Sunday, 26 March 2017

সমাজে প্রচলিত ৫টি জাল হাদীস নিয়ে পর্যালোচনা

শাহাজাহান

জাল হাদীস বলতে কি বুঝায় 
জাল হাদীসকে হাদীস শাশ্ত্রের পরিভাষায় االحديثالموضو ع) ( বলা হয় । موضوع শব্দটি আরবী وضع ধাতু থেকে নির্গত। যার অর্থ- কোন জিনিস নতুন করে বানানো । মিথ্যা উপাখ্যান তৈরী করা ইত্যাদি ।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : রাসূল (সা: ) যা বলেননি , এমন কথাকে রাসূল (সা:) 
এর বক্তব্য বলে চালিয়ে দেওয়াকে মাওযু বা জাল হাদীস বলে ।
মুহাদ্দিসগণের মতে জাল হাদীসের সংজ্ঞা :
আল্লামা ড. মাহমুদ ত্বাহা বলেন هو الكذب المختلق المنسوب الى رسول اللهঅর্থাৎ-মিথ্যা মনগড়া বক্তব্য বা কথা নিজে থেকে তৈরী করে তা রাসূল (সা:) এর বক্তব্য বলে চালিয়ে দেওয়াকে মাওযু হাদীস বলে ।
আল্লামা ড. আবুবকর বলেন
هو المختلق المصنوع المكذوب على رسول الله ( ص) –
অর্থাৎ-বানানো বক্তব্যকে রাসূল (সা: ) এর হাদীস বলে মিথ্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়াকে জাল হাদীস বলে । 
মোদ্দাকথা- জাল হাদীস রাসূল ( সা: ) যবান নি:সৃত বাণী নয় । মানুষ নিজের খেয়াল-খুশি মত মিথ্যা সনদ ও মতন তৈরী করত: তা হাদীসের নামে চালিয়ে দিয়েছে । 
শারঈ মানদন্ডে জাল হাদীসের হুকুম বা বিধান : জাল হাদীস রচনা করা, বর্ণনা করা ও লিখন হারাম । এটি মারাত্মক ধরনের একটি কাবীরাহ গুনাহ । জাল হাদীস বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে হাদীসে জাহান্নামের ফায়সালা দেওয়া হয়েছে । এ পর্যায়ে হাদীস বর্ণিত হচ্ছে ।

প্রথম হাদীস :
عن عبد الله بن عمرو ( رض) قا ل : قا ل رسول الله ضلى الله عليه و سلم : من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار – ( رواه البخارى، رقم الحديث: (3461 ) – و الترمذى ، ( 2951 ) كل مطبع مصر )
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ( রা: ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন : রাসূল ( সা: )
বলেছেন : যে ব্যক্তি আমার ব্যাপারে মনগড়া মিথ্যা কথা রচনা করলো , সে তার ঠিকানা জাহান্নামে করে নিক । ( তথ্যসূত্র- বুখারী=হাদীস নং-৩৪৬১ - তিরমিজী = 
২৯৫১)
প্রথম হাদীস :
لولا خلقتك لما خلقت الافلا ك- 
অনুবাদ: হে মুহাম্মাদ ! আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না ।
হাদীসটির সনদ :
ইমাম হাকিম নিশাপুরী ‘‘মুস্তাদরাকগ্রন্থে (২/ ৬১০ পৃষ্ঠা ) , তাঁর সূত্রে ইবনু আসাকির ( ২/ ৩২৩ পৃষ্ঠা ) এবং ইমাম বায়হাক্বী দালায়েলুন নাবুওয়াহ গ্রন্থে ( ৫/ ৪৮৮ পৃষ্ঠা ) মারফু হিসেবে আবুল হারিস আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম আলফিহরী সূত্রে 
আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম হতে বর্ণনা করেছেন ।
হাদীসটির মতন :
হযরত আদম আদম (আ: ) যখন গুনাহ করে ফেললেন, তিনি বললেন: হে আমার প্রভূ ! তোমার নিকট মুহাম্মাদকে সত্য জেনে তার ওছিলা ধরে প্রার্থনা করছি । তার ওছিলায় তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও । আল্লাহ বললেন : হে আদম ! তুমি কিভাবে মুহাম্মাদকে চিনলে ? অথচ এখন পর্যন্ত আমি তাকে সৃষ্টি করিনি । আদম ( আ: ) বললেন: হে আমার প্রভূ ! আপনি আমাকে যখন আপনার হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন এবং আমার মধ্যে আত্মার প্রবেশ ঘটান , তখন আমি মাথা উচু করে আরশে মুয়াল্লায় লিখা দেখলাম الا اله الا الله محمد رسول الله - তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, আপনার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় ব্যতীত অন্য কেউ আপনার পবিত্র নামের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে না । একথা শুনে আল্লাহ পাক বল্লেন : সত্যই বলেছো হে আদম । নিশ্চয়ই তিনি আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় । তুমি তাকে ওছিলা ধরে আমাকে ডাকো । আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব । মুহাম্মাদকে যদি সৃষ্টি না করা হতো , তবে আমি সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না ।
হাদীসটি নিয়ে পর্যালোচনা :
আল্লামা ইমাম আযযাহাবী (রহ: ) বলেছেন : আলোচ্য হাদীসটি জাল তথা
বানোয়াট। আব্দুর রহমান দূর্বল রাবী । আর আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম আলফিহরী অজ্ঞাত ব্যক্তি । অর্থাৎ- আসমাউর রিজাল তথা রিজাল শাস্ত্রে যার কোন পরিচিতি নেই । 
 *
আল্লামা নাছির উদ্দিন আলবানী (রহ: ) বলেছেন : ফিহরীর রেওয়ায়েতকৃত হাদীসটি বাতিল । 
*
আল্লামা ইবনু কাছির (রহ : ) তাঁ রচিত আততারিখ গ্রন্থে ( ২/ ৩২৩ পৃষ্ঠা ) অনুরূপ মন্তব্য করেছেন । 
*
আল্লামা ইবনু হিব্বান (রহ: ) অত্র হাদীসের রাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম ইবনে রাশীদ আলফাহরী সম্পর্কে বলেন তিনি হাদীস জাল করার দোষে দুষ্ট । তিনি লাইস, মালিক এবং ইবনু লাহিয়ার সূত্র ধরে হাদীস জাল করেছেন ।সুতরাং তার হাদীস বর্ণনা বৈধ নয় ।
*
আল্লামা ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ ( রহ: ) বলেন : হাদীসে বর্ণিত আব্দুর রহমান ইবনু আসলাম জাল হবার বিষয়ে সকল মুহাদ্দিসগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন । 
*
ইমাম ত্বাহাবী (রহ: ) বলেন : উপর্যুক্ত রাবীর হাদীস ওলামাদের নিকট চরম পর্যায়ের দূর্বল । 
*
আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ:) আর ও বলেছেন : সম্ভবত: হাদীসটি ইসরাঈলী রেওয়ায়েত হতে এসেছে । আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ মারফু করে চালিয়ে দিয়েছেন । মোদ্দা কথা হাদীসটি ভিত্তিহীন ।

দ্বিতীয় হাদীস :
عن المغيرة بن شعبة ( رض ) قا ل : قا ل رسول الله صلى الله عليه وسلم : من حدث عنى بحديث 
يرى أ نه كذ ب فهو احد الكا ذبين - ( رواه مسلم فى المقدمه ) – 
অনুবাদ : যে ব্যক্তি আমার উদ্বৃতি দিয়ে এমন কথা বর্ণনা করলো যা আমি বলেনিঅথচ স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে বর্ণনা করলো । সে মিথ্যুক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে একজন অন্যতম মিথ্যাবাদী । তথ্যসূত্র : সহীহ মুসলিম ( মুকাদ্দামা )
জাল হাদীস প্রনয়নের নেপথ্যে যারা জড়িত ছিল :
জাল হাদীস প্রনয়নে সাহাবায়ে কিরাম সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলন্বন করতেন । তাঁদের মধ্যে কেউ এই ঘৃণ কাজটি করেননি । খিলাফতে রাশেদার শেষের দিকে কিছুসংখ্যক তাবেয়ী দ্বারা একাজটির সূত্রপাত হয় ।
হযরত উছমান ( রা: ) এর খিলাফতের শেষের দিকে এবং আলী (রা: ) এর সময়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দর্শনের মতপার্থক্যকে কেন্দ্র করে হিজরী প্রথম শতাবাদীর শেষার্ধে জাল হাদীস প্রনয়নের সূচনা হয় ।ধর্মীয় লেবাসে খারেজীশীয়ামুতাযিলাক্বাদরিয়াজাবরিয়ামুরজিয়াজুহুমিয়াবারাহিমা প্রভৃতি পথভ্রষ্ট ফের্কাসমূহ তাদরে স্ব স্ব ধর্মীয় ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে উক্ত অপকর্মে নগ্ন ভূমিকা পালন করে ।বিশেষ করে শিয়ামুতাযিলা ও ইহুদী- খ্রিষ্টানদের দোসর যিন্দকরা ছিল এক্ষেত্রে অগ্রগামী । একশ্রেণীর বিদআতী আলেম ও তার অনুসারী দল ছুফি দরবেশ পীর অসৎ ব্যবসায়ী স্বৈর শাসকদের অনুগত তল্পীবাহী সেবাদাসযারা তদানিন্তন সময়ের স্বৈর শাসকদের দু:সাসনের বৈধ অনুমোদন দেওয়ার লক্ষ্যে জাল হাদীস রচনার মত জঘন্য কর্মে লিপ্ত হয় । এ ছাড়াও কবি সাহিত্যিক পেশাদার বক্তাগণ এই ঘৃর্ণ অপকর্মে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে । এসব কুচক্রি মহল তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে হাজার হাজার জাল হাদীস তৈরী করত: তা মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে দেয় ।
ওলামায়ে মুহাদ্দেসীন এ পর্যায়ে নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে হদীস শাস্ত্রের মূলনীতি প্রনয়ন করত: ছহীহজয়ীফমাতরুকমুনকারমুআল্লালশায ও মাওযু হাদীস সমূহ শনাক্ত করেন । তারা মুসলিম উম্মাহকে জাল হাদীস বর্ণনা ও আমল করা থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে জাল হাদীসের উপর বহুসংখ্যক স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেন ।
বহুসংখ্যক জাল হাদীস আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে । এসবের উপর নির্দ্বিধায় বক্তব্য ও আমল চলছে । অথচ জাল হাদীস বর্ণনা ও এর উপর আমল করতে রাসূল ( সা: ) নিষেধ করেছেন । এ পর্যায়ে জনগনের অবগতির লক্ষ্যে উদাহরণস্বরূপ বক্ষমান প্রবন্ধে পাঁচটি জাল হাদীস নিয়ে পর্যালোচিত হচ্ছে । আলোচিত পাঁচটি হাদীস জাল হওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববরেন্য ওলামায়ে মুহাদ্দেসীন ঐক্যমত পোষণ করেছেন । নিম্নে তা ধারাবাহিকভাবে আলোচিত হলো ।
দ্বিতীয় হাদীস :
اول ما خلق الله نورى 
অনুবাদ : সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন ।
হাদীসটির মতন :
হযরত জাবির (রা: ) রাসূল ( সা: ) কে প্রশ্ন করলেন : আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেন ? উত্তরে রাসূল ( সা: ) বলেন : اول ما خلق الله نورى অর্থাৎ-সর্ব প্রথম 
আল্লাহ তায়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন । এরপর এই সূদীর্ঘ হাদীসে উল্লেখিত
হয়েছে যে, অত:পর এই নূরকে বিভিন্নভাগে ভাগ করে তা থেকে আরশ-কুরছি, লাওহ-কলম, ফেরেশ্তা , জ্বিন , ইনসান , আসমান-যমীন এবং সমগ্র বিশ্বকে সৃষ্টি করা হয় ।
পর্যালোচনা :
বিশ্ববরেন্য মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাপারে ঐক্যৈমত পোষণ করেছেন যে, আলোচ্য হাদীসটি প্রাচীন যুগের কোন ছহীহ হাদীস গ্রন্থে পাওয়া যায় না । আলোচ্য হাদীসটি 
ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা । 
কেউ কেউ দাবী করেছেন : হাদীসটি ইমাম বায়হাক্বী ও আব্দুর রাজ্জাক সানআনী তাঁদের সংকলিত হাদীসগ্রন্থে সংকলন করেছেন । কিন্তু তাদের এই দাবী ভিত্তিহীন । 
কারণ ইমাম বাইহাক্বী ও আব্দুর রাজ্জাক সানআনীর কোন গ্রন্থেই এই হাদীসটি নেই ।
এমনকি মাওযু বা মিথ্যা সনদেও এই হাদীসটি কোন হাদীস গ্রন্থে সংকলিত হয়নি ।
রাসূল ( সা: ) এর যুগ থেকে পরবর্তী পাঁচশত বছর পর্যন্ত কেউ এ হাদীস জানতেন না ।
যতটুকু জানা যায় , হিজরীর ৭ম শতকের প্রসিদ্ধ আলিম মহিউদ্দিন ইবনু আরাবী ও আবুবকর মুহাম্মাদ ইবনু আলী তাঈ হাতেমী ( ৫৬০-৬৩৮ ) সর্বপ্রথম এই কথাগুলো হাদীস হিসেবে চালিয়ে দেন । ইবনু আরাবী তার রচিত গ্রন্থে অগণিত জাল হাদীস উল্লেখ করেছেন । পরবর্তীযুগের মুহাদ্দিস মুজাদ্দিদ আলফেসানীসহ বিশ্ববরেন্য ওলামায়ে কিরাম ইবনু আরাবীর এ সকল জাল ও ভিত্তিহীন বর্ণনার প্রতিবাদ করেছেন ।
উল্লেখ্য যে, সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত , আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন । নিম্নে সে সহীহ হাদীসটি আলোচিত হলো ।
عن عبادة بن الصا مت ( رض ) قا ل : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ان ا و ل ما خلق الله القلم ،
فقا ل له اكتب ، فقا ل : ما اكتب ؟ قا ل : اكتب القد ر ، فكتب ما كان هو كائن الى الابد - ( رواه الترمذى – رقم الحديث = 2081) 
অনুবাদ : উবাদাহ ইবনু ছামিত ( রা: ) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন । অত:পর তিনি কলমকে বললেন : লিখ । কলম বললো : কি লিখবো ? আল্লাহ বললেন : মানূষের তাক্বদীর লিখ । সুতরাং যা ছিল এবং শেষাবধি যা ঘটবে , তা সে লিখলো । 
(
তথ্যসূত্র : তিরমিজি= হাদীস নং- ২০৮১ ) 
আলোচ্য সহীহ হাদীসটি দ্বারা প্রমানিত হলো যে, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন । সুতরাং সর্বপ্রথম রাসূল ( সা: ) এর নূর সৃষ্টি করার বানোয়াট ও মিথ্যা হাদীসটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য হবে ।
তৃতীয় হাদীস :
اطلبوا العلم ولو كان بالصين 
অনুবাদ: চীন দেশে গিয়ে হলেও তোমরা জ্ঞান অন্বেষণ করো ।
হাদীসটির সনদসূত্র :
কয়েকটি সূত্রধরে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে ।
১ম সূত্র :
হাসান ইবনু আতিয়া আবু আতিকা তুরায়ীফ ইবনু সুলায়মান সূত্রে বর্ণনা করেছেন । 
দ্বিতীয় সূত্র : ইয়াকুব ইবনু ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আসকালানীর সূত্র ধরে আব্দুল বার বর্ণনা করেছেন । 
তৃতীয় সূত্র : আহমদ ইবনু আব্দুল্লাহ যুওয়াবারীর সূত্র ধরে বর্ণনা করেছেন ।
হাদীসটির তথ্যসূত্র :
ইবনু আদি রচিত আলকামিল ” ( ১/ ২৯২ পৃষ্ঠা ) । 
আল্লামা ইবনু জাওযী রচিত আলমাউযুআত ” ( ১ / ১৫৪ পৃষ্ঠা ) 
আলামা সাখাবী রচিত আলমাক্বাসিদ ” ( ৮৩ পৃষ্ঠা ) 
আল্লামা যারকানী রচিত ( মুখতাসারুল মাক্বাসিদ -৬১ পৃষ্ঠা ) 
আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী রচিত ( সিলসিলাতুজ জ্বায়ীফা -১ / ৩০০ পৃষ্ঠা
হাদীসটি নিয়ে পর্যালোচনা :
অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ আলোচ্য হাদীসকে জাল হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন । 
সনদ বিচারে দেখা যায় তিনজন অত্যন্ত দূর্বল রাবী , যারা মিথ্যা বর্ণনার সাথে অভিযুক্ত, শুধুমাত্র এরাই হাদীসটিকে রাসূল ( সা: ) এর কথা হিসেবে প্রচার করেছেন । 
এপর্যায়ে আল্লামা ইবনু আদ্দি বলেন : كا ن با لصين ولو- অর্থাৎ-চীন দেশে গিয়ে হলেও কথাটি হাসান ইবনু আতিয়া সংযোজন করেছেন । ইমাম হাকিম নিশাপুরী এবং আল্লামা আলখতীবও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন ।
আলোচ্য হাদীসে আবু আতিকা নামে রাবীটি সকলের ঐক্যমতে দূর্বল এবং জাল
হাদীস বর্ণনাকারী রাবী ।
দ্বিতীয় সনদে উল্লেখিত ইয়াকুব এবং আব্দুল বার সম্পর্কে ইমাম আযযাহাবীসহ 
খ্যাতনামা মুহাদ্দেসীনে কেরাম বলেছেন : তারা উভয়ে মিথ্যুক ও জাল হাদীস বর্ণনাকারী ।
তৃতীয় সনদে উল্লেখিত যুওয়াইবারী সম্পর্কে আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়ূতী ( রহ) বলেছেন : যুওয়াইবারী হাদীস জালকারী রাবী ।
চতুর্থ হাদীস :
اصحا بى كا لنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم
অনুবাদ : আমার সাহাবাগণ নক্ষত্রের ন্যায় ; তোমরা তাদের যে কোন একজনের 
অনুসরণ করলে সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে ।
আলোচ্য হাদীসটি সিহাহ্ সিত্তাহতো দূরের কথা, কোন প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ নেই । হাদীসটির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যেক সনদেরই একাধিক রাবী জাল, দূর্বল ও মিথ্যূক বলে অভিযুক্ত ।
তথ্যসূত্র :
ইবনু আব্দুল বার জামিউল ইলম ” ( ২ / ৯১ পৃষ্ঠা ) 
ইবনু হাযেম ( আল আহকাম- ৬ / ৮২ পৃষ্ঠা ) 
সালাম ইবনু সুলাইম সূত্রে হারেস ইবনু হুসাইন হতে , তিনি আবু সুফিয়ান হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন । 
পর্যালোচনা :
আল্লামা ইবনু আব্দুল বার হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন : এ সনদটি 
দ্বারা দলিল সাব্যস্ত হয় না ; কারণ এই সনদের বর্ণনাকারী হারিস ইবনু গোসাইন অজ্ঞাত ব্যক্তি । 
আল্লামা ইবনু হাযম (রহ: ) বলেন : এ বর্ণনাটি নিম্ন পর্যায়ের । তাতে আবুসুফিয়ান নামক জনৈক ব্যক্তি রয়েছে , তিনি দূর্বল । আর হারিস ইবনু হোসাইন অজ্ঞাত ব্যক্তি । আর সালাম ইবনু সুলাইম কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন । এটি নি:সিন্দেহে সেগুলোর একটি । 
 
আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী ( রহ: ) বলেন : সালাম ইবনু সুলাইমের দূর্বলতার ব্যাপারে সমস্ত মুহাদ্দিস একমত । এমনকি তার সম্পর্কে খাররাশ
(
রহ: ) বলেন- তিনি মিথ্যুক । 
আল্লামা ইবনু হিব্বান বলেন : তিনি কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন ।
পঞ্চম হাদীস :
نوم العا لم خير من عبا دة الجاهل
অনুবাদ: মূর্খের ইবাদতের চেয়ে আলেমের ঘুম উত্তম ।
পর্যালোচনা : 
হাদীসটি জাল । সহীহ্ , জয়ীফ বা মাউযু কোন সনদেই একথাটির কোন অস্থিত্ব নেই ।
আহবান :

আমল কবুল হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হচ্ছে আমলটি অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহর মাপকাঠিতে সঠিক হতে হবে । জাল হাদীসের উপর আমল বা বিশ্বাস করলে সেটি ছুওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ অবধারিত হবে । তাই আমাদেরকে
অবশ্যই জাল হাদীসের প্রচার ও আমল করা থেকে বিরত থকতে হবে । আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জাল হাদীসের প্রচার ও আমল করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন । -আমীন 
                                     (প্রচারে শাহাজাহান আলী)
বিনীত নিবেদক 
আল্লাহর গোলাম
মো: ইসহাক মিয়া
সহকারী অধ্যাপক ( কামিল হাদীস বিভাগ )
বিজুল দারুল হুদা কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা 
বিরামপুর , দিনাজপুর ।

No comments:

Post a Comment