Pages

Thursday 16 March 2017

বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান

বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান : 


লক্ষ্য : শিকড়ের সন্ধানে দ্বিতীয় কিস্তি 
আকাশ-বাতাস চন্দ্র তারায়, সাগর জলে পাহাড় চূড়ে । 
আমার সীমার বাঁধন টুটে, দশ দিকেতে পড়বো লুটে ,
পাতাল ফেঁড়ে নামবো নিচে, উঠবো আবার আকাশ ফুঁড়ে । 
বিশ্ব জগত দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে ।
বায়তুল হিকমাহ ( বিজ্ঞানাগার প্রতিষ্ঠা ) :
০১. গ্রন্থাগার 
০২. শিক্ষায়াতন 
০৩. অনুবাদ বিভাগ 
সে সময়ের সুপন্ডিত হুনাইন ইবনে ইসহাক বায়তুল হিকমার প্রধান তত্বাবধায়ক নিযুক্ত হন । 
খলীফা আলমামুনের উদার পৃষ্ঠপোষকতায় এই দারুল হিকমায় দেশের খ্যাতিমান সাহিত্যিক, কবি, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগণ সাপ্তাহিক শিক্ষা বিষয়ক আলোচনায় বসতেন । তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনার টকশোতে অংশ গ্রহণ, মত বিনিময় ও পরামর্শ প্রদান করতেন । এতে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার পথ উন্মোচিত হয় । শিক্ষা-সংস্কৃতি দ্রুত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায় । বক্ষমান প্রবন্ধে বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান প্রসঙ্গে প্রামানিক আলোচনা সংক্ষিপ্ত কলেবরে উপস্থাপিত হলো ।
আবুবকর মুহাম্মাদ ইবনে যাকারিয়া আর রাযী । সংক্ষেপে আররাযী নামে পরিচিত । 
 আবু আলী হোসেন ইবনে সীনা । সংক্ষেপে তিনি ইবনে সীনা নামে পরিচিত । 
হাসান ইবনে হাইসাম । 
আল বেরুনী । 
আলী ইবনে রাব্বান । 
হুনায়ুন ইবনে ইসহাক ( চক্ষু বিশেষজ্ঞ ) ।
আবুল কাশেম জাহরাবী ( মেডিসিন ও সার্জারী বিশেষজ্ঞ ) । 
যুহান্না বিন মাসওয়াই ( চক্ষু শাস্ত্রের উপর প্রামান্য গ্রন্থ প্রনয়ন করেন ) । 
আলী ইবনে আব্বাস ( মৃত ৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ) চিকিৎসা ও সার্জারী বিশেষজ্ঞ ) । 
আলী তাবারী । 
সিনান বিন সাবিত । 
আলী ইবনে ঈসা । 
সাবিত ইবনে কুরা । 
কুস্তা বিন লুকা । প্রমূখ মনীষীগণ সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ।
কলেজের অধ্যক্ষ্ হিসেবে কর্মরত ছিলেন । তৎকালীন তাঁর সুনাম এতই বিস্তৃতি লাভ করেছিল যে, পশ্চিম এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ থেকেও অগণিত রোগী তাঁর নিকট চিকিৎসার জন্য আসতো । 
শল্য চিকিৎসায় আররাযী ছিলেন তৎকালের সর্বশ্রেষ্ঠ । তিনি গ্রীকদের চেয়েও উন্নত পন্থায় অপারেশন তথা অস্ত্রোপাচার করতেন । অস্ত্রোপাচারে তিনিই সর্ব প্রথম সূতার ব্যবহার প্রচলন করেন । তিনি রসায়ন শাস্ত্রের একজন সুপ্রসিদ্ধ বিজ্ঞানীও ছিলেন ।
উল্লেখ্য যে, রসায়ন শাস্ত্রের জনক জাবির ইবনে হাইয়্যান ও আররায়ী কর্তক রসায়ন শাস্ত্রের উপর তথ্য সমৃদ্ধ পুস্তক রচিত হওয়ার পর চিকিৎসা শাস্ত্র ব্যাপক উৎকর্ষতা লাভ করে । 
আররাযী কর্তক বসন্ত ও হাম রোগের উপর রচিত আলজুদারী ওয়াল হাসরা নামক গ্রন্থখানি এতই মৌলিক ছিল যে, খ্রিষ্ট জগতের লোকেরা এর পূর্বে এ বিষয়ের উপর কোন দিক নির্দেশনা ও চিকিৎসা আষ্কিার করতে পারিনি । 
ঐতিহাসিক পি,কে, হিট্বি আলোচ্য গ্রন্থ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন : 
“ It is First clinical book of small pox . ’’ অর্থাৎ- এ গ্রন্থটি গুটি বসন্তের উপর প্রথম আবিষ্কৃত চিকিৎসা গ্রন্থ ।
আররাযী রচিত কিতাবুল মানসূরী গ্রন্থখানিকে ঐতিহাসিকগণ সে যুগের চিকিৎসা শাস্ত্রের বিশ্বকোষ বলে অভিহিত করেছেন ।
তাঁর রচিত গ্রন্থাবলী ফার্সী, ল্যাটিন, গ্রীক ও হিব্রু ভাষাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয় । ফলে তৎকালিন বিশ্বে তাঁর তত্ত্ব ও ব্যবস্থাপনা বহুল প্রচারিত ও সমাদৃত হয়তাঁর রচিত গ্রন্থ গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হওয়ার পর ইউরোপের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্য পুস্তক হিসেবে কয়েক শতাব্দি ধরে চালু থাকে । 
তাঁর রচিত গ্রন্থ আলহাওয়ী ১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম চার্লসের সময় সিসিলির ইহুদী চিকিৎসাবীদ ফারাজ বিন সেলিম কর্তক ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয় । অনুবাদের পর পুস্তকটি প্রথম চার্লসের সৌজন্যে উৎসর্গ করা হয় । ১৫৪২ খ্রিষ্টাব্দে এর পঞ্চম সংস্করণ ভেনিসে পাওয়া গিয়েছিল ।
আররাযী হাম ও শিশুরোগের চিকিৎসাসহ নিউরোলজি ও কার্ডিওলজি বিষয়ক নতুন থিওরী উদ্ভাবন করেন ।
কিতাবুল মানসূরী গ্রন্থে তিনি সন্ন্যাস রোগ ও পক্ষাঘাত সম্পর্কে চিকিৎসা দিয়েছেন ।
( ৯৮০- ১০৩৭ খ্রিষ্টাব্দে )
চিকিৎসা বিষয়ে তাঁর শ্রেষ্ঠ অবদান চিকিৎসা বিশ্বকোষ । যার নাম আলকানুন ফিততিব  
এ ছাড়াও চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর আরও ১৫টি পুস্তক রচনা করেন । 
ইবনে সীনার কানুন ফিততিবগ্রন্থটি প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সবার কাছে বিশ্ব নন্দিত ও প্রভাবশালী গ্রন্থ । একাদশ শতাব্দী হতে ১৭শ শতাব্দী প্রায় পাচঁটি শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কানুন গ্রন্থের ল্যাটিন অনুবাদ ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পাঠ্য পুস্তক হিসেবে নির্ধারিত ছিল । 
প্রখ্যাত মনীষী A.C Crombic ইবনে সীনা রচিত আলকানুন ফিততিব গ্রন্থটিকে মেডিকেলের বাইবেল বলে অভিহিত করেছেন ।
চক্ষুরোগ সংক্রান্ত ১৯০২ সালে Hirchberg এবং Lippert জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেন ।
এ ছাড়াও ইবনে সীনার রচিত অন্যান্য গ্রন্থ হার্ট, মস্তিষ্ক, চক্ষু, কিডনী, ডায়াবেটিক্স ও গ্রন্থি রোগের ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন । ইউরোপের ঐতিহাসিকগণ তাঁকে এক বাক্যে চিকিৎসকের গুরু খিতাবে ভূষিত করেছেন । 
ইউরোপের চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিসেবে ইবনে সীনার প্রভাব অসামান্য । ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকার গন্থে টমাস ক্লিফোর্ড উল্লেখ করেছেন : ইবনে সীনার কানুন গ্রন্থটি হিপোক্রোটস ও গ্যালনের কর্তৃত্বকে ম্লান করে দিয়েছে ।
( সার্জারী বিশেষজ্ঞ )
আবুল কাশেম আজজাহরাবীর গ্রন্থের সার্জারী অংশটি বিদেশী ভাষায় বহুবার অনূদিত হয় ।
০৯. আবু মনসুর মুয়াফাক :
একটি হলো : তিনি প্রাদেশিক ভাষা ফার্সীতে চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ প্রনয়ন করেন । যার কারণে ফার্সী ভাষী পাঠকগণ তাঁর রচিত বইগলো পাঠ করে চিকিৎসা জগতের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন ।
ঐতিহাসিক হিট্টির মতে- মধ্য যুগে আরব চিকিৎসা জগতে ৩২টি চক্ষু বিষয়ক রচনার মাঝে 
আলী ইবনে ঈসার তাযকিরাতুল কাহহালিনসর্বপ্রাচীন ও সম্পূর্ণতম গ্রন্থ ।
- ( চলবে )
মো; ইসহাক মিয়া 
সহকারী অধ্যাপক ( কামিল হাদীস বিভাগ ) 
বিজুল দারুল হুদা কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা 
বিরামপুর, দিনাজপুর ।

( অনুগ্রহপূর্বক জাতীয় স্বার্থে আমার এ লিখাটি শেয়ার করে অশেষ ছুওয়াব হাসিল করুন । )
ভূমিকা :
জ্ঞানার্জন করা প্রতিটি নরনারীর উপর ইসলামে ফরজ করে দেওয়া হয়েছে । আলক্বুআনের প্রথম বাণীই হলো ইক্বরা অর্থাৎ-পড়ো । ( জ্ঞান আহরণ করো ) এই চেতনা থেকেই মুসলমানগণ জ্ঞানান্বেষণের প্রতি অনুরাগী ও বিদ্যোৎসাহী হয়ে ওঠেন জ্ঞানার্জনের প্রতি তাদের মন-মানসে অদম্য ও অবারিত পিপাসা সৃষ্টি হয় । জ্ঞান শিক্ষা করা তাদের জীবনের একমাত্র ব্রত হয়ে ওঠে । অজানাকে জানার জন্য মুসলমানদের মধ্যে যে স্পৃহা সৃষ্টি হয় , তা জনৈক কবি কাব্যিক ভাষায় ব্যক্ত করেছেন :
রইব নাকো বদ্ধ খাঁচায়, দেখবো এবার ভূবন ঘুরে ,
মধ্য যুগের মুসলমানেদের কৃষ্টি, সভ্যতা ও জ্ঞানানুশীলন বিশ্ব সভ্যতার শীর্ষদেশে উন্নীত হয়েছিল । নি:সন্দেহে আব্বাসীয় খলীফাদের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমানদের শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও শিক্ষা-দীক্ষায় প্রসারতা ও উৎকর্ষতা চরম শিখরে উপনীত হয় । এ কারণেই এই যুগকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বর্ণ যুগ বলা হয় । জ্ঞান-বিজ্ঞানের যাবতীয় অনুষদে মুসলমানদের উদ্ভাবনী প্রতিভার ছোঁয়া লাগে । মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন দ্বার উন্মোচন করত: নিজেদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথিকৃত হিসেবে আত্ম প্রকাশ করেন ।

বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে আব্বাসীয় খলীফা আলমামুন বিজ্ঞানী, শিক্ষাবীদ ও পন্ডিত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ৮৩০ খিষ্টাব্দে বাগদাদে একটি অত্যাধুনিক বায়তুল হিকমাহ তথা বিজ্ঞান গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন । বায়তুল হিকমার তিনটি বিভাগ ছিল । 
০১. চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলমান :
চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের ভূমিকা অবিস্মরণীয় । আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতির মূলে যে সব মুসলমানদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন- যথাক্রমে
০১. আবুবকর আররাযী ( ৮৪১-৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ) :
আবুবকর আররাযীকে চিকিৎসা শাস্ত্রের জনক বলা হয় । তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও শল্য চিকিৎসাবীদ । তিনি দীর্ঘদিন জুব্দেশাহপুর ও বাগদাদের সরকারী মেডিকেল 
চিকিৎসা শাস্ত্রে আররাযীর রচিত গ্রন্থসমূহ :
তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক । এর মধ্যে শতাধিক চিকিৎসা বিষয়ক । রসায়ন শাস্ত্রের উপর বারটি পুস্তক রচনা করেন । 
আররাযীর চিকিৎসা শাস্ত্রে আর একটি অনবদ্য গ্রন্থের নাম কিতাবুল মানসূরী ” ( ১০ খন্ডে সমাপ্ত ) । আলোচ্চ গ্রন্থ দুখানি চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাসে আররাযীকে চির অমর করে রেখেছে 
আররাযীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আলহাওয়ী (( الحاوى ৩০ খন্ডে সমাপ্ত । 
আররাযী রচিত বাররুর সায়াতগ্রন্থটি ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে হুসেন বিন জাবির আনসারী ফার্সীতে অনুবাদ করত: পুস্তকটি দিল্লীর সুলতান আজিম শাহকে উপহার দেন । ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে এলগুইনামক চিকিৎসক এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন । 
প্রফেসর মেটারের মতে- আররাযীই প্রথম শিশুরোগ সম্পর্কে গ্রন্থ প্রনয়ন করেন । সে হিসেবে তাঁকে শিশুরোগের জনক বলা যেতে পারে । শিশুরোগকে তিনি ২৩ ভাগে বিভক্ত করত: এর চিকিৎসা আবিষ্কার করেন ।
আররাযী সর্বপ্রথম স্নায়ূ দৌর্বল্য মানসিক রোগের ( Neuropsy chiatric ) এর বিস্তারিত চিকিৎসাগত সমাধান দেন ।
Intreventicalar hydrocephalus সম্পর্কে তিনিই প্রথম আলোচনা করেন । 
গ্রীকরা পারদকে বিষাক্ত মনে করে তার ব্যবহার পরিহার করতেন কিন্তু আররাজীই প্রথম পারদের মলম তৈরী করেন । প্রথমে বানরের উপর পরীক্ষার পর এ উদ্ভাবন করেন ।
সার কথা- পাশ্চাত্যে রাজেস নামে পরিচিত আররাযী নবম শতাব্দীর চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি বিস্ময় । শুধু তাই নয় , তিনি চিরকালের এক মহান বিজ্ঞানী । তিনি মোট ৩৫ বৎসর চিকিৎসা সেবায় নিয়োযিত ছিলেন ।
০২. আবু আলী হুসাইন বিন আব্দুল্লাহ ইবনে সীনা : 
সংক্ষেপে তিনি ইবনে সীনা নামে পরিচিত । পাশ্চাত্যে তিনি `Avicena’ নামে পরিচিত । আররাযীর পর মধ্যযুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে ইবনে সীনা ছিলেন সর্বাধিক বিখ্যাত । তাঁকে বলা হতো শাইখুর রাইস ফিততিব অর্থাৎ- চিকিৎসা শাস্ত্রের পন্ডিতদের গুরু । তবে চিকিৎসাবীদ হিসেবে আররাযী ছিলেন ইবনে সীনা অপেক্ষা বড় । মাত্র ১৭ বছর বয়সেই ইবনে সীনা চিকিৎসক হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন এবং বুখারার সামানীয় সুলতান নুহ বিন মনসূরের ( ৯৭৬-৯৯৭ খৃ: ) ব্যক্তিগত চিকিৎসক নিযুক্ত হন । মাত্র ২১ বছর বয়সে ইবনে সীনা বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ রচনা শুরু করেন 
উল্লেখ্য যে, কানুন ফিততিব গ্রন্থটি ৫খন্ডে সমাপ্ত ।
১ম খন্ডে যা আছে :
এতে রয়েছে- physiology এবং Hygiene এর সাধারণ মূলনীতি । এ খন্ডে চিকিৎসা শাস্ত্রের মৌলিক বিষয় নিয়ে আলোচিত হয়েছে ।
দ্বিতীয় খন্ডে যা রয়েছে :
৭৫০টি গুল্ম, প্রাণীজ ও খনিজ ঔষধের বর্ণনা দিয়েছেন । তন্মধ্যে বহু ঔষধ এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । ৮০০ পরিচ্ছেদে সমাপ্ত এই খন্ডে প্রত্যকটি ঔষধের পরিচিতি , ব্যবহারের পরিমাণ , কার্যকারিতা, কোন কোন রোগে কোনটি ব্যবহার্য তা আলোচিত হয়েছে ।
তৃতীয় খন্ডে যা আছে :
কানুনের তৃতীয় খন্ডে রয়েছে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রোগ, সেগুলোর Symptom, dainosis, prognosis চিকিৎসা এবং etilogy সন্বন্ধে আলোকপাত করেছেন ইবনে সীনা । মাথার রোগ যেমন- মাথাধরা , মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক তাপ , মৃগী, অরশতা, চোখ,কান,নাক, গলা ও দাঁতের অসুখ , হৃৎপিন্ড ও ফুসফুসের রোগ, পৌষ্টিক নালী তথা পেট, অন্ত্র, যকৃত, পিত্ত ও প্লীহার রোগ, জননেন্দ্রীয় সংক্রান্ত রোগ , গর্ভধারণ ও স্ত্রীরোগ ছাড়াও পেশী সন্ধীস্থান সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে ।
৪র্থ খন্ডে যা রয়েছে :
জ্বর, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া , খাদ্যের অনিয়ম , ক্রোধ,ভয়, বেদনা, প্রদাহ, পচন, শারীরিক রসের গোলমাল, মহামারী, বসন্ত, যক্ষ্ণা, ফোড়া , কুষ্ঠ, ঘা, হাড়ভাঙ্গা, স্থানচ্যূতি, আলসার, খনিজ উদ্ভিদ ও প্রাণীজ পদার্থের বিষক্রিয়া , সৌন্দর্য, প্রসাধনী, চুল, নখ, চর্ম, গাত্রগন্ধ, লিউকোডারমা ,পেডিকেলোসিস ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।
৫ম খন্ডে যা রয়েছে :
বিভিন্ন রোগের ঔষধের ব্যবস্থাপত্র ,বড়ি ,পাউডার ও সিরাপ তৈরীর ফরমূলা নিয়ে আলোচনা স্থান পেয়েছে । 
০৩. আবুল কাশেম খালাপ আল জাহরাবী : ( ৯৩৬-১০১৩ খৃ: ) 
ইউরোপে তিনি বুকাসিস আল জাহরভিয়াস নামে পরিচিত । সমগ্র স্পেন তথা ইউরোপে সার্জিকেল বিদ্যা তিনিই সর্বপ্রথম প্রচলন করেন ।
ঐতিহাসিক হিট্টির মতে স্পেনের আরব চিকিৎসাবীদদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শল্যবীদ । তাঁর রচিত শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আততাশরীফ ২ খন্ডে সমাপ্ত এবং ৩০ টি অধ্যায়ে পরিব্যাপ্ত । প্রথম খন্ডে এনাটমী, ফিজিওলজি ও ডায়েটিটিক্স সম্পর্কে এবং শেষ খন্ডে সার্জারী সম্পর্কে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে । এ গ্রন্থের শেষ খন্ডটিই সর্বপ্রথম সচিত্র শল্যবিদ্যা গ্রন্থ ।
ঐতিহাসিক সারটিন বইটিকে মেডিকেল ইনসাইক্লোপিডিয়া নামে অভিহিত করেছেন । গ্রন্থটির সবখানেই রয়েছে মৌলিকতার ছাপ । 
জিরার্ড নামক চিকিৎসাবীদ মূল আরবী পাঠসহ ‘ Dechirgia’ নামে ল্যাটিন ভাষায় প্রথম অনুবাদ করেন । এটি Salerno এবং Montepelliar বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক শতাব্দী যাবৎ পাঠ্য ছিল । এ গ্রন্থে ২০০ প্রকার সার্জারীর যন্ত্রপাতির ছবি আছে । যা পরবর্তীতে ইউরোপের সার্জারীর যন্ত্রপাতির নমুনা হিসেবে ব্যবহৃত হতো ।
ড. ক্যামপবলের মতে, এটি ৫বার পরপর ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয় এবং খুবই প্রভাবশালী গ্রন্থ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ।
সার্জারী বিষয়ে সচিত্র যন্ত্রপাতির উল্লেখ আততাশরীফের বিশিষ্টতার অন্যতম প্রধান দিক ।
, এম আব্দুল কাদের লিখেন : আরব নব জাগরণের পূর্বের সার্জিকেল সংক্রান্ত অল্প কয়েকটি চিত্র পাওয়া গেছে সত্য, কিন্তু আবুল কাশিমের পূর্বে অস্ত্রোপাচার যন্ত্রের চিত্রাংকনের কোন বিধিবদ্ধ চেষ্টা হয়নি । মধ্য যুগের অধিকাংশ চিত্র তাঁর গ্রন্থ হতে গৃহীত । অস্ত্র চিকিৎসার যাবতীয় পুস্তকে আজকাল যন্ত্রাদীর চিত্রাংকন অতি প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয়ে থাকে । এই নব প্রবর্তনের জন্য বিজ্ঞান স্পেনীয় মুসলমানদের নিকট ঋনী ।
আবুল কাশেমের লিখিত গ্রন্থের বিভিন্ন সংস্করণের পান্ডলিপি ইউরোপের গোথা , অক্সফোডের Bodleian , প্যারিস, ফ্লোরেক্স , Bamberg, Francaise, মন্টেপেলিয়ার এবং ,ভেনিসের রক্ষণাগারে সুরক্ষিত আছে । তিনি কুষ্ঠরোগ ,শিশুরোগ ,রিকেট, কানের অসুখ , Glucoma এর চিকিৎসায় ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন ।
০৪. হুনায়েন ইবনে ইসহাক : ( ৮০৯-৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে )
এই সেই মহান ব্যক্তিত্ত্ব ,যিনি খলীফা আলমামুন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাগদাদে বায়তুল হিকমাহ তথা বিজ্ঞান গবেষণাগারের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন । তিনি বিদেশী ভাষায় রচিত বিজ্ঞান গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক এবং বহুমূখী বিজ্ঞানী ছিলেন । যার জ্ঞানের তুলনা করা যায় না । আল্লাহ তায়ালা ক্বুরআনুল কারীমে ইরশাদ ফরমান :
وَمَنْ يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًاــ ( سورة البقرة ــ 269 )
অনুবাদ : আল্লাহ তায়ালা যাকে জ্ঞান-বিজ্ঞান দান করেন, তাঁকে অনেক অনেক কল্যাণ দান করেন । ( সূরাহ আলবাকারাহ : আয়াত নং- ২৬৯ )
তিনি ইরাকের হিরাঅঞ্চলে জন্ম গ্রহণ করেন । বিজ্ঞানী গ্যালেনসহ অনেক রোমান বিজ্ঞানী তাঁর মাধ্যমে আরবের সাথে পরিচিত হন । তিনি এরিষ্টটল, প্লোটো, ইউক্লিড, হিপাক্রেটস, আরিবাসিয়ন এর গ্রন্থসমূহ অনুবাদ করেন । এ ছাড়াও তিনি শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন । তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে আদাবিয়াতুল মুফরাদাত কুন্নাসুল খাফফা, তারিখুত তিব্ব অন্যতম । তিনি বাগদাদে মৃত্যু বরণ করেন ।
০৫. সাবিত বিন কুরা :
সাবিত বিন কুরা মধ্য যুগের মুসলিম বিজ্ঞানীদের অন্যতম প্রতিনিধি । চিকিৎসাবীদ হিসেবে তাঁর খ্যাতি ও প্রজ্ঞার কথা সকল ঐতিহাসিক স্বীকার করেন । সাবিতের অনেক গ্রন্থ ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয় । তিনি প্রায় ১২৮টি গ্রন্থ রচনা করেন । সাবিতের পুত্র সিনান বিন সাবিত চিকিৎসা ব্যবস্থার সুষ্ঠুরীতি চালু করার জন্য বিশেষভাবে খ্যাতিমান ছিলেন । তিনি প্রায় ১৯টি বই লিখেছেন । সাবিত ও সিনান পরিবারের অনেক পুরুষেই চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন । ২৮৮ হিজরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন ।
০৬. আলী ইবনে রাব্বান :
আলী ইবনে রাব্বান আরবী ভাষায় সর্ব প্রথম চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ প্রনয়ন করেন । তাঁর রচিত ফিরদাউসুল হিকমাতচিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রথম বিশ্বকোষে এবং এখনো অতি উচ্চমানের অধিকারী । ৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কিতাবুদ দ্বীন ওয়াদ দাওয়া গ্রন্থটি প্রনয়ন করেন । তিনি প্রায় ১৫টি গ্রন্থ রচনা করেন । এর মধ্যে তাঁর রচিত ফিরদাউসুল হিকমাতনামক বিশ্বকোষটি ড. মুহাম্মাদ জুবায়ের কর্তৃক অনূদিত ও সম্পাদিত হয় বার্লিনে ।
০৭. আবুল হাসান আহমদ আততাবারী ( চক্ষু বিশেষজ্ঞ ) :
আততাবারী একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন । তিনি চোখের চিকিৎসার উপর বই লিখেন । তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে মুয়ালাজুত তুকরাতিয়া বিশেষভাবে খ্যাতি লাভ করে ।
০৮. আলী ইবনে আব্বাস :
তিনি বিভিন্ন রোগের উপসর্গ, কারণ ও ব্যবস্থাপত্রসহ গ্রন্থ প্রনয়ন করেন । আলী ইবনে আব্বাস পূর্বেকার চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সাথে সমসাময়িক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতবাদ উল্লেখ করেন । ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অমূল্য ইতিহাসও এতে সন্নিবেশিত হয়েছে ।
তাঁর সার্জারী সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে প্রফেসর মেটার বলেন : আলী ছিলেন সুদক্ষ শল্যবীদ । যিনি ব্যান্ডেজ ও শেলাই ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন । এই গ্রন্থে দেখা যায় তিনি ক্যান্সারের অপারেশন করেছেন । সার্জারী ছাড়াও সাধারণ চিকিৎসার উপর তিনিই প্রথম মেটিরিয়া মেডিকা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন ।

আবু মনসুর মুয়াফাক আরব চিকিৎসা বিজ্ঞানে দুটো কারণে বিশিষ্ট । 
দ্বিতীয়টি হলো চিকিৎসা শাস্ত্রের সাথে রসায়ন যোগ করে চিকিৎসা শাস্ত্রকে সমৃদ্ধ ও আধুনিকায়ন করেন । মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানে যে কয়জন মনীষী চিকিৎসা শাস্ত্রে রসায়ন যোগ করেন তিনি তন্মধ্যে অন্যতম । তিনি সোডিয়াম কার্বনেট ও পটাশিয়াম কার্বনেট কার্যকারিতার পাথক্য সন্বন্ধে আলোচনা করেছেন ।
তেমনিভাবে তামা ও সীসা প্রভৃতি যৌগিক পদার্থের বিষ ক্রিয়ার পার্থক্য সন্বন্ধেও আলোচনা করেছেন ।
৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই মনীষী কিতাবুল অবনিয়া আন হাক্বায়েক্বুল আদাবিয়া নামে ফারমাক্লোজি বিষয়ে একটি গ্রন্থ প্রনয়ন করেন । এর মাল মাসলা সংগ্রহে তিনি পারস্য ও ভারতবর্ষের বহু জায়গা সফর করেন । ফার্সী ভাষায় চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর একটি গদ্য গ্রন্থ প্রনয়ন করেন । এই গ্রন্থে ৫৮৫ টি প্রতিষেধক , তন্মধ্যে ৪৬৬ টি উদ্ভিদ , ৫৪টি ধাতব, ৪৪টি জান্তব ঔষধের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন । তাঁর গ্রন্থটি কবি আসাদ কপি করেনইউরোপের লাইব্রেরীতে যে পুরাতন পান্ডলিপি পাওয়া গেছে তা আসাদরই অনুলিপিকৃত ।
১০. জাবির বিন হাইয়্যান :
৮ম শতকে মুসলিম রসায়নবিদ জাবির বিন হাইয়্যান এর আগমনে মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন মাত্রা যোগ হয় । তিনি সর্বসাকুল্যে ৫০০ গ্রন্থ রচনা করেন । তন্মধ্যে চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর অনেক কয়েকটি অনবদ্য গ্রন্থ প্রনয়ন করেনচিকিৎসা শাস্ত্রে রসায়নের ফর্মূলা ও রসায়ন দ্রব্য যোগ করে চিকিৎসা শাস্ত্রকে উন্নতির চরম সোপানে পৌছে দেন ।
১১. আলী ইবনে ঈসা :
আলী ইবনে ঈসা চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উজ্জ্বল নক্ষত্রস্বরূপ ছিলেন । ইউরোপে তিনি Jesu Haly নামে পরিচিত । 
১২. আল বিরুনী :
বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আবু রায়হান আলবেরুনী চিকিৎসা বিষয়েও একটি গ্রন্থ প্রনয়ন করেছেন । এতে তিনি ফার্মাসী বিষয়ে আলোচনা করেছেন । 
উপস্থাপক
আমার শিক্ষক 

No comments:

Post a Comment