শাহাজাহান |
জাল হাদীস বলতে কি বুঝায়
জাল হাদীসকে হাদীস শাশ্ত্রের পরিভাষায় االحديثالموضو ع) ( বলা হয় । موضوع শব্দটি আরবী وضع ধাতু থেকে নির্গত। যার অর্থ- কোন জিনিস নতুন করে বানানো । মিথ্যা উপাখ্যান তৈরী করা ইত্যাদি ।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : রাসূল (সা: ) যা বলেননি , এমন
কথাকে রাসূল (সা:)
এর বক্তব্য বলে চালিয়ে দেওয়াকে মাওযু বা জাল হাদীস বলে ।
এর বক্তব্য বলে চালিয়ে দেওয়াকে মাওযু বা জাল হাদীস বলে ।
মুহাদ্দিসগণের মতে জাল হাদীসের সংজ্ঞা :
• আল্লামা ড. মাহমুদ ত্বাহা বলেন –هو الكذب المختلق المنسوب الى رسول الله – অর্থাৎ-মিথ্যা মনগড়া বক্তব্য বা কথা নিজে থেকে তৈরী করে তা
রাসূল (সা:) এর বক্তব্য বলে চালিয়ে দেওয়াকে মাওযু হাদীস বলে ।
• আল্লামা ড. আবুবকর বলেন –
هو المختلق المصنوع المكذوب
على رسول الله ( ص) –
অর্থাৎ-বানানো বক্তব্যকে রাসূল (সা: ) এর হাদীস বলে মিথ্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়াকে জাল হাদীস বলে ।
মোদ্দাকথা- জাল হাদীস রাসূল ( সা: ) যবান নি:সৃত বাণী নয় । মানুষ নিজের খেয়াল-খুশি মত মিথ্যা সনদ ও মতন তৈরী করত: তা হাদীসের নামে চালিয়ে দিয়েছে ।
শারঈ মানদন্ডে জাল হাদীসের হুকুম বা বিধান : জাল হাদীস রচনা করা, বর্ণনা করা ও লিখন হারাম । এটি মারাত্মক ধরনের একটি কাবীরাহ গুনাহ । জাল হাদীস বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে হাদীসে জাহান্নামের ফায়সালা দেওয়া হয়েছে । এ পর্যায়ে হাদীস বর্ণিত হচ্ছে ।
অর্থাৎ-বানানো বক্তব্যকে রাসূল (সা: ) এর হাদীস বলে মিথ্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়াকে জাল হাদীস বলে ।
মোদ্দাকথা- জাল হাদীস রাসূল ( সা: ) যবান নি:সৃত বাণী নয় । মানুষ নিজের খেয়াল-খুশি মত মিথ্যা সনদ ও মতন তৈরী করত: তা হাদীসের নামে চালিয়ে দিয়েছে ।
শারঈ মানদন্ডে জাল হাদীসের হুকুম বা বিধান : জাল হাদীস রচনা করা, বর্ণনা করা ও লিখন হারাম । এটি মারাত্মক ধরনের একটি কাবীরাহ গুনাহ । জাল হাদীস বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে হাদীসে জাহান্নামের ফায়সালা দেওয়া হয়েছে । এ পর্যায়ে হাদীস বর্ণিত হচ্ছে ।
প্রথম হাদীস :
عن عبد الله بن عمرو ( رض)
قا ل : قا ل رسول الله ضلى الله عليه و سلم : من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من
النار – ( رواه البخارى، رقم الحديث: (3461 ) – و الترمذى ، ( 2951 ) كل مطبع مصر )
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ( রা: ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন : রাসূল ( সা: )
বলেছেন : যে ব্যক্তি আমার ব্যাপারে মনগড়া মিথ্যা কথা রচনা করলো , সে তার ঠিকানা জাহান্নামে করে নিক । ( তথ্যসূত্র- বুখারী=হাদীস নং-৩৪৬১ - তিরমিজী =
২৯৫১)
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ( রা: ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন : রাসূল ( সা: )
বলেছেন : যে ব্যক্তি আমার ব্যাপারে মনগড়া মিথ্যা কথা রচনা করলো , সে তার ঠিকানা জাহান্নামে করে নিক । ( তথ্যসূত্র- বুখারী=হাদীস নং-৩৪৬১ - তিরমিজী =
২৯৫১)
প্রথম হাদীস :
• لولا خلقتك لما خلقت الافلا ك-
অনুবাদ: হে মুহাম্মাদ ! আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না ।
অনুবাদ: হে মুহাম্মাদ ! আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না ।
হাদীসটির সনদ :
ইমাম হাকিম নিশাপুরী ‘‘মুস্তাদরাক” গ্রন্থে
(২/ ৬১০ পৃষ্ঠা ) , তাঁর সূত্রে ইবনু আসাকির ( ২/ ৩২৩ পৃষ্ঠা ) এবং ইমাম
বায়হাক্বী দালায়েলুন নাবুওয়াহ গ্রন্থে ( ৫/ ৪৮৮ পৃষ্ঠা ) মারফু হিসেবে আবুল হারিস
আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম আলফিহরী সূত্রে
আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম হতে বর্ণনা করেছেন ।
আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম হতে বর্ণনা করেছেন ।
হাদীসটির মতন :
হযরত আদম আদম (আ: ) যখন গুনাহ করে ফেললেন, তিনি
বললেন: হে আমার প্রভূ ! তোমার নিকট মুহাম্মাদকে সত্য জেনে তার ওছিলা ধরে প্রার্থনা
করছি । তার ওছিলায় তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও । আল্লাহ বললেন : হে আদম ! তুমি
কিভাবে মুহাম্মাদকে চিনলে ? অথচ এখন পর্যন্ত আমি তাকে সৃষ্টি করিনি । আদম ( আ: ) বললেন:
হে আমার প্রভূ ! আপনি আমাকে যখন আপনার হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন এবং আমার মধ্যে
আত্মার প্রবেশ ঘটান , তখন আমি মাথা উচু করে আরশে মুয়াল্লায় লিখা দেখলাম الا اله الا الله محمد رسول الله - । তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, আপনার
কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় ব্যতীত অন্য কেউ আপনার পবিত্র নামের সাথে সম্পৃক্ত হতে
পারে না । একথা শুনে আল্লাহ পাক বল্লেন : সত্যই বলেছো হে আদম । নিশ্চয়ই তিনি আমার
নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় । তুমি তাকে ওছিলা ধরে আমাকে ডাকো । আমি তোমাকে ক্ষমা করে
দিব । মুহাম্মাদকে যদি সৃষ্টি না করা হতো , তবে
আমি সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না ।
হাদীসটি নিয়ে পর্যালোচনা :
• আল্লামা ইমাম আযযাহাবী (রহ: ) বলেছেন : আলোচ্য হাদীসটি জাল
তথা
বানোয়াট। আব্দুর রহমান দূর্বল রাবী । আর আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম আলফিহরী অজ্ঞাত ব্যক্তি । অর্থাৎ- আসমাউর রিজাল তথা রিজাল শাস্ত্রে যার কোন পরিচিতি নেই ।
*আল্লামা নাছির উদ্দিন আলবানী (রহ: ) বলেছেন : ফিহরীর রেওয়ায়েতকৃত হাদীসটি বাতিল ।
* আল্লামা ইবনু কাছির (রহ : ) তাঁ রচিত “ আততারিখ ” গ্রন্থে ( ২/ ৩২৩ পৃষ্ঠা ) অনুরূপ মন্তব্য করেছেন ।
* আল্লামা ইবনু হিব্বান (রহ: ) অত্র হাদীসের রাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম ইবনে রাশীদ আলফাহরী সম্পর্কে বলেন – তিনি হাদীস জাল করার দোষে দুষ্ট । তিনি লাইস, মালিক এবং ইবনু লাহিয়ার সূত্র ধরে হাদীস জাল করেছেন ।সুতরাং তার হাদীস বর্ণনা বৈধ নয় ।
* আল্লামা ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ ( রহ: ) বলেন : হাদীসে বর্ণিত আব্দুর রহমান ইবনু আসলাম জাল হবার বিষয়ে সকল মুহাদ্দিসগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন ।
* ইমাম ত্বাহাবী (রহ: ) বলেন : উপর্যুক্ত রাবীর হাদীস ওলামাদের নিকট চরম পর্যায়ের দূর্বল ।
* আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ:) আর ও বলেছেন : সম্ভবত: হাদীসটি ইসরাঈলী রেওয়ায়েত হতে এসেছে । আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ মারফু করে চালিয়ে দিয়েছেন । মোদ্দা কথা হাদীসটি ভিত্তিহীন ।
বানোয়াট। আব্দুর রহমান দূর্বল রাবী । আর আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম আলফিহরী অজ্ঞাত ব্যক্তি । অর্থাৎ- আসমাউর রিজাল তথা রিজাল শাস্ত্রে যার কোন পরিচিতি নেই ।
*আল্লামা নাছির উদ্দিন আলবানী (রহ: ) বলেছেন : ফিহরীর রেওয়ায়েতকৃত হাদীসটি বাতিল ।
* আল্লামা ইবনু কাছির (রহ : ) তাঁ রচিত “ আততারিখ ” গ্রন্থে ( ২/ ৩২৩ পৃষ্ঠা ) অনুরূপ মন্তব্য করেছেন ।
* আল্লামা ইবনু হিব্বান (রহ: ) অত্র হাদীসের রাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম ইবনে রাশীদ আলফাহরী সম্পর্কে বলেন – তিনি হাদীস জাল করার দোষে দুষ্ট । তিনি লাইস, মালিক এবং ইবনু লাহিয়ার সূত্র ধরে হাদীস জাল করেছেন ।সুতরাং তার হাদীস বর্ণনা বৈধ নয় ।
* আল্লামা ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ ( রহ: ) বলেন : হাদীসে বর্ণিত আব্দুর রহমান ইবনু আসলাম জাল হবার বিষয়ে সকল মুহাদ্দিসগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন ।
* ইমাম ত্বাহাবী (রহ: ) বলেন : উপর্যুক্ত রাবীর হাদীস ওলামাদের নিকট চরম পর্যায়ের দূর্বল ।
* আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ:) আর ও বলেছেন : সম্ভবত: হাদীসটি ইসরাঈলী রেওয়ায়েত হতে এসেছে । আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ মারফু করে চালিয়ে দিয়েছেন । মোদ্দা কথা হাদীসটি ভিত্তিহীন ।
দ্বিতীয় হাদীস :
عن المغيرة بن شعبة ( رض ) قا ل : قا ل رسول الله صلى الله عليه وسلم : من حدث عنى بحديث
يرى أ نه كذ ب فهو احد الكا ذبين - ( رواه مسلم فى المقدمه ) – অনুবাদ : যে ব্যক্তি আমার উদ্বৃতি দিয়ে এমন কথা বর্ণনা করলো , যা আমি বলেনি; অথচ স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে বর্ণনা করলো । সে মিথ্যুক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে একজন অন্যতম মিথ্যাবাদী । তথ্যসূত্র : সহীহ মুসলিম ( মুকাদ্দামা )
يرى أ نه كذ ب فهو احد الكا ذبين - ( رواه مسلم فى المقدمه ) – অনুবাদ : যে ব্যক্তি আমার উদ্বৃতি দিয়ে এমন কথা বর্ণনা করলো , যা আমি বলেনি; অথচ স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে বর্ণনা করলো । সে মিথ্যুক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে একজন অন্যতম মিথ্যাবাদী । তথ্যসূত্র : সহীহ মুসলিম ( মুকাদ্দামা )
জাল হাদীস প্রনয়নের নেপথ্যে যারা জড়িত ছিল :
জাল হাদীস প্রনয়নে সাহাবায়ে কিরাম সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলন্বন করতেন । তাঁদের মধ্যে কেউ এই ঘৃণ কাজটি করেননি । খিলাফতে রাশেদার শেষের দিকে কিছুসংখ্যক তাবেয়ী দ্বারা একাজটির সূত্রপাত হয় ।
হযরত উছমান ( রা: ) এর খিলাফতের শেষের দিকে এবং আলী (রা: ) এর সময়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দর্শনের মতপার্থক্যকে কেন্দ্র করে হিজরী প্রথম শতাবাদীর শেষার্ধে জাল হাদীস প্রনয়নের সূচনা হয় ।ধর্মীয় লেবাসে খারেজী, শী’য়া, মুতাযিলা, ক্বাদরিয়া, জাবরিয়া, মুরজিয়া, জুহুমিয়া, বারাহিমা প্রভৃতি পথভ্রষ্ট ফের্কাসমূহ তাদরে স্ব স্ব ধর্মীয় ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে উক্ত অপকর্মে নগ্ন ভূমিকা পালন করে ।বিশেষ করে শি’য়া, মুতাযিলা ও ইহুদী- খ্রিষ্টানদের দোসর যিন্দকরা ছিল এক্ষেত্রে অগ্রগামী । একশ্রেণীর বিদআতী আলেম ও তার অনুসারী দল , ছুফি , দরবেশ , পীর , অসৎ ব্যবসায়ী , স্বৈর শাসকদের অনুগত তল্পীবাহী সেবাদাস, যারা তদানিন্তন সময়ের স্বৈর শাসকদের দু:সাসনের বৈধ অনুমোদন দেওয়ার লক্ষ্যে জাল হাদীস রচনার মত জঘন্য কর্মে লিপ্ত হয় । এ ছাড়াও কবি সাহিত্যিক , পেশাদার বক্তাগণ এই ঘৃর্ণ অপকর্মে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে । এসব কুচক্রি মহল তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে হাজার হাজার জাল হাদীস তৈরী করত: তা মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে দেয় ।
ওলামায়ে মুহাদ্দেসীন এ পর্যায়ে নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে হদীস শাস্ত্রের মূলনীতি প্রনয়ন করত: ছহীহ, জয়ীফ, মাতরুক, মুনকার, মুআল্লাল, শায ও মাওযু হাদীস সমূহ শনাক্ত করেন । তারা মুসলিম উম্মাহকে জাল হাদীস বর্ণনা ও আমল করা থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে জাল হাদীসের উপর বহুসংখ্যক স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেন ।
বহুসংখ্যক জাল হাদীস আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে । এসবের উপর নির্দ্বিধায় বক্তব্য ও আমল চলছে । অথচ জাল হাদীস বর্ণনা ও এর উপর আমল করতে রাসূল ( সা: ) নিষেধ করেছেন । এ পর্যায়ে জনগনের অবগতির লক্ষ্যে উদাহরণস্বরূপ বক্ষমান প্রবন্ধে পাঁচটি জাল হাদীস নিয়ে পর্যালোচিত হচ্ছে । আলোচিত পাঁচটি হাদীস জাল হওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববরেন্য ওলামায়ে মুহাদ্দেসীন ঐক্যমত পোষণ করেছেন । নিম্নে তা ধারাবাহিকভাবে আলোচিত হলো ।
দ্বিতীয় হাদীস :
اول ما خلق الله نورى –
অনুবাদ : সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন ।
অনুবাদ : সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন ।
হাদীসটির মতন :
হযরত জাবির (রা: ) রাসূল ( সা: ) কে প্রশ্ন করলেন : আল্লাহ
তায়ালা সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেন ? উত্তরে
রাসূল ( সা: ) বলেন : اول ما خلق الله نورى অর্থাৎ-সর্ব প্রথম
আল্লাহ তায়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন । এরপর এই সূদীর্ঘ হাদীসে উল্লেখিত
হয়েছে যে, অত:পর এই নূরকে বিভিন্নভাগে ভাগ করে তা থেকে আরশ-কুরছি, লাওহ-কলম, ফেরেশ্তা , জ্বিন , ইনসান , আসমান-যমীন এবং সমগ্র বিশ্বকে সৃষ্টি করা হয় ।
আল্লাহ তায়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন । এরপর এই সূদীর্ঘ হাদীসে উল্লেখিত
হয়েছে যে, অত:পর এই নূরকে বিভিন্নভাগে ভাগ করে তা থেকে আরশ-কুরছি, লাওহ-কলম, ফেরেশ্তা , জ্বিন , ইনসান , আসমান-যমীন এবং সমগ্র বিশ্বকে সৃষ্টি করা হয় ।
পর্যালোচনা :
বিশ্ববরেন্য মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাপারে ঐক্যৈমত পোষণ করেছেন যে, আলোচ্য
হাদীসটি প্রাচীন যুগের কোন ছহীহ হাদীস গ্রন্থে পাওয়া যায় না । আলোচ্য হাদীসটি
ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা ।
কেউ কেউ দাবী করেছেন : হাদীসটি ইমাম বায়হাক্বী ও আব্দুর রাজ্জাক সানআনী তাঁদের সংকলিত হাদীসগ্রন্থে সংকলন করেছেন । কিন্তু তাদের এই দাবী ভিত্তিহীন ।
কারণ ইমাম বাইহাক্বী ও আব্দুর রাজ্জাক সানআনীর কোন গ্রন্থেই এই হাদীসটি নেই ।
এমনকি মাওযু বা মিথ্যা সনদেও এই হাদীসটি কোন হাদীস গ্রন্থে সংকলিত হয়নি ।
রাসূল ( সা: ) এর যুগ থেকে পরবর্তী পাঁচশত বছর পর্যন্ত কেউ এ হাদীস জানতেন না ।
ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা ।
কেউ কেউ দাবী করেছেন : হাদীসটি ইমাম বায়হাক্বী ও আব্দুর রাজ্জাক সানআনী তাঁদের সংকলিত হাদীসগ্রন্থে সংকলন করেছেন । কিন্তু তাদের এই দাবী ভিত্তিহীন ।
কারণ ইমাম বাইহাক্বী ও আব্দুর রাজ্জাক সানআনীর কোন গ্রন্থেই এই হাদীসটি নেই ।
এমনকি মাওযু বা মিথ্যা সনদেও এই হাদীসটি কোন হাদীস গ্রন্থে সংকলিত হয়নি ।
রাসূল ( সা: ) এর যুগ থেকে পরবর্তী পাঁচশত বছর পর্যন্ত কেউ এ হাদীস জানতেন না ।
যতটুকু জানা যায় , হিজরীর
৭ম শতকের প্রসিদ্ধ আলিম মহিউদ্দিন ইবনু আরাবী ও আবুবকর মুহাম্মাদ ইবনু আলী তাঈ
হাতেমী ( ৫৬০-৬৩৮ ) সর্বপ্রথম এই কথাগুলো হাদীস হিসেবে চালিয়ে দেন । ইবনু আরাবী
তার রচিত গ্রন্থে অগণিত জাল হাদীস উল্লেখ করেছেন । পরবর্তীযুগের মুহাদ্দিস
মুজাদ্দিদ আলফেসানীসহ বিশ্ববরেন্য ওলামায়ে কিরাম ইবনু আরাবীর এ সকল জাল ও
ভিত্তিহীন বর্ণনার প্রতিবাদ করেছেন ।
উল্লেখ্য যে, সহীহ
হাদীস দ্বারা প্রমানিত , আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন । নিম্নে সে
সহীহ হাদীসটি আলোচিত হলো ।
عن عبادة بن الصا مت ( رض )
قا ل : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ان ا و ل ما خلق الله القلم ،
فقا ل له اكتب ، فقا ل : ما اكتب ؟ قا ل : اكتب القد ر ، فكتب ما كان هو كائن الى الابد - ( رواه الترمذى – رقم الحديث = 2081)
অনুবাদ : উবাদাহ ইবনু ছামিত ( রা: ) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন । অত:পর তিনি কলমকে বললেন : লিখ । কলম বললো : কি লিখবো ? আল্লাহ বললেন : মানূষের তাক্বদীর লিখ । সুতরাং যা ছিল এবং শেষাবধি যা ঘটবে , তা সে লিখলো ।
( তথ্যসূত্র : তিরমিজি= হাদীস নং- ২০৮১ )
আলোচ্য সহীহ হাদীসটি দ্বারা প্রমানিত হলো যে, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন । সুতরাং সর্বপ্রথম রাসূল ( সা: ) এর নূর সৃষ্টি করার বানোয়াট ও মিথ্যা হাদীসটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য হবে ।
فقا ل له اكتب ، فقا ل : ما اكتب ؟ قا ل : اكتب القد ر ، فكتب ما كان هو كائن الى الابد - ( رواه الترمذى – رقم الحديث = 2081)
অনুবাদ : উবাদাহ ইবনু ছামিত ( রা: ) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূল ( সা: ) বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন । অত:পর তিনি কলমকে বললেন : লিখ । কলম বললো : কি লিখবো ? আল্লাহ বললেন : মানূষের তাক্বদীর লিখ । সুতরাং যা ছিল এবং শেষাবধি যা ঘটবে , তা সে লিখলো ।
( তথ্যসূত্র : তিরমিজি= হাদীস নং- ২০৮১ )
আলোচ্য সহীহ হাদীসটি দ্বারা প্রমানিত হলো যে, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন । সুতরাং সর্বপ্রথম রাসূল ( সা: ) এর নূর সৃষ্টি করার বানোয়াট ও মিথ্যা হাদীসটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য হবে ।
তৃতীয় হাদীস :
• اطلبوا العلم ولو كان بالصين –
অনুবাদ: চীন দেশে গিয়ে হলেও তোমরা জ্ঞান অন্বেষণ করো ।
অনুবাদ: চীন দেশে গিয়ে হলেও তোমরা জ্ঞান অন্বেষণ করো ।
হাদীসটির সনদসূত্র :
কয়েকটি সূত্রধরে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে ।
১ম সূত্র :
হাসান ইবনু আতিয়া আবু আতিকা তুরায়ীফ ইবনু সুলায়মান সূত্রে
বর্ণনা করেছেন ।
দ্বিতীয় সূত্র : ইয়াকুব ইবনু ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আসকালানীর সূত্র ধরে আব্দুল বার বর্ণনা করেছেন ।
তৃতীয় সূত্র : আহমদ ইবনু আব্দুল্লাহ যুওয়াবারীর সূত্র ধরে বর্ণনা করেছেন ।
দ্বিতীয় সূত্র : ইয়াকুব ইবনু ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আসকালানীর সূত্র ধরে আব্দুল বার বর্ণনা করেছেন ।
তৃতীয় সূত্র : আহমদ ইবনু আব্দুল্লাহ যুওয়াবারীর সূত্র ধরে বর্ণনা করেছেন ।
হাদীসটির তথ্যসূত্র :
• ইবনু আদি রচিত “আলকামিল
” ( ১/ ২৯২ পৃষ্ঠা ) ।
• আল্লামা ইবনু জাওযী রচিত “ আলমাউযুআত ” ( ১ / ১৫৪ পৃষ্ঠা )
• আলামা সাখাবী রচিত “ আলমাক্বাসিদ ” ( ৮৩ পৃষ্ঠা )
• আল্লামা যারকানী রচিত ( মুখতাসারুল মাক্বাসিদ -৬১ পৃষ্ঠা )
• আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী রচিত ( সিলসিলাতুজ জ্বায়ীফা -১ / ৩০০ পৃষ্ঠা
• আল্লামা ইবনু জাওযী রচিত “ আলমাউযুআত ” ( ১ / ১৫৪ পৃষ্ঠা )
• আলামা সাখাবী রচিত “ আলমাক্বাসিদ ” ( ৮৩ পৃষ্ঠা )
• আল্লামা যারকানী রচিত ( মুখতাসারুল মাক্বাসিদ -৬১ পৃষ্ঠা )
• আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী রচিত ( সিলসিলাতুজ জ্বায়ীফা -১ / ৩০০ পৃষ্ঠা
হাদীসটি নিয়ে পর্যালোচনা :
অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ আলোচ্য হাদীসকে জাল হাদীস বলে উল্লেখ
করেছেন ।
সনদ বিচারে দেখা যায় তিনজন অত্যন্ত দূর্বল রাবী , যারা মিথ্যা বর্ণনার সাথে অভিযুক্ত, শুধুমাত্র এরাই হাদীসটিকে রাসূল ( সা: ) এর কথা হিসেবে প্রচার করেছেন ।
এপর্যায়ে আল্লামা ইবনু আদ্দি বলেন : كا ن با لصين ولو- অর্থাৎ-“ চীন দেশে গিয়ে হলেও ” কথাটি হাসান ইবনু আতিয়া সংযোজন করেছেন । ইমাম হাকিম নিশাপুরী এবং আল্লামা আলখতীবও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন ।
সনদ বিচারে দেখা যায় তিনজন অত্যন্ত দূর্বল রাবী , যারা মিথ্যা বর্ণনার সাথে অভিযুক্ত, শুধুমাত্র এরাই হাদীসটিকে রাসূল ( সা: ) এর কথা হিসেবে প্রচার করেছেন ।
এপর্যায়ে আল্লামা ইবনু আদ্দি বলেন : كا ن با لصين ولو- অর্থাৎ-“ চীন দেশে গিয়ে হলেও ” কথাটি হাসান ইবনু আতিয়া সংযোজন করেছেন । ইমাম হাকিম নিশাপুরী এবং আল্লামা আলখতীবও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন ।
আলোচ্য হাদীসে আবু আতিকা নামে রাবীটি সকলের ঐক্যমতে দূর্বল
এবং জাল
হাদীস বর্ণনাকারী রাবী ।
হাদীস বর্ণনাকারী রাবী ।
দ্বিতীয় সনদে উল্লেখিত ইয়াকুব এবং আব্দুল বার সম্পর্কে ইমাম
আযযাহাবীসহ
খ্যাতনামা মুহাদ্দেসীনে কেরাম বলেছেন : তারা উভয়ে মিথ্যুক ও জাল হাদীস বর্ণনাকারী ।
খ্যাতনামা মুহাদ্দেসীনে কেরাম বলেছেন : তারা উভয়ে মিথ্যুক ও জাল হাদীস বর্ণনাকারী ।
তৃতীয় সনদে উল্লেখিত যুওয়াইবারী সম্পর্কে আল্লামা জালাল
উদ্দিন সূয়ূতী ( রহ) বলেছেন : যুওয়াইবারী হাদীস জালকারী রাবী ।
চতুর্থ হাদীস :
• اصحا بى كا لنجوم بايهم اقتديتم
اهتديتم –
অনুবাদ : “আমার সাহাবাগণ নক্ষত্রের ন্যায় ; তোমরা তাদের যে কোন একজনের
অনুসরণ করলে সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে । ”
অনুবাদ : “আমার সাহাবাগণ নক্ষত্রের ন্যায় ; তোমরা তাদের যে কোন একজনের
অনুসরণ করলে সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে । ”
আলোচ্য হাদীসটি সিহাহ্ সিত্তাহতো দূরের কথা, কোন
প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ নেই । হাদীসটির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যেক সনদেরই
একাধিক রাবী জাল, দূর্বল ও মিথ্যূক বলে অভিযুক্ত ।
তথ্যসূত্র :
• ইবনু আব্দুল বার “ জামিউল
ইলম ” ( ২ / ৯১ পৃষ্ঠা )
• ইবনু হাযেম ( আল আহকাম- ৬ / ৮২ পৃষ্ঠা )
• সালাম ইবনু সুলাইম সূত্রে হারেস ইবনু হুসাইন হতে , তিনি আবু সুফিয়ান হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ।
পর্যালোচনা :
• আল্লামা ইবনু আব্দুল বার হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন : এ সনদটি
দ্বারা দলিল সাব্যস্ত হয় না ; কারণ এই সনদের বর্ণনাকারী হারিস ইবনু গোসাইন অজ্ঞাত ব্যক্তি ।
• আল্লামা ইবনু হাযম (রহ: ) বলেন : এ বর্ণনাটি নিম্ন পর্যায়ের । তাতে আবুসুফিয়ান নামক জনৈক ব্যক্তি রয়েছে , তিনি দূর্বল । আর হারিস ইবনু হোসাইন অজ্ঞাত ব্যক্তি । আর সালাম ইবনু সুলাইম কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন । এটি নি:সিন্দেহে সেগুলোর একটি ।
• আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী ( রহ: ) বলেন : সালাম ইবনু সুলাইমের দূর্বলতার ব্যাপারে সমস্ত মুহাদ্দিস একমত । এমনকি তার সম্পর্কে খাররাশ
( রহ: ) বলেন- তিনি মিথ্যুক ।
• আল্লামা ইবনু হিব্বান বলেন : তিনি কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন ।
• ইবনু হাযেম ( আল আহকাম- ৬ / ৮২ পৃষ্ঠা )
• সালাম ইবনু সুলাইম সূত্রে হারেস ইবনু হুসাইন হতে , তিনি আবু সুফিয়ান হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ।
পর্যালোচনা :
• আল্লামা ইবনু আব্দুল বার হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন : এ সনদটি
দ্বারা দলিল সাব্যস্ত হয় না ; কারণ এই সনদের বর্ণনাকারী হারিস ইবনু গোসাইন অজ্ঞাত ব্যক্তি ।
• আল্লামা ইবনু হাযম (রহ: ) বলেন : এ বর্ণনাটি নিম্ন পর্যায়ের । তাতে আবুসুফিয়ান নামক জনৈক ব্যক্তি রয়েছে , তিনি দূর্বল । আর হারিস ইবনু হোসাইন অজ্ঞাত ব্যক্তি । আর সালাম ইবনু সুলাইম কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন । এটি নি:সিন্দেহে সেগুলোর একটি ।
• আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী ( রহ: ) বলেন : সালাম ইবনু সুলাইমের দূর্বলতার ব্যাপারে সমস্ত মুহাদ্দিস একমত । এমনকি তার সম্পর্কে খাররাশ
( রহ: ) বলেন- তিনি মিথ্যুক ।
• আল্লামা ইবনু হিব্বান বলেন : তিনি কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন ।
পঞ্চম হাদীস :
• نوم العا لم خير من عبا دة الجاهل –
অনুবাদ: “ মূর্খের ইবাদতের চেয়ে আলেমের ঘুম উত্তম ।”
পর্যালোচনা :
হাদীসটি জাল । সহীহ্ , জয়ীফ বা মাউযু কোন সনদেই একথাটির কোন অস্থিত্ব নেই ।
অনুবাদ: “ মূর্খের ইবাদতের চেয়ে আলেমের ঘুম উত্তম ।”
পর্যালোচনা :
হাদীসটি জাল । সহীহ্ , জয়ীফ বা মাউযু কোন সনদেই একথাটির কোন অস্থিত্ব নেই ।
আহবান :
আমল কবুল
হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হচ্ছে আমলটি অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহর মাপকাঠিতে সঠিক হতে হবে ।
জাল হাদীসের উপর আমল বা বিশ্বাস করলে সেটি ছুওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ অবধারিত হবে ।
তাই আমাদেরকে
অবশ্যই জাল হাদীসের প্রচার ও আমল করা থেকে বিরত থকতে হবে । আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জাল হাদীসের প্রচার ও আমল করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন । -আমীন
(প্রচারে শাহাজাহান আলী)
অবশ্যই জাল হাদীসের প্রচার ও আমল করা থেকে বিরত থকতে হবে । আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জাল হাদীসের প্রচার ও আমল করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন । -আমীন
(প্রচারে শাহাজাহান আলী)
বিনীত নিবেদক
আল্লাহর গোলাম
মো: ইসহাক মিয়া
সহকারী অধ্যাপক ( কামিল হাদীস বিভাগ )
বিজুল দারুল হুদা কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা
বিরামপুর , দিনাজপুর ।
আল্লাহর গোলাম
মো: ইসহাক মিয়া
সহকারী অধ্যাপক ( কামিল হাদীস বিভাগ )
বিজুল দারুল হুদা কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা
বিরামপুর , দিনাজপুর ।
No comments:
Post a Comment