়া ” এবং “সাবঈয়া ” নামে পরিচিত । আরবীতে “ ইছনা আশারিয়া ” কথাটির অর্থ হলো বার
। অতএব শিয়া সম্প্রদায়ের যে দলটি বারজন ইমামকে শ্বিাস করে, তারাই ইছনা আশারিয়া
নামে অভিহিত । আবার আরবী “সাবউন ” শব্দের অর্থ সাত । শিয়াদের মধ্যে যারা সাত ইমামে বিশ্বাসী, তারাই সাবঈয়া নামে পরিচিত ।
শিয়াগণ বলেন : আবুবকর , ওমর ও ওসমান ( রা; ) হযরত আলী ( রা: ) কে তাঁর ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করত: খলিফা পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন । অত:পর উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলিফাগণও অবৈধভাবে আলী ( রা: ) এর বংশধরদের খিলাফত হতে বঞ্চিত করে বলপূর্বক সিংহাসন দখল করে রাখেন । আলী ( রা: ) এর প্রতি শিয়া সম্প্রদায়ের এত বেশি শ্রদ্ধা ছিল যে, কালিমা তাইয়েবা – لا اله الاالله محمد رسول الله এর সহিত “ আলিউন নাবিউল্লাহ ” কথাটি সংযোজিত করে থাকে ।
শিয়ারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী । তারা মুহাম্মাদ ( সা: ) কে আল্লাহর নবী হিসেবে বিশ্বাস করে । পবিত্র কুরআনের প্রতি তাদের বিশ্বাস রয়েছে ।কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, উগ্রপন্থী শিয়াদের একটি গ্রুপ একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলে যে, “ আল্লাহর বাণী প্রকৃতপক্ষে হযরত আলীর উপরই অবতীর্ণ হয়, কিন্তু জিব্রাঈল নাকি ভুল করে মুহাম্মাদ ( সা: ) এর উপর অবতীর্ণ করেন । এজন্য তারা জিব্রাঈলকে বিশ্বাস ঘাতক হিসেবে ফতোয়া দিয়ে থাকে ।
শিয়াদের মতানুসারে যিনি ইমাম হবেন তিনি আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নূরপ্রাপ্ত এবং আধ্যাত্মিক শক্তিতে শক্তিমান । তিনি রাসূল ( সা: ) হতে সরাসরি সেই নূর ও আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করেছেন । তাদের মতে- হযরত আলী ( রা: ) যেহেতু মুসলিম বিশ্বের ইমাম, তাই তিনি সরাসরি রাসূল ( সা: ) এর নিকট থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে এই নূর প্রাপ্ত হন । তারপর হযরত আলী ( রা: ) এর বংশধরগণ বংশ পরম্পরায় এই নূর লাভ করে এসেছেন । তাদের মতে এই ওহী আলোকপ্রাপ্ত ইমামগণ সকলেই নিষ্পাপ, অভ্রান্ত এবং যাবতীয় দোষত্রুটি হতে মুক্ত এবং পবিত্র । তারাই একমাত্র ইমাম হওয়ার যোগ্য , আর কেউ নয় ।
শিয়াগণ বিশ্বাস করে যে, হযরত আলী ( রা: ) এর বংশধরগণই পুরুষানুক্রমে পরপর ইমাম হবেন এবং এই বংশের সর্বশেষ ইমাম লোকচক্ষুর অন্তরালে আত্মগোপন করে রয়েছেন । তিনি জীবিতই আছেন । পৃথিবী যখন পাপাচারে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে, তখন সেই লুকায়িত ইমাম লোকসমাজে মাহদি রূপে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করবেন এবং পাপ নিমজ্জিত মানুষকে হেদায়েত দান করবেন । তবে এই আত্মগোপনকারী ইমাম কোন ব্যক্তি, এ বিষয়ে শিয়াদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে । এ পর্যায়ে তারা দু দলে বিভক্ত হয়েছে । এই দুই দলটি “ইছনা আশারিয়া ” এবং “সাবঈয়া ” নামে পরিচিত । আরবীতে “ ইছনা আশারিয়া ” কথাটির অর্থ হলো বার
। অতএব শিয়া সম্প্রদায়ের যে দলটি বারজন ইমামকে শ্বিাস করে, তারাই ইছনা আশারিয়া
নামে অভিহিত । আবার আরবী “সাবউন ” শব্দের অর্থ সাত । শিয়াদের মধ্যে যারা সাত ইমামে বিশ্বাসী, তারাই সাবঈয়া নামে পরিচিত ।
ইছনা আশারিয়াদের মতে বারজন ইমামের তালিকা
নিম্নে প্রদত্ত হলো :
পুরুষানুক্রমিক অনুসারে ইছনা আশারিয়াদের মতে
বারজন ইমাম হলেন :
০১. হযরত আলী ( রা: ) ( মৃত ৬৬১ খৃ: ) ০২. হযরত হাসান ( রা: ) ( মৃত ৬৬৯ খৃ: )
০৩. হযরত হুসাইন ( রা: ) ( মৃত ৬৮০ খৃ : ) ০৪. জয়নুল আবেদীন ( মৃত ৭১২ খৃ: )
০৫. মুহাম্মাদ আল বাকির ( মৃত ৭৩১ খৃ: ) ০৬. জাফর আসসাদিক ( মৃত ৭৬৫ খৃ: )
০৭. মুসা আল কাজিম ( মৃত ৭৯৯ খৃ: ) ০৮. আলী আল রিযা ( মৃত ৮১৮ খৃ: )
০৯. মুহাম্মাদ আলজাওয়াদ ( মৃত ৮৩৫ খৃ : ) ১০. আলী আলহাদী ( মৃত ৮৬৮ খৃ: )
১১. হাসান আলআশকারী ( মৃত ৮৭৪ খৃ: ) ১২. মুহাম্মাদ ইবনে হাসান আল মুনতাযার ।
উল্লেখ্য যে, হযরত আলী ( রা: ) বংশীয় এই বারজন, ইমামরূপে অভিষিক্ত । এদের সর্বশেষ বা দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু হাসান আত্মগোপন করে রয়েছেন । এ কারণেই তিনি “মুনতাজার ” বা প্রতিক্ষিত বলে আখ্যায়িত ।
০১. হযরত আলী ( রা: ) ( মৃত ৬৬১ খৃ: ) ০২. হযরত হাসান ( রা: ) ( মৃত ৬৬৯ খৃ: )
০৩. হযরত হুসাইন ( রা: ) ( মৃত ৬৮০ খৃ : ) ০৪. জয়নুল আবেদীন ( মৃত ৭১২ খৃ: )
০৫. মুহাম্মাদ আল বাকির ( মৃত ৭৩১ খৃ: ) ০৬. জাফর আসসাদিক ( মৃত ৭৬৫ খৃ: )
০৭. মুসা আল কাজিম ( মৃত ৭৯৯ খৃ: ) ০৮. আলী আল রিযা ( মৃত ৮১৮ খৃ: )
০৯. মুহাম্মাদ আলজাওয়াদ ( মৃত ৮৩৫ খৃ : ) ১০. আলী আলহাদী ( মৃত ৮৬৮ খৃ: )
১১. হাসান আলআশকারী ( মৃত ৮৭৪ খৃ: ) ১২. মুহাম্মাদ ইবনে হাসান আল মুনতাযার ।
উল্লেখ্য যে, হযরত আলী ( রা: ) বংশীয় এই বারজন, ইমামরূপে অভিষিক্ত । এদের সর্বশেষ বা দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু হাসান আত্মগোপন করে রয়েছেন । এ কারণেই তিনি “মুনতাজার ” বা প্রতিক্ষিত বলে আখ্যায়িত ।
সাবঈয়াদের মতে সাত ইমামের তালিকা :
সাবঈয়াদের মতে সাত ইমাম হলেন যথাক্রমে –
০১. হযরত আলী ( রা: ) ০২. ইমাম হাসান ( রা: ) ০৩. ইমাম হুসাইন ( রা: ) ০৪. জয়নুল আবেদীন ০৫. মুহাম্মাদ আল বাকির ০৬. জাফর আসসাদিক ০৭.ইসমাঈল ।
সাবঈয়াদের মতে এই সাতজন আলী বংশীয় ইমাম বলে স্বীকৃত । তাদের মতে – সর্বশেষ বা সপ্তম ইমাম আত্মগোপন করে রয়েছেন । অতএব দেখা যাচ্ছে যে, সাবঈয়াগণও ইছনা আশারিয়াদের মত প্রথম ছয়জন ইমামকে স্বীকার করে । কিন্তু ইছনা আশারিয়াদের সপ্তম ইমাম মুসা আলকাজিমকে সাবঈয়াগণ সপ্তম বলে মানেন নি । তাদের মতে সপ্তম ইমাম হলেন মুসা আলকাজিমের ভ্রাতা ঈসমাইল । এ জন্য সাবঈয়াগণ ইসমাঈলিয়া নামে পরিচিত ।
০১. হযরত আলী ( রা: ) ০২. ইমাম হাসান ( রা: ) ০৩. ইমাম হুসাইন ( রা: ) ০৪. জয়নুল আবেদীন ০৫. মুহাম্মাদ আল বাকির ০৬. জাফর আসসাদিক ০৭.ইসমাঈল ।
সাবঈয়াদের মতে এই সাতজন আলী বংশীয় ইমাম বলে স্বীকৃত । তাদের মতে – সর্বশেষ বা সপ্তম ইমাম আত্মগোপন করে রয়েছেন । অতএব দেখা যাচ্ছে যে, সাবঈয়াগণও ইছনা আশারিয়াদের মত প্রথম ছয়জন ইমামকে স্বীকার করে । কিন্তু ইছনা আশারিয়াদের সপ্তম ইমাম মুসা আলকাজিমকে সাবঈয়াগণ সপ্তম বলে মানেন নি । তাদের মতে সপ্তম ইমাম হলেন মুসা আলকাজিমের ভ্রাতা ঈসমাইল । এ জন্য সাবঈয়াগণ ইসমাঈলিয়া নামে পরিচিত ।
০৩. “মু’তাযিলা সম্প্রদায় ”
নামকরণ, পরিচিতি ও আবির্ভাব :
উগ্রপন্থি খারিজীদের উগ্র মতবাদ এবং নম্রপন্থি মুরজিয়াদের নমনীয় মতবাদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে মু’তাযিলা সম্প্রদায়ের আবির্ভাব । এরা হলো স্বাধীন ও মুক্তবুদ্ধির সমর্থক । এরা যে কোন বিষয়কে যুক্তি ও মস্তিষ্কপ্রসূত জ্ঞানের আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে ।এই দলের প্রতিষ্ঠাতা হলেন – ইমাম হাসান আলবসরীর শিষ্য ওয়াসিল বিন আতা । মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে মু’তাযিলা সম্প্রদায় বুদ্ধিবাদী সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত । মু’তাযিলা সম্প্রদায়ের আবির্ভাব একটি ঘটনার সাথে জড়িত । ঘটনাটি নিম্নরূপ :
দামেস্কের জামে মসজিদের এক মজলিসে জনৈক
ব্যক্তি হযরত ইমাম হাসান আলবসরীকে প্রশ্ন করলেন যে, ক্বাবীরাহ গুনাহকারী ব্যক্তি মুমিন না কাফির ? উত্তরে ইমাম হাসান বললেন : ক্বাবীরাহ
গুনাহকারী ফাসিক মুমিন । উপস্থিত শিষ্যগণের মধ্য থেকে ওয়াসিল বিন আতার নিকট ইমাম
সাহেবের এই উত্তরটি যথার্থ মনে হলো না । তিনি দাঁড়িয়ে বল্লেন : “ক্বাবীরাহ গুণাহকারী মুমিনও নয় আবার কাফিরও
নয় , বরং উভয়
অবস্থার মধ্যস্থলে অবস্থিত ।”একথা বলে তিনি
মসজিদের এক কোণে গিয়ে নিজের এই মতবাদ বারবার ব্যাখ্যা করতে লাগলেন । ইমাম সাহেব
ওয়াছিল বিন আতার উপর বিরক্ত হয়ে বললেন- هو اعتزل عنا
( হুয়া ই’তাযালা আন্না ) অর্থাৎ- সে আমাদের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । ইমাম সাহেবের পবিত্র জবান নিসৃত এই “ই’তাযালা ” শব্দটি হতেই ওয়াছিল বিন আতা এবং তার সমর্থকগণ “মু’তাযিলা নামে পরিচিত হয় । তবে মু’তাযিলাগণ নিজেদেরকে ন্যায়পন্থি ও তাওহীদবাদী বলে দাবী করে থাকে ।
( হুয়া ই’তাযালা আন্না ) অর্থাৎ- সে আমাদের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । ইমাম সাহেবের পবিত্র জবান নিসৃত এই “ই’তাযালা ” শব্দটি হতেই ওয়াছিল বিন আতা এবং তার সমর্থকগণ “মু’তাযিলা নামে পরিচিত হয় । তবে মু’তাযিলাগণ নিজেদেরকে ন্যায়পন্থি ও তাওহীদবাদী বলে দাবী করে থাকে ।
মু’তাযিলাদের ক্রমবিকাশ :
ওয়াছিল বিন আতা স্বীয় মতবাদ প্রচার করতে থাকলে তার সমর্থকদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে । আমর বিন ওবায়েদ, আবুল হুযাইল আল আল্লাফ , ইব্রাহীম সাইয়্যার আননাজ্জাম প্রমূখ পন্ডিতবর্গ এই দলে যোগদান করেন । এই বিদগ্ধ মনীষীগণ মু’তাযিলা মতবাদকে যুক্তি-প্রমানের সহিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বহু সংখ্যক গ্রন্থ প্রনয়ন করেন । তদুপরি আব্বাসীয় খলিফাদের সক্রিয় সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে এই মতবাদটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । খলিফা আলমানসুরের পৃষ্ঠপোষকতায় মু’তাযিলা সম্প্রদায় অপ্রতাশিত অগ্রগতি লাভ করে । খলিফা আলমামুনের শাসনকাল ছিল মু’তাযিলাদের জন্য উৎকৃষ্ট সময় । তিনি খলিফা হারুন অর রশিদ কতৃর্ক মুক্ত আলোচনার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন এবং সকল যুক্তিনিষ্ঠ বিদ্যান ব্যক্তিবর্গকে দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব আলোচনায় অংশ গ্রহণ করার জন্য আহবান জানান । খলিফার আহবানে সাড়া দিয়ে মু’তাযিলা পন্ডিতবর্গ খলিফার রাজদরবারে তত্ত্বালোচনার অংশগ্রহণ করার সুযোগ লাভ করেন । এতে খলিফা মু’তাযিলাদের যুক্তি তর্কে চরমভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়েন । খলিফা মু’তাযিলাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করেন । তিনি ক্বাজীর পদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মু’তাযিলা মতালন্বীদের নিয়োগ করেন । এদের প্রচেষ্টায় মু’তাযিলা মতবাদের প্রসার ঘটে । সে যুগে মু’তাযিলা পন্ডিতগণ ভিন্ন মতালন্বিদের তর্কযুদ্ধে হারিয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন । খলিফা মামুন মু’তাযিলা মতবাদে এমনভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন যে, এই মতবাদ গ্রহণ করার জন্য তিনি বলপ্রয়োগ করতেও দ্বিধাবোধ করেননি । মু’তাযিলা মতবাদ গ্রহণ না করায় তিনি আহমাদ বিন হান্বলকে কারারুদ্ধ করেন ও তাঁর হাত ভেঙ্গে দেন । খলিফা মামুনের পর খলিফা আল মু’তাসিম ও খলিফা আল ওয়াসিক মু’তাযিলাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন । কিন্তু আব্বাসীয় খলিফা মুতাওয়াক্কিল মু’তাযিলাদের সকল প্রকার রাষ্টীয় পৃষ্ঠপোষকতা রহিত করেন । অপর খলিফা ক্বাদির বিল্লাহ মু’তাযিলাদের প্রতি কঠোরনীতি অবলন্বন করেন এবং তাদের নির্যাতন করতেও দ্বিধাবোধ করেননি ।
পরিশেষে তাতারী বংশদ্ভূত মোঙ্গলীয় কর্তৃক
বাগদাদ আক্রমন যুক্তিবাদী মু’তাযিলাদের ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয় । মোঙ্গলীয়গণ নির্বিচারে মুক্ত চিন্তাবীদদের
হত্যা করে এবং মু’তাযিলাদের
অনেক গবেষণাগার পুড়িয়ে দেয় । পরে বাগদাদে
দীর্ঘদিনের জন্য মুক্তচিন্তার পরিবেশ বিনষ্ট হয় । এভাবেই মুসলিম ইতিহাসে আবির্ভূত
বুদ্ধিবাদী মু’তাযিলা
সম্প্রদায়ের পতন ঘটে ।
মু’তাযিলা সমপ্রদায়ের মূলনীতি :
মু’তাযিলা মতবাদ সাধারনত: পাচঁটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত । এই মূলনীতিগুলো হচ্ছে যথাক্রমে :
০১. “তাওহীদ” বা একত্ববাদ । ০২. “আদল” বা ন্যায়পরায়নতা । ০৩. “ওয়াদ ও ওয়ায়ীদ” অর্থাৎ পুরষ্কারর ওয়াদা ও শাস্তির ভীতি । ০৪. “ আলমুনযিলাতু বাইনাল মুনযিলাতাইন ” অর্থাৎ দুই অবস্থার মধ্যবর্তি অবস্থা । তার মানে-বিশ্বাস ও আমল এ দুয়ের সমন্বয়ে ঈমান । ০৫. “ আল আমরু বিল মা’রুফ ওয়ান নাহয়ূ আনিল মুনকার ” অর্থাৎ- ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ ।
মু’তাযিলা সম্প্রদায়ের কতিপয় ভ্রান্তধারণা :
০১. আলকুরআন আল্লাহর সৃষ্টি :
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের মতে – আলকুরআন আল্লাহর কালাম । মহান আল্লাহ রাব্বুল
আলামিন যে গুণে গুণান্বিত, আল্লাহর
কালামও সেই গুণে গুণান্বিত । আল্লাহ তায়ালা যেমন অনাদি, অনন্ত, চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীব; আল্লাহর কালামও তেমনি চিরন্তন ও অবিনশ্বর ।
এর লয় নেই , ক্ষয় নেই ।
কিন্তু মু’তাযিলাগণ বলেন
–ক্বুরআন আল্রাহর সৃষ্টি । আল্লাহ পাকের
অন্যান্য সৃষ্টি যেমন নশ্বর ও ধ্বংশীল, তেমনি আলক্বুআনও নশ্বর বা ধ্বংশশীল ।
০২. কর্মের স্রষ্টা :
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের মতে – মানুষের কর্ম ভাল হোক আর মন্দ হোক সমস্ত
কর্মের স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা । মানুষকে আল্লাহ তায়ালা বিবেক-বুদ্ধিমত্তা ও
ইখতিয়ারী ক্ষমতা দিয়েছেন । সে কারণে মানুষ ভাল-মন্দ কর্ম করলে পুরষ্কৃত বা
তিরষ্কৃত হবে । এ জন্য বান্দাহ নিজেই দায়ী, আল্লাহ নন । কিন্তু মু’তাযিলাদের মতে ভাল কাজের স্রষ্টা আল্লাহ
তায়ালা আর মন্দ কাজের স্রষ্টা বান্দাহ নিজেই ।
০৩. ক্ববরের আযাব :
ক্ববরের আযাব প্রসঙ্গে অগণিত সহীহ হাদীস থাকা
সত্ত্বেও মু’তাযিলাগণ
ক্ববরের আযাবকে অস্বীকার করেছে ।
০৪. ক্ববরের সওয়াল- জওয়াব :
সহীহ হাদীস ও ইজমা দ্বারা একথা প্রমানিত যে, ক্ববরে মনকার ও নাকীরে প্রশ্নের সন্মুখীন হতে
হবে । কিন্তু মু’তাযিলা
সম্প্রদায় তা অস্বীকার করেছে ।
০৫. পাপ পূণ্যেন ওজন :
আল্লাহ তায়ালা মানুষের পাপ-পূণ্য পরিমাপ করার
জন্য কিয়ামতের দিবসে মিযান কায়েম করবেন । এ বিষয়ে অগণিত ক্বুরআনের আয়াত ও হাদীস
রয়েছে । কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, মু’তাযিলাগণ পাপ-পূণ্যের ওজন হওয়াকে সরাসরি
অস্বীকার করেছে ।
০৬. পুলসিরাত :
সহীহ হাদীসে ইরশাদ হয়েছে : “ পুলসিরাত জাহান্নামের পৃষ্ঠোপরি স্থাপিত হবে
। রাসূলগণের মধ্য থেকে আমিই সর্বপ্রথম আমার উম্মাতসহ তা অতিক্রম করবো । কিন্তু মু’তাযিলাগণ পুলসিরাতের কথা অস্বীকার করেছে ।
০৭. আল্লাহর দীদার :
মুমিন বান্দাহগণ আখিরাতে আল্লাহ পাকের দীদার
বা দর্শন লাভ করে ধন্য হবেন । ক্বুরআন-সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা ইহা প্রমানিত ।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- “ তোমরা
ক্বিয়ামতের দিনে তোমাদের রবকে এমন সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাবে , যেমন আজকের দিনে তোমরা পূর্ণিমার চাঁদকে
দেখতে পাও । ” কিন্তু মু’তাযিলাগণ চাক্ষুষ দর্শনকে অস্বীকার করেছে ।
তারা বলে- আল্লাহর দর্শন হবে অন্তর চক্ষু দ্বারা । চর্ম চক্ষু দ্বারা সম্ভব নয় ।
এছাড়াও আরও অগণিত আক্বিদাহগত বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের সাথে মু’তাযিলাদের মতবিরোধ রয়েছে । সংক্ষিপ্ত কলেবরে এখানে আলোচনা করা সম্ভব নয় । এ পর্যায়ে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে হলে আক্বাঈদ শাস্ত্র অধ্যয়ন করা প্রয়োজন ।
এছাড়াও আরও অগণিত আক্বিদাহগত বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের সাথে মু’তাযিলাদের মতবিরোধ রয়েছে । সংক্ষিপ্ত কলেবরে এখানে আলোচনা করা সম্ভব নয় । এ পর্যায়ে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে হলে আক্বাঈদ শাস্ত্র অধ্যয়ন করা প্রয়োজন ।
০৪. “জাবরিয়া সম্প্রদায় ”
নামকরণ ও পরিচিতি :
জাবরিয়া শব্দটি আরবী জবর শব্দ হতে গৃহীত ।
জবর অর্থ- পূর্ব নির্ধারণ এবং বাধ্যকরণ । এই মতবাদের প্রবক্তা হলেন “জাহম বিন সাফওয়ান ” ।
উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ :
উমাইয়া শাসনামলে জাহম বিন সাফওয়ান তিরমিজ ও
খোরাসানে সর্বপ্রথম এই মতবাদ প্রচার করেন । তিনি ছিলেন খুরাসানের গভর্ণর আল হারিস
বিন সুরয়িজের সচিব । ৭৫৪খৃ: তিনি সালাম বিন আহওয়াজ আলমাজিনি কর্তক নিহত হন ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, উমাইয়া খলিফাদের মাত্র কয়েকজন শাসক ছাড়া প্রায় সকলেই জাবরিয়া মতবাদ বা অদৃষ্টবাদের সমর্থক ছিলেন । তারা ছিলেন এ সম্প্রদায়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক । উমাইয়া শাসকদের অধিকাংশই ছিলেন দুষ্কৃতি পরায়ন । নিজেদের কুকর্মের যৌক্তিকতা দেখাবার জন্যই এরা জাবরিয়াদের সমর্থন করেন । এই মতাদর্শের ছদ্মাবরণে থেকেই তারা নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত হতেন আর বলতেন যে, যাবতীয় কাজ-কর্ম আল্লাহর ইচ্ছায় সংঘটিত হয়ে থাকে ।সুতরাং এ জন্য বান্দাহ দায়ী নয় । কেউ তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে তারা রাষ্টীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতেন ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, উমাইয়া খলিফাদের মাত্র কয়েকজন শাসক ছাড়া প্রায় সকলেই জাবরিয়া মতবাদ বা অদৃষ্টবাদের সমর্থক ছিলেন । তারা ছিলেন এ সম্প্রদায়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক । উমাইয়া শাসকদের অধিকাংশই ছিলেন দুষ্কৃতি পরায়ন । নিজেদের কুকর্মের যৌক্তিকতা দেখাবার জন্যই এরা জাবরিয়াদের সমর্থন করেন । এই মতাদর্শের ছদ্মাবরণে থেকেই তারা নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত হতেন আর বলতেন যে, যাবতীয় কাজ-কর্ম আল্লাহর ইচ্ছায় সংঘটিত হয়ে থাকে ।সুতরাং এ জন্য বান্দাহ দায়ী নয় । কেউ তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে তারা রাষ্টীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতেন ।
জাবরিয়া মতবাদ :
জাবরিয়া মতবাদের মর্ম কথা হলো-কর্ম ও ইচ্ছায়
বান্দার কোন স্বাধীনতা নেই । বান্দার ভাল ও মন্দ যাবতীয় কাজ আল্লাহর সৃষ্টি ।
আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী বাধ্য হয়ে সে সব কিছু করে । এতে তার কোন ইখতিয়ার নেই । আল্লাহ
তার নিজের ইচ্ছানুযায়ী তাকে কর্মে নিয়োগ করেন । পাপ-পূন্য, ন্যায় বিচার, ভাল-মন্দ যাবতীয় কাজই মানুষ বাধ্য হয়ে করে
থাকে । সুতরাং সে ভাল কাজের জন্য পুরষ্কার এবং এবং মন্দ কাজের জন্য শাস্তি পাবে না
। অতএব দেখা যাচ্ছে যে, জাবরিয়া মতবাদ
অদৃষ্টবাদরই নামান্তর । এই দলের মতে মানুষের কর্মের স্বাধীনতা এবং কর্ম ক্ষমতাও
নেই । মানুষ জড় পদার্থ দিয়ে তৈরী পুতুলসম । যেমনে নাচায় তেমনে নাচে । বাংলাদেশের
প্রয়াত প্রখ্যাত গায়ক ও শিল্পী আব্দুল আলিম রচিত জাবরিয়া আক্বিদাহ সন্বলিত একটি
গান আমরা শুনতে পাই ।
“ ছায়াবাজি পুতুলরূপে গড়াইয়া মানুষ
যেমনে নাচায় তেমনে নাচে পুতুলের কি দোষ ? ”
“ ছায়াবাজি পুতুলরূপে গড়াইয়া মানুষ
যেমনে নাচায় তেমনে নাচে পুতুলের কি দোষ ? ”
এ পর্যায়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের
আক্বিদাহ হলো- মানুষ খোদ মুখতার তথা স্বাধীন সত্ত্বা । মানুষকে আল্লাহ তায়ালা
ইখতিয়ারী ক্ষমতা অর্থাৎ কর্মের স্বাধীনতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন । আল্লাহ তায়ালা তার
মধ্যে জন্মগতভাবেই বিবেক, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন ।
যদ্দ্বারা সে ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করত: ভালটাকে ভাল হিসেবে গ্রহণ এবং
মন্দকে মন্দ হিসেবে বর্জন করার ইখতিয়ারী ক্ষমতা লাভ করেছেন । আর তার মাঝে এই
কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন বলেই তো তার চলার পথে ইসলামী জীবন বিধান দেওয়া হয়েছে এবং
তার ভাল-মন্দ কর্মের আল্লাহ কাছে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দন্ডায়মান হতে হবে । ভাল
কর্মের জন্য পুরস্কার এবং মন্দ কর্মের জন্য শাস্তি প্রদান করা হবে । মানুষকে
জড়পদার্থের মতো পুতুল ও অসহায় করে সৃষ্টি করা হয়নি । অন্যথায় তার মন্দ কর্মের জন্য
শাস্তি প্রদান করলে আল্রাহ তায়ালা জালিম গুণে বিভূষিত হবেন । অথচ আল্লাহ তায়ালা
তার বান্দার প্রতি সামান্যতম অবিচার করেন না ।
০৫ “ক্বাদরিয়া সমপ্রদায় ” :
আরবী ক্বদর শব্দ হতে ক্বাদরিয়া নামটির
উৎপত্তি । ক্বদর অর্থ –শক্তি, নির্দ্ধারণ, ভাগ্য ইত্যাদি ।
ক্বাদরিয়া মতবাদ :
ক্বাদরিয়া মতবাদের সার কথা হচ্ছে – তারা মানুষের ভাল-মন্দ তাক্বদীরকে অস্বীকার
করে । তাদের মতবাদের সার কথা হলো – মানুষ তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রনে সম্পূর্ণ ক্ষমতাবান । কর্ম ও ইচ্ছায় সে সম্পূর্ণ
স্বাধীন । ভাল-মন্দ যাবতীয় কাজ করা ও না করার মধ্যে তার পূর্ণ ইখতিয়ার রয়েছে ।
ইচ্ছা করলে সে ন্যায় পথে চলতে পারে আবার ইছ্ছা করলে অন্যায় পথেও চলতে পারে । এ
ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা তাকে বাধা প্রদান করেন না । অতএব তার কৃতকর্মের জন্য সে
দায়ী হবে । পূন্যকর্মের জন্য সে পুরষ্কার এবং পাপ কর্মের জন্য শাস্তি পাবে ।
সুতরাং মানুষের ভাল-মন্দের তাক্বদীর বা ভাগ্যলিপি বলতে কিছু নেই । মানুষের জন্য
তার কর্মই হলোই আসল ।এ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে যে, ক্বাদরিয়া মতবাদটি জাবরিয়া মতবাদের সম্পূর্ণ
বিপরীত ।
উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ :
এই মতবাদেল প্রবর্তক হলেন মা’বাদ আল জুহাইনী । পরবর্তীকালে তার বিশিষ্ট
শিষ্য
“গায়লান দামেস্কী ” এই মতবাদের উৎকর্ষ সাধন করেন ।
প্র্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, উমাইয়া খলিফাদের মাত্র কয়েবজন শাসক ছাড়া প্রায় সকলেই জাবরিয়া মতবাদ বা অদৃষ্টবাদের সমর্থক ছিলেন । তারা স্বাধীন মতবাদের ঘোর বিরোধী ছিলেন । সুতরাং তারা ক্বাদরিয়া মতবাদকে বরদাস্ত করতে পারতেন না । এই মতবাদের প্রবক্তাগণ তাঁদের হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিত হন । খলিফা আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের নির্দেশে মা’বাদ আলজুহায়নিকে এবং হিশাম বিন আব্দুল মালিকের নির্দেশে গায়লান দামেস্কীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় । কিন্তু কোন মতবাদ একবার গড়ে উঠলে তা দমন করা যায় না । উমাইয়া শাসকদের অমানুষিক অত্যাচার ও নির্যাতন সত্ত্বেও ক্বাদরিযা মতবাদের প্রদীপ শিখা নির্বাপিত হয়নি । বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে পরবর্তীকালে অধিকতর মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা লাভ করে । তবে উমাইয়া আমলের শেষের দিকে কয়েকজন শাসক স্বাধীন ও মুক্তবুদ্ধির প্রচারক ক্বাদিরিয়াগনকে সমর্থন ও সহোযোগিতা করেন । পরবর্তী পর্যায়ে এই ক্বাদরিয়া মতবাদই মু’তাযিলা মতবাদ নামে পরিচিত হয় ।
“গায়লান দামেস্কী ” এই মতবাদের উৎকর্ষ সাধন করেন ।
প্র্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, উমাইয়া খলিফাদের মাত্র কয়েবজন শাসক ছাড়া প্রায় সকলেই জাবরিয়া মতবাদ বা অদৃষ্টবাদের সমর্থক ছিলেন । তারা স্বাধীন মতবাদের ঘোর বিরোধী ছিলেন । সুতরাং তারা ক্বাদরিয়া মতবাদকে বরদাস্ত করতে পারতেন না । এই মতবাদের প্রবক্তাগণ তাঁদের হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিত হন । খলিফা আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের নির্দেশে মা’বাদ আলজুহায়নিকে এবং হিশাম বিন আব্দুল মালিকের নির্দেশে গায়লান দামেস্কীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় । কিন্তু কোন মতবাদ একবার গড়ে উঠলে তা দমন করা যায় না । উমাইয়া শাসকদের অমানুষিক অত্যাচার ও নির্যাতন সত্ত্বেও ক্বাদরিযা মতবাদের প্রদীপ শিখা নির্বাপিত হয়নি । বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে পরবর্তীকালে অধিকতর মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা লাভ করে । তবে উমাইয়া আমলের শেষের দিকে কয়েকজন শাসক স্বাধীন ও মুক্তবুদ্ধির প্রচারক ক্বাদিরিয়াগনকে সমর্থন ও সহোযোগিতা করেন । পরবর্তী পর্যায়ে এই ক্বাদরিয়া মতবাদই মু’তাযিলা মতবাদ নামে পরিচিত হয় ।
ক্বাদরিয়া সম্প্রদায় পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণ :
ঈমানের সর্বমোট সত্তর এরও অধিক শাখা রয়েছে ।
তন্মধ্যে Basic বা মৌলিক শাখা সাতটি । যাকে ।ঈমানের বুনিয়াদী শাখা বলে । অন্য ভাষায়- এটিকে
ঈমানে মুফাসসাল বলা হয়ে থাকে । আলোচ্চ সাতটি বুনিয়াদী শাখার কোন একটিকে কেউ
অস্বীকার করলে সে মুমিন থাকে না , কাফির হয়ে যায় । ঈমানে মুফাসসালের সাতটি শাখা নিম্নরূপ :
آمنت بالله وملائكته وككتبه ورسوله واليوم الاخر والقدر خيره وشره من الله تعالى والبعث بعد الموت –
ঈমানের আলোচ্চ মৌলিক শাখাসমূহের মধ্য থেকে ষষ্ঠতম শাখা হচ্ছে- তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা । ক্বাদরিয়া সম্প্রদায় ঈমানের আলোচ্চ বেসিক শাখার মধ্য থেকে ত্বাকদীরকে অস্বীকার করে । যার কারণে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে ।
এ ছাড়াও ক্বাদরিয়া ও মারজিয়াদের প্রসঙ্গে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে :
آمنت بالله وملائكته وككتبه ورسوله واليوم الاخر والقدر خيره وشره من الله تعالى والبعث بعد الموت –
ঈমানের আলোচ্চ মৌলিক শাখাসমূহের মধ্য থেকে ষষ্ঠতম শাখা হচ্ছে- তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা । ক্বাদরিয়া সম্প্রদায় ঈমানের আলোচ্চ বেসিক শাখার মধ্য থেকে ত্বাকদীরকে অস্বীকার করে । যার কারণে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে ।
এ ছাড়াও ক্বাদরিয়া ও মারজিয়াদের প্রসঙ্গে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে :
عن ابن عباس ( رض ) قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم :
صنفان من امتي ليس لهما فى الاسلام نصيب،المرجية
والقدرية - ( رواه الترمذى = رقم الحديث – 2075 )
অনুবাদ : ইবনু আব্বাস ( রা: ) হতে বর্ণিত : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : আমার উম্মাতের দুই শ্রেণীর মানুষ , যাদের ইসলামে কোন অংশ নেই । তারা হলো যথাক্রমে – ( ০১ ) মুরজিয়া ( তাক্বদীরের উপর ভরসা করে আমল বর্জনকারী দল ) ( ০২. ) ক্বাদরিয়া ( তাক্বদীরকে অস্বীকারকারী দল । ( তথ্য সূত্র = তিরমিজি : হাদীস নং- ২০৭৫ )
والقدرية - ( رواه الترمذى = رقم الحديث – 2075 )
অনুবাদ : ইবনু আব্বাস ( রা: ) হতে বর্ণিত : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : আমার উম্মাতের দুই শ্রেণীর মানুষ , যাদের ইসলামে কোন অংশ নেই । তারা হলো যথাক্রমে – ( ০১ ) মুরজিয়া ( তাক্বদীরের উপর ভরসা করে আমল বর্জনকারী দল ) ( ০২. ) ক্বাদরিয়া ( তাক্বদীরকে অস্বীকারকারী দল । ( তথ্য সূত্র = তিরমিজি : হাদীস নং- ২০৭৫ )
অপর হাদীসে ক্বাদরিয়াদের সম্পর্কে আলোচিত
হয়েছে :
عن ابن عمر ( رض ) قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : القدرية
مجوس هذه الامة ، ان مرضوا فلا تعود وا و ان ماتوا فلا تشهدوهم – ( رواه احمد =
5327 - وابو داؤد= 4071 )
অনুবাদ : ইবনু উমার হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : আমার উম্মাতের ক্বাদরিয়া অর্থাৎ- তাক্বদীর অস্বীকারকারী দল অগ্নিপূজক । তারা অসুস্থ হলে তোমরা দেখতে যেয়ো না । মৃত্যু বরণ করলে জানাযার ছালাতে অংশ গ্রহণ করো না ।
( তথ্যসূত্র : মুসনাদে আহমাদ= হাদীস নং-৫৩২৭ ; সুনানু আবু দাউদ = হাদীস নং- ৪০৭১ )
অনুবাদ : ইবনু উমার হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : আমার উম্মাতের ক্বাদরিয়া অর্থাৎ- তাক্বদীর অস্বীকারকারী দল অগ্নিপূজক । তারা অসুস্থ হলে তোমরা দেখতে যেয়ো না । মৃত্যু বরণ করলে জানাযার ছালাতে অংশ গ্রহণ করো না ।
( তথ্যসূত্র : মুসনাদে আহমাদ= হাদীস নং-৫৩২৭ ; সুনানু আবু দাউদ = হাদীস নং- ৪০৭১ )
আলোচ্য দুটো হাদীস দ্বারা এ কথা প্রতীয়মান
হলো যে, ক্বাদরিয়া ও
মুরজিয়া সম্প্রদায় ভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট দল । এ পর্যায়ে আমাদের জন্য হেদায়েতী
আক্বিদাহ হলো- তাক্বদীরকে অস্বীকার করা যেমন কুফুরী , তেমনিভাবে নেক আমল বর্জন করত: তাক্বদীরের উপর
ভরসা করে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতেও শরীয়াতে নিষিদ্ধ হয়েছে । তাক্বদীরের বিশ্বাস
স্থাপনের পাশাপাশি নেক আমলের প্রচেষ্টা ও তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে ।
এ পর্যায়ে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে :
عن على ( رض ) قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : اعملوا
فكل ميسر لما خلق له –
( رواه البخارى = رقم الحديث- 4949 – ومسلم = رقم الحديث- 2648 - )
: অনুবাদ আলী ( রা: ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : তোমরা আমল করতে থাকো ; কেননা যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে , তার জন্য সেই কাজকে সহজ করে দেওয়া হয়েছে ।
( তথ্যসূত্র = বুখারী-হাদীস নং-(৪৯৪৯) ; মুসলিম- হাদীস নং- ২৬৪৮ )
( رواه البخارى = رقم الحديث- 4949 – ومسلم = رقم الحديث- 2648 - )
: অনুবাদ আলী ( রা: ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : তোমরা আমল করতে থাকো ; কেননা যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে , তার জন্য সেই কাজকে সহজ করে দেওয়া হয়েছে ।
( তথ্যসূত্র = বুখারী-হাদীস নং-(৪৯৪৯) ; মুসলিম- হাদীস নং- ২৬৪৮ )
০৬.মুরজিয়া সম্প্রদায় :
নামকরণ ও পরিচিতি :
মুরজিয়া শব্দটি আরবী “এরজাউন ” শব্দ হতে উৎপন্ন । ইরজা অর্থ- স্থগিত রাখা বা
আশাবাদী হওয়া । মুরজিয়াগণ আমলকে গৌণ মনে করত: ঈমানের পশ্চাতে স্থান দিয়ে থকেন ।
ছগীরাহ ও কাবীরাহ সব রকমের গুনাহ করার পরও জান্নাত বাসীর হওয়ার আশা পোষণ করেন ।
তারা তাক্বদীরের উপর ভরসা করে নেক আমল বর্জন করে থাকেন । তারা মনে করেন- তাক্বদীরে
জান্নাত থাকলে জান্নাত হবে, জাহান্নাম
থাকলে জাহান্নাম হবে ; সুতরাং নেক
আমল করে লাভ নেই ।
উৎপত্তি ও ইতিহাস :
ঐতিহাসিকগণ মুরজিয়া সম্প্রদায়ের আবির্ভাব
নিয়ে বিভিন্ন কারণ বর্ণনা করেছেন । কেউ কেউ এই
সম্প্রদায়কে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বর্ণনা করলেও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে
বিচার করলে একথা বলা চলে যে, ধর্মীয় কারণেই
মুরজিয়া সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে ।
এই মুরজিয়া সম্প্রদায়ের আবির্ভাব সম্পর্কে আব্রাহাম হালকিন বলেন –
“ খারিজী ও শিয়া সম্প্রদায় যখন উমাইয়া শাসকদের কাফির বলে চিত্রিত করে, তখন মুরজিয়া সম্প্রদায় উমাইয়াদের স্বপক্ষে উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে । তারা বলে : উমাইয়া শাসকদের হেয় প্রতিপন্ন করা মুসলমানদের উচিৎ নয়, আল্লাহর বিচারের পূর্ব পর্যন্ত তাদের সম্পর্কে ধর্মীয় ও নৈতিক রায় প্রদান স্থগিত রাখা উচিত । ”
এই মুরজিয়া সম্প্রদায়ের আবির্ভাব সম্পর্কে আব্রাহাম হালকিন বলেন –
“ খারিজী ও শিয়া সম্প্রদায় যখন উমাইয়া শাসকদের কাফির বলে চিত্রিত করে, তখন মুরজিয়া সম্প্রদায় উমাইয়াদের স্বপক্ষে উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে । তারা বলে : উমাইয়া শাসকদের হেয় প্রতিপন্ন করা মুসলমানদের উচিৎ নয়, আল্লাহর বিচারের পূর্ব পর্যন্ত তাদের সম্পর্কে ধর্মীয় ও নৈতিক রায় প্রদান স্থগিত রাখা উচিত । ”
মুরজিয়া সম্প্রদায়ের আবির্ভাব সম্পর্কে
ঐতিহাসিক ম্যাকডোনাল্ড বলেন :
“মুসলমানগণ যখন নিজেদের পাপকর্ম সম্পর্কে অতি
সচেতনতায় ভুগছিল , যখন তাদের
সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে নৈরাশ্যবাদ ও অদৃষ্টবাদের কালো মেঘ নেমে এসেছিল, তখনই সহনশীল ও উদারপন্থি মুরজিয়াদের আবির্ভাব
ঘটে । মুরজিয়ারা মুসলমানদের অহেতুক ভীতি ও নৈরাশ্যবাদের বিরোধিতা করেন । তারা
বলেন- যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে , তারা যে পাপই করুক না কেন , তারা ধর্মচূ্যত হবে না এবং তাদের সম্পর্কে
সিদ্ধান্ত প্রদান করাও কারোর উচিৎ হবে না । ”
মুরজিয়া মতবাদ :
মুরজিয়াদের মতে শুধু অন্তরে বিশ্বাস করার নাম
ঈমান । মুখে স্বীকার করা এবং আমল করা ঈমানের জন্য জরুরী নয় । তাদের মতে- আমল
ঈমানের রুকন বা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয় । অতএব মুমিন হওয়ার জন্য আমল শর্ত নয়, অন্তরে বিশ্বাস রেখে মুখে স্বীকার করাই
যথেষ্ট । সুতরাং কেউ যদি অন্তরে বিশ্বাস রেখে নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত ইত্যাদি ফরজ আমলগুলো পরিত্যাগ করে এবং
ক্বাবীরাহ গুনাহও যদি করে বসে , তবুও সে মুমিন থাকবে , কাফির হবে না
। তাদের মতে – একমাত্র কাফির
ছাড়া আর কেউ চিরকাল জাহান্নামে থাকবে না । ফরজ কাজ বর্জনকারী ও ক্বাবীরাহ
গুনাহকারী যেহেতু কাফির নয়, সেইহেতু তারা
চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে না এবং তারা আল্লাহ পাকের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক
জান্নাতে প্রবেশ করবে । অতএব দেখা যাচ্ছে যে, খারিজীদের সম্পূর্ণ বিপরীত মতাদর্শ নিয়ে
মুরজিয়াগণ আবির্ভূত হয়েছেন ।
০৭. আশায়েরা সম্প্রদায় :
নামকরণ ও পরিচিতি :
নবী কারীম ( সা: ) এর বিশিস্ট সাহাবী আবু
মুসা আশআরী ( রা; ) এর বংশধর ইমাম আবুল হাসান আল আশআরী ( রহ: ) এই মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা । তারই
নামানুসারে এই আশায়েরা মতবাদ পরিচিত । ইমাম আশআরী তদানিন্তন জাবরিয়াদের উত্তরসূরী
সিফাতিয়াদের মতবাদ এবং ক্বাদরিয়াদের উত্তরসূরী মুতাযিলাদের মাঝামাঝি একটি
মধ্যমপন্থি একটি মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করেন ।
আশোয়েরা মতবাদ প্রতিষ্ঠার কারণ :
মুতাযিলাদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছিল জটিল । সর্বসাধারণের নিকট উহা বোধগম্য ছিল না । তদোপরি এই জটিল মতবাদ দ্বারা জনগণের বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল । একারণে তদানিন্তন রক্ষনশীল ওলামায়ে কিরাম এই মতবাদটিকে ভাল চোখে দেখতেন না । মুতাযিলাদের সমর্থক আব্বাসীয় খলিফা আলমামুন এই রক্ষনশীল ওলামাদের উপর নির্যাতনের ষ্টিম রোলার চালাতে শুরু করেন । কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয় । খলিফার এই আচরণে সাধারণ মুসলমান ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন । এই সংকটময় মূহুর্তে ইখওয়ানুস সাফা নামক একদল বিদগ্ধ পন্ডিত জনগণের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আকাঈদ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের উপর বহুসংখ্যক সারগর্ভ মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করত: লিফলেট আকারে তা প্রচার করতে থাকেন । মুসলিম সমাজে এহেন ক্রান্তি লগ্নে আশআরী তার মধ্যমপন্থী মতবাদ নিয়ে জনগণের সম্মুখে উপস্থিত হন । ইমাম আশআরী প্রথম জীবনে মুতাযিলা মতবাদের অনুসারী ছিলেন । পরবর্তীতে তার মতের পরিবর্তন হলে তিনি মুতাযিলা মতবাদ পরিহার করে নতুন এই মতবাদ প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন ।
ইমাম আশআরীর মতের পরিবর্তন হলে তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন যে, শুধু বুদ্ধির দ্বারা সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এবং জীবনের সকল প্রশ্নের সমাধান করা সম্ভব নয় । অতএব তিনি স্বাধীন ও মুক্তবুদ্ধির ধারক ও বাহক চরমপন্থি মুতাযিলা মতবাদ পরিহার করেন এবং ওহী বা কালামে এলাহীকে সত্য নিরূপনের নির্ভূল মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করত: গবেষণা শুরু করেন । তারপর তিনি ছিফাতিয়া ও মুতাযিলাদের চরমপন্থি দুটি মতবাদের মধ্যবর্তি একটি মতবাদ প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন ।
উল্লেখ্য যে, আশায়েরা মতবাদের সহিত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের মতবাদের প্রায় মিল
আছে ।
উপসংহার :
অত্র বক্ষমান প্রবন্ধে আলোচিত বিভিন্ন বাতিল ফিরকাহ ছাড়াও মুসলিম বিশ্বে আরও বহু সংখ্যক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে । প্রবন্ধের কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় এখানেই আমার আলোচনার যবনিকা টানতে বাধ্য হলাম । উল্লেখিত সম্প্রদায়গুলোর মধ্য থেকে একমাত্র
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত নামক দলটিই হলো – ফিরক্বায়ে নাজিয়াহ বা মুক্তিপ্রাপ্ত দল । আল্লাহ তায়লা আমাকে আপনাকে মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভূক্ত করত: দুনিয়া ও আখিরাতে কাময়াবী
হাছিল করার নেক তাওফিক দান করুন । - আমীন ।
অত্র বক্ষমান প্রবন্ধে আলোচিত বিভিন্ন বাতিল ফিরকাহ ছাড়াও মুসলিম বিশ্বে আরও বহু সংখ্যক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে । প্রবন্ধের কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় এখানেই আমার আলোচনার যবনিকা টানতে বাধ্য হলাম । উল্লেখিত সম্প্রদায়গুলোর মধ্য থেকে একমাত্র
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত নামক দলটিই হলো – ফিরক্বায়ে নাজিয়াহ বা মুক্তিপ্রাপ্ত দল । আল্লাহ তায়লা আমাকে আপনাকে মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভূক্ত করত: দুনিয়া ও আখিরাতে কাময়াবী
হাছিল করার নেক তাওফিক দান করুন । - আমীন ।
-নিবেদক
উপস্থাপনায়
মো: ইসহাক মিয়া
সহকারী অধ্যাপক ( কামিল হাদীস বিভাগ )
বিজুল দারুল হুদা কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা
বিরামপুর, দিনাজপুর ।
উপস্থাপনায়
মো: ইসহাক মিয়া
সহকারী অধ্যাপক ( কামিল হাদীস বিভাগ )
বিজুল দারুল হুদা কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা
বিরামপুর, দিনাজপুর ।
No comments:
Post a Comment