sazu
Thursday 20 December 2018
Thursday 26 July 2018
মোবাইল মসজিদ
টোকিওতে মোবাইল মসজিদ
মোবাইল মসজিদ বানাতে চার বছর লেগেছে। ২৫ টন ট্রাককে একটু বদলিয়ে করে সেটিতে নামাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ৪৮ স্কয়ার মিটার ওই জায়গায় একসঙ্গে ৫০ জন নামাজ পড়তে পারবেন। মোবাইল মসজিদের ভেতর ওজুর জন্য পানি রয়েছে। কিবলার দিকও নির্দেশ করা আছে। এ প্রকল্পের জন্য জাপান সরকার ৯০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে। অলিম্পিকের সময় মোবাইল মসজিদ বিভিন্ন স্টেডিয়ামের সামনে রাখা হবে।
জাপানের টোকিওতে মোবাইল মসজিদে-এক সঙ্গে ৫০ জন নামাজ পড়তে পারবেন। ছবি:
সংগৃহীত২০২০ সালে জাপানের রাজধানী টোকিওতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হবে। ওই সময় অন্যদে সঙ্গে বিশ্বের অনেক মুসলমানও দেশটিতে যাবেন। আর তাই জাপান সরকার ‘মোবাইল মসজিদ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বড় এই ক্রীড়া আসরকে সামনে রেখে এই ‘মোবাইল মসজিদ’ তৈরি করেছে জাপান সরকার।
মোবাইল মসজিদ বানাতে চার বছর লেগেছে। ২৫ টন ট্রাককে একটু বদলিয়ে করে সেটিতে নামাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ৪৮ স্কয়ার মিটার ওই জায়গায় একসঙ্গে ৫০ জন নামাজ পড়তে পারবেন। মোবাইল মসজিদের ভেতর ওজুর জন্য পানি রয়েছে। কিবলার দিকও নির্দেশ করা আছে। এ প্রকল্পের জন্য জাপান সরকার ৯০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে। অলিম্পিকের সময় মোবাইল মসজিদ বিভিন্ন স্টেডিয়ামের সামনে রাখা হবে।
মোবাইল মসজিদের জন্য ৯০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে জাপান সরকার। ছবি: সংগৃহীতমোবাইল মসজিদের এ ধারণার জনক টোকিওর বাসিন্দা ইয়াসুহারু ইনোইউয়ে। এর আগে এথেন্সে ২০০৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকসে ফুটবাথ তৈরি করে ছিলেন তিনি। এরপর ২০১২ সালে লন্ডন গেমসে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন তিনি। কাতারে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে মোবাইল মসজিদ বানানোর এ ধারণা তার চিন্তার মধ্য আসে। তিনি বলেন, নামাজ পড়ার আরামদায়ক পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকসে আমন্ত্রণ জানাতে চাই।
জাপানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টি মসজিদ রয়েছে। তবে ‘মোবাইল মসজিদ’-এর মাধ্যমে যেমন অলিম্পিকের মতো বড় আসরের প্রচার ও প্রসারের কাজ চলছে তেমনি এ ধারণা মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয় করার চেষ্টাও করা হচ্ছে। তথ্যসূত্বর: ইউরো নিউজ, এনএইচকে।
মোবাইল মসজিদের এ ধারণার জনক টোকিওর বাসিন্দা ইয়াসুহারু ইনোইউয়ে। এর আগে এথেন্সে ২০০৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকসে ফুটবাথ তৈরি করে ছিলেন তিনি। এরপর ২০১২ সালে লন্ডন গেমসে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন তিনি। কাতারে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে মোবাইল মসজিদ বানানোর এ ধারণা তার চিন্তার মধ্য আসে। তিনি বলেন, নামাজ পড়ার আরামদায়ক পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকসে আমন্ত্রণ জানাতে চাই।
জাপানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টি মসজিদ রয়েছে। তবে ‘মোবাইল মসজিদ’-এর মাধ্যমে যেমন অলিম্পিকের মতো বড় আসরের প্রচার ও প্রসারের কাজ চলছে তেমনি এ ধারণা মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয় করার চেষ্টাও করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্বর: ইউরো নিউজ, এনএইচকে।
Tuesday 13 February 2018
ভালবাসা দিবসের ইতিহাস
১৪ই ফেব্রয়ারী
সাধু ভ্যালেন্টাইন দিবস বর্তমানে ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ নামে
ব্যাপক উদ্দীপনার সাথে আমাদের দেশে পালিত হয়। মূলত দিবসটি ছিল প্রাচীন ইরোপীয়
গ্রীক-রোমানপৌত্তলিকদের একটি ধর্মীয় দিবস। ভারতীয় আর্যদের মতই প্রাচীন রোমান
পৌত্তলিকগণ মধ্য ফ্রেব্রয়ারী বা ১লা ফাল্গুন ভূমি ও নারী উর্বরতা এবং নারীদের
বিবাহ ও সন্তান কামনায় প্রাচীন দেবদেবীদের বর লাভ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বিভিন্ন
নগ্ন ও অশ্লীল উৎসব পালন করত, যা লুপারকালিয়া (Lupercalia)
উৎসব (feast of Lupercalis)
নামে প্রচলিত ছিল। ইউরোপে খৃস্টান ধর্মের প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা লাভের
পরেও এ সকল অশ্লীল উৎসব অব্যাহত থাকে। পরে একে ‘খৃস্টীয়’
রূপ দেওয়া হয়। ইউরোপে খৃস্টান ধর্মের প্রতিষ্ঠার পরে ধর্মের নামে,
বিশ্বাসের নামে, ডাইনী শিকারের নামে, অবিশ্বাস
বা ধর্মীয় ভিন্নমতের (heresy) অভিযোগে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা ও আগুনে
পুড়িয়ে মারা হলেও, বিভিন্ন প্রকারের অশ্লীলতা, পাপাচার,
মুর্তিপূজা, সাধুপূজা ইত্যাদির প্রশ্রয় দেওয়া
হয়েছে।
বস্তুত হযরত ঈসা (আ)-এর প্রস্থানের কয়েক বৎসর
পরে শৌল নামক এক ইহূদী- যিনি পরে পৌল নাম ধারণ করেন- তাঁর ধর্ম ও শরীয়তকে বিকৃত
করেন। শৌল প্রথমে ঈসা (আ)এর প্রতি যারা ঈমান এনেছিলেন তাদের উপর কঠিন অত্যাচার
করতেন। এরপর হঠাৎ তিনি দাবি করেন যে, যীশু তাকে দেখা দিয়েছেন এবং তাকে ধর্ম
প্রচারের দায়িত্ব দিয়েছেন। ফিলিস্তিনে ঈসা (আ)এর মূল অনুসারীরা তার বিষয়ে সন্দেহ
করার কারণে তিনি এশিয়া মাইনর ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেয়ে খৃস্টান ধর্ম প্রচার
করেন। বর্তমানে প্রচলিত খৃস্টান ধর্মের তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। এ ধর্মের মূলনীতি হলো,
ঈশ্বরের মর্যাদা রক্ষার জন্য যত খুশি মিথ্যা বল। প্রয়োজন মত যত ইচ্ছা
পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে এবং মিথ্যা বলে মানুষকে ‘খৃস্টান’
বানাও।
পৌল নিজেই বলেছেন: For if the truth of God hath more abounded through my lie
unto his glory; why yet am I also judged as a sinner? (বাইবেল, রোমান ৩/৭) কিন—ডু আমার মিথ্যায়
যদি ঈশ্বরের সত্য তাঁহার গৌরবার্থে উপচিয়া পড়ে, তবে আমিও বা এখন
পাপী বলিয়া আর বিচারিত হইতেছি কেন?” ।
বর্তমানে প্রচলিত বাইবেল থেকে যে কোনো পাঠক
দেখবেন যে, যীশু খৃস্ট যেখানে এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে,
সালাত আদায় করতে, সিয়াম পালন করতে, সম্পদ
সঞ্চয় না করতে, নারীর দিকে দৃষ্টিপাত না করতে, শূকরের
মাংস ভক্ষণ না করতে, খাতনা করতে, তাওরাতের সকল
নিয়ম পালন করতে এবং ব্যভিচার বর্জণ করতে, সততা ও পবিত্রতা
অর্জন করতে নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে পৌল এ সকল বিধান সব ‘বাতিল’
করে বলেছেন যে, শুধু যীশুকে ত্রাণকর্তা বিশ্বাস করলেই
চলবে। বরং তিনি এ সকল বিধান নিয়ে নোংরা ভাবে উপহাস করে বলেছেন, বিধান
পালন করে যদি জান্নাতে যেতে হয় তবে যীশু কি জন্য! যীশু-ভক্তির নামে তিনি নিজেই
যীশুর সকল শিক্ষা বাতিল করে দিয়েছেন। পৌল প্রতিষ্ঠিত এ খৃস্টান ধর্মের মূল চরিত্রই
হলো যুক্তি ও দলিল দিয়ে বা পাদরি-পোপদের নামে ধর্মের মধ্যে নতুন নতুন অনুষ্ঠান ও
নিয়মকানুন জারি করা এবং যে সমাজে ও যুগে যা প্রচলিত আছে তাকে একটি “খৃস্টীয়”
নাম দিয়ে বৈধ করে নেওয়া। এজন্য জে. হিকস J. Hicks তার লেখা (The Myth of God Incarnate)
গ্রন্থে বলেন: : "Christianity
has throughout its history been a continuously growing and changing movement of
adjustments".
এ পরিবর্তনের ধারায় ৫ম-৬ষ্ঠ খৃস্টীয় শতকে লুপারকালিয়া
উৎসবকে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বা
সাধু ভ্যালেন্টাইনের দিবস’ নামের চালানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেন্ট
ভ্যালেন্টাইন নামক ব্যক্তিটি কে ছিলেন তা নিয়ে অনেক কথা আছে। তবে মূল কথা হলো,
লুপারকালিয়া উৎসবকে খৃস্টান রূপ প্রদান করা। এভাবে আমরা দেখছি যে,
এ দিবসটি একান্তই পৌত্তলিক ও খৃস্টানদের ধর্মীয় দিবস। কিন্তু বর্তমান
যুগে “বিশ্ব ভালবাসা দিবস” নাম দিয়ে এটিকে ‘ধর্ম
নিরপেক্ষ’ বা সার্বজনীন রূপ দেওয়ার একটি সাম্রাজ্যবাদী
চক্রান্ত কার্যকর। যে দিবসটির কথা কয়েক বৎসর আগে দেশের কেউই জানত না, সে
দিবসটির কথা জানে না এমন মানুষ দেশে নেই বললেই চলে। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমেই এরূপ
করা সম্ভব হয়েছে। এ চক্রান্তের উদ্দেশ্য “ভালবাসা দিবসের”
নামে যুবক-যুবতীদেরকে মাতিয়ে ব্যাপক ‘বাণিজ্য’
করা, যুবক-যুবতীদের
নৈতিক ও চারিত্রিক ভিত্তি নষ্ট করে দেওয়া এবং তাদেরপক ভোগমুখী করে স্থায়ীভাবে
আন্তর্জাতিক ‘বাণিজ্যিক’ সাম্রাজ্যবাদের
অনুগত করে রাখা।
হাযেরীন, ইংরেজী Love, বাংলা ভালবাসা ও
আরবী (محبة) ‘মাহাব্বাত’
একটি হার্দিক কর্ম। পানাহার, দর্শন, শ্রবণ
ইত্যাদি কর্মের মত ভালবাসাও ইসলামের দৃষ্টিতে কখনো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং
কখনো কঠিন নিষিদ্ধ হারাম কর্ম। পিতামাতাকে ভালবাসা, স্বামী-স্ত্রীসন্তানদেরকে
ভালবাসা, ভাইবোনকে ভালবাসা, আত্মীয়-স্বজন,
সঙ্গীসাথী ও বন্ধুদের ভালবাসা, সৎমানুষদেরকে
ভালবাসা, সকল মুসলিমকে ভালবাসা, সকল
মানুষকে ভালবাসা এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহর সকল সৃষ্টিকে ভালবাসা ইসলাম নির্দেশিত
কর্ম। এরূপ ভালবাসা মানুষের মানবীয় মূল্যবোধ উজ্জীবিত করে, হৃদয়কে
প্রশস্ত ও প্রশান্ত করে এবং সমাজ ও সভ্যতার বিনির্মাণে কল্যাণময়, গঠনমূলক
ভূমিকা ও ত্যাগস্বীকারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক
সাম্রাজ্যবাদের প্রচারিত তথাকথিত “বিশ্ব ভালবাসা দিবসে” ভালবাসার
এ দিকগুলি একেবারেই উপেক্ষিত, অথচ সংঘাতময় এ পৃথিবীকে মানুষের
বসবাসযোগ্য করার জন্য এরূপ ভালবাসার প্রচার, প্রসার ও
প্রতিষ্ঠার কতই না প্রয়োজন!
ভালবাসার একটি বিশেষ দিক নারী ও পুরুষের জৈবিক
ভালবাসা। আন্তর্জাতিক বেনিয়া সাম্রাজ্যবাদীরা ‘বিশ্ব ভালবাসা
দিবসের’ নামে শুধু যুবক-যুবতীদের এরূপ জৈবিক ও বিবাহেতর
বেহায়াপনা উস্কে দিচেছ। যুবক-যুবতীদের বয়সের উন্মাদনাকে পুঁজি করে তারা তাদেরকে
অশ্লীলতার পঙ্কিলতার মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে তাদের সাম্রাজ্যবাদী ও বাণিজ্যিক
স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়।
হাযেরীন, ধর্মের নামে
অনেক ধর্মে, বিশেষত পাদ্রী-পুরোহিত নিয়ন্ত্রিত খৃস্টান
ধর্মে নারী-পুরুষের এরূপ ভালবাসা, দৈহিক সম্পর্ক ও পারিবারিক জীবনকে
অবহেলা করা হয়েছে বা ঘৃণার চোখে দেখা হয়েছে। নারীকে শয়তানের দোসর মনে করা হয়েছে।
স্ত্রীর সাহচার্য বা পারিবারিক জীবনকে পরকালের মুক্তির বা আল্লাহর প্রেম অর্জনের
পথে অন্তরায় বলে মনে করা হয়েছে। এজন্য সন্যাস বা বৈরাগ্যকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
এখনো যেখানেই তারা সুযোগ পায় সংসার ও পরিবার বর্জন করে ‘নান’ (হঁহ),
মঙ্ক (সড়হশ) বা সন্যাসী হওয়ার উৎসাহ দেয় এবং এরূপ হওয়াকে ধার্মিকতার
জন্য উত্তম বলে প্রচার করে। মধ্যযুগীয় খৃস্টীয় গীর্জা ও মঠগুলির ইতিহাসে এ সকল
সন্যসী-সন্যাসিনীর অশ্লীলতার বিবরণ পড়লে গা শিউরে ওঠে এবং আধুনিক যুগের অশ্লীল
গল্পের চেয়ে জঘন্যতর অগণিত ঘটনা আমরা দেখতে পাই। বস্তুত, এ সকল চিন্তা
সবই মানবতা বিরোধী ও প্রকৃতি বিরোধী। ইসলামে এরূপ চিন্তা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করা
হয়েছে। পরিবার গঠন করা এবং পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে নারী-পুরুষের এরূপ জৈবিক
প্রেমকে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত বলে গণ্য করা হয়েছে। আমরা অন্য খুতবায় এ বিষয়ে আলোচনা
করেছি।
মুহতারাম হাযেরীন, মানব জাতিকে
টিকিয়ে রাখতে মহান আল্লাহ মানুষের মধ্যে এ জৈবিক ভালবাসা প্রদান করেছেন। এরূপ
ভালবাসার প্রবল আকর্ষণে মানুষ পরিবার গঠন করে, সন্তান গ্রহণ
করে, পরিবার-সন্তানের জন্য সকল কষ্ট অকাতরে সহ্য করে এবং এভাবেই মানব জাতি
পৃথিবীতে টিকে আছে। মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্য এরূপ ভালবাসাকে একমুখী বা
পরিবারমুখী করা অত্যাবশ্যকীয়। যদি কোনো সমাজে পরিবারিক সম্পর্কের বাইরে
নারী-পুরুষের এরূপ ভালবাসা সহজলভ্য হয়ে যায়, তবে সে সমাজে
পরিবার গঠন ও পরিবার সংরক্ষণ অসম্ভব হয়ে যায় এবং ক্রমান্বয়ে সে সমাজ ধ্বংস হয়ে
যায়। এজন্য সকল আসমানী ধর্ম ও সকল সভ্য মানুষ ব্যভিচার ও বিবাহেতর ‘ভালবাসা’
কঠিনতম অপরাধ ও পাপ বলে গণ্য করেছে।
ইসলামে শুধু ব্যভিচারকেই নিষেধ করা হয় নি,
বরং ব্যভিচারের নিকটে নিয়ে যায় বা ব্যভিচারের পথ খুলে দিতে পারে এমন
সকল কর্ম কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সামান্য কয়েকটি আয়াত শুনুন:
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ
رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
“বল, আমার প্রতিপালক হারাম (নিষিদ্ধ) করেছেন
সকল প্রকার অশ্লীলতা, তা প্রকাশ্য হোক আর অপ্রকাশ্য হোক।”
সূরা আ’রাফ:
৩৩ আয়াত।
وَلا تَقْرَبُوا
الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
“তোমরা নিকটবর্তী হয়ো না ব্যভিচারের, নিশ্চয়
তা অশ্লীল এবং নিকৃষ্ট আচরণ।”
সূরা ইসরা (বানী ইসরাঈল): ৩২ আয়াত।
وَلا تَقْرَبُوا
الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
“তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কোনো প্রকারের
অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না।” সূরা আনআম: ১৫১ আয়াত।
হাযেরীন, জঘন্যতম বর্বরতা
হলো ধর্মের নামে অশ্লীলতা। বর্তমান যুগের বাউল, ফকীর, সন্যাসী
নামের প্রতারকদের ন্যায় আরবের অনেক মানুষ র্ধার্মিকতার নামে বা যিক্র, দুআ,
হজ্জ, ধ্যান ইত্যাদির সাথে বেপর্দা, নগ্নতা
বা অশ্লীলতার সংমিশ্রণ ঘটাতো। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন:
وَإِذَا فَعَلُوا
فَاحِشَةً قَالُوا وَجَدْنَا عَلَيْهَا آَبَاءَنَا وَاللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا قُلْ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا
تَعْلَمُونَ
“যখন তারা কোনো অশ্লীল-বেহায়া কর্ম করে তখন বলে
আমাদের পূর্বপুরুষরা এরূপ করতেন বলে আমরা দেখেছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে এরূপ করতে
নির্দেশ দিয়েছেন। বল, আল্লাহ কখনোই অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না,
তোমরা কি আল্লাহর নামে এমন কিছু বলছ যা তোমরা জান না?” সূরা আ’রাফ: ২৮ আয়াত।
ব্যভিচারের পথ রোধের অন্যতম দিক চক্ষু সংযত করা,
অনাত্মীয় নারী-পুরুষের দিকে বা মনের মধ্যে জৈবিক কামনা সৃষ্টি করার
মত কোনো কিছুর দিকে দৃষ্টিপাত না করা। আল্লাহ বলেন:
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ
يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ... وَقُلْ
لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ
“মুমিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের
দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের সম্ভ্রম হিফাজত করে ... মুমিন নারীদেরকে বল, তারা
যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের সম্ভ্রম হিফাজত করে...।” সূরা নূর: ৩০-৩১ আয়াত।
রাসূলুল্লাহ (স.)
বলেন,
فَالْعَيْنَانِ
زِنَاهُمَا النَّظَرُ وَالأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الاسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُ
الْكَلامُ وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا
وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى.
“চক্ষুদ্বয়ের ব্যভিচার দৃষ্টিপাত, কর্ণদ্বয়ের
ব্যভিচার শ্রবণ, জিহ্বার ব্যভিচার কথা বলা, হাতের
ব্যভিচার স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার পদক্ষেপ, অন্তরের
ব্যভিচার কামনা...।”
মুসলিম, আস-সহীহ ৪/২০৭৪।
হাযেরীন, ভালবাসা দিবসের
নামে যা কিছু করা হয় সবই এ পর্যায়ের ব্যভিচার, যা অধিকাংশ সময়ে
চূড়ান্ত ব্যভিচারের পঙ্কিলতার মধ্যে নিমজ্জিত করে। আর এ ভয়ঙ্কর পাপের জন্য আখিরাতে
রয়েছে ভয়ঙ্কর শাস্তি। আর তার আগেই দুনিয়াতেও রয়েছে ভয়াবহ গযব। রাসূলুল্লাহ স. বলেন:
لَمْ تَظْهَرِ
الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلا فَشَا فِيهِمُ
الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلافِهِمِ الَّذِينَ
مَضَوْا
“যখন কোন জাতির মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে
পড়ে যে তারা প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত হতে থাকে, তখন তাদের মধ্যে
এমন সব রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে যা তাদের পুর্বপুরুষদের মধ্যে প্রসারিত ছিল না।”
ইবনু মাজাহ, আস-সুনান
২/১৩৩২; হাকিম, আল-মুস্তাদরাক
৪/৫৮৩, আলবানী, সহীহুল জামি ২/১৩২১, সাহীহাহ
১/২১৬-২১৮।
হাযেরীন, এ হাদীস পড়ে ও
শুনে পাশ্চাত্যের অনেক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কারণ দেড় হাজার বছর পূর্বে
রাসূলুল্লাহ স. যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন
তা আজ আমরা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি। অশ্লীলতার প্রসারের কারণে এইডস নামক ভয়াবহ রোগ
দেখা দিয়েছে, যা ইতোপূর্বে প্রসারিত ছিল না।
হাযেরীন, আল্লাহর এ গযব
থেকে বাঁচতে হলে গযবের কারণ রোধ করতে হবে। কিন্তু আজ এইডস প্রতিরোধের নামে
বেহায়াপনা উস্কে দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় না বুঝে আমরা পাশ্চাত্যের হুবহু অনুকরণ
করি। সাধু পৌল ও তার অনুসারীদের প্রতিষ্ঠিত খৃস্টধর্মে সকল পাপকে প্রশ্রয় দেওয়া
হয়েছে। ফলে পাশ্চাত্যের খৃস্টান সমাজগুলি ব্যভিচারের মহামারিতে আক্রান্ত। “ব্যভিচার
পাপ” একথা বলার মত কোনো সাহস বা সুযোগ সেখানকার পাদরীদেরও নেই। আর এজন্যই
তাদেরকে শুধু সাবধানতা শেখাতে হয়। কিন্তু আমাদের সমাজ তা নয়। আল্লাহর রহমতে আমাদের
সমাজ এ সকল মহামারী থেকে মুক্ত। আমরা যদি পাশ্চাত্যের হুবহু অনুকরণ করি, এইডস
বিরোধী প্রচারণার নামে উস্কানিমুলক প্রচারণা করি, প্রজনন-স্বাস্থ্য
নামে উস্কানিমূলক তথ্য আলোচনা করি, ব্যভিচার বিরোধী মনোভাব হালকা করার
চেষ্টা করি তাহলে আল্লাহর গযব অতি তাড়াতাড়ি নামবে এবং অতি দ্রুত এইডস মহামারী
আকারে ছড়িয়ে পড়বে।
এইডস প্রতিরোধের জন্য একটি অতি-পরিচিত শ্লোগান “বাঁচতে
হলে জানতে হবে”। অর্থাৎ এইডস থেকে বাঁচতে হলে এইড বিষয়ে
বিস্তারিত জানতে হবে। কথাটি ঠিক। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে, গত
শতকের আশির দশকে এইডস আবিস্কৃত হয়েছে। বিগত প্রায় ত্রিশ বছরে বাংলাদেশের মানুষ
এইডস সম্পর্কে কিছুই জানত না তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এইডস নেই বললেই চলে। আর
আমেরিকার মানুষেরা “বাঁচার জন্য যা জানার” প্রয়োজন
সবই জানত, কিন্তু তা সত্ত্বেও সেখানে এইডস প্রায় মহামারী
আকারে। এজন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি জানতে হবে আমেরিকা, ইউরোপ, ভারত,
বার্মা ও পার্শবর্তী দেশগুলিতে এইডস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লেও কেন
তা বাংলাদেশে এখনো প্রায় নেই বললেই চলে? এর কারণ হলো
ধর্মীয় ও নৈতিক চেতনা। বাংলাদেশের হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সকলেই ব্যভিচারকে
কঠিনতম পাপ বলে বর্জন করে, সকলেই একে কঠিনভাবে ঘৃণা করে, ব্যভিচার,
প্রকাশ্যে বেহায়াপনা ও এতদসংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডকে কখনোই প্রশ্রয় দেয়
না। পিতামাতা নামায রোযা না করলেও কখনোই সন্তানদের ব্যভিচারমুখিতা সহ্য করেন না।
মাদকাশক্তির বিষয়েও একই অবস্থা। আর যতদিন এদেশে এ ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ
উজ্জীবিত থাকবে ততদিন কখনোই এদেশে এইডস দেখা যাবে না। বিদেশ থেকে ব্যভিচারের
মাধ্যমে আমদানী করা দু চারজনের মধ্যেই তা সীমিত থাকবে। এজন্য আমরা যদি সত্যিকার
অর্থেই এদেশকে এইডসমুক্ত রাখতে চাই তাহলে ধর্মীয় মূল্যবোধ বিকাশ ও মাদকাশক্তি ও
ব্যভিচারের প্রতি ঘৃণা জাগরুক করতে হবে। এইডস বিরোধী প্রচারণায় মূল কথা হতে হবে,
ব্যভিচার, অশ্লীতা ও মাদকতা হারাম, কাজেই
এগুলি বর্জন কর, তাতেই এইডস থেকে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি কখনো যদি
রক্ত নিতে হয় তবে রক্ত পরীক্ষা করে নিবে এবং ইঞ্জেকশনের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহার
করবে না।
হাযেরীন, পাশ্চাত্য
সভ্যতার অনেক ভাল দিক রয়েছে। তারা জাগতিকভাবে অনেক উন্নতি লাভ করেছে। তবে অশ্লীলতার
প্রসারে যে অবক্ষয় তাকে স্পর্শ করেছে তা তার সকল অর্জনকে ম্লান করেছে এবং সার্বিক
ধ্বংসের পথ উন্মুক্ত করেছে। ‘ভালবাসা’ উন্মুক্ত করে
পথেঘাটে ‘সহজলভ্য’ করে দেওয়া
হয়েছে। ফলে কেউই আর পরিবার গঠনের মত কঠিন ঝামেলাই যেতে চাচ্ছে না। পরিবার গঠন
করলেও পরিবার টিকছে না। বিবাহ বিচ্ছেদের হার খুবই ভয়ঙ্কর। বিবাহেতর ‘জৈবিক’
ভালবাসার সহজলভ্যতাই এগুলির অন্যতম কারণ। ১৯৭০ সালে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০% মানুষ পারিবারিক জীবন যাপন করতেন। ২০০০ সালে সেদেশের
প্রায় ৫০% মানুষ কোনোরকম পারিবারিক বন্ধন ছাড়া একেবারেই পৃথক ও একক জীবন যাপন
করেন। বাকী ৫০% ভাগ যারা পরিবার গঠন করেছেন তাদেরও প্রায় তিনভাগের একভাগের কোনো
সন্তান সন্ততি নেই। পরিবার গঠন, পরিবারের মধ্যে পবিত্র ভালবাসার লালন
এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্ম ও লালন এখন ‘সভ্য’ মানুষদের
উদ্দেশ্য নয়, বরং সভ্য মানুষদের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র ‘অসভ্য’
পশুদের মত নিজে বেঁচে থাকা এবং আনন্দ-ফুর্তি করা। এজন্য
ইউরোপে-আমেরিকায় পারিবারিক কাঠামো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সহিংসতা, স্বার্থপরতা
ও হিংস্রতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্মানিত উপস্থিতি, মানব সভ্যতা
টিকিয়ে রাখার জন্য মানব সমাজে ভালবাসার প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠা
আমাদের দায়িত্ব। পিতামাতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তানসন্ততি,
সৎমানুষ, সকল মুসলমান এবং সকল মানুষের মধ্যে
ভালবাসা ও সহমর্মিতার প্রসারের জন্য আমাদের সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। পারিবারিক
কাঠামোর মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেম-ভালবাসার স্থায়িত্ব ও বৃদ্ধির জন্য
সাম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবে এ সকল ভালবাসার বাণী প্রচারের জন্য ‘ভালবাসা
দিবস’-কে বেছে নেওয়া বৈধ নয়। কারণ আমরা জানি যে, এ দিবসটি
পৌত্তলিক ও খৃস্টানদের একটি ধর্মীয় দিবস। আর কোনো ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় দিবস
পালন করা কুফরী, যাতে মুমিনের ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। আমরা জানি,
পিতামাতা, আত্মীয় স্বজন বা বন্ধুদেরকে আপ্যায়ন
করা বা শুভেচ্ছে বিনিময় করা একটি ভাল কর্ম। কিন্তু দুর্গাপূজা বা বড়দিন উপলক্ষ্যে
কোনো মুমিন এ কাজ করলে তার ঈমান নষ্ট হবে, কারণ তিনি অন্য
ধর্মের বিধান বা দিবস পালন করার মাধ্যমে নিজের ধর্ম বর্জন করেছেন। ভালবাসার দিবসে
পিতামাতা, সন্তানসস্ততি বা স্বামী-স্ত্রীকে মেসেজ পাঠানো,
শুভেচ্ছা জানানো বা উপহার দেওয়াও একই রকমের পাপ। এছাড়া যেহেতু দিবসটি
ভালবাসার নামে বেহায়াপনা ও ব্যভিচার প্রচারের জন্যই নির্ধারিত, সেহেতু
কোনোভাবে এ দিবস পালন করার অর্থ এ দিবস পালনে সহযোগিতা করা এবং একে স্বীকৃতি
দেওয়া।
হাযেরীন, যে যুবক-যুবতী
তার যৌবনকে কলঙ্কমুক্ত ও পবিত্র রাখতে পারবে এবং আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে
থাকতে পারবে তাকে আল্লাহ কেয়ামতের দিন আল্লাহর প্রিয়তম আওলিয়াদের সাথে একই কাতারে
মহান আরশের ছায়ায় স্থান দান করবেন বলে হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। আমি
যুবক-কিশোর মুসল্লীদেরকে অনুরোধ করব, বয়সের উন্মাদনায় ভুলভ্রান্তি ও পাপ হয়ে
যেতে পারে, তবে অন্তুত দুটি বিষয় থেকে সর্বদা আত্মরক্ষা
করবে: ব্যভিচার ও মাদকতা। আর যে কোনো অবস্থায় নামায ছাড়বে না। ইনশা আল্লাহ এ
দুনিয়ার জীবনেই তোমাদের বয়স যখন ৪০/৫০ হবে তখন তোমরাই অনুভব করবে যে, তোমাদের
যে সকল বন্ধু পাপের পথে পা বাড়িয়েছিল তাদের চেয়ে আল্লাহ তোমাদের ভাল রেখেছেন এবং
কিয়ামতে তোমরা আল্লাহর আরশের নীচে মহান ওলীদের কাতারে স্থান লাভ করবে।
সম্মানিত উপস্থিতি, আমাদের নিজেদের সন্তানদের স্বার্থে, জাতির
স্বার্থে, মানব সভ্যতার স্বার্থে এবং আমাদের আখিরাতের
মুক্তির স্বার্থে ‘ভালবাসার’ নামে বেহায়াপনা
ও ব্যভিচারের উস্কানি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে রোধ করা আমাদের অন্যতম জরুরী দায়িত্ব। ‘ভালবাসা’
দিবসের নামে যুবক-যুবতীদের আড্ডা, গল্পগুজব,
মেসেজ আদান প্রদান, উপহার আদান প্রদান, উল্লাস
করা বা অনুরূপ যে কোনো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহেতর ভালবাসার উস্কানি দেওয়া শূকরের
মাংস ভক্ষণ করার চেয়েও অনেক বেশি ভয়ঙ্কর পাপ। আমরা জানি, শূকরের মাংস
ভক্ষণ করা যেমন হারাম, তেমনি হারাম ব্যভিচারের উস্কানিমূলক
সকল কর্ম। তবে পার্থক্য এই যে, শূকরের মাংস একবার ভক্ষণ করলে বারবার
ভক্ষণ করার অদম্য আগ্রহ সৃষ্টি হয় না, কিন্তু যে কোনো উপলক্ষে কিশোর-কিশোরী ও
যুবক-যুবতী ‘ভালবাসা’-র নামে ফ্রি
মেলামেশা বা আড্ডার খপ্পরে পড়লে তার মধ্যে এ বিষয়ে অদম্য আগ্রহ তৈরী হয় এবং
ক্রমান্বয়ে সে ব্যভিচার ও আনুষঙ্গিক সকল পঙ্কিলতার মধ্যে ডুবে যায়।
হাযেরীন, সতর্ক হোন!
ভালবাসা দিবস বা অন্য কোনো নামে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা সমর্থন করা, প্রশ্রয়
দেওয়া বা অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সোচ্চার না হওয়া আপনার দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন ধ্বংস
করবে এবং আপনার, আপনার পরিবার ও সমাজে আল্লাহর সুনিশ্চিত গযব
বয়ে আনবে। বিষয়টিকে সহজ ভাবে নিবেন না। নিজের ব্যবসা, রাজনীতি বা অন্য
কোনো স্বার্থের কারণে এ দিবস পালনে সহযোগিতা করবেন না। মহান আল্লাহ কুরআন কারীমে
বলেছেন:
إِنَّ الَّذِينَ
يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آَمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
فِي الدُّنْيَا وَالآَخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ
“যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে
অশ্লীলতার প্রচার ঘটুক তাদের জন্য পৃথিবীতে এবং আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।” সূরা ২৪ নূর: ১৯ আয়াত।
সাবধান! মহান আল্লাহর প্রতিশ্র“তিকে
হালকা করে দেখবেন না!! কখন কিভাবে আপনার জীবনে দুনিয়াতেই ‘যন্ত্রণা
দায়ক শাস্তি’ নেমে আসবে আপনি তা অনুমানও করতে পারবেন না।
রোগব্যধি, জাগতিক অপমান, শাস্তি, লাঞ্ছনা,
পরিবারের অশান্তি সন্তানদের অধঃপতন ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে আল্লাহর
শাস্তি আপনার জীবনকে স্পর্শ করতে পারে। কাজেই আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করুন। অশ্লীলতার
সকল পথ রোধে সচেষ্ট হোন। অন্তুত কোনোভাবে অশ্লীলতার প্রসারে সহায়ক হবেন না। মহান
আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক প্রদান করুন। আমীন!!
লেখক: ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ) এর খুতবাতুল ইসলাম বই থেকে
Subscribe to:
Posts (Atom)